অনার্য নাঈম

অনার্য নাঈম


হৃদ্যতা বেঁচে থাকে কাশফুলের নরম ছোঁয়ায়


অহর্নিশ শরীর থেকে ঝরে পড়ে ঘাম;

ঘাম-বিন্দু পানির যমজ ভাই,

তবু পানির সাথে ঘামের হৃদ্যতা নেই

বিবাহিত সম্পর্কের মতো প্রয়োজন হয়।


অহর্নিশ তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে;

ধ্যান-বিন্দু তুমি, তোমার কালো চোখ;

তোমার সাথে সময়ের কোন হৃদ্যতা নেই

সে শুধু বয়ে চলে আমাদের নিয়ে।


অহর্নিশ ভালোবাসতে ভালো লাগেনা

অথচ ভালোবাসা ভালো লাগার পূর্ব-প্রজন্ম।


*****************

প্রশ্নবোধক

এই প্রশ্নটি ব্যকরণের নয়, জীবনের।

এক অমিমাংসিত প্রশ্নের জন্ম দিয়ে
আমাকে দার্শনিক বানিয়েছেন আমার পিতা।
শুক্রানু হিসাবে আমার উৎপত্তি;
তারপর প্রতিস্থাপন এক মহাকালের গর্ভে;
আমার অন্ধত্ব আমাকে জানতে দেয়নি কিছুই।

সীমাহীন মহাকাশের নক্ষত্রগুলো
আমার জন্মের মতো প্রশ্নবোধক।
প্রতিটি অপ্রত্যাশিত ভবিষ্যত-
অন্ধের অনিশ্চিত পদক্ষেপ।
ধীরে ধীরে বড় হই আর পিতাকে প্রশ্ন করি
জীবনের উৎপত্তি কিভাবে?
পিতার কাছে কোন উত্তর নেই
মহাকালের কাছে কোন উত্তর নেই; অথবা
যার ভাষা আমার বোধগম্য নয়;
ভাষার অপরিহার্যতার সন্ধানে
জন্ম দিই গণিতের
গণিত আমাকে ছেড়ে দেয়
অগণিত সংখ্যাতত্ত্বের মাঝে;
প্রশ্ন আমাকে ঠেলে দেয় সূর্যাস্তের দিকে
তারপর অন্ধকারে ‘প্রশ্নবোধক’ শব্দটি
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে
আমার পিতা ও মাতার দিকে তাকিয়ে থাকে।

বিরাম চিহ্নের নীতিমালা

তোমার মুখমণ্ডলকে রেখে দিই উর্ধ্ব কমার মাঝে
কালের উদ্ধৃতি জেনে-
নিরপরাধ সময় পার করি ওদিকে তাকিয়ে;
গ্রীবা থেকে নাভিমূলে এসে ব্যবহার করি কমা
কেননা ওখানে ক্ষণিকের জন্য থামতে হয়; থামি।
নিয়মের লঙ্ঘন করে কখনো
রাষ্ট্রীয় আইনের মুখে থুথু দিই;
থুথুতে আইন ভিজে নরম হয়ে যায়;
আমি নীচে নেমে আসি;
সেমিকোলন দিয়ে দিয়ে একটি বাক্যের পর
আরেকটি বাক্য লিখি।
বক্তব্যের প্রয়োজনে ড্যাশ চিহ্ন
সোজা ঢুকে যায় বাক্যের ভিতর
ভাষার সমস্ত অলংকার হয়ে ওঠে উজ্জ্বল;
তোমার চুল, কানের লতি
ঘাড় অথবা হৃষ্টপুষ্ট ঠোঁট।

এভাবে লিখতে লিখতে বাক্যের শেষে
পড়ে যায় দাড়ি। একবার একটি বাক্য শেষে
পরবর্তী বাক্যের জন্য অপেক্ষা করি।
আর এভাবে তোমার মধ্যেই খুঁজে পাই
বিরাম চিহ্নের নীতিমালা।

দখলদার

নক্ষত্রের বিচ্ছুরিত আলো দিয়ে
পাঠকরি খ্রিস্টাব্দের ইতিহাস;
আর পূর্ব-খ্রিস্টাব্দ আস্তে আস্তে চলে গেছে
এক অফুরন্ত অন্ধকারের দিকে।
মা-মরিয়ম দূর নির্জন থেকে 
এক টুকরো আলো এনে পৃথিবীকে দিলেন
আমরা হারিয়ে গেলেও এই গ্রহ রয়ে যায়।

মা-মরিয়ম আমাদের পাড়াতেই ছিলেন
আমাদের পাড়ার নাম বেথেলহেম
আমাদের সংগ্রামের নাম মুক্তি
আমাদের পিতা নেই, ভাই নেই
আমাদের দখলদারের নাম ইসরায়েল।

আমার কেটে যাওয়া দিন

আমার কেটে যাওয়া দিন ছিলো বিষণ্ন;
বহুকাল আগে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কেটে যেতো দিন
তখন আমি ছিলাম সূর্যমুখী।

আমার কেটে যাওয়া দিন ছলো হতাশার-
কয়েক আলোকবর্ষ আগে
একজন দেখিয়েছিলো নয়টি গ্রহ
পৃথিবীর মতো আর কোনটি নয়;
তারপর এই গ্রহের মহাদেশ ভেদে
আমার হতাশা ছিলো সমকালীন।

আমার কেটে যাওয়া দিন ছিলো না বোঝার
পরীক্ষা ঘনিয়ে এলে আমার হাইস্কুল বয়সের অংকগুলো-
রং চটা জিন্সের রূপাঞ্জলী;
পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি
এই না বোঝার ত্রিভূজ
আর জানালায় উঁকি দেয়া রক্ত করবী।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক