Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ২১

সোমবার ২১শে বৈশাখ ১৪২৭, ৪ঠা মে ২০২০



কবিতা
আরণ্যক টিটো
একান্নবর্তী

না
খেয়ে আসিনি... 
তোয়ালে দিন, হাতমুখ ধুয়ে আসি...
(পরমান্ন)
গরম ভাতের ঘ্রাণে
মোচড় মারছে ক্ষুধার পাঁচালী!
.........
আপনার কি মনে আছে? পাঠশালায় পড়া
একান্ন= এক+অন্ন!
আমাদের 
হাটের হাঁড়িটি
ভাঙাভাঙির বিপরীতে এক হতে পারতো...
আমরা তো
একান্নবর্তী
পরিবারের মানুষ ছিলাম... একই অন্নে লালিত
এই 
একান্নপীঠের পটভ‚মে...

অতীত তাই বলে!

অন্নদা, আপনি কী বলেন?...

অনার্য নাঈম
দখলদার

নক্ষত্রের বিচ্ছুরিত আলো দিয়ে
পাঠকরি খ্রিস্টাব্দের ইতিহাস;
আর পূর্ব-খ্রিস্টাব্দ আস্তে আস্তে চলে গেছে
এক অফুরন্ত অন্ধকারের দিকে।
মা-মরিয়ম দূর নির্জন থেকে 
এক টুকরো আলো এনে পৃথিবীকে দিলেন
আমরা হারিয়ে গেলেও এই গ্রহ রয়ে যায়।

মা-মরিয়ম আমাদের পাড়াতেই ছিলেন
আমাদের পাড়ার নাম বেথেলহেম
আমাদের সংগ্রামের নাম মুক্তি
আমাদের পিতা নেই, ভাই নেই
আমাদের দখলদারের নাম ইসরায়েল।

মাহফুজুর রহমান লিংকন
পুনরায় প্রেমের কবিতা

যে দ্যাখা হলে দূরত্ব বাড়ে
সে দ্যাখা না-ই বা হলো
বহুদিন গত হ'লে...
আঁচলের গহীন থেকে
রঙিন মুখখানা তুলেই যদি বলো
এভাবে দ্যাখা না হ'লেই ভাল...
সে দ্যাখা না-ই বা হলো!

ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: জঁ ককতো
ওয়েলসের জন্য

সহিংসতা ও অনুগ্রহের মধ্য দিয়ে
অয়েরসন ওয়েলস একজন কবি
আঁটসাঁট দড়িতে কখনোই কাঁপেন না
যার উপর দিয়ে পার হয়ে যান শহর
যার উপর দিয়ে পার হয় তাদের নাটক

অনুগত বন্ধুত্বের কবিও তিনি
আমাদের স্বপ্ন ও সংগ্রাম বহন করেন তিনি
তার কাজের প্রশংসা কীভাবে করতে হয়
আমার চেয়ে ভালো জানবে তা অন্যরাও

তাকেভ্রাতৃ সম্ভাষণ প্রেরণের মধ্য দিয়ে
সন্তুষ্ট রাখিনিজেকে

তার মতোই দৃঢ় তার করমর্দন
প্রতিটি সময় ভাবি
আমাকে বাধা দিতে বাধ্য করে
আমার কাজ

তরুণদের বই না পড়া প্রসঙ্গে আমার পর্যবেক্ষণ
সুশান্ত বর্মন

তরুণরাই দেশের ভবিষ্যত। অথচ আমাদের দেশে তরুণরা জীবনবিকাশের পথে বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়, অপমানের আঘাত সহ্য করে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আমাদের সমাজে একজন তরুণকে যতভাবে ছোট করা হয়, যতভাবে দোষী সাজানোর চেষ্টা করা হয় তা সভ্য সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। এই সমাজে তরুণরা তবুও যে বেঁচে আছে, ভবিষ্যতের আলোকিত সমাজের স্বপ্ন দেখে, তা শুধু তারুণ্যের উদ্দীপনার কারণে। বিপরীতে প্রবীণরা তরুণদের সহায়তা তো দূরের কথা, যতটা সম্ভব বঞ্চনা ও অপমানের ঘেরাটোপে বন্দী করে রাখে। তারুণ্য বিকাশে উৎসাহ তো দূরের কথা বরং নবীনদের দোষী সাব্যস্ত করায় তাদের আগ্রহ সীমাহীন।
বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এই অভিযোগটি সম্পর্কে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে নতুন প্রজন্ম বই পড়ে না। বইয়ের সান্নিধ্য থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। এজন্য অনেকে নানাবিধ প্রসঙ্গকে সামনে নিয়ে এসে তরুণদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেন। কিন্তু আমি অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে চাই প্রবীণদের দিকেই। প্রাকৃতিক নিয়মেই তরুণরা অনভিজ্ঞ। পৃথিবীর রূপ রস গন্ধের সন্ধান তাদের নিকট অজানা। এই অনাবিষ্কৃত জগতের দ্বার খোলার দায়িত্ব প্রবীণদের। তারা যদি নিজেরা বইবিমুখ থাকেন; তাহলে তার দায় তরুণদের নিতে হবে কেন?
আমার পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা সমকালীন মতামতের বিপরীত। আমি দেখেছি তরুণরা বই পড়তে আগ্রহী, তারা বইয়ের সান্নিধ্য পেতে চায়; একটি নতুন বইয়ের গন্ধ পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। কিন্তু এই সমাজের প্রবীণরা তাদের সামনে বইয়ের জগতকে উন্মোচন করেন না। তাদের সামনে বইয়ের পাতা মেলে ধরেন না। শিশু-কিশোর-তরুণদের পছন্দের বিষয়ের বইয়ের খোঁজ রাখেন না। নবীন প্রাণের সামনে যথোপযুক্ত বইকে উপস্থাপন করেন না। প্রবীণদের এরকম অবহেলার কারণে একজন উৎসাহী তরুণ তার পছন্দের বিষয়ের বইয়ের খোঁজ পায় না। প্রবীণরা নিজেরাই যেখানে বই পড়েন না; নিজেকে সর্ববিষয়ে অভিজ্ঞ ভাবার অহংকার করেন, বই না পড়ার গ্লানিকে উপেক্ষা করেন, সেখানে একজন নবীন প্রাণ কী শিখবে? কার কাছে জানবে বইয়ের রোমাঞ্চকর জগতের খবর? বই বিমুখ প্রবীণের সন্তান বইপ্রেমী হবে, তা আমরা আশা করি কীভাবে? নিজেদের অজ্ঞতার দায় তরুণদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তৃপ্ত থাকলে হবে? যে শিশু কখনো তার পিতামাতা আত্মীয়স্বজনকে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়তে দেখেনি, সে কীভাবে বইকে ভালবাসতে শিখবে। তার পরিবার তো তার হৃদয়ে বইয়ের প্রতি ভালবাসাবোধ তৈরি করতে পারেনি; বইয়ের পাতায় পাতায় লুকিয়ে থাকা আনন্দপথের রেখা দেখাতে পারে নি।
বাংলাদেশের সমাজের পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার নেই; নেই বই বিষয়ক আলোচনার আয়োজন। প্রবীণরা ব্যস্ত নানাবিধ আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা নিয়ে। এমন বিরূপ পরিবেশে অভিজ্ঞতাহীন এক নবীন নিজে নিজে বইপ্রেমিক হয়ে উঠবে এ প্রত্যাশা বালখিল্যতামাত্র। আর এর দায় তরুণদের উপর চাপিয়ে দেয়ার অর্থ নিজের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা লুকিয়ে রাখার অপচেষ্টামাত্র। অর্থাৎ আমি মনে করি, বই না পড়ার গ্লানি তরুণদের নয়, প্রবীণদেরই। এই প্রসঙ্গে প্রাচীন প্রবাদটিও আমার ধারনাকে সত্যায়িত করে। যেখানে বলা আছে "Like father like son"|

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক