Monday, August 31, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৮

বুধবার  ৪ঠা ভাদ্র ১৪২৭, ১৯ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা


কাজী শোয়েব শাবাব

ঘুড়ি সিরিজ ২


সুতো ছিঁড়ে গেছে।

গোত্তা খেয়ে নামছে নীল ঘুড়িটা। 

খসে পড়া টুকরো আকাশ ধরতে

মাঠ ভেঙে দৌড়ে চলেছে ছেলেটা।


সজল রানভী

সমসাময়িক প্রেম


গোলাপ গোলাপ প্রেমটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তুমি বরং একটা সিগ্রেট, একটা দেশলাই দিতে পারো। রুমালে সেলাই করা ডাকনাম কিংবা চিঠির ভাঁজে লিখে দেয়া একবিঘা চুমু ফ্রিজে তুলে রেখে তুমি বরং জ্যোৎস্না বিলাতে পারো হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে।

তুমি বরং আফিম নাভিতে প্রার্থনা করতে পারো গন্দমের লোভ লালসা।

ঐসব বাড়ির সামনে দিয়ে বেলা অবেলা হেঁটে যাওয়া, টিফিন পিরিয়ডে চোখাচোখি, অংকের খাতায় বাপ দাদার পৈতৃক ছন্দ বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তুমি বরং মদের দোকানে একটা বিকেল গিলতে পারো গোগ্রাসে। একটা সন্ধ্যা গিলতে পারো কফি কাপে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীর বাসায় দেখা করা ব্যাকডেটেড। তুমি বরং আবাসিক হোটেলে লুফে নিতে পারো দেড়শ মিনিটের মেগাপিক্সেল প্রেম।।


অনার্য নাঈম

কমা


একটি ‘কমা’, তোমার প্রস্থানের জন্য যথেষ্ট নয়;

প্রস্থানের জন্য চাই দুঃখভারাক্রান্ত দাড়ি।

একটি ‘সেমিকোলন’ আমাকে আরোকিছু

বলার জন্য যথেষ্ট নয়; দিতে পারো

লাজুক অভিব্যক্তির আড়ালে লুকিয়ে রাখা

বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক।


আমি হ্যাঁ বললে, তুমি

সরল বাক্যের মতো নিঃশব্দে

প্রচলিত ভাবের দরজা দিয়ে

ঢুকে পড়বে তোমার নিজস্ব ঘরে।

দুটি বন্ধনীর মধ্যে ‘বাকিটা জীবন’।


অপার অরণ্য

শাড়ি সম্ভাব্য সৌজন্যতা এবং খুন


হঠাৎ হাওয়ায় দীর্ঘতম রোদ নামলে মার শাড়ির সাথে

বনশ্রী মিলিয়ে দেখা যায়

কোনটার রঙ থকথকে সুরমাÑ তো কোনটার নাম

কামরাঙা শোক। কোনটা যেন অশ্রæহীন দুর্ভিক্ষপীড়িত

গোলাপÑ কোনটা আবার বিদগ্ধ সুখ।

স্নানের পর যে শাড়িটা দিয়ে মা স্তন প্যাঁচায়

মাঝেমাঝে লক্ষ্য করি সিঁদুরমেঘে দুর্বোধ্য আঁকা

সপুষ্পক রেণু দিয়ে ঢেকে আছে পাতার কোলাজ

সবকটা ঋতুর যৌবন মার শাড়ির আঁচলে সুনিপুণ

নকশায় ঢেউ তুলে আনে

সেখানে চাষ হয় কোলাব্যাং আর মৌরিফুলের ঘ্রাণ

বিশ্রæত চাঁদ নামলে আয়নায় মা দাঁড়ায় নি কোনদিনÑ

কখনো কোন ভ্রমরজাত গান গাঁথা হয়নি চিকন চুলের

বেণীতে সে-কথাও জানি

তবু সযতেœ যে শাড়িটা আজও শরীর সাজায় তার নাম অলকানন্দা সংসার।

গায়ে জড়ালেই ঘরময় মুহুর্মুহু ধ্বনি বিষাদের নিসর্গ

শ্লোক হয়ে বাজে। যেন তৃণবৎ ঝর্ণাধারা পাহাড়তলি

নেমে যায় ক্ষতবিক্ষত সুরঙ্গের কোল।

চিত্রাহরিণ শাড়িটা আজ অব্দি মা বুকের সিন্ধুকে

তালাবন্ধ রেখেছেনÑ খোলা যায়নি তার রহস্যপাখি

ফুঁপিয়ে বলেনÑ দেখিস, আমি স্ট্রোক করে মরব।


মার পোষা শাড়িটার নাম দুঃখ। আহত জ্যোৎস্না ও

অমাবস্যার মাঝামাঝি রং। মার মনখারাপ হলে

আলনা ছেড়ে কোমরের কুঁচিতে ঝুলে ধূলোধূলো

একটা শাড়ি। পৃথিবীতে অমনি উড়ালপঙ্খি ডানায়

কোন পাখি আর উড়ে না

বনস্পতি অন্ধকার চিকচিক করে জ্বলে। পৃথিবীর

আযান ও শঙ্খের নৈবেদ্য মার পায় লুটোপুটি খায়

তখন প্রলয় এসে ফিরে যায় পানশালার চৌকাঠ।


আর আমি; জানালায় দেখি দাউদাউ নিস্তব্ধ রাত

আঁচলের কারুকর্মখচিত দিগন্তের গহŸর চোখ থেকে

মুছে গেছেÑ চামড়া থেকে চিৎকার এবং ঋতু

শাড়িজমিন আকাশে ছিট ছিট নীলোৎপল তারা

হৃৎপিÐের মৃত্যু দেখেছি বহুকোটি বছর

এবার পূণ্য লেখা হোক,

যমদূতকে স্বর্গে পাঠালাম


সোয়েব মাহমুদ

তবুও ওরা এরোপ্লেন দ্যাখতে আসে!


#ইস্তাম্বুল

২০০৯.


নিদারুণ মধ্যবিত্ততায় জিতে যায় পতাকা, হেরে যায় মুদ্রাস্ফীতি! 


#ওয়েষ্টব্যাংক, বেথেলহাম

২০১১


এই বাংলাদেশ পূনর্বাসিত পতিতার ভাগাড়, অথচ বেশ্যালয় ঈশ্বরের খুব অ- প্রিয়!


#ঢাকা

২০০২


বেশ্যা আর পতিতার মাঝে,  জরায়ু আর যোণীর মধ্যকার সুক্ষতম ফারাক বিদ্যমান। বিদ্যমান এখানে সব পতিতা, বেশ্যালয় মনে করে ভুলে যেখানে চলে এসেছি আমি।


#জাতিসংঘ আঞ্চলিক সমন্বয় অফিস

বার্লিন।

২০০৮


রবীন্দ্র - তলস্তয়- সেক্সপিয়ার সব শালাক ভন্ড সাহিত্য ব্যবসায়ী আমরা তার বোকা ক্রেতা। সব শালাই বগলে বাইবেল নিয়ে উস্কে দিয়ে ধর্মান্ধতা সাজে অবতার সাম্যবাদের - অসাম্প্রদায়িকতার।


#কলকাতা

২০০৫


যে শহর ঘুমাতে দেয় না আমায়, জাগিয়ে রাখে কোমল বৃন্তে হাটিয়ে নিয়ে যায় উদ্দাম ক্রেমলিন সুবহে সাদিকের শরীরে। যেখানে একটা ফুল একটা নাভী ফুল ফোটে ক্যাসিনোর ফোর অফ আ কাইন্ড উচ্ছাসে।


#আইয়ানাপা

২০০৯.


ধর্মের ভেতর ঈশ্বর নয় শিশ্ন জেগে থাকে।


#তিবলিশ

২০১২


কবিতাঃ বিশ্বভ্রমণকালীন সময়ের হাতঘড়িটা


ধারাবাহিক গল্প

সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল

বিপুল রায় 


দুই

বিকাল চারটের সময় মাঠে গিয়ে পোঁছলাম। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য বারো বছর পর্যন্ত এক সিকি আর তার উপর হলে আধুলি। আমার পকেটে দুটো সিকি পয়সা। বয়স আমার পনের। সুতরাং আধুলি দিয়েই টিকিট কাটতে হবে। আমি চালাকি করলাম। সিকি গলিয়ে দিয়ে টিকিট নিলাম। অন্য সিকিটা ঘুগনি খাওয়ার জন্য বাঁচালাম।  

ব্যস, যা হবার তাই। মেন গেটে আটকে গেলাম। আমার জানা অন্য ছোট গেট ছিল। সেই ছোট গেটে গেলাম। গম্ভীর মুখে টিকিট ধরালাম। টিকিট চেকার আমাকে দেখে মৃদু হেসে বলল, মেন গেট ছেড়ে এদিকে এলি কেন? আটকে দিয়েছে তাই না? 

আমি কাতর স্বরে বললাম, কাকু আর যে পয়সা নেই। তাহলে পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢুকব কি? 

কি ভেবে লোকটা আমাকে মাঠে ঢুকতে দিল। খেলা শুরু হব হব। দৌড়ে গিয়ে দর্শকদের ঠেলে চুনের ধারে দাঁড়ালাম। জুলাই মাস। আকাশে এই মুহুর্তে তেমন মেঘ নেই। ঘন্টা দুয়েক আগে এক পশলা ভারী বৃষ্টি হয়ে গেছে। ফুরফুরে হাওয়া। তবে বয়স্কদের সবার হাতে ছাতা। মাঠ থেকে মেঠো গন্ধ ভেসে আসছে। আমার উল্টোদিকে ছাউনি টাঙানো হয়েছে। শোভা পাচ্ছে বিশাল মাপের সাবিত্রী শিল্ড। শহরের গণ্যমান্যরা চেয়ারে বসে আছে। 

হাততালি, সিটি, ছাতা নাচানো, উৎসাহিত করার মতন কিছু চোখা শব্দ। 

বাজুরডোবা মাঠে নামল। নিমাইভুটি, বিপিনখুড়ো, দেবুষাঁড়, ইমরানবেঁটে- এমন কত কি নামে তাদের ডাকছে দর্শকরা।  

আবার হাততালি, সিটি, চোখা শব্দ বাণ। জামদা নামছে। কানাইছুট, নির্মলবুড়ো, সুধীরচোর, জব্বরধারী, বালাজী।

আমি টানা হাততালি দিলাম। আজ জামদার দিন, আজ কানাই-এর দৌড়, বালাজীর ভেলকি। আজ মৃগাঙ্ক স্যারকে যোগ্য জবাব। রেফারি হুইসেল ফুঁকলেন খেলা শুরুর। চিৎকার, হুল্লোড়, মানুষের কুটিল চিন্তা, বিদ্বেষ, হিংসা, লালসা, প্রেম, ভালবাসা, সহমর্মিতা এক সাথে আছড়ে পড়ল ফুটবলারদের পায়ে, হাতে, মাথায়। খুব তাড়াতাড়ি বাজুরডোবা জামদার গোলে বল ঢুকিয়ে দিল। গোলটা দিল সমর। ছেলেটা যে জামদার গোলে হেড দিয়ে বল ঢুকিয়ে দেবে আচমকা তা কেউ ভাবতে পারেনি। বাজুরডোবার সমর্থকদের সেকি উল্লাস। গগনভেদী চিৎকার। এতক্ষণ চোখে পড়েনি এবার দেখলাম মৃগাঙ্ক স্যারকে। দৌড়ে তিনি মাঠের ভিতর ঢুকে পড়লেন। তারপর ছাতা ফুটিয়ে আর বন্ধ করে কি কদাকার ভঙ্গিতে কোমর দুলিয়ে নাচলেন! পরিস্কার শুনলাম মৃগাঙ্ক স্যার বললেন, শালা কেমন ঢুকিয়ে দিলাম? বাজুরডোবার তোরা... পারবি না। 

একি বলছেন স্যার? স্যারের মুখে এমন ভাষা! 

অনেকেই উদ্বেলিত, পুলকিত... কিন্তু আমার লক্ষ্য স্যারের দিকে। স্যার কি আমাকে দেখিয়ে ছাতা ফোটাচ্ছেন ?

খেলা জমে গেল। বাজুরডোবা যেন অপ্রতিরোধ্য। বালাজী তেমন সুবিধা করতে পারছে না। কখনো নিচে নেমে যাচ্ছে আবার কখনো উপরে উঠছে। পায়ে বল পেলেই কেউ না কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে। জামদার সমর্থকরা বলাবলি করছে, এ কাকে নিয়ে এল বে?... মারাতে আর খেলোয়াড় পেলো না?... খেলোয়াড়। 

হঠাৎ বালাজী বল পায়ে নিয়েই বিদ্যুৎ গতিতে বাজুরডোবার গোলের দিকে ছুটতে শুরু করল। চিৎকারে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু একি! নিমাইভুঁটি বিশ্রী ফাউল করল। মুখ থুবড়ে পড়ল বালাজি। (চলবে...)

Friday, August 28, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৭

শুক্রবার  ৬ই ভাদ্র ১৪২৭, ২১ই আগষ্ট ২০২০



কবিতা


মোহাম্মদ আবদুর রহমান

স্বপ্ন


আমার সকল স্বপ্ন গুলিকে তালা বন্দি রেখেছি

আর শুধু তোমার সব স্বপ্ন গুলিকে আপন করে নিয়েছি।

তাই তোমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য 

সংসারের উপত্যকায় চলেছি দুরন্ত গতিতে।

অনেক অচেনা ঝড় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাই

সকল চেনা সুখ গুলি আসতে আসতে লুকিয়ে গেছে জানি না কোথায়?

দুঃখ গুলি নাচতে নাচতে ঘিরে ফেলেছে হৃদয় ভুবন

তবুও কোন দিন বুঝতে দিনি 

তবে তুমি শুধু আমার ব্যর্থতা গুলি খুঁজে পাও।

ব্যর্থতার জন্য যদিও আমি দায়ী নয়

ঠিকই করেছি পরিশ্রম 

কিন্তু সফলতা আমাকে করেছে তাচ্ছিল।

তোমাকে ভাবা উচিৎ

আমার সকল স্বপ্ন গুলি কঙ্কালময় হয়ে গেছে যত্নের অভাবে

তারা রোজ রাতে আমার পা ধরে কাঁদে

একটু খাদ্যের জন্য ।

কিন্তু তোমার দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে শুনি তাদের কথা আর চোখ দিয়ে ঝরে ব্যার্থতার জল।

জানিনা কবে তা তুমি বুঝবে

সেই দিনের অপেক্ষায় কেটে যায় রাত।


এম,এম বাহাউদ্দীন

লুকিয়ে গেছি


মনের বনে পোকা লেগে খেয়ে গেছে সব ফুলের পাপড়ি,

তাই রিক্ত হাতে তোমার কাছে আর আসতে পারিনা।

লজ্জায় মুখ লুকিয়েছি ডাস্টবিনে ফেলা ফুলের মত।

তোমার আমার দেখা হওয়া ফেসবুকের রাস্তা ছেড়েছি,

বদলে ফেলেছি চলার পথ, যাতে দেখা না হয় কখনও।

এই জুকারবার্গীয় লেনে কত জনই আসে, চলে যায়,

দেখেছি আমি এক কালের স্বাক্ষী, ভাবতাম কেন?

আজ নিজের পথ বদলে নিয়ে বুঝেছি, আমিই ভুল,

ক্ষমা করো তুমি, আর খুজোনা আমায় এ পথে।

হাঁটতে হাঁটতে দেখা হবে আবার নতুন কোন বন্ধুর সাথে,

আলাপ চারিতায় হয়তো দু’একদিন প্রসঙ্গ হবো আমি,

তারপর ইতিহাসের মত করে মনের সেল্ফে ফেলে রেখো

ধুলো পড়ে চাঁপা পড়ে যাবো আমি একদিন এই পথে।

তবু ফুল হাতে আর ভুল করে দাঁড়াবোনা পথের বাকে।


তন্ময় পালধী

সম্পর্কের চাবি


সম্পর্কের সুরবাহারে সবকটি তান

মিলেমিশে গেলে

তার জাদুতে মুগ্ধতার আবহমানতা

সেই প্রবাহিত শব্দস্রোতে 

একে একে জড়ো হয় হাসি কান্না মিলন বিরহ।


ধরে নাও সম্পর্ক একটা তালা

তোমার হাতের চাবিগোছা দিয়ে

পরীক্ষার মঞ্চে অবতীর্ণ হলে

মাত্রাজ্ঞানে খুলে যেতে পারে দিগন্ত।

আর আনাড়ির মত

একবগ্গা হলে

দুঃখের রাত গভীরতর হতে থাকে।


এখন চাবি তোমার

যদি তুমি ষড়জ নিষাদের তফাত না বোঝ

কোমল শুদ্ধে খাপছাড়া হয়ে

হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ভেঙে ফেলতে চাও

তালা হয়ত খুলে যেতে পারে

কিন্তু সে আঘাতের প্রাবল্যে

সপ্তক বেসুরো হয়ে যাবে

সম্পর্কগুলোও ক্লিশে হয়ে যাবে।


মজনু মিয়া 

ক্ষণিকের পথ চলা 


মানচিত্রে বিশ্বের দেশের নাম আঁকা সীমা থাকে 

অফুরন্ত সময়ের কোনো সীমারেখা নাই 

কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে কত নাম সুনাম। 

জলছবি হয়ে চোখের কোণে আটকে আছে 

নোনা জলছাপ। 

রুপান্তর হয় যুগ যুগান্তরের বদল হয় চলার পথ, 

ক্ষণিকের পথ চলা জীবন আয়ু দিয়ে সীমাবদ্ধ।

তবুও চলছে মানুষ পৃথিবীর পথে ঘাটে 

কারো শেষ হয় আবার কারো হয় শুরু।


আশিক আকবর

নতুন ধারার কবিতা


এক

একজন ডিসির ফেইস বুক প্রোফাইল দেখলাম

অশ্লীল লাগলো

বমি আসলো

এতো এতো উপচে পড়া মাংস আর পোষাকের উৎসব

ছিঃ

মনের গরীব কামলাটির জন্য আমার মায়া লাগলো 


দুই

একজন কলেজের পিনসিপাল

আমাদের ঘন্টা তিনেক সময় খাইলো

গেজাইলো

খাওয়াইলো চা সিঙ্গারা

আমরা তার কাছে গেছিলাম

অতিথি কবিদের এক বেলা ভাতের জোগারে

তিনি আমাদের বিদায়ের কালে ব্যাগ ভরে বিবমিষা দিলেন

যা এখন স্মৃতির উজ্জল ছাই

এখানে আমরা শ্রেণী অবস্থান 

ও ক্ষমতার লেজুর কে সুচিহ্নিত দেখে ছিলাম


তিন 

ডাকসাইটে বুদ্ধিজীবির বাসায় গেছিলাম

তার আঙ্গিনাতেই স্থাপিত তার ভাস্কর মূর্তি

ড্রয়িংয়ে তিনি এলেন

বললেন

তুমি যেন কে? আবার এলে ফোন করে এসো।

ততোক্ষণে ফ্রিজের শিরা লাগা মিষ্টি এসে গেছে। 

তিনি বললেন, খাও।

এখন আমার বাথরুমে যাবার সময়।

ঐখানে আজকাল আমার অনেক বেশী টাইম লাগে।


মো.আরিফুল হাসান

আরেকটি জলকনার বুকে


আরেকটি জলকনার বুকে আশ্রয় নিই

ডুবাই কান্না

আমার চিন্তারা সব একঘরে হয়ে আছে

যেনো তামাকের ঘুম

সব কিছু ব্যতিব্যাস্ত

সবকিছু হতাশা সারাৎসার।


ধারাবাহিক গল্প

সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল

বিপুল রায় 


এক

“যাবি তো? আমি কিন্তু ভাত খেয়েই বেরিয়ে পড়ব।” শঙ্কর দূরমনস্ক হয়ে বলল।

আজ ফাইনাল। সাবিত্রী শিল্ডের শেষ খেলা। জামদা ভার্সেস বাছুরডোবা। এর আগে কোনো খেলা মিস করিনি। আমি এবার জামদার সমর্থক। টিমটা গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছে। ওদের কানাই মান্ডি তো অনবদ্য। এত সুন্দর পায়ের কাজ, পাসিং, হেডিং। তাছাড়া ইমরান কম যায় না। ইমরানকে পরাস্ত করে গোল দেওয়া খুব দুরূহ। ছেলেটা বলকে চুম্বকের মতন বুকে ধরে নেয়। 

ইস্কুলে মন বসল না। সহপাঠীদের মুখে আজকের ফাইনাল ম্যাচ। যারা বাজুরডোবায় থাকে তারা বাজুরডোবার সমর্থক আর যারা জামদায় থাকে তারা জামদার সমর্থক। আমি বাজুরডোবা বা জামদায় কোথাও থাকি না। কিন্তু জামদার দলটাকে কেন জানি না ভালো লাগে। জামদার কমলা রঙের জার্সি, নীল সর্টস, সবুজ মোজা দারুণ চোখ টানে। তুলনায় বাজুরডোবার হলুদ আর সবুজ জার্সি, কালো সর্টস, নীল মোজা ম্যারমেরে লাগে। তাছাড়া আমাদের ভ‚গোলের টিচার মৃগাঙ্ক স্যার বাছুরডোবার সমর্থক। মানুষটা খুব বদ। হিংসুটে। আমাকে ইচ্ছে করেই হেয় করে। কঠিন পড়া বেছে বেছে আমাকেই জিজ্ঞেস করে। স্যার আমার মতন ফুটবল মাঠে কিন্তু নিয়মিত। বাজুরডোবার ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। অবাক হয়ে আমি মৃগাঙ্ক স্যারকে বাজুরডোবা গোল দিলেই দু’হাত আকাশে তুলে মাঠে ঢুকে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে নাচতে দেখেছি। 

আজ মৃগাঙ্ক স্যারের ক্লাস আছে। কিছুটা দেরী করেই তিনি এলেন ক্লাসে। আমি দ্বিতীয় বেঞ্চে বাম ধারে। তিনি এসে তাচ্ছিল্যের সাথে বিড়বিড় করলেন, কমলেশদা বলে কিনা জামদা আজ বাজুরডোবাকে তিন শুন্য গোলে হারাবে? এত সোজা! খেলার কি বোঝে কমলেশদা? কে একজন জামশেদপুর থেকে বালাজী না খালাজী আসবে, সেই নাকি খেলার ভোল পাল্টে দেবে! এত সোজা? আমাদের নিমাই, বিপিন, দেবু , জব্বর কি ছেড়ে দেবে নাকি? বাজুরডোবা আজ বরং চার শুন্য গোলে জিতবে। 

বুঝলাম আজ টিচারদের কমন রুমে সাবিত্রী শিল্ড ফাইনাল নিয়েই তর্ক বিতর্ক চলছে। শহরের ফুটবল প্রেমিদের মুখে আজ শুধুই ফাইনাল ম্যাচ। 

হঠাৎ মৃগাঙ্ক স্যার আমাকে বললেন, এই লম্বু, তোকে তো মাঠে দেখি। পড়াশুনায় অষ্টরম্ভা এদিকে খেলার মাঠে খুব দর্পাতে দেখি। তুই কোন দল? জামদা নাকি রে? 

মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, স্যার। দলটা অল্প বয়সী খেলোয়াড় নিয়ে তৈরী। বোঝাপড়াটা খুব ভালো। 

আবার শুনছি বালাজী বলে জামশেদপুর থেকে কোন একজন পাঞ্জাবী খেলোয়াড় হায়ার করে নিয়ে আসছে। জামদার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না বাজুরডোবা। 

মুখটা লাল হয়ে গেল মৃগাঙ্ক স্যারের। কিছুক্ষণ আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। কমন রুমে তর্কে তিনি অঙ্কের টিচার কমলেশ স্যারের কাছে হারতে পারেন, কিন্তু ছাত্রের কাছে? 

তিনি তার সমস্ত রাগ আমার উপর ঝাড়লেন। 

কর্কশ স্বরে বিদ্রুপ করে বললেন, খুব খেলা বুঝিস। হায়ার প্লেয়ার একা কি করবে রে? নিমাইকে টপকে যেতে পারবে? নিমাই বাজুরডোবার চিনের পাঁচিল - বুঝলি। জামদা আজ নাকানি - চোবানি খাবে দেখে  রাখিস। ইমরান গোল দেবে। 

তারপর তিনি আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন, বল তো মিশরকে নীল নদের দান কে বলেছিলেন? 

বাজুরডোবা জামদা সাবিত্রী কাপ ফাইনালের সাথে নীল নদীর সম্পর্ক ঠিক বুঝলাম না। মৃগাঙ্ক স্যার ভ‚গোল নেন। আর আজ মিশর চ্যাপ্টার নিয়েই পড়া। ভাগ্যিস উত্তরটা আমার জানা ছিল। গড়গড় করে মুখস্ত বললাম, নীলনদকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠেছে বলে ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলে অভিহিত করেছেন।

ক্লাস পিন ড্রপ সাইসেন্স। স্যার মুঠি পাকাচ্ছেন। আমাকে বাগে পেয়েও ধরতে পারলেন না। (চলবে...)

Thursday, August 27, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৬

সোমবার  ২রা ভাদ্র ১৪২৭, ১৭ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা

ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত

মেঘলা মন


স্থির জলে দাঁড়িয়ে আছে

মেঘলা মন

জলের গায়ে গভীর কালো ছায়া তার

অ্যাতো দামী গলায় ঝোলে চন্দ্রহার

বৃক্ষ কাঁপায় মৃদু মৃদু জলের গা


সান বাঁধানো পুকুর ঘাট

ফুঁপিয়ে উঠছে

বাতাস বইছে

ঢেউ তুলছে ... 

নিঃশব্দ ... 


ও মেয়ে বৃক্ষ পাতায়Ñ

কিসের গল্প

ডুবসাঁতারু মাছরাঙা

কি জানে তার


কিসের হুতাশ কিসের অ্যাতো

শুন্যতা


চন্দ্রহার  ডুবসাঁতার

সান বাঁধানো পুকুর ঘাট

বড্ড একা...


জাহাঙ্গীর জয়েস 

কাটা মাথা


মাথা কাটা গেলে এখন আর সমস্যা না

কাটা মাথা নিয়ে আমরা দিব্যি থাকি

গল্প করি

কবিতা লেখি

গান গাই


কাটা মাথা নিয়ে উপদেশ দিই

সচিব হই

এমপি

মন্ত্রী


মাথা কাটা গেলে এখন আর সমস্যা না

বরং মাথা কাটতে পারলেই আরো উন্নতি

কাটা মাথা এখন খুবই মূল্যবান!


সৌম্যজিৎ আচার্য 

কবিকে ভালবাসার পর


গোটা এলাকা চিৎকার করে উঠছে...

যে মার খায় সে জানে না

আবার উঠে দাঁড়ায় যে, সেই তো কবি

প্রতিটা রক্ত মুছে ফেলাই যে কবিতা...


একজন কবিকে ভালবাসার পর তুমি দেখবে

গাছে গাছে ফুটে আছে বিউগল 

অনাথ আশ্রমে পালিত হচ্ছে ক্রিসমাস

নিউজ চ্যানেলে হঠাৎ আসছে বর্ষা-

অবরোধে যারা ছিল খুব উৎসুক,  

তাদেরও কেউ পাখির বাসায় ডাকছে...


সত্যি বলছি, তুমি আর  ভালবাসতে পারবে না।

অন্য কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেটা মরে যাবে...

তোমার খোলা চুল কবি জোৎস্না  দিয়ে বেঁধে দেবে

তোমার ঠোঁটে বুলিয়ে দেবে রাত

যেসব দুঃখ তোমার আঁচিল হয়ে আছে

তাদের খুলে ফেলে দেবে দূর দিঘির জলে...

এর আগে একুশজন প্রেমিক ছিল তোমার

হয়তো কবি বাইশতম প্রেম কিন্তু

তেইশের প্রেমটা তোমার আর কোনোদিন হবে না

একজন কবিকে ভালবাসার পর

আর কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেটা যাবে চলে...


একজন কবি, বন্যার স্রোতে যার কবিতা ভেসে যাচ্ছে

একজন কবি, জ্বলন্ত বাসে পুড়ে যাচ্ছে যার কবিতা 

তাড়া খেয়ে, লাথি খেয়ে প্রাণপণে ছুটছে, ছুটছে যার কবিতা...

তেমন কবিকে যদি ভালবাসতে পারো তবে

অন্য কাউকে আর ভালবাসতে পারবে না কখনো...


একজন কবিকে ভালবাসার পর

তুমি আর ভালবাসতে পারবে না।

অন্য কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেই হবে না


হয়তো কবি’র বারো নম্বর প্রেম

এর আগে এগারো জন প্রেমিক ছিল তোমার 

কিন্তু তেরো-তম প্রেমটা  তোমার কোনোদিন হবে না আর

আর কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেটা যাবে চলে


বৃষ্টির দিনে শহরের আনাচে কানাচে যত ভিজে যাওয়া লোক,

তার মধ্যে তুমি খুঁজবে কবিকেই

গোটা গ্রীষ্মে লেবেল ক্রশিংয়ের ওপারে 

কবি দাঁড়িয়ে থাকবে তোমারই জন্য

শীতে যে নরম রোদ নামে মাটিতে 

একদিন আবিষ্কার করবে, তা আসলে কবিরই সোনালি উসখুস...


একজন কবিকে ভালবাসার পর

তুমি দেখবে রাস্তার পাশে শব্দ পড়ে আছে

শব্দের পাশে বুদবুদ, বুদবুদে শুয়ে আছে এক শিশু

যার আকাশ জোড়া ঘর...


তোমার দ্বিতীয় প্রেমিক হয়তো তোমাকে গয়না দিয়েছিল

চতুর্থ প্রেমিক হয়তো বা সাগর পাড়ের ঢেউ

কিন্তু কবি! সেতো তোমার জন্য একটা রোগা বই নিয়ে যাবে

বইয়ের ভেতর একটা আধখাওয়া জীবন

যে জীবনের পাতায় পাতায় সন্ধে লেগে আছে

তুমি সন্ধের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে দেখবে

সব আলো ভরা ল্যাম্পপোস্ট অনন্তে চলে যাচ্ছে

একজন কবিকে ভালবাসার পর...


যেখানে দাঙ্গা চলছে,

গলি থেকে যেখানে ছুটে আসছে লোক-

একজন কবিকে ভালবাসার পর তুমি দেখবে, 

সেখানেও দাঁড়িয়ে আছে কবি

মার খাবে, পড়ে যাবে, রক্ত লেগে যাচ্ছে সারা জামায়


ফারিহা ইয়াসমিন

আমি সেই নারী


খোলা জানালায় শিশির স্নাত সবুজ প্রান্তরের দৃশ্যপটে

হঠাৎ এক আবিভর্‚ত পুরুষের হৃদয়

সুবাসিত ঠোঁট, মায়া ভরা আঁখি, শার্টের বোতাম খোলা বুক

সানগ্লাসের ফ্রেমের নীলে আবছা হাসিমুখ।


হৃদয়ের দ্বার ঠেলে সমগ্র অস্তিত্বে নির্মাণ করে একটি বসত,

যার সজীবতায় সবুজ বীথিকা ফিরে পায় প্রাণ।

অবারিত প্রেমের রক্তিম আভা স্বপ্নছোঁয়া উষ্ণ ঠোঁটে;

অনাবিল শুভ্রতায় বৃক্ষরাজিÑ মল্লিকা, মালতী, শিউলি ফোটে।

নীল পরাগ রিক্ত বুকে দিপ্ত প্রেমের অঙ্গিকারে

যে ফুটিয়ে তোলে স্বপ্নীল আলপনা

যার সান্নিধ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা

সেই তো তুমি, যাকে আপন করেছি নিগূঢ় কারুকাজে

শত সহস্র শিখল ছিড়ে অনাবৃত শাড়ির ভাঁজে।

অবশ্য, ভালোবাসার স্বীকৃতি দিয়ে

দুটি মেরুর সমস্ত দূরত্ব তুমিই করেছিলে দূর

জাগিয়ে প্রাণে প্রীতির ডোরে মহামিলনের সুর

সেই থেকে অর্ধাঙ্গী, তোমার প্রিয়তমা; তুমি- পথ চলার সাথী।

তোমার জন্য দু’পা মাড়িয়ে এসেছি যেন নাড়ি ছেঁড়া সেতু বন্ধন।

একটা মাত্র কথায় ছেড়ে দিয়েছি স্নেহে ভরা চির চেনা ভরসার হাত।


তুমি তো বলতে, আমি নাকি স্বর্গ হতে নেমে আসা কোন পরী।

স্বপ্নাবিষ্ট মেঘ বালিকা, তোমার কল্পিত অপ্সরী।

বসন্ত সমীরণে যখন আমার শাড়ির আঁচল উড়তো

বলতে আকাশে রং বেরঙের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে,

অনুভব করতে ভালোবাসার সুমিষ্ট ঘ্রাণ আমার দীঘল চুলে

খুঁজে পেতে সুখের সন্ধান পেলব হাতের স্পর্শে

আমার আলিঙ্গন তোমার কাছে মনে হতো স্বর্গমাখা সুখ।


তবে কি সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে তোমার পছন্দ-অপছন্দ।

আজকাল জিন্স টপ, মর্ডান ড্রেস, চোখ ধাধানো জমকালো পার্টি,

আর বব কাটা চুলে; আটকে গেছে তোমার তৃষ্ণিার্ত আবেগ।

স্বপ্নের ক্যানভাসে জমেছে তাই ধূসর কালো মেঘ।

রাত দুপুরে মুঠো ফোনে অভিসারে শুনতে পাই তোমার প্রেমালাপ।

উষ্ণ নোনাজলে বক্ষ ভিজে পরিত্যক্ত আজ সদ্য ফোঁটা ফুলের পরাগ

অথচ জানো, তোমার ছাঁচেই নিজেকে গড়াবো বলে

খুঁজে নিয়েছি জীবনের সরল সমীকরণ

তোমার সব ভালো লাগা, খারাপ লাগা, প্রিয়-পরিজনকে সঙ্গী করে

প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি একটি সুখের নীড়

স্বপ্নের রং তুলিতে ঢেকে রেখেছি বিষাদময় কটাক্ষের তীর।


শুধু তোমার জন্যই, নিজেকে করতে চেয়েছি অনন্যা

নির্দ্বিধায় হতে চেয়েছি অশ্রু বিগলিত ঝর্ণা।

প্রতিদানে পেয়েছি- অপমান-অবহেলা, লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা।

তবে হ্যাঁ, শুধু এতটুকুই মনে রেখো

শত যন্ত্রণার আঘাত সয়েও নিজেকে পোড়াতে পারি।

হয়তো কিছুই পারিনা, তবে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারি।।


ধারাবাহিক গল্প

সোনার বালা গায়েব রহস্য

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


দশ

      মানিকতলা খালপাড়ে পৌঁছাতেই দেখে সে আমার বাড়ির সামনে বিরাট জটলা।

      - কি ব্যাপার! রঞ্জন দত্ত গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করলেন - কি হয়েছে? এত ভিড় কেন?

      পেছনে পোশাক পরা পুলিশের গাড়ি দেখে কেউ কোন উত্তরটা দিয়ে একটু একটু করে সবাই কিছুটা তফাত চলে গেল। দু’চার পায়ে গতি ওদের নজরে পড়লো রতিকান্ত আমার বাড়ির সদরে দাঁড়িয়েছে রযেছে। কেমন যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছে। চোখ দুটো ছল ছল করছে।

      রতিকান্ত এখানে! কেন এখানে এসেছে? তবে কি শ্যামা রতিকান্ত দু’জনে মিলে ...

      - স্যার? শ্যামাকে বাঁচানো গেল না। পাড়ার লোকজন এসে দড়ি কেটে বডিটা নামিয়েছল বটে, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। রতিকান্ত হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

      - কেন? কি হয়েছিল শ্যামার?

      তিনজনেই হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে দেখে ঘরের ছাদের হুক থেকে দড়িটা ঝুলছে। নিচে একটু তফাতে একটা ভাঙ্গা কাঠের চেয়ার উল্টে পড়ে আছে। টেবিলের উপরে সেই সোনার বালা তিনটে দিয়ে চেপে রাখা একটা সাদা কাগজ। মেঝেতে শোয়ানো শ্যামা ড্রাইভারের নিথর দেহ।

      শালার বউ আর বাচ্চারা সব কান্নায় আছাড় পাছার খাচ্ছে ।

      রঞ্জনবাবু এগিয়ে গিয়ে বালা তিনটের তলা থেকে সাদা কাগজটার টেনে নিয়ে পড়ে দেখলেন, ওতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে - দারুন অর্থাভাবে মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। চাবির গোছাটা ব্যাগ থেকে বের করতে গিয়ে সোনার বালাগুলো দেখে, আমি লোভ সামলাতে পারেনি। লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। পড়ে সারাক্ষণ একটা অনুশোচনায় জ্বলেছি। আমার এই কলঙ্কের বোঝা অন্য একটা ভদ্রলোককে চিরকাল বয়ে বেড়াতে হবে। রতিকান্তদাকে বলেছিলাম আপনাদের বলে -  ব্যাপারটা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। ও রাজি হয়নি।

আমিও আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার এই কলঙ্কিত চোরাই বালার অর্থ দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবো না বলেই বালাঘটা ফেরত দিয়ে গেলাম। পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন। ইতি - হতভাগ্য শ্যামা।

      রঞ্জন বাবু যখন ওই চিঠি আর বালা তিনটে শেখর মিত্রের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, সেই সময় এই হঠাৎ ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখল বড় বাবু থানা থেকে ফোন করেছেন ।

      - স্যার? মালা গুলো পাওয়া গেছে। কিন্তু, ...

উৎসাহিত হয়ে ব্যাপারটা জানাতে উদ্যত হতেই হঠাতই কেমন যেন ডি- মরোজ হয়ে পড়ল। অপরপ্রান্ত থেকে বড়বাবু জানাচ্ছেন যে কিছুক্ষণ আগেই খবর এসেছে - হাসপাতালে মাল বাবু মারা গিয়েছেন। স্ট্রোক হয়েছিল। সেরিব্রাল স্ট্রোক! (সমাপ্ত)

Wednesday, August 26, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৫

রবিবার  ১লা ভাদ্র ১৪২৭, ১৬ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা

আইরিন সুলতানা লিমা

প্রমত্ত 


ধর, তুমি কবি 

আমি কবিতার চারণভ‚মি 

কিছুকাল চষে বেড়ালাম 

কবিতা হয়ে ঘুরে ফিরলাম। 

তুমি বললে, এবার তোমার পরীক্ষা 

কিসের? আমার প্রশ্ন ছিল

উত্তরে তুমি বললে, আনুগত্যের; 

আগামীকাল কুরবানি কর তোমার জান 

আমি বললাম, জান নিতে চাইলে দেব 

তোমার সন্তুষ্টির জন্য সব করব 

তবে, আমি যে মানুষ 

বোধহয় ভুলে গেছ, কবি 

তবে কী আমি জানব-

কবি মানেইপ্রমত্তচিত্ত; হাওয়ার বিশ্বাসভ‚মি!


সাব্বির হোসেন

জীবন আর থলের প্রেম


থলে থেকে বেড়িয়ে আসে জীবন,

রং দেখিয়ে আবার ঢুকে পড়ে নতুবা অন্যত্র চলে যায়।

মানবের অবয়বের সাথে মিশে থাকে থলের কাগজ,

আর সেই থলেতেই জীবনের লজ্জাহীন সংসার।

এত লালন এত পালন এত সোহাগ

এসবের কোন মূল্যবোধ এই পাষাণ জীবনের কাছে নেই।

কারও কারও থলেতে জমা পড়ে শুধুই সাদা কাগজ

আর আছে শুধু প্রাণবধ টুকরো অপূর্ণ স্বপ্ন।

চামড়ার থলের ভাব আছে, অহংকার আছে

কিন্তু গরীবের থলের আছে শুধু ক্ষুধা আর কান্না। 

জোড়াতালি দিতে দিতে ঝাঁজরা যোদ্ধার থলে

ভেতরে জমা পড়েছে সহস্র বারুদের ছাই।

কী আমির আর কী গরিব, সব জীবনের পাছে

কাঙ্গাল হয়ে ছুটছে আর ছুটছে অন্ধের মত। 

অবাক করা বিষয় হল, এই জীবনের কোন হাত পা নেই। এটি তরল আর চারটে কোন আছে। 

অংকে লেখা আছে এর মানদণ্ড। 

জীবন চলে যায় কবিতার মত বাড়ি বাড়ি কৌশলে,

থলে পড়ে থাকে কবির মত অযত্নে ঐ এক টেবিলে।


বঙ্কিম কুমার বর্মন

নাছোড় লেখা


ঘুরেফিরে এই কথা বলো সখী মন লাগেনা কাজে। যার কোনো বন্দর নেই, ঘাট নেই, তার কোনো পূর্বাভাস নেই মেঘে। কিভাবে চলে রামধনুর প্রেমে। ও পাড়ার প্রস্তুত পায়রাগুলি কুয়াাশার বচন খুঁটে খায়। সেই অর্থে সহজ বর্ণময় নদীকেও লিখেছি নারীকেন্দ্রিক চিঠি। তুমি অভিমান তুলে নাও এই ভর দুপুরে। সেভাবে তো আমিও ফিরেছি কোনো মনভাঙা ভোরের দিকে। সেই যে ছুটে চলা পথের ফাগুন বলিষ্ঠ আয়ুরেখা। কাব্যময় স্থির চাঁদ বাড়ি বাড়ি ফিরে, এই বেলা আমিও সমানুপাতে কাহিনীর দ্রুত উপমা সঞ্চয়ে। বোকা মেয়েটি তুমি তখনও ভীষণ চটে মৃদু বাতাসের সাম্রাজ্যে। বাধ্য রাত্রির জাগরণের সব উৎসে পুষ্পবৃষ্টি দিয়েছি কারণ তাঁরাও তো কোনো নির্জন নীহারিকার  রাজটীকা। প্রাচীন  বিস্তারে  চুল উড়ছে উদ্দাম নৃত্যের দেহব্যাকুল। তুমি নিদ্রাহীন শহর গোছাও দু’হাতে, একটি আম গাছ লাগাও। ভীষণ প্রয়োজন বর্ষার মাতাল সবুজ কৌতুহলে।


মিলন ইমদাদুল

গর্ভহত্যা 


নারী, গর্ভের সন্তান যদি কোনদিন চিনতে পেরে

আর্তনাদ করে ডেকে উঠে মা মা বলে, মহামিলনে

আপনি কি তাকে চিনতে পারবেন?


চিনতে পারবেন কি সেই নবজাত শিশুটিকে?

যাকে কোটি বছর পূর্বে খুন করেছিলেন আপন গর্ভে

যাকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে দেননি একটিবার!


মনে পড়ে-

এক বিষণ্ন সন্ধ্যায় সূর্য্য যখন দিনের ক্লান্তি শেষে

ফিরে যাচ্ছিলো নিজ গন্তব্যে...

রাখালেরা যখন ঘরে ফিরছিলো আপন মহিমায়

ঠিক সেই সময়ে হত্যা করেছিলেন আপনি তাকে

একটুও শিহরিত হয়নি আপনার হাত! 


কি পাপ করেছিলো নিষ্পাপ শিশুটি?

কি করে এতোটা নিষ্করণ হতে পারলেন আপনি?

কিছুই তো চায়নি সে আপনার কাছে-

শুধু একটিবার দেখতে চেয়েছিলো আপনাকে

বাঁচতে চেয়েছিলো কিছুটা সময় পৃথিবীর বুকে 


এটাই কি তার অপরাধ!

তবে কেনো! কেনো পাষন্ডের মতো হত্যা করলেন আপন গর্ভকে

জবাব দেন! জবাব তোমায় দিতেই হবে মা!


সরকার অরুন কুমার

নিষ্কর্মার ঢেঁকি


সাপের নির্মোক ছিঁড়ে

পালে ঝড় ভরে দাও

জ্বলে ওঠো নির্বিকার

নক্ষত্র আকাশে।


খুঁজে নাও নির্বিকল্প সত্য

মনটাকে করো নির্বিষ

তোমরা নির্ভেজাল সত্য সন্ধানী

সাজেনা নির্লিপ্ততা।


নীল আকাশের আবছায়ায়

ঢাকা পড়ে সুখের নিলয়

উপবিষ্ট কদাচারী কুবেব আসনে

নীলাভ আঁখি হয়েছে ম্লান অকারণে।


জেনে রেখো...

আমি নিষ্কর্মার ঢেঁকি।


সুরঞ্জন অধিকারী

মন নদী


বহমান চপল চঞ্চল নদীটা,

জন্ম থেকেই বিশেষ অবরুদ্ধ,

ক‚ল ভরা জল, আর বুক ভরা ঢেউ,

সেতো জন্মান্তরের সাধনা তার!

পাহাড় প্রমাণ প্রতিবন্ধকতায়

জীবন তার থেমে থাকেনি এক মুহুর্ত!

নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় অকৃত্রিম

হৃদয়ের উৎসারে, সে ছিল অনন্য, আহ্বাণ।


তারপর হঠাৎ একদিন, হৃদয়ের বিকলতায়,

হিমশীতল মৃত্যুর আলিঙ্গনে পরপারে পাড়ি দেয়,

না ফেরার দলে, নক্ষত্রের দেশে পরবেশে!


বড়ো ভিড়ে ঠাসা, ‘বনগাঁ লোকালে’,

আর বলবো না, “সুপ্রাদি কেমন আছো তুমি?”

ক্রান্তিকাল, আজ কালের কপোলে,

এক অনতিক্রম্য নিদারুণ দুঃসময়!

বিনম্র শ্রদ্ধায়, তোমাকে জানাই, শেষ বিদায়!


সুপ্রাদি, তুমি আজ অলৌকিক গাছ!

ভোরের বিশুদ্ধ বাতাস, নিঃশ্বাস প্রশ্বাস!

আকাশের পরে, আরো এক অনন্ত আকাশ!


ধারাবাহিক গল্প

সোনার বালা গায়েব রহস্য

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


নয়

      রহস্যের সূত্র কিছুটা উদঘাটিত হয়েছে।

      শেখর মিত্র খানিকটা পুলকিত হয়েই থানার বড়বাবুর সাথে আলোচনা করেই ছুটেছিল সিংহী পার্কে দিবাকর রায়চৌধুরীর বাড়িতে। ভদ্রলোক ওকে দেখেই মাল বাবুর কথা জানতে চেয়েছিলেন । ভালো আছেন, তবে শরীরের একটা দিক প্যারালাইসিস হয়ে গেছে শুনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন - কী করণে সে এখানে এসেছে ? বালা গুলোর কোনো হদিস পেয়েছে কিনা? শেখর মিত্র প্রত্যুত্তরে বলেছিল - এখনো পাওয়া যায়নি । তবে, সেই ব্যাপারেই ওনাকে একটু ডিস্টার্ব করতে এসেছে। এই মুহূর্তে ওর বিশেষভাবে জানা দরকার যে, সেদিন ডায়মন্ডহারবার মর্গ থেকে কে বড়বাবুর লেখা চিরকুটটা নিয়ে বাঁকির মোড়ে মাল বাবুর কাছে গিয়েছিলেন বাড়ির চাবির গোছাটা নিয়ে আসতে?

      দিবাকর বাবু সব শুনে বলেছিলেন  - ওটা ওর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সেদিন কেন, এখনো এই বাড়ির ব্যাপারে যা কিছু করার - সবটাই করছে ওর বন্ধু রঞ্জন দত্ত। ওকেই বরং ডেকে দিচ্ছেন। ওর সাথে কথা বলে নেয়াটাই আপনার ঠিক হবে, বলেই ফোন করে বন্ধুকে বললেন এক্ষুণি ওর বাড়িতে চলে আসতে। সেই বালা চুরির ব্যাপারে থানা থেকে একজন দারোগাবাবু এসেছেন। কি সব জানতে চাইছেন?

      রঞ্জন দত্ত প্রথমে অন্য কাজের দোহাই দিয়ে আসতেই চাইছিলেন না। ফোনেই বলে দিলেন - ওই ব্যাপারে ওর আর কি বলার আছে? যা করার সব তো সেইদিনই মিটিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। তার পরেও আবার কিসের তদন্ত? কাজ তো নেই একটা ডেড কেস কে নিয়ে অযথা ঘাটা-ঘাটি শুরু করেছে! ওর অত সময় নেই যে এই ধরনের ফালতু ব্যাপারে এসে অযথা পেলা দেওয়ার।

      দিবাকর বাবু বুঝিয়ে বলাতে রঞ্জন দত্তের মেজাজটা খানিকটা শান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত এসে শেখর মিত্র কে সর্বতোভাবে সাহায্য করা শুরু করেন।

      আলোচনা থেকে যে গল্পটা উঠে এলো, সেটা হল - ঐদিন রঞ্জনবাবু চাবির গোছা নিয়ে আসার জন্য দিবাকর বাবুর অফিসের কর্মচারী রতিকান্ত সেনকেই কালো রংয়ের প্রাইভেট কার ২৬৭৩এ করে ঘটনাস্থলে মাল বাবুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। খুব সম্ভবত শ্যামা ড্রাইভার ঐদিন ওই গাড়িটা চালাচ্ছিল।

      রহস্যের জট সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা খুলেছে।

      শেখর কিছু বলার আগেই রঞ্জন বাবু দিবাকর বাবুকে বললেন - দিবাকর? তুই এক কাজ কর? ফোন করে তোর অফিস থেকে রতিকান্তকে ডাকিয়ে নে। রঞ্জন দত্তের কথাটা শুনে দিবাকর রায় চৌধুরী জানালেন, রতিকান্ত ওই এক্সিডেন্ট এর পর থেকেই অফিসে আসছে না। আসলে ঐদিন সকলের ডেড বডি দেখার পরে ও এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে, অফিসেই আর আসতে পারছে না। তবু, তুই যখন বলছিস, ওকে এখানে  ডাকিয়ে নিচ্ছি। আমার মনে হয় না এতে কোন লাভ হবে। 

      দিবাকর বাবু ফোনে কথা বলে জানলেন যে, রতিকান্ত সেন আজ অফিসে এসেছে। বললেন, ও যেন অফিসেই থাকে। গাড়িটা পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও যেন অত করে আমার বাড়িতে চলে আসে। খুব জরুরী দরকার, বলেই শ্যামা ড্রাইভার এর খোঁজ করলেন। কিন্তু, ওকে পাওয়া গেল না । কিছুক্ষণ পরে একজন এসে জানালো যে সে প্রায় মিনিট চল্লিশেক আগে বাড়ি চলে গেছে। মরে গেছে বাড়ি থেকে হঠাৎ ওর মায়ের খারাপ সংবাদ এসেছে। তাই লগন সিংকে গাড়িটা চালানোর কথা বলে, চলে গেছে।

      - হ্যাঁ। বুঝেছি। রঞ্জন দত্তের লাভ দিয়ে সোফা থেকে উঠে বললেন - মিস্টার মিত্র? গেট আপ। আমাদের এক্ষুণি শ্যামা ড্রাইভার এর বাড়িতে যেতে হবে। দেরি করা যাবে না। দেরি করা মানেই, মালগুলো সব হাপিস হয়ে যাবে।

      - তাহলে, রতিকান্তের কি হবে? দিবাকর বাবু জানতে চাইলেন।

      দত্তবাবুর প্রথমে ওক শ্যামা ড্রাইভার এর বাড়িতে চলে যেতে বলে, খস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে একটু ভেবে বললেন - না ও বরং তোর এখানে আসুক। আমরা আগেই বেরিয়ে যাচ্ছি। মানিকতলা থানা হয়ে আমাদের যেতে হবে। তুই বরং ওকে নিয়ে পরে ওখানে আয়। ফোন করে বলে দে যে, শ্যামা ড্রাইভার এর মায়ের খারাপ সংবাদ এসেছে। তুই ওখানে যাবি। ও তোকে অ্যাকম্পানি করবে। (চলবে...)

Monday, August 24, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৪

শনিবার  ৩১শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১৫ই আগষ্ট ২০২০


কবিতা


জিতেন্দ্র দাস জিতু

এসো গল্প শুনি

তুমি বলেছিলে একটি কবিতা শুনাতে
শুনে তো আমি অবাক
আমি কোথা পাবো কবিতা
কবিতা তো বড় বড় শব্দের আলিঙ্গনে
অনেক পড়–য়া কারো ড্রয়িংরুমের শেলফে
নয়তো শিয়রের আগে সুন্দর প্রচ্ছদে
দামী বাইন্ডিংয়ে বাঁধাই করা
সুন্দর বইয়ের অলঙ্কারে
আমি মুখ্য সুখ্য মানুষ
আবেগ বা অনুরাগ কিছুই নেই
রাক্ষসী অভাবের তাড়নায়
সব কিছু লন্ড ভন্ড স্মৃতি ভষ্মে
যেখানে প্রেম সেখানে কবিতা
ভালোবাসা আর প্রেমের মহুয়া রসে
কবিতার জন্ম হয় কবি-র মননে
এতো রসদ আমার নেই
কবিতায় গোলাপ ফুটাবো গালে
অথবা ঠোঁটে এঁকে দেবো ভরা চন্দ্রিমা
মেঘ কালো কেশে মেঘের রঙ দিতে দিতে
সবুজ তরুবীথি এখন ঝরা পাতার দলে
তার চেয়ে এসো, ভোরের স্নিগ্ধতায়
মেঘের গল্পে বৃষ্টির কান্না শুনাই


পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

জীবন = দাবা

দাবার চাল চালতে চালতে মানুষ ভুলে যাচ্ছে, 
জীবনটা ৬৪ খোপের বোর্ড নয়।
সাদাকে যদিও বা সাদা বলা যায়, 
কালোকে কালো বলা অতটাও সহজ নয়।
হাতি, ঘোড়া, নৌকা, কোনটাই আমরা নই,
আর রাজা বা মন্ত্রী হওয়া আমাদের কম্ম নয়।
রয়ে যাই জীবনভর বোঁড়ে;
উড়ে যাই কখনো ঝড়ের তোড়ে, 
কখনো বা আগুনে শরীর পুড়ে! 
তাও রয়ে যাই সেই অভাগা বোঁড়ে।

জীবন পাত করে রাজা ও রাজ্যকে রক্ষা করি,
কি বা আসে যায়, যদি বেঘোরেই মরি!


বিপুল রায়

ঘুমঘোর

কাকে কবে কথা দিয়ে বসে আছি। যাকে দিয়েছিলাম সে মনে ধরে রেখেছে আমি কবে ভুলে গেছি। আজকাল অল্পতেই খুব ব্যস্তবাগীশ হয়ে পড়ি। খুব ভুল হয়ে যায়। 

Ñ দেখো তুমি যা বলছ তা ঠিক নয়। আমি কোনোকালেই লাইব্রেরী থেকে ‘ ঘুমঘোর’ নামে কোনো কবিতার বই তুলিনি। তুমি বলছ বই - এর পাতায় তোমার নাম আমি লিখে রেখেছিলাম? 
মিথ্যা। আমি কবিতা নয় টারজানের বই পড়তাম কিংবা স্বপনকুমারের ... কি যেন দীপক না কে যেন ডিটেকটিভ ছিল ...সহকারী রতনলাল...। 

কি বললে, ‘ঘুমঘোর’ বইটা আজো তুমি সযত্নে রেখে দিয়েছ? 
বড় বড় অক্ষরে আমার হাতের লেখায় - তোমার নাম? 
বইটা এনে দেখিও একবার। নিজের হাতের লেখা চিনতে পারব হয়ত। 
‘ঘুমঘোর’ কবিতার বইটা নিয়ে এসে সত্যি সত্যি একদিন সে আমার সামনে মেলে ধরল। সত্যি সত্যি একটা নাম লেখা। সত্যি সত্যি সেই নামটা তার, তার, তার। 
সেই কবে তাকে কথা দিয়েছিলাম - আমি সব ভুলে বসে আছি। 


পারমিতা চ্যাটার্জি 

শ্রাবণ যাবে চলে

শ্রাবণ এবার যাবে চলে
আসবে ভাদর রিমিকিঝিমিকি ধারায়।
এবারও শ্রাবণ যাচ্ছে চলে
আমার তরী আটকে ছিলো
নীল যমুনার মোহনায়,
তোমার কাছে আমার তাই হলো না যাওয়া,
এই শ্রাবণও কাটিয়ে দিলাম শুধু অপেক্ষায়,
হলো না যাওয়া।
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো,
মনের দুক‚ল ছাপিয়ে গেলো
দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই তিমিরেই
বলা হলো না,
তোমার কাছে এই শ্রাবণেও যাওয়া হলো না।
কখন যেনো ধূসর আকাশ মনকে ফেলে ছেয়ে,
জীবন নদীর দুপার যেনো আপনি গেছে ক্ষয়ে,
তাইতো ঘাটে আটকে গেলো, তরীখানি আর বাওয়া হলো না,
এই শ্রাবণও কাটলো একা তোমার সাথে মনকে আমার ভেজানো গেলোনা,
তোমার কাছে কেনো যে আর যাওয়া হলো না! 
পথ যে আমার আটকে দিলো শূন্য পথের ধূলি,
ভৈরবীর সুরটাও তাই কখন গেলাম ভুলি,
সন্ধ্যা রাগে ইমন বাজে, নদীর জলে চাঁদের ঝিলিমিলি,
পথাটা কখন গেলাম ভুলে
নতুন পথের দেখা পেলামনা,
তোমার সাথে এই শ্রাবণেও দেখা হলো না।।


ধারাবাহিক গল্প


সোনার বালা গায়েব রহস্য

প্রণব কুমার চক্রবর্তী

আট
      - স্যার? একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
      শেখর বড় বাবুর চেম্বারে ঢুকে জিজ্ঞাসা করতেই, জগদানন্দ মুখার্জি বললেন ইয়েস। সুদাম সেনের কেসের তদন্তের ব্যাপারে একটা কেন, আপনি আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করতে পারেন।
এন্ড আই এম বাউন্ড টু গিভ ইউ দা অ্যান্সার।
      - স্যার? ডায়মন্ড হারবারের মর্গে সেদিন, আপনি কি কাউকে কোন চিরকুট লিখে পাঠিয়েছিলেন মাল বাবুর কাছে - কিছু দিয়ে দেওয়ার জন্য?
      বড় বাবুর এন্ডোর্সমেন্ট মত মালখানার দায়িত্ব নিয়ে শেখর মিত্র মালখানার রেজিস্টার এবং কাগজপত্র গুলো খুঁজতে খুঁজতে ওর ভিতরে রেখে দেওয়া বড়বাবুর নিজের হাতের লেখা একটা ছোট্ট চিরকুট খুঁজে পায়। সেটা বের করে ভালো করে পড়ে দেখে, ওটাতে লেখা আছে - সেনবাবু? পত্রবাহকের হাতে বাড়ির চাবি গোছা গুলো দিয়ে দেবেন। জে, মুখার্জি, বড়বাবু।
      ইয়েস! মনে হচ্ছে - এই চিঠিটাই এই রহস্যের মূল চাবিকাঠি! 
      - হ্যাঁ। শেখর এর হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে দেখে, বড়বাবু বলেন - ঐদিন নিরঞ্জন বাবু এসে আমাকে সিআইএ এবং এসডিপিও সাহেবের সামনে ডায়মন্ড হারবার মর্গে বলেছিলেন ওর বন্ধু রায় চৌধুরীদের বাড়ির চাবির গোছাটা ফেরত দেওয়ার জন্য। ওটা না হলে উনারা কেউ সিংহী পার্কের ওই বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। আমি উনার হাতেই এই চিরকুট লিখে বলেছিলাম বাঁকির মোড় গিয়ে মালবাবুর সাথে দেখা করে চাবি গুলো নিয়ে নিতে। উনি নিশ্চয়ই গিয়ে নিয়েছিলেন। না হলে তো ওদের কথা মতোই বাড়িতে ঢুকতে পারত না। 
      - রাইট স্যার। শেখর বারকয়েক টেবিলের উপর টুকা মেরে নিজের মনেই বলে ওঠে - মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটার মধ্যেই আসল রহস্য লুকিয়ে আছে! আচ্ছা স্যার, প্রত্যেকটা বালাতে কত ভরি করে সোনা ছিল? পাঁচ ভরি করে? তার মানে, পাঁচ ইন্টু তিন ইকুয়াল টু পনেরো ভরি!  অনেকটাই সোনা। ফট করে গোবর্ধন স্বর্ণকারকে ফোন করে
জিজ্ঞাসা করে - সোনার ভরির তোর এখন কি চলছে? উপর থেকে উত্তর শুনেই শেখর মিত্র আঁতকে  উঠে বলে - মাই গড! এ তো বিরাট অ্যামাউন্ট! প্রায় তিন লাখ টাকা!
      বড়বাবুর মৌখিক আশ্বাস পেয়ে শেখর ব্যাপারটার রহস্য ভেদে তৎপর হয়ে উঠল নতুন করে সবাইকে জিজ্ঞাসা করে, তাদের সাক্ষ্য- বয়ান নথিভ‚ক্ত করে এগুলো শুরু করলো। ঘটনাস্থলের আশেপাশের দোকানদার এবং লোকজনের সাক্ষ্য থেকে একটা জিনিস ক্রমশ পরিষ্কার হয়েছিল যে, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে তিনটে চারটে নাগাদ ডায়মন্ড হারবার এর দিক থেকে একটা কালো রঙের প্রাইভেট কার এসে
ঘটনাস্থলেই মাল বাবুর সাথে দেখা করেছিল। কেন দেখা করেছিল সে ব্যাপারে ওরা কেউ কিছু বিশদ ভাবে বলতে পারেনি। তবে ওই গাড়িটা যে কিছুক্ষণ বাদেই আবার ফিরে গিয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের দিকেই সেটা অবশ্য ওদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়েছিল। সেদিন বিকেলে ওই প্রাইভেটে ড্রাইভার ছাড়াও আরো একজন লোক বসেছিল। তবে, তারা কেমন দেখতে, কী ধরনের পোশাক পড়েছিল, কিংবা মাল বাবুর সাথে ওদের কি কথাবার্তা হয়েছিল, সেসব বলতে পারেনি।
      তবে কি যেটা দিবাকর রায় চৌধুরীর ওই বন্ধু রঞ্জন দত্তের কাজ!
      সুমন নিজেই নিজের প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু, সেটা বললে তো হবেনা। এর ভিতরেই তো যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর আছে। এটাই রহস্য। এই রহস্যটাই তো উদঘটন করতে হবে। রঞ্জন দত্ত তো একজন পুলিশ অফিসার! ও যদি এই কাজে জড়িত থেকে থাকেন, তাহলে সেদিন ডায়মন্ড হরবার মর্গেকি ছুতেই নিজেকে অমন ভাবে ওপেন করতেন না, বা পরে দিবাকর বাবুর সাথে থানায় এসে মালবাবুর মুখোমুখি দাঁড়াতেন না। এমন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারতেন না। তাছাড়া রঞ্জনবাবু দিবাকর বাবুর বাড়ির একজন ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। ওর দ্বারাই কাজ, শেখর কেন  যেন ব্যাপারটা মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। নির্ঘাত, রঞ্জনবাবু সেদিন বড়বাবুর চিঠিটা নিয়ে চাবির গোছা গুলো আনতে নিজে না গিয়ে অন্য কাউকে পাঠিয়ে ছিলেন! কে সেই লোক!
      সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ! (চলবে...)

Wednesday, August 19, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৩

শুক্রবার  ৩০শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১৪ই আগষ্ট ২০২০


ছোটগল্প

টান

রওশন রুবী


গাজিপুর চৌরাস্তা থেকে একটা পিকাপে গাদাগাদি করে বসে বাইশজন মানুষ। সবার মুখে মাক্স। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ সবাই। হা-হুতাস করছেন কেউ কেউ। মানুষ ছুটছে এই মহামারিতেও নাড়ির টানে। ছুটছে মনির হোসেন। তার হাতে মামনি শপিং কম্পেক্সের বড় একটি ব্যাগ। তাতে তার একটা জামা একটা প্যান্ট, পাঁচ বছরের মেয়ে লাইসার একটা ফ্রক, বউয়ের জন্য লিপিস্টিক আর চুড়ি। মায়ের জন্য একটা শাড়ি। ছোট বোনের জন্য একজোড়া জুতো। আর সবার জন্য একটি করে মাস্ক।


মনির বাড়ি যেতে চায়নি। কিন্তু ভোর রাতে ছোট বোন ফোন দিয়ে বলল,

-ভাইয়া তোকে কতদিন দেখিনি। আয় না  ঈদের ছুটিতে। 

মা ওকে ধমক দিয়েছিল, “আসতে লাগবো না। করোনা মানুষ সাফ করতাছে। হে এহন আইলে পথে-ঘাটে আক্রান্ত হইবার পারে। থাক, থাক করোনা দূর হোক।


মনির ভোররাত থেকে আশা ছেড়ে দিয়ে লম্বা ঘুম দিয়েছে। ফোনের রিং টোনে তার ঘন ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম জড়ানো ঘোলা চোখে স্কিনে দেখল আমেনার নাম। ধড়ফড়িয়ে উঠলো বুক। আমেনার কাজল লেপ্টানো হরিণের মতো চোখ, ধনুকের মতো নাক, নৌকার গলুয়ের মতো ঠোঁট ভেসে উঠলো। আমেনার হৃদয় হরণ করা বৃষ্টির ধারার মতো হাসি কানে ঝঙ্কার তুলছে। 

-হ্যালো আমু! কেমন আছো?    

বলতে বলতে মনির হোসেন টের পায় উত্তেজনায় তার গলা বন্ধ হয়ে আসে। ওপ্রান্ত থেকে আমেনা বলে,

-জোরে বল। কিছু বুঝবার পারতাছি না। হাসের মতো ফ্যাসফ্যাস করতাছো ক্যা? গলায় ব্যথা করতাছে?


-আরে নারে পাগলি। তোর ফোন আইলেই আমার শরীর গরম হইয়া উডে। আর গলা বন্ধ হইয়া যায়। 

মনির কথাটি বলে আমেনাকে একটা চুমু দেয়। আমেনা ওপ্রান্তে লজ্জায় লাল হয়ে বলে,

-লাজ-টাজ সবই ধুয়ে ফেলছো দেহি।

-তা হইব কেনরে বউ। আইজ ঘরে কেউ নাই। সবাই নাড়ির টানে ছুইটা গেছে যে যার বাড়িত।

-তোমার কাছে নয় কেউ নাই, আমার কাছে মাইয়া আছে। পাগল একটা তুমি।

-হো হো হো। হাসাইলা সোনাই। কও এই সাত-সকালে ক্যান ফোন দিছো? আর তো কোনদিন এমুন সকালে ফোন কর নাই।

কথাগুলো বলে মনির উত্তরের অপেক্ষা করে। আমেনা গাল ফুলিয়ে অভিমানের স্বরে বলে,

-বাড়ি আইবা না তুমি? সেফু বলছে মা নাকি তোমারে মানা করছে? 

-হ’ করছে তো। তুমি কী চাও?

-তোমার লগের বেবাকতের নাড়ির লাইগা টান আছে। বেবাকতে চইলে গেছে তাগো পরিবারের কাছে। তুমি ক্যান রয়ে গেলা? আমারে আর মনে লয় না? সে না হয় নাই লইল তোমার মাইয়ারেও দেখবার চাও না?

কথা শেষ করে ফুঁফিয়ে উঠে আমেনা।


-আরে কি করতাছো, কি বলতাছো হিসাব আছে? তোমাগোর কাছে যাবো বইলাই তোমাগো সবার লইগা জিনিস-পত্র কিনছি। এখন মা বলল যাইতে না।

মনির হোসেন কৈফিয়তের ভঙিতে কথাগুলো বলে থামে। (পরের পৃষ্ঠায়...)


ওপ্রান্তে নাক টানার শব্দ। মনির হোসেনের অস্থির লাগে। এসময় ফোনে মনির হোসেন মেয়ে লাইসার কণ্ঠ শুনতে পায়। 


-হ্যালো বাবা! তুমি কবে আইবা? বল না বাবা? বল না কবে আইবা?

লাইসা থেকে ফোন নিয়ে আমেনা বলে,

-আচ্ছা আইতে অইবো না। ভালা থাইকো।

মনির হোসেন কিছু বলার আগেই আমেনা ফোন কেটে দিল। তারপর যতবার ফোন দিয়েছে মনির হোসেন ফোন বন্ধই পেয়েছে। মানে আমেনা অভিমানে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। মনির হোসেন তড়িগড়ি বিছানা-পত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল।


এয়ারপোর্ট এসে যাত্রাবড়ি যাবার জন্য একটা অটোরিক্সা ভাড়া করল তিনশো টাকায়। পথে রিক্সাওয়ালা অনুনয় করলো আরো দু’জন পেসিঞ্জার নেবে। এতে মনির হোসেনকে পঞ্চাশ টাকা কম দিলেও হবে। তবে চুপ থাকতে হবে। মনির হোসেন ভাবল পঞ্চাশ টাকা বাঁচলে মন্দ হয় না। মেয়ের জন্য একটা আইসক্রিম নেওয়া যাবে। লাইসা আইসক্রিমের ভক্ত। মনিরসহ রিক্সাওয়ালা ও অন্য দু’জন মাস্ক পরা। তাই একটু স¦স্থির নিঃশ^াস ফেলে মনির।


যাত্রাবাড়ি নেমে আবার একটি পিকাপে উঠলো সোঁনারগাঁয়ে যেতে। মানুষের উপর যেন মানুষ বসে আছে এমন ভিড়। নড়বার উপায় নেই। মনিরের একবার মনে হলো কিছু লোক কাত হয়েও বসে রয়েছে। পিকাপে তিল ধরবার জায়গাও নেই। তবে একটা ভালো দিক মাস্ক ছাড়া কেউ নেই এখানেও। গরমের তীব্রতায় মনিরের দম বেরিয়ে যাবার জোগাড়। সে মাক্স ফাঁক করে দম নেয়। মানুষের গরম আর প্রকৃতির গরম মিশে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ বেরুচ্ছে। তিন চার জন লোক চিৎকার করে উঠল,

-এই মাস্ক খুলছেন কেন? মাস্ক ঠিক করেন! ঠিক করেন!


মনির তাড়াতাড়ি মাস্কটিকে ঠিক করে নিল। করোনা কালের রাস্তা পারাপারের যুদ্ধ শেষে মনির যখন বাড়ি পৌঁছালো তখন শেষ বিকেল। ওকে দেখে সবাই অবাক আমেনা ছাড়া। আমেনা মনিরের চোখে চোখ রেখে রহস্যময় হাসে। লাইসা দৌড়ে এসে আব্বু আব্বু বলে মনিরকে জড়িয়ে ধরে। মনির চুমোয় চুমোয় মেয়েকে ভরিয়ে দেয়।


সেফু ভাইয়াকে এতোদিন পরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত। হাসি আর কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ভাইয়া ভাইয়া বলে মনিরের কোল ঘেঁষে বসে। মনিরের মা ভেজা চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আসরের নামাজ পড়তে চলে যান। মনির সবার জন্য নিয়ে আসা জিনিসগুলো সবাইকে বুঝিয়ে দেয়। 


ঈদের দিন থেকে গলা ব্যথা মনির হোসেনের। পরদিন থেকে জ¦র আর জ¦র। জ¦রে ভুগছে ছোট্ট লাইসাও। ও জ¦রের তোড়ে অস্থির হয়ে উঠছে। নিরুপায় আমেনা সারারাত সারাদিন বসে বসে ওদের মাথা পানি দেওয়া, গা মোছার কাজ করে যাচ্ছে। সেফু বাজারের ঔষধের দোকান থেকে জ¦র গলা ব্যথার ঔষধ নিয়ে এসেছে দু’জনার জন্য। চারদিনের মাথায় আমেনাও অসুস্থ হয়ে পড়ল। মনিরের মা আর বোন সেফা দেখা-শুনা করছে। চেয়ারম্যানের লোক এসে ওদের করোনা পরীক্ষা করতে নিয়ে গেল। দু’দিন পর জানা গেল ওরা কোভিড-১৯ পজেটিভ।


তাদের বাড়িসহ পাঁচ বাড়ি লকডাউন করা হলো। হঠাৎ মনিরের মায়ের বমি আর শরীর ব্যথা সাথে ডায়েরিয়া শুরু হলো। ডায়েরিয়ার বেগ বেড়েই চলেছে। ডিপেন্সারির ঔষধে কাজ হচ্ছে না। সেফা মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করালো। ওয়ার্ডের বেডে বেডে মাস্ক পরা রুগিরা রোগের সাথে যুদ্ধ করছে। সেফা মায়ের জন্য টেনশানে ভুলেই গেল ডাক্তারকে বলতে তার ভাই গাজিপুর থেকে এসেছে। ভাই এবং তার স্ত্রী, সন্তানের করোনা পজেটিভ।


ডায়েরিয়ায় ভুগে মনিরের মা মারা গেলেন। তারও করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। মারা গেলো মনিরের একমাত্র মেয়েও। মনিরের বউ আমেনা বেগম আইসোলেশনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা নড়ছে। আছে মনিরও। মনির বা আমেনা শেষবার বিদায় দিতে পারেনি মা বা মেয়েকে। দূর থেকে দেখে জল বিসর্জিত করেছে সেফা। আইনের লোক সেফাকে ছুঁতে দেয়নি লাশগুলো। বরং তাকে কোয়ারান্টাইনে পাঠিয়ে দিয়েছে।


ধারাবাহিক গল্প

সোনার বালা গায়েব রহস্য

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


সাত

      সোনার বালা গুলো কি মাল বাবু সত্যিই হাফিস করেছেন! নাকি অন্য কেউ!


      কয়েকদিন ধরেই শেখর মিত্র ব্যাপারটা নিয়ে সমানে ভেবে চলেছে। একবার ভেবেছিল এই ব্যাপারটা নিয়ে বড়বাবুর সাথে নিভৃতে বসে

একটু আলোচনা করবে। কিন্তু, সাহসে কুলায়নি।

নিজের মনেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে, আর সারাক্ষণ সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছে।


      তিন-চার দিনের মধ্যেই সত্যি সত্যি সুযোগটা এসে গেল। হাসপাতালে জানিয়েছে, মাল বাবু আপাতত বেঁচে গেছেন। কিন্তু, একটা সাইট পড়ে গেছে। মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করছে না। কথাবার্তা ও ঠিক মতো গুছিয়ে বলতে পারছেন না। জড়িয়ে যাচ্ছে। এখনো অন্তত মাস কয়েক হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে।


      কি একটা বাজে কান্ড ঘটে গেল? বড়বাবু খবরটা পেয়ে বেশ মর্মাহত। বললেন - মিত্তির? আশাটা যদিও কম, তবুও বলছি - যতদিন না মাল বাবু ভালো হয়ে থানায় ফিরছেন, তোমাকেই ওই মাল খানাটা সামলাতে হবে। আমি অন্য কাউকে আর ওটা এনডোর্স করছি না। প্লিজ , অন্যথা করো না।

      - ঠিক আছে স্যার।

শেখর এই সুযোগটাই খুজছিল। অনুনয়ের সুরে বলল - স্যার? একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?

      - কি কথা ?

      - আপনার এই ব্যাপারটায় কি মনে হয়?

      - কোন ব্যাপারে?

      - মালখানা থেকে মালগুলো উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। আপনি কি মনে করেন যে, মাল বাবুই ওই বালগুলো আত্মসাৎ করেছে? সেদিন ওর কথাবার্তা, চালচলন এবং উনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজএর ক্ষেত্রে একবারের জন্য কি আপনার মনে হয়েছে যে, ভদ্রলোক এতোটুকু ক্রিমিনাল সাইকোসিসএ ভুগছিলেন? আমার তো স্যার মনে হচ্ছিল, উনি লজ্জা আর অপমানের হীনমন্যতায় একেবারে গুটিয়ে গিয়েছিলেন।


      শেখর এর কথা শুনে জগদানন্দ মুখার্জি চোখ দুটো বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। মুখে কোনো উত্তর দেননি। তবে চোখের ভাষায় বুঝাতে চেয়েছিলেন, এত প্রমাণএর পরেও কি কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে?

    - স্যার? শেখর বুঝেছিল যে বড়বাবু ওর কথায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বলেছিলÑ স্যার? আমি ঠিক আপনাকে ব্যাপারটা ওভাবে বলতে চাইনি। আমি আপনার অভিজ্ঞতার দৃষ্টিকোণের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটার মতামত জানতে চেয়েছিলাম। স্যার? আইনের বাইরেও তো অনেকটা জায়গা থাকে।

      - তা থাকে। বড় বাবু জানতে চেয়েছিলেনÑ হঠাৎ কেন এমন ধারণা হচ্ছে? মনে হচ্ছে কেস্টার ব্যাপারে সে খুবই ইন্টারেস্টেড?


      শেখর জানিয়েছিল যে, সে ওর পাশের কোয়াটারে থাকে। ওর ব্যক্তিগত এবং আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। বেচারা অত্যন্ত শুচিবাই গ্রস্থ চরিত্রের লোক। সকাল সন্ধ্য পুজো আহ্নিক না করে, ভদ্রলোক জল পর্যন্ত স্পর্শ করেন না। শীতকালেও ডেড বডি সংক্রান্ত কোন কিসের তদন্ত গেলে যত রাত্রি হোক না কেন, বাড়ি ফিরে স্নান না করে ঘরে ঢুকে না। এই কেসের ব্যাপারেও সেই দিন রাত্রে যে স্নান করে পুজো আহ্নিক করেছিলেন, সেটা আমি নিজেই জানি। আমার স্থির বিশ্বাস, সেদিনের ঐ মালপত্র ভর্তি কাল ভ্যানিটি ব্যাগটা মাল বাবু নিজে হাতে করে থানায় নিয়ে আনেননি।


      - ব্যাট মাইট বি! বড়বাবু হেসে বলেন - তাতে তো আর সেনবাবুকে বাঁচানো যাবে না। মনে হচ্ছে আপনি এই কেসটার ব্যাপারে খুব উৎসাহী? দেখুন না চেষ্টা করে, কিছু করতে পারেন কিনা? (চলবে...)

Tuesday, August 18, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২২

বৃহস্পতিবার  ২৯শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১৩ই আগষ্ট ২০২০


কবিতা

সিদ্ধার্থ সিংহ

গঙ্গার ঘাটটা যেন কোন দিকে!


যাকে পেতে হত্যে দিয়েছিলাম মা পরমেশ্বরীর দোরে
আসতে দেরি করলে মনসা গাছের গায়ে গায়ে
খেঁজুর কাঁটায় লিখতাম যার নাম
যার গালের ছিট-ছিট দাগ একেবারে মিলিয়ে দিতে
ট্রামে বাসেও পড়তাম একের পর এক কবিরাজি বই

এখন দেখি তার চলন বদলাচ্ছে
চাহনি সরে যাচ্ছে এদিক ওদিক
কথায় কথায় উলটাচ্ছে ঠোট

টোপরের মোড়কে ধুলো জমবে এই-ই বুঝি হয়!

গঙ্গার ঘাটটা যেন কোন দিকে!


অরুণ কুমার সরকার

অসহায় সময়


তুমি কেমন আছো জানতে চাইবার আজ মানুষ
কই;
অথচ, চারিদিকে হাজারো মানুষ
জনবিস্ফোরণ...
যেন রক্ত মাংসের যন্ত্র সব

আত্মচিন্তায় কুশল বিনিময় কথাটাই যেন আজ
অবলুপ্তির পথে;
অভিধানের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আমরা
হয়তো নিরাস হবো
                     একদিন;
হয়তো গবেষণা হবে...

অসহিষ্ণু সমাজের বুকে কেবল
ঘোড়দৌড়;
ফুরসৎহীন যাপনের পলে পলে অবিরাম প্রতিযোগিতা
কাঁচের গ্লাসের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো একান্নবর্তী
উঠোন

অসহায় সময়
একাকীত্ব কুঁড়ে খায় শৈশব
আর বুঝি নিরাপদ নয় মায়ের আঁচল
ছায়া;
সেখানেও দাঁত বের করে আছে
নিষ্ঠুর সুচ...


শুভঙ্কর রায় 

ফয়সালা


যুগান্তর ধরে
নিয়তির মতো ...
মৃত্যুর মতো ...
আত্মপরিচয়হীন প্রতিবন্ধী
ভাঙা পাতকুয়োয় পড়ে থাকে,
ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো।
তথাকথিত নিচুতলার জীবন...
অনাবশ্যক ক্ষত।

একটি বিষয় লক্ষণীয় ...
জ্যান্ত ভদ্রলোক ভাবার প্রয়োাজন নেই।
দৈনন্দিন জীবন চললেই হল।
আশ্চর্য জ্ঞান।

প্রসঙ্গত সকলেই জানেন...
সমস্তটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত
শেষমেষ নির্বোধ চিৎকার,
ফয়সালা হয়ে গেল প্রথম দফায়।
ফল দাঁড়ালো ...
কান চোখ মুখ বন্ধ রাখা প্রয়োজন।


শুভায়ু দে

সব বোঝানো যায় না


এ ভাবে বর্ণনা করা যায়না হাসিমুখ।
হতেই পারে ঘুমের মধ্যে ঈশ্বরকে জন্ম দিতে গিয়ে
প্রাণ ভরে হেসে গেছি কোটি কোটি বছর।
জেগে থাকা মানুষেরা ভাবতে পারে আমায় পাগল।
পরমুহুর্তেই নিজের প্রিয় বন্ধুর সর্বনাশ করে
হাহাহাহা করে হেসে গেছি রাতভোর।
হতেই পারে।
একটা সত্ত্বা নাকি!
বন্ধুত্ব শুধু সত্ত্বার হয়, মুহুর্তের হয়।
দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে,যদি মুহুর্ত গুলোকে ফ্রেমলক করে দাও।
রিপিটেশনের পর রিপিটেশন।
কালো থাকা অপরাধ নয়।
প্রজাপতি কেই দেখো।
সাদা-কালো মিক্সচার।
তুমি তো তাকে দেখেই সুন্দর বলে ক্যামেরাবন্দী করো।
মস্তিষ্ক জঘন্য না হলে সুন্দরের বিচার করা যায়না।
আমি নিজেই সুন্দর হলে, বিচার করবো কি করে।


ধারাবাহিক গল্প

সোনার বালা গায়েব রহস্য

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


ছয়
      - যাক বাবা! আপনি আমাদের একটা বিরাট ঝামেলার হাত থেকে বাঁচা যায়।
      সুদাম সেনকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে সাহেবরাও দিবাকর বাবু কে ধন্যবাদ জানিয়ে থানা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু, দাঁড়িয়ে বড়বাবুর উদ্দেশ্যে বললেন- লেট, সেনবাবু ইজ রিটার্ন ফ্রম হসপিটাল, তারপর ওর বিরুদ্ধে কেস-টেস যা করার করা যাবে।
      - সে কি! এটা কি করে সম্ভব! বড়বাবু রীতিমত বিস্মিত হয়ে বললেন - খেঁপেছেন স্যার! 
এখন যদি কোন কেস না করেন, সেনবাবু যদি হাসপাতালে মারা যান, কি হবে ভেবে দেখেছেন?
আমাদের কি হালটা হবে? প্রেস মিডিয়া তো ছিড়ে খাবেই, ওর বাড়ির লোকেরাও ছেড়ে কথা বলবে না। বাংলাদের বিরুদ্ধে কোর্টে গিয়ে মামলা ঠুকে দেবে। কোন কেফিয়াত বা উত্তর দেওয়ার মতো কিছুই কিন্তু আমাদের কিছু থাকবে না।
      - অত টিমিড হলে মশাই থানা-ফাঁড়িতে চাকরি করা যায় না। গাড়িতে উঠে বললেন- আপনি আপনি যা ভাল বোঝেন, সেটাই করুন ।
      সাহেবরা চলে যাওয়ার পরে বড়বাবু দিবাকর বাবু এবং তার বন্ধুর উদ্দেশ্যে বলেন- আপনাদের আর ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না। কিন্তু, আমি খুব দুঃখিত যে, আপনাদের কাজটা করে দিতে পারলাম না। আপনাদের হাতে মাল গুলো সব বুঝিয়ে দিতে পারলে আমার যেমন ভালো লাগতো, তেমনি আপনাদেরও আর ঝামেলা থাকতো না।
      - আবার কিসের ঝামেলা?
      দিবাকর বাবু একে শকে জর্জরিত, তার উপরে ব্যবসায়ী মানুষ, ঝামেলার কথা শুন, হাতজোড় করে বলে উঠলেন- প্লিজ বড়বাবু, আমাকে আর কোন ঝামেলায় ফেলবেন না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে, এখানে মানে কলকাতায় আর আমার থাকার একমহূর্তও ইচ্ছে নেই। সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে কাশি কিংবা হরিদ্বারে চলে যাব। যা করতে হয় আজি আমাকে দিয়ে করিয়ে নিন।
      - তাই হয় নাকি? বন্ধুর অঞ্জন দত্ত দিবাকর বাবু কে থামিয়ে বলে ওঠেন- থাম তো তুই। সবকিছুর একটা আইন হোম সিস্টেম তো আছে। এনারা তো আর সেসব আয়নার সিস্টেমের বাইরে যেতে পারবেন না।
      বড় জগদানন্দ মুখার্জি এই সুযোগে দিবাকর বাবুকে সোনার বালা হাপিসের ব্যাপারে একটা অভিযোগ লিখে দেওয়ার কথা বলে কাগজ এবং কোন ওনার দিকে এগিয়ে ধরলেন।
      - অভিযোগ! কেন? 
      ওর বন্ধু রঞ্জন দত্ত ব্যাপারটাকে সমর্থন করে বলেন- ইয়েস। একটা অভিযোগ তো তোকে দিতেই হবে। না হলে, এনারা ওই মালবাবু সুদাম সেনের বিরুদ্ধে আইনত একশন নেবেন কিভাবে?
ব্যাপারটা তো তোকে বুঝতে হবে। এটা একটা ক্রিমিনাল ব্রিচ অফ ট্রাস্ট রেড উইথ ক্রিমিনাল মিস-অ্যাপ্রপ্রিয়েশন কেস। সাজা অবধারিত।
      দিবাকর বাবু হা করে বন্ধুর বক্তব্য শুনছিলেন।
      - ঠিক বলছেন উনি। বড়বাবু বলেন- মাল বাবু অসুস্থ হয়ে না পড়লে তো সব ঝামেলা আজই মিটে যেত। সেটা যখন হলোনা, তখন সাহেবদের কথামত অন্তত আপনার অভিযোগটা নিয়ে কেসটা আজ রুজু করে রাখি। পরে ও ফিরে আসলে, আপনাদের দিকে মালগুলো ফেরাবার ব্যবস্থা করে দেব।
      - ওসব অভিযোগ আমি করতে পারবোনা। দিবাকর বাবু গম্ভীর স্বরে বলেন - একচুয়ালি, আমি এসব করার জন্য আসিনি। এসেছিলাম, শুধুমাত্র মা, বউ এবং শলিকার স্মৃতি হিসাবে মাল গুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সত্যি কথা বলতে কি, এই মুহূর্তে ওইসব সোনার বালা চুরি গলার নেকলেস আমার কাছে মূল্যহীন। এখন কেন যেন মনে হচ্ছে আমি নিজেই এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী। ব্যবসার কাজে ব্যস্ত না হয়ে সেদিন যদি আমি ওদের সাথে এই সফরে বেরিয়ে পড়তাম, তাহলে আমারও তো আজ ওদের মতই হতো। তখন খেয়ে নিতে আসছে এই সব? সব অভিযোগ তভিযোগ আমার দ্বারা হবে না।
      - কিন্তু...
      বড়বাবু এবং ওর বন্ধু রঞ্জন দত্ত কিছু বলতে চাইছিলেন, কিন্তু দিবাকর বাবু নিজের মত বলে চলেন - লোকটা বাঁচবে কি মরবে, কে জানে! বাঁচলেও, সে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারবে কিনা, কে জানে? না, এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। ফালতু! দিবাকর রায়চৌধুরী বন্ধু রঞ্জন দত্তের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন - এসব যত গন্ডগোল এর মূলে হোলি তুই। তুই না নিয়ে এলে, আমি তো আর এখানে আসতাম না।
আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এখানে আসতে বাধ্য করলি। যাকগে, আমি ওসব কোন অভিযোগ দিতে পারব না। উল্টো, আমি লিখে দিয়ে যাচ্ছি - সব মাল বুঝে পেয়েছি। আমার কোন অভিযোগ নেই। প্লিজ, আমাকে রেহাই দিন। (চলবে...)

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক