শুক্রবার ৬ই ভাদ্র ১৪২৭, ২১ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
মোহাম্মদ আবদুর রহমান
স্বপ্ন
আমার সকল স্বপ্ন গুলিকে তালা বন্দি রেখেছি
আর শুধু তোমার সব স্বপ্ন গুলিকে আপন করে নিয়েছি।
তাই তোমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য
সংসারের উপত্যকায় চলেছি দুরন্ত গতিতে।
অনেক অচেনা ঝড় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাই
সকল চেনা সুখ গুলি আসতে আসতে লুকিয়ে গেছে জানি না কোথায়?
দুঃখ গুলি নাচতে নাচতে ঘিরে ফেলেছে হৃদয় ভুবন
তবুও কোন দিন বুঝতে দিনি
তবে তুমি শুধু আমার ব্যর্থতা গুলি খুঁজে পাও।
ব্যর্থতার জন্য যদিও আমি দায়ী নয়
ঠিকই করেছি পরিশ্রম
কিন্তু সফলতা আমাকে করেছে তাচ্ছিল।
তোমাকে ভাবা উচিৎ
আমার সকল স্বপ্ন গুলি কঙ্কালময় হয়ে গেছে যত্নের অভাবে
তারা রোজ রাতে আমার পা ধরে কাঁদে
একটু খাদ্যের জন্য ।
কিন্তু তোমার দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে শুনি তাদের কথা আর চোখ দিয়ে ঝরে ব্যার্থতার জল।
জানিনা কবে তা তুমি বুঝবে
সেই দিনের অপেক্ষায় কেটে যায় রাত।
এম,এম বাহাউদ্দীন
লুকিয়ে গেছি
মনের বনে পোকা লেগে খেয়ে গেছে সব ফুলের পাপড়ি,
তাই রিক্ত হাতে তোমার কাছে আর আসতে পারিনা।
লজ্জায় মুখ লুকিয়েছি ডাস্টবিনে ফেলা ফুলের মত।
তোমার আমার দেখা হওয়া ফেসবুকের রাস্তা ছেড়েছি,
বদলে ফেলেছি চলার পথ, যাতে দেখা না হয় কখনও।
এই জুকারবার্গীয় লেনে কত জনই আসে, চলে যায়,
দেখেছি আমি এক কালের স্বাক্ষী, ভাবতাম কেন?
আজ নিজের পথ বদলে নিয়ে বুঝেছি, আমিই ভুল,
ক্ষমা করো তুমি, আর খুজোনা আমায় এ পথে।
হাঁটতে হাঁটতে দেখা হবে আবার নতুন কোন বন্ধুর সাথে,
আলাপ চারিতায় হয়তো দু’একদিন প্রসঙ্গ হবো আমি,
তারপর ইতিহাসের মত করে মনের সেল্ফে ফেলে রেখো
ধুলো পড়ে চাঁপা পড়ে যাবো আমি একদিন এই পথে।
তবু ফুল হাতে আর ভুল করে দাঁড়াবোনা পথের বাকে।
তন্ময় পালধী
সম্পর্কের চাবি
সম্পর্কের সুরবাহারে সবকটি তান
মিলেমিশে গেলে
তার জাদুতে মুগ্ধতার আবহমানতা
সেই প্রবাহিত শব্দস্রোতে
একে একে জড়ো হয় হাসি কান্না মিলন বিরহ।
ধরে নাও সম্পর্ক একটা তালা
তোমার হাতের চাবিগোছা দিয়ে
পরীক্ষার মঞ্চে অবতীর্ণ হলে
মাত্রাজ্ঞানে খুলে যেতে পারে দিগন্ত।
আর আনাড়ির মত
একবগ্গা হলে
দুঃখের রাত গভীরতর হতে থাকে।
এখন চাবি তোমার
যদি তুমি ষড়জ নিষাদের তফাত না বোঝ
কোমল শুদ্ধে খাপছাড়া হয়ে
হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ভেঙে ফেলতে চাও
তালা হয়ত খুলে যেতে পারে
কিন্তু সে আঘাতের প্রাবল্যে
সপ্তক বেসুরো হয়ে যাবে
সম্পর্কগুলোও ক্লিশে হয়ে যাবে।
মজনু মিয়া
ক্ষণিকের পথ চলা
মানচিত্রে বিশ্বের দেশের নাম আঁকা সীমা থাকে
অফুরন্ত সময়ের কোনো সীমারেখা নাই
কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে কত নাম সুনাম।
জলছবি হয়ে চোখের কোণে আটকে আছে
নোনা জলছাপ।
রুপান্তর হয় যুগ যুগান্তরের বদল হয় চলার পথ,
ক্ষণিকের পথ চলা জীবন আয়ু দিয়ে সীমাবদ্ধ।
তবুও চলছে মানুষ পৃথিবীর পথে ঘাটে
কারো শেষ হয় আবার কারো হয় শুরু।
আশিক আকবর
নতুন ধারার কবিতা
এক
একজন ডিসির ফেইস বুক প্রোফাইল দেখলাম
অশ্লীল লাগলো
বমি আসলো
এতো এতো উপচে পড়া মাংস আর পোষাকের উৎসব
ছিঃ
মনের গরীব কামলাটির জন্য আমার মায়া লাগলো
দুই
একজন কলেজের পিনসিপাল
আমাদের ঘন্টা তিনেক সময় খাইলো
গেজাইলো
খাওয়াইলো চা সিঙ্গারা
আমরা তার কাছে গেছিলাম
অতিথি কবিদের এক বেলা ভাতের জোগারে
তিনি আমাদের বিদায়ের কালে ব্যাগ ভরে বিবমিষা দিলেন
যা এখন স্মৃতির উজ্জল ছাই
এখানে আমরা শ্রেণী অবস্থান
ও ক্ষমতার লেজুর কে সুচিহ্নিত দেখে ছিলাম
তিন
ডাকসাইটে বুদ্ধিজীবির বাসায় গেছিলাম
তার আঙ্গিনাতেই স্থাপিত তার ভাস্কর মূর্তি
ড্রয়িংয়ে তিনি এলেন
বললেন
তুমি যেন কে? আবার এলে ফোন করে এসো।
ততোক্ষণে ফ্রিজের শিরা লাগা মিষ্টি এসে গেছে।
তিনি বললেন, খাও।
এখন আমার বাথরুমে যাবার সময়।
ঐখানে আজকাল আমার অনেক বেশী টাইম লাগে।
মো.আরিফুল হাসান
আরেকটি জলকনার বুকে
আরেকটি জলকনার বুকে আশ্রয় নিই
ডুবাই কান্না
আমার চিন্তারা সব একঘরে হয়ে আছে
যেনো তামাকের ঘুম
সব কিছু ব্যতিব্যাস্ত
সবকিছু হতাশা সারাৎসার।
ধারাবাহিক গল্প
সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল
বিপুল রায়
এক
“যাবি তো? আমি কিন্তু ভাত খেয়েই বেরিয়ে পড়ব।” শঙ্কর দূরমনস্ক হয়ে বলল।
আজ ফাইনাল। সাবিত্রী শিল্ডের শেষ খেলা। জামদা ভার্সেস বাছুরডোবা। এর আগে কোনো খেলা মিস করিনি। আমি এবার জামদার সমর্থক। টিমটা গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছে। ওদের কানাই মান্ডি তো অনবদ্য। এত সুন্দর পায়ের কাজ, পাসিং, হেডিং। তাছাড়া ইমরান কম যায় না। ইমরানকে পরাস্ত করে গোল দেওয়া খুব দুরূহ। ছেলেটা বলকে চুম্বকের মতন বুকে ধরে নেয়।
ইস্কুলে মন বসল না। সহপাঠীদের মুখে আজকের ফাইনাল ম্যাচ। যারা বাজুরডোবায় থাকে তারা বাজুরডোবার সমর্থক আর যারা জামদায় থাকে তারা জামদার সমর্থক। আমি বাজুরডোবা বা জামদায় কোথাও থাকি না। কিন্তু জামদার দলটাকে কেন জানি না ভালো লাগে। জামদার কমলা রঙের জার্সি, নীল সর্টস, সবুজ মোজা দারুণ চোখ টানে। তুলনায় বাজুরডোবার হলুদ আর সবুজ জার্সি, কালো সর্টস, নীল মোজা ম্যারমেরে লাগে। তাছাড়া আমাদের ভ‚গোলের টিচার মৃগাঙ্ক স্যার বাছুরডোবার সমর্থক। মানুষটা খুব বদ। হিংসুটে। আমাকে ইচ্ছে করেই হেয় করে। কঠিন পড়া বেছে বেছে আমাকেই জিজ্ঞেস করে। স্যার আমার মতন ফুটবল মাঠে কিন্তু নিয়মিত। বাজুরডোবার ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। অবাক হয়ে আমি মৃগাঙ্ক স্যারকে বাজুরডোবা গোল দিলেই দু’হাত আকাশে তুলে মাঠে ঢুকে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে নাচতে দেখেছি।
আজ মৃগাঙ্ক স্যারের ক্লাস আছে। কিছুটা দেরী করেই তিনি এলেন ক্লাসে। আমি দ্বিতীয় বেঞ্চে বাম ধারে। তিনি এসে তাচ্ছিল্যের সাথে বিড়বিড় করলেন, কমলেশদা বলে কিনা জামদা আজ বাজুরডোবাকে তিন শুন্য গোলে হারাবে? এত সোজা! খেলার কি বোঝে কমলেশদা? কে একজন জামশেদপুর থেকে বালাজী না খালাজী আসবে, সেই নাকি খেলার ভোল পাল্টে দেবে! এত সোজা? আমাদের নিমাই, বিপিন, দেবু , জব্বর কি ছেড়ে দেবে নাকি? বাজুরডোবা আজ বরং চার শুন্য গোলে জিতবে।
বুঝলাম আজ টিচারদের কমন রুমে সাবিত্রী শিল্ড ফাইনাল নিয়েই তর্ক বিতর্ক চলছে। শহরের ফুটবল প্রেমিদের মুখে আজ শুধুই ফাইনাল ম্যাচ।
হঠাৎ মৃগাঙ্ক স্যার আমাকে বললেন, এই লম্বু, তোকে তো মাঠে দেখি। পড়াশুনায় অষ্টরম্ভা এদিকে খেলার মাঠে খুব দর্পাতে দেখি। তুই কোন দল? জামদা নাকি রে?
মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, স্যার। দলটা অল্প বয়সী খেলোয়াড় নিয়ে তৈরী। বোঝাপড়াটা খুব ভালো।
আবার শুনছি বালাজী বলে জামশেদপুর থেকে কোন একজন পাঞ্জাবী খেলোয়াড় হায়ার করে নিয়ে আসছে। জামদার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না বাজুরডোবা।
মুখটা লাল হয়ে গেল মৃগাঙ্ক স্যারের। কিছুক্ষণ আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। কমন রুমে তর্কে তিনি অঙ্কের টিচার কমলেশ স্যারের কাছে হারতে পারেন, কিন্তু ছাত্রের কাছে?
তিনি তার সমস্ত রাগ আমার উপর ঝাড়লেন।
কর্কশ স্বরে বিদ্রুপ করে বললেন, খুব খেলা বুঝিস। হায়ার প্লেয়ার একা কি করবে রে? নিমাইকে টপকে যেতে পারবে? নিমাই বাজুরডোবার চিনের পাঁচিল - বুঝলি। জামদা আজ নাকানি - চোবানি খাবে দেখে রাখিস। ইমরান গোল দেবে।
তারপর তিনি আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন, বল তো মিশরকে নীল নদের দান কে বলেছিলেন?
বাজুরডোবা জামদা সাবিত্রী কাপ ফাইনালের সাথে নীল নদীর সম্পর্ক ঠিক বুঝলাম না। মৃগাঙ্ক স্যার ভ‚গোল নেন। আর আজ মিশর চ্যাপ্টার নিয়েই পড়া। ভাগ্যিস উত্তরটা আমার জানা ছিল। গড়গড় করে মুখস্ত বললাম, নীলনদকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠেছে বলে ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলে অভিহিত করেছেন।
ক্লাস পিন ড্রপ সাইসেন্স। স্যার মুঠি পাকাচ্ছেন। আমাকে বাগে পেয়েও ধরতে পারলেন না। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment