বৃহস্পতিবার ২২শে শ্রাবণ ১৪২৭, ৬ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
শুভা গাঙ্গুলি
ভূমিকম্পের পর
সময়টা মধ্যযামিনী, দুই প্রহর কি তিন প্রহর
আকাশে কমলা রঙের চাঁদ
জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর
ঘুমিয়ে গেছে ফুটপাতবাসী
পরিশ্রমের ঘুম
উঁচুবাড়ীর শীতল ঠাণ্ডা মেশিনে
ওষুধ গিলেও ঘুম নেই
মধ্যবিত্তের ঘরে ইঁদুরের উৎপাত অনেক বেশি
নিষিদ্ধ পল্লীতে চোরাই এর কারবার
অর্ধনগ্ন মাঝবয়সীর ঘরে খদ্দের
পুরোনো বস্তির ছেনোবুড়ো
প্রথম শিহরণ টা টের পেলেও
কেউ তেমন গা করেনি,
তারপর পর পর দুবার
এবার ঝাঁকুনিটা মন্দ নয়,
রাতজাগা কম করে ছ’সাতবার
ল্যাং খাওয়া ব্যর্থ প্রেমিক
মাঝরাতে প্রেমের কবিতা লিখছিলো
কার্নিশ ভেঙে পড়ে যেতে খেয়াল হলো
রাস্তায় তখন ভীড়
নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ছে
এক একটা তলা পড়ছে
বিকট আওয়াজ আর ধুলো
‘মাল’ খারাপ ছিলো
মধ্যবয়সীর খদ্দের মদ্যপানে
বাহ্যজ্ঞান লুপ্তপ্রায়
হঠাৎ খেয়াল হলো, এতো নড়ছিস কেনো কুসুম
ধনী দরিদ্র সব একটা ফাঁকা খেলার মাঠে
আতঙ্কিত মুখ
দরিদ্রের ভাঙা কুঁড়ে
আর নতুন করে কি ভাঙবে
মধ্যরাত্রিযাম
খোলা আকাশ
আবার জ্যোৎস্না ঝলমল করছে
কেউ ফেরেনি ঘরে
দেদার আলোচনা, রিক্টার স্কেলে কত ছিলো
ঠিক কম্পন?
মানে পৃথিবীর কম্পন
হৃৎপিণ্ডের চেয়ে বেশি ছিলো কি?
চারুলতা শশী
বিসর্জনের সুর
সারাদিন উত্তাপ বিলিয়ে সাঁঝবেলাতে সূর্য যখন
নীরবে আপন আলয়ে ফিরে যায় পশ্চিমের পথে,
আমি তখন সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে
খিড়কি খুলে আকাশ মেলে বসি।
চোখ নামাই নিচের রাস্তায়, কর্মব্যস্ততার পরে
সকল নর নারী ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়
তাদের চেনা পথ ধরে, ঠিক সেই গোধূলি লগনে
আমার বুকের মাঝে বিসর্জনের সুর বেজে ওঠে।
সে বিসর্জনের সুরে শান্ত মন ধীরে ধীরে
অশান্ত হয়ে ওঠে। কেন? এমনটা কেন?
তবে কি সবার ফেলে যাওয়া পথের শুণ্যতায় মন কাঁদে? তবে আমি কি বিসর্জনে ভীত?
নাহ! এমন তো হবার কথা নয়।
যে মানবী তার সমস্ত সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে,
ফেলে আসা পথকে বুকের রক্ত দিয়ে রাঙিয়ে এসেছে, তার তো বিসর্জনে কার্পণ্যতা থাকার কথা নয়!
মৌতৃষা
স্বীকৃতি দিও পরজন্মে
তোমায় দেখেছিলাম মহাপ্রলয়ে,
সাগর পারে।
শামুক ভরা তীরে,
শুষ্ক বালুচরে আছড়ে পড়া উদ্ভ্রান্ত ফেনিল জলোচ্ছ¡াসে।
বনস্পতির ছায়ায় অলস দুপুরে,
আরণ্যকের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে।
কল্পনারাজ্যে হীরকচূর্ণ সোহাগ সমেত স্পর্শে-
ফসকে গেছো অলীক মরিচীকার মতো।
খবর রাখো?
এ জন্মের কতো খুচরো আদর পড়ে রয়েছে প্রেমিকার চৌকাঠে,
দীর্ঘদিনের অসম্পূর্ণ পূজোতে।
অবশ্য তোমার তাতে বয়েই গেছে।
আরও চৌদ্দ বছর পর দোল পূর্ণিমায়,
তোমার মুঠোয় লাল আবির হবো।
তাচ্ছিল্যের সাথে ছড়িয়ে দিয়েছো প্রতিবার মাতাল মিছিলে।
এ জন্মে তোমার রাধিকা হবার স্বাদ মিটিয়ে দিও,
আলোড়ন তোলা রাজকীয় অভিষেকের সাথে,
যদি আবার দেখা হয়... স্বীকৃতি দিও পরজন্মে।।
মারজ্বানূল বাহার শিউলী
তৃষ্ণার্ত জলধি
আনমনে সমুদ্র সৈকতে গোধূলী লগ্নে
আবেগী মনের কাব্যরসের সুরাহি
যেনো উপচে পড়ছে বিশাল জলধির বুকে
অভিমানী অভিলাষে ছন্দিত-অনুপ্রাসের
মঞ্জুরীত নান্দনিকতায় জীবনের অলিখিত
পদাবলীর নিঃশব্দোচ্চারণে...
একান্ত ভাবনার বিষণ্ন-বিলাসী উঠোনে দাঁড়িয়ে,
খোলা আকাশের বিশালতায় অনুপম অনুভ‚তিগুলো যেনো ফেনিল সফেদ
ঊর্মীলতার মূহুর্মূহু সৈকতের বালিআড়ি বুকে আছড়ে পড়া বিবশ হৃদয়-বিদারী আহাজারীর অনিমেষ আলিঙন....!
সাগরের রাশি রাশি জলতরঙ্গের সাথে এ যেনো
উচ্ছ¡সিত হৃদয়ের বিরহী সহবাসের বিচ্ছিন্ন পুষ্পমাল্যের
অনাদরে লুটিয়ে পড়া অস্তমিত সূর্যের বুকে রক্তিম অনুরাগে...!
কাজী আতীক
রহস্য প্রাচীরের ভেতর
তুমি যখোন আয়নার সম্মুখে দাঁড়াও
প্রসাধন এবং পরিধেয় সব ঠিক আছে কি না দেখে নিতে পারো
বহিরাবরণ মুগ্ধ ছোঁয়া নিপুণ এঁকেছো যেমন,
বুকের ভেতরটা কি দেখতে পাও তখোন?
যেখানে রহস্য প্রাচীর ঘেরা অন্তর আবাসন,
সুরম্য শোভন নাকি উদ্যত অভিলাষ কেবল?
শুনেছি মানুষের আসল সৌন্দর্যটা নাকি সেখানেই থাকার কথা,
অথচ কেউ জানতে চায়না সেসব, যেমন দেখতে পায়না মন।
তুমি কি ওভাবে ভেবে দেখেছো কখনো?
জানতে কি চেয়েছো কতোটা শোভন তোমার ভেতরের আবরণ?
সেখানে যদি মরিচার মতো কিছু অথবা শেওলা জমে জমে
কদাকার রূপান্তর ঘটে ওখানে কুটিল চক্রগুলো ভারী হয়ে থাকে
তবুও কি নিজেকে মানুষ ভাবতে তোমার বাঁধবে না এতোটুকু?
তুমি যখোন আয়নার সম্মুখে দাঁড়াও,
প্রসাধন পরিধেয় এসবের পাশাপাশি একটু নাহয় চেষ্টা করে দেখো
দাঁড়াতে পারো কিনা নিজের মুখোমুখি একবার?
কেবল নিজের মুখোমুখি, শুধু একবার,
বুকের ভেতরটা যদি দেখতে পাও তখোন?
যেখানে রহস্য প্রাচীর ঘেরা তোমার অন্তর আবাসন!
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
এক
-স্টার্ট এ কেস এন্ড পুট হিম ইন দ্যা লক-আপ।
সাহেবের নির্দেশ শুনা মাত্রই থানার মাল বাবু সুদাম সেন বলির পাঁঠার মত কাঁপতে কাঁপতে ধপাস করে বড়বাবুর চেম্বারের মেঝেতে পড়ে গেলেন ।
- কি হলো ! ধরে তুলুন ওকে ।
উপস্থিত যারা ঘরে বসেছিলেন, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মনে মনে প্রমোদ গোনা শুরু করলেন। বড়বাবু জগদানন্দ মুখার্জি ভাবগতিক ভালো না বুঝতে পেরে হেড়ে গলায় চিৎকার করে বলতে লাগলেন,
- আরে! কে কোথায় আছো? শিগগিরই এদিকে এসো। মালবাবু পড়ে গেছে। ওকে ধওে তোল। ডাক্তার ডাকো। হাসপাতালে পাঠাতে হবে কিনা, দেখো। ...এখন ঝামেলায় পড়লাম!
থানার বড়বাবু চেম্বারেই ব্যাপারটার প্রাথমিক এনকোয়ারিটা চলছিল। হাজির ছিলেন মূল অভিযোগকারী এবং তার সাথে আসা একজন ব্যক্তি, সি আই সাহেব এবং এসডিপিও সাহেব। অভিযোগ - থানার মালখানা থেকে একটা মোটর একসিডেন্ট কেসে সিজ করা আলামত এক জোড়া সোনার বালা উধাও হয়ে গেছে!
- সাংঘাতিক ব্যাপার!
আলামত খুব বেশি দিনের পুরাতন নয় যে, বলা যাবে হারিয়ে গিয়েছে। কিংবা এমন কোন খাবার জিনিস নয় যে বলা যাবে - ইঁদুর কিংবা বাদুড়ে খেয়ে ফেলেছে! মাত্র দিন পাঁচেক আগের ঘটনা । ঘটনাস্থল থেকে মালগুলো শেষ করে মাল বাবুকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, থানায় নিয়ে গিয়ে মাল থানায় জমা করার জন্য। সেগুলোই নেই। মালখানা থেকে উধাও হয়ে গেছে!
একটা সেন্সেশনাল অ্যাক্সিডেন্ট কেসের সিজ করা আলামত ওগুলো। ড্রাইভার সহ একটা পরিবারের ছয় ছটা মানুষ কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। মৃতরা সবাই যে কলকাতার বনেদি পরিবারের লোক, সেটা ওদের পোশাক-পরিচ্ছদ, সোনার অলংকারাদি এবং রূপোর জমিদারী মেজাজের চাবির গোছা, দেখেই বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি। কলকাতা থেকে নিজেদের প্রাইভেট গাড়িতে ডায়মন্ড হারবারের দিকে বেড়াতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বাঁকির মোড়ের কাছে উল্টো দিক থেকে আসা একটা প্রাইভেট রুটের বাসের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লেগে ওদের সকলের প্রাণ হারাতে হয়েছে।
খবর পেয়ে সি আই সাহেব ডায়মন্ড হারবার থেকে ছুটে চলে এসেছিলেন। এসডিপিও সাহেব নির্দেশ পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন,
- বড় সাহেব জানিয়েছেন ডেড বডির পোস্ট-মর্টেমগুলো আজকে করানোর ব্যবস্থা করা হয়। বাড়ির লোকজন রওনা হয়ে ডায়মন্ড হারবারে যাচ্ছেন। ওদের হাতে যেন ডেড বডিগুলো দিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হয়।
দেরি না করে বড়বাবু জগদানন্দ মুখার্জি মেজ বাবু শেখর মিত্র, মাল বাবু সুদাম সেন এবং দুজন ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছে রওনা হয়েছিলেন। ঘটনাস্থলেই সি আই সাহেব মালবাবু সুদাম সেনের কাছে গিয়ে বলেছিলেন,
- শুনুন মশাই? এইসব শেষ করা মাল গুলো ভালো করে বুঝে নিজের হেফাজতে নিন। আমি ডায়মন্ড হারবার থানার ওসি কে বলে দিয়েছি ক্রেন পাঠাবার জন্য।
- ওটা এলে আপনি এই বাস এবং প্রাইভেট কারটা নিয়ে সোজা থানায় চলে যাবেন। (চলবে...)
কিভাবে লেখা পাঠাব?
ReplyDeleteabujaforsaikot@gmail.com এই মেইলে সুটুনি এমজি ফন্টে বা মেইল বডিতে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ
Delete