Thursday, July 2, 2020

শিল্প সাহিত্য ৮০


বৃহস্পতিবার  ১৮ই আষাঢ় ১৪২৭, ২রা জুলাই ২০২০




কবিতা
ঝুমা মজুমদার
উপেক্ষা 

দু’আঁজলা জল দিয়েছি বলে, তোমাকেও যে ফেরৎ দিতে হবে এমন তো কথা নেই---
যে ভালোবাসে সে এক মেঘডুরে নদী ফিরে তাকায় না, পাছে কাঁদাও যদি
ঠিক স্পর্ধা নয়
তবে উপেক্ষা কে উপেক্ষা করি বরং উপেক্ষা আগুন থেকে আলো তুলে ধ্রুপদীর স্বয়ম্বর সভা থেকে বিতাড়িত কর্ণের মুখের সামনে ধরি সেখানে এখন কুরুক্ষেত্র বলিরেখায় মৃত্যু প্রশান্তি নীলকণ্ঠ পাখীর খোঁজে সহজিয়া সুর আর জোছনার ঘাটে
ঘাটে বাঁধে না তরী

অঞ্জন চক্রবর্তী
গভীর বাণী 

গোমরা মুখে জমছে এ কোন সংকেত----এত অভিমান!
নীল শাড়ি ঘিরে.... মেঘ, ভিজতে জানি বলেই কি
এত বিষাদ---
এইতো দাঁড়িয়ে আছি। জানিনা বরাদ্দ কতটা ধারা
অপেক্ষার রাতে কতটা ভিজব--- জোনাকি অন্ধকারে কাঁথা বুনে চলে অবিরাম
বলো, মাটির কত গভীরে গেলে শোনা যাবে অলিন্দের উঠা নামা--- শঙ্খের বোল?
উঠোনে দাঁড়িয়ে আমি কুড়াব না কোনো কথপোকথন
বরং ক্ষয় ভয় যত ধুলো লেগে আছে এতোদিন
তোমার বর্ষণ মন্দিরায় রিনি ঝিনি নেচে শুদ্ধ-স্নাত হয়ে
ধুয়ে দেব সব ধুয়ে যাবে ক্লান্ত পথের দাগ।
মুগ্ধতা দিয়েছ তুমি
এ কোন কবিতার পাতায় লিখে গেলে একটি নাম
বর্ষণমূখর সর্বনাম।

স্বপন চট্টোপাধ্যায়
আমার কবিতা উদ্ধত যৌবনা

কবিতা বুকের পুঞ্জীভ‚ত সুখ আমার মনের গোপন অভিসার, অন্তরে লালিত প্রেম সুধারস দেখি ছাপার অক্ষরে তোমাতে বারবার।।
চাইনা কবিতা হোক ছন্দবদ্ধ মার্জিত হোক কবিতা তোমার ভাষা, এলোমেলো হোক গাঁথা
কবিতার মালা অন্তমিল ছাড়াই ট্রেজিক ভালবাসা।।
আমার কবিতা হোক উদ্ধত যৌবনা নীল জোছনাস্নাত মায়াবী রাতের কথা, মাদকতায় ভরা অশ্লীলতার কাব্য শুস্ক ঠোঁটে জমা অভিমান ব্যথা।।
কবিতা তোমায় ভীষণ ভালবাসি ফেসবুকেতে পড়লাম তোমার প্রেমে, লিখছি কবিতা নাকি প্রেমপত্র? থাক, তার আর কাজ নেই কিছু জেনে।।

অনিমেষ প্রাচ্য
এখানে প্রার্থনার বদলে শুয়ে থাকে নদী

ক্যানো য্যানো ভুলে যাই সব। সব ভুলতে ভুলতে, এই পাহাড় আর ঠোঁটের সাদৃশ্য নিয়ে কবিতা লেখা আরও দীর্ঘ হতে পারে। সময় য্যানো, মেষপালক।
কী এক অতিক্রান্ত মৃতঘুম, আমাকে প্রচ্ছন্ন করে।
সরাইখানাতে ঘুমিয়ে থাকে মাতাল প্রভু;
আমি বোলি মন্দির, -এখানে প্রার্থনার বদলে শুয়ে থাকে নদী; ঈশ্বরের মদ খাওয়া চোখের দিকে তাকালে, প্রেমিকার কথা মনে পড়ে।
অথচ,-পৃথিবীর সব চোখই নিষ্পাপ।
বরং, প্রশ্ন করা যেতে পারে তাকে
যার প্রেম অতি ক্ষীণ
‘কী নিয়ে বাঁচো তুমি? ব্যর্থ হও; এবং প্রত্যাশাকে আরও দৃঢ় করো।’
ঘাসকে আমি প্রেম বোলি। সেইসব আকস্মিক দৃশ্যের প্রতি, ঢুকে পড়ি। অথবা ধরা যেতে পারে,
বেইলী রোডে শুয়ে থাকা, রমণীর হৃদয়- যা, পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুন্দরতম ঘাস।

রমেন মজুমদার
ক্ষয়িত সোপান

যে সোপানে নিত্য স্বাক্ষী ধৌত অপরাধ!
কত খুনির হাত-পা ধোয়া এমনি করেই চলে
এমন স্বাক্ষীর পাষাণ বেদী কিসের বড়াই সাধ?
পাপও ধুই, পুণ্যও ধুই, আঁখি মিলে দেখি!

কেউ দেখেনা আমার চোখ থাকতে অণুবীক্ষণ,
নষ্ট পাপের জল ধুইয়ে দেই প্রতি বর্ণে বর্ণে;
-তবু তাদের খামুস থাকে পাপে ভরা মন!
যন্ত্র ছাড়াই মন্ত্র পাঠে পাপিষ্ঠ রয় তুর্ণে।

অন্তের কুঠুরী জানে শব্দ ভাঙার যন্ত্রনা!
নষ্টামী লুকিয়ে রাখে ধৃষ্টতার মন্ত্রণা!
বিশৃঙ্খল আর উশৃঙ্খল হয় উলঙ্গের নায়ক,
বেশ্যার বেসাতি বুক আমি তার হই বাহক।

কত নষ্টের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছি যুগযুগ ধরে,
কত শব্দ ডিঙিয়ে কাব্য আসে থরে থরে নষ্ট-ভষ্ট! অতিষ্ঠ,
অনিষ্ট, সব বর্ণ মালা;
-রসদের গুপ্ত পরাকাষ্ঠ হয়ে ভাঙে প্রেম ডালা।

সাঈদুর রহমান লিটন
নির্লিপ্ত চিন্তা

কবে পূর্নিমা আর কবে অমাবস্যা
এখন বুঝি এসব হয় না আকাশে
দিব্য শক্তি লোভ পেয়েছে আগেই
বোধ শক্তি নির্লিপ্ত, বর্বর ।

মাঝে মাঝে নিজেকেই চিনে উঠিনা
তাল গোল পেকে যায় এই আমি আর সেই
আগের মতই নাকি বেশি সুন্দর!
বিচার বোধ সভ্যতা হারানোর মতো।

মানুষ আর জন্তু মিলে মিশে গেছে
নাকি আমার চিন্তা ধারা?
পোশাক ওদের প্রয়োজন হয়না
মানুষ শখ করে ছেড়েছে।
তাই আর বিবেচনা কে দোষ দেই না।

অনেক কিছুই বুঝি না আজ,
দেশ টা মনে হয় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে।
চোখের সমস্যা, নয়ত দেখার,
আগে মনে হয় দু’পায়ে ঠিকই হাঁটতো।
আজ হাঁটে না, মনে হয় পারে না।

কেয়া সরকার
হবো আমি ---

কৃষ্ণনিশি আমি তোমায় ভালবাসি
চাই না আর রাত জাগা চাঁদের চোখে
চোখ রাখতে
তারার চোখেরজল চুমুক দিতে দিতে
আজ আমি বড় ক্লান্ত
তবুও আমি পিপাসার্ত।
তোমার বুকটা কি শান্ত, নিঝুম যেন
বিশাল তেপান্তর
তুমি না ঠিক শুভেন্দুর মতো অজেয়
দুর্নিবার;
ঠিক যেন মরিচীকা ছুঁতে গেলেই হারিয়ে
যায় বারবার।
তোমার বুকে মুখ গুঁজে একটু ঘুমতে দেবে
সে ঘুম যেন সহজে না ভাঙ্গে রেষ চলে
অনন্তর
জানো আমি আর হতে চাই না ময়না,
চাই না হতে অশ্রুমতী
তোমার বুকে ঠাঁই দেবে---
হবো আমি তোমার পূর্ণশশী।

অণুগল্প
দাওয়াই
রাজা ভট্টাচার্য 

মানুষটা আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এমন মানসিক রোগীর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাতে হবে? যাই করি, তাতেই প্রতিবাদ। সবেতেই ফ্যাসিজমের গন্ধ পায়। বাজার, দোকান, ঘরের কাজ - সবই করে। তাই বলে, খবরদারি করবে? সংসার আমার, আমাকেই তো চালাতে হবে। সেখানে তো বেশি গণতন্ত্র করার জায়গা নেই। সবটা একা হাতে সামলানো যায় না, আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে, তার মধ্যে বার বার কেউ ভুল ধরলে, লেজি বললে, ইররেস্পন্সিবল বললে, অন্য বউদের সঙ্গে তুলনা করলে। গায়ে হাত তো উঠবেই। গাল পেড়ে আর কতক্ষণ গায়ের ঝাল মেটে? তখন পালটা হাত চালায়। এই দেখুন, মেরে কী করেছে! 

ভুল হলে সেটা সবার সামনে ধরবে? সবাই সব কিছু জানে? তা-বলে সেটা পাবলিক করবে? আর অতো শেখার কী আছে? শিখতে গেলে, পড়তে গেলে অনেকটা সময় চলে যায়। আমি একটু স্লো, বাট স্টেডি। ইন ফ্যাক্ট, কাজ করার তো দরকার কোনোদিন হয় নি। তাই করিও নি। এখন দরকার হচ্ছে, করছি। কিছুটা করি, বাকিটা লোক দিয়ে করাই, মুল্য গুণে দিই। সুপারভাইজিং-ও একটা কাজ। চাপ দিয়ে বাঁকা পিন সোজা করতে হয়। মাথা গরম হবেই। তারপরেও কাজ পেন্ডিং থাকলে আমি কী করবো? আমি তো আর লেজি নই। তা-নিয়েও সারা দিন পিছনে লেগে থাকবে।

বিন্দুমাত্র ভালবাসে না আমায়। সারা দিন ল্যাপটপ আর ফোন নিয়ে পড়ে আছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ না ছাই! আমি থাকতেও গার্ল ফ্রেন্ড লাগে ! ধরে ফেললেই আমায় পুট ডাউন করে! এতো সাহস! আমার অ্যাংজাইটি বেড়ে যায়, আমি ভায়োলেন্ট হয়ে যাই। তখন আমি ফ্যাসিস্ট! ওর চিৎকারে পাড়া অস্থির। সম্মানটা কোথায় থাকে বলুন ! প্লিজ ডাক্তারবাবু, একটা কিছু করুন অ্যাট লিস্ট যেন বশে থাকে এতো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, রিঅ্যাকশন, ভায়োলেন্স - আমি আর নিতে পারছি না।

খসখস করে প্রেসক্রিপশন লিখলেন ডক্টর মুখার্জি। বললেন, শাসক আর শাসিতের চিরায়ত সম্পর্ক। দুজনকেই আগে নিউট্রালাইজ করতে হবে। এই বড়ি সকাল বিকেল খাবার আগে দুজনেই খান। ছ’ মাস পরে আসবেন। হাজার টাকা।

মিছিলের কাজ
প্রণবকুমার চক্রবর্তী 

রোজ সকালে ওরা সবাই হরিতলার মোড়ে এসে জড়ো হয়। ওরা মানে সনাতন, নৃপেন, নিয়ামত, বুধাইরা। সবাই দিন-মজুর। সকাল থেকেই সাবাই হাঁটুমুড়ে দ হয়ে বসে থাকে। লোকজন এসে দর-দস্তুর করে নিয়ে যায় - কাজ করাবার জন্য। জন-মজুরের কাজ। ওই জায়গাটার তাই স্থানীয় নাম, জন-মজুরের হাট।

আগে ওখানে যারা এসে বসতো, তাদের সব্বার কোনদিন কাজ জুটতো। অবার হয়তো কোনদিন জুটতোও না। হতাশ  হয়ে অনেকেই ঘরে ফিরে যেতো। আবার  মাঝে মাঝেই পার্টির সব লোক এসে সবাইকে তাদের দলের মিছিলে নিয়ে যেতো। বিনিময়ে শুধুমাত্র দিতো চারটে রুটি আর আলুর দম। হাতে কিছুই দিতো না। ওতেই যেতে হতো। আসলে, তখন একটা পার্টির জোর ছিলো। না শুনলে, ওখানে পরের দিন থেকে বসাই বন্ধ করে দিতো।

কিন্তু, ইদানীং সেই সমস্যাটা আর নেই। প্রায় সব দিনই বিভিন্ন দলের নেতা এবং লোকজন এসে ওদের বিভিন্ন সমাবেশ এবং  বিক্ষোভে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যায়। আজ এখানে তো, কাল সেখানে! টাকার অংকটাও বেশ ভালো! না দিলে, যাবে না। অন্য দলের সাথে যাবে। আগে থেকে টাকা দিয়ে দলের পতাকা ধরিয়ে, বুকিং করে যেতে হয়। লোককে সংখ্যার হিসাবটা দ্যাখানোর জন্য।
এটাই ইদানীং গরীব মানুষের রোজগারের একটা ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরাতন বোর্ডটা পাল্টে একটা নোতুন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে - মিছিলের চাকরি।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক