Monday, July 6, 2020

শিল্প সাহিত্য ৮৪


সোমবার  ২২শে আষাঢ় ১৪২৭, ৬ই জুলাই ২০২০




কবিতা

কমল কুজুর।। তোমার আকাশ

বহুদিন হলো আকাশ দেখিনা!
আকাশে পেঁজা তুলোর মত ভেসে বেড়ানো
মেঘ দেখিনা।
নীল আকাশের বিশালতায় নিজেকে হারিয়ে
অকারণে খুঁজে ফিরিনা-
অনেকদিন।

আচ্ছা! আকাশটা কি এখনো তেমনি আছে?
এখনো কি ওঠে চাঁদ সন্ধ্যে নামলেই?
তারারা দেয় কি আলো আগের মতোই?
পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো এখনো কি
ভাসিয়ে দেয় পৃথিবী?

জানি না!
আকাশটা এখন শুধুই তোমার।
স্বপ্নডানা মেলে সদাই উড়ে বেড়াও
তুমি সারা আকাশ জুড়ে!
আমার রয়েছে বদ্ধ কারা।
ভালোবেসে তোমায় হই খুন
প্রতিটি ক্ষণ!

সংজ্ঞায়িত।। অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

কষ্ট খুঁজে পাইনি আর কোনো দিন
একটি মাত্র সংজ্ঞায় ভরে ওঠে বিবিধ অভিধান।
মাকে নিয়ে আসা বড় সার্থক হয় রূপকথা বিলের কাছে। 
খড়ি দিয়ে পেড়ে আনি সাদা বকফুলের পাপড়ি
বড়া পেয়ে উছলে ওঠে তরল সরিষা।
হাঁসেরা ঠোঁটে বিকেল নিয়ে ফিরে আসে ঘরে ...
আমার পড়ার পাটি জায়নামাজ হয়
মা তখন জাপটে ধারে অনুজ্জ্বল হাঁড়িকুঁড়ি আর উজ্জ্বল কুপি ...
এ সবই এক বিকেল হয়ে যায়
এক বিকেল সংজ্ঞা।
এক বিকেল অভিধান ...
যে অভিধানে ডুবে যায় এখন এই হসপিটালে শুয়ে থাকা দুঃসহন লিপি।

রফিকুল কাদির
পোষা প্রাণীকে ‘পেট’ বলতে ভালো লাগে; যদিও তারা ‘ডোমেস্টিক’ না। কাপুরুষও!

বাতাসের গতিবেগ অনেক তীব্র জেনেও, ঝড়কে ঝোড় হাওয়া বলতে বাধে না
ইদানিং কাঁচাগোল্লারও অনেক শাখা গজিয়েছে মানি
তবে,
সব ডালে একই ফল ধরেনা হঠাৎ
তবু
সমান্তরালে তারাই এগিয়ে
কারণ,
দু’চার বাড়ি পরে থাকে আমার দুলাভাই
তাঁর পাশের বাড়ির দারোগা দুপুরে নাক-ডাকায়
আামাদের খুব দহরম!
তার আসক্তি নিম্নাঙ্গে
আর সরলতা তার বোন
তার সাথে কথা সেই ছোটকাল থেকে
শুনেছি; সে আগের মতোই সরল এখনো, অপরূপ
হাঁটলে পাওয়া যায় গোলাপি সৌরভ
মানিক দাকে মনে আছে নিশ্চই
গলায় দড়ি নিয়েছিলেন
আমার সাথে সরুর তখন ভাব
পরে জানলাম, সরলতা-মানিক দা অথবা মারিক দা-সরলতা একসাথে ঘুমাতো! এমনকি দুপুরে, আর আমাকে দেখাতো প্লেটোনিক রংবাহার
আমরা তার কাছাকাছি থাকি
তাদের কাছাকাছি থাকি
আত্মীয় বহুদিনের
ভালোবাসার প্রাক্তন
আসক্তি এখনও অনাবিল জেনে
বিশ্বাস রাখি
সরলতা তোমাকে বিশ্বাস করি প্রিয়তমা
কেবল ভালোবাসতেই ভয় করে
ছোটবেলা থেকেই নন্টে-ফন্টে দেখার অভ্যেস
আরও ছোটতে পড়েছি পুস্তিকা
বাবা নিয়ে আসতেন
বাবা যে সত্যি-ই ভালোবাসতেন
খুব যত্ন করে গুছিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি
তারা ওগুলো পুড়িয়েছে
সরলতা পুড়িয়েছে
দুলাভাই, ভগ্নী
আত্মীয়তা পুড়িয়েছে
ভালোবাসা পুড়িয়েছে
আমরা বাসায় থাকি
ডিস কেবলে টম এন্ড জেরি!
কি বলবো?
বেশ লাগে!

তমা সিরিজ : ঘুঙুরের তলে।। সাজ্জাদ সাঈফ

তোমার শ্যামলপাপড়ি চোখের চেয়ে নির্জনতম দ্বীপ
এই মহাদেশে নাই, ব্যাংককে ভিড়েছে জাহাজ, ম্যাপল পাতার ওপর
তোমার নাম লিখে ছড়িয়ে দিচ্ছি বাতাসে, সেই হাওয়ার কাছে
সুর করে করে কীর্তি শোনাব পদ্মার-

তোমার ঘুঙুরের তলে পিছলে যাচ্ছে বাংলা কলেজের ঘাস, সান্নিধ্যহীন
বিকাল।

তারপর এক জ্বরভরতি পাখি-পরিবার, কার্নিশে গোঙানি তোলে, কি মায়া!
তাই না তমা?

কাঠের পিরিচে আসে আঙ্গুরের মিথানল, ব্যামোর বিকার থেকে খুলে খুলে
পড়ে সম্পর্কের ফটো।

তুমি দূরের জানালা খুলে স্নান-সারা চুল শুকাতে দাঁড়াও:
এইভাবে সারা পৃথিবীর অভিমান নিয়ে, অবসাদ নিয়ে
মেঘ বলো উঁকি দেয় না ঘরে, দোতলার সানশেডে?

আমার তখন
হৃদয়ে রৌদ্রক্ষরণ।

অবলুপ্তি।। শুভজিৎ বোস

সকালের ভিড়ে হেঁটে যায় সুন্দর ফুলের কুঁড়িরা
তাদের কাত্তো মুখে হাসি, তো কারো মুখে অদৃশ্য প্রতিবাদ,
শহর ছেড়ে গাঁয়ের আনাচে কানাচেও তারা হেঁটে যায়, শুধুই হেঁটে যায়,
তাদের সারাদিনের সঙ্গী কত না অজীব!
গাঁয়ের মাঠঘাট, শহর পাড়ার ময়দানগুলিতে আজ শুধু খাঁ খাঁ রোদ্দুরের হাজিরা,
এগিয়ে যায় তারা উর্দ্ধশ্বাসে!
কেউ ডাকলে বলে এখন না, আমাকে পৌঁছতে হবে খুব তাড়াতাড়ি,
সকাল, বিকেল, সন্ধ্যে তাদের কাছ থেকে হাসি কেড়ে নেয়,
কচিতেই হরণ করা হয় তাদের কাছ থেকে মাঠ-রোদ্দুর, মিঠে স্বাধীনতা,
আসে না সকাল, ওঠে না সূর্য!
হারিয়ে যেতে থাকে তাদের ধৈর্য্য।
নতুন দিনে, উৎসবে, পরবে তাদেরকে এ কোন সকাল উপহার?
ছিল কত উৎসব, আনন্দ, উদ্দীপনা!
আজ না আছে খেলা, না আছে অন্য কান্ড-কারখানা!
আছে স্বাভাবিকতার পথ রুখে নানান বায়না!
ওরা এভাবে! এসব কিছু কিন্তু চায়না।

দুঃখশাস্ত্রবুলি।। অনিমেষ প্রাচ্য

বাতাসের উৎফুল্ল লিপ্সায়, আমি ব্যথিত হই; কেউ কেউ খুঁজে পায় সভয়ে বেদনার চেয়ে বিস্তীর্ণ সাগরের
সুখ- আমি তবু নিঃসঙ্গ মাকড়ের মতো বেদনার নাভিকূপ খুঁজে ক্লান্ত হই। এ দ্যাখা, শোক স্থিতির মতো দৃঢ়।
পৃথিবীর সংকীর্ণ শুকড়ের দিকে তাকিয়ে, অস্থিত ময়ূরের কথা মনে পড়ে, সমস্ত সুখ য্যানো সেইসব বায়ুসেবিকার প্রাপ্য।
ব্যর্থ শুকড় শুকানো জিহ্বা নিয়ে, জন্মের যন্ত্রণা পুষে, সামুদ্রিক জোছনার পা চাটে।
অথচ, অশ্বত্থের বৃক্ষের দিকে মেলে ধরি, প্রজাপতির হাড়; স্বপ্নের লালসাগুলি অথবা।

অণুগল্প

বস্ত্র বিতরণ ।। প্রণবকুমার চক্রবর্তী 

     ক্লাবের জন্মদিনে সামনের মাঠে গরীবদের বস্ত্র দেয়া হচ্ছিলো। অন্যান্যদের মতো ওর নামটাও বার বার মাইকে বস্ত্র প্রাপক হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। সব্বাই সুন্দরীর মতো বয়সের। বলা হচ্ছে- এক্ষুণি গিয়ে ক্লাবে সভাপতির সাথে দেখা করতে। নিবারণের বছর পনের-ষোল বছরের মেয়ে সুন্দরী তো রীতিমতো অবাক - ওর নামটা বারবার উচ্চারিত হওয়ায়। ওকে এখানে কেউ চেনেনা। জানেনা। কোনদিন এই রকম বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আগে কাপড়ও নেয়নি। অথচ, ওর নামটা ডাকছে!
      সুন্দরীর কাপড়টা প্রয়োজন । লোভও হচ্ছে নেবার, কিন্তু যেতে ভয় হচ্ছে। কী করবে, বুঝে উঠতে পারছে না। একপাশে সরে দাঁড়িয়ে সুন্দরী যখন ব্যাপারটার উপরে নজরদারি চালাচ্ছে, সেই সময় ক্লাবের, ক্লাবেরই একজন লোক এসে ওকে সভাপতি ডাকছেন বলে সঙ্গে নিয়ে যায়। সুন্দরী সভাপতিকে দেখেই বলে ওঠে - ই মানুটা ইখানেতে আসিএেঁ জুটিছে! মুই, উয়ার দিয়া কাপড়টো লিবোক নাই। ই মানুষটা মোট্টে ভাল্যো লয়। ই মানুষটা আজ যাদের সব
কাপড়টো দিচ্ছেক, পরেতে উয়াদের মধ্যে থেইকে কম বয়সের মেয়েগুলারে বাড়িতে ডাইকে পাঠাএিঁবে। বুঝিছেন নাই, উ মানুষটার চরিত্তিরটা বহুত খারপ বটে। মুই চললোম।
      ব্যাপারটা শুনে অনুষ্ঠানে হাজির থাকা সবাই এ ওর মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করা শুরু করলো।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক