সাজ্জাদ সাঈফ
জন্ম- ১৯৮৪, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ:
কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা, মায়ার মলাট, ভাষার সি-বিচে, বহুদিন ব্যাকফুটে এসে
সম্পাদনা
নিহারীকা, ঈক্ষণ, ক্ষেপচুরিয়াস ওয়েবজিন(২০১১), পাঠচক্র ‘লাইফ আড্ডা’(বগুড়া, ২০১৪-২০১৫)।
সন্মাননা- ১ম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা’র জন্য বঙ্গভ‚মি বর্ষসেরা কবি: ২০১৯
সাজ্জাদ সাঈফ
রাবার বাগানে দিনরাত্রি
আর এ’ই লেখাপত্র, এ’ই ঘুমভাঙানো ফেনায়িত রোদ, সকাল-সকাল
ক্ষুরধার তলোয়ারে ফালি ফালি হয়ে, ছড়িয়ে পড়ছে গানে, রাবার বাগানে।
ডোমেদের চোখে চোখে মড়া সেঁকা দেয়া
ভ্রান্ত আগুন জ্বলে, বেদে নারীদের
এই পথে যাওয়া-আসা দেখি;
কতকাল এক শিকারী আঙুল, তাক করে রাখা
সুন্দরের দিকে, ছেনি-ছোঁয়াহীন মিনারের দিকে;
উড্ডয়নে!
মসজিদের ছায়া খেয়ে-খুঁয়ে, ফিরে যায় পিঁপড়ার শুমারি;
‘দুনিয়া’ ‘দুনিয়া’ বলে ডাকি- সাড়া আসে, ছায়া-প্রচ্ছায়া আসে;
বিস্মৃতি হতে উকি দেয় মাচাফুল, রোদ পেয়ে জ্বলজ্বল করে
প্রাচীন স্বপ্নের ভেতর।
তমা সিরিজ : ঘুঙুরের তলে
তোমার শ্যামলপাপড়ি চোখের চেয়ে নির্জনতম দ্বীপ
এই মহাদেশে নাই, ব্যাংককে ভিড়েছে জাহাজ, ম্যাপল পাতার ওপর
তোমার নাম লিখে ছড়িয়ে দিচ্ছি বাতাসে, সেই হাওয়ার কাছে
সুর করে করে কীর্তি শোনাব পদ্মার-
তোমার ঘুঙুরের তলে পিছলে যাচ্ছে বাংলা কলেজের ঘাস, সান্নিধ্যহীন
বিকাল।
তারপর এক জ্বরভরতি পাখি-পরিবার, কার্নিশে গোঙানি তোলে, কি মায়া!
তাই না তমা?
কাঠের পিরিচে আসে আঙ্গুরের মিথানল, ব্যামোর বিকার থেকে খুলে খুলে
পড়ে সম্পর্কের ফটো।
তুমি দূরের জানালা খুলে স্নান-সারা চুল শুকাতে দাঁড়াও:
এইভাবে সারা পৃথিবীর অভিমান নিয়ে, অবসাদ নিয়ে
মেঘ বলো উঁকি দেয় না ঘরে, দোতলার সানশেডে?
আমার তখন
হৃদয়ে রৌদ্রক্ষরণ।
***************************
তমা সিরিজ: লিলিপুট
এখানে আমিও লিলিপুট দেখো
উদাত্ত গ্রীষ্মের দেশে, দেখা ও ছোঁয়া নেই
আজকাল আমাদের!
কফিনে শোয়ালে তুমি
দেখে যাবে তারে একবার?
হয়তো বৃষ্টিতে কাদাপথ চারধারে, হয়তো-বা
বাজ পড়ে সর্ষে দেখবে, বিষণ্ন যুবক চোখে;
কেউ কেউ ড্রপ দেয়া ঢেউ-
কারো থাকে মিথ্যা মায়া
হাত ছুঁয়ে মনে মনে কেউ
পাল্টাবে নিজের ছায়া!
সেইদিন, ফণিমনসার ধারে
ভ‚গোল বাজাবে নাকি, ক্ষুধাতুর মানুষের গান?
হয়তো-বা রোদে বসা কাক, শক খেয়ে
ঝুলবে তারে, আর, ভিড় ঠেলে হাঁটে যানজট-ধুলা;
এতোসব সিন আর দেখাও হবে না কখনো?
কার কি-যে চিঠি এসে তাপিয়ে গিয়েছে রোদ
হুডখোলা স্মৃতির টেবিলে, অতোখানি প্রেম তুমি
দু’হাতে ছিঁড়েছো তমা, মনেও পড়ে না?
তমা সিরিজ: স্বরলিপি
ট্রেনে চেপে শহরের বুকে নেমে এলো
দূর গঞ্জের মেঘ-
এইখানে ফোনের টাওয়ার, হিম বাতাসে মাথা দোলায়
নতুন ধানের গন্ধে দাড়িয়াবান্ধা খেলে, হাওয়া তার কানে কানে
জোনাকের পাঠশালা খোলে, রমরম করে হারানো চিঠির সুর।
নাও তমা, হেরফের;
তোমার দিকে নগরজীবন বাড়িয়ে দেবে শিম-ফুল;
মথুরা-বাঁশরী ঘিরে থাকবে, ওজনোস্তর;
নাও দু'হাত ভরে, অতল প্রেমের নিচে চাপা পড়া
সভ্য ও সভ্যতার গান, স্বরলিপি তার!
তমা সিরিজ: মনপড়া
তুমি জানো নাকি মনপড়া?
দাওয়ায় হেলান তেঁতুল গাছের হাওয়ায়
যে দুপুর বিলের পানিতে, আকাশের চকমকি দ্যাখে
আর, হাস্যময় হয়ে ওঠে খুব; তুমি জানো নাকি তর্জমা তার?
জানো শিরস্ত্রাণ?
আমি শুধু খোড়ল থেকে
পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখি
আর দেখি ধান্যময় ফিরে আসা গাছে;
এ সকল সুবাতাস পেলে, হৃদয়েরা
আড়মোড়া ভাঙে নাকি তমা? জানো?
তমা সিরিজ: ছায়া
ছায়া-ছায়া বিকালের পিছনে
তোমার আঁচল ছড়িয়ে থাকে।
ওই ছায়াটুকু আমার লেখায়
ঘন কালি হয়ে নামে।
জানো নাকি তমা?
No comments:
Post a Comment