Saturday, May 16, 2020

শিল্প সাহিত্য ০১

মঙ্গলবার ১লা বৈশাখ ১৪২৭, ১৪ই এপ্রিল ২০২০


কবিতা
সরকার অরুণ কুমার
স্বপ্ন প্রত্যাশা

এসো হে বৈশাখ
সোনা রঙ মেখে সবুজ আঙিনায়
সত্য উচ্চারণে --+++
ছড়াও সুগন্ধি সৌরভ।
মুঠো মুঠো স্বপ্ন ছড়িয়ে দাও
রোদেলা উঠোন আর পলিমাখা ঘরে
প্রীতি পাক অনেক নিঃশ্বাস নিবিষ্ট চিত্তে।

বসন্তে দোলে পাতা
রঙ লেগে থাকে বাতাসের গায়
তুমি এক বিস্ময়......
যেখানে পাপ থাকে না
মেঘের বাড়ি থেকে নেমে আসে হাসনাহেনা ভোর।

সকালে ঘুম ভাঙে একরাশ প্রত্যাশায়
অপেক্ষা করি একটি দিনের
দূর হোক দুঃখ জঞ্জাল
ফুল চঞ্চলতায় হেসে উঠুক আহত অতীত
তোমার চোখের ভাষায়।

আবু জাফর সৈকত
শিখে নিয়েছি উত্তর

আর নয় নমঃ নমঃ
জ্বলে উঠুক নীল চোখ
হারানোর ভয়ে আর কতো শোকজের উত্তর
পুরাতন বাধনগুলো ছিড় একে একে
সোজা হোক দীর্ঘ মেরুদন্ড

হাঁটতে শিখি
করুণা চাই না আর
আমিতো গোলাম নই কোন

কাজী শোয়েব শাবাব
তুমি আর তোমার শহর ছেড়ে আসার পর

চলে যাচ্ছি
চলে যাচ্ছি বহুদূর
কখনো কর্তব্য বড় বেশি নিষ্ঠুরÑ
পেছনে তুমি, তোমার শহর আর
বুকের ভেতর দীর্ঘ হাহাকার!

কী যেন ফেলে এসেছি কোথাও...
কী যেন ফেলে এসেছি কোথাও...

বিনয় কর্মকার
নিছক কবি

কাঁকর বাছতে-বাছতেই পার হয় ভাতবেলা। 
শেষ-ট্রেন মিস করে, প্ল্যাটফর্মকেই ভালোবেসে ফেলে কবি।
আর মানুষই মানুষকে ভাবে বোকা!

অথচ গন্তব্য কিংবা প্ল্যাটফর্ম;
উভয় থেকেই মৃত্যুর দূরত্ব সমান।


ম্রিতোষ তত্রাচ
/২০১২১৯

শুনতে প্রস্তুত না আপনি
কেউই প্রস্তুত না
এমন কি আমিও না
কি কথা বলা যায় বলুন তো!
কি কথা বলতে চাই
কান মুখের কথা শুনতে প্রস্তুত না
না প্রস্তুত হবে না কোনদিনই
মগজে সেট করা আছে কিছু (ফালতু) নির্দিষ্ট শব্দ
(নতুন) ভিন্ন শব্দ তার শয়না

রফিকুল কাদির
প্রতিক্ষা

আমি তার প্রতিক্ষায় আছি
বেঁচে থাকা শুধু তার জন্য
বাঁচার তৃষ্ণা শুধু তার জন্য
বাঁচার চেষ্টা শুধু তার জন্য
সমস্ত প্রচেষ্টার অগ্রভাগে সে
তার কাছেই বাঁধা পরে আছি

আমার অশ্রু
আমার বিষাদ
আমার বিষণœতা

সময়ের পারে ঘড়ি টিকটিক করে
বলাকা হলের দিকে তাকিয়ে
আলতো করে চিন্তা করে রাফিন প্লাজার দোতলা
সুইটের হাসি শুনতে পাই
তার ভালোবাসা দেখতে পাই
সে আমার কাছে আহ্লাদ করে
ভালোবেসে তেলতেলে চোখে তা দেখি

ভালোবাসলে মানুষ অস্থির হয়
সুইট অস্থির হয়ে হাঁটে
আমারও কোথায় জানি রিনরিন শব্দ পাই
ওকে আদর করতে ইচ্ছে হয়

আমার সমগ্রতা জুড়ে দখল থাকে অন্য কারও
সে সমগ্রতায় মা-বাবা, ভাইবোন
আত্মীয়, বন্ধু, সুইটের হাসি ইত্যাদি
আরও কতো কি!

আমাকে ঘিরে থাকে, রাজত্ব করে
সে-
যাকে কাছে পেলে ঘুম পায়
নিশ্চিন্তে কোলে মাথা রাখা যায়

কিছু বলি না, চলি না
কেবল কাঁধটা তার কাঁধে হেলে যায়

জানিনা, ভালোবাসা কি একে বলা যায়।

অণুগল্প
মহিম জেগে ওঠো
কবির বিটু

হঠাৎ দীর্ঘ পথ হেঁটে হেঁটে যখন পা'টা একটু ধরে এসেছে, মহিমের সে মুহূর্তে খেয়াল হয় সে কেমন একটা চেনা অচেনায় মেশানো জায়গায় চলে এসেছে। মানুষের কোলাহল নেই, রিকশার ঘন্টি, গাড়ির শব্দ অথবা কোনো কিছুর গন্ধ, কিছুই তার গোচরে আসছে না যেনো।
মহিম অনুমান রার চেষ্টা করে জায়গাটা কোথায়। এমন নির্ঝঞ্ঝাট জায়গা শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়, হঠাৎ মনে উঁকি দিয়ে যায় -আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? পরমুহূর্তেই হেসে ওঠে। এমন ভাবনা ভাবার যথেষ্ট কারণ থেকে যায়। স্বপ্নকে যেমন অনায়াসেই জেগেই আছি ভেবে নেয়া যায়, তেমন জেগে থেকেও উৎকণ্ঠা স্পর্শ করে যায় - স্বপ্ন নয়তো! মহিম মনে করার চেষ্টা করে কোথায় যাচ্ছে সে। ঠিক মনে পড়ছে না। - ঠিক আছে অসুবিধা নাই হাঁটতে থাকি, মনে পড়ে যাবে।'
এমন করেই আজকাল ভাবনার অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু গন্তব্য মনে করতে না পারলে কোন দিকে হাঁটবে সে। একটু দাঁড়ায় গাছের ছায়ায়, চোখে পড়ে দুটি সদ্যোজাত কুকুরের বাচ্চা বেঘোরে ঘুমায় একটা আরেকটার শরীরে শরীর ডুবিয়ে। - দু'টো কেনো, আর বাচ্চা ক? মহিম এদিক ওদিক তাকায়। বাকি বাচ্চাদের খোঁজে। বাচ্চাদের মাকেও। শীত শীত লাগছে শরীরে - আহারে বাচ্চাগুলো নিশ্চই রাতে খুব কষ্ট পেয়েছে! - আশেপাশে ময়লার ভাগারওতো চোখে পড়ছেনা, বাড়ি ঘরের চিহ্নও নেই। মহিম আটকে পড়ে এখানে। পাশ দিয়ে একজন মানুষ চলে যায়, ঠিক ভাবে তাকালে চোখে পড়তো দুজন দিনমজুর একটু দূরে দাঁড়িয়ে স্যান্ডেল হীন মহিমের দিকে খুব কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ একটি পোয়াতি বিড়াল লাফ দিয়ে নেমে আসে কোথা থেকে যেন। সেদিকে তাকিয়ে বাচ্চা দুটোর মাকে পাওয়া গেলো মনে করে বসে মহিম। কোনো খটকা নেই, অসামঞ্জস্যও মনে হয় না। মহিম দেখে কি সুন্দর আকাশ চেয়ে আছে তার দিকে।
হঠাৎ পেটটা মোচড় দিয়ে ওঠে, সে দ্রু বাড়ি ফেরার রাস্তা খোঁজে, অথচ মনে পড়ে না। এরপর দৃশ্য পাল্টে সামনে ধূধূ শুন্যতা। চোখে পড়ে কারা যেন হেঁটে যায়, হুস করে পেছন থেকে উড়ে যায়, তারপর তার পুরো শরীরটার দখল নিয়ে নেয়। মহিম গোঙায়- আমি বাড়ি যামু। নিজের কাছেই নালিশ করে আমি বাড়ি যামু। ক্ষুধা লাগছে। কিছুতেই মনে করে উঠতে পারে না কিভাবে বাড়ি ফিরবে সে। একটু অনিশ্চিত আশংকা নিয়ে নিজেকে প্রবোধ দেয় -এটা স্বপ্ন, এটা স্বপ্ন। নিশ্চই আমি জেগে উঠবো...

ভাষান্তরকায়েস সৈয়দ
হোর্হে লুইস বোর্হেস এর দুইটি কবিতা

বৃষ্টি

হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায় সন্ধ্যা
এখন যেমন করে
অল্প গুড়ি গুরি বৃষ্টি ঝরছে বাইরে
ঝরছে অথবা ঝরেছে, বৃষ্টি নিজে কিছুই নয়
নিঃসন্দেহে যা অতীতে ঘটে যায়

যে শোনে এর ঝরে যাওয়া তাকে মনে করিয়ে দেয়
এমন একটি সময় যার মধ্যে আছে অদৃষ্টের পরিহাস
ফিরিয়ে আনে তার জন্যে ফুল যার নাম ও গোলাপ
এবং এর লাল রঙের হতবুদ্ধ লালভাব

বৃষ্টি যা ছড়িয়ে দেয় জানালার কাচে তার বেপোরোয়া
উজ্জ্বল করা আবশ্যক
ভুলে যাওয়া শহরতলী
আঙুরের গাছে লুকিয়ে রাখা কালো আঙুর

বহিঃপ্রাঙ্গণ নেই এখন আর, সন্ধ্যার বৃষ্টি
এনে দেয় কণ্ঠস্বর, আমার বাবার প্রিয় কণ্ঠস্বর
যে ফিরে আসেন এখনও, যে মারা যাননি কখনও

বিচ্ছেদ

তিনশো রাত তিনশো দেয়ালের মতো
উঠতে হবে অবশ্যই আমি আমার ভালোবাসার মধ্যে
এবং সমুদ্র আমাদের মধ্যে হয়ে উঠবে ব্ল্যা আর্ট

অবশিষ্ট থাকবে না কিছুই, স্মৃতি ছাড়া
রাতগুলো তোমাকে দেখার প্রত্যাশী
আমার পথ বরাবর ক্ষেত্র, মহাশূন্য
যা আমি দেখছি হারাচ্ছি...
মার্বেলের মতো চূড়ান্ত
তোমার অনুপস্থিতি বিষণœ করে তুলবে অন্যান্য দুপুর

পুনর্পাঠ
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
পোড়ামাটি

মন্ত্রের মতন আছি স্থির
দূরে যাও
থেকো না এখানে
চিরদিন উড়ন্ত শাম্পানে
ছন্নছাড়া
চিঠি তো পুড়েছে একতাড়া
আগুনে পুড়েছে শত পাড়া

দূরে যাও
থেকো না এখানে
দূরে যাও
থেকো না এখানে
কাকে পাও?

আমি যাই

যেখানেই থাকো
এপথে আসতেই হবে
ছাড়ান্ নেই
সম্বল বলতে সেই
দিন কয়েকের গল্প
অল্প অল্পই
আমি যাই
তোমরা পরে এসো
ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে
শাক-সবজি বিলিয়ে
তোমরা এসো

ছিন্নবিচ্ছিন্ন

জ্বলন্ত রুমাল
তুমুল বৃষ্টিতে সব পাতা ভিজে গেলো
এখনই শুকাতে হবে রোদ্দুর কোথায়?
তিজেলে চড়াতে হবে অন্ন, তা কোথায়?
মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে শুকাতেও জানে।
এই অন্ন, পাতা-পত্র, এর অন্য মানে।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক