রুদ্র সাহাদাৎ

রুদ্র  সাহাদাৎ 
প্রথম  মৃত্যুর পূর্বে আমাকে কেউই চিনতো না

প্রথম মৃত্যুর পূর্বে আমাকে কেউই চিনতো না 
তখোন গহিন অরন্যে আমি একাই ছিলেম তা- কিন্তু না
কতো ধর্মের কতো বর্ণের কতো জাতি ছিলো 
জাতিসংঘ সব জানে, শুধু মানুষের মন বোঝে না।
বেরসিক মানুষ সমাজের জঞ্জাল, 
ডাস্টবিনে পড়ে থাকা আবর্জনার মতন।
কি আশ্চর্য, এখনও  অনেকেই আমাকে চিনে না...


ভালোবাসা ভেঙে পড়ে মনের গহিন থেকে

ভালোবাসা ভেঙে পড়ে মনের গহিন থেকে
সবাই তো আর ভালোবাসা বুঝে না
সুখ খোঁজে, সুখী মানুষের ভিড়ে।
স্বার্থহীন নেই সময়, স্বার্থহীন নেই কোনোকথা
চব্বিশঘণ্টা স্বার্থ খোঁজা ক্লান্ত মুখ।
বুকের পাঁজর ভেঙে যায়, চোখে দেখা বাস্তবতায়
বিরহী সঙ্গীত বাজে ইউটিউব চ্যানেলে চ্যানেলে...

সংসার মানে মরিচীকা

চলতি পথে যেনো আটকে যাই ফাঁদে
পেছনে তীর ধনুক তলোয়ার আর বন্দুক তাক করা সৈনিক
ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ - সজাগ কান।

মানুষ যে যার মতোন সরে যাচ্ছে, আত্মরক্ষায় ছোটাছুটি
আদিগুহায় থেকেও শান্তি নেই, মাঝেমধ্যেই আপনেই মারে মরণটান
ক্রুশবিদ্ধ জীবন, পেরেকে পেরেকে রক্তাক্ত
অসহায় কিছু চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদে
নিঃস্তব্ধে আমৃত্যু

বোকা কিছুমুখ স্বার্থ খুঁজে জানে না
সংসার মানে মরিচীকা...


শুনছি গান প্রকৃতির 

হতাশার রাজ্যে ডুবে যাচ্ছি চৌদিক নিঃশ্চুপ
মাঝেমাঝে বাউণ্ডুলে বাতাস বয়ে যায়
 পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা সইতে পারবে না জেনে
সবাই গেছে চলে হোম কোয়ারেন্টাইনে।

আমিও সাময়িক সামাজিক দূরত্বে আছি
          কারো সাথেই তেমন হয় না দেখা
            মানুষ নিজে নিজে  সবাই একা।

সবুজ অরণ্যে মৈনাকপর্বতে শুয়ে শুয়ে
                         শুনছি গান প্রকৃতির।

********************

যদি

ঘুমহীন রাত্রিসমুহ দীর্ঘ লাগে অন্যদিনের তুলনায় 
একটা নির্ঘুম রাত্রি কেউ যদি কিনে নিতো
বেঁচে দিতাম বিনাপয়সায়।

শর্তহীন যদি কথা হতো, দেখা হতো ভালোবাসায়
একসমুদ্র পাড়ি দিতাম এক নিমিষেই। 

স্বার্থহীন যদি হতো মানুষ 
চোখ বন্ধ করেই বেঁচে দিতাম স্থাবর অস্থাবর সব
 বেঁচে দিতাম বিনাপয়সায়।

মাঝেমাঝে রিরংসা জাগে কেনো বুঝে উঠতে পারি না
আমার নভোমণ্ডল জুড়ে রঙিন ফানুসগুলি 
জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে পুড়ে রঙহীন অদৃশ্য হয়।

বালুচরে রোদ পুড়ে যায়

বালুচরে রোদ পুড়ে যায়
সাগরলতা গুছিয়ে নেয় সংসার 
ওরে নীল দরিয়া- গান শুনি বিরহী মাঝির কণ্ঠে 
ঝাউবন সুর তোলে গীতিকবিতার।

পর্যটক দ্যাখে অবাকচোখে নব উল্লাস
ডলফিন নাচে ঢেউয়ে ঢেউয়ে  জলে জলে। 

শামুক ঝিনুক হাসে জোয়ার ভাটার টানে। 

বালুচরে রোদ পুড়ে ছাই
কবির কানে দ্যাখি চোখ নাই।

শূন্যতায় ভেসে যাই

উদ্বাস্তু মানুষ হারাচ্ছি সবই
ঘর-বাড়ি, সংসার, সমাজ, প্রিয়জন
আকস্মিক জিততে জিততে হেরে যাই
শূন্যতায় ভেসে যাই, মধ্যবিত্ত জীবন।

বালুচরে চেয়ে দ্যাখি পুড়ে যায় রোদ্দুর 
নগ্ন পায়ে শামুক খোঁজে কিশোর বালক।
উল্টোপথে হাঁটার লোকই শুনি বিশ্বজয়ী 
বড়কর্তার ইশারা বোঝে না পুড়া চোখ।

উদ্বাস্তু মানুষ হারাচ্ছি সবই
বুঝি না পৃথিবীর লীলাখেলা 
হাঁটছি মাইলের পর মাইল, দৌঁড়াচ্ছি
শূন্য খাতায় শূন্যতা আঁকছি...


সাপলুডু

জিততে জিততে হেরে যাই
ধাপে ধাপে ধাক্কায় পড়ে যাই
রক্তাক্ত অন্তমিলহীন জীবন
ঘুমহীন
স্বপ্নহীন
আশাহীন
কথাহীন বেঁচে থাকা
হেরে যাওয়া বোধহীন মানুষ শোকার্ত হাওয়ায় ঘুরি
আকস্মিক ভালোবাসার ছোঁয়ায় হেঁটে যাই

বারেবারে কেনো যে,জিততে জিততে হেরে যাই
প্রভু সব জানে, সব দেখে

চার ছক্কার চক্করে মইহীন পা....

আমিও তালিকাভুক্ত

চৌদিক এতো এতো মৃত্যুর সংবাদ শুনছি
ক্ষণে ক্ষণে থামকে যাই চলতি পথে 
কখনো সখনো নিজেকেই চিনতে কষ্ট হয়

গল্পে গল্পে শুনতাম পৃথিবীর অসুখ হলে
 মানুষও রেহায় পায় না তেমন

উচ্চবিত্তের সুখের অসুখ
নিম্নবিত্তের ক্ষুধার অসুখ
আর মধ্যবিত্তের নৈঃশব্দ্যে কিছু বলতে না পারা 
 চাপা কষ্টের অসুখ।

মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, শুনছি আর দেখছি
কখনো রেড়িও, কখনো টেলিভিশনের পর্দায় 
মনে হচ্ছে আমিও তালিকাভুক্ত.....

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক