Friday, July 3, 2020

শিল্প সাহিত্য ৮১


শুক্রবার  ১৯শে আষাঢ় ১৪২৭, ৩রা জুলাই ২০২০




কবিতা
মহীতোষ গায়েন
বিপ্লবের উলটপুরাণ

বিপুলা পৃথিবীতে এখন উষ্ণ প্রস্রবণ ধারা...
হারিয়ে যাচ্ছে সুখ-বৃষ্টি, হারিয়ে যাচ্ছে গান,
দোদুল্যমান দৃশ্য-কল্প-স্বপ্ন, ওষ্ঠাগত সজীব সত্তা,শান্তি-
অস্থিরতার মধ্যে আগামী ভবিষ্যৎ খানখান।

মননে কৃষ্টি বাসা বাঁধেনি, সোচ্চার তাই অন্ধ প্রতিবাদ-
অবরোধে সন্ত্রাসে সুভাষিত বচনে গ্রাম-গঞ্জ-শহর,
জীবিকার উৎসপথে উন্নয়নের দিশা ...
সংগ্রামের শপথ নেওয়ার এ-সময় প্রহর।

কথায় কথায় উল্টোপথে  হাঁটা ...
মানুষ শুধুই হচ্ছে দিশেহারা,
জল্লাদেরা শাসিয়ে গেল ...
সমাজ তাই বেবাক গতিহারা।

উদ্ধত সংলাপ; আমরা রাজনীতি করি ...
জনগণের আশাপ্রদ সমর্থনে আছে তারা,
পেটে দানা-পানি না জুটলেও অলভ্য জমিতেই
রোপণ করবো বিপ্লবের নবজাতক চারা।

মীর সাহাবুদ্দীন
সতর্কতা ও শৃঙ্খলা

বিপদে পড়লে মানুষ কবিতা পড়েনা
কয়েকটি জীবন কবিতার মত হয় মাত্র
কখনো সংকেত ছাড়াই
মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে
কেউ সংকেত পেয়েও প্রাণ হারায়

একদল ছত্রাক সবার আদরে বেড়ে উঠে
ভালো মন্দ বোঝার আগে
ট্রল করে ভিডিও বানায়
বিপদে পড়লে মানুষের মনে পড়ে
একজন ঈশ্বর আছেন

মহামারী যখন ধেয়ে আসে
কে ঈশ্বরহীন কে ঈশ্বরের উপাশক
ধর্ম বর্ণ কেউ বিভেদে ঠেকাতে পারেনা
সর্তকতা ও শৃঙ্খলা একটি পরীক্ষামূলক জীবনও বটে।

শিখা গুহ রায়
অবহেলা কলমৈ

শূণ্য অনুভ‚তি গুলো ছুঁয়েছে নীল আকাশের বুকে।
মুহূর্তেই কালো মেঘে ঢেকে গেছে পৃথিবী, চারিদিকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে গর্জনের সাথে সাথে বৃষ্টি ওফ আর পারছিনা নিজেকে ধরে রাখতে।
আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে, দগ্ধ চোখে ঢেলে দিয়েছে অসমাপ্ত চুম্বন,
ভালোবাসার চোরাবালিতে সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে গেছে আমার।
বুকের ভিতর হাজারো দগ্ধ ক্ষত জমানো অন্ধকার কষ্টের কষাঘাতে বোবাকান্না হৃদয়ে জমাট বেঁধেছে রং হলুদ, সাদা আর নীল।
অভিমান আর দুঃখ গুলো আজ নির্বাক, তাকিয়ে থাকি দূরে, সিমানা ছাড়িয়ে, ব্যর্থতার গ্লানি আগ্লে বুকে।
একদিন ঠিক আকাশের নীচে দাড়িয়ে মনে খুলে কাঁদবো, আজন্মের হৃনে খুঁজে বেড়াবো না পাওয়া অনুভ‚তি গুলোকে।
জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, কেউ ভালোবেসে আগলে রেখেছে, আবার সেই ভালোবাসা আমাকে নিঃশেষ করেদিয়েছে,
শুধু পাইনি খুঁজে আমার মাঝে লুকিয়ে থাকা আমার আমি-টাকে।

রুদ্র সাহাদাৎ 
শুনছি গান প্রকৃতির 

হতাশার রাজ্যে ডুবে যাচ্ছি চৌদিক নিঃশ্চুপ
মাঝেমাঝে বাউণ্ডুলে বাতাস বয়ে যায়
 পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা সইতে পারবে না জেনে
সবাই গেছে চলে হোম কোয়ারেন্টাইনে।

আমিও সাময়িক সামাজিক দূরত্বে আছি
          কারো সাথেই তেমন হয় না দেখা
            মানুষ নিজে নিজে  সবাই একা।

সবুজ অরণ্যে মৈনাকপর্বতে শুয়ে শুয়ে
                         শুনছি গান প্রকৃতির।

কায়েস সৈয়দ
জলজ

নুন আর নুনুর সাদৃশ্য খুঁজে
আগন্তুক এক জলজ
সমুদ্রের গহীন থেকে উঠে এসে ডানায়
ভাবে
দুটোর সংস্পর্শ ই তার সৃষ্টির কারণ

তন্ময় পালধী
আকাঙ্ক্ষা

হে হৃদয়, নীরবতা ভাঙো
ঝড় উঠেছে
অশান্ত এ সময়ে
শব্দগুলো চুপিচুপি
ঘর ছেড়ে মাথা কুটে
ভাষার দুয়ারে
আর
দানবের আস্ফালনে কেঁপে উঠি
হে হৃদয়, নীরবতা ভাঙো।

মো. আরিফুল হাসান 
শ্রদ্ধা ও ব্যাথা মিশ্রিত আলাপন

বুকের ভেতর একটি বাঁশির সুরে, হারিয়ে
যাবো হারিয়ে যাবো আমি। একটি বিষাদ
গুমরে কেঁদে মরে, মিথ্যে আমি হয়েছি
বদনামি।

বুকের বেতর উতালপাতাল ঢেউ, বুকের
ভেতর বাজে ঝড়ের সুর। মূর্ছনা এক ছড়িয়ে
পড়ে বুকে। কানে বাজে প্রিয়ার পায়ের
নূপুর।


ছোটগল্প
এই সময়
জাহাঙ্গীর ডালিম

রোদটা বেশ হেলে পড়েছে। গামছাটা দিয়ে ভালো করে কপালের ঘামটা মুছে নিলো চৈত্র মাস অথচ আকাশে ছিটে ফোটা মেঘও নেই। এই রিকশা যাবেন? রিন রিনে কণ্ঠে শুনে ফিরে তাকাল ফেলু মিয়া। দুটি মেয়ে একজন সাদা সালোয়ার কামিজ পরা,  অন্যজন নীল, কই যাইবেন? নতুন বাজার। দূর - দূরান্ত রেস্তোরা উঠেন।
কত দিব? 
দিয়েন, সব সময় যা দেন।
পনেরো টাকা দিব।
কম হইয়া যায় গো মা। জ্যাম ঠেইলা যাওন লাগবো। পঁচিশ টাকা দিয়েন। কিসের পঁচিশ টাকা। পনেরো টাকা দিয়ে রেগুলার যাই। না, যামুনা।
মেয়ে দুটো এগিয়ে গেল। ফেলু মিয়া শরীরটা ভালো না। গা- টাও কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজ করছে।
বাড়িতে ছোট মেয়েটার জ্বর। ঔষুধ নিতে হবে, না হলে আজ আর বের হতো না সে। মেয়ে গুলো মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিকশা নেই নীল জামা ব্যস্ত ভাবে ঘরি দেখছে।
ফেলু মিয়া এগিয়ে গেল-
উঠেন বিশ টাকা দিয়েন,
মেয়ে দু’টো চোখা চুখি করল। তারপর উঠে বসল।
ফেলু মিয়া প্যান্ডেল মারতে শুরু করল। শরীর আর আগের মতো
জোর নেই বয়স এখন পঞ্চাশ। রোগ - শোক শরীরে ঘর বাঁধবে, এটাই স্বাভাবিক। রিকশায় ডান পাশ থেকে একজন বলল, দূরে!  শোন, এত এক্সাইটেড হয়ে পড়িস না। আগে দ্যাখ ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়। ভালো কথা, তুই তাকে চিনবি কি করে? রাশেদ তো বলেছে নীল শার্ট পরপ আসবে। আচ্ছা! এই জন্য তুই ও নীল জামা পরেছিস। শোন, ফাজলামে করবি না।
কি জানি করে ছেলেটা? 
কতবার বলব তোকে, ব্যাংকে চাকরি করে।
থাকেতো গাজিপুরে তাই না? 
হু।
গ্রামের বাড়ি কই রে? 
আশ্চর্য। গ্রামের বাড়ি কোথায়, আমি কি করে বলবো? 
ছয় মাস মোবাইলে প্রেম করলি। কথা বলতে বলতে রাতের পর রাত পার করে দিলি, অথচ তার সম্পর্কে কিছুই জানিস না। কিছুক্ষণ দু’জনই চুপচাপ।
ফেলু মিয়া খুব ক্লান্ত লাগছিল।
ছোট মেয়েটার জ্বর।
দুশ্চিন্তা ও হচ্ছিল।
তুই কি ছেলেটার সংগে পাকা পাকি রিলেশন করবি।
যদি সে রকম ছেলে হয়। আর আকাশে কি হবে? 
ধেৎ! ওটা তো ছিল টাইম পাশ। রিকশা মাঝে মধ্যে জ্যামে পড়ছে, আবার চলছে। এই ছোট্ট শহরেও জ্যাম লাগে।
চাচা, বায়ে একটু রাখেন।
ফেলু মিয়া থামল। সাদা জামা নেমে পড়লো।
যাইরে।
এই দীপা ... শোন। তুই প্লিজ আমার সঙ্গে আয় না।
মাথা খারাপ। আমার টিউশনি আছে না।
তুই যা। কী সমস্যা? 
আরে বাবা, যা না।
আচ্ছা ... বাই।
বাই
ফেলু মিয়া আবার চলতে শুরু করল। পেছনে খুব সুন্দর একটা রিংটোন বেজে উঠল। মেয়েটা ফের সময় নিয়ে ফোন ধরল।
হ্যালো ... আমি। আমি তো রাস্তায় ... ঝর্নাদের বাসায় যাচ্ছি ... একটা নেট আনতে হবে। আজ কি করে দেখা করব... আজ পারব না ... খুব বিজি ... না ... না ... তো ...  কালকে মাস্ট দেখা করবো ...  হ্যাঁ ঠিক আছে ... আচ্ছা ... রাখি ... বাই
রেস্তোরা এসে গেছে। বেশ সাইড করে রিকশাটা দাড় করাল ফেলু মিয়া। ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে নীল জামা ঢুকে গেল ভিতরে। ফেলু মিয়া বেশ খিদে পেয়েছে। ফুটপাতের ছোট চায়ের দোকানটায় ঢুকল সে।
কী খাবে ভাবছে। চায়ের সঙ্গে কী খাওয়া যায়? বিস্কুট নাকি পাঊরুটি। দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। ফেলু মিয়া সেই রেস্তোরার সামনেই আছে। জ্বর জ্বর লাগছে, মন মতো পেসেঞ্জার ও পায়নি। রেস্তোরার কাঁচে দরজা ঠেলে বেরিয়ে এক নীল জামার সঙ্গে নীল শার্ট পরা একটা ছেলে, ছেলেটা  মেয়েটাকে একটা রিকশা করে দিল। মেয়েটা চলে ও গেল। নীল শার্ট এদিক ওদিক তাকাল। একটা সিগারেট ধরাল। একটু হাটা হাটি করল। তারপর এগিয়ে এল ফেলু মিয়ার দিকে।
এই বাসস্ট্যান্ড কত? 
তিরিশ টাকা।
ছেলেটা দিরুক্তি না করে উঠে বসল। ফেলু মিয়া খুব কষ্ট হচ্ছে। সে প্যান্ডেল মারতে থাকল। ছেলেটার ফোন এসেছে।
হ্যালো ...  আমি ও ... কই তুই?  ছেলেটা কার সঙ্গে  যেন ফোনে কথা বলছে।
হু ... দেখা হয়েছে...  আরে না ... মোটামুটি ...  নীরার সামনে দাড়াতে পারবে না। না ... না... আর ধেৎ!
প্রশ্নই আসে না ... 
আমি আজই আসছি ... এই অমিত... তুই যেমন লোক, রিতু ফোন দিচ্ছে ... আচ্ছা ... হ্যাঁ ...
রাখি।
হ্যাঁ ... রিতু ... কেমন আছ তুমি? আমি তো অফিস থেকে বের হলাম ...  বাসায় যাচ্ছি ... তোমার জন্য।
ফেলু মিয়া কেমন হাপিয়ে গেছে। জ্বরটা বোধ হয় বেড়েছে। ধীর পায়ে সে প্যান্ডেল মারতে থাকে।  রাস্তার দৈর্ঘ্য কি বেড়ে যাচ্ছে ...

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক