রহমান মুজিব

রহমান মুজিব



ক্ষুধার বঙ্কিম পথে হাঁটতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে মুক্তির সনদ


হাতুড়ির ঠাসঠুস কবিতা জড়িয়ে পড়ছে কাকসন্ধ্যার ফ্যাক্টরিতে

অনির্ধারিত শ্রম ঘন্টায় মার্কস্ হতে থিতিয়ে পড়ছে সমবন্টন

সূই-ছিদ্রের দাসত্বের জীবন হতে মুক্তির ফরমান কবে যে গ্যালাক্সি ধরে উড়ে গেছে   

দূর হতে দূরে, আলোকবর্ষে


অথচ এখনো ধূলি উড়া অতীত নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে স্মৃতি 

এই সন্ধ্যায় পাতার সম্ভ্রম কেটে বের হচ্ছে আলোর দীর্ঘ তলোয়ার

জোড়া চোখে বিঁধছে তার পুলক কিংবা-

বিঁধছে বাবার লাশের মতো উত্তর দক্ষিণ শায়িত মজা খাল,

আগাছার সবুজ কাফনে আবৃত যার পরিত্যাক্ত দেহ,

দেহে হেইচি আর কলমির ঢলে পড়া লতানো খিলখিল


এসবের কিছুই বুঝে না জীবন সত্বের এই ছায়াচিত্র

ক্ষুধার বঙ্কিম পথে হাঁটতে গিয়ে চেতনারা আলপথে হোঁচট খায়,

হারিয়ে ফেলে বুক পকেটের মুক্তির সনদ



মল্লিকপাড়া 

সুস্বাদু ডাল-ভাত সানকিতে রেখে যায় তৃপ্তির ঢেকুর
আত্ম নির্মাণের পথে পা রেখে ভাবি-আমিও আবার
লক করা প্রোফাইল খুলে সুঁতো কাটা ঘুড্ডি হবো
যদিবা গন্ধমের অমার্জনীয় পাপে ফুটে প্রণয়ের গোলাপ

আমার যে স্বরুপ-কাঁচা মুদ্রায় ঝনঝন করে উঠে
অবজ্ঞার যে আমজনতা- ঘাম ঝরানো দিনের দেবতা
তাদের গন্ধ, স্পর্শ টিপে টিপে আজ ঘণীভুত
করে নিতে চাই আমার প্রতিস্বর, আমার জন্মভিটা-মল্লিকপাড়া 

একদিন দূরন্ত হাওয়ার শাঁশাঁ আমায় ভবঘুরে পথে
রেখে এসেছিল, মেঘর সতীর্থ হয়ে উড়েছি আকাশ
হতে আকাশে আর মুখস্ত করেছি ঠিকানাহীন ভ‚গোল

কোথায় যাব-মজাখালের তলানীতে আটকে থাকা
পিতৃপুরুষের প্রেম, একান্নবর্তীর শেকল ছেঁড়া হাহাকার

কোথায় যাব-শষ্য রঙে সাজানো কাঁথায় মায়ের নকশা
আঁকা গ্যালাক্সি, নত হয়ে থাকা সংসারের বোবা বৃক্ষ

কোথায় যাব-নিমাই মাঝি বিলের দাড়িয়াবান্দার ছক
গোধুলির মায়া রংয়ে আঁকা সন্ধ্যার বাড়ি ফেরা

কোথাও যেতে পারিনা, রাতের কণ্ঠে আমার অতীত
ধরে ঝাঁকি দেয় কৃষাণীর মেয়ে, পোয়াতির ঘ্রাণ সে,
মুখে গোলাধানের হাসি- ইচ্ছে করে আজো তাকে নিয়ে বাঁচি


*************************

আমি একটি পয়সা

আমি একটি পয়সা, আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছি সেই 
হাঁটভাঙা সন্ধ্যার বাড়ি ফেরার পথে। কলম্বাসের কম্পাস 
পারো তো খুঁজে দাও গ্যালাক্সি বনের ধ্রুবতারা

একটি বধির পথও কবি। অথচ কবি জানে না-  কার 
নির্মম পা পিষ্ট করে কার বুকের আধুলি। প্রিয় শহর-
আমায় খুঁজে পেলে সযত্নে রেখে দিও তোমার           
বুক পকেটে, কখনো বাজতে দিও না অহমের অনর্থক 
ঝনঝন, গড়িয়ে যেতে দিও না গন্তব্যহীন ডাস্টবিনে 

আমি একটি পয়সা, হাত বদলের খেলায় নিপতিত 
আমার যাপনের চারণভূমি, অথচ একটি পাখির 
শীষেও আমার ঘুম ভাঙল না

আমরা

আমাদের কক্ষপথগুলি লোহা আর পাথরের গ্যালাক্সি
এখানে সহস্রাব্দের মরিচায় অস্তের শুধুই অচল উদয় 
আমাদের মাপকাঠিগুলি মিটার কিংবা সেন্টিমিটারে
ইচ্ছেকৃত রেখে যায় ভুলের চূড়ান্ত তারতম্য আর
গোজামিল সম্পাদ্যে প্রতিদিন আমরা হোচট খাই

আমাদের মেনে নিতে হয়- সবুজহীন উলঙ্গ বৃক্ষে
ফুটে থাকা পাথরের ফুল, ফুলের গন্ধে আমারা ভুলে যাই
আমাদের সটান মেরুদন্ডের কথা, মৃত্যুর গান পয়েন্টে 
দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবাদী লাইফকোডের কথা

এভাবে প্রতিদিন আমরা সমুদ্রে রেখে আসি আমাদের
চোখের ভাষা, পাখির গানে ক্রন্দন, জীবনে মরণ

এভাবে জয়ী হতে হতে অবশেষে আমরা হেরে যাই

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক