মঙ্গলবার ২৭শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১১ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
শুভ্র সরখেল
বিধাতা বনাম তিনি নিজেই
আমিতো ডিজিট আমদানির আগেই বলে আসছি!
তোমার জন্যই তো আমার জন্ম হয়েছে ---
আমার সমস্ত রাগের কারন তুমি
তোমার কথায় বিকলাঙ্গ পথের ধারে শুয়ে আছি হাজার বছর ধরে
লজ্জায় আমার ডেস্কটপে আর একটাও অক্ষর লেখা যাচ্ছে না!
ইশ
কতোই না তোমার নাম না জানা ভাষা!
চিঠি লেখার আর তেমন কোন মাধ্যম বেঁচে নেই
হতভাগা স্বপ্ন মÐলেও তোমার ভ‚গোল নিয়ে প্রায় রাজনীতি হয়!
ধুর
আমি খুব বিরক্ত বুঝলা!
কতোই না তোমার রূপ না চেনা মুখ আছে!
আমিতো রিমোর্ট ডিজাইনের বিপক্ষে ছিলাম!
তোমার নেশায় আমার বিছানা থেকে আবার বিছানা পর্যন্ত শুন্য ---
আমার সমস্ত রাগের কারন তুমি
তোমার আঙ্গুলের রেখায় বয়ে যাওয়া শুষ্ক রাস্তায় আমি একমাত্র ভিক্ষুক
বিশ্বাস করো, লজ্জায় আমার দিকে আর কেউ তাকায় না!
ইশ
কতোই না আমার রক্তের নাম না জানা কতোই রঙ আছে!
প্রেম নিবেদনের আর কোন চাহনি আমার জানা নেই
বোকা বুকের বোবা চোখের দিকে কারো তাকানোর সময় কই?
ধুর
আমি খুব মূর্খ বুঝলা!
কতোই না তোমার গন্ধ না চেনা শরীর আছে!
আমিতো পৃথিবীকে হাতের মুঠে আনার বিরুদ্ধে ছিলাম!
তোমায় দেখার মধ্যে আর কোন রহস্য অবশিষ্ট নেই ---
আমার সমস্ত রাগের কারন তুমি
তোমার ঠোঁটের গন্ধে চারপাশের স্নিদ্ধতা আমার ঘুমের ব্যাকরণ বুঝত আগে
কিন্তু এদানিং , লজ্জায় আমার শার্টের রঙ নিয়ে কেউ আর কিছু বলে না!
ইশ
কতোই না তোমার শব্দ না জানা সুর আছে!
মরে যাবার সব যথেষ্ট কারন আমার দেখা হয়ে গেছে
তবুও তোমার কেমন জানি মায়ায় মৃত্যু পিছিয়ে যায় দিনের পর দিন
ধুর
আমি খুব সরল বুঝলা!
কতোই না তোমার আলো না দেখা শহর আছে!
যুবক অনার্য
অবিনাশ ও নারীচিত্র
একটি দরোজা
একটি পুরুষ-
অবিনাশ
একটি নারী-
জরি
দরোজাটি বন্ধ
ভেতরে নারী
বাইরে পুরুষ
প্রতিদিন দরোজায় পুরুষটি কড়া নেড়ে যেতে চায়
নারীটি নিষেধ করে রেখেছে
নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণও সে ব্যাখ্যা করেনি
এভাবে অনন্তকাল কেটে যাবে
কড়া নাড়া হবে না তবু
নিষেধাজ্ঞার কারণও রয়ে যাবে অজানা
তাই এই গল্পটি পাঠককে নাড়া দিতে ব্যর্থ হবে
পাঠক প্রত্যাশা করে -পুরুষটি সাহসী হোক
১৪৪ ধারা ভেংগে কড়া নাড়–ক
অবিনাশ পাঠককে সন্তুষ্ট করতে পারছে না
কারণ অবিনাশের জানা নেই যে-
পাঠক যা চায় জরি নামের মেয়েটিও তাই চায়
অবিনাশ, তোমাকে বুঝতে হবে-
নিষেধাজ্ঞা মানেই হলো ১৪৪ ধারা ভেংগে
প্রচন্ড লাথি মেরে দরোজাটি ভেংগে ফেলা
তুমি না ভাংলেও কেউ না কেউ ভেঙে ফেলবেই কারণ ভেঙে ফেলাই প্রাকৃতিক নিয়ম
অবিনাশ, যে শুক্রানুটি দৌড়ে প্রথম হয়ে
জাইগোট ফর্ম করে - এখনই সময় -
দুর্দান্ত লাথি মেরে দরোজাটি ভেংগে ফেলো
প্রথম হউয়া সেই শুক্রানুটির মতো
দরোজা ভাংলেই দেখতে পাবে-
জরি মেয়েটি তোমার উদ্দেশ্যেই
হাত বাড়িয়ে রেখেছিলো অনন্তকাল
কারণ নারী তাকেই চায় যে নিয়ম ভাংতে গিয়ে
হতে জানে দাগী আসামীর মত রক্তাক্ত
আর নিষিদ্ধ পাপীর মত শিল্পীত নিষ্ঠুর
নাসরীন জামান
যুগলবন্ধন
তুমি যদি উনিশ ছোঁয়া এক দুরন্ত যৌবন
আমি তবে ষোড়শীর আরশির ছায়া।
কখনও নির্মেঘ নীলের ষোলোকলা চাঁদ,
কখনও ষড়ঋতুর রূপের বৈচিত্র্যতার খেলা।
তোমার উনিশের ঘরে ছুঁই ছুঁই কুড়িটাকে
চুরি করে আমি হবো সতেরোর পদযাত্রা,
মাত্রাছাড়া আবেগের পরিপূর্ণ প্রেম,
ফ্রেমে বাঁধা কবিতার ষোড়শ পংক্তিমালা।
তুমি যদি দুরন্ত দুপুরের পাল তোলা নাও,
আমি তবে ভরা বরষার জল ভরা নদী,
জোয়ারের আহ্বানে ভেসে যাবো দূরে,
মোহনায় মিলবে তুমি নদীর বক্ষ চুমি।
তোমার জলকাটা বৈঠার চুম্বনে চুম্বনে
ঐকতানে গেয়ে যাবে নদী, জলতরঙ্গ সুরে
ডাহুকের দল কণ্ঠ মিলাবে এসে, ভালোবেসে।
বয়ে যাবে নদী বুকে ভালোবাসার জলছবি।
তুমি যদি প্রেম, আমি তবে কবি,
তুমি যদি সাদা ক্যানভাস, আমি তবে ছবি।
তুমি যদি দিগন্তরেখায় লালিমায় রাঙা ভোর,
আমি তবে নতুন আলোর চোখ মেলা রবি।
তুমি আর আমি, আমি আর তুমি,
একসাথে চষে যাবো কবিতার ভ‚মি।
তুমি নতুন যৌবন, নতুন পৃথিবী সৃষ্টির উল্লাস,
আমি চির তারুণ্য, তোমাতেই করবো বসবাস।
গীতশ্রী সিনহা
তমসার তীরে শ্যাম ও রাধা
তোমার চোখের কিছু দেবনাগরী ভাষা
আমার রুমালে পকেটের ভাঁজে সংরক্ষিত
‘রাধা’ বলে ডাকলে তুমি খুশি হও...
আমাকে বলো ‘শ্যাম’,
সোহাগিনী রাধা তুমি,
আহা! জন্মে দেখি বাঁশবন, শালুক জলে ভাসে,
ভাসে শ্রীরাধার কাঁখের কলসি,
যৌবনে তোমাকে নিবেদন করি পদাবলী
তখন তোমার চোখে আঁতিপাঁতি জল
মরণ ঘনায় যেন তিলে তিলে!
জীবন সান্নিধ্যে অপরূপ ঘ্রাণ
অজান্তে লিখে রাখে জয়ের স্বাক্ষর!
শব্দ ও অলংকারে খুঁজে ফেরে...
উড়ে বেড়ায় তমসার তীর
অজস্র ব্যাকুল নিবেদন।
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
পাঁচ
- না। কোত্থাও নেই !
দুজন হোমগার্ড কে সঙ্গে নিয়ে মালবাবু সুদাম সেন এবং মেজ বাবু শেখর মিত্র প্রায় ঘন্টা দুয়েক মালখানার ভেতরটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও, কোন হদিস করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিলেন।
বড়বাবু আর কোন উপায় না দেখে, প্রথমে সি আই সাহেব এবং পরে এসডিপিও সাহেবকে ফোনে গোটা ব্যাপারটা জানিয়ে - পরবর্তী পদক্ষেপের নির্দেশ জানতে চাইলেন।
খুব বেশি দেরি করেননি। টেলিফোন পাওয়া মাত্রই সে সাহেব এবং এসডিপিও সাহেব - দুজনেই এসে হাজির হলেন। সেদিনের ওই অ্যাক্সিডেন্ট কেসের ব্যাপারে যেসব থানার অফিসার শশরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, থানার বড়বাবু থেকে শুরু করে হোম গার্ড পর্যন্ত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে , থানার জিডি বই, মালখানার খাতা, এক্সিডেন্ট কেস এর সিজার লিস্ট, ইত্যাদি দেখে দুজনে সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, থানার মালখানা থেকে সোনার বালা তিনটে উধাও হওয়ার দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র থানার মালবাবু - সুদাম সেনের। সুতরাং এই ব্যাপারে যা কিছু আইনি পদক্ষেপ সবটাই থানার মালখানা বাবু এ এস আই সুদাম সেনের বিরুদ্ধেই নিতে হবে। আর ওই সময় ঘটনাস্থলে যে তিনজন উপস্থিত ছিল সিপাই কেষ্ট সাহা, ইন্তাজ আলী এবং হোম গার্ড মহাদেব মন্ডল, এদেরকেও এই ঘটনার সন্দেহের তালিকা থেকে একদম বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।
সাহেবরা থানায় বসেই ফোনে আলিপুরে বড় সাহেবের সাথে কথা বলেই বড়বাবুকে নির্দেশটা শোনালন - স্টার্ট অ্যা কেস এন্ড পুট দা এ এস আই শুনছেন ইনটু দা লক-আপ।
মাল বাবু আগে থেকেই ভীত এবং আতঙ্কিত হয়ে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে সমানে কেঁদে চলেছিলেন। বড় সাহেবের নির্দেশনা মাত্রই চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করেন। হাত দুটো জোর করে সাহেবদের দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা গলায় বলতে লাগলেন - বিশ্বাস করুন স্যার, আমার ছেলের দিব্যি। আমি এই চুরির ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি এই কাজ করিনি। .....
দিবাকর রায় চৌধুরীর বন্ধু রঞ্জন দত্ত এতক্ষণ চুপ করে বসে গোটা ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। হঠাৎই বলে উঠলেন বুঝলেন এসডিপিও সাহেব? ওর অ্যাটিটিউড বলছে দ্যা ডে
হি হ্যাজ কমিটেড দিস থেফট !
- কী করে বুঝলেন? সি আই সাহেব সন্তোষ ব্যানার্জি নাকের ভেতরে এক টিপ নস্যি পুরে দিয়ে বলেন - রঞ্জন বাবু? আমি কিন্তু এখনও নিশ্চিত নই যে, ওই ওগুলো চুরি করেছে । ওর মতো একটা খুঁতখুঁতে, চিকেন হার্টের লোকের পক্ষে অমন কাজ করা সম্ভব কিনা - আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ব্যাপারটা মেনে নিতে আমার কেন যেন কষ্ট ......
সিয়াই সাহেব কথা শেষ করতে পারেননি, মাল বাবু বলির পাঁঠার মত কাঁপতে কাঁপতে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলেন।
সবাই মিলে ধরাধরি করে মাল বাবুকে বড় ববুর চেম্বার থেকে পাশের ঘরে এনে, চোখে মুখে জলের ছিটা দিতে লাগলেন। সবাই চেষ্টা করছিল ওকে কিছু কথা বলাবার। কিন্তু, ভদ্রলোকের কোন সাড়াশব্দই ছিলনা। শেখর মিত্র নায়িকা ধরে দেখলো - খুব আস্তে চলছে। শীতের দিনেও গা থেকে ঘাম বের হচ্ছে। স্থানীয় তারক ডাক্তার এসে দেখে বললেন- জ্ঞান নেই। সম্ভবত, আচমকা শকে ভদ্রলোকের হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। আমি একটা ইনজেকশন পুশ করছি, কিন্তু ওকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
দিবাকর রায় চৌধুরী নিজেই উপযাচক হয়ে ওর প্রাইভেট কারে করে মালবাবুকে নিয়ে যেতে বললেন। বললেন, আগের লোকটাকে বাঁচানো দরকার। যদি ডায়মন্ড হারবার থেকে কলকাতায় রেফার করে, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা না করে ওর গাড়ীতেই যেন - ওকে নিয়ে সোজা কলকাতায় চলে যাওয়া হয়। ওরা নিজেদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে, প্রয়োজনে ফোন করে বাড়ি থেকে অন্য আরেকটা গাড়ি দেখে নেবে।
- তাহলে, তাই করুন মেজবাবু। বিপর্যস্ত বড়বাবু ভারাক্রান্ত গলায় বললেন- ছোটবাবু প্রদীপ সিংহরায়কে মালবাবুর সাথে ওই প্রাইভেট কারে পাঠিয়ে দিন।
No comments:
Post a Comment