রবিবার ২০ শে বৈশাখ ১৪২৭, ৩রা মে ২০২০
কবিতা
রুদ্র সাহাদাৎ
সাপলুড়ু
জিততে জিততে হেরে যাই
ধাপে ধাপে ধাক্কায় পড়ে যাই
রক্তাক্ত অন্তমিলহীন জীবন
ঘুমহীন
স্বপ্নহীন
আশাহীন
কথাহীন বেঁচে থাকা
হেরে যাওয়া বোধহীন মানুষ শোকার্ত হাওয়ায় ঘুরি
আকস্মিক ভালোবাসার ছোঁয়ায় হেঁটে যাই
বারেবারে কেনো যে, জিততে জিততে হেরে যাই
প্রভু সব জানে, সব দেখে
চার ছক্কার চক্করে মইহীন পা....
হাসানুজ্জামিল মেহেদী
নিঃসঙ্গতার সাড়ে তিন’শ মাইল
বহুকাল বৃষ্টির পর আজ আবার এ শহরে রোদ।
চল বেরিয়ে পড়ি,
সুনীলের দোকানের ঘোলা চা রোদে বসে খাবো,
চল যাই!
বিপ্লবের প্রথম অধ্যায়ে যার প্রস্থান
এ বেলায় তার ঘুমানো চলেনা।
তোর সেই কথা- নিম্নমধ্যবিত্ত কবির
সমাধিতে বেড়ে ওঠা দূর্বা ঘাস তুলতে হয় নিজেকেই।
তোকেও শুকোতে হবে দরোজায় পড়ে থাকা অনীলার চিঠি,
ঘুম ছাড়।
অনীলা নেই,
নস্টালজিক শৈশব মনে নেই, এ শহর কিংবা জলফড়িংয়ের গন্ধও!
তবুও শেষ কবিতা লিখতে হবে,
ঘুম ছাড়।
তোর মতো এক দস্যি কবি এক যুগ সূর্য দেখেনি,
মাড়ায়নি রাজপথের ফুটপাত, শক্তি শুনলে হাসবে!
আজ আবার নতুন ঘাসের কবিতা লিখবি, চল।
ট্রেন ছেড়ে দিবে,
নিঃসঙ্গতার শেষ কবিতাটি এখনো লেখা হয়নি,
শর্মিলা অপেক্ষায় আছে,
পাড়ি দিতে হবে সাড়ে তিনশত মাইল পথ।
এভাবেই নিঃসঙ্গতার কবিতা লিখতে হয়।
বেড়িয়ে পড় কবি, বেড়িয়ে পড়।
চল যাই।
মাহমুদ হাসান আবির
টিফিনবক্স
একখন্ড রোদ বেরিয়ে এলো টিফিন বক্স থেকে, একটি পেঙ্গুইন টিকিট কেঁটে সে দৃশ্য উপভোগ করতে বসেছে। কম্বলের ভাঁজ ভেঙ্গে ভেঙ্গে খানিকটা হেঁটে গেলে সন্ধ্যেবেলাতেই কিছু বাঁদুর স্বর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সেলুলয়েডের চকচকে সে কথাগুলো আসলে খুব সহজ এক রিকশাওয়ালার গামছা।
টিফিন বক্সের ডাকনাম ভ্যাকেশন হলেই তাকে আর ভালোবাসা যায় না।
অপার অরণ্য
তাদের- যে দিনগুলো সঙ্কায় দ্যুদুল্যমান
ওগো দুপুরশোকে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়
গৃহবন্দির গান গাইতে গাইতে গৃহে যাও
ফিরে চলো ব্যাথা ও ব্যাধির শুশ্রুষার দিকে
শোনো বোবা ঠোঁট- এই মর্মরে উদাসীন মানুষের কাছে হাত পেতে ভালোবাসা চেওনা'কো আর
মোহনীয় বুকজুড়ে মহামারি- শূন্যতার ঘ্রাণ
মনে হলো, তোমাদের পাশাপাশি আরও দুটি হাত
নিভৃতে একা একা এই রূপসী আঁধার
তুমি ভালো থাকো সুরভিত নদী
ভালো থাকো পূর্ণিমায় ঝলসানো চাঁদ
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
বোধহীনের কবিতা
কত সহজ ভাবে কথা বলা যায় অভিধানের কংক্রিট ছাড়া।
কথা তো ধ্রুবতারা...
কত জটিল, মারকুটে বোধ কবিতায় লিখে মুচকি হাসি-
পাঠক সর্বনাশী।
প্রেম-প্রীতি-বিরহ-অভিমান অথবা বর্ষার গানে মেতে...
মস্তিষ্কে দেবো গেঁথে।
কথার জাফরি দিয়ে গেঁথে দেবো তোমার বোধের আলো...
সেই কবিতাই ভালো।
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: হোর্হে লুইস বোর্হেস
যেকোনো মৃত্যুর জন্য অনুশোচনা
স্মৃতি ও আশা মুক্ত
সীমাহীন, বিমূর্ত, প্রায় ভবিষ্যৎ
মৃত দেহ নয় কেহ: এটা মৃত্যু
মরমী দেবতার মতো
যাদের তারা জোর দিয়েছিলো
বৈশিষ্ট্য নেই তার কোনো
মৃত ব্যক্তি কেউ নয় সর্বত্র
পৃথিবীর ক্ষতি ও অনুপস্থিতি ছাড়া কিছু নয়
আমরা ছিনিয়ে নিয়েছি এর সব
ছেড়ে যাইনা আমরা এর একটি বর্ণ, একটি উচ্চারণ:
এখানে বাগান যা এর চোখকে আর গ্রহণ করে না
ওখানে ফুটপাত যেখানে এটি জাগিয়ে রাখে তার আশা
এমনকি আমরা কি ভাবছি
এটি তা ভাবতেও পারে
আমরা আমাদের মধ্যে বিভক্ত হয়েছি, চোরের মতো
রাত্রি ও দিনের ধন
অণুগল্প
নীল টিকের অপেক্ষায়
পারমিতা
একদিন হঠাৎ ই আলাপ হয়ে যায় রিয়ার অরিনের সাথে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব।রিয়া এবং অরিন দুজনের ই জীবনের পথ ছিল বন্ধুর।রিয়ার বর মস্ত বড় অফিসার। তার স্ট্যাটাসে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা রিয়া যে ঠিক ফিট নয় বারবার সেটা মনে করিয়ে দিত অঙ্কুশ। রিয়া সবসয় ভালোবাসতো মাটির সোঁদা গন্ধ। অন্যদিকে অরিনের স্ত্রীর ভালো লাগতো আকাশ ছুঁতে। দিনের পর দিন তার বায়না মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল একটা বেসরকারি অফিসে সামান্য চাকরিরত অরিন।
রিয়ার সাথে আলাপ হবার পর থেকেই দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে উঠছিল যেন।এই একটা মিষ্টি সম্পর্কের চাহিদা ছিল যেনো দুজনের মনেই।
একদিন এরা দুজনে ঠিক করে লং ড্রাইভে যাবে। দুজনেই যেনো এবার স্বাধীনতার স্বাদ নিতে চায়। যেরকম ভাবা, সেরকম কাজ। বেরিয়ে পড়ে দুজনে এক সন্ধ্যায়।অরিন বাইকটা খুব একটা খারাপ চালায় না। পেছনে বসে রিয়া অরিনকে বলে
- অরিন
- হুঁ, বল
- আমি এর আগে কখনো লং ড্রাইভে যাইনি।
-তাই? তাহলে তো নতুন অভিজ্ঞতা।
- খুব জোরে চালাচ্ছ। আমার ভয় করছে।
- আরে এটা কোনো ব্যাপার ই না।ভয় পেয়ো না। লং ড্রাইভে গতি না থাকলে মজা আছে নাকি! আর ম্যাডাম আমি বাইক বেশ ভালোই চালাতে পারি। যদি ভয় করে তবে আমাকে ধরে বসো ।
অরিনের কাঁধে হাত রাখে রিয়া। যখন ই অরিন ব্রেক করে রিয়ার শরীরের অংশ অরিনকে ছুঁয়ে যায়। একটু অস্বস্তি হয় রিয়ার।খানিক বাদে গঙ্গার ধারে বাইক থামায় অরিন। নির্জন।একটু ভয় ভয় করে রিয়ার। বলে
- এখানে কোনো লোক নেই অরিন। আমার ভয় করছে।
রিয়ার হাত ধরে বুকের কাছে টেনে অরিন বলে
- আমার কাছে আছ,ভয় কিসের? তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম কারণ কিছু কথা বলার ছিল যার এই নির্জনতা স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।
- বল কি বলতে চাও।
- আমি এই সম্পর্ক আর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই না।
- কিন্তু কেন? আমরা তো ভালো বন্ধু।
- হ্যাঁ, কিন্তু আমি যখন ই একলা হয়ে যাই তোমাকে কাছে পেতে চাই। আমাকে খারাপ ভেবো না, তোমাকে সারা শরীরে মনে অনুভব করি। এ যে অন্যায়।
- অরিন, কিন্তু আমি যে চাই আমার সাথে এ অন্যায় হোক। এতো দিন পায়ে শেকল পরে আছি। একটু মুক্তি চাই। অমৃতের স্বাদ পেতে চাই।
বলেই হাউ হাউ করে অরিনের জামার কলার ধরে কাঁদতে থাকে রিয়া।অরিন রিয়ার চোখের জল মুছিয়ে দেয়। তারপর দুহাত দিয়ে আস্তে করে রিয়ার মুখ ধরে মুখের কাছে টানে। একটা দীর্ঘ ওষ্ঠ চুম্বনে হারিয়ে যায় দুজনেই।
আটটা বেজে গেছে। অঙ্কুশ একটু রাত করে ফেরে। বাড়ি ফিরে এক নতুন পৃথিবী পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয় রিয়া।ওইসব কথাই বারেবারে মনে পড়ে।অরিন বলেছে বাড়ি ফিরে ফোন করতে।
মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবে অরিনের কথা বুঝি আজ শেষ হবে না। রিং হচ্ছে অরিনের নাম্বারে। রিসিভ হয় না। কেটে যায়। আবার করে , আবার কেটে যায়। প্রথমে ভেবেছিল পরে নিশ্চিত কল ব্যাক করবে। কিন্তু কোনো ফোন আসে না। হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ পাঠায়। দুটো টিক পড়ে কিন্তু টিক দুটো নীল আর হয় না কোনোদিন। মাঝে মাঝে অনেকক্ষণ অনলাইন দেখায়, রিয়া অপেক্ষা করে। কিন্তু এ অপেক্ষা অন্তহীন হয়ে রিয়ার একলা রাতের সঙ্গী হয়ে যায়। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন, ‘কেনো আত্মা ছুঁয়ে গেলে?’ আজো রিয়া কাঁদছে, ভীষণ কাঁদছে.....
No comments:
Post a Comment