সোয়েব মাহমুদ

সোয়েব মাহমুদ

মন্ত্রীসভা এবং বাজে কবিতা

একদিন ছেনাল বেশ্যার উরুতেও জায়গা হবে না নগরপিতার।
একদিন শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকবে দশ-দশটা শুয়োর,
ওরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে করুণা করে ঘুমাতে বলবে।  
একদিন শহরের আনাচে কানাচে 
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মশাগুলো-
কালো কোটের দালালকে চ্যাঙদোলা মশারী টানিয়ে 
ফুটো করে ঘোরাবে নগরময়- শেখাবে 
উত্তর- দক্ষিণ উত্তর- দক্ষিণ।
একদিন সব কিছু-
সব কিছু ছাপিয়ে সব শেয়ারবাজারের 
কারসাজিকারীদের স্থান হবে হাইকোর্ট মাজারে,
ওদের সাথে তখন শুধুই কথা বলবে কাগজের মুখ -টাকা।
একদিন ওয়াসার প্রধানের মেয়ের বিয়ে হবে-  
বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ঠিক মতন পাওয়া যায়নি 
বিধায় কবুল বলবার ৫ মিনিট পর নিকাহবিচ্ছেদ ঘটে যাবে।
একদিন দুর্নীতি দমন কমিশনার দেখবেন তার জিপারে
সরল বিশ্বাসে ঝরে গেছে তার দন্ড, 
উইপোকা কিলবিল করছে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পা’দুকায়।
একদিন বন্যার পানি নেমে গেলে- 
একদিন বাংলাদেশ ব্যাংক শুন্য হয়ে গেলে 
তামিম ইকবাল আর দরবেশবাবা জানবেন আবেগে 
আমরা হিসেব কষতে ভুলে যাই- 
একটা সময় এলে ভাবি 
আমাকে কোথাও জবাবদিহিতার কিছু নাই।
একদিন এইসব বাজে কবিতা লিখতে লিখতে - 
প্রধানমন্ত্রীর হাসিতে হাসি মিলিয়ে 
হাসতে হাসতে আমিও 
বসে যাবো হয়ে একাডেমি প্রধান - 
অথবা বিকলাঙ্গ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র- 
নিয়োগ দিতে থাকবো অথর্ব গো-বেষক, অনুবাদক।
সোনার বাংলায় ঝলমল ঝলমল করবে 
ষাট বছর আগেকার ক্লাসিক অথচ 
বাংলা যাবে না কোথাও,
বাংলা থাকবে না কোথাও!
একদিন সারা পৃথিবীর মানুষ - 
আস্তিক হয়ে উঠবেন- 
ঈশ্বরভীতি সৃষ্টি হবে- 
কারণ তারা জানবেন-  
ঈশ্বর আছেন - 
ভালোভাবেই বিরাজ করেন- 
তা নাহলে 
বারোভাতারী বাংলাদেশ টিকে থাকে কি করে?



কবি এবং ষাট পয়সা বৃত্তান্ত

ষাট পয়সার নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা কবি’র প্রতিবাদে রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে যায়
কবি, কবি’র দাঁড়ানো হয়না সমাজে!
কবি ভুলে গ্যাছে কবে খেয়েছে ভাত পরিবারে,
কবে হেসেছে প্রাণখুলে?
বাবা মাথা হেঁট করে বাজারে যায়,
মা সেলাই করে কবিপুত্র জন্মের কষ্ট।
কবি ভুলে যায় বোন কবে দিয়েছিল শেষ পরিচয়।
প্রেমিকা বলে গেছে যাবার সময়-
উঠতে পারলে ষাটপয়সার কাগজ থেকে দেখা করে বিয়ে খেয়ে যেও পরবর্তী সয়ম্বর সভার।
কবি বসে থাকে রোদ জর্জর চোখে, মশাল জ্বলা বুকে।
চায়ের দোকানের খিস্তি খেউরে অথবা তীব্র আর্তনাদে।
শহর গড়ায় সভ্যতায়।
রাষ্ট্র দাঁড়ায় বিনির্মাণের উন্নয়নে,
কবি দাঁড়াতে পারেনা,
কবি হাঁটতে পারেনা বুকে ব্যাথা খুব।
কবি’র আঙ্গুলে দাঁড়ানো পতাকা উপহাস করে,
কবি বাড়ি ফেরেনা
ঘর হারানো লোকমুখে শোনা কালো কৌতুকে।
রাস্তায় মাঝে দ্যাখা হয় কিছু
ফেরীওয়ালা, কায়কাওসের ছেলে অথবা বিব্রত ময়ুরের সাথে।
দ্যাখা হয় বেনিয়া বেশ্যাদের উর্বর স্তনবাহী অনুর্বর যোণীনির্ভর মেদের সাথে।
দ্যাখা হয় ধর্ষক কবিতার পুরষ্কার নেয়া একুশের স্মরণসভা।
দ্যাখা হয় কুকুরের পা তুলে পেচ্ছাপ করা নষ্ট আয়োজিত কবিতা উৎসবের।
এত কিছু দ্যাখতে দ্যাখতে দ্যাখা হয়না,
কবি পিতার মলিন মুখ,
কবি মাতার বিষণ্ন চোখ,
বোনের ভেজা আঁচল,
প্রেমিকার ন্যায্য অবহেলা।
কবি বাড়ি ফেরেনা,
কবি মিছিলে যায়, মিছিলে ঘুমায়।
বাবা জেগে থাকে।
কবি পিতারা মারা যান সন্তানের প্রথম কবিতায়।
কবি’ মাতাদের আত্মহত্যার কারণ প্রথম লেখা-অ।
তবুও কি থামে কবি, থেমেছে কি কখনও?
জনতার আগুন কলমে নিয়ে অধিকারের দাবীতে লেখা ফেষ্টুন,
প্রেমিকার ওড়নায় আদায়কৃত নামাযের কারণে ব্রাত্য সে
সামাজিক সাপ্তাহিক বাজারের ছোট ফর্দে।
তবুও থেমেছে কি কখনও মহানায়ক!
কবি পিতারা কবি জন্মের অভিশাপে বন্ধ করেছেন যৌনক্রিয়া
কবি মাতারা রুদ্ধ করেছে পথ জরায়ুর।
তবুও কিছু কি এসে গ্যাছে কবিতার?
আর তাই
জনশ্রুতি আছে একজন কবি’র, একজন মহানায়কের লাশ ঈশ্বর অগ্রাহ্য করেছে সহস্রবছর আগে।
জনশ্রুতি আছে পচে গলে যাওয়া কবি মৃতদেহ হয় দূর্দান্ত জৈব সার।



তোমাদের ছাতা ছিলোনা

আমার মৃত্যুর পর অবশেষে বৃষ্টি নামলো, ভিজিয়ে দিয়ে আমাকে।
অবশ্য সরে গেলে তোমরা,
এ-ই সাতই জুনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা ছিলে।
এ-ই সাতই জুনের রাস্তায় যারা ছিলে না,
এ-ই সাতই জুনের রাস্তায় ...  হাহ ...
অবশেষে জানলাম
জন্মেই একা আমি, মৃত্যুতে আঞ্জুমান মফিদুল।
অবশেষে দেখলাম-
কোথাও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হয় নি,
কোথাও শোকে তাপে দগ্ধ কালো ব্যাজ ছিলো না।
একাডেমি, শহীদ মিনার
না স্মৃতিসৌধ ; বিতর্ক নেই।
সাতদিনের শোক প্রস্তাব রাখা হয়নি জাতিসংঘে।
শুধু
আমার মৃত্যুর পর বৃষ্টি নামলো।
শুধু
আমার মৃত্যুর পর তোমরা সরে গেলে, তোমাদের ছাতা ছিলোনা।







No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক