Sunday, July 5, 2020

শিল্প সাহিত্য ৮৩


রবিবার  ২১শে আষাঢ় ১৪২৭, ৫ই জুলাই ২০২০




কবিতা
পলিয়ার ওয়াহিদ
মানুষের ডালে বসে ডাকে যেন হরেক রঙের পাখি

হে মাবুদ, মানব জীবনে একবার শুধু গাছ হতে চাই
মানুষের ডালে বসে ডাকে যেন হরেক রঙের পাখি
সবাই তো আপনাওে ডাকে, কয়জনে বলো আর পাই
বেঁচে আছি আর কত দিন? গোনা ভরা রাত রাখো বাকি!

As if different colored birds chirp to sit on my branches

O Allah, want to be a tree only once in human life
Where different colored birds chirp to sit on my branches!
All of us call you, how many of us to get proximity of you?
How many days am I alive more? Please, erase the sinful nights!

সিদ্ধার্থ সিংহ
অ্যালজাইমা

কিছুই মনে রাখতে পারছি না আর।

কে যে বলেছিল, অমুক সম্পাদকের সঙ্গে আপনার তো দারুণ যোগাযোগ
আমাকে একটু আলাপ করিয়ে দিন না ...
কে যে বলেছিল, পা অপারেশনের পর দিন দিন আরও সমস্যা হচ্ছে
ভাল কোনও অর্থোপেডিক থাকলে বলবেন তো ...
কে যে বলেছিল, আমাদের বাড়িওয়ালাটা খুব খারাপ মানুষ
আপনার তো ছত্রিশটা বাড়ি
ছোট্ট একটা ঘর হলেও হবে, দেখুন না যদি হয় ...

কে যে কী বলেছিল!
কিছুই মনে রাখতে পারছি না আর
তাই এরটা ওর
ওরটা তার
আর তারটা এর সমস্যা ভেবে আমি যেই সমাধান করতে যাই
অমনি বুঝতে পারি
আমি  কী কেলেঙ্কারি করে ফেলেছি ...

কিছুই মনে রাখতে পারছি না আর
গুলিয়ে যাচ্ছে, গুলিয়ে যাচ্ছে, গুলিয়ে যাচ্ছে কোনটা পুচুসোনা, কোনটা মেঘনা আর কোনটা টুসু ...

জাহাঙ্গীর ডালিম 
কলম খানা রেখে দিও 

কাকে কী দিচ্ছ আমি জানি না,
জানতে ও চাইবো না।
যাকে খুশি দিও সারা দুনিয়ার
সোনা দানা বালা খানা ---
আমার জন্য রেখে দিও শুধু
তোমার কলম খানা।

ম্রিতোষ তত্রাচ
#২৬০৬১৭

জলের ছলাকলা>মাছ
এ্যাকুরিয়ামে সাঁতার কাটে স্বপ্ন
ভোরের কোমল হাওয়া- বেহাত
ধুলা উড়িয়ে গাড়ি ছুটছে...
৯টা-৫টা : ১০-৫টা
৯টা-৬টা : ৯টা-১০টা
৯টা-৯টা :
পাখি বসে থাকে চিলেকোঠায়
দ্যাখে গল্পের ঘোর :
হাঁটাহাঁটি দৌঁড়-
বৃত্তের ভেতর বৃত্ত-ছোটাছুটি। লুটপাট।

আল-আমীন আপেল
“আয়ু ফুরানো দিন”

প্রায়শ মাথা বরাবর দিনবেলা জেগে থাকে সূর্য,
আর দিন ফুরালেই রাত- আকাশ জুড়ে ওঠে
একটা কামনাময়ী চাঁদ! কিন্তু, আজ হঠাৎ
কোনো আলো নেই- ঘুমিয়ে
গেছে রাত; শুধু জেগে
আছে অমাবস্যা
চাঁদ।

খাতুনে জান্নাত
কাল দেখা হলে

কাল দেখা হলে চুমু খাবো ঠোঁটে-
ঠোঁট থেকে তুলে নিও ভুল-চুমুর অদেখা দর্শন,
নিঃশ্বাস-হাহাকার
‘ফুল নেবেন ফুল’ আগ্রহী ফুল-শিশুদের মতো
ভুল জমা আঙুলের ভাঁজে।
সে-সব কি মোছে স্পর্শের শিহরে!
কাল রাখবো বিকেল দুপুরের সাথে-
ঘর ভাঙা আর্তনাদ, নিঃস্ব-কালিঝুলি রাত থেকে
খসুক অনাগ্রহে রোপিতর জন।
চুমুর সিঞ্চনে রূপকথার জিয়ন কাঠি-স্পর্শ
স্পর্শ দাঁড়াক জীবনের সমান সমান
কাল দেখা হলে চমুু খাবো ঠোঁটে-
ঠোঁট থেকে মুছো ভুল-চুমুর অদেখা দর্শন।

সোমনাথ বেনিয়া 
প্রিয় নিরুদ্দেশ - ৮

প্রতিটি পথের একটি ভুল ঠিকানা থাকে
কিছু মানুষের অভিপ্রায় হারিয়ে যাওয়া
অথচ পিছনে ফেলে আসা অবসর, বীজ
প্রতিটি গাছের একটি মোড় থাকে, চিহ্ন
কত সাবলীল, পথিকের হালকা জিরানো, শুরু
প্রতিটি যাত্রার একটি আপেক্ষিক ভয় থাকে
কথাবার্তা চালু হলে সাহসের করিডোর, আশ্রয়
নিখোঁজের সন্ধানে প্ল্যাকার্ড হাতে হৃদয়, প্রশ্রয় ...

গৌতম ঘোষ
“প্রায়শ্চিত্ত”

ভালো থেকো ভালো রেখো
করোনাকে একসাথে রুখো
জীবন তরী বাইতে দিয়ো
ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়ো।
এই তো দারুণ সময় এসেছে হাতে,
সকলকে কাছে টেনে নেও আপন করে,
পিতা-মাতা, ভাই-বোন, কাকা-কাকি,
যাদের রেখেছিলে দূরে বহু দূরে।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যাস্ত রেখেছিলে
অর্থ উপার্জন আর ভোগ বিলাসিতাতে,
কখনো কি ভেবেছো একবার তাদের কথাকে
যাদের ত্যাগ আর অবদানে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ করতে,
প্রতিষ্ঠিত করতে, বঞ্চিত করেছো তাদের সকলকে?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একান্ত আপনে
একমুহূর্ত নিজের সাথে একান্তে আলাপে
এখনো কি হয়না অনুশোচনা?
এখনো সময় আছে, অন্তর থেকে-
নাও আপন করে, সব কিছু দূরে সরিয়ে
দূর করে সব বাঁধা, মান-অপমান ভুলে
পাশে এসে দাঁড়াও, মনের কালিমা ত্যাগে
আনন্দে ভরে উঠুক তোমার জীবন নতুন করে।।

সুজাউদ্দৌলা
প্রকৃতির টিটকারি

অতর্কিতে গেরিলা আক্রমণের মতো
এক পশলা বৃষ্টি এক ঝাঁক মৌমাছির
হুল ফুটানোর মতো ভিজিয়ে গেল
আর এই দৃশ্য দেখে খিলখিল হাসির মতো
চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো রোদ
আমি ভোজসভা থেকে খেতে না পাওয়া
নিমন্ত্রিতের মতো ফিরে যাই অপমানে
মাথা নিচু করে প্রকৃতির টিটকারি সয়ে-

অণুগল্প
উপহার
আম্মানসূরা

স্বামী- এই নাও বিশ হাজার টাকা। এই মাসের পাঁচটা দাওয়াতের গিফট এরমধ্যে সারবা। কারে কত গিফট করবা সেটা তুমি ভেবে বের করো। আমি অফিসে গেলাম। 
স্বামী অফিসে যাবার পর স্ত্রী হিসাব কষতে বসেন, “সালেক সাহেব বিশাল ধনী মানুষ, তার জন্য দশ হাজার রাখতেই হয়। জয়ন্ত বাবু ত বেশ বড় নেতা। তাকে পাঁচের নিচে দেয়া যাবেই না। পাশের বাড়ির ভাবির মেয়ের জন্মদিনের গিফট দুই এর নীচে দিলে প্রেস্টিজ থাকবে না। শেফা ভাবির ম্যারেজ ডে’তেও নাহয় দুই এর মধ্যে একটা শাড়ি দিব। কাজের বুয়ার নাতির জন্মদিনের জন্য এক হাজার টাকা, দুই দিতে পারলে ভাল হত, থাকগে, ও গরিব মানুষ, ওরে এক দিলেই খুশি হবে।” 
পাঁচটা দাওয়াত শেষে স্ত্রী দেখলেন, কেবলমাত্র বুয়ার দাওয়াতেই তার জন্য স্পেশাল বসা, খাওয়া ও ঘরের ব্যবস্থা করে তাকে স্পেশাল মানুষের সম্মান দেয়া হয়েছিল আর সালেক সাহেবের অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশী সাধারণের কাতারে ছিল সে।

আম চোর ও ছোট বাবু
সাঈদুর রহমান লিটন

বাবুদের আমের বাগান। খুব সুপরিচিত বাগান। দীর্ঘ দিন ধরে বাগানটির সুনাম, দুর্নাম ছড়িয়ে আছে। আমাদের হাই স্কুলের পাশে বাগান। প্রতিবারের মত এবার ও আম ধরেছে। বাবুদের আম বাগানের বিশেষত্ব হলো বাগানের প্রতিটি গাছের আম কাঁচা মিঠা । কাঁচা মিঠা আমের মজাই আলাদা। চাকু দিয়ে কেঁটে কচকচ করে চিবিয়ে খেলে মনে হয় নাটোরের কাঁচা গোল্লা খাচ্ছি। কাঁচা মিঠা আমের লোভ সামলানো বড় দায়। বাবু বাড়ির ছোট বাবু আম বাগানে টঙ উঠিয়ে পাহারা দেয়। আম বেথুলের মত ধরে ঝুলে আছে। সবুজ আম। ছোট গাছ। আম গুলো যেন আমাদের দিকে চেয়ে থাকে। বাগানে অনেক আমের গাছ। আমরা স্কুলের দশম শ্রেণির ৪/৫ জন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম বাবুর কাছ থেকে চেয়ে কাঁচা মিঠে আম খাব। অনেকে অনেক মন্তব্য করল, তার মধ্যে দিদার বলল বাবু যে কুঞ্জুস চাইলে দিবে না। হারাণদের বাড়ি বাবুদের বাড়ির পাশে। হারাণ, বাবুর আচার আচারণ ভাল জানে। ও বলল বিষ্ণু কাকু জান থাকতে একটা আম ও দিবে না। ছোট বাবুর নাম বিষ্ণু গোসাই। তবু ও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বাবুর কাছে আগে আম চেয়ে দেখবো যদি দেয় তাহলে খুব ভাল না দিলে অন্য ব্যবস্থা করবো। আমাদের খেতেই হবে আম, তা যে ভাবেই হোক। আম তো আমরা খাবই। আমাদের দলে আম খাওয়ার বন্ধু সংখ্যা বাড়তেই লাগল। অবশেষে গেলাম ছোট বাবুর কাছে বললাম দাদু আমরা চার পাঁচ জন বন্ধু কাঁচা মিঠে আম খেতে চাই। দাদু বলা মাত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। আম খাওয়ার কথা শুনেই আর কোনো কথা না বলেই দিল লাঠি দিয়ে ধাওয়া। আমরা হাঁপাতে হাঁপাতে স্কুলের পর চলে এলাম। কিন্তু আমরা আমের লোভ ছাড়লাম না। তারপর দিন, কাকলীকে ডেকে আমাদের দলে নিলাম। কাকলী আমাদের বান্ধবী। খুব সুন্দর। ভারি চালাক মেয়ে। দারুণ বুদ্ধি রাখে। ছোট বাবুর একমাত্র মেয়ে ঢাকায় থাকে। কাকলীকে মেয়ের মত ভাবে। কাকলীকে মা বলে। তাই ভাবলাম কাকলীকে ব্যবহার করবো। কাকলি ও রাজি হলো। কাকলী কে মেয়ের মত ভাবলেও একটা আম ও দেয় না। কাকলীর ও আম খাওয়ার লোভ আছে। আমরা এখন আম খাওয়ার দলে ২৫/৩০ জন। আমাদের কথা হলো কাকলী, শিল্পী, সোহেলী, সুচিত্রা, মাধুরী ওরা বাবুর সাথে গল্প করবে আমরা বাগানের অপর প্রান্তে আম পাড়বো। ভাবনা মতই কাজ শুরু হলো ওরা বাবুর সাথে গল্প জমিয়ে তুলে আমরা কয়েক জন টিফিন টাইমে আম পেড়ে আনতে শুরু করলাম। আম খাওয়া এভাবে নিয়মিত চলছে। বাবু কাকলীদের সাথে নিয়ম করে সারা দুনিয়ার গল্প জুড়ে দেয়। টিফিন শেষ হলে ওরা চলে আসে। আমরা আম খাই। আমাদের সাথে আরো অন্য ক্লাশের বন্ধুরাও যোগ দিয়েছে। কয়েক দিনে আমের বাগানে আম প্রায় শেষ হতে চলল। শুধু বাবু যেখানে পাহারা দেয় ওখানে কয়েকটা গাছে আম আছে। আমরা হরদম কাঁচা মিঠে আম খেয়ে চলছি। বাবু ওখানে বসে থাকলে আর আম পাড়তে পারছি না। তাই কাকলী বাবুকে বলল কাকু, আজকে আপনাদের বাড়ি যেয়ে গল্প করব। এখানে আর ভাল লাগে না। বাগান তো নানা জনে না কথা বলে। বাবু মেয়েদেরকে মেয়ের মত মনে করে আমের কথা ভুলে যায়। যথারীতি বাবুদের বাড়ি টিফিনের সময় আড্ডা শুরু হলো বাবু ও খুব খুশি। কাকলীদের চা মুড়ি খেতে দেয় প্রতিদিন। বাবু আর বাবুর স্ত্রী এবং কাকলীরা আসর জমিয়ে তোলে। আর আমরা নির্বিঘ্নে আম পাড়তে শুরু করি।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক