রবিবার ৮ই ভাদ্র ১৪২৭, ২৩ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
আরিক্ত অর্ক
পতিত বৃষ্টি
শতবর্ষ আমাকে পোড়ানোর জন্যই আমাকে ভালবেসেছিলে দেবী?
আমি ঋণী তোমার, পচাখের দৃষ্টির কাছে,
ঠোঁটের স্মিত হাসির শিরোনাম ছবিতে।
বেঁচে থাকার এক ইচ্ছে গুলোকে তুমি যতনে রেখো দিবে অতটুকুন নথের ডগায়,
টিপের পাতায়।
আঠা ফুড়িয়ে গেলে যেমন কালছে দাগে আয়নাটাতে অন্ধকার আসে তেমনি করে আমিও অন্ধকার হয়ে যাবো তোমার চোখের দৃষ্টিতে।
মলিন বিষয় হচ্ছে,
নিশ্চয়ই ঠিক করে আঁচল খোলা ছাদে তুমি আর দাঁড়িয়ে রবে না কোন উদভ্রান্ত যুবকের পথ পানে!!
দৃষ্টি তখন কর্পোরেট ভোগবাদী জীবনের কাটাতে।
সময় করে আয়োজনে দোল খাবে তোমার রাত্রি সুখের আদর।
কফির পেয়ালা আনমনে কবি গল্পের মতো হারিয়ে যাবে,
তুমি আমার দেবী ছিলে!!
ভাবতে গেলেই ঘা গুলিয়ে বমি আসে,
অথচ তুমি রোজ নিয়ম করে সংসার বাঁধো।
বায়ন্ ধরো নতুন বুক পশমে।
- তুমি আমার পদবী ছিলে??
শেখ রিপন
আমি আমাকে দেখেছি
আমি আমার স্বপ্নকে দেখেছি, লজ্জাবতী গাছের ন্যায়... কোমল ছোঁয়ায় নুয়ে পড়তে।
আমি আমার ভাবনাকে দেখেছি হালকা বাতাসের হাওয়ায়... কাগজের নৌকার মত জলে ভাসতে।
আমি আমার বাস্তবকে দেখেছি উৎসুক জনতার ঠাট্টাই কুলুর বলদ হতে...
আমি আমার সততাকে দেখেছি
আপন কিছু মানুষের হাতে
করুণ লাঞ্ছিত হতে...
অনার্য নাঈম
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
সংসারের দিকে মুখ করে;
আমি পৃথিবীর দিকে।
মাঝখানে ছিলোনা কোন দ্বিধা
যে ঘুরিয়ে দেবে তোমার মুখটা আমার দিকে
অথবা আমারটা তোমার দিকে।
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
সন্তানের দিকে মুখ করে;
আমি অর্থ ও রাজনীতির দিকে।
মাঝখানে নাই কোন সীমান্ত দেয়াল
অথবা রাষ্ট্রীয় বন্দুক আমাদের দিকে।
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
মৃত্যুর দিকে মুখ করে;
আমি দয়ময় ঈশ্বরের দিকে।
মাঝখানে নেই কোন প্রার্থনা
অথবা প্রেরিত পুরুষের আবেদন।
শেষ পর্যন্ত মানুষ একা
জীবিত অথবা মৃত।
মো.আরিফুল হাসান
বিকেলটা ম্লান হয়ে আসছে
আমার চোখ থেকে খুলে পড়ছে পাতার সবুজ
দিকে দিকে ম্লান হচ্ছে আলো
তোমার মুখের উপর আর ঘুমটা টেনো না প্রিয়তমা।
সন্ধ্যার ক্ষাণিকটা আগে-
আমি আমার নিজস্ব অন্ধকার ঘরে বসে আছি
কেউ কি জানে, রাত নামার কতদূর বাকি?
ছায়া ছায়া হয়ে আসে পৃথিবী।
আমি ভাবছি-
আমার কল্পনালোকে কে থাকে ঘুমিয়ে এমন মৃতবৎ?
আশিক আকবর
নতুন ধারার কবিতা : চার
বূর্জোয়া প্রেম প্রার্থিনীর বাসায় আজকাল
ঢুকতেই পারি না
শেও হৈছে হাতির মতো মোটা
তার বাসার সামনের ফুটপাতে
ইআ মোটা আবলুস এক চা অলা আছে
তার দোকানে প্রেম প্রার্থিনীর কথা মনে করে
তারিয়ে তারিয়ে চা খাই
শেষ বার যখন হাতিনী রিকসা জুড়ে চলে গেছিলো
তখন এক বস্তির মহা মোটা আয়েশী কুত্তাকে
খুব করে আদর করে ছিলাম
ছবি তুলে ছিলাম
ঐ ছবি ফেইস বুকেও আপলোড করে ছিলাম
নতুন ধারার কবিতা : পাঁচ
ওরা আড্ডা মার ছিলো
সাথে আমিও
ব্যাগটা ওদের কাছে রেখে
মেয়েকে আগাইআ দিতে গেছি জয়নুল গেইটে
ফিরে এসে দেখি ওরা নেই
ব্যাগটাও কই?
রেস্তোরার আর্দালিরা যত্নে রেখেছে তুলে
ওরাই আপন হৈআ আশিক কে চিনেছে
কবিরা চিনেনি
যেহেতু ওরাও কবিতা লেখে
আধা কবির কাছে কবির দাম কানা পয়সা
জয়ন্ত বসু
মেঘের বাহুতে বেঁধেছি রাখী-বন্ধন
মেঘের বাহুতে বেঁধেছি রাখী বন্ধন
আকাশের গায়ে এঁকেছি আমি রংধনু।
তুমি আসবে বলে রাতের আকাশ সাজিয়েছি
শিমুল, পলাশ, বকুলে।
কাল সারারাত ছিল অন্ধকারে ঘেরা
অবিরাম ঝরে ছিল শ্রাবনের ধারা।
তোমার নুপুরের শব্দ শুনেছি বাতাসের গ্রামাফোনে
ঈর্ষাকাতর পূর্ণিমার চাঁদ আসেনি আকাশে।
আমার অপেক্ষার প্রহর মিশে গেছে বাতাসে
ভালোবাসার বৈরী স্রোতে
ঘুরপাক খায় বেহুলার ভেলা।
নিষ্ঠুর নিয়তী নিজ হাতে
মেঘের দেয়ালে বাঁধে তানপুরা।।
ধারাবাহিক গল্প
ব্রকলিস্ট
রওশন রুবী
এক
তাড়াহুড়ো করে অফিস বেরুলেও প্রায় দশ মিনিট লেট হয়ে গেল। আটটা পঁচিশের গাড়িটা ধরতে পারিনি এক মিনিটের জন্য। গাড়িগুলো টাইম মেইনটেন করে চলে। একমিনিট বহু সময়। কয়েক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। এদের লেটফাইন আছে বলেই এ অবস্থা। কতদিন এমন হয়েছে রাস্তার এপারে আমি, ওপার দিয়ে গাড়ি চলে গেছে। হাইওয়ে রাস্তা বললেই পার হওয়া যায় না। একটু অসতর্ক হলেই মাস্ট এক্সিডেন্ট। গাড়ি চলে গেলে দশমিনিট পর অন্য একটি আসে। তখন অপেক্ষা না করে সিএনজি দিয়ে স্টেশন গিয়ে গাড়িটা ধরতে হয়। দশ মিনিট পর পঁয়ত্রিশের গাড়িটা এলেই বাম হাত তুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। ক্ষাণিকক্ষণ মনে হলো ড্রাইভার দ্বিধায় ভুগছিলেন, তুলবেন নাকি না তুলবেন? তবু গতি স্লো করায় আমি উঠে পড়লাম। এক রুটে দীর্ঘদিন চলার সুফল বলতে হয়। সব ড্রাইভারই প্রায় চেনে।
উঠেই বুঝলাম ড্রাইভারের দ্বিধার কারণ। মানুষ গিজগিজ করছে। পা রাখার জায়গা নেই। দরজা থেকে ভেতরে ঢুকার কথা কল্পনা করাও বৃথা। সিট দখল করা বীরপুরুষেরা এর মধ্যে পরামর্শের তীরে বিদ্ধ করছেন। কিন্তু কেউ তিন মিনিটের জন্য সিট ছেড়ে দিচ্ছেন না। দরজার মুখে ইঞ্জিনবনাট সিট জুড়ে বসে থাকা ছাত্রীদের ধরে কোনমতে একপায়ে দাঁড়ালাম। অন্য পায়ের আঙুলগুলো একটুকু ফাঁকা পেয়ে ঠেঁসে দিলাম। তিন মিনিট পর স্টেশন এসে গেল। বাস থামনো। বীরপুরুষেরা দাঁড়ানো মানুষটার উত্তাপের নেশায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে চাইলেন। ঝাঁঝের সাথে বললাম,
-আগে বসি, তারপর নামবেন।
এতক্ষণে ইঞ্জিনবনাট সিটে বসে থাকা মেয়েগুলো নেমে যাচ্ছে। একটা সিটে বসে বীরদের বেরুতে দিলাম। ওদের মুখের দিকে না তাকিয়েও বুঝলাম, আমাকে গজব ঢালছেন। দু’একজন পাগড়ি, পাঞ্জাবি পরা লোক গজগজ করতে করতে বিরক্ত হওয়াদের সাথে নেমে গেলেন। থোড়াই কেয়ার আমার। রাস্তায় নেমেছি যখন নিজেকে রক্ষা করেই চলতে হবে। ওদের সংখ্যা বেশি হলেও এভাবে থামিয়ে দিতে হবে।
লোকজন নেমে যেতেই সিটটা পাল্টে নিয়ে বসলাম। ফেসবুক অন করলাম। সেই ভোররাত থেকে উঠে প্রার্থনা, রান্না, ঘরের কাজ, গোসল করে বেরুতে বেরুতে আটটা পার হয়। কর্মস্থলে যেতে একঘন্টা সময় লাগে। সকালে গাড়িতে বসে ফেসবুকে চোখ রাখি। সাহিত্য নিয়ে যারা চর্চা শুরু করেছেন, আর যারা বড় সাহিত্যিক হয়ে ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছেন দু’রকম মানুষকে আমার সমিহ করতে ইচ্ছে করে।
অনেকেই নাক সিটকে বলেন,
-কী সব লিখে আবোল তাবোল। পড়তে গেলেই বিরক্তি ভরে যায়। সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হয় না।
আমি তাদের বলি,
-একটু কষ্ট করে পড়ে ওদের পাশে থাকুন। একদিন দেখবেন এদের থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীর লেখক, কবি।
তারা উত্তরে বলে,
-এদের পড়ে জ্ঞানের কিছুই পাই না। না শব্দ নিয়ে ভাবে এরা, না চিত্রকল্প বা কবিতার ভাব নিয়ে ভাবে। দ্রিম করে দেখবেন কিসের সাথে কি মিলিয়ে লিখে ফেলে। এরা আসলেই কিছু বুঝে না। শুধু বড় বড় বুলি ছাড়ে। এদের মধ্যে অনেকেই আছে ধান্ধাবাজ। গ্রুপ করবে আর দলবল নিয়ে প্রোগ্রাম করে পুরস্কার দিয়ে বেড়াবে। যে দু’কলম লিখতে জানে না, সে নাকি একজন কবি, লেখকের বিচারক। আসলে গ্রুপ করে গ্রুপের লোককে নানা ভাবে ভাঙিয়ে খায়। এক কথায় বলতে পারেন, “কৈ এর তেলে কৈ ভাজা।” যত্তসব বোকার হর্দরা দলে এসে ভিড়ে। বুঝেও বুঝে না। আবার বুঝে উঠলেই দেখবেন একটা গ্রুপ ভেঙে অসংখ্য হয়। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment