গদ্য


শিল্প সাহিত্য ১০৪

কবিতা ও বাংলা কবিতা বিষয়ে 
সাজ্জাদ সাইফ

১.
কবিতা এক অনুভ‚তির নাম, সেন্স, যা ভাষার গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেয়।
সেই বিশ্রাম অনন্য। সত্যিকারের হিভেনলি আরকি। শিল্প এই অনন্যতারই ধারণা। জীবন আর প্রকৃতি, মৃত্যু আর জন্ম, স্মৃতি আর স্বপ্ন, ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়া, সুখ আর অসুখ, সম্পদ আর দারিদ্র্য, বিলাস আর সগ্রাম কেউ কারো অনাত্মীয় নয় শিল্পে।
‘যেভাবে কবিতা হয়’ মানে নির্মিতিটাই শিল্প, অনুধ্যানের সন্ধান করে কবিতা আর কবি সেই অনুধ্যান সহযোগে পৌঁছায় কবিতা অব্দি অর্থাৎ সে-ই অনুভূতিটা ‘যে নিজে ভাষার গায়ে হেলে আরাম করছে বিশ্রামে’, কবি সেই সেন্সটার দেখা পায় ছোঁয়া পায় ঘ্রাণ পায় স্বাদ পায়।
এই অর্থে কবি একজন সাধক নিজ জগত সংসারে, নিজ ভাষাতে উপবিষ্ট। জীবনানন্দ বা রবীন্দ্রনাথ, হুইটম্যান বা জন মিল্টন, অডেন বা বোদলেয়ার, যে কবিকেই বিশ্লেষণ করুন দেখবেন সেখানে এক সন্ধানী সত্তা উপস্থিত। কিসের সন্ধান সেটি?
একই কথা এখানেও, সন্ধান সেই অনন্যসাধারণ অনুভ‚তির, আত্মতত্ত¡ যাকে বলে মোক্ষ আর এইখানে বাহনের নামটি হলো ভাষা, ধ্বনি-অক্ষর-চিহ্ন সহযোগে।
এই যেমন এইদিকে বৃষ্টি হইলো আজকে। দুপুরের বৃষ্টি। গ্রীষ্মের বৃষ্টি। ‘বৃষ্টি’ বা ‘দুপুর’ বা ‘গ্রীষ্ম’ এই যে একেকটা ধ্বনি-বর্ণ-অক্ষর-শব্দ, এরা নিজ নিজ গুণে একক সব অভিজ্ঞতার ভার বহন করে আর ব্যক্তিভেদে বিবিধ ইন্দ্রিয়কে প্রভাবিত করে, আর ভাষায় হেলান দিয়ে এই প্রভাবের চিত্রনাট্যটা লেখেন একজন কবি। মানে এই যে এই লেখার খেলাটা যিনি খেলেন তিনিই কবি, একটা বিশেষ মনস্তত্ত¡ বয়ে বেড়ান 
কবিরা। এইটা সংসারে থেকেই করেন কেউ কেউ, সংসারহীন কেউ-বা।
কবিতা আলো-অন্ধকার-দেখা-অদেখা-জানা-অজানা-চেনা-অচেনা যেকোনও আকার বা নিরাকারকে লেখ্যরূপে উপস্থাপন করে থাকে, জগতের অন্যান্য কাজের মতই এইটা একটা কাজের ফলাফল। সেই কাজ কবির। অন্যরা তা করে না তাই অন্যরা কবি নন।
এই লেখাটা হাইপোথেসিস বৈ বিশেষ কিছু নয়। সত্যিই ব্যপারগুলা এমন। বায়োলজিকাল।

২.
মালার্মে ইউরোপে যেই প্রতীকি আকার দিতে চাইছিলেন কবিতারে, আবার বোদলেয়ার, সেই কাজটা এইখানেও সমভাবেই হইছে, আগে আর পরে, এটাই ভিন্নতা। মধ্যযুগ মোটেও শূন্যতা নয় এই ব্যাসিসে। আর চর্যাপদ একটা ইউনিক সম্পদ বিশ্ব-সাহিত্যে। রামায়ন বা মনসামঙ্গল কোনটাই ফেলনা নয়। বাংলা কবিতা তার স্বরূপ নিয়া রাজনীতি করে নাই বিধায় প্রাতিষ্ঠানিক সারবত্তার প্রসঙ্গে বাংলা কবিতা পিছিয়ে। এই পশ্চাদপদতা উপনিবেশের শঠতা বৈ কিছু নয়। আর, প্রভাব সে যে কোনোভাবেই বিস্তৃত হতে পারে। আদি বাংলার চিত্রশিল্পের স্বত্ব নিয়ে যেমন মধ্য এশিয়ার গৌরব-রথ চালিত!
উপমহাদেশীয় শিল্পে বাংলা কবিতা সগৌরবে উজ্জ্বল আর বৈশ্বিক পটে সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির বর্তমান সমস্ত মানদন্ড ইউরো শিল্পের আরোপিত সত্য, স্বয়ংক্রিয় নয়। হুইটম্যান যা নজরুল তার চেয়ে বামন নন, গোর্কী বা মানিক কেউই কারো চেয়ে হীন নন বরং উঁচু দেখানোর চেষ্টাটা আরোপিত সত্যই একইভাবে।
মাইকেলের কাজ কোনো অংশে শেক্সপিয়ার হতে নিচ নয়। আসলে মানদন্ডের ধারণাটাই কৃত্রিম, এতোটাই যে একে বর্ণবৈষম্যের দোষ দেয়া কোনো দূষণ বা নৈরাজ্য নয় একদম।

শিল্প ও কবিতা নিয়া সঠিক কথা কইতে পারা লোক সামান্যই আছে এই বঙ্গদেশে, যারা আছে তাদেরও অধিকাংশ মিডিয়ার কাছে সত্ত¡াকে বিক্রি করা লোক, যারা অবিক্রিত তাদের সম্মান করি ও ভালোবাসি। খালি কয়টা দেশি বিদেশী মুভির গল্প, কয়টা ইউরোপীয়-কলিকাতাইয়া শিল্পকবিতার গল্প আর কিছু ছন্দজ্ঞান লইয়া ফতোয়াবাজি করে বেড়ায় আর বাকিগুলা, কবিতা নিয়া আলাপের যোগ্যও নয় এরা তবে রেষারেষি ঠিকই করে, ফেসবুকের মতো ওপেন মিডিয়া পাইয়া এনারাই গোষ্ঠি গোষ্ঠি খেলে আর শিল্পে নৈরাজ্য ছড়ায়, এরা মেকী, এদের লেখাও জোড়াতালি মার্কা, এদের কথা ও কাজের কোনও মূল্যই নাই আর্টে, এদেরকে সম্বল করে মাঝারি ও নিম্নমানের লিখিয়েরা নিজেদের ঢোল জারি রাখে, এরা সেই জনতা যাদের চিহ্নিত করে গেছেন কবিদের কবি শার্ল বোদলেয়ার অথচ এরা নিজেদের মহান আর্টিস্ট ভাবিয়া মিডিয়া গরম রাখে-
‘যতই মানুষ শিল্পেরচর্চা করে-তার প্রবৃত্তি থেকে বর্বরতা কমে যেতে থাকে; কেবল স্থ‚লবুদ্ধির ও রুক্ষরাই যৌনক্রিয়ায় সফল; যে কারণে যৌনক্রিয়াই জনতার অন্যতম লক্ষ্য ...
জনতা একে অন্যের ভিতরে ঢোকে; অপরদিকে শিল্পী নিজের থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না!’’ - শার্ল বোদলেয়ার

শিল্প সাহিত্য (৩৮/৩৯/৪০) জ্যৈষ্ঠ (৭/৮/৯) ১৪২৭, মে (২১/২২/২৩) ২০২০
ধারাবাহিক
দ্য সাইন্টিফিক লাভ
রঞ্জনা বিশ্বাস
                
ভালো লাগছে ভলো লাগছে, কেন তা বলতে পারি না/ আলো আঁধার নিকট দূর/ ঘুমপাড়ানি গান ঘুমভাঙানি সুর/ ভালো লাগছে ভালো লাগছে...  এই যে এক অনুভুতি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে , নাম কী এই অনুভূতির?  ভালোবাসা? প্রেম?
 এই বিজ্ঞানের যুগেও কেউ কেউ প্রেমকে অপার্থিব এক অনুভ‚তি বলে মনে করেন। এই প্রেমের মধ্যে কোনো প্রত্যাশা নাই, সহজ কথায় একে তারা বলেন প্লেটনিক লাভ। কিন্তু অনেকে  একে আবার পার্থিব বলেই মনে করেন। কিন্তু যা-ই হেক না কেন পার্থিব অপার্থিব, প্রেম বা ভালোবাসা একধরনের আবেগীয় অনুভ‚তির অভিজ্ঞতা মাত্র। যেহেতু বিষয়টি অভিজ্ঞতার তাই এর সঙ্গে বস্তুগত উপযোগীতা থাকতেই হবে তা না হলে ভালোবাসার সঙ্গে জলে স্থলে বাঁশী বাজার সম্পর্কই বা থাকবে কেন?   
 আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী রবার্ট জেফ্রি স্টানবার্গ তার ‘ভালোবাসার ত্রিভূজ তত্ত¡’ নামক গবেষণা গ্রন্থে জানান, ত্রিভূজের তিন বাহুর মতো  ভালবাসার এই অনুভূতির জন্য দরকার তিনটি উপাদান। এগুলো হল, অন্তরঙ্গতা, কামোচ্ছাস এবং প্রতিশ্রুতি। তার ভাষায়, অন্তরঙ্গতা হলো নৈকট্যের অনুভূতি, কামোচ্ছাস হলো জৈবিক বা যৌন আকর্ষণ আর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে দীর্ঘ ও পারস্পারিক নির্ভরতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। তিনি বলেন, এই তিনটি উপাদানের উপস্থিতি অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে ভালোবাসার অভিজ্ঞতা। এর কারণেই  ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভালোবাসার অনুভ‚তির ভিন্নতা দেখা যায়। অন্যদিকে বিখ্যাত নৃতত্ত¡বিদ হেলেন ফিশার মনে করেন বিবর্তনর পথ পরিক্রমায় মানুষের মস্তিষ্ক তিনটি পর্যায়ের দিকে গুরুত্ব দেয়- কামনা, আকর্ষণ ও সংযুক্তি। ফিশার দেখেন যে, মানুষের কামনা যৌন হরমোন স্টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন দ্বারা পরিচালিত হয়। স্টেস্টোস্টেরন কেবল মাত্র পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা নারীদের সেক্স ড্রাইভেও প্রধান ভূমিকা পালন করে।। টেস্টস এবং ডিম্বাশয়ের থেকে যৌন হরমোন স্টেস্টোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের উৎপাদককে প্রভাবিত করে। এই স্টেস্টোস্টেরন প্রায় সবার মধ্যেই কাম শক্তি বাড়ায়। এদিকে নারীর শরীরে উর্বরতার সময় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সর্বাধিক থাকে তাই এই সময় তাদের মধ্যে যৌন উদ্দিপনা সব চেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়। একারণে ফিশার প্রেমে পড়া ব্যক্তিকে বলছেন, ‘ get you out lookin for aûthing.
’অর্থাৎ প্রেমে পড়েছ ? তো,‘ যাও অন্য কিছু খোঁজ করো’ এবং সেটা কি তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে!
এরপর দি¦তীয় পর্যায়ে আসে আকর্ষণ। এই পর্যায়টি প্রেমের চূড়ান্ত পর্ব। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন তারা আর কিছুই ভাবতে পারে না। এই সময় তাদের ক্ষুধা বোধ থাকে না, ঘুমোতে পারে  না। তারা তখন গাইতে থাকে- জগরণে যায় বিভাবরী, আঁখি হতে ঘুম কে নিল হরি, মরি মরি... তারা তখন ঘুম কেড়ে নেওয়া মানুষটিকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কেবল স্বপ্ন দেখে পার করে দেয় শীত বসন্ত।  এরকম হয় কারণ এই পর্যায়ে  মস্তিষ্কের মনোমাইনস নামে পরিচিত নিউরো-ট্রান্সমিটারগুলি গুরুত্ত¡পূর্ণ ভূমিকা রখে। সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণের চূড়ান্ত লগ্নে উভয়েই এক ঘোর লাগা অনুভূতির স্বাদ পান। মনে হয় কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচহে পারবেন  না। এই অনুভূতির জন্ম দেয় ডোপামিন নামক এক রাসায়নিক পদার্থ যা  সক্রিয়  হয়ে নেশা নেশা ঘোর তৈরি করে। ডোপামিন সক্রিয় হয়ে উল্লাস, উদ্দিপনা বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণের কাজ করে থাকে। এটা পুরস্কৃত হবার জন্য তাড়িত করে। এ কারণে একে রোমান্টিক প্রেমের ভিত্তি বলা হয়। আবার ডোপামিনের কার্যকারিকার কারণে রোমান্টিক প্রেমের ভাবনাগুলো পরিবর্তীত হতে পারে। এর কারণে কারো মধ্যে ভালোবাসার ক্ষেত্রে মৌলবাদিতার দেখা পাওয়া যায়। এর কারণে মানুষ মারাত্মক তাড়না বা প্রেরণা অনুভব করে থাকে যে কখনও কখনও  এই ভালোবাসা যৌনতা থেকেও অধিক শক্তিশালী হয়। এই পর্যায়ে কেউ প্রত্যাখাত হলে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে আত্মহত্যাগুলো এই পর্যায়ে ঘটে। হেলেন ফিশার, স্নায়ু চিকিৎসক লুসি ব্রাউন, আর্থার অ্যারোন প্রমূখ বিজ্ঞানীরা ৪০ জন প্রেমে পড়া ছাত্রছাত্রীদের উপর গবেষণা চালান। তারা প্রেমিক প্রেমিকার সামনে তাদের ভালোবাসার মানুষটির ছবি রাখেন। এই ছবি দেখার পর তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এম আর অই  করা হয়। দেখা গেল- এসময় তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাম এবং কডেট অংশ উদ্দিপ্ত হচ্ছে এবং সেখান থেকে প্রচুর রাসায়নিক পদার্থ ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটছে। এ জন্য দেখা যায় ভালোবাসায় আক্রান্ত মানুষের আচরণ অনেকটাই অসংলগ্ন। নেকটা গাজা, কোকেন সেবন করলে যেমন হয়  তেমন। ঘোর লাগা, টাল মাতাল অবস্থা।
 এছাড়া নোরপাইনফ্রিন নামের একধরনের রাসায়নিকও তার শরীরে প্রভাব ফেলে যার কারণে ঘাম বাড়ে, হার্টবিট বেড়ে। আর সেরোটিন তাদের মধ্যে একধরণের উন্মাদনা তৈরি করে।  হেরেন ফিশার তার গবেষণায় দেখতে পান যে, পাখিসহ সবধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্রিয়াশীল। এর প্রভাবে তাদের মধ্যেও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। ইঁদুরের ক্ষেত্রে তা কয়েক মূহুর্ত, হাতির ক্ষেত্রে  তিন দিন আর কুকুরের ক্ষেত্রে একমাস কাল তা স্থায়ী হয়ে থাকে।
তৃতীয় পর্যায় হচ্ছে সংযুক্তি পর্ব। আর্কষণ যখন সংযুক্তিতে রূপ নেয় তখন সঙ্গী সঙ্গে একধরনের বন্ধন তৈরি হয় যার ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় পরবর্তী প্রজন্ম। এ পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অক্সিটোসিন  ও ভেসোপ্রসিন হরমোন। নারী পুরুষের কামাকাক্সক্ষার জন্য এই হরমোন দুটি দায়ী। সন্তান জন্মদানের আগে মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন বেড়ে যায় যার ফলে মা ও সন্তানের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই অক্সিটোসিনকে বলা হয় ভালোবাসার হরমোন।
বিজ্ঞানীরা বলেন যে, একটি সম্পর্ক কতটা স্থায়ী হবে  তা নির্ভর করে ডোপামিন, অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রসিনসহ অন্যান্য উপাদানের ভিত্তিতে। এমন কি এই হরমোনগুলোর তারতম্যের  ওপর নির্ভর করে কে মনোগামী হবে আর কে হবে বহুগামী। দেখা গেছে রিসিপটর বা গ্রাহক জিনে ভেসোপ্রসিন হরমোন বেশি মাত্রায় থাকলে তা পুরুষকে  করে তুলবে একগামী মনেবৃত্তির। বিজ্ঞানীরা প্রেইরী ভোলস ও মন্টেইন ভোলস নামক দুই ধরনের ইঁদুর নিযে গবেষণা করেছেন। প্রকৃতিতে একদল ইঁদুর হচ্ছে মনোগামী অপর দল হচ্ছে পলিগামী। বিজ্ঞানীরা মনোগামী ইঁদুরর মস্তিষ্কের  ভেসোপ্রসিন প্রবাহ আটকে দিয়ে  তাদের পলিগামী করেছেন আবার পলিগামী ইদুররের শরীরে বেশি মাত্রায় ভেসিপ্রোসিন প্রবেশ করিয়ে তাদের মনোগামি করতে পেরেছেন। তারা অতপর এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, একগামীতা ও বহুগামীতা অনেকাংশেই হরমোনের ক্রিয়াশীলতার ওপর নির্ভরশীল। তা হলে দেখা যাচ্ছে মানুষের শরীরে বিদ্যমান হরমোনই তাকে বিচিত্র সব অনুভূতিরঅভিজ্ঞতা দান করে যা ক্রমে জিনের সারভাইব করার প্রবণতা তৈরির উদ্দেশ্যে চালিত হয়। কামনা সবসময়ই যৌন তৃপ্তির ইচ্ছাকে প্ররোচিত করে এবং প্রজননের মাধ্যমে নিজের জিনকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম সৃষ্টি করে। আর তাই বংশ রক্ষার জন্য যে কোনো প্রাণীর দুটো জিনিস প্রয়োজন- ১.প্রজননক্ষম বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা ২. বংশগতি রক্ষার জন্য যোগ্য যৌন সঙ্গী নির্বাচন করা। দেখা যাচ্ছে ২য় ধাপে-ই নারী-পুরুষের প্রনয়াকাক্সক্ষা তীব্র ভাবে কাজ করে। যে সব  হরমোন এই আকাক্সক্ষার জন্য দায়ী তার উৎপাদন বয়ঃ সন্ধি কালেই শুরু হয়। আর এর প্রভাবের কারণে তখন থেকেই একজন নারী তার সঙ্গীকে উদ্দেশ্য করে গাইতে থাকে Ñ আমার মল্লিকা বনে, যখন প্রথম ধরেছে কলি/ তোমার লাগিয়া তখনই বন্ধু বেঁধেছিনু অঞ্জলি/ তখনও কুহেলিজালে/ সখা, তরুণী উষার ভালে/ শিশিরে শিশিরে অরুণ মালিকা উঠিতেছে ছলছলি। সমাজে এই উঠতি তরুণীর অঞ্জলি দেবার আকাক্সক্ষা বা আবেগের নাম ভালোবাসা। এই আকাক্সক্ষা আরো তীব্র হতে পারে যখন তার সঙ্গী তার জন্য উপহার নিয়ে আসে বা উপহার দেওযার প্রতিশ্রæতি দেয়। যৌনতার নির্বাচনে প্রাণী জগতে এর চল রয়েছে। ১৯৭৫ সালে জীব বিজ্ঞানী আমতোজ জাহাবভি ময়ূরের পেখমকে ফিটনেস ইন্ডিকেটর হিসেবে দেখেন। তার মতে সততার সাথে সুস্বাস্থ্যের বিজ্ঞাপন দিতে হলে এমন একটা কিছুর মাধ্যমে দিতে হবে যাতে খরচের প্রাচুর্য চোখে পড়ে। এটা হতে হবে ক¯টলি অর্ণামেন্টস। আর এজন্য জীব জগতে এই জাতীয় যৌনতার অলংকারগুলি হয় বেঢপ, ব্যয়বহুল আর জটিল। ময়ূরীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ময়ূরের পেখম সহজ কিছু নয়। এই অর্ণমেন্ট বয়ে বেড়ানো নীরোগ ও স্বাস্থ্যবান ময়ূরের পক্ষেই সম্ভব। তাই ময়ূর তার এই ঐশ্বর্য দিয়ে ময়ূরীর মন ভোলায়, মন ভরায়। এদিকে কোকিলের কথাই যদি বলি তা হলে দেখা যাবে সে তার কণ্ঠ সুরেলা করতে অতিরিক্ত ২০ ভাগ শক্তি ব্যয় করে। প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি বর্ণাঢ্য হয় হরিণের শিং। এর কারণ কী? এর কারণ হলো নিজেকে উপস্থাপন করা- ‘দেখো দেখো আমার কাছে তোমার জন্য প্রয়োজনের অধিক কিছু আছে আর আমি এটা সততার সঙ্গেই তোমাকে দেখাচ্ছি। তুমি এলে এ সবের অধিকারী তুমিই হবে।’  এই পেখম, এই কণ্ঠ, এই শিং বেঁচে থাকার জন্য এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এগুলো শক্তির অপচয়। অথচ এই অপচয় যে বেশি করতে পারে সন্দেহ নেই তার সঙ্গী পাওয়ার সক্ষমতা তত বেশি হবে। এটা নারীর লোভের বিষয় নয়। এটা নারীর অভিরুচি। আর এই অভিরুচি তৈরী হয় তার জিনকে নিরোগ করে..

টিকিয়ে রাখার আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে। এক জন শক্ত সমর্থ পুরুষের জিন যেমন শক্তিশালী নিরোগ হবে তেমনি সেই পুরুষটি আপদ কালে তার সন্তান ও তাকে আগলে রাখতেও সক্ষম হবে। কিন্তু মানব সমাজে কি এরকম কিছু আছে? না- নেই। মানুষের পেখম নেই , শিং নেই, কেশর নেই। তার আছে কণ্ঠ । সে তার সুরেলা কণ্ঠ ছেড়ে  গায় - মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী/ দেবো খোঁপায় তারার ফুল। আদিম সমাজে নিজেকে সাজানোর জন্য শিকারী পুরুষেরা গলায় পরতো পশুর হাড়ের অর্ণামেন্টস। এটা দিয়ে সে প্রমাণ করতো যে সে মস্ত শিকারী। কালে কালে দামী বাড়ি গাড়ী হয়ে ওঠে পুরুষের স্ট্যাটাস নির্ধারণের বিষয়। তবে সম্পদ বলতে তার টাকা পয়সা, গাড়ি, বাড়ি-ই কেবল বোঝায় না, তার বুদ্ধিমত্তা, সাহস, দৈহিক সৌন্দর্য, সততা ইত্যাদিও বোঝায়। তবে এসবের কোনো মূল্যই থাকবে না যদি কিনা তা সঙ্গীর জন্য অপচয় না করে। আর একারণে একজন প্রেমিক সর্বোচ্চ ত্যাগ করে তার প্রেমিকার জন্য যে হীরে বা সোনার অর্নামেন্ট উপহার হিসেবে বাছাই করে সেই উপহার হয় প্রেয়সীর কাছে অমূল্য কিছু।  উপহার যে হীরে বা সোনার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, সঙ্গীর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে উপহার নির্বাচন করতে পারে একজন পুরুষ।তবে একথা ঠিক যে, মেয়েরা পুরুষের কাছ থেকে উপহার পেতে যে পছন্দ করে তা তার যৌনতার নির্বাচনের অংশ লোভ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু উপহার দেবার সময় লক্ষ রাখতে হবে যে সেই উপহারের বাড়তি কোনো উপযোগিতা না থাকেঅর্থাৎ চাইলেই  যেন সহজে সেটা ব্যবহার করা না যায়।তবে পুরুষকে মনে রাখতে হবে  ভুল করেও সঙ্গীর স্মৃুতি শক্তিকে আন্ডাএস্টিমেট করা যাবে না।প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করুন ।গবেষকগণ দেখেছেন নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু বিশেষ পার্থক্য রয়েছে।পুরুষের ক্ষেত্রে তাদের উদ্দিপনা কাজ করে দৃশ্যমান বিষয় গুলোর প্রভাবে অর্থাৎ কোনো কিছু দেখলে তাদের মস্তিষ্ক উদ্দিপ্ত হয়। এটা তাদের বিবর্তণীয় জ্ঞান।লক্ষ বছর ধরে আদিম মানুষ এভাবে নারীদের দৃশ্যমান দক্ষতার মূল্যয়ণ করেছে।কিন্তু মেয়েদের বেলায় তার মূল্যায়ণ এক বারেই ভিন্ন।মানুষের মস্তিষ্কের প্রধান রিমোট কন্ট্রোল হলো প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স।এটা প্রধান বা গুরু মস্তিষ্কের সামনে বা অগ্যভাগে থাকে।এই অংশটি আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে, বিচার বিশ্লেষণ করতে, কোনো কিছু অনুভব করতে সাহায়্য করে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে স্নায়ু কোষের সাইন্যাপস। এই সাইন্যাপসের গঠনের হার বাড়ে কৈশোরে।এটা খুব দ্রত বাড়ে এবং স্নায়ু কোষের সঙ্গে সংযুক্ত হয় আবার একই সঙ্গে অপপ্রয়োজনীয় কোষগুলি ধ্বংস করে।এদিকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে সমন্বয় রাখে মায়েলিন সীথ।এগুলো সবই ঘটে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কৈশোরে কেউ যদি গঠন মূলক কাজে নিযুক্ত থাকে যেমন- বই পড়া, দাবা খেলা,বা ছবি আঁকা ইত্যাদিতে তা হলে সেই সব কাজের জন্য প্রযোজনীয় সাইন্যাপসের সংখ্যা বাড়বে আর ঐ সাইন্যাপসগুলো সুদৃঢ় ও সুগঠিত হবে।কিন্তু কেউ যদি কম্পিউটারে গেম খেলে বা টেলিভিশন দেখে বা অপ্রয়োজনীয় কাজে মস্তিষ্ক ব্যস্ত রাখে তা হলে সেই সব অপ্রয়োজনীয় সাইন্যাপস সংখ্যা বাড়বে।স্মৃতি সংরক্ষণ ও স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার কাজ করে এই সাইন্যাপস।এছাড়া ওখানে রয়েছে আমীগডালা যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। কৈশোরে এটা সম্পূর্ণ গঠিত হয় না।ফলে এসময় যা কিছু সে করে সব কিছুই আবেগনির্ভর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে  ছেলেদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ২৫ বছরের আগে সম্পূর্ণভাবে সুগঠিত হয় না। তাই ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তারা থাকে আবেগ প্রবণ। এ সময় তারা যে কোনোধরনের ঝুঁকি নিতে পারে। তাদের বিচার করার দক্ষতা কম হয়। ফলে এই বযসের আগে যে সব ছেলেরা প্রেম করেন তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সম্পর্ক লং-টার্ম হয় না। এ দিকে মেয়েরা তাদের আগেই লাভ করে ফেলে বাচনিক শক্তি। তাদের গঠন গত কাজের কারণেই তাদের সাইন্যাপস সুদৃঢ় হয়, বিচার করার ক্ষমতা ও তাদের স্মরণশক্তি প্রখর হয়।আর তাই মেয়েরা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের স্মৃতি শক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।এটাকে বিবর্তনের যুক্তি বলে।আদিম সমাজে টিকে থাকতে আদি মানবীর এমন সঙ্গী দরকার ছিল যে কিনা নিরাপত্তা ও খাদ্যের যোগান দিতে পারবে। ফলে নারীর দরকার পরে স্মৃতির সাহায্য।সে মনে রাখে যে প্রেমিক পুরুষটি তাকে গতকাল কী অঙ্গীকার করেছিল এবং সে গত সপ্তাহে তাকে কী দিয়েছে এবং কী দেয়নি ফলে ভালোবাসার ক্ষেত্রে বা সম্পর্ক  দীর্ঘ মেয়াদী করতে নারীর কাছে করা অঙ্গীকার গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বুদ্ধিমান পুরুষ।  মনে রাখতে হবে যে জীব জগতের অন্য সব প্রাণীর সেক্সুয়াল সিলেকশনের অর্ণমেন্ট থাকে তাদের শরীরে আর মানুষের ক্ষেত্রে তা থাকে সংস্কৃতিতে।এই সব অর্ণমেন্ট কোনো পুরুষের শারীরিক সুস্থতার প্রমাণ না হলেও  তা ধনসম্পদের দিক থেকে তার সক্ষমতার প্রমাণ।নারী জানে তাকে ও তার সন্তানকে টিকে থাকতে এগুলো ভবিষ্যতে তার কাজে আসবে।তাছাড়া অলংকার যে নারীকে যৌন আবেদন ময়ী করে তোলে সেটা সে নিজেও জানে আর তাই সে যখন তার সঙ্গীর কাছ থেকে অলঙ্কার উপহার পায়  তাতে সে খুশি হয়, তার আত্ম প্রত্যয় বেড়ে যায় আর সে সঙ্গীর প্রতি অনুভব করে বাড়তি আকর্ষণ। আর এ কারণেই বলা হয় - Gold byus honour, gold procures love.




শিল্প সাহিত্য ২৯  মঙ্গলবার ২৯শে বৈশাখ ১৪২৭, ১২ই মে ২০২০

'দেয়ার আর টু কাইন্ডস অফ পিপল অন আর্থ'

ইউসুফ বান্না

আমি আমার অনেক প্রিয় লেখক, দার্শনিক কবিদের লেখায় পৃথিবীর মানুষকে মোদ্দা কথায় দুইভাগে ভাগ করতে দেখেছি। পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে- কথাটা একটা চুটকি থেকে নিয়ে সাশাল বা ফিলোসফিকাল প্রেমিসে অনেক গুরুতর  আলোচনার সূত্রপাত হিসেবে  ঘুরে ফিরে বহুবার চোখে পড়েছে।

যেমনঃ পৃথিবীতে দুই জাতের লোক আছে - জীবত আর বিবাহিত। হলগে চুটকি।

অন সিরিয়াস নোট, এইরূপ বিভাজন নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল মানুষদের ক্রিটিকাল থিংকিং এর গোড়ায় পানি দিয়েছে। যেমনশঙ্খ ঘোষ যখন কবিতায় লিখছেনÑ

হাওড়া ব্রীজের ড়ায় উঠুন
নিম্নে তাকান উর্ধ্বে চান

দুটোই মাত্র সম্প্রদায়
নির্বোধ আর বুদ্ধিমান।

তখন কিন্তু এই বিভাজন আমাকে ভাবাচ্ছে। এই বিভাজনকে অস্বীকার করার জো আছে কি? নেই।

আবার শীর্ষেন্দু লিখেছেন, পৃথিবীতে দুই প্রকারের মানুষ আছে, ভীত আর ভীতিপ্রদ।

বিভাজনের দ্বৈততা কখনো সমবিভাজ্য নয়, ছিলনা কোনো কালে। এই বিভাজনের একাংশে আছে সিংহভাগ মানুষ আর অন্যাংশে আছে হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষের  গোত্র।  এলিট এক কাল্ট যেন। অধরা, ইশ্বরের মতো ক্ষমতাবান। ইলুমিনাটির ধারণা এখনো যে বহাল আছে, কে বলতে পারে নিশ্চিত করে, এই কন্সপিরেসি মিথ্যে?

বিভাজন যেন  ক্যামেরার এপাশ আর অপাশ, যার এপাশে আমি জানি আমি আছি, আছে আমার মত মানুষই সিংহভাগ, আমরাই পুঁজিসর্বক্ষণ সার্ভেইলেন্সে রেখে এই আমাকে, আমাদেরকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটছে গুটি কয়েক জন - ক্যামেরার অপাশে যাদের দেখা যায়না। বর্তমান সময়ের বন্দীদশায় আমার ভিতর লকডাউন সিন্ড্রোম প্রকাশ পাচ্ছে কিনা কে জানে, অন সেট প্যারানইয়া, বাট, ইন দি গ্রান্ড স্কিম অফ থিংস, আমাদের এই শাষন শোষণের বাস্তবতা অনেকটাই আমাকে ফুকো' প্রস্তাবিত পেনোপ্টিসিজমের কথা মনে করিয়ে দেয়।

যেখানে তিনি বলেছিলেনএসাইলামের রোগীদের অজান্তে একজন গার্ড সর্বসময় তাদেরকে নজরদারিতে রাখবেন। এই যে, উইদাউট কন্সেন্ট, অষ্টপ্রহর সার্ভেলেন্সের কথা উনি বলেছিলেন, তার এপ্লিকেশনে পাগাগারদের প্রয়োজন তো হয়নি, গোটা পৃথিবীটাই  এখন উন্নত সব  প্রযুক্তির কল্যাণে কখনো ডিফেন্স বা কখনো হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নাম করে   একটা গারদে পরিণত হয়েছে। এই নিয়ে যারা কথা বলছেন তাদের বিগ ব্রাদারের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। ইন্টার্নাল এফেয়ার নিয়ে একটা গনতান্ত্রিক শাসন কাঠামোতে  কেউ কথা বললেই তাকে ত্রিজন বা দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। বলা হিচ্ছে উইসেল ব্লোয়ার।

এই ধারার প্রথম বিখ্যাত কুখ্যাত প্রথম জিহাদী হলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এসেঞ্জ। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী তকমার সাথে সাথে আরও কিছু কন্সপিরেসি তৈরির মদদ দিতে তার নামে যৌন হয়রানির মামলা ঠুকে অচ্ছুত করে রাখা হয়েছে।

ডিস্টোপিয়ান সাহিত্যের আদিরূপকার জর্জ অরওয়েল ইশ্বরের মত ক্ষমতাবান এই চোখকে বিগ ব্রাদার বলেছিলেন। বিগ ব্রাদার ইজ অয়াচিং!!

এখানে  অরওয়েলিয়ান বাস্তবতা আর ফুকো প্রস্তাবিত পেনোপ্টিকন এর মূল আইডিয়া কিন্তু মিলে যাচ্ছে।

আর এই পাওয়ার প্লেতেশাসকের হাতে যে অগাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তাতে ক্যামেরার এপাশের আমাদের ভেতর থেকে যে কেউ যেকোন সময়ে যে কোন এলিগেশনে ধরা খেয়ে চিরতরে গুম হয়ে যেতে পারি।

we find our every words  judged by people we can't see according to rules we don't know. এই হল কাফকায়েস্ক এর সংজ্ঞা।

ফুকোঅরোয়েল  আর কাফকা এই তিনজনের বলা কথার মূল  দর্শন থেকেও  একটি দ্বিবিভাজন স্পষ্ট প্রকটিত হয়। দুরকমের মানুষের অস্তিত্ব আছে পৃথিবীতে- শাসক আর শোষিত।

         ক্ষমতাবান আর যজমান।

এই tyranny without a tyrant  এর শাসনে সত্যিটা এই যে, এক অরওয়েলিয়ান বাস্তবতা মানুষের সাথে কাফকায়স্ক আচরণ করছে। আর আমরা তা জেনেও মেনে নিচ্ছি বা বাধ্য হচ্ছি বা বেঁচে আছি বিধায় যাপন করে যাচ্ছি জীবনকে। এখানে আমাদের জানা বা ইনফরমেশন গেদারের সোর্সও নিয়ন্ত্রিত।

ইতিহাস যেমন বিজয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে সবসময়হালের সাব-অল্টার্ণ ধারার চল শুরুর আগ পর্যন্ত, তেমনই এই আর্থসামজিক পরিপ্রেক্ষিতগুলাও নানান ইস্যু আর এজেন্ডা বা প্রপাগান্ডার ফল।

Until  the lion learns how to write, every story will glorify the hunter.
hunter  hunted. এখানেও সেই দ্বি বিভাজন।

আমরা কে কোন দলে সেটা নির্ণয় খুব প্রাইমাল ফাইট, ফাইটিং ফর সার্ভাইভেলের হাইটাইম এখন।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক