শুক্রবার ৬ই ভাদ্র ১৪২৭, ২১ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
কমল কুজুর
অন্তহীন
পৃথিবী থেকে মানুষগুলো ক্রমশঃ বিদায় নিচ্ছে।
ঠিক সেই অতিকায় ডাইনোসরের মতো
হঠাৎ করেই যেন সাম্রাজ্যের পতন
- মনুষ্য সভ্যতা।
সরীসৃপগুলো মানুষের মতো নয়।
ওরা আলাদা রকমের
পা নয় ,
ওদের বুকে ভর করেই চলতে হয়।
মানুষের পা আছে
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলাই মানুষের ধর্ম,
তারপরও কী আশ্চর্য -
মানুষগুলো ক্রমশঃ বুকে ভর দিয়ে
চলা শুরু করেছে।
আমার চারপাশে এখন আর মানুষ দেখি না
হরেক রকমের সরীসৃপ দেখি শুধু,
বিষধর, তীক্ষ্ণ ফলাধারী।
তাহলে কি মানুষগুলো সরীসৃপ হয়ে যাচ্ছে?
হয়তো বা
বিষের ভাঁড়ারে পূর্ণ হয়েছে ধরণী।
আজাদ হোসেন
মায়াবী ও চাঁদ
মায়াবী ও চাঁদ তোমার রূপের আগুনে আমায় পুড়াও,
আমার এ কাঁচা অঙ্গ পুড়িয়ে দাও করে সোনা।
আমি হাঁটতে চাই তোমার সাথে,
মায়াবী এই নিঝুম রাতে,
আমি গাইতে চাই তোমার সাথে,
আমায় তোমার সঙ্গী করে নাও।
আমি ভরা পূর্নিমায় তোমার সাথে জাগবো।
তোমায় নিয়ে আঁকবে,
তোমায় নিয়ে লিখবো
আর তোমায় নিয়ে গাইবো
তুমি মুগ্ধ করেছো আমায়।
আমি তোমার রূপে দিশেহারা।
প্রভাতের পাখি গায় ও চাঁদ যেওনা আর একটু সময় থেকে যাও।
এসময় আর ফিরে আসবে কি?
আশায় রইলাম তোমার আশে।
অণুগল্প
বৃষ্টিপাত
নুসরাত রীপা
সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি।
বন্ধের দিন বিছানায় শুয়ে আলসেমি উপভোগ করা যায়। কিন্তু টগর তা করে না। ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা খেতে খেতে রান্না ঘরে ঢোকে।
সুমন খিচুড়ি খেতে ভালোবাসে সাথে কড়কড়ে আলু ভাজা আর গরুর গোশ।
বাসাটা ছোট। পেছনে ঝিল। বর্ষার জলে ঝিল টইটম্বুর। জলের রং সবুজ। পাড়ের গাছগুলোর ডালপালা বর্ষার জলে লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে।
কিছু কিছু ডাল ঝুঁকে পড়েছে জলের ওপর। মনে হচ্ছে নিজের গা থেকে সবুজ ঢেলে দিচ্ছে ঝিলে!
টগর খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে গোসল শেষ করে একটা আসমানী শাড়ি পরলো। কপালে লাল টিপ। টিপ সুমনের খুবই প্রিয়। আয়নায় নিজেকে দেখে টগর নিজেও মুগ্ধ!
একটা চেয়ার টেনে জানলার পাশে বসে তাকিয়ে রইল রাস্তার দিকে। সুমন বলে গিয়েছে টগর যেন আসমানী রঙ শাড়ি পরে। একটা জরুরী কাজ সেরেই ফিরে আসবে। প্রবল বৃষ্টিতে টগর বেরোতে মানা করেছিল। সুমন হেসে বলেছে, তুমি রান্না শেষ করতে করতে আমি ফিরে আসব। দুজনে এক সাথে খাব।
নির্জন রাস্তা। জলে ভিজে ক্লান্ত। টগরের চোখের মতন। টগরের বুকে বৃষ্টি পতনের শব্দ।
আজ এগারো বছর তেইশে আষাঢ় টগর সুমনের জন্য এভাবেই অপেক্ষা করে।
চারুলতা শশী
মধ্য রাতের খুনসুটি ( পর্ব এক )
- এত রাতে ভালো ছেলেরা অনলাইনে থাকে না।
- ভালো মেয়েরা থাকে বুঝি?
- মন ভীষণ বিষণ্ন, তাই আছি।
- মন বিষণ্ন থাকলেই সুদর্শনদের খুঁজে খুঁজে নক দেন?
- শেষ কবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন?
- আজ বিকেলেই, কেন?
- গ্লাসটা পরিষ্কার করে নিয়েন। তাহলে আপনার ভুল ভেঙে যাবে।
- কি ভুল?
- ওই যে, আপনি সুদর্শন।
- গ্লাস পরিষ্কারই আছে।
- তাহলে চশমার পাওয়ার বাড়ান,
- চশমার পাওয়ার বাড়ালে সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা ?
- সুন্দরীদের ছবি স্পষ্ট দেখলে হার্ট ঠিকমতো কাজ করে না। রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।
- সারাদিন ফেইসবুকে সুন্দরীদের প্রোফাইল ঘাঁটলে তো এমনি হবে।
- সবার প্রোফাইল ঘাঁটি না। শুধু মাঝরাতে যাদের মন বিষন্ন থাকে তাদের টা।
- তা তো দেখতেই পাচ্ছি। বাচ্চাকালের ছবিতে গিয়ে লাইক দিচ্ছেন।
- আগে বেশ সুন্দরী ছিলেন।
- এখন নেই?
- এখন তো বয়ফ্রেন্ড আছে। যাদের বয়ফ্রেন্ড আছে তাদের দেখতে কুৎসিত লাগে আমার।
- ধান্দা খারাপ।
- মন বিষণ্ন কেন? বয়ফ্রেন্ড পাত্তা দেয় না?
- বাহিরে বৃষ্টি, শব্দ শুনতে পাচ্ছেন?
- হুম। রোমান্টিক আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় বয়ফ্রেন্ড অন্য মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই শুধু মন খারাপ হয়।
- এছাড়াও বিষণ্নতার কতো কারণ থাকতে পারে।
- কি কারণ?
- বাহ রে, আকাশের কতো কষ্ট! নইলে এমন অজোরে কাঁদবে কেন? অন্যের কষ্টে আমার মন খারাপ হবে না???
- বাব্বাহ! মন খারাপের খুব ভালো যুক্তি দেখালেন।
- যুক্তিতেই মুক্তি,
- তো মন ভালো হয় কিসে?
- আপনি এখন নায়ক রুবেলের মত একটু নেচে অথবা বাপ্পারাজের মতো একটু কেঁদে ভিডিও করে পাঠালেই ভালো হয়ে যাবে।
- এহ! আমি জোকার না।
- কি আপনি ?
- ভালো ছেলে।
- ভালো ছেলেরা কি করে?
- শুধু গার্লফ্রেন্ডের জন্য নাচে। আমার গার্লফ্রেন্ড হবেন? তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারি।
- আমার বয়ফ্রেন্ড আপনার হাড় গুড়ো করবে।
- বয়ফ্রেন্ড সন্ত্রাস নাকি?
- জি, না। ভদ্রলোক ।
- ভদ্রলোক হলে রিক্সায় আপনার সাথে এতো চাপাচাপি করে বসে কেন?
- আপনিও তো ছেলে খারাপ। সেদিন চোখ মারলেন কেন?
- নীল রঙে আমার এলার্জি আছে। নীল শাড়ি পরেছিলেন তাই চোখ চুলকাচ্ছিল।
- চোখের ডাক্তার দেখান। নইলে রাস্তায় পাবলিকের মাইর খেয়ে মরবেন।
- গরীব মানুষ। টাকা নাই।
- রাস্তার মোড়ে বসে পড়েন। ভাঙা থালার ব্যবস্থা করে দিব?
- সে কি! আপনার এই অভ্যাস আছে নাকি? ভাঙা থালাও আছে আপনার কাছে!
- উফ! আপনার মাথা ফাঁটাব।
- মাথা আছে নাকি আমার?
- কেন? মাথা কই গেল?
- খেয়েছেন আপনি।
- ওমা, সে কি কথা! কখন খেলাম?
- সেই কবে! কোন এক ফাল্গুনে। বান্ধবীদের সাথে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে বের হলেন যেদিন।
- এতকিছু খেয়াল আপনার?
- খেয়াল করেই কি লাভ? রিক্সায় চাপাচাপি করে তো আর আমার সাথে বসবেন না।
- লাভ একটা আছে বৈ কি,
- কি লাভ?
- আমার বিয়ের দাওয়াত পাবেন।
- আপনার দাওয়াত লাগবে না। আমাকে এমনিতেই আসতে হবে।
- ছ্যাচড়া নাকি? দাওয়াত ছাড়া আসবেন।
- নিজের বিয়েতে আবার দাওয়াত লাগে নাকি?
- নিজের বিয়ে মানে?
- ওই তো দু’দিন পর আপনার ভদ্দর লোক বয়ফ্রেন্ড পালাবে। তখন আমি ছাড়া আপনার গতি কি??
- আহা! দিবাস্বপ্ন আপনার।
- স্বপ্ন না।
- কি তবে?
- জ্যোতিষ শাস্ত্রে আমার বিশেষ দখল আছে।
- তো আপনার জ্যোতিষ শাস্ত্র কি বলে?
- বলে যে, আপনার ছুঁচো প্রকৃতির বয়ফ্রেন্ড এই রোমান্টিক আবহাওয়ায় আপনাকে রেখে অন্য কোথাও রোমাঞ্চ করছে। তাই আপনার মন খারাপ।
জানি না সে এতদূর থেকে এত বড় একটা সত্য কিভাবে অনুভব করল। তাই কোন এক দ্বিধা থেকে কি উত্তর দিব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে দু’চোখ জুড়ে জলোচ্ছ্বাস নামল, মিনিট পাঁচেক মেসেজ সিন করে রেখে তারপর উত্তর দিলাম।
- জ্যোতিষী সাহেব, এ বিদ্যায় আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার । অন্যদিকে নজর দিন।
- আপনার উওর দেবার মাঝখানের সময়টুকুই বলে দিচ্ছে এ শাস্ত্রে আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
- রাত অনেক হলো, বাজে না বকে ঘুমান এবার।
- সুন্দরী কেউ নক দিলে পর পর দু’রাত ঘুম আসে না।
- তাহলে বসে বসে আকাশের তাঁরা গুনুন। আমি গেলাম।
- বয়ফ্রেন্ড ডাকছে বুঝি?
- হুম,
- আবার যেদিন বয়ফ্রেন্ড ভুলবে, ফিরে আসবেন সেই প্রত্যাশা রইল। গুড নাইট।
- গুড নাইট।
No comments:
Post a Comment