শুক্রবার
১১ই বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ই এপ্রিল ২০২০
কবিতা
অদ্বৈত মারুত
একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি
আমি আর আমার সঙ্গে থাকি না মোটেই
ফলে বহুদিন ধরে নিজেকে চিনি না আর!
এতে প্রায় প্রতিদিন নানা বিপত্তি ঘটলেও
প্রায় প্রতিদিন ভুলে যাই দামাল আক্রোশ;
নিরহংকার হয়ে বিলিয়ে দিই প্রাণের আকুতি
এই আমি নিজেকে দূরে ঠেলে দেবার পর
প্রায় প্রতিদিন অন্ধকার হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে
তোমার আলোকেচ্ছা শুনতে গিয়ে ভাবি-
ওইসব বৈমাত্রেয় সংলাপ শুধু ব্যাজস্তূতি
কিন্তু নিজের সঙ্গে থাকি না বলে কখনোই
আটকাতে পারে না বিমুগ্ধ যাপনের দহন
এইসব অসচ্ছল কথা পাখির মুখে দিয়ে
আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম বহুদিন আগে
অথচ এখন ফিরবার কথা; মা ডাকছেন
কিন্তু ভেতরে-বাইরে কোথাও আমি নেই!
জ্যো তি র্ম য় মু খো পা ধ্যা য়
দাহপর্ব
ভাবতে ভাবতে আঘাতগুলো সব বাসি হয়ে আসে
আঘাত বলতে, নিজেকে দাহ করতে করতে
যা কিছু ডোমের লাঠি...
পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিভিয়ে ফেলেছি নিজেকে
তবু, সেই অতৃপ্ত নাভি
আজও আগুন খেয়ে চলে
চয়ন শায়েরী
যে-বেড়াল ইঁদুর ধরতে শেখে নি
যে-বেড়াল ইঁদুর ধরতে শেখে নি...
তার থাকবার কীইবা দরকার ?
তবু কালোবেড়ালের উপস্থিতি টের পায় সকলেই হৃদয়ের অন্ধকারে
ইচ্ছামৃত্যুর দ্বান্দ্বিক সফরে
আমাদের হৃদয়ের বেলকনি জানে
কোনো এক দীর্ঘনিঃশ্বাসে ভরে ওঠে
টবের বিন্যাস
ব্যর্থতার লিস্ট লম্বা হতে হতে
বেড়ালেরা একদিন বাঘ প্রজাতির হয়
ইঁদুর ধরা ভুলে যায় !
আমাদের হৃদয়ের দ্বান্দ্বিক কালোবেড়ালটা একদিন বাঘ হয়ে ওঠে... বিশ্বাসের ঘরে তোলপাড় করে... আমরা বিভ্রান্ত হই ভাবনার অলৌকিক অন্ধকারে
ম্রিতোষ তত্রাচ
ই/২৬১২১৯
আমাদের মরে-ই যাওয়া উচিত
: আমরা তো মৃত-ই
: কি বলো? সত্যি-ই
: হ্যাঁ
: কীভাবে সম্ভব
: জীবিতদের সাথে আমাদের কোনো মিল নাই। তাদের মতো তিনবেলা খাই না।
টাকার পিছনে ছুটি না...
আমাদের স্বপ্ন না>গন্তব্য নাই>উদ্দেশ্য নাই...
কিন্তু জীবিতদের নির্দিষ্ট স্বপ্ন আছে এবং তারা তা পূরণ করার জন্য সবকিছু করে থাকে। প্রয়োজনে মাকেও নিলামে বিক্রি করে চাল-ডাল কিনে আনে মাকে খাওয়াতে-ই। এমনকি নিজেদেরকেও বিক্রি করে সস্তা দামে। নিজেদের সমস্ত কিছু বন্ধক রাখতে রাখতে সব ফুরিয়ে গেলে নিজেকেও বন্ধক রাখে। আমরা কি সেসব করি?
আদিত্য আনাম
দ্য লোনলি ট্রি উইথাউট বার্ডস; ফ্লাইং ইনসাইড হার সোল
[The
lonely tree without birds; Flying inside her soul]
একা একটি গাছ- একজন
নিঃসঙ্গ তার হাওয়ার সাঁতার
মনে মনে-
ডানায়
ঝুলে
ঝুলে
আছে
তার
পাখিহীন পাখির আত্মারা।
তুমি কি দেখেছো তাকে?
Do you know her call-name?
Could you hear her soft songs?
কিংবা
তুমি
কি
তার
হৃদয়ের
ঘ্রাণ
পেয়েছো
টের
কখনো...?
Here A lonely tree without birds;
Flying inside her soul.
I know her i love her
Here
I was stay with her a long night a
long long ago!
আমি তার হৃদয়ের ঘ্রাণ হৃদয়ে পেতাম টের
আর তার আত্মার গান আমি শুনেছি বহু বহুবার!
সে ছিলো বিধাতার মতো বিষণ্ন
তার ফুল ছিলো দেবতার মতো রাঙাচোখ।
সে তার স্বপ্নের ভিতর দিয়ে হেঁটে যেতো বহুদূর
সে তার শৈশবে ফিরে যেতো সময় ভ্রমণ করে
থমকে
দাঁড়িয়ে
থাকতো
শৈশব
তার
প্রতীক্ষায়-
সে কথা বলতো আকাশের সাথে
সে কথা বলতো ঈশ্বরের কানে কানে
দূর মেঘ- ডানা ভেঙে- যদি পড়ে যেতো নীচে!
সে তার হৃদয় মেলে দিতো-
কখনো
কোনো
পাখি
তার
সখ্য
হতে
আসেনি; তার বন্ধু ছিলো কেবল গহীন শূন্যতা।
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: : জঁ ককতো
যুদ্ধ বিদ্যালয়
সকাল সাড়ে পাঁচটায়
জীবনটা কতো বিরক্তিকর
আজকে সকাল অর্ধনমিত পতাকায়
সতেজতায় আরম্ভ
প্রভু, এই তাম্র মুরগির মাংস বিষণ্ন
দেবদূত সাইকেল-আরোহী
ত্যাগ করে খাঁচা হাজারো প্রেষণ পাঠাতে
এই বিশাল ইমারতে
দরিদ্র বিউগলবাদকের গর্জন বেড়ে যায়
জেগে ওঠো শীতলতায়
যাত্রীরা নাগরদোলায়
অণুগল্প
ফলাফল
সোমনাথ বেনিয়া
পাড়ার সন্তুদাকে সবাই চেনে। এখন আরও বেশি করে চিনছে লোকাল কাউন্সিলার বলে। এখন সবেতেই তাকে দেখা যায়। মান্যগণ্য ব্যক্তি বলে কথা। তবে তার কাউন্সিলার হওয়ার পথটা মোটেই সহজ ছিল না। স্কুল পালানো ছেলে লোক পেটানো থেকে শুরু করে চিটিংবাজি, পরে তোলাবাজি থেকে ওয়াগন ব্রেকার এবং দু-একটা খুনের সাথে জড়িয়ে থেকে বর্তমানে সিন্ডিকেট ব্যাবসায় এসে পার্টির ভিতরে কলকাঠি নেড়ে কাউন্সিলার। বলতে গেলে সিনেমায় যেমন হয় অনেকটা সেরকম। তবুও এত কিছুর মধ্যে তার একটা বিষয় ছিল লক্ষ্য করার মতো। তার পাড়ায় কিংবা আশেপাশের অঞ্চলে কোনো অনুষ্ঠান হলে তার উদ্বোধন করাতো কোনো প্রবীণ ব্যক্তিকে দিয়ে এবং বলাবাহুল্য সেই প্রবীণ ব্যক্তি হলেন তার বাবা। পক্ষপাতদুষ্ট হলেও অনেকে এটা ভালো চোখেই দেখতো। আসলে সন্তু ভাবতো তার বাবাকে মারধোর করার ফলে যা পাপ করেছে তার কিছুটা অন্তত এভাবে খণ্ডিত হোক ...
পুনর্পাঠ
বুদ্ধদেব বসু
স্টিল্ লাইফ
সোনালি আপেল, তুমি কেন আছ? চুমো খাওয়া হাসির কৌটোয়
দাঁতের আভায় জ্বলা লাল ঠোঁটে বাতাস রাঙাবে?
ঠাণ্ডা, আঁটো, কঠিন কোনারকের বৈকুণ্ঠ জাগাবে
অপ্সরীর স্তনে ভরা অন্ধকার হাতের মুঠোয়?
এত, তবু তোমার আরম্ভ মাত্র। হেমন্তের যেন অন্ত নেই।
গন্ধ, রস, স্নিগ্ধতা জড়িয়ে থাকে এমনকি উন্মুখ নিচোলে।
তৃপ্তির পরেও দেখি আরও বাকি, এবং ফুরালে
থামে না পুলক, পুষ্টি, উপকার। কিন্তু শুধু এই?
তা-ই ভেবে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু মাঝে মাঝে
আসে ভারী-চোখের দু-এক জন কামাতুর, যারা
থালা, ডালা, কাননের ছদ্মবেশ সব ভাঁজে-ভাঁজে
ছুঁড়ে ফেলে, নিজেরা তোমার মধ্যে অদ্ভুত আলোতে
হয়ে ওঠে আকাশ, অরণ্য আর আকাশের তারা-
যা দেখে, হঠাৎ কেঁপে, আমাদেরও ইচ্ছে করে অন্য কিছু হতে
No comments:
Post a Comment