Tuesday, July 7, 2020

শিল্প সাহিত্য ৮৫


সোমবার  ২৩শে আষাঢ় ১৪২৭, ৭ই জুলাই ২০২০




কবিতা
সোয়েব মাহমুদ
তোমাদের ছাতা ছিলোনা

আমার মৃত্যুর পর অবশেষে বৃষ্টি নামলো, ভিজিয়ে দিয়ে আমাকে।
অবশ্য সরে গেলে তোমরা,
এ-ই সাতই জুনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা ছিলে।
এ-ই সাতই জুনের রাস্তায় যারা ছিলে না,
এ-ই সাতই জুনের রাস্তায় ...  হাহ ...
অবশেষে জানলাম
জন্মেই একা আমি, মৃত্যুতে আঞ্জুমান মফিদুল।
অবশেষে দেখলাম-
কোথাও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হয় নি,
কোথাও শোকে তাপে দগ্ধ কালো ব্যাজ ছিলো না।
একাডেমি, শহীদ মিনার
না স্মৃতিসৌধ ; বিতর্ক নেই।
সাতদিনের শোক প্রস্তাব রাখা হয়নি জাতিসংঘে।
শুধু
আমার মৃত্যুর পর বৃষ্টি নামলো।
শুধু
আমার মৃত্যুর পর তোমরা সরে গেলে, তোমাদের ছাতা ছিলোনা।

সফিকুজ্জামান
স্বর্গস্বপন

এক সোনার ঝালরে মোড়া
কলি ফুটা সকাল বেলায়
কচি শিউলি গাছের ডালে সাতরঙা প্রজাপতি দেখে
মনে হলো আমি ঈশ্বরের উদ্যানে আছি।
আল কাওছার থেকে বুঝি
ছিটকে পড়েছে রূপালি মাণিক নরম সবুজ ঘাসের শরীরে।
পৃথিবীর মেরুদন্ড বেয়ে বেলা যখন মাথার কাছাকাছি ডানামেলে উড়ে এলো
একদল মেঘ।
ঝোড়ো হাওয়ার পালে চেপে মেঘের ওপারে উড়ে গেলো
আমার স্বর্গস্বপন
এখন পূব আকাশ জুড়ে
প্রজাপতি রঙা রঙধনু
রঙের বাহার
আর আমি আছি পৃথিবীর
মাটির উপর ...

জাহিদুল মাসুদ
সুখের মৃত্যু

তুমি আমার খুনি হতে যদি
যদি নিজ হাতে খুন করতে আমাকে
তবে মৃত্যুর কুৎসিত বিভীষিকা থেকে
আমি রেহাই পেতাম।
খুব সৌন্দর্যময় মৃত্যু হতো আমার
খুব সুখের মৃত্যু হতো
তোমাকে না পাওয়ার সমস্ত বেদনা
তোমার কৃত খুনে রাঙা হয়ে উঠতো।

অনিক সাহা
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ

কান পাতলেই শোনা যায়
প্রতিদিনের স্বাস্থ্য বুলেটিন
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ
ভেসে আসে চিৎকার
সচরাচর মৃত্যু যেভাবে আসে, তেমন
নয়;
অদৃশ্য জীবাণুর আঘাতে ছিন্নভিন্ন সবকিছু
জানালার কাঁচ গুলো টেনে দিই জোর করে
আমি তো বেশ আছি,
আমার আলিশান এপার্টমেন্টে!
তবু অন্তরে খচখচ করে,
আমার এখনকার ছুটি গুলো ঠিক ছুটি নয়
গৃহবন্দিত্বের হাহাকারের শব্দ
চাপা পড়ে যায় ক্ষুধার্ত মিছিলের শব্দে।
টহলরত পুলিশের ক্রমাগত মাইকিং,
‘আপনারা ঘর থেকে বের হবেন না’
অসহায় আমি ছুটতে থাকি এ ঘর থেকে সে ঘরে,
আচ্ছা, মৃত্যু কি এখানেও হানা দিতে পারে?
দুপুরের সংবাদে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেব,
অথচ কিছুদিন আগে শিরোনাম হয়েছিলো মঙ্গলে অভিযান!
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ উপেক্ষা করে
আমি বারান্দায় এসে দাঁড়াই
সামাজিক দূরত্ব আমাকে বিচ্ছিন্ন করেছে-
আমার বন্ধু, আমার স্বজনদের থেকে।
আমি চাইলেই এ দীর্ঘ ছুটিতে ঘুরতে যেতে পারছি না
সাজেক, কক্সবাজার, রাঙামাটি, সিলেট কিংবা সুন্দরবন!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ত্রাণ চোরদের নিয়ে হইচই,
সেসবে মনোযোগ না দিয়ে বুকভরে শ্বাস টেনে নিই
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ
ধীরে ধীরে আমার ফুসফুসে প্রবেশ করে!
... মৃত্যুর গন্ধ টেনে নিতে নিতে এ ভুতুড়ে শহরে নিজেকে
মৃতই মনে হয়!

ছোটগল্প
‘গন্ধ’
শুভা গাঙ্গুলি

এই বিশ্বভুবনের প্রতিটি মানুষ এই দুনিয়াকে চিনতে বুঝতে আর পরিচিত হতে যে কয়েকটি ইন্দ্রিয়র সাহায্য নেয় তার মধ্যে চোখ কান নাক আর স্পর্শ মানে ‘touch’ টাই বেশি কার্যকরী,

এই অবধি বলে সিদ্ধার্থ ওর বান্ধবী পল্লবী ওরফে পলির দিকে তাকিয়ে দেখলে সে ব্যাগ থেকে একটা সেন্টের শিশি বার করে নিজের গায়ে স্প্রে করছে। তা দেখে সিদ্ধার্থ যাতে আপনারা আগেই চেনেন একজন বিচক্ষণ বুদ্ধিমান আর শিক্ষিত ডিটেকটিভ মানে টিকটিকি, আর পল্লবী ওর ক্লাসমেট থেকে সহকারী কিন্তু ঘরণী নয়, যদিও বাড়ীর সবাই ওকে একদিন ঘরণী হবে বলেই জানে, পল্লবী নিজেও তাই মনে করে, কিন্তু সিড সেটা মোটেই বলে না। যেহেতু পলি একজন ইন্টেলিজেন্ট ইঞ্জিনীয়র আর ব্ল্যাক বেল্ট আছে তাই পলিকে ও টীমে রেখেছে, মাত্র।

ওর সেন্ট মাথা দেখে সিড বললে- তুই এটা মাখলি কেন? কথা শুনছিস না তাহলে? মানে কেসটায় তোর কোনো আগ্রহ নেই?
-কথা তো শুনলাম আসলে তোর বক বক শুনতে শুনতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো তাই একটু গন্ধ মাখলাম, এখন বেশ লাগছে রিলীভ্ড।
-আচ্ছা তুই কি শুনেছিস,
“শুনেছো কি বলে গেলো সতীনাথ বন্দ্যো,
আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ

সুকুমার রায়?
.............
সেই রকম আর কি, তোর গায়ে গন্ধ তাই।
আসলে এটা কি বলতো সিড,
একে বলে ‘অ্যারোমা থেরাপী’
যেমন পুজোর ঘরে ধূপ ধুনোর গন্ধ আমাদের টেনশন দূর করে, আমরা কিছুক্ষণের জন্য worry anxiety থেকে মুক্ত হই,
পুজো করার অর্থ concentration  of mind in presence of essential oil
কিছু বুঝলি সিড?”

সিড বললে “তুই কি এটা জানিস পৃথিবীর যত রকম বিখ্যাত এবং বহুমূল্য essence আছে, প্রায় সবই মানে আক্ষরিক ভাবে সবই জীব জন্তুর মল মূত্র আর বমি দিয়ে তৈরী? আর এটা জানিস আজ ও কিছু কিছু প্রাণী endangered শুধুমাত্র cosmetic Industry’র চরম লালসার জন্য এই লকডাউনেও কিছু পোচার ভীষণ ভাবে চরম অত্যাচার করে চলেছে নীরিহ প্রাণীদের ওপর। এই ধর সঁংশফববৎ এদের তো চরম অবস্থা, হিমালয়ের বা হিমশীতল এলাকার ছোটো ছোটো সাইজের এই white bellied musk deer বা কস্তুরীমৃগদের মধ্যে একমাত্র পুরুষরাই এই স্বর্গীয় সুগন্ধ সৃষ্টি করতে সক্ষম, এদের জননেন্দ্রিয়তে ছোটো নারকেলের মতো একটা growth যেটার ভিতরে semi liquid type থাকে। কিছু chemicals থাকে যেটা তারা মেয়ে হরিণের মনোহরণ করার জন্য তৈরী করে, আর এই অপূর্ব সুন্দর কস্তুরী কে সুগন্ধি আতর বা expensive essence তৈরীর বেস হিসাবে ব্যবহার করা হয়।”

-সিড, আমিও কিছু জানি রে টিকটিকি,
-এই যে বন বেড়াল বা খটাশ আমরা গাঁয়ে গঞ্জে দেখি এরাও ছিু কম নয় রে, এদের গন্ধ গোকুল বলে, কারণ ওই একই গন্ধছড়ায় এরা যখনই দরকার বোঝে, tropical rain forest এর অধিবাসী এরাও কিন্তু নীরিহ প্রাণী, কখনও চট করে আক্রমণ করে না মানুষকে। এদের ও জননেন্দ্রিয়তে musk তৈরী হয় পুরুষ এবং মেয়ে  দুরকম বন বেড়ালের শরীরে।
এদের  glands অথবা analglands এ এই chemicals তৈরী হয় , খুব pungent গন্ধ বের হয় কিন্তু তারপর এটাকে শোধন করার পর অসম্ভব উঁচুমানের কসমেটিক তৈরী করা সম্ভব হয়। বুঝলি টিকটিকি? আর একটা কথা এরাও কিন্তু এই কারণেই দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। সুন্দর গন্ধ এদের দূর্ভাগ্য।

একটু থেমে আবার বলে, “কোন বন জঙ্গলের পাশ দিয়ে রাতের বেলা যেতে যেতে ,তুই যদি হঠাৎ পোলাও রাঁধার গন্ধ পাস,তুই তোর ডিটেকটিভ কাজের জন্য নিশ্চয়ই বনে বাদাড়ে ঘুরিস, তখন এটা ভাবিস নি যেন  জঙ্গলে অন্ধকারে ভুতের  বিয়ে হচ্ছে,
জানবি কাছেই কিছু গন্ধগোকুল ঘোরাফের করছে।”
-একটু কফি খাওয়াবি সিড?
-কফি খাবি? আচ্ছা ভালো কথা মনে করে দিয়েছিস, আগের যে কেসটা মানে খুনের  সটা solve করেছিলাম না সেই পার্টি টা হেবিয়াস বড়লোক ছিলো খুব খুব দামী কফি এনেছিলো গিফ্ট হিসাবে। তুই তো জানিস আমি গিফ্ট নিই না, তাই মা’কে জোর করে গছিয়ে দিয়ে গেছে, যা তো খেয়ে ফিদা হয়ে গেছিলো, তারপর দোকানে দিয়ে দর করে অজ্ঞান, রলে আমরা কি আর এসব খেতে পারি?”
-তাই, দেখি কেমন?
-দেখ

“কি দারুণ গন্ধ রে, কি ডিভাইন টেস্ট রে?”

তাহলে তোকে এর ব্যাকগ্রাউন্ডটা ক্লীয়ার করি, একে বলে Luwak Coffee  অথবা poo coffee
দুর্মূল্য এই কফি তৈরী হয় আগে civet বা গন্ধগোকুলকে পাকা পাকা কফির বীজ খাওয়ানো হয় তারপর তার পেটে এই বীজ ফারমেন্টেশন হয়, তারপর মলের সাথে বীজ বের হয়ে আসে তাই দিয়ে এই স্বর্গীয় কফি তৈরী হয়”

“ওয়াক। ওয়াক। থুঃ থুঃ”
যা বেসিনে বমি করে আয়।”

দাঁড়া। আরও কিছু। জ্ঞান দিই তোকে , জীব জন্তুদের জীবন শেষ করে তাদের স্পেশিসদের চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় করে
আমরা আমাদের ড্রেসিং টেবিল সাজাই,
অবশ্য এখন সরকার সব বন্ধ করে দিলেও গন্ডার তার একমাত্র অস্ত্র শৃঙ্গের জন্য
মাসিক ডীয়ার তার মাস্কের জন্য
আর স্পার্ম হোয়েল তার excretion এর জন্য, এই যে লিপস্টিক না লিপগ্লস কি যেন মিনিটে তিনবার পকেট মিরর বার করে লাগাল সেটাও আসে মানে এই যে ঘর ভরে গেলো ভুর ভুর গন্ধে সেটাও আসে তিমি মাছের পেট কেটে
আবার তাদের poo যদি দলে ভাসে তো তাকে বলা হয়
Floating Gold.
এরা জানে না এই সব প্রাণীদের কোনো ধারণাই নেই তারা পৃথিবীর
শ্রেষ্ঠ সুগন্ধির বাহক।”

“দেখ সিড রবী ঠাকুরের সেই কবিতাটা মনে পড়ে তোর

“একদা প্রাতে কুঞ্জতলে অন্ধ বালিকা
পত্রপুটে আনিয়া দিলো
পুষ্পমালিকা

কণ্ঠে পরি অশ্রুজল ভরিলো নয়নে

কহিনু তারে অন্ধকারে দাঁড়ায়ে রমণী
কি ধন তুমি করিলে দান না জানো আপনি।”

এই প্রাণীরও তাই।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক