Sunday, September 6, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৩১

শনিবার  ৭ই ভাদ্র ১৪২৭, ২২ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
অনন্ত প্রবাহে

রোজই উঠতে উঠতে কত বেলা হয়ে যায়
যখন আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াাই 
তখন চল্লিশ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে
বুঝতেই পারি না কোথা থেকে শুরু করব
বা আদৌ আমার এই সময় শুরু করা উচিত কিনা

এইসময় আমি পায়ে পায়ে জড়িয়ে যাই
মাথাটাও কাজ করে না ঠিক ঠিক
গত রাত থেকে জামাটাও হারিয়ে গেছে
বেশ কিছু অঙ্ক কষা ছিল জামায়
আমার উঠতে দেরি দেখে
কে একজন গলিয়ে নিয়ে পালিয়েছে

টলতে টলতে গাছের কাছে যাই
যেখানে শুরু নেই, শেষও নেই
একটা অনন্ত প্রবাহে
আমি পা রাখতেই কে যেন আমাকে তুলে নেয়
পরিমাণ নয়, পরিমাপ নয়
চলতে চলতে শুধুই বয়ে চলা।

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী 
লিখে যাবো সম্প্রীতির কবিতা

আমি গেয়ে যাব সাম্যের গান
যতদিন না মৃত্যু এসে আলিঙ্গন করে

অবিরাম লিখে যাব সৌহার্দ্য সম্প্রীতির কবিতা
যতদিন এই দেহে হৃদস্পন্দন থাকে।

জানি! তোমরা আমায় নিয়ে কী ভাবছো!
এও জানি! তোমরা আমায় কিছুতেই সহ্য করতে পারোনা।
তবুও আমি ভেঙে পড়িনা,
দূরন্তপনায় ডানা মেলে উড়তেই থাকি।

আমি তোমাদের মতোই রক্ত-মাংসের দেহ নিয়ে জন্মেছি,
জীবনের অফুরান স্বাদও গ্রহণ করেছি।

আঘাতে আঘাতে বেদনার স্পর্শে
কখনো ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে পড়ি
তবুও পিছুটান নেই, তোমাদের মাঝেই থাকি।
আমি তোমাদের সব ক্রোধ আর হিংসুটে মনোভাব
গানলামি আর কবিতার মুর্ছনায় ভাসিয়ে দেব।

ক্ষণে ক্ষণে সময়ের ব্যবধানে
আমি সে তোমাদেরই লোক হয়ে যাবো।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান 
জীবনের অংক 

পাটিগণিতের  সহজ  প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারিনা 
মনের খাতায়  বার বার করেছি কাটাকাটি 
শুধু পাই একই উত্তর যা উত্তর মালায় নেই।
তবুও হাল ছাড়িনি 
খুঁজে চলেছে উত্তর সমাজের বুকে
কখনো কখনো নিজের উত্তরকেই  সঠিক বলে মনে করি 
তবে আবারও মনে হয় আমিতো আর বিশেজ্ঞ নই।
 
জীবনের সেই সুদের অংকটা 
জীবনের শেষের দিকে এসে দেখা যায় সুদের সাথে হারিয়ে যায় মূলধন
মূলধন পরিণত ঋণে 
তাহলে কি সুদের হার ঋণাত্মক ছিল?
যা বুঝতে ভুল করেছি 
তাহলে তো এবার  উত্তর মিলে যাবে 
মিলে গেল মা কেন বৃদ্ধাশ্রমে।


নাদিম সিদ্দিকী
অন্বেষণ 

আমি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে আসিনি
সমাজতান্ত্রিক নেতার ব্যক্তি চরিত্র হরণ করতেও আসিনি আজ
আমি শুধু অপ্রকাশিত সত্যের কথা বলতে এসেছি।

রাজনীতির মেরুকরণে আজ কমিউনিজমের ভেতর
দুটি ধারা
একদিকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার রাজনৈতিক চর্চা
অন্যদিকে তথাকথিত সুবিধাবাদী আন্দোলন।
অবশ্য বিলোপবাদীরা ছেড়ে গেছে অনেক আগেই
কিন্তু রয়ে গেছে তাদের প্রেতাত্মা চাটুকার।
তাইতো সোভিয়েতের পতনের পর যখন থুবড়ে পড়েছে দেশীয় বিপ্লব
ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয়েছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ।

আজ কমিউনিস্টদের ভেতর জেঁকে বসেছে সুবিধাবাদের পাপ
অন্তঃকলহের ভীতে গড়ে ওঠা একচেটিয়া আধিপত্য
গ্রাস করেছে আপাদমস্তক।
গণতন্ত্রের টুপি পরা নব্য ফ্যাসিস্ট সরকার কিংবা তার
মন্ত্রীসভা সমর্থন দেওয়াই এখন আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

কমিউনিস্ট এখন আর সেই কমিউনিস্ট নেই
মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়েছে শ্রেণি চরিত্র।

হে কমিউনিস্ট, তুমি আগে কমিউনিস্ট হও
প্রশ্ন করতে শেখো তোমার তোমাকে
কি
কেন 
এবং
কিভাবে নির্ধারিত হবে বিপ্লবের রণনীতি রণকৌশল?
কোথায় মার্কসবাদ কোথায় লেনিনবাদ
কোথায় সর্বহারার সংগ্রাম শ্রেণিহীন সমাজ?

আজো পল্টনের ফাঁকা ময়দানে সরকার বিরোধী সমাবেশ হয়
প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কিংবা
বিক্ষোভ মিছিল থেকে তোতা পাখির মতো
বিপ্লবী আওয়াজ ওঠে
লাল পাতাকায় ছেয়ে যায় অন্তরীক্ষের বুক।
শত শত বিপ্লবী তরুণ স্লোগান দেয় রোদ্দুরে
“ভাত কাপড় জমি কাজ
লাল ঝাণ্ডার এক আওয়াজ।”
কিংবা
“ভাত দে কাজ দে
নইলে গদি ছাইড়া দে।
কেউ খাবে তো কেউ খাবে না
তা হবে না তা হবে না।”
শহরের বুকে ছিল নামানো হাজারো তরুণের মতো
আমিও কমিউনিজম ভালোবাসি
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ আমাকেও
অনুপ্রাণিত করে আলোড়িত করে ভাবতে শেখায়
শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন আমিও দ্যাখি অহর্নিশি।

হে কমিউনিস্ট, তুমি স্লোগান দিচ্ছো, মিছিল করছো
কিন্তু সে স্লোগান আজ কোন পক্ষে যাচ্ছে
তুমি কোন পক্ষ সমর্থন করছো?

পৃথিবীর দেশে দেশে অণু থেকে পরমাণু কিংবা
পরমাণু থেকেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত হতে হতে
সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন আজ ভগ্নচূর্ণ  মরিচীকাময়।
এখানে রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি
পার্টির বিরুদ্ধে পার্টি
কমিউনিস্টের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট
সেখানে তুমি কোন পক্ষ সমর্থন করছো?

হীন স্বার্থ চরিতার্থের কাছে নত হওয়া সুশীল
আজ তোমাকে কোন পক্ষে নিয়ে যাচ্ছে?
একদিকে বিলোপবাদী কমিউনিস্ট প্রেতাত্মা
অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার শ্রেণিহীন সংগ্রাম
ঝাণ্ডার পদতলে তুমি কোন পক্ষ সমর্থন করবে?
কোন পক্ষে বিলীন হবে তোমার স্বপ্ন নতুন যৌবন?

আমি শ্রেণিসংগ্রামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে আসিনি
বিপ্লবের নামে বিপ্লবী বুলি ছড়াতেও আসিনি আজ
আমি শুধু বিপ্লবের পথ খুঁজতে এসেছিলাম
মার্কসবাদ লেনিনবাদের দীক্ষা নিতে এসেছিলাম।

অণুগল্প
করোনা থেকে বাঁচা
তপনকুমার দত্ত

স্বপ্নদা আমি প্রত্যয় বলছি। পরিস্থিতি ক্রমশঃ জটিল। তবু আপনার ভাবনা বলুন কী করা উচিত।
- এ এক অদ্ভুত জীবন। না দেখা শত্রুর ভয়ে দিন গুজরান । কী হবে এখন, কী হবে পরে বোঝা মুশকিল। তবু খাচ্ছি দাচ্ছি। ঘুমাবার চেষ্টা করছি। ভয় ভেঙে বেরুতে চেষ্টা করছি অঙ্কুরোদগমের উঁকি মারা নবরূপে। এমন অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াই এসময়ের মানুষ ভাবেনি কখনো। তবু বাঁচতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে শরীর ও মনে । অহেতুক ভয়ে ভয়ে মৃত্যুর থেকে রহস্য ভেদের লক্ষ্য নির্ণয় করতে হবে।
প্রত্যয় একটু ধরো।একটু জল খেয়ে নিই।
- ঠিক আছে স্বপ্নদা। আমি লাইনে আছি।
স্বপ্নময় জল খেয়ে আবার শুরু করলো। দিনযাপনের কথামালা।
- হ্যালো প্রত্যয় শুনতে পাচ্ছো ?
- হ্যাঁ পাচ্ছি। বলুন-
- এ এক অদ্ভুত খেলা। ধরো তুমি গোলকিপার। তোমাকেই গোল রক্ষা করতে হবে। পেনাল্টি-পেনাল্টি খেলা। শুধু বল আসছে আর আসছে। পরপর ক্যাচ ধরে। ঘুষি মেরে। ঝাপিয়ে পড়ে। শুধু ঠেকিয়ে যাওয়া আর ঠেকিয়ে যাওয়া। না পারলেই গোল। অর্থাৎ করোনা আক্রান্ত একজন। এরপর অন্যকথা। অন্য ব্যস্ততা। প্রত্যয় বিশ্বাস করো এসব না বলাই ভালো। শুধু নিজেকে দুর্বল করা।
- তবু অন্য কোনো উপায় ?
- এসব নেগেটিভ কথা বাদ দিয়ে শরীর ও মন সুস্থ সামর্থ রাখতে হবে। যখন যা তখন তা করতে হবে। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী’ মনোভাবে প্রতিটি মুহূর্ত সচেতন থাকতে হবে। আপাততঃ করোনা মোকাবিলায়। তবেই বাঁচা। বাঁচার মতো বাঁচা।
- স্বপ্নদা, সাহস পেলাম। ভালো থাকুন।


No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক