Saturday, August 8, 2020

শিল্প সাহিত্য ১১৬

শুক্রবার  ২৩শে শ্রাবণ ১৪২৭, ৭ই আগষ্ট ২০২০


কবিতা

আশিক আকবর

সাদামাটা কবিতা 


আগুন যখন জ্বলতে থাকে

জ্বলতে থাকে

তখন পানি না এলে কাছে

আগুন ধীর হয়ে আসে 

ধীর হয়ে আসে

নিভতে থাকে

একবার নিভে গেলে তাকে জ্বালানো দায়

জ্বালানো দায়

আমি আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আকাশে উঠে গেলাম

মাটি তুমি ভালো থাকো

ভালো থাকো

জল আর পানির দ্বন্দ্বে জেগে উঠো না


অনার্য নাঈম

এখনো মেলেনি দেখা


সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া

প্রতিটি নারীকে আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি;

দেখি তার গ্রীবা, চিবুক ও চোয়ালের গড়ন;

চুলের দৈর্ঘ্য, কপালের সৌন্দর্যের টান;

ভ্রæর বাঁকা চাঁদ স্টাইল;

ওষ্ঠ ও অধরের নিবিড় সম্পর্ক এবং

লিপ লাইনের অদ্ভুত ফিনিশিং আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি।


আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে

সে যদি কখনো হেসে ফেলে অকপট;

আমি মুগ্ধ হয়ে সে হাসির সৌন্দর্য দেখি;

তারপর আমি নাকের ডগায়

শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম

দেখার জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়াই।

সম্মিলিত প্রতারক চক্রের কাছে

আমি প্রতারিত হই-

সকল নাকের ডগায়

বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে না;

ও রকম সৌভাগ্যবতী কজনের ভাগ্যে জোটে।

আমি একটু একটু করে দৃষ্টি নিয়ে যাই তার চোখের কাছে

আস্তে আস্তে ভিতরটা পড়তে থাকি

সেই প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে আজ অবধী;

চিত্র শিল্পীর মতো নিখুঁত ছবি আঁকি

আঁকতে আঁকতে থেমে যাই;

মরমী বাউলের মতো ঈশ্বর খুঁজি

এখনো মেলেনি দেখা।


এম. এম. বাহাউদ্দীন

অভিযোগের সমন


ভেঙে ফেলো, আবার গড়ো, বলবোনা কিছুই

আমি কাদার মত লেগে থাকবো আঙুল জুড়ে,

আমাকে ছেড়োনা তুমি।

অভিযোগ তোমার পাহাড় সমান, মেনে নিতে রাজি সবই

চাঁদ ধোয়া আলোয় তোমার হাতে তুলে দেবো 

চোখের জলে নরম করে আমার দেহ,

ছেনে চটকে নিজের মতো গড়ে নিও,

তবুও তোমার চোখে আমার চোখ রাখতে দিও।

অভিযোগের সকল জবাব পেয়ে যাবে উপন্যাসের শেষ পাতাটায়।

আঁধার যাবে কেটে, চোখের জলে ভিজে যাবে বই,

ফিরে আসবো না কো আর,

শুধু এ জীবনে অভিমানে ছেড়োনা আমার এ হাত ।

শোনো গো, বড় অভিমান নিয়ে কথা কই,

বড় ভালোবাসি, ওই মধ্যরাতের চাঁদের দোহাই।

ভাঙে যদি অভিমান, তুলে নিও অভিযোগ সমন,

ওপারেতে আমি হাতকড়া পরবো না কো আর,

জেনে নিও, এপার ওপার, আমি ছিলাম তোমার।


দেবদত্ত মুখোপাধ্যায়

মোহঋতু পুড়ছে ফাগুনে


দু’চোখে ঘুম নেই রাত্রি নির্জন আকাশে দু’টি তারা নিষ্পলক

লুপ্ত ইতিহাস চোখের গভীরে সবকিছু মোহময় অপলক

আকাশে কালো মেঘ কৃষ্ণকুন্তল মেখেছে কাজল চোখ প্যাস্টেলে

ভ্রমরনীল চোখ মায়াবী কুহকে ঢেকেছে চরাচর সব ভুলে

প্রগাঢ় কৌতুক জীবিত উদাসী অলীক অভিমানে অলস দিন

প্লাবিত কুয়াশা ভিতরে বাহিরে অথচ মোহঋতু পুড়ছে ফাগুন

ছন্দের মূর্ছনা সুরের তালে তালে নদীর গান শুধু শুনবে আজ

পাহাড়ের গায়ে আঁকা মিউরাল ছবিতে আদিম রমণীর নেইকো লাজ

শোকের এপিট্যাফ ঝুলছে দেয়ালে স্মৃতিরা অমলিন রাত্রিদিন

আয়ুর ঘড়িতে সময়ের পরিমাপ জীবনের ছুটেচলা ক্লান্তিহীন

সময়ের ক্ষতসব আরোগ্য এনে দেয় সবুজ অঙ্কুরে মৃত্যুবীজ

স্মৃতির বৃক্ষে কাঁটার শয্যায় বিরহী ফুল সব মনসিজ

তবুও এ হারানোয় বেদনা ভুলেছি চোখের জলে থাকে এক নদী

মনের মুকুরে তারই জলছবি আঁকি সেখানেই সবকিছু ভরাডুবি

গোধুলির অস্তরাগে মলিন স্মৃতিগুলো এখনো মালা গাঁথে রাত্রিদিন

কত না অনুরাগে ভালোবেসে তাকে শুধু রেখেছি মনেতে এতদিন


সোয়েব মাহমুদ

বাজে কবিতা ৩


বাঙলা-দ্বেষে থাকি আমি, যেখানে বিকেলবেলায় বিক্রি হয় মায়ের শাড়ির জমিন রাতে ঝুলে থাকে ওড়না; বোনের। যেখানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত আমার টাকা পাওয়া যায় ফিলিপাইনের জুয়ার টেবিলে, স্বর্ণ হয়ে সোনালী পাতা, যেখানের কয়লাখনির কয়লা, মন্ত্রীর ভাষ্যমতে শেষ করে ফেলে জনগন দাত মেজে। 

এখনও, আমি বাংলা-দ্বেষে থাকি, রাষ্ট্রের ভুল ধরিয়ে দিলেই রাষ্ট্র নেমে আসে শ্রেনীশত্রু ভেবে, তাই বলছি এখনও কি আপনারা আমাকে মেলোড্রামা শেখাবেন, শেখাবেন মেদমুক্ত শুকনো কবিতা।।


তন্ময় বিশ্বাস

বিজাতীয় শরীরী


রোদে-বসন্ত নামলেই মিলন পাড়ার ছোট্ট ঘরটা ঝলমল করে উঠতো

পাখিদের আনাগোনায় মুখরিত হত উত্তরীয়-পথ!

জীবন-বৈরাগ্য হীন তার নুন-জলে যে ভুতুড়ে বাতাস বইতো অন্তরে-

বিজাতীয়-দেশলাই পোড়ানো শেষে তৈরি হত বৈষ্ণবীয় ছায়াপথ।


নদী ভাসে, ভাসে মেঘ, রবিষণে দুলে ওঠা খাট, দুলে ওঠে শিশু, ফুটে ওঠে-

আশমানি স্বাদ। ঝিনুকের বাড়ি থেকে ছায়া আসে, চোখে থাকে গন্ডীবী-মায়া

মনের প্লাবণ হলে তরীহীন-শরীরে চলে শুধু আলো-ছায়া খেলা।

তারোপরে বিষ-নামে, সাঁকো বায় আধপোড়া দেহ, হুট খোলা শ্মশানে পড়ে থাকে-

ক্ষত-ঝড়, ক্ষত-রোদ, ক্ষত-বায়ু যত!


এবার বসন্ত এলে ছিড়ে খেও বিষম-পোশাক! মেলে দিও রোদে যোনির দীর্ঘশ্বাস!


আপন রহমান

স্মৃতি


কপির কাপ থেকে

তখনও উড়ছে ধোঁয়া;

চোখের তাঁরায় উড়ছে তোমার ধূসর স্মৃতি আর তোমার শিল্প খঁচিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।


যদিও আমার ভালবাসার আকাশ তখন প্রায় মেঘাচ্ছন্ন

তখন তুমি কপির কাপ থেকে ওঠা ধোঁয়ার মতই ধোঁয়াসা

দেখা দাও আবার মিলিয়ে যাও শূন্যে।


যদিও তুমি তখন কল্পনা বৈ কিছু নও-

তবুও আমার হৃদয় সরোবরে

তোমার রাজহংসী ছন্দে দোলা শরীর তখনও বর্তমান

আমার কাছে তুমি তখনও

অন্ত নও অনন্ত...

এখনও তাই....


ধারাবাহিক গল্প

সোনার বালা গায়েব রহস্য

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


দুই

ডায়মন্ডহার হাসপাতালের মর্গে কথা মত বাড়ির লোকজন এসে উপস্থিত হয়েছিল।

শেখর মিত্র ওদের মুখেই শুনেছিল সকাল দশটা নাগাদ কলকাতায় সিংহি পার্কের রায় চৌধুরী বাড়ির লোকজন- বৃদ্ধা মা , স্ত্রী , শালিকা, শ্যালিকার স্বামী এবং বাচ্চাটা বাড়ির প্রাইভেট কারে চড়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিল। যাচ্ছিল ডায়মন্ড হারবারের দিকে। ইচ্ছে ছিল - ডায়মন্ড হারবারের কেল্লায় কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরতি পথে ফলতার কেল্লা এবং জগদীশচন্দ্র বসুর বাগানবাড়িটা দেখে কলকাতায় ফিরবে। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাঁকির মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাটা ঘটে। প্রাইভেট কারটা একদম দুমড়ে-মুচড়ে শেষ। কেউ গাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। ভেতরটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।

আশপাশের লোকজন অবশ্য বলাবলি করছিল - দোষটা প্রাইভেটের ড্রাইভারের। কিন্তু, শুধু খতম। সুতরাং তাকে গ্রেফতার করার কোন প্রশ্নই নেই। আর বাসের ড্রাইভার এবং খালাসে লোকাল পাবলিকের হাতে ধোলাই খাওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল।

ডায়মন্ড হরবার মর্গের সমস্ত কাজকর্ম মিটিয়ে আমার ফিরতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। প্রায় দশটা। ওই সময় শেখর এর একদম ইচ্ছে করছিল না - ডাইরি পত্তর লেখার। ধান্দা করছিল সকালে এসে ডাইরেক রজ করার আগেই ওগুলো সব লিখে দেবে। চলে যাচ্ছিল। কিন্তু, বড়বাবু জগদানন্দ মুখার্জি  শিকারি কুকুর বুলডগ এর মত এসে খপ করে ওর হাতটা চেপে ধরে বলে উঠলেন,

- নো। এখন বাসায় যাওয়া চলবে না। আগে বসে ডাইরিটা লেখ, তারপর বাসায় যাবে। এই ধিলেমির ব্যাপারটা আমার কাছে চলবে না। কাম, অ্যান্ড ডু ইওর ওয়ার্ক। আমিও তোমার জন্য এখানে বসে অপেক্ষা করছি।

থ্যাংকস গড! বড়বাবুর ধমক শুনে সেই রাত্রেই ডায়রিটা লিখে অল কনসর্ন মেসেজ দিয়েছিলাম বলে আজ বাঁচোয়া। নাহলে আজ এই ঝামেলায় আমাকেই পড়তে হতো! (চলবে...)

1 comment:

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক