বুধবার ২৮শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১২ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
নীলিম জামান
প্রশ্নগুলোও অবহেলার
তোমার দেওয়া কিছু কথা আছে কষ্টের,
কিছু স্মৃতি আছে দুঃখের,
কিছু না পাওয়া আছে একজনমের।
তারপরও সেই তোমাতেই
এই আমিটাকে নিত্যই করি সমর্পণ।
এই আমিটার আমিত্বকেই দেই বিসর্জন।
আর আমার সবটুকু পেয়ে
তুমি হয়ে ওঠো ভীষণ অহংকারী।
তুমি হয়ে ওঠো
রাজ্যলোপাটকারী এক দাম্ভিক রাজা।
আর আমি তোমাতেই সবকিছু খুইয়ে
অবশেষে নতজানু, নতশির।
আমার কত যে প্রশ্ন থাকে তোমার কাছে,
কত কী জানার, কত কী পাওয়ার,
কত অধিকার ভালোবাসার,
আজ সবই ভেসে যায় বানের জলে।
হঠাৎ এই আমাকে হারালে
তখনও কি তুমি তেমনই রবে? দাম্ভিক?
তখনও কি সেই হারানো আমিটার বুকে
দেয়াল গড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে
ওপারের অহমিকার নিজ বাসভ‚মে?
তখনও কি সেই কঠিন সারল্যে
রয়ে যাবে নিরুত্তর, নিরুত্তাপ? জানি-
প্রশ্নগুলোও আমার নিতান্তই অবহেলার।
শুভ্রা কোনার
বরিষণ
একটা স্মৃতিভেজা বৃষ্টিপথ-
ঝাপসা হয়ে থাক অপূর্ণ চাওয়া।
মুসলধারায় সিক্ত খোঁজে-
হিমেল হাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া।
ভেজা মাটির মিষ্টি গন্ধে-
নিবিড় সম্পর্ক শূন্যতার অনুভব।
সারে সারে সাজানো কদম গাছ-
বৈচিত্র্য মাখা অন্তরের আস্বাদ।
ইচ্ছেরা সব আনাচে-কানাচে চুটে চলে-
ক্ষীণ আলোকে দেখা যায় কিছু আশা।
হাজার প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও-
তুমি-আমি দাঁড়িয়ে আছি এক হয়ে।
জ্বালিয়ে আলো খেয়া দেবো-
আত্মকলহ ভরা সমাজ ঠেলে-
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপথে।।
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
মাটির দিনের গল্প
এইমুহূর্তে পৃথিবীর কোনো স্কুলে
মাটির দিনের গল্প হচ্ছে
ঘরের যত আরশোলা মাছি
দমবন্ধের পরিবেশের সমীকরণে
পা মেলাতে কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে
জানলা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে
মাটির দিনে বন্যা নামে
আজকের অপলকা পায়ের পৃথিবী
বন্যার জলে গুলে যায়
কেউ একজন হাত তুলতে নদী বাঁক নেয়
দাদুর গল্পের চরিত্ররা
মাটির দিনের গল্পে হেঁটে যায়
অনেকেরই মনে পড়ে যায়
কেউ যেন তাদের গল্পে
এইসব লোকেদের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল
ডাকলেই তারা ফিরে চাইবে
কিন্তু কি হবে তাদের ডাকনাম ---
এসব ভাবতে ভাবতে তারা
আরও অনেকটা এগিয়ে যায়
কেউ কেউ অন্য মুখে
অন্য গল্পের ঘরে ঢুকে পড়ে
আগুন ডাকতে জানে না বলে
পৃথিবীতে অন্ধকার নামে।
সাজু কবীর
কবি, ভেজাও বৃষ্টি এবার
বর্ষা,
এত কেঁদে
কত সুখ পাও!
কলমি, কদম, কেয়া
দূরদেশে ভাসিয়েছে নাও!
ওই জলভেজা--- জ্বরে পল্লীবধূ
চেটেপুটে খায় তাকে বিরহের মধু
ভেলায় কাটায় বেলা বানভাসি মধু-মালা
সেই জল ভেঙ্গেছে কপাল, ক্ষেতসব নদী-নালা।
এ কেমন সুখ? ঝড়ে ঘর পড়ে, পড়ে ফলভরা গাছ
ভেসে যায় গোরু, সীমান্ত পেরিয়ে ভিনদেশে মাছ
প্রেয়সী পিছলে মরে, মোরগেরা গাছের উপর
অভাগার ঘর দোরে, হায়! সাপের বাসর!
লাগাতর ঝড়ে কবি--- মন আনমনা
শব্দরা ভিজে, ভিজে যায় কল্পনা
কবি, ভেজাও বৃষ্টি এবার
দুঃখ ঝড়াও দুর্বার!
বুঝুক আকাশ
কাব্য কাকে
বলে।
মীর সাহাবুদ্দীন
পড়তে বসলে আমার চোখ দুইটা নদী হয়ে যেত
বাবা আমায় পড়াতে বসালে আমার চোখ দুইটা নদী হয়ে যেত
মা বলতেন পড়া লেখা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চলে সে
তলে তলে কয়েকজন গাড়ি চালক কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কতদূর পড়েছেন।
বলেছিল থ্রী ফোর তখন আমি ফাইভে বৃত্তি দিয়েছি।
দাদু বলতো এই বিল্ডিং গুলোর মালিক ইংরেজিতে কথা বলে বিদেশ আসে যায় অনেক শিক্ষিত
বাড়িতে সকাল হলে আসে শার্ট কোট বেল্ট পড়া ভদ্র লোকটাকে প্রশ্ন করেছিলাম আপনার কাজ কি?
বলেছিল স্যারকে পড়িয়ে শোনা ও লিখা
না জেনেই বলেছিলাম স্যার কি পড়তে জানেনা।
রাত গভীর হলে নদী দুইটা সমুদ্র হইতো ঝর্ণা হইতো গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়তো।
বাংলা বইয়ের ভাব সম্প্রসারণ সারাংশ সার মর্ম আর মুখাস্ত কবিতা গুলো বিস্তারিত চলে আসতো। মানুষ কেন পড়ে এত কিসের পড়া পড়তে পড়তে শেষ করে চাকুরি করে চুরি করে খুন করে। পড়া না জানা ভাইয়ের সম্পদ কাড়ে
মানুষ কেন পড়ে।
আমার পড়তে বসলে চোখ দুইটা নদী হয়ে যেত
যা পড়েছি তা শুধু লালন করতে চেয়েছি পাঠ্য বই ছাড়া মজার বই গুলো সব চেয়েছি
আকাশের সমান একটা লাইব্রেরী চেয়েছি। একপাশে বই আর একপাশে আমার জমানো গানের কাগজ পড়ে থাক মিউজিয়াম হয়ে।
মৃনাল কান্তি বিশ্বাস
কি জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম?
এখানে -
শ্রমার্থ শিশুর পেটের দহন
সবখানে শোষণ আর অমানুষের কামার্ত থাবা!
এখানে ওখানে - নেমেছে মৃত্যুর হাবিয়া।
সর্বত্রই -
শোষক, কামার্তদের বিষাক্ত দাঁতে ঝরছে নালা
রাতের বসনে লজ্জা ঢাকে ধর্ষিতা।
এ জন্যই কি
সভ্যতার পথে হেঁটেছিল মানুষ?
এ জন্যই কি ছিল
দীর্ঘ সংগ্রাম ?
এ জন্যই কি
আধুনিকতার স্বপ্ন -বীজ বুনেছিল আদিম মানুষ!
এ জন্যই কি দুর্গম পথ চলা
এজন্যই কি ছিল এ দীর্ঘ যাত্রা?
এ জন্যই কি
কোটি - কোটি বছর ধরে
আদিম হিংস্রতার উৎস হতে
ক্রমান্বয়ে...
উঠে এসেছে মানব সভ্যতা?
এ জন্যই কি
সভ্যতার পথে হেঁটেছিল মানুষ?
আগ্নেয়গিরির উদ্গিরনের প্রান্ত হতে
অথবাÑ
ডাইনোসর যুগ থেকে
হেঁটে - হেঁটে লক্ষ কোটি বছর পেরিয়ে
বৈপ্লবিক পাথর যুগের সুচনা করেছিল মানুষ!
পাহাড় ডিঙিয়ে
অরণ্য দলিয়ে
বন্ধুর আর মরুর তপ্ত পথ মাড়িয়ে
হিংস্রতা আর প্রকৃতির সাথে
অভিযোজনের মাঝ দিয়ে
ক্রমাগত...
দীর্ঘ কোটি বছর
দীর্ঘ যাত্রায়
আধুনিক সভ্যতার এ কোন স্বর্ণ যুগে মানুষ!
এ জন্যই কি
দীর্ঘ সংগ্রাম ছিল?
এ জন্যই কি
অনার্য থেকে আর্য!
এ জন্যই কি
বিবর্তনের হাত ধরে
পরিবর্তন হতে... হতে...
এই সভ্যতার পথে হেঁটেছিল অনার্যরা?
হ্যাঁ, আমি--
সেই অনার্যের বংশোদ্ভ‚ত
আমি সেই বিবর্তনের জাতি
আমি সেই- আদিমের বনমানুষ!
আমি স্বাক্ষ্য বহন করি আদিমের
আমি স্বাক্ষ্য বহন করি সেই অনার্যের
আমি স্বাক্ষ্য বহন করি বিবর্তনের
আমি স্বাক্ষ্য বহন করি
ডাইনোসর পরবর্তী
আজকের আধুনিক নামের নগ্ন সভ্যতার ।
চারিদিক সভ্যতার নামে গড়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী
কামনার দহনে পুড়ছে মানবতা
এখানে খুন, ওখানে ধর্ষণ
সর্বত্রই চলছে শোষণ, ব্যভিচারের মুক্ত রাজ ।
তার লেলিহান শিখায় পুড়ছে সভ্যতা
পুড়ছেÑ
ঐ শহর,
এই নগর,
এই জনপদ,
আর নষ্ট আধুনিকতা।
সভ্যতার এ কোন পৈশাচিক যুগে দাড়িয়ে?
পৃথিবীটাকে বিলিয়ে দিয়েছি
করোনার আবাস ভ‚মি করে।
চতুর্দিকে শুধুই মৃত্যু আর মৃত্যু
লাশের ঝনঝনানি আর কেবলি আহাজারি!
এভাবে হয়তো বিলীন হবে মানব সভ্যতা একদিন
মুক্ত হবে
বাতাসে ছড়ানো বিষাক্ততা!
শেষ হবে প্রকৃতিতে ছিটানো বিষের মহা-উৎসব
খাবারে থাকবেনা কোন গোপন ফর্মালিন
বা, বিষাক্ত পয়জান।
মৃত্যুর স্বাদ নিতে... নিতে... ভুলে যাব বিষাক্ততা
হয়তো বা একদিন-
গঙ্গাজলে ধুইয়ে যাবে সমস্ত পাপ
পবিত্রতায় ভরবে পৃথিবী
নতুন করে জাগবে প্রকৃতি আবার।
হয়তো আমি কিংবা আমরা
পিছু হাঁটতে... হাঁটতে...
ফিরে যাব অনার্যের পথে
কিংবা-
সেই আদিমের যুগে...
No comments:
Post a Comment