শনিবার ২৪শে শ্রাবণ ১৪২৭, ৮ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
তন্ময় পালধী
সুভাষিণী
অনেকদিন পর
হঠাৎ বসন্ত বাতাস ছুঁয়ে দিলো,
সঙ্গোপনে রাখা মাধুর্য। আর মুহূর্তে
একটু একটু করে ভেঙে পড়ল
আমার বড়াই করা আদর্শের ভিত।
সুভাষিণী, তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল-
অনেক অনেক রঙিন সকাল,
হঠাৎ পরশ লাগে যার চকিত ছোঁয়ায়।
হতে পারে শরীরি অস্তিত্ব নেই তার।
হতে পারে মায়া বিভ্রম-
অথবা দিগন্তজোড়া শুধু ভালোবাসা হতে পারে
হতে পারে।
আমি ভালোবাসি এই ভোর সকাল দুপুর রাত,
সেই কবে বকুলের গন্ধমাখা দিনে নিবিড় শান্তির
ক্ষণ আসে।
আর সোঁদা মাটির মনমাতানো ঘ্রাণে
ভরপুর জীবন
জীবনের উষ্ণ অনুরাগে ভালবাসতে চায়।
সেই অকপট তোমার আঙিনা জুড়ে
রাজা আমি,
অধীশ্বর তোমার রাজ্যের,
না থাকুক অর্থ ছাই,
ভালবাসা আছে, আমি ভালোবাসি।
এখনো বসন্ত বাতাস নিয়মে আসে
কত কত নতুন আখ্যান-
শূন্য মন, ভিখারীর ডালি নিয়ে আজও বসে আছি
সুভাষিণী, আমি ক্লান্ত প্রাণ তবু ভালবাসি।
অজয় রতন বড়ুয়া
উপলব্ধি
স্বপ্নে গড়া বাবুই পাখির ঘর
এখানে প্রশস্ত বারান্দা নেই
ছাদ নেই, ছাদ বাগান নেই, তাই
মনের বাগান নিত্য ফুলে সাজাই
ছন্দ তোলা ভোরের পাখির সুরেই
স্বপ্ন আঁকি নতুন কিছুর দিনভর,
রোদের ছোঁয়া পৌঁছে না অন্দরে
জ্বালিয়ে প্রদীপ আপন অন্তরে
নির্মোহ হই, তৃষ্ণা করে ক্ষয়
এটুকু বুঝেছি, দেখছি যা দুচোখ ভরে
সব ক্ষণিকের কিছুই আমার নয়
একাই আসা একাই যেতে হয়।
সাজ্জাদ সাঈফ
করোনা সিরিজঃ সাডেন ডেথ
হীরক-রোদের উত্তরে এসে পাবো
মাটিমাখা ভাষার গোধূলি, সে আমি নিজেই ভাবিনি!
নিচে ছায়া মেলে দুলছে পাতারা, গাছে-
এ’ই ধানী গন্ধের বনে ঈর্ষাকে ঘোড়ায় বসাই
এ’ই দাবার ছকে এসে, দূর্যোগ-মহামারী, পাঠায় ইশারা;
অনেকটা হেঁটে এসে পা রাখি দ্বিধাচিহ্নে। এইদিকে মৃত্যুও ভ্রাতৃপ্রেমী;
ফুসফুস ভরে আছে আত্মঘাতে, বিধুর আয়াতে ভারি!
আর হে বিপন্নতা, কিন্নরী রাত্রির শেষে, চোখে চোখে
অনিদ্রা রপ্ত হলো। এতে কার অন্তর্ধান, তোমাকে প্রসন্ন করে?
পৃথিবীকে প্রতিহত করে, এ কেমন সাডেন ডেথের ট্যাবু?
ভীন্ন ভীন্ন গোধূলির কাছে স্বরলিপি গচ্ছিত রেখে
ছোপ-দাগা হরিণীরা চায়, নিজ নিজ কান্নাকে ফিরে!
এই বাঁক থেকে তোমার নিজস্ব গান, চাঁদলাগা হাওয়ার আঘাতে
ফিরে যাচ্ছে ইছামতী, বুকে নাও তাকে।
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
কবে শান্ত হবে
হঠাৎ যেন অশান্ত হয়ে ওঠেছে পৃথিবী
ভেঙ্গে পড়েছে সব মানবিক স্তম্ভ,
অণুসম ভাইরাসের পৃষ্ঠে চারিধার যেন বিরান ভ‚মি।
মহামারী করোনা দুর্যোগ-দূর্ভোগে কাবু মানুষ,
দেশে দেশে মৃত্যুর মিছিল
ভয়াবহ বন্যায় থমকে গেছে আমার দেশের সবকিছুই।
ক্রান্তিকালে ক্লান্তিহীন ছুটে চলা জনপদের মানুষগুলো
হয়েছে আজি ঘরবন্দি,
কর্মহীনরা ক্ষুধার তাড়নায়
নীরবে কতইনা অশ্রু ঝড়াতে দেখেছি।
হায় কী নিদারুণ কষ্ট মানুষের!
চারিদিকে ঘরবন্দি-জলবন্দীদের আর্তনাদ-আহাজারি,
কানপেতে শুনেছি অনেকের উনুনে বসেনি হাড়ি।
এ যেন দুঃসহ এক কঠিন সময়,
ভালো নেই আজ শহর নগর, জনপদের বিস্তীর্ণ ভ‚মি।
এক মুঠো ভাতের জন্য কত জনে দিকবেদিক ছুটেছে,
মহামারীতে মরতে চায়!
তবুও দেবেনা কেউ ক্ষুধার রাজ্যে পাড়ি।
কবে দুরীভ‚ত হবে এই ক্রান্তিকাল,
কবে শান্ত হবে পৃথিবী!
বঙ্গ রাখাল
শূন্যতা
সবকিছু পেছনে ফেলে হেঁটে চলি-
ন্যাড়া সড়ক। পাখিদের মুক্ত আকাশ
ঘুঘুডাকা ভোর। ভাঙা নদী...
ছিন্ন হৃদয়ে নিদ্রাহরণ-অস্পষ্টতার স্বরলিপি
এখানে খাল ছিল
এখন খাল নেয়-তার বুকে উঠেছে সড়ক
অসমাপ্ত খালের অপমৃত্যুর কাল শুরু হলে-
বৃদ্ধাদের স্তনের মত শুকিয়ে যায় নদী
আর
প্রাণহীন সব জীবের ফসিল বেদনায় ভাঙে-
উজান গাঙের নাও।
পার্থ দেব নাথ
সম্পর্ক
সম্পর্কে মাঝে এনো না ইগুকে
যেটা পড়েনা তোমার মনুষ্যত্ব
সমুদ্রতটে তুমি বিষণ্ন একা
তখনি বুঝবে সম্পর্কে বিশালতা
ইগুচক্রে তুমি হবে যখন যুক্ত
বুঝবে অবহেলা সে কি যন্ত্রণা
বিবেক দ্বারাই যখন আছন্ন
হৃদয়ে আবেক করিওনা লুপ্ত
সম্পর্কের মূল নয়ত বিবেক
বিবেক আবেগ সম্পর্কে বিশেষ।
তপন রায়
প্রেম অন্তর
তোমার চোখে পাঠিয়েছিলাম
বিকেলের ঘরে বেরিয়ে আসার কথা
হ্যাঁ উত্তর- তোমার নামানো চোখের পালক
কীটধরা ছেঁড়া পাতা দেখে
একমুহূর্তও থাকলো না মন বিকেলঘরে
সামনে মাঠের ঘাস একদৃষ্টিতে আক‚ল আহ্বানে ছিল তাকিয়ে
কানে এল- এসো, এসো
রেখেছি পেতে সুন্দর আসন
সোফাসেট নাইবা হলো
প্রেম অন্তর প্রেমকে ভালবাসে মেঘদূত সমর্থনে
খুশী করতে পারলে অঢেল খুশী
বসলাম দুজনে
মাঠের নরম ঘাসে বেজে উঠে মিলনের এস্রাজ সুর
আমাদের লজ্জা সরে যায়
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
তিন
- ভেতরে আসতে পারি ?
পাঁচেক পরের ঘটনা। বড়বাবু জগদানন্দ মুখার্জি থানা চেম্বারে বসে নিজের মনে কাজ করছিলেন। হঠাৎ দরজায় আগন্তুকের গলার আওয়াজ শুনে, চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেন - দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে। খুব চেনা চেনা!
- আমি কলকাতার সিংহী পার্কের ...
আর বলতে হয়নি। বড়বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন - আরে! আসুন। আসুন।
এক্সিডেন্ট কেসের সিজ করা মালগুলো ফেরত নেয়ার জন্য রায়চৌধুরী পরিবারের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি দিবাকর রায়চৌধুরী এবং তার বন্ধু কলকাতা পুলিশের একজন অফিসার - রঞ্জন দত্তকে সঙ্গে নিয়ে থানায় এসেছিলেন । হাতে ডায়মন্ডহারবার আদালতের মাল ফেরত দেওয়ার অর্ডার। আসার সময় ওরা যে জেলার বড় সাহেবকে ব্যাপারটা জানিয়ে এসেছ , সেটা বোঝা গেল ওরা এসে থানায় পৌঁছাবার মিনিট দশেক পরে। বড় সাহেব ফোন করে জানালেন - কোনরকম হারাস না করে মালগুলো যেন ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।
বড়বাবু জগদানন্দ মুখার্জি ডিপার্টমেন্টে ঘষে ওঠা দারোগা। একে আদালতের অর্ডার তার উপরে বড়সাহেবের ফোন, এত টুকু সময় না নিয়ে হাঁক দিয়ে মাল বাবু সুদাম সেনকে ডেকে বলে ছিলেন মাল গুলো সব উনাদের বুঝিয়ে দিতে।
বিপত্তিটা বাধলো এখানেই।
সোনার জিনিস গুলো বুঝাতে গিয়ে দেখা গেল তিন জোড়া সোনার সলিড বালার মধ্যে তিনটে বালা নেই। মাত্র তিনটে ব্যাগটার ভেতরে পড়ে আছে!
- কি ব্যাপার!
মাল বাবুর চোখে-মুখে বিস্ময় আর আতঙ্কের কালোছায়া ক্রমশ দীর্ঘতর হতে শুরু করেছে। সুমনের ব্যাগটাকে উল্টো করে যাচ্ছেন আর বারবার ফেসবুকে খুঁজে চলেছেন। কিন্তু , কথাও কিছু নেই।
মুহূর্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠল। প্রচণ্ড ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল। অপ্রস্তুত বড়বাবুর গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন,
- মালবাবু! কি ব্যাপার?
- বালা তিনটে কোথায় গেল ? অন্য কোথাও রেখেছেন কি? মনে করতে পারছেন না?
- তা হবে কেন স্যার? মালবাবু আতঙ্কিত গলায় বলেন - সবগুলো বালাই তো ওই ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর রাখা ছিল! আপনারা যেমনটা আমার কাছে দিয়েছিলেন, আমি তেমনটাই মালখানার সিন্দুকে ঢুকিয়ে রেখেছি। এই তিনদিন তো আমি এখানেই ছিলাম না। আপনাকে বলে সিক করে বাড়িতে গিয়েছিলাম। মালগুলোর নড়চড় হওয়ার তো কোনো কারণ তো আমি দেখছি না স্যার।
- হোয়াট! বড়বাবু হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন - আপনি কি বলতে চাইছেন? আমি আপনাকে ওই তিনটে বলা কম দিয়েছিলাম? নাউ আই এম টেলিং লাই? আমাকে এনাদের সামনে মিথ্যাবাদী সাজাতে চাইছেন? অদ্ভুত মানুষ তো আপনি? আই মাস্ট নট স্পেয়ার ইউ!
অনেকক্ষণ একটানা চেঁচিয়ে কথা বলার কারণে ভদ্রলোক ঘন ঘন নিঃশ্বাস টানতে শুরু করায়, দিবাকর বাবুর সঙ্গে যিনি এসেছিলেন এগিয়ে গিয়ে ওনাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললেন,
-এই ব্যাপারটা জন্য এত এক্সাইটেড হবেন না। আপনার বয়স হয়েছে। বসুন। আমিও একজন পুলিশ আধিকারিক। এই ধরনের বহু কেস আমরা দেখেছি। জানি- কি হয়েছে ? আমরা ব্যাপারটা দেখছি।
অপমান আর লজ্জায় বড়বাবুর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। (চলবে...)
Good work
ReplyDeletethank you so much
Delete