Sunday, May 31, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪৮

রবিবার ১৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩১ই মে২০২০




ক বি তা

সরকার অরুণ কুমার
ঠেলা জাহাজের খালাসী

প্রস্তুত হও সাহসী বীর। বহিছে বিপন্ন সময়
স্বার্থে ভরা দুনিয়া, মনে শুধু কলহের সুর
আদর্শের খুঁটিগুলো স্বার্থের ধাক্কায় নড়বর,
শয়তানের অশুভ মন্ত্র আদমেরে ফেলে মৃত্যুর ফাঁদে।

খোঁড়া পা খানায় পড়ে বেশী। ঘরকাটা জীবন শুমারি
থাবায় থাবায় তুলে নিচ্ছে আয়ু
সত্যটা বললেই ক্ষিপ্ত হন ধর্মরাজ!
অশুভ নসীব, খানাখন্দে ভরা জীবনে ক্ষণেক বিশ্রাম
অনর্থক মিথ্যা ভাষণ, আগুনের খাপরা নিয়ে আমরা চিরকাল
খারিজ হয়েছি দোটানার অন্ধকারে।

গর্দভের পিঠে যেন খারে দজ্জাল
জীবনের খেয়ানদীতে আমরা
ঠেলা জাহাজের খালাসী
নাকাল হতে হয় প্রভুদের কাছে।

রফিকুল নাজিম 
অপ্রেমিক

তোমার চোখের তারায় কতটুকুন মায়া ঘুমায়,
কতটুকুন দুষ্টু আর্তি খেলা করে; ঠিকই মাপতে পারি।
তোমার ঠোঁটের কোণে কতটুকুন বিদ্যুৎ চমকায়
কতটুকুন নিষিদ্ধ গন্ধম ঝুলে থাকে; জানি গো নারী।

তোমার বুকের তিলক দু'টো কতটুকুন ওম খুঁজে 
কতটুকুন উষ্ণতায় সুখের বিলবোর্ডে তৃপ্তির রঙ ছিটায়?
কতটুকুন আদরে তোমার এলোচুল হাওয়ায় উড়ে
কতটুকুন রাগে রক্তিম রঙে কানে রক্তজবা সাজায়?

তোমার গোপনীয় ভ‚মির কতটুকুন উর্বর- চাষযোগ্য 
কতটুকুন ঘামে বীজ থেকে চারা হয়? সব হিসেবই রাখি,
কোন ঋতুতে কোন ফুল ফুটে; কোন পাখি গায়
কত ডেসিবল শব্দে হুংকারে মেলো তোমার আঁখি...

আহা! অপ্রেমিক আমি-তোমার আকাশে দেইনি উঁকি
জানি না-কতটুকুন কার্বন লুটোপুটি খায় যখনতখন, 
কতটুকুন অভিমানে এসিড বৃষ্টিতে পোড়ে তোমার মন
কখনো খুঁজিনি- তোমার হৃদয়ে কেন এতো রক্তক্ষরণ?

সাজ্জাদ সাঈফ
তমা সিরিজ: স্বরলিপি

ট্রেনে চেপে শহরের বুকে নেমে এলো 
দূর গঞ্জের মেঘ-

এইখানে ফোনের টাওয়ার, হিম বাতাসে মাথা দোলায়
নতুন ধানের গন্ধে দাড়িয়াবান্ধা খেলে, হাওয়া তার কানে কানে
জোনাকের পাঠশালা খোলে, রমরম করে হারানো চিঠির সুর।

নাও তমা, হেরফের; 
তোমার দিকে নগরজীবন বাড়িয়ে দেবে শিম-ফুল;
মথুরা-বাঁশরী ঘিরে থাকবে, ওজনোস্তর; 

নাও দু'হাত ভরে, অতল প্রেমের নিচে চাপা পড়া
সভ্য ও সভ্যতার গান, স্বরলিপি তার!

শুভ্র সরখেল
প্রলাপ 

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
দীর্ঘ জীবন সে চায় না।
মানুষের মন সে বুঝতে পারে না---
নিজেকে বুঝতে শেখে নাই---
ডাকসু, চলচিত্র, রিয়ালিটি শো, মানব বন্ধন, ক্যাম্পাস ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি---
সে কিছুই বুঝতে চায় নি জীবনে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
বাঁচতে সে চায় না ।
গাছের ছায়া সে বুঝতে চায় না ---
দালানের উচ্চতা সে ধরতে জানে না ---
শৈশব, ইস্কুল পালানো, ছেঁড়া ঘুড়ি, রাস্তায় বলাকা, এলাকার সেলুন ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি ----
সে কিছুই পায় নি একদম নিজের মতো করে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
মৃত্যু খুব আপন তার কাছে ।
রেল লাইনের অংক সে বুঝত না ----
বাগধারার শব্দ সে জানতো না ----
জমির কেস, জুম্মার নামাজ, সন্ধ্যায় উলুধ্বনি, পুলিশের গন্ধ, ককটেলের রঙ ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি ----
সে কিছুই চিনতো না ভালো করে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
আবার বাঁচতে হবে আরেক সন্ধ্যা তোদের সাথে ?
অনেক ইত্যাদি নিয়ে কাটাতে হবে আরেকটি সন্ধ্যা ?
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি


RukaiyaPakhy
 “Ohh Love!”

Someday, my dear!
Someday I'll be paralyzed with happiness.
Holding a glass of Red Wine in left
I'll chain you with magic.
You'll be traumatized for a while!
Seeing you puzzled-
I'll smile,
Kiss on forehead,
Seize your hands for saying-
'YOU'RE UNDER ARREST!’'



ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: জঁ ককতো 
দেবদূত অর্টোবাইস
১.
দেবদূত অর্টোবাইস পদক্ষেপে
জলযুক্ত রেশমী ডানায়
আঘাত করে আমায়
সতেজ করেস্মৃতি
বদমাশ, নিশ্চল
ভেঙে যাওয়া আকিক পাথরের উপর
একাকি আমার সাথে, গাধা, তোমার অতিপ্রাকৃতো পালানো
২.
দেবদূত অর্টোবাইস
অবিশ্বাস্য বর্বরতায়
ঝাঁপিয়ে পড়েআমার উপর
দোহাই, এতো জোরে ঝাঁপ দিও না
বদমাশ সাথী, লম্বা ফুলের
দৈহিক উচ্চতা
রেখে দিয়েছো তুমি আমায়
খুব খারাপ আচরণ
টেক্কা ধরলাম আমি, দেখছো?
কী আছে তোমার?
৩.
দেবদূত অর্টোবাইস
ধাক্কা দেয় আমায়
আর আপনি, প্রভু যীশু, কৃপা
তুলে নাও আমায়, তোমার জোরালো হাঁটুর কোণে
উঠিয়ে নাও আমায়
নিছক আনন্দ, বৃদ্ধাঙুল
খুলে দাও দড়ি
আমি মরি 
৪.
দেবদূত অর্টোবাইস ও দেবদূত সেজেন্ট
নিহত হয় যুদ্ধে- কি আশ্চর্যজনক
নামকেলি
কাকতাড়ুয়া চরিত্র
ইশারায় ভয় নেই যার কোনো
স্বর্গীয় চেরি গাছগুলোতে চেরিগুলি
গির্জার ভাঁজ-দরজার নিচে
হ্যাঁ সম্মতির ইশারায় অভ্যস্ত
৫.
আমার অভিভাবক দেবদূত, অর্টোবাইস
আমি তোমাকে পাহারা দেই
আমি তোমাকে আঘাত করি
আমি তোমাকে ভেঙে ফেলি
আমি তোমার পাহারা বদলাই
প্রতি ঘণ্টায়
পাহারায়, গ্রীষ্ম!
চ্যালেঞ্জ করছি তোমাকে
যদি তুমি মানুষ হও
মেনে নাও তোমার সৌন্দর্য
সাদা সীসার দেবদূত ধরা পড়ে একটি ছবিতে
ম্যাগনেসিয়ামের একটি বিস্ফোরণ দ্বারা

পাঠ অনুভূতি

ময়ূরাক্ষী : হুমায়ুন আহমেদ   
কামরান সরকার

ময়ূরাক্ষী নদীকে একবারি আমি স্বপ্নে দেখি। নদীটা আমার মনের ভেতর পুরোপুরি গাথা হয়ে যাই।

ময়ূরাক্ষী হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর হিমু সিরিজের প্রথম বই। বইটিতে হিমুর রহস্যময় চরিত্রটা এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, এমন পাগল একটা চরিত্র কিন্তু সবাই ভালোবেসে ফেলবে। হিমুর নদীটা তার পছন্দ তাই নদীটাও হিমু তার পছন্দের মানুষদের দিতে চায়। উপন্যাসের হিমুর বন্ধবী রূপাকে নদীর নাম দেয়, হিমুর ফুপাতো বোন রিনকি ও তার জামাইকে নদীটি ব্যাবহার করতে দেয়।
উপন্যাসে হিমুর আশেপাশের চরিত্র এবং তাদের সাথে হিমুর কথা-বার্তা, হিমুর ভাবনা চিন্তা ও হিমুর বাবার উপদেশ দিয়ে লেখক মহাপুরুষের কিছু গুণ প্রকাশ করেছেন। হিমুর বাবার উপদেশ মহাপুরুষেরা মায়ার বাহিরে থাকবে,  সম্পদের চিন্তা থাকলে কষ্ট থাকবে। উপন্যাসের মজিদকে দিয়ে নির্লিপ্ততার উদাহরণ দিয়েছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার মধ্যে একটা মজা আছে সেটা হিমুকে দিয়ে বুঝেছি, আর এই বিষয়টাই আমার কাছে হিমু চরিত্রের সবচেয়ে মজা লেগেছে।  
 ময়ূরাক্ষী উপন্যাসের কিছু কিছু উক্তি খুব ভালো লেগেছে-
-মহাপুরুষ হচ্ছে এমন একজন যাকে  পৃথিবীর কোনো মালিন্য স্পর্শ করেনি।         
-কিছু কিছু প্রশ্ন আছে যা কোনোদিন করা হয় না। 
-যা পাওয়া যায় না তার প্রতি আমাদের আগ্রহের সীমা থাকে না। মেঘ আমরা কখনো স্পর্শ করতে পারি না বলেই মেঘের প্রতি মমতার আমাদের সীমা নেই।
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ, অনন্যা প্রকাশনী পৃষ্ঠা: ৭৫ দাম: ১৩৫ টাকা

Saturday, May 30, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪৭


শনিবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩০ই মে২০২০





ক বি তা
মীর সাহাবুদ্দীন
কালের কলঙ্ক

শহরে অনেক কবি আসে কেউ আবার ফিরে গ্রামে
কর্ম সংসারে
রাজনৈতিক মাঠে
প্রেম পাঠে
হেঁটে যায় স্পর্শ থেকে জ্ঞানের ভিন্ন শাখায় অলস সময়ে

মানুষের ব্যথায় আন্ধার উপর-নিচ
তিরস্কার ভেঙ্গে যে এগিয়ে যায়...
মূলত কবিতায় যাকে খেয়ে ফেলে
অনেক অমিলে
ঘৃণার প্রান্ত হতে
ধার্মিক থেকে
মৃত্যুর পর
মন্দ বীভৎস মানুষের যুগ হতে আলোর দিকে...
যেন সুন্দর দালান বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা

আমরা কেবল মৃত্যুর পথিক
আমাদেও চোখ চাকচিক্য, নরম মাংসে এবং বিকারে
লবন চিনি মিশ্রণ করে পানি ঢালার মত।
নেটওয়ার্ক কমিয়ে নিচ্ছে আয়ু
দীর্ঘ বাঁচার ইচ্ছেই বা জনার
সুইসাইডের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে
সব পেয়ে গেলে চাহিদা নতুন রূপ নেয়
অধিক হতাশা নিয়ে মৃত্যু থেকে যে বেঁছে যায়
আলোচিত হয়ে একদিন টকশো জমায়
জন্মায় গল্প হতে গল্প
সংগ্রাম একটি সুখ
তিরস্কার কুসংস্কার পৃষ্ঠে যাবার-
রুলারের মত নিজ থেকে নিজকে
ভিন্ন মানুষের ভিন্ন গল্পে
ইতিহাসে, যুদ্ধে
আর আমাদের থেকে যায় কালের কলঙ্ক।

অনির্বাণ ঘোষ
রূপসী

তুমি প্রশান্ত চিরদিন
আমি অস্থির প্রতিদিন,
দৈনিক বেড়ে চলে মুগ্ধতার প্রহর...
মেঘখানি উড়ে যায়,
রঙিন সন্ধ্যা ডাক পাঠায়
...অদৃষ্ট হাসে।

তার কথা রাখবে না কেউ আর
বাদল দিনে জল ঝরে বারবার, নিরুদ্দেশ...
তবু জোছনা মিলেমিশে একাকার,
পাহাড়চড়োর সাথে।।

সায়ন্তনী হোড়
প্রকৃতিগত চিহ্ন

ছায়ার ভেতর থেকে আঙুল সরে আসছে
ক্ষোভ ভেঙে পড়ছে আকাশের গায়ে
চুমুক দেওয়া মুহূর্তেও কোণায় আছড়ে পড়ছে
ঘনীভ গোধূলি

জলীয় শাঁখের উপর এখনও উলুধ্বনির চিহ্ন লেগে আছে, একটা মৌমাছিও সৌরভহীন আকুলতায় ভুগছেনা আজ। ঘাটের ওপাশে ফেলে আসা চিন্তাভাবনা পচে গেলে আমার আলমারি থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়
তেলচিটে বিকেলের ম্যাপে আবার রামধনু আঁকি, যদিও এখন আত্মশুদ্ধির পথে আর কোনো বাধা নেই
শুধু রক্ত চুষতে ব্যস্ত অবহেলার কথোপকথন।

সরোজ মোস্তফা
শরতের কবিতা-

খাল পাড়ের ছুটন্ত জোনাকির মতো কৃষক
বাড়ির চাঁদ দেখ খুঁজে নেয় মান্দার ফুলের দীঘি, বৌচি খেলা মাঠ।
জেনেছি এই সংসার বিয়ার ক্যানের বুদবুদ!
সন্ধ্যা তেলেঙ্গার ডাকে কতো বিকাল যে ছিদ্র হয় জিজ্ঞাসায়!
সবাই কি খুঁজে পরশির লগবই!
সর্বত্র একাকিত্বের রঙ! জীবন চোখ দশদিক থেকে ডাকে
দেখ, বন্দনার ঘন্টি ছাড়া আশ্রমের কাক সূর্যকে একাই ডেকেছে জল-কলমির ভোরে।

ভাতের ফুটন্ত হাড়ি দেখে ঈর্ষা কেন!
খবর না পাঠালেও পলাশের ডাল ঘেঁষা হাওয়াতেই
পৌঁছে দিই আমার আয়না!

রাস্তা পেরুনো সাথীকে কে ডিলিট করে।
ট্রেনের জানালা থেকে দূরে খাল পাড়ে
আপন গাছের তলে দরদি নিঃশ্বাস!

শরতের কবিতা-

জীবন শেখাচ্ছে শরতের চাঁদ! সার্জারির টাকা জোগাড় না হলে
যে ভাবে বাড়ে ক্যান্সারের ফোঁড়া ঠিক সে ভাবেই, কবরের ঘুম ছাড়া
আমরা কিচ্ছু শিখিনি! ...

শান্তম
জল

মন দিয়ে জলের মনের কথা শুনে
এই পাড় জলকেই কানে কানে বলে
ভালোবাসা আসলে জল। জলের সহজ
যেমন সহজ নয় হয়ে ওঠা তেমন সহজ


মূল: : জঁ ককতো
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
সার্কাসের শিশু

বংশীবাদকের একজন, পোলকা
চাবায় নরম মিঠাই, কড়া মিষ্টির চকলেট, পুদিনার লজেন্স
অবকাশ; খুরের গন্ধ
চমৎকার রেশমী কাপড়ের উপহাস পাখি নিহত হয় ড্রামের বাজনায়
হামবার্গ আঙুর, বিয়ারের গ্লাস, রাস্পবেরি ফলের রস
নিজের হাত পাখি ধরার ফাঁদ
অন্তর্বর্তী সংগীত, নীল ইউনিফর্ম
মৃত্যুর প্রশংসা গেয়েযায় ফাঁদ

মু ক্ত দ্য
চুপকথা
আতিকুর রহমান হিমু

অনেকগুলো দৃশ্য একটা শব্দের ভিতর আটকে পরে। শুরু হয় ঘোর, কেমন যেন একটা জ্বর-জ্বর ভাব; শরীরে, রক্তে। নিজের সাথে কথাবলা, নিজের মুখোমুখি দাঁড়ানো। হৃদকম্পন বেড়ে যায়; বুকের ধুকপুক। অদ্ভূত হীম আলো ডানা মেলে বোধে। এক চমকে সবগুলো পালক ঝরিয়ে মিলিয়ে যায় ধূসরে; অন্ধকারে। জলের শব্দ, পাখির পালক, মাটির ঘ্রাণ, ফুলের সুভাস, নর্দমার পাশের অশ্লীল বাতাস, ডাস্টবিনের আশটে গন্ধ। অনেকগুলো মানুষ, উপমানুষ, তাদের জোড়ায় জোড়ায় চোখ, চোয়াল, তাদের শরীরের রঙ, চুলের ভাঁজ, কথা বলার ধরণ, তাদের বিচিত্র রক্ত। কয়েক জন নারী তাদের চিবুক-চুল-স্তন, তাদেরকে ঘিরে থাকা লোককথা, তাদের চোখের অতলে লুকিয়ে রাখা রূপকথা। সব যেন কেমন একটা ছবি হয়ে যায়। বায়োবীয় ক্যানভাসে বিচিত্র সব রঙ, বিচিত্র শৈলী, শিল্পকথার দীর্ঘ ইতিহাসের মতো গল্প। গল্পের ভেতরের গল্প, গল্পের বাইরের গল্প। সব যেন কয়েকটি শব্দের একটা পংক্তির মধ্যে আটকে পরে। শুরু হয় ভাঙচুর ভেতরে ভেতরে; বাতাসের শব্দে, জলের শব্দে, মেঘ মানুষের শব্দে, নদীর বয়ে যাবার শব্দে, কান্না চোখ সমুদ্রের শীল্পিত শব্দে- আলো অথবা অন্ধকারের একটা ট্রেন প্রকাণ্ড শব্দে বোধের ভেতর দিয়ে ডুকে পরে হৃদপিণ্ডে। রক্তে রক্তে ছড়িয়ে পরে একটা গভীর অসুখ। এমন সব অসুখ কি লিখিয়ে নেয় কবিতা?
দৃশ্যালয়ে ভেসে ওঠে অতীকায় কোন কোন দুপুর। স্কুল ফেরা শৈশব, দুলে ওঠা সাঁকো, শৈশব বা তারও আগেকার সময়। মাতৃগর্ভের কাল আঁধারের যাপন চিত্র; বা তারও আগের পিতার প্রজাপতি পর্ব। আবার ফিরে আসা প্রেমিকার গ্রীবার ভেতর, পার্কের নির্জন বেঞ্চিতে, চৌরাস্তার জ্যামে, নগরীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুখিসুখি চেহারার বারে। ব্যাপনে-সাঁতারে ঘুমিয়ে পরা। কোন এক গ্রাম, ঝিঁঝিঁ ডাকা দুপুর, একজোড়া ধূসর ঘুঘু, কয়েকটা চড়ু, সবুজ ঘাসে ঢাকা পথে পথে হেঁটে যাওয়া। হঠাৎ দূর্বার ভেতর থেকে লাফদিয়ে উঠে আসা খরগোসের মতো বেড়িয়ে পরে হারানো প্রেমিকের অবয়ব। হেঁটে যাওয়া এক সাথে জলের গভীরে। এক টুকরোআকাশ, কয়েকটা ছেড়া ছেড়া মেঘ; অপেক্ষমান চৈত্রের চৌচিরভমি। জলেরতৃষ্ণা। মস্তিষ্কে আলো আর আঁধারের দ্বন্দ্ব; কিছু রেখা, রূপ-অরূপ। প্রার্থনায় মগ্ন হয় চোখ। জলের অপেক্ষায় অদৃশ্য ল্যান্ডস্কেপ; কখন নামবে ঝুমবৃষ্টি?
কবিতা জীবন একই জিনিসের দুই রকম উৎসারণ
কবিতার কথা প্রবন্ধে জীবনানন্দ দাশ বলেন: ‘কোন প্রাক নির্দিষ্ট চিন্তা বা মতবাদেও জমাটদানা থাকেনা কবির মনে-কিংবা থাকলেও সেগুলোকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করে থাকে কল্পনার আলো আবেগ; কাজেই চিন্তা সিদ্ধান্ত, প্রশ্ন মতবাদ প্রকৃত কবিতার ভিতর সুন্দরীর কটাক্ষের পিছনে শিরা, উপশিরা রক্তের কণিকার মতো লুকিয়ে থাকে যেন। লুকিয়ে থাকে; কিন্তু নিবিষ্ট পাঠক তাদের সে সংস্থান অনুভব করে; বুঝতে পারে যে তারা সংগতির ভিতর রয়েছে, অসংস্থিত পীড়া দিচ্ছেনা; কবিতার ভিতর আনন্দ পাওয়া যায়; জীবনের সমস্যা ঘোলা জলের মূষিকাঞ্জলির ভিতর শালিকের মতো স্নান না করে বরং যেন করে আসন্ন নদীর ভিতর বিকেলের শাদা রৌদ্রের মতো, সৌন্দর্যও নিরাকরণের স্বাদ পায়!’
সৌন্দর্যের স্বাদ কেমন? প্রশ্নের ভেতর দিয়ে আবার তলিয়ে যাওয়া গভীরের গভীরে। নন্দনতত্ত¡কে কি কোন সংজ্ঞায় আটকানো যায়?
শ্যাওলা লাগা সব মুখ জলের অতল থেকে উঠে আসে; আবার হারিয়ে যায়
জলের তলে। শান্ত দীঘিতে ঢিল ছুড়লে যেমন ঢেউ ওঠে আবার মিলিয়ে যায় জলজ ধ্যানে। মস্তিষ্কের গভীর থেকে উঠে আসা হাজার হাজার বছর আগেকার সব স্মৃতি। প্রস্তর যুগের পাহাড়ের গায়ে আঁকা আঁকিবুকি, অরণ্যচারী জীবন শিকারের দৃশ্যবলী; জ্যোৎস্না রাতের জল কথা পুরুষ রমণীর পরস্পরের ভিতর ডুকে পরা। নদীর কাছাকাছি আসা জলের সাথে নেমে যাওয়া; মানচিত্র বদল। পলিমাটির ঘ্রাণে ঘুমিয়ে পরা রূপকথার সবুজে। বিগত শীত আর ঋতুবর্ষা, কয়েকটা বসন্ত; অতীত থেকে উঠে আসে এক টুকরো রাত। গাঙচিলের ডানা ঝিলধরা আকাশ, দূরের সব তারা, তারাদের মৃত দৃশ্য; মৃত তারাদের যাপিত জীবন। জীবন বদল। রাতের সব রঙ, মেঘ শিশির। শিশির ভেজাঘাস, ঘাসের গন্ধ, হলুদ-নীল-বেগুনি ফুল। ঘাসফুলের ভিন্ন ভিন্ন রঙ ভিন্ন ভিন্ন কারুকাজ। যেন মগধ থেকে কৈলাশ-চাম্পা-কৌশাম্বী-মহামতী পেরিয়ে বুদ্ধের খুঁজে পাওয়া শ্রাবস্তির জেতবন। তারপর আবার ডুবে যাওয়া নিজের অতলে। ধূসর অতীত থেকে ব্যথিত বর্তমানে নয়, সংকীর্ণ ভবিষৎ নয়; এর বাইরে কোথাও চলে যাওয়া। হয়তো কোনো এক শূন্যতা সময়ের হিসেবে যা ধরে রাখা যায়না। এই যে লিখতে লিখতে যাওয়া; মূলত নিজেকেই লিখা। সামন্ত যুগে মানুষ দেবতাদের যে গল্প লিখতো পদ্যে-শ্লোকে তা মূলত মানুষের গল্প। আর প্রাককাল থেকে চলে আসা শয়তানের উপকথা, তাও মানুষের। গীতায়শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কর্মফল ত্যাগ করতে বলেছেন। গৌতমবুদ্ধ জানিয়েছেন নিবার্ণের পরম আনন্দ। শূন্য হয়ে মানুষ যখন ঈশ্বরকে কল্পনা করেন তখন মূলত সে নিজেকেই খুঁজে পায়- রূপে-অরূপে। এই রূপ-অরূপ চিত্রায়ণের আকাঙ্খায় কবি ডুব দেন নিজের অতলে।
আলো-আঁধারের অতল থেকে একটা শ্যাওলা লাগা ছায়া এসে দাগ কেঁটে যায় পাণ্ডুলিপিতে। কখনো হয়তো বা কবিতা হয়ে ওঠে তবুও একটা আকাঙ্খা থেকে যায়; পূর্ণতায়। নিজের অতলের নিবিড় শূন্যতাকে ধরার জন্যই মানুষ নতজানু হয় নিজের কাছে; মগ্ন হয় শিল্পের আলো অথবা আঁধারে.....
একটা উজ্জ্বল পঙক্তি জন্ম নেয়। একটা কবিতার ভ্রমণ বাড়তে থাকে বোধে।

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক