শুক্রবার
৯ই শ্রাবণ ১৪২৭, ২৪ই জুলাই ২০২০
কবিতা
তপনকুমার দত্তমেঘকে
মেঘ তোকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।
কখনো তুই আগুন জ্বালা উনানের পাত্র
থেকে উপচে পড়া দুধ। কখনো দুই সিংহ সিংহির
মুখোমুখিতে। কখনো ঘোড়ার পিঠে চড়ে ধূসর এলোচুলে ছুটে চলার মুহূর্ত। কখনো তুই ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের বুকে শুয়ে। কী দারুণ রূপ তোর কী দারুণ সাজ। তুই ভালো থাক।
মেঘ শোন তোকে বলি-এযাবৎ যত লিখেছি সব পড়েছিস কখনো। কখনো না পড়া লেখাটি দেখতে চেয়েছিস। চাস নি। তোকে শোনালে বলেছিস-চমৎকার। সুন্দর অথবা জবাব নেই।
মেঘ তুই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকিস।
একার মতো একা থাকিস
উড়ে বেড়াস এদিক থেকে ওদিক।
তুইও সরে যাচ্ছিস এক্ষুণি।
মেঘ এতো লিখে কী পাবো বল
অর্থ যশ প্রতিপত্তি নাকি
অলীক ভালোবাসার কিছু ছায়া
যা শুধু ধেয়ে নিয়ে চলে পেছন পেছন
মেঘ বিশ্বাস কর
পরকীয়া হবে না আমার
আমি ভীষণ একান্ত ভালোবাসি।
আমার ভালোবাসা কষ্ট
আমার ন্যাকামী বোকামী সব
আমার স্ত্রী-ই বোঝে
বিবাহিত দিন থেকে।
মেঘ একটু দাঁড়া শুনে যা
অক্ষর বাঁধা অনেকেই
অক্ষরে অক্ষর রেখে
ভালোবাসার যাদুতে
ভ‚বন মাতাতে পারে
মন মাতাতে পারে না
পারে না ছুঁতে
বুড়িচ্ছু খেলা ছাড়া অন্য কিছুতে।
মেঘ ধূসর হয়ে গেলি
তবে কি তুই কাঁদবি এখন
অঝোর ধারায়।
মেঘ আমার কথা ভালো লাগলে
অন্য মেঘে বলিস।
বঙ্গ রাখাল
দূরে সরে যাচ্ছি
প্রতিদিন নিয়ম করে দূরে সরে যাচ্ছি
আরো দূরে যেতে চাই-তোমার থেকে
যতদূরে গেলে প্রিয়জন আরো প্রিয় হয়।
জীবনে অমূল্য ছিলে তুমি
আজ অনেক দূর অজানায়
প্রত্নশরীর খোঁজে প্রিয় মখমল-মন খোঁজে উষ্ণ আবেশ
তবু নিজের কাছে তুমি কত অচেনা।
চিরু
অপেক্ষারা অন্তহীন
রাতের পর রাত পেরিয়ে
অপেক্ষারা হাত বাড়িয়ে
গুনছে কেবল দিন
আসবে ফিরে
আসছো ফিরে
এই অপেক্ষা অন্তহীন...
ডাইরি খাতার
আবছা আলোয়
উড়ছে পাতা
জমছে ধূলো
শুকনো চাওয়া প্রতিদিন...
তোমার আমার
ঘর কুড়োনো
অশ্র্র নোনা
দিন ফুরোনো
চলছে প্রতিদিন...
পেছন ফিরে
হাত বাড়িয়ে
দ্যাখো আমি
সেই দাঁড়িয়ে
যেমন তোমার যাওয়ার দিন...
অপেক্ষারা হাত বাড়িয়ে
গুনছে কেবল দিন
আসবে ফিরে
আসছো ফিরে
এই অপেক্ষা অন্তহীন...
আশিক আকবর
হাঁসদের যৌন জীবন
হংস কুলও সমকামী। যৌথকামী তো বটেই। আজকে পুকুরে
জলের কিনারে
এক মাদিকে আরেক মাদি ইচ্ছে মতো...
আরো কতিপয় মাদি হংস পাশে তার।
যেনবা না, চলছে গ্রুপ সেকস্।
আর দ্যাখো হংস দলের সামনে, হংস এক। প্রিয় হংসিনী নিআ নির্বিকারে ঠুকরাচ্ছে ঘাস। কে কাকে কি করলো তাতে কি আসে যায়? সময় মতো সেকস্ টেকস্ পেলেই হলো।
এটাই পৃথিবীর চিরকালের নিয়ম। পুকুর ঘাটের পানি ভালো করে জানে।
গৌতম নাথ
জলছবি এই পথ
ফেরার পথ’টাকে এভাবে আগলে রেখে লাভ কি বলো?
সেই কবে থেকে ঝরো ঝরো বৃষ্টি গুলো পর্বত বেয়ে আজ বিস্তীর্ণ অতলান্তিক সমুদ্র হয়ে গেছে।
সাধে কি আর বলি হারাবার পথ’টাও এখন হারিয়ে গেছে।
পুরো তুমি’টাই এখন আড়ম্বর হীন, প্রচ্ছদ হীন ভিতর বারান্দা... আমার দখিন জানালা।
আমার আমি’তে বলো কয় দন্ড আর থাকতে পারি?
প্রতিটা বিরহই আমার ধ্রুপদী অমাবস্যা যাপন... শূণ্যতায় আলোছায়ার আলিঙ্গন।
ঘাটের কাছে সূর্য ডোবার সময় হলেই রুটিনমাফিক আনচান সন্ধ্যা।
তবুও দূরত্ব’টুকু মেখে নিতে হয়... দূরে যাওয়ার
জন্য নয়... পূর্ণ পথের সন্ধানে...
কোজাগরী আলোর বন্ধনে।
সব যাওয়া কি আর যাওয়া হয় বলো?
কিছু কিছু যাওয়ারও তো পিছুটান থেকে যায়...
কিছু কিছু যাওয়া সতত সবুজ জলছবি হয়ে থাকে।
গৌতম চট্টোপাধ্যায়
এসো, পরাজয় দেখে যাও
যতই বর্ষা ঝরুক এ নোংরা সবুজ জলে
জীবন তো স্রোতে ভাসা শ্যাওলা,
যতই লক্ষ্য সিহ্র করে লক্ষ্য ভেদ করো না কেন
এ জলে ইন্দ্রধনু আঁকা হবে না কোন কালে!
মিথ্যে আশ্বাসের রণপা’য়ে আশ্বস্ত হয়ে
কত আর দৌঁড়াবে প্রগলভ জীবন! কতদূর?
ওই দেখো দিকচক্রবাল...
অপসৃয়মান মরীচিকা- বসন্ত দেখো!
এসো, হা-পিত্যেশ করা ফাঁকা মাঠে এসে দাঁড়াও-
হে মানব, তুমি কী দেখেছো ধীমান’এর পরাজয়
উড়ে যাওয়া কোন প্রজাপতি'র পাখায়!!!
অরিজিৎ রায়
এ চোখ মানব জমিন
মাথার ভিতরে এক শহর- উসখুস-ব্যস্ততা,
উদভ্রান্ত দিনলিপি খরস্রোতে বয়ে গেলে
যা কিছু ভাস্মর, ম্রিয়মাণ হয় সময়ের কাছে!
সম্পর্কেরা নিশ্চুপ, প্রদীপের সমঝোতায়
সারারাত জ্বলে যায়, নিভন্ত চুল্লির গনগনে
উত্তাপ বুকে নিয়ে!
এক্কাদোক্কায় দলছুট শৈশব- মোবাইল ভাবনায়
ইচ্ছে ফড়িং আঁকড়ে ঘাস মন জমি আঁকে
সাদা স্ক্রিনে। ভিতর ঘরে একাকীত্বের রং-মশালে
বিবর্ণ হয়ে পুড়তে থাকে মনের খাস-মহল।
দৈন্যতা ভেজা এ যাপন শুধু চোখ খোঁজে-
ভরসার নরম জমি! অনাহূত প্রেমিক অবয়ব
ভিতর উঠোন আমার- ছুঁয়ে যায় গাল মুখ ঠোঁটের
ইতিহাস ইলোরার স্থাপত্য ভেঙে বালিয়াড়ি
ধুয়ে যায়, গিরিখাত চিরে নেমে আসে একটি নদী-
ভালোবেসে যার নাম রেখেছি-“প্লাবন”
বঙ্কিমকুমার বর্মন
রাতগুলি
তাঁকে ফেরানো যায় না কিছুতেই, সে ফুটছে টলমল আশার মতো। দৌঁড় রাখছে চোখের বেদনায় - তাঁরও প্রাসঙ্গিক আগুনের উপমা চাই। সহজ সন্ন্যাস ছেড়ে এই প্রলুব্ধ যাত্রীস্নানে। এখানেই মাটির তাপমাত্রা ছিল অধিক প্রিয়। যেভাবে হলকর্ষণে লুপ্তপ্রায় যন্ত্রণা উঠে এলো তাকে সর্বদাই পোষাকের রঙে শিহরিত দেখি। নিয়মিত কান্নার পাশে একটা জানালার কচি বেদনা ছটফটে মাছ। ঘাড় গুঁজে হৃদয় রাখে দক্ষিণের ঘর। পত্রহীন বিজয়তন্ত্রের পালক ঢুকে পড়ে স্মৃতিস্তম্ভে, অসম্ভব জ্যোৎস্নার দাগ ফুলের নরম মাংসে লাগাম ছাড়া স্নেহের পুতুল। ভীষণ আলো করে আসে আমাদের শুভাশীষ পরিব্রাজিকা রাতগুলি।
ছোট গল্প
আপন রহমান
শরীরটা আজ বেশি ভাল নেই। প্রচন্ড মাথায় যন্ত্রণা, জ্বরও আছে সাথে। ঘরে প্যারাসিটামল ছিলো খেয়ে; খাটের উপর শরীর এলিয়ে দিয়ে। মনে মনে ভাবছিলাম আজ নিশ্চয় ও আসবে। আমি অসুস্থ্য হলে একা থাকলে ও আসে। ও হচ্ছে আমার বন্ধু নীল পরী রিম্বা। ওর বাড়ি পরিস্থানের সেওগুণ রাজ্যে। ও প্রতিবার আমাকে এক একটি অদ্ভুত দেশে নিয়ে যায় বেড়াতে। তবে স্বপ্নের ঘোরে। এবারও হয়তো.....
ভাবতে -ভাবতে চোখটা কখন যে বুজে এলো টেরও পেলাম না। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ঘরটা আলোকিত হয়ে গেল বুঝতে পারলাম, ও এসে গেছে।
হ্যাঁ, ও এসেছে। আমার মাথার কাছে এসে বসলো। তারপর কোমল হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মুচকি হেসে বল্ল- শরীরটা কি খুবই খারাপ?
আমি বল্লাম- কৈ, না তো একটু...
- যাবে তবে নতুন দেশে?
আমি বল্লাম- হ্যাঁ।
ও আমার হাতটা ধরলো। মূহুর্তে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই আজব দেশে। ও বল্ল এটা “সব খেয়েছির দেশ”। এদেশের সর্বোময় ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে সম্মানের সহিত বলা হয় স্বৈরাচার। এটা এদেশের একটি সম্মানজনক শব্দ। এদেশের ক্ষমতাধরেরা সর্বভ‚ক।
চলো এবার তোমাকে এদের বৈচিত্র্যময় ডাইনিং রুমে নিয়ে যাই।
কিছুটা ভয় কিছুটা সংকোচে আমি রিম্বার হাত ধরে এগিয়ে গেলাম ডাইনিং রুমে। ও বল্লÑ ভয় নেই বন্ধু যাদু বলে আমরা অদৃশ্য। ওরা আমাদেরকে দেখতেই পাবেনা।
রিম্বা একে একে ওদের খাবারগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল আর আমি অবাক হচ্ছিলাম।
সেখানকার অর্থাৎ স্বৈরাচারের ডিনার টেবিলের খাদ্য তালিকায় ছিলো।
- আধ সিদ্ধ গণতন্ত্র
- গরীবের চামড়ায় তৈরি মোঘলাই পরোটা।
- ধর্ষিতা রমনীর দেহ পেষা স্যুপ।
- বিপ্লবী কবির সুগঠিত রানের কাবাব।
- গণতন্ত্রকামী ছাত্রদের দেহের টুকরো টুকরো মাংস-ভ‚ণা আরও কত কি!
এবার গেলাম তাদের পানশালায়।
সেখানে গরীবের রক্তমদে নেশায় বুদ হয়ে আছে। কতিপয় ন-পুংশক মন্ত্রী, ফ্যাসিবাদীর দালাল, সেবা ব্যবসায়ী, ঘোড়েল আমলা, বাম-ডানের কিছু পল্টিবাজ নেতা ইত্যাদি।
আমি দেখছিলাম আর অবাক হয়ে ভাবছিলাম। বাহ্! কুকুর-শেয়াল-আর হায়েনার মাঝে কি অদ্ভুত মিল!
হঠাৎ পাশের বাড়ির নেড়ী কুত্তাটার ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেলো আমার। বাইরে কারা যেন চিৎকার করে বলছিলো; চোর - চোর - চোর...
লুঙ্গির খুট গুঁজতে -গুঁজতে মধ্যরাতের ঘুট ঘুটে অন্ধকারে ছুটে গেলাম বাইরে। দেখলাম হারিকেন আর লাঠি হাতে কিছু লোক ছুটছে চোর ধরতে। তাদের কিছুটা পেছনে অর্ধনগ্ন অবস্থায় খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে ছুটছে জহির পাগলা।
আমি বল্লাম- কি হে বাপু ছুটছো কেনো?
জহির একগাল হেসে বল্লো- আর বলোনা বাপু-চোরে দ্যাশটা খেয়ে নিলো রে...
বাড়ি ফিরে আসতে আসতে আমিও ভাবলাম সত্যিই তো! চোরে দেশটা খেয়েই নিলো...
এরপর আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো যখন মনে পড়ল রাতের সেই অদ্ভুত স্বপ্নের কথা...
No comments:
Post a Comment