Monday, August 3, 2020

শিল্প সাহিত্য ১১২

সোমবার ১৯শে শ্রাবণ ১৪২৭, ৩রা আগষ্ট ২০২০




কবিতা
রুদ্রাক্ষ রায়হান
নিরাপত্তা

একটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকে যাওয়ার পরে মানুষের তাড়া খেয়ে মগডালে উঠেছে।
আসলে বাঘ নয়, ওটা চিতা ছিলো। খবরের সত্যতায় ছুটে আসলেন পশু অধিকার কর্মী, বন বিভাগের লোক। আর এক পাল গবেষক।

বলে গেলেন, বাঘের কোন দোষ নেই শিকারীদের হাতে হরিণেরা নাই হয়ে যাওয়ায় বাঘকে লোকালয়ে আসতে হয়েছে।

এরপর আরো অনেক কথা। পৃথিবীতে বাঘের গুরুত্ব, বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম। বাঘ ও চিতার পার্থক্য। খাদ্যাভাব, চোরা কারবারি, পরিবেশ বিপর্যয়, আরো কত কি!
হরিণের প্রসঙ্গ টা কিন্তু ওই নাই হওয়া পর্যন্তই ছিলো।

বাঘটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিতে হবে শীঘ্রই
জঙ্গলে বাঘেরা নিরাপদ। বন্যেরা বনে সুন্দর।

বাঘটিকে জঙ্গলেই ছেড়ে দিন।
জঙ্গলে বাঘেরা নিরাপদ
হরিণেরা কোত্থাও না.......

মেহেদী হাসান
একটি অরাজনৈতিক কবিতা 

আমাদের কবরে চুম্বন নিষিদ্ধ।
যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ব্যাতিত সকলপ্রকার রাজনৈতিক আলাপ বর্জনীয়।
কবরের একপাশে ভিক্ষা করছে অনাগত শিশু।
ফ্লাগ-পোলে ধর্ষিতার ছেঁড়া আচল টানিয়ে ছুটে যাচ্ছে বিএমডব্লিউ সেভেন,
তার কালো কাচে ভিক্ষারত সেই অনাগত শিশুকে মনে হয় পাশ্চাত্যের পথকবি!

এখানে চাঁদ দেখা নিষেধ।
কবরের আকাশে কাঁটাতারের বেড়া,
সেদিকে তাকালে পুরোনো বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলা হবে চোখ।
আর রক্তাক্ত চোখ নিয়ে আমাদের কবরকে আমরা তুতানখমেনের কফিন ভেবে নেব!

এবং বেয়নট পড়ে থাকবে রাজপথে,
যেখানে থালা হাতে বসে আছে সেই অভাগা শিশু।
একদিন পতাকায় মুড়িয়ে সে বেয়নেট হাতে তুলে নেবে,
আর চুম্বনের অপরাধে যাদের মৃত্যুদন্ড হয়েছে;
তাদের বিক্ষিপ্ত হাড় একত্রিত করে বেঁধে নিলেই
বেয়নেট পৌঁছে যাবে আকাশের কাঁটাতারে!

সরকার অরুন কুমার
খুনসুটির বেহালা
..................!
মিথ্যের জালে বন্দী জীবনে
মুচকি হাসে সকালের সূর্য
অন্ধ বিশ্বাসের দেবতা, কল্পনায় বৈতরণি।
ভবঘুরে দিন উড়ে গেলে
কেবলই ডেকে যায় হেঁয়ালি আঁধার
ক্ষমতার জোড়ে চলে সময়ের ট্রেন
স্মৃতির নাভিমূলে বাজে তীক্ষ্ন খুনসুটির বেহালা।

মাতাল শব্দ কুড়াতে কুড়াতে
ঘর বাঁধে বাবুই পাখির মতো
অনন্ত সাগরে ক‚লকিনারা নাই
গভীরে বিষাক্ত ফেনা
পকেট ভর্তি রকমারি সত্যমিথ্যা
ফেরি করি পূর্বজন্মের বায়বিয় গল্প।

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃষ্টিগান

অনেকক্ষণ ধরে রাস্তাটা খালি ছিল
হঠাৎ করে খালি হয়ে যাওয়া নয়
কারও আসার খবর যেমন আগাম জানা যায়
এই রাস্তার চারপাশের মানুষজনও জানত
সবাইকে জানিয়েই তাই বৃষ্টি এল
যতজন বৃষ্টি আসার খবর জানত
তার অর্ধেকেরও অনেক বেশি মানুষ
বৃষ্টিকে ঠিক ঠিকভাবে চিনত না
যারা চিনত একমাত্র তারাই জানত 
এই বৃষ্টি অনেক অনেক দিন আগেকার 
ফেলে আসা বৃষ্টি
তাই বৃষ্টিপথে আজ যারা হেঁটে হেঁটে আসছিল 
তাদের দেখে মনে হচ্ছিল বৃষ্টিজলেই যেন ডুবে আছে
অথচ বৃষ্টিপথের দুধারে যারা দাঁড়িয়েছিল
যাদের বৃষ্টিগানে গলা মেলানোর কথা
তারা বৃষ্টিফোঁটা কি পরিমাণ বাড়ির বারান্দা ভেজাচ্ছিল
তার পরিমাপ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল
অনেকক্ষণ ধরে তারা বৃষ্টিপথে হেঁটে গেল
কিন্তু কারও ডাকে তাদেরকে কোথাও থামতে হল না

আগেকার বৃষ্টি তো, চোখে চোখ রাখা স্বভাব
তাই মাটি ভিজে থাকত অনেককাল ধরে
সেখানে বৃষ্টিগান রোজ ভিজে যেত নিয়ম করে
আজও বৃষ্টি আছে কিন্তু তার কোনো গান নেই

রহিম উদ্দিন
এক ডজন টু লাইনার কবিতা!
চোখ অন্ধ হলে মানুষ কিছুই দেখে না,
আমি প্রেমান্ধ বলেই কেবল তোমাকে দেখি!
সখি, ভালোবেসে আমাকে আঁকড়ে ধরো,
নয়তো গুন দা’র সাথে দেহ বিনিময় করো। 
আমি তোমার পাড়ায় শ্রাবণ দিনের খন্ড খন্ড মেঘ,
যতটুকুই আমার বোকামি ভাবো ততটুকুই আমার আবেগ!
হঠাৎ করে চলে যাবো ভাবতে পারো যারা
জেনে রাখো, আরো কিছুকাল থাকবো আমি; আমার নেই তাড়া!
পাড়ার সকল লোকে আমায় পাগল বলে বলুক,
তবুও রোজ তাদের মুখে আমার কথাই চলুক!
এ হৃদয় বলে যা রোজ গোপনে 
সকলে কি তা কান পেতে শোনে?
দুজন পথিকের একটাই পথ
পাশাপাশি হাঁটে তবুও ভিন্ন মত!
রাত কালো বলেই দিন এতো আলোময়,
সত্য পরাজিত হলেই ; মিথ্যার নিশ্চিত জয়।
দেশে একজন খাঁটি সোনার মানুষ চাই,
যার চোখ কান নাক মুখ সব থাকলেও লোভ-লালসা নাই!
১০
তোমার নিয়তি তোমাকে টেনেছে, আমার নিয়তি আমায়;
নিয়তির আর কী দোষ বলো! সে-তো নিয়তির জামাই।
১১
এ হৃদয়ে নাহি কোন, অভিযোগ- অনুযোগ;
বৃথা তব কেন কষো জীবনের যোগ-বিয়োগ?
১২
প্রিয়ার নাম রেখেছি কবিতা, আমি হলেম কবি!
দুজনের মধ্যে যেটুকু মিল; ক এবং বি!

মো. আরিফুল হাসান 
বিচিত্র এ বর্ষা

টুপটাপ বৃষ্টি পড়তে পড়তে, বৃষ্টি পড়তে
পড়তে তুমি যাচ্ছো ভিজে। আমি আঁচল
থেকে অপ্সরা নামিয়ে বললাম, ওমা
দেখছো, আমার আকাশটা ভিজছে।

তুমি রমনীয় শোভিত চন্দনের মতো নাকের
নাকফুল দুলিয়ে বললে, এবারের বর্ষাজলে
আমি তোমাকে ডুবাবোই ডুবাবো।

ছোটগল্প
স্বপ্নের হাত 
এম. এম. বাহাউদ্দীন

আমি ফাগুনের হাত ধরেই হাটছিলাম। অতি প্রেমে আপ্লুত হয়ে নয়; ভয়ে। আমার মফসল শহরে এতো ভিড় এতো চোখ আমি আগে কখনও দেখিনি। সেও ভিষণ বিস্মিত ছিলো আমাকে দেখে। হঠাৎ কোন খবর ছাড়াই যে সে আমাকে তার শহরে দেখতে পাবে ভাবিনি সে। আমি নিতান্তই অগোছালো ভাবে গিয়েছিলাম সেই শহরে। আমার এই ভবঘুরে জীবনে এমন মুক্ত হাত আমি স্পর্শ করিনি আগে। সে আমার চোখে মুখে লজ্জা আর ভয় দেখে হো হো করে হেসে উঠেছিলো।
-ফেসবুকে তো তোমাকে বেশ স্মার্ট মনে হয়। আসলে তুমিতো তেমন নও।
আমি তার দিকে তাকিয়ে শুধু একটু বোকার মত হেসেছিলাম।
আমি বললাম হাতটা ছাড়–ন। দেখছেন কত লোক দেখছে?
সে আরও জোরে হেসে বললো- কে দেখছে? এটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর। তোমার গ্রামের মফসল শহর নয়। তাছাড়া হাত ছেড়ে দিলে তুমি হারিয়ে যাবে।
আমি সম্মতি সূচক মাথা নাড়লাম।
আবার হাটছি, শহরের ধুলো গাড়ির বিকট আওয়াজ কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করছেনা। শুধু লক্ষ কোটি জোড়া চোখ যেন বিধে ছিলো তার আর আমার জোড়া হাতে।
-তুমি কি সত্যি আমাকে দেখতে এসেছো এই শহরে?
আমি হ্যা না কোন কিছুই না বলে তার চোখে একবার তাকিয়েছিলাম। সে আমার এলোমেলো চুল গুলো হাতের আঙুল দিয়ে আচড়ে দিলো।
-একটা ম্যাসেজ তো করতে পারতে? কত দিন ঘুরছো এই শহরে?
-এই তো কিছু দিন। ম্যাসেজ করিনি আপনাকে হঠাৎ কোথাও দেখবো বলে।
আমি যে পুরুষ আর সে যে নারী আমি সেটা তখন ভুলেই গিয়েছিলাম।
এমনি আবেগময় কথায় হাটার মাঝে চোখ মোটা মাথায় টাক ওয়ালা এক লোক আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকে দেখে আমি ভড়কে গেলাম। সে ফাগুনকে বকতে লাগলো খুব। এই করে বেড়াও সারা দিন? আরও কত কথা। আমার কানে সেসব কথা মোটেও বিধলোনা। আমি যেন কোন ঘোরের মধ্যে চলে গেছি। তখনও আমার হাত তার হাতের মুঠোয়। সেই হাতেই লোকটা একটা লোহার রড দিয়ে আঘাত করলো।

তারপর যখন বুঝতে পারলাম তখন ঘরটাকে হাসপাতাল মনে হলো।

অণুগল্প
কিছুই হয়নি
নির্মাল্য ঘোষ 

ম্যাসেঞ্জারে প্রথম আলাপ। তারপর কয়েকটি ভালো ভালো কথা বলে প্রেম নিবেদন। ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন করা। তারপরেই আচমকা একদিন গোপন ছবি চেয়ে বসা। প্রথমে অমত থাকলেও অভিনয়ের কাছে হার স্বীকার। ফোটো পাঠাল। ধীরে ধীরে আরো গোপন ফোটো গেল । সেও বিশ্বাস অর্জনের জন্য নিজের কিছু ফোটো পাঠিয়েছিল। ধীরে ধীরে মেয়েটি দেখল তার পাঠানো গোপন ফোটোগুলো সবার হাতে হাতে। সোস্যাল মিডিয়াতে ছয়লাপ। সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল হঠাৎ কে যেন ছিঁড়ে নিল। পরিবার, সমাজ চোখ লাল করে বিছিন্নতার তোড়জোড় শুরু করে দিল। প্রশাসন পরিবারের নালিশ  পেয়ে তদন্ত করার আশ্বাস দিল। কিছুদিন বাদে মেয়েটির সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গেল তার ঘর থেকে। সহানুভ‚তি কিম্বা সমালোচনার ঝড় উঠল। ঝড় থেমে গেল। জীবন এগিয়ে চলল। তারপর আরো  একটি মেয়ে ম্যাসেজ পেল তার মোবাইলে- " যদি ভালবাসো তাহলে যেটা আমি দেখতে চাই এক্ষুণি পাঠাও।”

1 comment:

  1. একটি অরাজনৈতিক কবিতা' পুরোটাই রাজনৈতিক কবিতা

    ReplyDelete

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক