মঙ্গলবার
১৩ই শ্রাবণ ১৪২৭, ২৮ই জুলাই ২০২০
কবিতা
যে পথ ঘুরে গেছে
ওই পথে গেলে কি তাকে পাওয়া যেত?
মাঝে পথ আটকে কিছু সমুদ্র - বন স্থির পাথরের মতন।
ওই পথে কি হেঁটে যাওয়া যেত
সরীসৃপ মন বলে ওঠে - স্থবির আমি অখণ্ড আমি - গভীর ঘুমে ক্লান্ত।
সেও তো বেশ কয়েক দ্বীপ পর,
দেখো তুমি যেতে পারো আমার সাথে যদি তুমি সব ক্লান্তি নাও আমার।
প্রসঙ্গহীন সমাজ ব্যস্ত ভ্রাম্যমানের বাসা নড়াতে,
পবিত্র প্রেত সুপ্ত- রোমাঞ্চিত মনে।
ভয় পাও... ভয় পেতে শেখো।
বিকেলের পরে ওই ভাঙা পাঁচিলের ধারে নামবে ছায়া একটু বাদে,
ওই ছায়া-ঘেরা-বিকেলে ওই পথে গেলে হয়তো তাকে পাওয়া যেত ।।
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
হাওর দ্বীপপুঞ্জের শহরে
প্রতিদিন মিশে থাকি হাওর দ্বীপপুঞ্জের শহরে
যেখানে সন্ধ্যা নামে নৈসর্গিক নানান রূপের ডানামেলে।
যেখানে আষাঢ় পূর্ণিমা রাতে, মেঘেদের সাথে চাঁদ হাসে
বৃষ্টিভেজা রাতে অজানা অনুভ‚তিরা হৃদয়ে বাসা বাঁধে।
বিস্তৃর্ণ হাওরে উত্তাল ‘আফাল’ সমুদ্র রূপে আঁচল পেতে ধরে
ইচ্ছেগুলো মিশে থাকে অথৈ জলের আছড়ে পড়া ঢেঁউয়ে।
খুব ইচ্ছে করে যেতে শহরের সুরমা রিভারভিউয়ে
যেখানে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের দেখা মেলে।
নদীর এ তীওে প্রেমিক যুগলের অতৃপ্ত বাসনারা পূর্ণতা পায়,
চন্দ্রাালোকিত ঝলমলে জলরাশি যেন লুকোচুরি খেলায়!
এখানে বসে বাউলেরা হাসনরাজা, দূর্বিন শাহ, রাধা রমন,
শাহ আবদুল করিম লহরিতে মেতে ওঠে
কবিতায়, প্রেম, আড্ডায়, তরুণেরা জলরাশি উপভোগ করে তন্ময় হয়ে।
আমি সেখানেই বার বার ছুটে যাই,
যেতে মন চায়,
মন পড়ে থাকা সেই প্রিয় ঠিকানায়।
পড়ন্ত বিকেলের গোধূলি লগ্নে
কবি মোমিনুল মউজদিনের জল-জ্যোৎস্নার শহর পাড়ায়।
সাকিব শাকিল
অন্ধ হরিণ
তোমার হৃদয়ের ভেতরে গোল্লাছুট খেলতে খেলতে হারিয়ে গেছে অন্ধ হরিণ;
কোনো এক অজানা দূরের মাঠে-
মাঠ পেরিয়ে সে ঘুমিয়ে গেছে বিজন বনের বুকে।
এই গুম গুম হাতকড়া খেলা উপেক্ষা করে
ঠিকই ফিরবে আমাদের সমৃদ্ধির হরিণ।
ঘরে ফেলে আসা সেই শাবকের কসম!
কসম এই ঘাটির
কসম এই রক্তাক্ত মাটির
আমাদের ঘৃণার চোখেই চুরমার হবে বাঘিনীর ডেরা
মৃতরাও যোগ দেবে যোগ দেবে ভীতরাও
এই আতঙ্ক ও ত্রাসের অরণ্যে একদিন
হরিণ বিক্ষোভ দেখা দেবে।
সিয়ামুল হায়াত সৈকত
ব্যাকরণ
যেসব গানের মুখস্থ ঠোঁট পড়তে পারি
এমন বৃষ্টিপাত হলে, নিকটবর্তী গাছ বাতাস ধরে।
আর চুম্বকের বোধ এসে দাঁড়াতে পারে মাঝখানে
ঠিক যেমনঃ হাত রাখলে নিজেকে জানতে দেয়
তোমাকে নিয়ে আমার আগ্রহ নেই
সময়ের মিনার উঁচুতে বসে সংকেতবিজ্ঞান পড়েনা।
জানতে চাইলে পড়ে ব্যাকরণ
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ শুক্রবার নিয়ে আসে। ঘুম আসেনা।
মোহাম্মদ আবদুর রহমান
ভিখারি
আমি ভিখারি
এ কথা তোমাকে কে বলেছে?
নাকি আমাকে দেখে এসব কথা বলছ
আরে আমার জীর্ন পোশাকের ভেতর
বসবাস করে পরম প্রিয় মান-সম্মান
তার দিকে তাকিয়ে খালি পেটেও
হাসতে পারি কোটি টাকার হাসি
তুমি কোন দিন হাজার টাকার হাসি হাসতে পেরেছ?
হিসাব করে দেখ একবার
আর যদি না পাও
তবে বুঝো কে ভিখারি?
ধারাবাহিক গল্প
পচনস্বপঞ্জয় চৌধুরী
তিন
শহরের অন্যতম নার্সিং হোম নিরুপমা নার্সিং হোম। এই নার্সিং হোমে বাচ্চা ডেলিভারির একটা সুনাম রয়েছে। রাত নয়টা পাঁচ। পকেট থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখে নেন লোপার বাবা। মোবাইল পকেটে রাখতেই ফোন বেজে ওঠে। মোবাইলে নম্বর ভেসে উঠতেই আজাদ সাহেব গর্জে ওঠেন “সান অফ এ বিচ আমি তোকে পুলিশে দেব। কেন তুই আমার মেয়ের সর্বনাশ করলি?” মোবাইলের ওপাশ থেকে প্রতারক ও লম্পট প্রেমিকের কণ্ঠ “দেখুন আংকেল এযুগে এগুলো কোনো ঘটনাই নয়, বাচ্চা ফেলে দিয়েছেন ভালোই করেছেন। এখন ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিন।” আজাদ সাহেব ক্ষিপ্ত কণ্ঠে- শাট আপ বাস্টার্ড, বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন। নার্সিং হোমের আয়া আজাদ সাহেবের কাছে এসে কানে কানে বলে “স্যার কাম কমপ্লিট”। আজাদ সাহেব পকেট থেকে দুটো পাঁচশত টাকার নোট বের করে দেন। আয়া বিরক্তির স্বরে বলে- আমারে কি ভিক্ষুক পাইছেননি স্যার? এইজন্যই এইসকল রিক্সের কামে যাইতে চাই না। চুপ করো, ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলেন আজাদ সাহেব। এরপর পকেট থেকে আরো দুটি পাঁচশত টাকা বের করে দেন। এবার আয়া তার দন্ত প্রদর্শন করে। আজাদ সাহেব নার্সকে ডাকলেন। নার্স ব্যস্ততা নিয়ে বললেন, জ্ঞান ফিরেছে স্যালাইন চলছে। শরীর অনেক দুর্বল, বেশি কথা বলবেন না। (চলবে...)
পাঠ প্রতিক্রিয়া
‘একাত্তরের যুদ্ধবীর’ তিন যুদ্ধবীরের বীরত্বগাথা ইতিহাস আশ্রিত এক জীবনোপাখ্যান
আশিস রহমান
করোনাকালে অবসর সময়ে পড়ে শেষ করলাম সুনামগঞ্জের লেখক-গবেষক ও সাংবাদিক মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী'র লেখা সদ্য প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই 'একাত্তরের যুদ্ধবীর'। নাগরী প্রকাশনী প্রকাশিত ১২৭ পৃষ্ঠার এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আল নোমান।
সুনামগঞ্জের দুই জন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম, আব্দুল মজিদ ও একজন বীরাঙ্গনা নারী যোদ্ধা কাকঁন বিবির যুদ্ধকালীন অবদানসহ তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক স¤পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। উল্লেখ্য, এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধাই সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা। বইয়ের লেখক এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধার সান্নিধ্য এসেছিলেন। যে কারণে প্রাসঙ্গিক ভাবেই বইটির লেখায় লেখক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি এই তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব গাথা বিভিন্ন যুদ্ধের জবানি হুবহু তুলে ধরছেন।
বইটির শুরুতেই এসেছে একজন পাহাড়ি সংগ্রামী নারীর কথা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের নত্রাই গ্রামে এক খাসিয়া পরিবারে জন্ম নেওয়া নারী কাঁকাত হেনুইঞ্চিতা। জুম চাষী এই নারী জীবনের নানান টানাপোড়ন, ভাগ্য বিড়ম্বনা, প্রেম, ধর্মান্তরিত হওয়া, বিয়ে, গুপ্তচরবৃত্তি ও শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠা সবই সুনিপুণ ভাবে একাত্তরের যুদ্ধবীর বইটিতে বিধৃত হয়েছে। লেখক নিখুঁতভাবে ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সীমান্তের ওপারের পাহাড়ি কন্যা কাঁকাত হেনুইঞ্চিতা থেকে উঠে এসে এদেশের একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিবেটি হয়ে ওঠা বীরাঙ্গনা কাঁকন বিবিকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিবর্তিতে কাঁকন বিবির মানবেতর যাপিত জীবনের দুঃখকষ্টময় দিনগুলোর কথাও একাত্তরের যুদ্ধবীরে ফুটে উঠেছে। কাঁকন বিবির জন্ম, কৈশোরকাল, বিয়ে, পাক ব্যাংকারে সম্ভ্রমহানি ও যুদ্ধযাত্রা, গুপ্তচরবৃত্তি, যুদ্ধপরবর্তী জীবন, সংগ্রামী নারীর স্বীকৃতি, সর্বোপরি তার আত্মজীবনী বিধৃত হয়েছে বইটিতে।
বীরাঙ্গনা কাকঁন বিবির পরেই এসেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীর প্রতীকের প্রসঙ্গ। অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বীর ছিলেন একাত্তরের উত্তাল মুহূর্তে বয়সে টগবগে এক তরুণ শিক্ষার্থী। দেশমাতৃকার টানে এই তরুণ সিলেট টেকনিক্যাল কলেজ ক্যা¤পাস থেকে পালিয়ে এসে পরিবার স্বজনদের ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। অন্যান্য সতীর্থদের সাথে তিনিও ভারতে ট্রেনিং নিয়ে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সাহস ও বীরত্ব দেখিয়েছেন। আব্দুল হালিম শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা-ই নন একজন সৌভাগ্যবান মানুষ ছিলেন। ভাগ্যের ফেরে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ৫ বার বেচেঁ ফেরেছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে পাঁচবার ফিরে আসা চাট্টিখানি কথা নয়। শত্রুদের মোকাবেলায় নিজের শরীরে গ্রেনেড বেধে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেন। যা এখনো কল্পনানীত এবং একজন নিখাদ দেশ প্রেমিকের পক্ষেই শুধু সম্ভব। যুদ্ধকালীন সময়ে এই বীর যোদ্ধা ছাতকের জাউয়া সেতু ধ্বংসে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। একাত্তরের যুদ্ধবীর বইয়ে সঙ্গত কারণেই লেখক তাকে ছাতকের জাউয়া সেতু ধ্বংসের নায়ক হিসেবে অবিহিত করেছেন। অসীম সাহস ও বীরত্বের ফলশ্রুতিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে স্বাধীনতা পরবর্তীতে বীরপ্রতীক খেতাবে সম্মানিত করা হয়। বইটির এই অংশে বীরপ্রতীক আব্দুল হালিমের জন্ম, বেড়ে ওঠা, কৈশোর কাল, যুদ্ধে অংশগ্রহণ, যুদ্ধ পরবর্তী জীবন পর্যায়ক্রমে তুলেধরা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের পর তার সহযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বীর প্রতীকের প্রসঙ্গ এসেছে। হালিম ও মজিদ দুজনই ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একই এলাকার বাসিন্দা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও এই দুই বন্ধু একসাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কাধে কাধ মিলিয়ে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। সবকটি বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে হালিম ও মজিদ দুজনই পর¯পরের সাথী যোদ্ধা হিসেবে একসাথে অংশগ্রহণ করেছেন। কি আশ্চর্য মিল দুজনের মধ্যে! তারা একই সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং একই যুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একইসাথে বীরপ্রতীক খেতাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আব্দুল মজিদ ছোট্ট বেলা থেকেই দূরন্তপনা ছিলেন। সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ টান ছিলো তার। মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগেই ৬০ এর দশকে তার শৈশবে তিনি ‘রাজপুতের ছেলে’ নামক সফল মঞ্চ নাটকে সেনাপতি রঘুদেবের চরিত্রে অভিনয় করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাতকের রাউলি ব্রীজ ধ্বংস, সোনাপুরের কাভারিং ফায়ার, জাউয়া সেতু ধ্বংসের অভিযান, ঝাওয়া সড়ক ও রেলসেতু ধ্বংস অভিযান, রায়ত গ্রামের যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস দেখিয়েছেন তিনি। বুরকি যুদ্ধে তার দুঃসাহসী রণকৌশল যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের খেসারত স্বরূপ তার বসতবাড়ি, ফসলিজমি ও ফলজবৃক্ষ সম্পূর্ণ ভাবে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা। বইটিতে পূর্ববর্তীদের ন্যায় আব্দুল মজিদেরও জন্ম, বেড়ে ওঠা, কৈশোরকাল, যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ যুদ্ধপরবর্তী জীবনের বিভিন্ন দিক বিধৃত করেছেন লেখক।
সর্বোপরি বীরাঙ্গনা কাকঁন বিবি, আব্দুল হালিম বীর প্রতীক ও আব্দুল মজিদ বীরপ্রতীককে ভালোভাবে জানতে এবং তাদের বীরত্ব গাথা যুদ্ধের স্মৃতি রোমান্থনের জগতে প্রবেশ করতে পাঠকের জন্য একটি পছন্দের বই হতে পারে একাত্তরের যুদ্ধবীর। এক্ষেত্রে লেখক ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। যারা মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রের রোমাঞ্চকর ঘটনা পড়তে ভালোবাসেন তারা এই বইটি পড়ে মজা পাবেন। বইটি অনলাইন পরিবেশক রকমারি ডটকমেও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের পৌরবিপনীর মধ্যবিত্ত থেকেও বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
No comments:
Post a Comment