শুক্রবার ১৮ই বৈশাখ ১৪২৭, ১লা মে ২০২০
কবিতা
প্রণবকুমার চক্রবর্তী
আমার হারিয়ে যাওয়া ইচ্ছেটা
আমি খুঁজছি
আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ইচ্ছেটাকে
যে ইচ্ছেটা
পথ চলতে চলতে
হঠাৎ একদিন বিকেলে দেখেছিলাম
আমার বাড়ির কার্ণিশে বসে আছে
ইচ্ছেটা যেন একটা সাদা পায়রা
তার পায়ে বাঁধা একটা চিঠি
নিশ্চয়ই কোনও রাজকন্যার প্রেমপত্র ভেবে
আমি হাত বাড়িয়েছিলাম
কিন্তু
সে আমাকে ধোকা দিয়ে
উড়ে গেলো
পাহাড় , নদি এবং অরণ্য পেরিয়ে
এক অচেনা অজানা পৃথিবীতে ....
মাথার ভেতরে গজিয়ে ওঠা
সমস্ত ছোট-বড় চিন্তা এবং ভাবনাগুলো
নিজস্ব গলি পথ ধরে চলতে চলতে
হঠাৎই
নেমে থমকে দাঁড়ায় মনের আঙিনায়
যেখানে
খড়্গ হাতে নিঃশব্দে
লুকিয়ে বসেছিলো অস্থির সময়
সেই অস্থির সময়ের শাসানিতে
বুকের ভেতরের
লালিত হওয়া কৈশোরিক স্পর্ধা নতজানু হয়ে
বারবার নিজেকে সমর্পণ করে
ভিক্ষে চাইছে নিজের অস্তিত্ব ....
ঋতুবতী সময় এখন খড়ার কবলে পড়ে
নিজেই মুখ চেপে আর্তনাদ করে চলেছে
তবু বলছি
এসো আমার সেই পুরাতন কৈশোর ,
আমার পুরাতন যৌবন
তৈরি করো
শুষ্ক ধূসর হৃদয় মাঝে এক নতুন ঘূর্ণাবর্ত ,
এক নক্ষত্র খচিত রাতের বৈভব।
সুদেব চক্রবর্তী
বোধ
বোধের মূল্য না দেয়া বোধজীবিরা
প্রশ্ন তুলছে মূল্যবোধ নিয়ে!
উচ্চ মূল্যহারের শতকে প্রেমের বাজার সস্তা, তবু মিডিয়ায় ভাসে মুদ্রাস্ফীতির খবর।
বোধের শাখায় বসে গান গায় বিরহী পাখি;
চোখে জল আসে না বলে মেঘও জমে না,
ধেয়ে আসে মেঘতাড়–য়ার দল।
সুবোধরা পালায়- নির্বোধরা ঘুমায়;
মূল্যের অভাবে হারিয়ে যায়
আমাদের সব বোধ।
মাহমুদ হাসান আবির
ব্যাক্তিগত গান
একটি জানলা বেয়ে ইকটু পরে যে অন্ধকার নেমে যাবে, তা তলিয়ে দিবে পুরো শহর। শিকল ভাঙার শব্দ পকেটে পুরে হেঁটে বেড়াবে সমস্ত শহরটাতে। যানবাহনের আলো জ্বালবার ক্ষমতাকে রিহ্যাবে পাঠিয়ে দিবে নিয়ন আলোদের দলনেতা। কিছু মহিলা তখন অন্ধকারের পকেট থেকে শুনে নিবে সেই শিকল ভাঙ্গার শব্দ। এই শব্দ শুনালেই প্রকাশ্যে ধানক্ষেতে ফুল আসবে অজস্র। ধানফুলের পরাগ মেখে শান্তির নিদ্রা সংগ্রহ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে আমাদের পরস্পরের দূরত্ব।
এমন জানলা খুলে দেবার দায় যে নিবে, তিনি মূলত একটি ব্যক্তিগত গান।
সজল কুমার টিকাদার
ওষুধের পাতা
টেবিলের উপর আলো হাতে
ওষুধের পাতাটি চুপচাপ বসে থাকে।
পাখিরা যে আলো ডেকে ডেকে জাগায়
ডুবুরির টর্চ খুঁজে পায় অদৃশ্য অতল;
এ আলো তার থেকে কম কিছু নয়!
অন্ধকার আছড়ে পড়ছে যে জীবন তটে
নিয়ম করে দুইবার জোয়ারের মত
তার কাছে সে এক আশার স্থল!
আদিত্য আনাম
ডান্সিং দ্য ইনার লাভ ইনসাইড দ্য ফিলিং ফরেস্ট
[ Dancing The Inner Love Inside The Feeling Forest ]
দূর মেঘ ভেঙে ভেঙে উড়ে আসে প্রসন্ন পাখি
কাজলরাঙা জোড়া চোখ তার;
আমার বাহুর দরজায় লাগানো খিল আর
অবরুদ্ধ বির্মষ তালা খুলে খুলে যায়
তার বিষণ্ন কণ্ঠের নিপুণ আহ্বান।
সে-
ভীরু
পা'য়ে
হেঁটে
হেঁটে
চলে
আসে
আমার
হৃদয়ের
সমুদ্র
সৈকতে; উত্তাল ঢেউ নিজের ভিতর ভাঙে
ভেঙে
ভেঙে
ঘুমন্ত
শিশুর
মতোন
হয়ে
যায়
তীব্র
কান্ত; এক সদ্য শীতল ফোঁটা পাপড়ির দানা।
ওঁ পাখি, কে তুমি?
তুমি কি প্রেমের সিম্ফনি?
তোমার কণ্ঠে আমার হৃদয়ের হারমোনি- ঘোরগ্রস্থ!
অনুভূতি একগুচ্ছ প্রফুল্ল ঘাস
মুগ্ধ শিশির নেমে যায় সেই ঘাসের সুক্ষ্ম নাভী বেয়ে!
ওঁ পাখি, এইখানে থাকো তুমি মনের বনে
এই বনে ভরাফুল ফুটে আছে মায়া মায়া
এই বনে গহীন রাতে চাঁদ জেগে ওঠে
পিকাসোর নিজের হাতে আঁকা চাঁদ!
নেশা নেশা জোছনা গলছে দেখো!
অবস বৃক্ষের ডালে উড়ে যাও
বসো, গাও গান ওঁ পাখি গান গাও
তোমার
গানের
সুরে
নাচুক
গভীর
বনের
ফুল-
দেখো, আরো দূর দাঁড়িয়ে দুলছে কীভাবে বিশুদ্ধ প্রণয়ের মূল!
Watching The Dancing Of The Inner Love Inside The Feeling
Forest.
Oh! Really I Love This Love Inside Growing The Love.
এইখানে একটা অনন্তকাল থমকে থাকুক গভীরতা ছুঁয়ে
জন্ম হোক পরিতাপহীন, যন্ত্র ও জটিলতাহীন এক
পরিণত পরা-প্রেম- মায়াবাস্তব মুগ্ধতার!
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: হোর্হে লুইস বোর্হেস
বৃষ্টি
হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায় সন্ধ্যা
এখন যেমন করে
অল্প গুড়ি গুরি বৃষ্টি ঝরছে বাইরে
ঝরছে অথবা ঝরেছে, বৃষ্টি নিজে কিছুই নয়
নিঃসন্দেহে যা অতীতে ঘটে যায়
যে শোনে এর ঝরে যাওয়া তাকে মনে করিয়ে দেয়
এমন একটি সময় যার মধ্যে আছে অদৃষ্টের পরিহাস
ফিরিয়ে আনে তার জন্যে ফুল যার নাম ‘গোলাপ’
এবং এর লাল রঙের হতবুদ্ধ লালভাব
বৃষ্টি যা ছড়িয়ে দেয় জানালার কাচে তার বেপোরোয়া
উজ্জ্বল করা আবশ্যক
ভুলে যাওয়া শহরতলী
আঙুরের গাছে লুকিয়ে রাখা কালো আঙুর
বহিঃপ্রাঙ্গণ নেই এখন আর, সন্ধ্যার বৃষ্টি
এনে দেয় কণ্ঠস্বর, আমার বাবার প্রিয় কণ্ঠস্বর
যে ফিরে আসেন এখনও, যে মারা যাননি কখনও
অণুগল্প
আগন্তুকের সাহায্য
বাঁধন অধিকারী
-আব্বা আমার আবার খিদে লাগছে।
-কি করুম রে বাপ, আমগো পুঁড়া কপাল। না হরলাম পড়ালেহা না হরলাম চাকরি।
-আব্বা আমি পড়ালেহা করমু। তোমার সব দুঃখ কষ্ট আমি শেষ করুম আব্বা।
-আল্লাহ্ যেন মুখ তুলে চায় রে বাপ। আল্লাহ্ যেন মুখ তুলে চায় তোর দিকে।
অসহ্য ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে রনি পথে নেমে আসে। তবে পথও যেন তাকে ফাঁকি দিচ্ছে। পথের এপার ওপার কেউ নেই। কেউ নেই তাকে সাহায্য করার মতো। কেউ নেই তাকে দু’মুঠো ভাত দেবে। সবাই লকডাউন পালন করছে। গত তিন দিন লকডাউন পালন করছে রনি ও রনির আব্বার পেট। জমানো টাকা শেষ করে এখন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে রনি ও রনির আব্বা। রনির মা আত্মহত্যা করেছে, পরের বাড়ি কাজ করে যাওবা দু’পয়সা রোজগার করতো, শকুন চোখ তাকে গ্রাস করে ফেলে। জোর করে ধর্ষণ করে বাড়িওয়ালার ছেলে। আত্মসম্মানে আঘাত লাগায় নিজেই নিজেকে নিয়ে না ফেরার পথে। রনির উদ্দেশ্যহীন পথচলার বাঁধা হয় এক আগন্তুক। লোকহীন জনপথে দেখা মেলে তার।
-কোথায় যাচ্ছো তুমি?
-কই আর যামু কন? খিদেই পেট টা চোঁ চোঁ করছে।
-কেন? তোমার বাড়িতে কেউ নেই?
-আছে, আমার আব্বা।
-তোমার আব্বা কাজ করে না?
-করতো। কিসের লাহান যেন তাও বন্ধ কইরা দেছে।
-আমার সাথে চলো।
-কোথায়?
-তোমার খাবার আমি দেব।
রনি চললো আগন্তুকের পিছন পিছন। মিনিট দশ হাঁটার পর এক বড় ঘর থেকে রনিকে দেওয়া হলো কিছু খাবার। আর বলে দিল, যখন ফুরিয়ে যাবে আবার এসে নিয়ে যেও।
No comments:
Post a Comment