Friday, July 10, 2020

শিল্প সাহিত্য ৮৮


শুক্রবার ২৬শে আষাঢ় ১৪২৭, ১০ই জুলাই ২০২০




কবিতা
শুভ্র সরখেল
কালো গোলাপ

কালো গোলাপ
তোমার শরীরে এখনো পর্যন্ত একটি অরুন্ধতী থাকে না নিরাপদে!
বসন্তে তোমার চুল পড়লে বেশ চিন্তায় অদিতাকে জানিয়ে দাও!
আর জঘন্য রক্তের খোঁজে ছিরে ফেলো বালিকার মনন!
তুমি আসলেই কুৎসিত! খুব কুৎসিত!

কালো গোলাপ
তোমার নারি পোঁতানো মাটির আগামি বেশ অন্ধকারে!
নিদ্রাহীন তোমার বীজ, অনিশ্চিত তোমার অগ্রজ!
আর সত্ত¡ার বাহবা দিয়ে সাজিয়ে আছো প্রেমের মরুভ‚মি!
তুমি আসলেই সরল! খুব সরল!

রুশো আরভি নয়ন
করোনা তোকে অভিশাপ

যুদ্ধ চাই।
স্বাধীনতা হরণের যুদ্ধ,
প্রকৃতির সাথে বোঝাপড়ার যুদ্ধ।
এ যুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো নয়,
প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো অবলোকনো নয়।
এই যুদ্ধ অদৃষ্ট, দুষ্ট,অলক্ষ্মী করোনার বিরুদ্ধে।
যাকে বলে ঘোলা পানিতে মৎস্য স্বীকার।

আজ আমি মন থেকে তোকে অভিশাপ দিচ্ছি,
তুই নিস্তেজ হয়ে পড়বি নিজের লাগানো দাবানলে,
জ্বলে পুড়ে হয়ে যাবি কয়লা।
শেষ হয়ে যাবে তোর দাপট, মেজাজ আভিজাত্য।
তোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে আজ আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। জাড়ি করলাম ৪৪...

হয়তো Ak47 রাইফেলের মতো অনবরত গুলি বর্ষণ করতে পারবোনা তোর নিষ্ঠুরতার অস্তিত্বে, তাই আজ স্যাভলন, ডেটল, ডিটারজেন্টের পাওয়ারেই তোকে আঘাত করার নীল নকশা তৈরি করেছি।
আজ আমি তোকে রগড়ে দেবো, ঝলসে দেবো,করে দেবো ভস্ম।
আজ আমি হয়ে উঠলাম লড়াকু সৈনিক, আজ আমি হয়ে উঠলাম ভ্যাকসিন, মাস্ক, ত্রাণ, স্যানিটাইজার।
আমাকে আজ লড়তে হবে, প্রতিরোধ করতে তোর তৈরি মরণআঘাত।

আমাকে চাইলেও আর ঘড়ে বন্দী করতে পারবেনা কেউ। সরকার, মন্ত্রী-মিনিস্টার, পুলিশ-প্রশাসনকেও না। আমি ছিন্ন করবোই আজ সব বাঁধন।
আমাকে আজ লড়তে হবেই, দেয়ালে পিঠ ঠেকবার  আগেই অস্ত্র হাতে তুলতে হবে, হতে হবে সূর্যের মতো কঠোর।
আমাকে হতে হবে করোনায় প্রাণঘাতী মৃত লাশের কাফন, হতে হবে শেষ যাত্রার খাটি, কখনো বা ধোঁয়াই মুড়ানো আগরবাতি।

জামাল দ্বীন সুমন
পৃথিবীতে রাত নেমেছে

উঠে এসো কৃষক যাদুকর
এসো কোদাল হাতে মাঠে নামি-
যুদ্ধের অস্ত্রগুলো ফেলে দাও
রক্তাভ হাতে কাস্তে ধরি
গড়ে তুলি ফসলের বুনিয়াদ।
সূর্যাস্তের অবনমিত সময়ে
রাত নেমেছে পৃথিবীতে
লৌহনির্মিত রাত শেষে জেগে উঠো
জেগে উঠো ব্রতচারী প্রাণ।
দেখো যোদ্ধার কালোমুখে দীপ্ত শপথ
অন্ধকারে লুকানো তীক্ষ্ন তলোয়ার
এবার যুদ্ধ হবে মানব রক্ষার
আঘাতে আঘাতে হত্যা করো
ধ্বংসবাদী মানুষের রক্তমাখা হাত
ভেঙে দাও হত্যাকারীর জৈবিক চোখ।
আবার সবুজে সবুজে ভরে যাক পৃথিবী
নদী-সমুদ্রে গড়ে উঠুক জীবের আবাস
হৃদয়ভ‚মিতে আসুক প্রেম প্রসবন
মানুষের ছায়ানীড়ে ধ্বনিত হোক মুক্তির গান।


আদিত্য অনীক
ভালোবাসি বলেই তো নাকি

এই যে আমি তোর দিকে চেয়ে থাকি,
এই যে আমি দিনরাত্রি তোকে দেখি,
তুই সুন্দর বলেই তো নাকি?
এই যে এত সারাদিন ঝগড়াঝাঁটি,
ছুতায় নাতায় কথায় কথায় খুনসুটি,
বুকের মধ্যে থাকিস বলেই তো নাকি?
এই যে এত মাথায় মাথায় ঠুকাঠুকি,
কথায় কথায় অর্থহীন বকাঝকি,
মনের মিল আছে বলেই তো নাকি?
এই যে ঘরে মিথ্যে বলে বাইরে বেরোই,
ঘড়ির কাঁটা বন্ধ করে পথ চেয়ে রই, ভালো লাগে বলেই তো নাকি?
এই যে মেলায় যাবার জন্য ডাকিস,
ভিড়ের মধ্যে শক্ত হাতে ধরে রাখিস,
হারিয়ে যাবার ভয়েই তো নাকি?
এই যে এত ছলাকলা বুকের মধ্যে আগুন জ্বলা,
‘ভালোবাসি’ এই কথাটি আজো যে যায়নি বলা,
ভালোবাসি বলেই তো নাকি?

অণুকবিতা গুচ্ছ
অপার অরণ্য

কদমফুল

বর্ষার বিয়ে। পাত্রপক্ষের দাবি মেয়ে জ্যোৎস্নাফুল
কিন্তু ঘরকানা। পুরুষমানুষÑ অত রঙঢঙ না হলেও
দিব্যি মাসাল্লাহ। অতএব, বৃদ্ধা বাবার বৃদ্ধকাল
নিলামে তুলে বিক্রি হবে বৃদ্ধাঙ্গুল। মেয়েমানুষÑ
জন্মের পাপ! ভোরবেলা জানলা ভেঙে দেখা গেল
ঘরভরা কালো কালো কদম ফুটে আছে

চিঠি চিতার আগুন
------------------
ভালো আছো নীল?
একটা মুখস্ত উত্তর। তারপর বরফগলা চোখ, মাথার
মগজে গাঁথা সহস্র চুপচাপ কিছু চিৎকার আর ছিঁড়ে
যাওয়া হৃৎপিণ্ড সেলাই করতে করতে দুদিকেই
বিচ্ছিন্ন হয় মুঠোফোনের অদৃশ্য তার...

মেঘ জানে না চৈত্রবাহার কোথায় কেমন কোনখানে
চিঠি মানেই চিতার আগুন মন জানে!

চুমু
--------
কপাটের ওপাশে কট্টর রোদ। বাতাসের নিমন্ত্রণে
জানালায় বৃষ্টি। বারান্দায় গৃহকর্তার ঠোঁটে ঘরনির
তুমুল তুফান-  সমূহ তচনচ। এই দৃশ্যে যুগলমাছ
পাখি হয়ে যাবে...

অপ্রেম
---------
আমার থেকে বেশি তোমাকে।
-পৃথিবীতে এই বাক্য প্রথম শুনলাম!
চাবুকের চেয়ে চুমুকের শব্দ বেশি জানো না!
-নৈঃশব্দ্য দিয়ে জড়িয়ে ধরতে শুধু, আর?
দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ব্যথা, একসমুদ্র জলের নাচন আর যুদ্ধাহত পেখমের রক্তপল্লব তো খোলাই  রেখেছিলাম।

-কোথাও লেখা ছিলনা বিন্দুমাত্র।
ডুব দাও। থেকেও না-থাকার অর্থ আর কোথাও লেখা হবে না।

অণুগল্প
না,গল্প নয়
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

পালস বিট দেখতে গিয়ে ডা. বসাক দুটো স্পন্দন পেলেন। অজান্তেই চমকে উঠে
মূর্ছিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন সেই নিষ্পাপ পবিত্র মুখে বেদনার আলপনা।
ডা.বসাকের মন খারাপ হয়ে যায় কুমারী মেয়ে অনেক যন্ত্রণা অপমান সহ্য করতে হবে।
সুশ্রী মেয়েটির মুখে এক অদ্ভুত মায়া। মনে অপত্যস্নেহের ঢেউ। বন্ধু দয়ালকে বলেন, একে কোথায় পেলি?
Ñআখন বাজার দিয়ে আসছি হঠাৎ দেখি মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে তুলে রিক্সায় তোর চেম্বারে নিয়ে এলাম।
Ñকার মেয়ে কোথায় বাড়ি জানিস?
Ñসে ঠিক জানা যাবে। ভাবিস না। তুই সুস্থ করে তোল দেখি।

জ্ঞান ফেরার পর আস্তে আস্তে ডা.বসাক সব জানলেন। তাঁর মুখে রামধনুর আনাগোনা।
মনে পড়লো কদিন ধরেই তাঁর ছেলে একটি মেয়েকে বিয়ে করার বিষয়ে মায়ের সঙ্গে জেদাজেদি করছে। বুদ্ধিমান ছেলে তাড়াহুড়োর কারণ মাকে জানায়নি। তবুও তিনি রাজি নন, ছেলেও অনড়। তিনি তখন মাঠে নামেননি, আজ একেবারে রেফারির ভ‚মিকায়।
ভুল হয়তো করেছে কিন্তু ছেলে দায়িত্ব অস্বীকার করেনি, এজন্য তিনি গর্ব অনুভব করেন। এখন ছেলেকে নায়ক ও স্ত্রীকে দজ্জাল ভিলেন মনে হয়।
অসম্ভব সম্ভব হলে গল্পই মনে হবে, তবু সত্য হোলো, বিনু এখন ডা.বসাকের পুত্রবধু।
এবং তিনি ও তাঁর স্ত্রী তৃতীয় প্রজন্মের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক