কবিতা

শিল্প সাহিত্য ১১৪

অসীম মজুমদার

এসো, রূপকথা’র গল্প বলি

কৃষ্ণচ‚ড়া গাছের নীচে পড়ে আছে তাঁর রোদচশমা, 
তাঁর চুড়ি ভিজে আছে অসময়ের বর্ষার জলে।
এখন তাঁর কপালে কোনো নাম না জানা ফুলের সিঁদুর।
বহুবার প্রেমের পান্ডুলিপি নিয়ে গেছি তাঁর কাছে,
জানাতে চেয়েছি আমার সব পুরোনো কথা!
বোধহয় সেই থেকেই সে খুব ভয়ে ভয়ে থাকে!
তাই সে যমুনাকে জানিয়ে রেখেছে আগে থেকেই
আমাকে দেখলেই যমুনা তাঁর জলে রঙ গুলে দেয়
করে দেয় শুধুই অন্তহীন কালো আর কালো
যমুনা চলতে থাকে তাঁর পরম প্রয়াগের পথে...
কতবার তার মৃদুশ্বাস ভরে নিয়েছি বুকের পাঁজরে
প্রভাত থেকে বিকেল আর বিকেল থেকে সাঁঝবেলা
তাঁর খোঁজেতে রাতদুপুরে আমার হয় পথচলা
পার হই তেপান্তর মাঠ তবুও হাঁটার নেই তো শেষ
পার হই রঙিন দরজা মেকী উৎসবের মিথ্যে বেশ।
অচেনা মানুষের মতো দেখে মেঘের আড়ালে কিছু তারা
মরিচিকা হয়ে যাও আমার ডাকে দাও না তবু সারা
মেঘদুত যদি তোমায় শোনায় এই পান্ডুলিপির কথা
বিষণ্নতার মলাট ছেড়ে বের হবে কোন নীল রূপকথা।

অঞ্জন চক্রবর্তী

যুগান্ধ

চুপ করে শুনে গেলে
কথা দু’টো...
চৈতন্যের আঙুল ছাপ সাক্ষী অতীত!
পুরনো বৃক্ষের ছায়া রেখে যায় জন্মপাঠ
বীজের ভিতরে।
হারিয়ে গেলে, অন্তরীণ বাক্যালাপ মুখ বুজে কাঁদে 
প্রকাশ্যে আসুক শব্দ উলঙ্গ সহবাসে।
বল ভুল নয়, আছি অত্মসমর্পণে।

নির্মাল্য ঘোষ 

দেহাতীত 

শব্দবিছিন্ন হয়ে যখন তুমি আর 
আমি চেয়ে থাকি...
লিঙ্গভেদ থাকে না...
শুধু প্রাণ ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক...
আমি একটু একটু করে স্পর্শ ভুলি...
চৈতন্য হই...
আমার অন্নময় কোষ আর মনোময় কোষ
তখনো নামানোর চেষ্টায় ক্লান্ত...
আমি তখন তোমাকে নিয়ে দেহাতীত

দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায়

দিওতিমা 

হে অতল , নির্বাক জল আমি
কস্তুরীর ছদ্মনামে ঘ্রাণ বলে ডেকেছি তোমাকে।
ব্যক্তিগত জল চাই।
শুশ্রুষা প্রত্যয় নিই
নদী নামে তৃষ্ণাকে করেছি আহ্বান।
এসো, বৃষ্টি নামে কুড়িয়েছি মেঘ
জ্যোৎস্নার পঙক্তিগুলি সাজিয়েছি ঘুমের স্তবকে।
নর্সিসাাস ঝর্ণাজলে ভাসিয়েছি স্রোতের অক্ষর।
এসো। এসো হেমলক। দুহাতে অযুত মাখি বিষ।
দিওতিমা - দিওতিমা। হে মৃত্যু সুধাপারাবার।
আমাদের পূর্ণ হোক শূন্যের তটরেখা ছুঁয়ে।

মিলন ইমদাদুল

আমাকে ভুলে যাও হে প্রিয়তমা

আমাকে ভুলে যাও হে প্রিয়তমা 
ভুলে যাও আমাকে-
ভুলে যাও জীবনের সকল সফল বেদনাকে!

ভুলে যাও অতীতের গ্লানিমাখা রুদ্ধ দুঃসময়কে-
উঠে দাঁড়াও, সম্মুখে তাকাও, দেখো জীবনের উজ্জ্বল নক্ষত্রকে...

সাঁজাও নিজেকে সাঁজাও; বাঁচো নতুনরূপে!
রুখে দাঁড়াও প্রতিরোধ করো সমস্ত অসম্ভবকে!
ভুলে যাও প্রিয়তমা ভুলে যাও; ভুলে যাও এই আমাকে!

এই নষ্ট আমার জন্য আর কোনো প্রতীক্ষা নয়
এই নষ্ট আমার জন্য আর কিছু হারাবার নয়!
ইয় কোন পিছুটান, সম্মুখে হাঁটো 
হাতের মুঠোয় আনো রঙিন স্বপ্নকে,
তবু ভুলে যাও প্রিয়তমা, ভুলে যাও এই নষ্ট আমাকে...

সুজাউদ্দৌলা

উড়নচন্ডির মাঠে

উড়নচন্ডির মাঠে ফেলে এলাম কিছু খেয়াল
আরও কী কী ফেলে দেব ভাবতেই
আত্মধিক্কারে ভেঙে ফেলি আয়নার মসৃণ
নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে নেই। তাই
একদিন ফেলে আসব ভাঙা আত্ম প্রতিকৃতি উড়নচন্ডির মাঠে।


শিল্প সাহিত্য ১১৩

সাব্বির হোসেন

শুধু এক হাত জায়গা দিতে চাই

হাঁটতে হাঁটতে কাঁচা মাটির পরশ পেরিয়ে
কংক্রিটের দেয়ালে আমার আশ্রয় হল।
এখন এই নগ্ন পা বড্ড ক্লান্ত
তন্ত্র মন্ত্র রীতি নীতি সব কিছু অবলোকন করে পরিশেষ জানলাম এখানেই শেষ নয়
ওপারেও হাঁটতে হবে নিদ্রাকাল জুড়ে।

জঠরে থাকা কালে
পৃথিবীর মানুষেরা একে একে এসে বলেছিল,
“আমরা বাঁচতে চাই।
খেতে চাই।
সম্ভ্রম ঢাকতে পেতে চাই কিছু কাপড়।”
পরিশেষে বলেছিল আরও কিছু
আরও অন্তহীন কিছু সুখ।

এসবের কোন কিছুই আমি তাদের দিতে পারিনি
শুধু দিয়েছিলাম এক হাত জায়গা।
যতবার হাত বাড়িয়েছি,
ওরা ফিরিয়ে দিয়েছে কদাকার রূপে
ওরা আমাকে গ্রহণ করেনি
আমি অপেক্ষায় ছিলাম যুগের পর যুগ।

তারপর একদিন হঠাৎ,
এক মানব সন্তান এসে আমার কাছে আশ্রয় চাইল বলল,
“আমি কবি”
আমি তাঁকে একহাত জায়গা দিলাম
এই হাত,
এই এক হাত জায়গায় বুকে জড়িয়ে
তাঁর বক্ষে ঢেলে দিলাম আমার
সারা জীবনের সঞ্চয়
জ্ঞান ও ভালোবাসা।
কবি তখনই লিখল তাঁর অংশুমান কবিতা
সে চিৎকার করে বলে উঠল,
“তোমরা শুনো- এই হাত, এই আলিঙ্গন। এই নিঃস্বার্থ আশ্রয় এসবই সত্য ও পবিত্র।
এই জায়গাটা হল বিশ্বকে লালন করার মত অমোঘ আলিঙ্গন।”

নাদিম সিদ্দিকী  

মহাসঙ্গীতে

যদি প্রেম চাও
মিছিলের নারীকে সাজাও
এখানে গতানুগতিক জীবন না থাকুক
না থাকুক কামোত্তেজনা মত্ত যৌন ক্ষুধা
কিংবা যাপিত জীবনে যতো অযাচিত চাহিদা
তবু মনের গোপন ঘরে পাবে ভাবানুপাতিক প্রেম
যৌবনের মহাসঙ্গীতে পাবে সৃষ্টির সুর
বিপ্লবের হিরন্ময় হাতিয়ার।
যদি প্রেম চাও
এই ভরা যৌবনে মিছিলের নারীকে সাজাও।

স্বপঞ্জয় চৌধুরী

যদি আসতেই হয়

যদি আসতেই হয় আবার রাজার মতো এসো
তোমাকে দেখে পথ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাবে ধূলিকনা
তোমার পায়ের ছাপ কুড়িয়ে নিয়ে লেখা হবে গৌরব গাঁথা
তোমাকে দেখে নত হবে ঘাতক, অবিশ্বাসী আর কিছু
হেমলকবিষে প্রাণ যাওয়া আত্মা।
যদি আসতেই হয় ক্ষিপ্রঅশ্বের মতো ডেকে ডেকে এসো
প্রহর কাঁপিয়ে যেন গ্রহের সব বন্ধ কপাট ঝনঝন শব্দে ভেঙে ভেঙে পড়ে ;
দেবদূতও যেন চমকে ওঠে তোমার দুঃসাহসিক পদযাত্রায়, 
যদি আসতেই হয় বৈষম্যের খড়গ ভেঙে আসো
যেন শিকারির মাথা থেকে পাখিরা ঠুকরে খায় পাকাধান, সর্ষেদানা।
যদি আসতেই হয় আসো কেশর উড়িয়ে উড়িয়ে
বাতাসেও যেন হয় কানাকানি তোমার গর্জনে
সব বহ্নিশিখার মুখ বন্ধ করে তুমি নিজেই হয়ে ওঠো মুক্তির অগ্নিশ্বর, 
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা নাবিকের দল
ছেড়া পালে সুই লাগিয়ে আবারো উঠবে জেগে
ওই ’তো সামনে দেখা যায় ভিনসেন্ট বন্দর।
যদি আসতেই হয় ঝড় হয়ে আসোনি পীড়িতের মুখে
লেগে খুনের ফেনা ধুয়ে মুছে করে একাকার
তুমি নিজেই হয়ে ওঠো নিরব যুদ্ধমাইন ফুঁসে ওঠা সমুদ্র।


শিল্প সাহিত্য ১১২

রুদ্রাক্ষ রায়হান

নিরাপত্তা

একটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকে যাওয়ার পরে মানুষের তাড়া খেয়ে মগডালে উঠেছে।
আসলে বাঘ নয়, ওটা চিতা ছিলো। খবরের সত্যতায় ছুটে আসলেন পশু অধিকার কর্মী, বন বিভাগের লোক। আর এক পাল গবেষক।

বলে গেলেন, বাঘের কোন দোষ নেই শিকারীদের হাতে হরিণেরা নাই হয়ে যাওয়ায় বাঘকে লোকালয়ে আসতে হয়েছে।

এরপর আরো অনেক কথা। পৃথিবীতে বাঘের গুরুত্ব, বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম। বাঘ ও চিতার পার্থক্য। খাদ্যাভাব, চোরা কারবারি, পরিবেশ বিপর্যয়, আরো কত কি!
হরিণের প্রসঙ্গ টা কিন্তু ওই নাই হওয়া পর্যন্তই ছিলো।

বাঘটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিতে হবে শীঘ্রই
জঙ্গলে বাঘেরা নিরাপদ। বন্যেরা বনে সুন্দর।

বাঘটিকে জঙ্গলেই ছেড়ে দিন।
জঙ্গলে বাঘেরা নিরাপদ
হরিণেরা কোত্থাও না.......

মেহেদী হাসান

একটি অরাজনৈতিক কবিতা 

আমাদের কবরে চুম্বন নিষিদ্ধ।
যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ব্যাতিত সকলপ্রকার রাজনৈতিক আলাপ বর্জনীয়।
কবরের একপাশে ভিক্ষা করছে অনাগত শিশু।
ফ্লাগ-পোলে ধর্ষিতার ছেঁড়া আচল টানিয়ে ছুটে যাচ্ছে বিএমডব্লিউ সেভেন,
তার কালো কাচে ভিক্ষারত সেই অনাগত শিশুকে মনে হয় পাশ্চাত্যের পথকবি!

এখানে চাঁদ দেখা নিষেধ।
কবরের আকাশে কাঁটাতারের বেড়া,
সেদিকে তাকালে পুরোনো বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলা হবে চোখ।
আর রক্তাক্ত চোখ নিয়ে আমাদের কবরকে আমরা তুতানখমেনের কফিন ভেবে নেব!

এবং বেয়নট পড়ে থাকবে রাজপথে,
যেখানে থালা হাতে বসে আছে সেই অভাগা শিশু।
একদিন পতাকায় মুড়িয়ে সে বেয়নেট হাতে তুলে নেবে,
আর চুম্বনের অপরাধে যাদের মৃত্যুদন্ড হয়েছে;
তাদের বিক্ষিপ্ত হাড় একত্রিত করে বেঁধে নিলেই
বেয়নেট পৌঁছে যাবে আকাশের কাঁটাতারে!

সরকার অরুন কুমার

খুনসুটির বেহালা
..................!
মিথ্যের জালে বন্দী জীবনে
মুচকি হাসে সকালের সূর্য
অন্ধ বিশ্বাসের দেবতা, কল্পনায় বৈতরণি।
ভবঘুরে দিন উড়ে গেলে
কেবলই ডেকে যায় হেঁয়ালি আঁধার
ক্ষমতার জোড়ে চলে সময়ের ট্রেন
স্মৃতির নাভিমূলে বাজে তীক্ষ্ন খুনসুটির বেহালা।

মাতাল শব্দ কুড়াতে কুড়াতে
ঘর বাঁধে বাবুই পাখির মতো
অনন্ত সাগরে ক‚লকিনারা নাই
গভীরে বিষাক্ত ফেনা
পকেট ভর্তি রকমারি সত্যমিথ্যা
ফেরি করি পূর্বজন্মের বায়বিয় গল্প।

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

বৃষ্টিগান

অনেকক্ষণ ধরে রাস্তাটা খালি ছিল
হঠাৎ করে খালি হয়ে যাওয়া নয়
কারও আসার খবর যেমন আগাম জানা যায়
এই রাস্তার চারপাশের মানুষজনও জানত
সবাইকে জানিয়েই তাই বৃষ্টি এল
যতজন বৃষ্টি আসার খবর জানত
তার অর্ধেকেরও অনেক বেশি মানুষ
বৃষ্টিকে ঠিক ঠিকভাবে চিনত না
যারা চিনত একমাত্র তারাই জানত 
এই বৃষ্টি অনেক অনেক দিন আগেকার 
ফেলে আসা বৃষ্টি
তাই বৃষ্টিপথে আজ যারা হেঁটে হেঁটে আসছিল 
তাদের দেখে মনে হচ্ছিল বৃষ্টিজলেই যেন ডুবে আছে
অথচ বৃষ্টিপথের দুধারে যারা দাঁড়িয়েছিল
যাদের বৃষ্টিগানে গলা মেলানোর কথা
তারা বৃষ্টিফোঁটা কি পরিমাণ বাড়ির বারান্দা ভেজাচ্ছিল
তার পরিমাপ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল
অনেকক্ষণ ধরে তারা বৃষ্টিপথে হেঁটে গেল
কিন্তু কারও ডাকে তাদেরকে কোথাও থামতে হল না

আগেকার বৃষ্টি তো, চোখে চোখ রাখা স্বভাব
তাই মাটি ভিজে থাকত অনেককাল ধরে
সেখানে বৃষ্টিগান রোজ ভিজে যেত নিয়ম করে
আজও বৃষ্টি আছে কিন্তু তার কোনো গান নেই

রহিম উদ্দিন

এক ডজন টু লাইনার কবিতা!
চোখ অন্ধ হলে মানুষ কিছুই দেখে না,
আমি প্রেমান্ধ বলেই কেবল তোমাকে দেখি!
সখি, ভালোবেসে আমাকে আঁকড়ে ধরো,
নয়তো গুন দা’র সাথে দেহ বিনিময় করো। 
আমি তোমার পাড়ায় শ্রাবণ দিনের খন্ড খন্ড মেঘ,
যতটুকুই আমার বোকামি ভাবো ততটুকুই আমার আবেগ!
হঠাৎ করে চলে যাবো ভাবতে পারো যারা
জেনে রাখো, আরো কিছুকাল থাকবো আমি; আমার নেই তাড়া!
পাড়ার সকল লোকে আমায় পাগল বলে বলুক,
তবুও রোজ তাদের মুখে আমার কথাই চলুক!
এ হৃদয় বলে যা রোজ গোপনে 
সকলে কি তা কান পেতে শোনে?
দুজন পথিকের একটাই পথ
পাশাপাশি হাঁটে তবুও ভিন্ন মত!
রাত কালো বলেই দিন এতো আলোময়,
সত্য পরাজিত হলেই ; মিথ্যার নিশ্চিত জয়।
দেশে একজন খাঁটি সোনার মানুষ চাই,
যার চোখ কান নাক মুখ সব থাকলেও লোভ-লালসা নাই!
১০
তোমার নিয়তি তোমাকে টেনেছে, আমার নিয়তি আমায়;
নিয়তির আর কী দোষ বলো! সে-তো নিয়তির জামাই।
১১
এ হৃদয়ে নাহি কোন, অভিযোগ- অনুযোগ;
বৃথা তব কেন কষো জীবনের যোগ-বিয়োগ?
১২
প্রিয়ার নাম রেখেছি কবিতা, আমি হলেম কবি!
দুজনের মধ্যে যেটুকু মিল; ক এবং বি!

মো. আরিফুল হাসান 

বিচিত্র এ বর্ষা

টুপটাপ বৃষ্টি পড়তে পড়তে, বৃষ্টি পড়তে
পড়তে তুমি যাচ্ছো ভিজে। আমি আঁচল
থেকে অপ্সরা নামিয়ে বললাম, ওমা
দেখছো, আমার আকাশটা ভিজছে।

তুমি রমনীয় শোভিত চন্দনের মতো নাকের
নাকফুল দুলিয়ে বললে, এবারের বর্ষাজলে
আমি তোমাকে ডুবাবোই ডুবাবো।

শিল্প সাহিত্য ১১১

অভিলাষ অভি

“বুকের যত দাউ দাউ”

আমাকে ভুল বোঝার অনেক মানুষ আছে
হয়তো অনেকে জন্মাবে
আবার এমনও হতে পারে ভুল বোঝা মানুষটা
জীবনের শেষ দিনে সঠিক বুঝে চলে যাবে আকাশে।
এখনও যে তারার দিকে তাকাই;
তারা আমাকে সঠিক বোঝার মানুষ ছিলো-
আপনি ভুল বুঝে যান, অভিযোগ নেই
সঠিক বুঝবেন না-
সঠিক বোঝা মানুষ গুলো মহৎ
মহৎ মানুষ তারাতারি তারা হয়ে যায়।
আমাকে সঠিক বুঝে কাঁদবেন না
এখনও যখন নদীতে যাই সেই জল নোনতা
একদিন এই নদীও আমাকে সঠিক বুঝেছিলো।
আমি বলিনি আমাকে বুঝুন কেউ
কেউ তো বুঝুন, এতটা ঢেউয়ে
একটা নদীর যতটা ব্যথা।
তার সহস্র গুন ঢেউ তো আমার বুকেও হয়।
আমাকে বোঝার মত কেউ হোক ।।

হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

বাসনা

সেই জলস্তম্ভটি ঘিরে আজো দুর্নিবার আকর্ষণ
দেহে আর মনে, তীরভ‚মি জ্বলে ওঠে
গ্রীবার ভঙ্গিমায় বনে আর ঈশানির কোণে
অনিদ্রা অশান্তির দেশে যে যাবে অনেক দূর
তাকে বলি ধীরে আমাদের বন্ধুতা নেই
সহকর্মীদের শঠতা আছে আর আছে
হিংসার প্রজ্জ্বলন
যদিও এইসব সম্পর্কের  ডালপালা চিরভঙ্গুর...
আজ যা বলার আছে
সহজ প্রেমের কাছে অঙ্গীকার ভেঙে যায়...
রাতজাগা পাখিরা তখন জানলার পাল্লায়
বসে অষ্ফুট ডাকে
মনে হয় নতুন খেলার জন্ম হলো বুঝি
কতদিন আমার মতোই তুমিও ভেবেছিলে
এভাবেই শুরু হয় জীবন...
ঘৃণা রিরংসা তার কিছু পরে হয়তোবা
বসিয়েছে থাবা,জেগে র ইলো
নিবিড় স্পর্শ টুকু,অবিরাম বৃষ্টি দিয়ে শুরু হওয়া
ভালো নয়, ভালো নয় এইবেলা নির্ঘুম বাসনায় 
নিমজ্জিত হওয়া ...

মোনাব্বার মোনায়েম

সবেগের গতিময়তা

তোমার নাঙা পায়ের দোপাট্টা ভাজ খুলে দাও তিথি 
একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে উর্বশির জাগরণী কীর্তি
হাওয়ার দাপটে কেঁপে ওঠে সবুজ দিগন্তের বনবিথি
ঘনিষ্ঠ ঘনায়ে শীর্ষোঞ্চে ভেসে ওঠে একফালি ফ‚র্তি
সে এক কামনার ঝড়ো হাওয়া উন্মুখ হয়ে আছে
দক্ষিণ সমুদ্রের বাসনা ঢেউ উত্তাল হয়ে আসে
সলীল সমুদ্রের অতলান্তের প্রদীপ্ত-সুখ মধ্যদুপুরে ডোবে আর ভাসে
পূর্ণিমার চাঁদ চন্দ্রমল্লিকার ঠোঁটের চুমু ভোগ ঘোরে বেঘোরে মোহাচ্ছন্ন নদীজলে হাসে
ডুবুরি সে ঝিনুকের ভেতর ভাঁজে ভাঁজে যুঁথিবদ্ধ খাঁজে, খোঁজে অজস্র মুক্তারাশি
দু’ফোঁটা জল ভেজায় তারে দ্বৈত আবেশে স্যাঁতসেঁতে জল ভরে দেয় ছোট্ট সোনার শিশি
বিনোদিনির সেই সুখ-স্মৃতিতে জাবড় কেটে কেটে যায় মধুবালার আদিগন্ত দিবানিশি
প্রবল জড়ায়ে ঝরায়ে ঝরায়ে উষ্ণতায় কাঁপে অর্ধবৃত্ত উঞ্চষীর অনলথাবার থরথর মাংস
মোহনায় সবেগে বেড়িয়ে আসে সুখের অংশ আবেশে তলিয়ে যাওয়া জলধারার কিয়দাংশ

কেয়া সরকার গুহ রায়

আর যাই হোক ভালবাসা নয়

সন্ধ্যার আকাশ শরৎ মেঘের কারিকুরি
সোনা আলোর প্রলেপ দিচ্ছে ফেলে আসা বিকেলের গায়
রোদ চশমার আড়ালে তোমার চোখ উজান ভাঙা অজয়
হৃদয় একবুক সমুদ্দুর, চামড় দোলা কাশবনে একহাঁটু জল
অনিন্দ্য কুমারীকা পরিবেশ মাটির কাছাকাছি বাস
বহুকেলে অজুরা স্বার্থ নগরীর নিরেট বলয়, দুটো পথ বেঁকে ছিল পথের দাবীতে
একঘেয়ে চেনা মুখের মিছিল ফেলে মাঝেমধ্যে একাকী হৃদয়ে রঙ লাগা
সে তো ব্যস্ততার ভিড়ে একাকীত্বের বুকে নতুন করে দোলা দেওয়া
অলিন্দের কালসিটে দাগে সন্ধ্যা ঘন মালতীর মৃদু চুম্বন
সে আর যাই হোক ভালবাসা নয়
ধোঁয়াটে হেয়ালির বিলাসিতা


তামান্না মেহেরুন

ইহা কোনো কবিতা না- বিশ শতকের জানালা

এগুলারে জানালা কয়? মোটা কাঁচে ঢাকা, শক্ত লোহার শিকে গড়া, ছোট্ট জেলখানার মত। জানালা হইলো মুক্তির সোপান শ্বাস নেওয়ার হালাল দরজা। জানালা হইতে হইব এক দেয়ালের দুই ভাগের এক ভাগ, যেখানে চোখ মেললেই আকাশ দেখা যাইব, মেঘ দেখা যাইব, বৃষ্টি ছোঁয়া যাইব, বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যাইব। জানালায় কোনো লোহার শিক থাকতে পারত না, থাকব কাঠের দুইটা কপাট, হাওয়া দিলেই দেয়ালের সাথে বারি খাইয়া জানালার জানালার মত শব্দ হইব। তইলে শিকের বদলে কয়টা সবুজ লতা জড়াইয়া থাকলে খারাপ হয় না। জানালা হইতে হবে প্রেমের মতন, ভালোবাসার মতন, শোকের সাথী, ব্যথার সাথী, আনন্দের অশ্রু।

অনিরাপত্তার বেড়াজালে আটকাইয়া জানালা হারাইলো তার আপনা বৈশিষ্ট্য, জীবন আর আত্মা।

এসবেরে প্রেম কয়?? আধমরা, নৈশব্দ, নগ্ন আর ফরমালিনে গড়া। শ্বাস নেওন যায় না, কথার পিঠে কথা কওন যায় না। বৃষ্টির মত ঝইরা পড়া যায় না। মাটির মতন উর্বরতা পায় না। দুই কথায় বিচ্ছেদ, তিন কথায় চউখের কাঁটা, চাইর কথায় মরণের স্বাদ, পাঁচ কথায় বিশ্বাসের আত্মহত্যার মিছিল, ছিঃ ছিঃ।

প্রেম হইতে হইব বর্ষার কদমের মিঠা ঘ্রাণের মত, বিলের ফোঁটা প্রথম শাপলার মত। রইদ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান সব সইতে হইব।

নগ্নতা ঢাইকা দিব, বন্দীরে মুক্তি দিব আত্মার তৃষ্ণা চোখে মিটাইব। অদৃশ্য দুইটা পাখনা গজাইব, অন্তরে তৃপ্তি আইন্না দিব। বিচ্ছেদ নামের কোনো কীটের ঠাঁই হইব না, অবিশ্বাসেরে সাপের বিষ দিতে হইব, ভরসার গলায় জড়াইয়া ধইরা ফুল ফুঁটাইব একশ বাগানে।

অপ্রেমের লাইগা পৃথিবী হারাইল তার আপনা বৈশিষ্ট্য, জীবন আর আত্মা।

শিল্প সাহিত্য ১১০


যুবক অনার্য

অবিনাশ ও নারীচিত্র

একটি দরোজা
একটি পুরুষ-
অবিনাশ
একটি নারী-
জরি
দরোজাটি বন্ধ
ভেতরে নারী
বাইরে পুরুষ
প্রতিদিন দরোজায় পুরুষটি কড়া নেড়ে যেতে চায়
নারীটি নিষেধ করে রেখেছে
নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণও সে ব্যখ্যা করেনি
এভাবে অনন্তকাল কেটে যাবে
কড়া নাড়া হবে না তবু
নিষেধাজ্ঞার কারণও রয়ে যাবে অজানা
তাই এই গল্পটি পাঠককে নাড়া দিতে ব্যর্থ হবে
পাঠক প্রত্যাশা করে -পুরুষটি সাহসী হোক
১৪৪ ধারা ভেংগে কড়া নাড়–ক
অবিনাশ পাঠককে সন্তুষ্ট করতে পারছে না
কারণ অবিনাশের জানা নেই যে-
পাঠক যা চায় জরি নামের মেয়েটিও তাই চায়

অবিনাশ, তোমাকে বুঝতে হবে-
নিষেধাজ্ঞা মানেই হলো ১৪৪ ধারা ভেংগে
প্রচন্ড লাথি মেরে দরোজাটি ভেংগে ফেলা
তুমি না ভাংলেও কেউ না কেউ ভেঙে ফেলবেই কারণ ভেঙে ফেলাই প্রাকৃতিক নিয়ম
অবিনাশ, যে শুক্রাণুটি দৌড়ে প্রথম হয়ে
জাইগোট ফর্ম করে - এখনই সময় -
দুর্দান্ত লাথি মেরে দরোজাটি ভেংগে ফেলো
প্রথম হউয়া সেই শুক্রাণুটির মতো
দরোজা ভাংলেই দেখতে পাবে-
জরি মেয়েটি তোমার উদ্দেশেই
হাত বাড়িয়ে রেখেছিলো অনন্তকাল
কারণ নারী তাকেই চায় যে নিয়ম ভাংতে গিয়ে
হতে জানে দাগী আসামীর মত রক্তাক্ত
আর নিষিদ্ধ পাপীর মত শিল্পীত নিষ্ঠুর

মাহামুদাল হাসান

অতৃপ্তি

রসনা তৃপ্তির প্রহরে উনুন রজস্বলা হলে
রূপান্তরিত স্ফুটনে বেকায়দায় পড়ে যায়
বাষ্পায়নের আভিজাত্য; ধূলোয় মিশে যায়;
বসে থাকার পর আবার সঙ্গমে লিপ্ত হয়
রূপসী চালের যৌন উত্তেজনা জাগে
উল্টেপাল্টে রতিক্রিয়ায় ক্লান্ত ও ব্যথায়
নিজেকে পেশাদারিত্বের মগজ ভাবে
পুরো পর্দায় ছবিটির ভিডিও দেখে
জীবন কুণ্ডুলী লেখা আবর্তে
জ্বালানিকে দায়ী করতে মন চায়না
কাপড়ে আচ্ছাদিত দুর্লভ হাঁড়িও
বিশেষ মুহুর্তে গানবাজনা শুরু করে
সুখী অথচ পর্দায় টান দিতে দিতে
যে অনুমতি নিয়েছিল তা
খিচুড়ির উষ্ণ ঘরে আটকানো ছিল।
স্বাদুজলের ঘনত্ব; খোলা চ্যালেঞ্জ;
এবার শুরু হবে আদালত ও বিচার প্রক্রিয়া।

সাজু কবীর

একশিশি কড়কড়ে জল-ফাঁদ

জীবন ফেলেছে খুলে
কাছে আসবার আলোয়ান,
মরণ নৃত্যে মাতাল
বৃষ্টির বিলাপে বিরহের গান।
তেল চকচকে সবুজ সকাল,
যেন আজ ঘুঘুরঙমাখা
গোধুলি নাকাল।
এতো পাখিডাকা- ভোর
এতো ফুলফোটা-বাগিচার প্রীতি-ডোর
নির্ভার এক লুম্পেন নিয়েছে দখল
জীবনের গায়ে রক্তাক্ত পেরেক
এফোঁড়-ওফোঁড়।
হে রাক্ষসী! চলে যা! চলে যা!
এ পৃথিবী আমাদের সোনাগাঁ।
দয়াময় প্রভু! আমরা পাপী-তুমি রব তবু!
দাও, দোজখে ভাজা একশিশি কড়কড়ে জল-ফাঁদ,
মানুষখেকো’র ফাঁসি হোক সে-ই মানুষের হাতে
এ আমার ফরিয়াদ।

শিল্প সাহিত্য ১০৯


অ। জ। য়   রা। য়

নববর্ষে শতবর্ষের মৃত্যুদূত

তুমি আর এসো না ফিরে অশুভ ছায়া রূপে এমন সুন্দর অবনী পরে
প্রতি শতবর্ষের মৃত্যুদূত হয়ে প্রাণ কেড়োনা যাও চলে দূর বহুদূরে
শ্যামল প্রকৃতি আজ হাসে না হারিয়েছে রূপ দখিনা সমিরণে দোলেনা মুকুল
পুষ্প কাননে সুগন্ধি ফুলের সৌরভ ছড়ায় না নিস্তেজ জুঁই মালতি বকুল
কোকিলের কুহু ছন্দ মন ভরে না তার আনন্দ চারিদিকে বিমূর্ত করুণ সুর
নবান্নের উঠোনে কাকেরা হাহাকার ধ্বনি তুলে ধবলীর গলায় স্বর ভঙ্গুর! 
নীল অম্বর ক্ষণে ক্ষণে কাল মেঘে ঢাকা পড়ে বিস্তর পাকা ফসলের মাঠ
কালবৈশাখীর ভয় কৃষকের বুক কেঁপে ওঠে যতদূর চোখ রুদ্ধ পথঘাট।
নতুন দিনে নতুন পার্বণ স্বস্তিহীন মানুষের প্রাণ দিগন্তে নেই রবির প্রদ্যোত
ঘোর অমানিশার আঁধার চারিদিক ছেয়ে গেছে নববর্ষেও তুমি শতবর্ষের মৃত্যুদূত।


চন্দনা রায় চক্রবর্তী

লক্ষণ রেখা

প্রসবের রক্ত জল সাঁতরে উঠে আসা
কিছু অন্তর্জলি ছবি, ভাষা, কল্পনা...
অনায়াস শারীরিক পরিক্রমা পার করে
মনের কুণ্ঠার দরজায় অবিরাম কড়া নাড়ে।
শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটে,
আগ্রাসী চুম্বনের জ্বরতপ্ত উষ্ণতা,
কপট রাগের অজুহাতে
ছায়া বিস্তারের চতুভৌতিক সীমা বজায় রাখে।
দু’বাহুর দুরত্বে শারীরিক সংশ্লেষেও দোটানায়।
বারোমেসে ধুলো পড়া সংস্কার,
কুন্ডলী পাকিয়ে পড়ে থাকে,
আশ্বিনের অশ্বগন্ধার রূপকল্পে।
চারিদিকে অবগাহনের মন্ত্রে ভেসে যায়
অন্তর্লীন আমিত্বের জোলো ইঁদারার জল।
ধ্রুব তারার আলোয় নতুন করে পথ চেনা
গন্ডীর লক্ষণ রেখা পার করে অচেতন মন
পৃথিবীর যাবতীয় ঋদ্ধিই এপিটাফ হয় তখন।

শিল্প সাহিত্য ১০৮


অনিক সাহা

জারুল গাছ ও দু’কাঁধে জমে থাকা দুঃখ

১.
মা যেন ছিল ছোট্ট উঠোনটিতে গড়ে ওঠা জারুল গাছ
আমরা সবাই আগাছার ন্যায় বেড়ে উঠেছি!
ভাগ বসিয়েছি মাটি থেকে পাওয়া জল, খাদ্য ও খনিজে...
মা পরম মমতায় হেসে দিয়েছিল ঠাঁই।। 
ঝড়ের মৌসুমে গাছটির বড় বড় ডাল ভেঙ্গে পড়তো,
একা একাই জারুল গাছটি আগলে রাখতো আমাদের!
আমরা ভাবতাম,
জারুল গাছটি কি বোকা?

২.
দু’কাঁধে জমে থাকা দুঃখগুলোকে আরো ভারী করে দিয়ে আমরা বসে পড়তাম বাবার দু’কাঁধে...
ঝড় এলে মাটি পিচ্ছিল হয়ে মাঝে মাঝে কাঁদা হয়ে যেত,
কিন্তু আগাছাগুলোর কোন ক্ষতি হয়নি

৩.
আজ ব্যস্ত নগরীতে ভীষণ ব্যস্ত জীবন... 
সেই জারুল গাছটি জোছনা রাতে এখনো মস্ত ছায়া হয়ে থাকে পুরো উঠোন জুড়ে
বাবার কাঁধ থেকে দুঃখগুলো গামছা দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছি কতবার...
পারিনি....
না পারাগুলো ফুল হয়ে ফুটতে থাকে একটা
দুইটা... তিনটা... এমনি অসংখ্য...
আমরা দুই ভাই অবাক চোখে দেখি কেবল
ওদিকে ঝড় আসলে বাবা এখনো উঠান থেকে কুড়িয়ে নেয় দুঃখগুলো!


পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

ক্ষুদ্র-বৃহৎ

ওড়ার জন্য আকাশও কখনো ছোট পড়ে যায় 
বাস করার জন্য একটা মন
সে তুলনায় কিছুই না 

এক জীবন বাঁচার জন্য কত আর্তি
কত আকুতি, কত মিনতি
অথচ বাঁচার জন্য একটা জীবন 
যথেষ্ট নয় মোটেও, বরং অনেক ছোট

কত স্বপ্ন  দেখা বাকি, কত কিছু বোঝা বাকি 
কত বন্ধুত্ব অধরা, কত মন না-ছোঁওয়া 

এক সুদীর্ঘ, তৃপ্তির ঘুমে যেন কেটে যায় 
এক আস্ত পাখিজীবন, 
খুঁটে খুঁটে তুলে আনা অভিজ্ঞতায়
ভরে ওঠে সময়ের ঝুলি

প্রহরগুলো কাটে যেন শূন্যে তাকিয়ে থেকে 
সকালের হলদে রোদ মেখে
সোনালী বিকেলের অন্তহীন অপেক্ষায় 
ধ্রুপদী সঙ্গীতের রাগাশ্রয়ী মূর্ছনায়
দুলতে থাকা প্রহরের ঝিল্লিসুতোয় 

খাঁচার থেকে বেরিয়ে এলে
আকাশ সত্যিই ছোট মনে হয়


অভ্র আরিফ

ইদানীং মানুষ

মানুষ ততটুকু যায়, যতটুকু তার হৃদয় চায়
শিশুর নরোম গালের মতো  
হৃদয়ে, দেখো কি নিপূণ ক্ষত!
এ হৃদয় নিয়ে আমি কার কাছে যাই...
গাঙুরের জলে ভেসে ভেসে চলে গেলাম বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে জীবনানন্দের চোখ খুঁটে খায় ধানশালিক
আর সেলফি তুলে বনলতা সেন।
বস্তুতঃ মানুষ এখন কোথাও যায় না। এরা হৃদয় খায়...


শিল্প সাহিত্য ১০৭

মৃনাল কান্তি বিশ্বাস

ক্ষুধার বিপ্লব

আমি সাত-রাস্তা মোড়ের রিক্সা চালক শামসের আলী
লকডাউনের জনশুন্য শহরের রাস্তায় কর্মহীন একজন
কয়েকদিন হলো কোনো রোজগার নেই
মাথার  উপর সাত সাতটা মানুষের ভার ।

আমি ক্লান্ত নই তবু
যদিও, অনাহাওে আছি আজ!
বউটা আমার ফিরবার পথ চেয়ে-
তিন বছরের লতুটা না খেয়ে আছে সকাল থেকে।
বৃদ্ধা মা অসুস্থ্য, অন্ধ বাবা  অপেক্ষায়---
সাত বছরের অবুঝ ছেলেটা খাবারের লোভে তাকিয়ে থাকে, ওর বাবা কখন ফিরবে  ?
এগারো বছরের মায়ের মত মেয়েটা, কিছুই বলেনা---
ওর বাবার অক্ষমতার কথা ভেবে।

আমি রিক্সা চালক শামসের আলী ভিক্ষাবৃত্তি বুঝিনা।
এ হাসপাতাল থেকে ঐ ক্লিনিকে ছুটে গেছি রক্ত বেঁচবো বলে
কেউ- তাও কিনলো না!

এবার শুধু একটা ধারালো অস্ত্র চাই
হয় নিজেকে মারবো, না হয় জবাই দেব পুঁজিবাদ।

আমি অতশত বুঝিনা
কিসে কত অপরাধ! কেনই বা হব বিপদগামী?
ক্ষুধার  যন্ত্রণায়---
সমস্ত শহরের পুঁজিবাদ বিক্রি দেব নিলামে।
কচু কাটা করব সব মজুদদার, কসাইখানার চাতালে।
কেউ অভুক্ত থাকলে ক্ষুধার পরিমাণে রক্ত নেব
ছোট্ট লতুটা অনাহারে থাকলে শান্তিধাম মোড় থেকে জ্বালবো আগুন!
তাতে কে পুড়লো?  আর কে হল দগ্ধ! বুঝিনা,
আমার শুধু-
এক কেজি চাল আর দু-মুঠো ডাল চাই।

কেউ খাবে---
কেউ খাবেনা---
কেউ ঘাম ঝরাবে? কেউ থাকবে আরামে---
তা হবেনা---

সামুয়েল মল্লিক 

ফরমালিন ভোর

সবুজ বাতাস চুরি করেছে দলবদ্ধ কর্পোরেট চোর।
সাথে নিয়ে গেছে চড়ুই-এর কিচিরমিচির,
মধুক‚পী ঘাস আর খয়েরি শালিকের পালক।
একদিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি চারপাশে ধোঁয়ার আসর
বিস্বাদ কমলার মতো ঝুলে আছে ফরমালিন ভোর
সবুজ বৃক্ষরাজির মাথা নেই শুধু পড়ে আছে খন্ডিত ধর।

শম্পা পাল 

যে নদী জন্মের আগেই কবিতা হয় 

গনগনে রুপকথা হয়েছি
লিখতে চাইলে লিখতে পারো
তবে অণু কবিতা নয়
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কবিতা লিখতে হবে
শিরোনাম দিতে হবে যে নদী জন্মের আগেই কবিতা হয়
তারপর সিন্ধু, ব্যাবলিন, মিশর
আমি সব গুছিয়ে নেবো
শুধু নদী ভাঙনের আগে
বেহালাটা আমার হাতে দিও ----

শিল্প সাহিত্য ১০৬

শঙ্কর ঘোষ

যে পথ ঘুরে গেছে 

ওই পথে গেলে কি তাকে পাওয়া যেত?
মাঝে পথ আটকে কিছু সমুদ্র - বন স্থির পাথরের মতন।
ওই পথে কি হেঁটে যাওয়া যেত
সরীসৃপ মন বলে ওঠে - স্থবির আমি অখণ্ড আমি - গভীর ঘুমে ক্লান্ত।
সেও তো বেশ কয়েক দ্বীপ পর,
দেখো তুমি যেতে পারো আমার সাথে যদি তুমি সব ক্লান্তি নাও আমার।
প্রসঙ্গহীন সমাজ ব্যস্ত ভ্রাম্যমানের বাসা নড়াতে,
পবিত্র প্রেত সুপ্ত- রোমাঞ্চিত মনে।
ভয় পাও... ভয় পেতে শেখো।
বিকেলের পরে ওই ভাঙা পাঁচিলের ধারে নামবে ছায়া একটু বাদে,
ওই ছায়া-ঘেরা-বিকেলে ওই পথে গেলে হয়তো তাকে পাওয়া যেত ।।

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
 
হাওর দ্বীপপুঞ্জের শহরে

প্রতিদিন মিশে থাকি হাওর দ্বীপপুঞ্জের শহরে
যেখানে সন্ধ্যা নামে নৈসর্গিক নানান রূপের ডানামেলে।

যেখানে আষাঢ় পূর্ণিমা রাতে, মেঘেদের সাথে চাঁদ হাসে
বৃষ্টিভেজা রাতে অজানা অনুভ‚তিরা হৃদয়ে বাসা বাঁধে।

বিস্তৃর্ণ হাওরে উত্তাল ‘আফাল’ সমুদ্র রূপে আঁচল পেতে ধরে
ইচ্ছেগুলো মিশে থাকে অথৈ জলের আছড়ে পড়া ঢেঁউয়ে।

খুব ইচ্ছে করে যেতে শহরের সুরমা রিভারভিউয়ে
যেখানে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের দেখা মেলে।

নদীর এ তীওে প্রেমিক যুগলের অতৃপ্ত বাসনারা পূর্ণতা পায়,
চন্দ্রাালোকিত ঝলমলে জলরাশি যেন লুকোচুরি খেলায়!

এখানে বসে বাউলেরা হাসনরাজা, দূর্বিন শাহ, রাধা রমন,
শাহ আবদুল করিম লহরিতে মেতে ওঠে
কবিতায়, প্রেম, আড্ডায়, তরুণেরা জলরাশি উপভোগ করে তন্ময় হয়ে।

আমি সেখানেই বার বার ছুটে যাই,
যেতে মন চায়,
মন পড়ে থাকা সেই প্রিয় ঠিকানায়।
পড়ন্ত বিকেলের গোধূলি লগ্নে
কবি মোমিনুল মউজদিনের জল-জ্যোৎস্নার শহর পাড়ায়।

সাকিব শাকিল

অন্ধ হরিণ

তোমার হৃদয়ের ভেতরে গোল্লাছুট খেলতে খেলতে হারিয়ে গেছে অন্ধ হরিণ;
কোনো এক অজানা দূরের মাঠে-
মাঠ পেরিয়ে সে ঘুমিয়ে গেছে বিজন বনের বুকে।
এই গুম গুম হাতকড়া খেলা উপেক্ষা করে
ঠিকই ফিরবে আমাদের সমৃদ্ধির হরিণ।
ঘরে ফেলে আসা সেই শাবকের কসম!
কসম এই ঘাটির
কসম এই রক্তাক্ত মাটির
আমাদের ঘৃণার চোখেই চুরমার হবে বাঘিনীর ডেরা
মৃতরাও যোগ দেবে যোগ দেবে ভীতরাও
এই আতঙ্ক ও ত্রাসের অরণ্যে একদিন
হরিণ বিক্ষোভ দেখা দেবে।

সিয়ামুল হায়াত সৈকত 

ব্যাকরণ

যেসব গানের মুখস্থ ঠোঁট পড়তে পারি
এমন বৃষ্টিপাত হলে, নিকটবর্তী গাছ বাতাস ধরে।
আর চুম্বকের বোধ এসে দাঁড়াতে পারে মাঝখানে
ঠিক যেমনঃ হাত রাখলে নিজেকে জানতে দেয়

তোমাকে নিয়ে আমার আগ্রহ নেই
সময়ের মিনার উঁচুতে বসে সংকেতবিজ্ঞান পড়েনা।
জানতে চাইলে পড়ে ব্যাকরণ
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ শুক্রবার নিয়ে আসে। ঘুম আসেনা।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান

ভিখারি

আমি ভিখারি
এ কথা তোমাকে কে বলেছে?
নাকি আমাকে দেখে এসব কথা বলছ
আরে আমার জীর্ন পোশাকের ভেতর
বসবাস করে পরম প্রিয় মান-সম্মান
তার দিকে তাকিয়ে খালি পেটেও
হাসতে পারি কোটি টাকার হাসি
তুমি কোন দিন হাজার টাকার হাসি হাসতে পেরেছ?
হিসাব করে দেখ একবার
আর যদি না পাও
তবে বুঝো কে ভিখারি?

শিল্প সাহিত্য ১০৫

আনোয়ার হোসেন বাদল

ক্ষয়ে যাওয়া চোখ

বিমূঢ়তা কাটিয়ে যখন দিঘির জলের দিকে তাকাই
দেখি তার কাজল চোখের টলটলে জলে
গ্রীক দেবী সাইকি’র প্রেম খেলা করে
আমার তখন ক্ষয়ে যাওয়া চোখ
আমার তখন ডুকরে ওঠা বিকেল
কেন যে সেইসব দিন-রাত্রি পালক ঝরা ডানার সাথে জড়িয়ে ছিলো!
আমিতো এরোস নই
ওহে সাইকি, আমিতো চাইনি হতে প্রেমের দেবতা
প্রকৃতির খেয়ালী এক সৃষ্টি আমি
কোনদিন শিখিনি এতটুকু ছল
যে চোখে পাথর ছিলো, ভালোবাসা ছিলোনা সেখানে 
যে চোখে প্রেম ছিলো সেতো এক বিবর নয়ন
ছিলোনা জলের নদী অথবা আকাশ
তাকে আমি রেখেছিলাম খুব গোপনে একাকী তার সাথে কে করেছে দেখা!
বিমূঢ়তা কাটাতে চলে গেছে রৌদ্রের কাল
চলে গছে শীতল বৃক্ষ আর বনানীর সুনিবির ছায়া
এখন আমার পাশে কাঁদে কোনজন
মাটিতে পড়েনা কেন তাহার ছায়া!
সেকী তবে মৃত কেউ?
শতাব্দীর প্রেতাত্মা, অথবা কায়া?
ছায়া-কায়া দুই-ই ছিলো চির অচেনা
ভালোবাসা-প্রেম সব সুদূর অতীত
তবু কেন সে এসে দেখা দিয়ে যায়!
আমিতো কিউপিড নই; প্রেমের দেবতা!
সাইকি’র প্রেমে পড়ে ছুঁড়ে দেবো
মধুময় তীড়!
আমার জীবন কই? সেতো এক বেদনা গভীর!

তন্ময় পালধী

যে বৃত্তে ভাসতে ভাসতে

আসক্তির মাত্রা ভরপুর হলে
তাকে যে যতই মোহ বলে ভাবুক
আমি বলি প্রেম।
যে বৃত্তে ভাসতে ভাসতে উত্তোরণ ঘটে
বিবর্ণ পৃথিবী থেকে
রঙিন অমানুষতা থেকে
এক সোনালি সকাল।

আসক্তি যদি নাই থাকে
মায়া প্রেম ভালবাসায় সন্দেহই জাগে।

তন্ময় বিশ্বাস

অস্থায়ী

স্থায়ী বলে কিছু হয়না।
জোৎস্না নিভে এলে, ঘেড়ার খুড়ের মত-
অন্ধকার নামে বুকে! প্রেতপুরীর নারকীয় বেদনা-
বেদানার মত ঝরে গহ্বরে!
হাসতে হাসতে কয়েকটি রঙিন মাছ সঙ্গম ছেড়েঁ
নদীতীর খুঁজে নেয়! আর বলে যায়-
যা দেখি তা ক্ষণিকের!

সেদিনের কথা মনে পড়ল, ম্যাকলাস্কিগঞ্জে-
প্রেমিকার আঙুল-গন্ধ-স্বপ্ন বরাবর যেই হাঁটছি
অদ্ভুত এক পাথর পায়ে  টোকা মেরে হাসতে হাসতে বলল-
“আমি এগারো বছর পর ধূমপান ছেড়েছি”
ভাবলাম এতে আনন্দ বা বিষাদ কেন?
জীবনে যা করি তা ক্ষণিকের, আকাশে উড়ে যায় পাখী!

বক্রেশ্বর এই সকল তত্ত¡কথার অদ্ভুত ব্যাখ্যা দেয়-
জলের ধারা গাছ বরাবর হাঁটতে হাঁটতে মাটিতে মেশে,
আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে টিনে-ছাদে-পুকুরে-নদীতে-সমুদ্রে-মরুতে!
জটিল সব তত্ত¡! সোজা কথায় বুঝি-
প্রেমিকা ছেড়ে গেলে আবার প্রেম হয়, নদী হয়, নদীর গর্ভে বীর্য ভাসে!
অস্থিরতা পেয়ে বসে এসবে! মাথার ঘিলুর মধ্যে চেপে বসে বেদনা,
আসলে কিছুই স্থায়ী না!
মাঝেমাঝে রক্তের দোষেও ভেঙে যায় ভালোবাসা।

আর তখনি কার্লমার্কস'কে খুব মনে পড়ে।


শিল্প সাহিত্য ১০৪

উপেক্ষিৎ শর্মা

কবিতা

কবিতা আমার কাছে ছিন্নভিন্ন প্রেমের অবশেষ
যেটুকু শব্দ থাকে জোড়া
অক্ষরে বিন্যাসে, সব
পতিতালয়ের মত স্নিগ্ধ ও রোজগেরে

কবিতা কি শব্দ চেনে?
বাক্য ও বিন্যাস?
জ্যোৎস্না মাড়িয়ে গেলে
মরা চাঁদ দৃশ্যমান হয়
কবিতার পিনকোডহীন অন্য ঠিকানায়

সুখের সেদিন
যেদিন ঢেউ আর নুন থাকে
সদাব্যস্ত গোধূলির মত
সেইদিন কবিতায় রাত্রি নামে
সাপের খোলসে
সেইদিন কবিতার স্পষ্ট হারাকিরি
কালি ও কলম ছুঁয়ে প্রেমের তাড়সে...

কবিতা আমার কাছে,
ছেঁড়া ফুল,
পাপড়িগুলো ছড়ানো ছেটানো,
কফিনের শ্বেতশুভ্র রঙীন অবকাশ...

দেবাশীষ চক্রবর্তী

প্রেম এখন

খোলা চাঁদে আজও ভাসে
অতৃপ্ত যৌবন
পুরুষের রমণী হতে চেয়ে আমারি শবদেহে রাত্রিযাপন
জলপদ্মের আবেশে সর্পবিষে গাঢ় প্রেম
শরীরী উষ্ণতায় ভরা উচ্ছ্বাস
পৌরুষ স্পর্শে ছুঁয়েছিল হাত
সেতো আমারি মৃতদেহ বোঝনি
বিভঙ্গীয় রেখার ঋজু বৈভবে
প্রেমিক হতে চেয়ে
পুরুষ হতে পারিনি
ভাঙ্গা চাঁদে আজও ভাসে অহংকারী যৌবন
পুরুষের রমণী হতে চেয়ে আমারি শবদেহে রাত্রিযাপন

অভ্র আরিফ

স্পর্শে তোমার শুদ্ধতা

যেখানে তোমার হাত পড়ে সেখানেই আশ্চর্য সুভাস
তোমার হাত কি তবে পদ্মফুল, আঙুলগুলো পদ্মপাপড়ি?
তোমার স্পর্শ পাওয়া শুকনো পাতা ঘিরে উড়ে বেড়ায় এক ঝাঁক ভ্রমর।

অমল ধবল হাতের ছোঁয়ায় তোমার,
প্রজাপতি হয়ে যায় ঝালমুড়ির ঠোঙা, পাখি হয়ে যায় লেখার কাগজ, কবিতার বই
পরশ পেয়ে হাতের-  মুমূর্ষু ফুল মুখ তুলে চায় নতুন করে, নুড়িও হয়ে যায় সোনা।

একদিন, বৈশাখী মেলা থেকে কিনে এক গোছা চুড়ি হাত গলিয়ে পড়লে তুমি,
রবিশংকরের সেতার হয়ে বাজলো টুড়িগুলো, গান শুনালো মাটির পাখি,
তোমার স্পর্শ পেয়ে নেড়ি কুকুর হিংস্রতা ভুলে টিএসসির মোড়ে প্রেমের গান গায়।

যেটুকু ছুঁও তুমি, সেটুকুতে আলোর রোশনাই, গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপফুল,
যেভাবে স্পর্শ করো তুমি, সেভাবে উম পায় পক্ষীছানা, পক্ষীর চোখে মুগ্ধতা
নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙ্গুলকে তাই আশ্রয় দিও নগ্ন করপুটে- স্পর্শে তোমার শুদ্ধতা।

বিপুল রায়

শেষ

কিসে যে কি হয়, মন জুড়ে ভয় ভয়, কত কথা শুনে যাই কানে।
রাত কেটে দিন আসে, কেউ থাকে না পাশে, কোন কথার ঠিক কি মানে?
হাঁটা পথে গাড়ি চড়ি, গলি থেকে গলি ধরি
রাজপথ ঠিক কতদূর?
যেতে যে হবেই হবে, চিরকাল কে কবে, ডাক দেয় কোন সে সুদূর!
আমি সে আমি নই, ফুটপাত জুড়ে বই, সেক্সপিয়র, কিটস, বায়রণ।
হাতে পুরোনো বই, পথে ছড়ানো খই, পিছনে পড়ে থাকা যে বারণ।
কেন এই ভয়ভাব, মনে কেন উত্তাপ, পথে থেকে ছুটি পথে পথে।
যেভাবে দিন কাটে, সে পথেই রাত হাঁটে, জীবন বাঁধা যেন গঁতে।

কিসে যে কি হয়, মন জুড়ে ভয় ভয়, কত কথা শুনে যাই কানে।
আকাশে আকাশ মেশে, কে দাঁড়ায় গা ঘেঁষে, কে জানে- কার শেষ ঠিক কোনখানে?

আল্পনা মিত্র 

যদি

আপন-ঘর, ভাবিস পর, তবে সে ঘর অন্ধকার,
মনের ঘড়ি! থামিয়ে তড়ি, টানিস দড়ি ভালবাসার।
নিজেই তবে, নিঃস্তব্ধে, হারাবি সবে মলিনতায়,
থাকবি বসে, একলা শেষে, মনপ্রকাশে অজ্ঞতায়।
হয়তো আমি, নয়ত দামী, শিখড়গামী উচ্চতায়,
চাতক হয়ে, জল না ছুঁয়ে, থাকবি চেয়ে জল-আশায়।
রোদ চশমা, করে ঝাপসা, বাষ্প আশা ভাবান্তর,
তাই বলে কি, দুখ বাহকি, হবে সাবেকি নিরন্তর!
সূর্যদয়ে, চন্দ্রোদয়ে, নামচা নিয়ে ভাবিনা রোজ,
নিজ খেয়ালে, ছন্দ তালে, উঠবো দুলে, যে রোজ রোজ।

শিল্প সাহিত্য ১০৩

এবাদুল হক

স্পর্শের গভীর থেকে

দিনশেষে যদি দেখ স্বপ্নের ভেতর রক্তপাত
চিলেকোঠায় সূর্য অস্ত গেল অথচ রাত্রির মুখ ঢাকা
তাহলে নিশ্চিত জেনো তোমাকে খুঁজছে কেউ
অথবা প্রতীক্ষারত তুমি, বসে আছো স্মৃতির জঙ্গলে
ক্রমশ তোমার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, ফিরে আসছে অনুভবে
স্পর্শের গভীর থেকে উঠে আসছে আরেক মানুষ।

যদিও অন্ধকারে পা রাখার জায়গা খুঁজে খুঁজে
পায়ের কথাই ভুলে গেছ, ভুলে গেছ ক্লান্তি ও হতাশা
রাত্রির সংগমরত নদী ঢেলে দিচ্ছে বিষজল
চতুর্দিকে সময়ের ভুক্তাবশেষ, মাকড়সার মত মৃত্যুসুখ।

দিনশেষে যদি দেখ করোটির ভেতর সূর্য ডুবছে
অদৃশ্য শিশির হিমে নিভে যাচ্ছে চিরব্রতী আগুন
প্রার্থনা করো, বুকে যে সামান্য তাপ ছিল
প্রলয় চিৎকারেও তার কোনো গান বন্ধ থাকেনি।

অশোক অধিকারী

অভিমানে রুমালের ঘাম আনতে যায়

ভিজে হাওয়ায় ঘুম খুঁজছে পিতৃপুরুষ
হিম বসন্তে নির্মিত অভ্যুত্থান তার নারী বাসনা
উভচর হৃদয় খুঁড়ে সে রেখেছে বিচ্ছেদ ফুল
একখণ্ড কাপড়ের মেঘ তার শাড়ির ঠোঁট
দিয়ে মুছে দেয় ইমন কল্যাণ

লম্বা চিঠির পাতায় কাটাকুটি নিবিড় সংবাদ
বর্গক্ষেত্র জুড়ে নৈঋত অস্বস্তিসূচক রমণীয়
জানালার রোদে সম্পর্ক শুকাতে দেয়
একদিন গাছের দেয়াল বেয়ে লালারস
শিকড়ের গম্ভীরতা ভাঙাবে বলে
রুমালের ঘাম আনতে যায় অভিমানে

সুজাউদ্দৌলা

পা এবং তুমি

জুতাবিক্রেতার মতো চেয়ে থাকি
মেয়েদের পায়ের দিকে
এতো সুন্দর পা ফেলে তারা হাঁটে বলেই
চারপাশ এতো সুন্দর হয়ে ওঠে
তাদের পদস্পর্শে ধন্য হয় ধূলো
এতো এতো পায়ের দিকে তাকিয়ে
দেবীর মতো তোমার চরণপদ্মের
                     কথা মনে পড়ে যায়
অমন পা ফেলে তুমি আজ কার পথে
                                                  হাঁটো?

শিল্প সাহিত্য ১০২

তপনকুমার দত্ত

মেঘকে

মেঘ তোকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।
কখনো তুই আগুন জ্বালা উনানের পাত্র
থেকে উপচে পড়া দুধ। কখনো দুই সিংহ সিংহির
মুখোমুখিতে। কখনো ঘোড়ার পিঠে চড়ে ধূসর এলোচুলে ছুটে চলার মুহূর্ত। কখনো তুই ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের বুকে শুয়ে। কী দারুণ রূপ তোর কী দারুণ সাজ। তুই ভালো থাক।

মেঘ শোন তোকে বলি-এযাবৎ যত লিখেছি সব পড়েছিস কখনো। কখনো না পড়া লেখাটি দেখতে চেয়েছিস। চাস নি। তোকে শোনালে বলেছিস-চমৎকার। সুন্দর অথবা জবাব নেই।
মেঘ তুই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকিস।
একার মতো একা থাকিস
উড়ে বেড়াস এদিক থেকে ওদিক।
তুইও সরে যাচ্ছিস এক্ষুণি।

মেঘ এতো লিখে কী পাবো বল
অর্থ যশ প্রতিপত্তি নাকি
অলীক ভালোবাসার কিছু ছায়া
যা শুধু ধেয়ে নিয়ে চলে পেছন পেছন

মেঘ বিশ্বাস কর
পরকীয়া হবে না আমার
আমি ভীষণ একান্ত ভালোবাসি।
আমার ভালোবাসা কষ্ট
আমার ন্যাকামী বোকামী সব
আমার স্ত্রী-ই বোঝে
বিবাহিত দিন থেকে।

মেঘ একটু দাঁড়া শুনে যা
অক্ষর বাঁধা অনেকেই
অক্ষরে অক্ষর রেখে
ভালোবাসার যাদুতে
ভ‚বন মাতাতে পারে
মন মাতাতে পারে না
পারে না ছুঁতে
বুড়িচ্ছু খেলা ছাড়া অন্য কিছুতে।

মেঘ ধূসর হয়ে গেলি
তবে কি তুই কাঁদবি এখন
অঝোর ধারায়।
মেঘ আমার কথা ভালো লাগলে
অন্য মেঘে বলিস।

চিরু

অপেক্ষারা অন্তহীন

রাতের পর রাত পেরিয়ে
অপেক্ষারা হাত বাড়িয়ে
গুনছে কেবল দিন
আসবে ফিরে
আসছো ফিরে
এই অপেক্ষা অন্তহীন...

ডাইরি খাতার
আবছা আলোয়
উড়ছে পাতা
জমছে ধূলো
শুকনো চাওয়া প্রতিদিন...

তোমার আমার
ঘর কুড়োনো
অশ্র্র নোনা
দিন ফুরোনো
চলছে প্রতিদিন...

পেছন ফিরে
হাত বাড়িয়ে
দ্যাখো আমি
সেই দাঁড়িয়ে
যেমন তোমার যাওয়ার দিন...

অপেক্ষারা হাত বাড়িয়ে
গুনছে কেবল দিন
আসবে ফিরে
আসছো ফিরে
এই অপেক্ষা অন্তহীন...

গৌতম নাথ

জলছবি এই পথ

ফেরার পথ’টাকে এভাবে আগলে রেখে লাভ কি বলো?
সেই কবে থেকে ঝরো ঝরো বৃষ্টি গুলো পর্বত বেয়ে আজ বিস্তীর্ণ অতলান্তিক সমুদ্র হয়ে গেছে।
সাধে কি আর বলি হারাবার পথ’টাও এখন হারিয়ে গেছে।
পুরো তুমি’টাই এখন আড়ম্বর হীন, প্রচ্ছদ হীন ভিতর বারান্দা... আমার দখিন জানালা।
আমার আমি’তে বলো কয় দন্ড আর থাকতে পারি?
প্রতিটা বিরহই আমার ধ্রুপদী অমাবস্যা যাপন... শূণ্যতায় আলোছায়ার আলিঙ্গন।
ঘাটের কাছে সূর্য ডোবার সময় হলেই রুটিনমাফিক আনচান সন্ধ্যা।
তবুও দূরত্ব’টুকু মেখে নিতে হয়... দূরে যাওয়ার
জন্য নয়... পূর্ণ পথের সন্ধানে...
কোজাগরী আলোর বন্ধনে।
সব যাওয়া কি আর যাওয়া হয় বলো?
কিছু কিছু যাওয়ারও তো পিছুটান থেকে যায়...
কিছু কিছু যাওয়া সতত সবুজ জলছবি হয়ে থাকে।

গৌতম চট্টোপাধ্যায় 

এসো, পরাজয় দেখে যাও

যতই বর্ষা ঝরুক এ নোংরা সবুজ জলে
জীবন তো স্রোতে ভাসা শ্যাওলা,
যতই লক্ষ্য সিহ্র করে লক্ষ্য ভেদ করো না কেন
এ জলে ইন্দ্রধনু আঁকা হবে না কোন কালে!
মিথ্যে আশ্বাসের রণপা’য়ে আশ্বস্ত হয়ে
কত আর দৌঁড়াবে প্রগলভ জীবন! কতদূর?
ওই দেখো দিকচক্রবাল...
অপসৃয়মান মরীচিকা- বসন্ত দেখো!
এসো, হা-পিত্যেশ করা ফাঁকা মাঠে এসে দাঁড়াও-
হে মানব, তুমি কী দেখেছো ধীমান’এর পরাজয়
উড়ে যাওয়া কোন প্রজাপতি'র পাখায়!!!

অরিজিৎ রায় 

এ চোখ মানব জমিন 

মাথার ভিতরে এক শহর- উসখুস-ব্যস্ততা,
উদভ্রান্ত দিনলিপি খরস্রোতে বয়ে গেলে
যা কিছু ভাস্মর, ম্রিয়মাণ হয় সময়ের কাছে!
সম্পর্কেরা নিশ্চুপ, প্রদীপের সমঝোতায়
সারারাত জ্বলে যায়, নিভন্ত চুল্লির গনগনে
উত্তাপ বুকে নিয়ে!
এক্কাদোক্কায় দলছুট শৈশব- মোবাইল ভাবনায়
ইচ্ছে ফড়িং আঁকড়ে ঘাস মন জমি আঁকে
সাদা স্ক্রিনে। ভিতর ঘরে একাকীত্বের রং-মশালে
বিবর্ণ হয়ে পুড়তে থাকে মনের খাস-মহল।
দৈন্যতা ভেজা এ যাপন শুধু চোখ খোঁজে-
ভরসার নরম জমি! অনাহূত প্রেমিক অবয়ব
ভিতর উঠোন আমার- ছুঁয়ে যায় গাল মুখ ঠোঁটের
ইতিহাস ইলোরার স্থাপত্য ভেঙে বালিয়াড়ি
ধুয়ে যায়, গিরিখাত চিরে নেমে আসে একটি নদী-
ভালোবেসে যার নাম রেখেছি-“প্লাবন”


শিল্প সাহিত্য ১০১

সমতোষ রায়

রুচিবৈচিত্র্য

যেমনই হোক জবা/ জুঁই বা ধুতুরা
সবারই আছে শখ-সাধ-আহলাদ
রং নেয় রং পরে...
তারপর---
কেউ কেউ পরি আর কেউ বা পেতনি...

আবার যে পরি সেও কিন্তু সবার নিকটে পরি নয়
তদ্রুপ পেতনিও...

রুচিবৈচিত্র্য আছে বলেই-না এ-জগত এত রূপসী...

সায়ন তরফদার

পূর্বাভাস

বিরহতে আজ জমেছে মেঘ
হারিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি
হাওয়ার কেবল বাড়ছে বেগ
মন ভেঙেছে সারি-সারি।

ঝড় আসছে শহর জুড়ে
কেন যে তুই চলে যাস!
জানান দিচ্ছে চেনা সুরে
শুধু তারই পূর্বাভাস।

তোর ঠোঁটে ঠাঁই পায়নি
তাই, আমার ঠোঁট আগন্তুক
মেঘের গুড়ুম শোনা যায়নি
জানি, এটা বিচ্ছেদেরই অসুখ

এ শহরে আসবে না আর তোর মতন বসন্ত
আবহাওয়ায় বেড়ে চলেছে গ্রীষ্মের অসন্তোষ।

হরেকৃষ্ণ দে 

বন্দুক সরিয়ে হাতে তোলে আন্তরিক হৃদয়

একটি ঝিল সকাল আনন্দের গেটকিপার থেকে
বন্দুক সরিয়ে গোলাপ গুঁজে দিল,
গোলাপ হাসির মত পাপড়ি খুলে রং ছড়ালো,
বাগিচা পোশাক পাতার ক্লিপে রোদ আটকায়

লাল পিঁপড়ের বাসা বাঁধা মন জন্মদিন ছড়ায় বাতাসের নির্মল অক্সিজেন,

প্রিয় জন্মদিন
বিবেক মোমবাতি ঘেরা টেবিল
হাতে তোলে আন্তরিক হৃদয় কেকের অনবদ্য স্পর্শ।

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

হাতে হাত

গাছ নিয়ে যারা ভেবেছিল তাদের অনেকেরই
পায়ের নিচে থেকে সরে গিয়েছিল মাটি
জানলায় হাত রেখে তারা সোজা দাঁড়িয়েছিল
আকাশ ছুঁতে যাওয়া তাদের মাথা
শুধু গাছ দেখেছিল সারা দিনরাত

দিগন্তে নজর ছিল বলেই
পায়ের দৃষ্টি হারিয়েছিল পথ
পাখিদের সঙ্গে কোনো এক ভোরে ঘুম ভেঙেছিল
সবুজ জমি থেকে উঠে এসেছিল যে কণ্ঠস্বর
সকালের বন্ধু বলে কাছে গিয়েছিল তারা
বুঝেছিল হাতে হাতে লেগে গেলে জোড়া
ফিরে পাবে সব্বাই মাটি।

সমীর চট্টোপাধ্যায়

শপথের বানী

এত সুন্দর পৃথিবীর
সব কিছু ঘোলাটে বিবর্ণ রঙ!
তবুও, কবিতার পান্ডুলিপির ভাঁজে-
লেখনীর বর্ষা ফলকের মুখে একটুও পড়েনি জং!
জীবনের কুঁড়ি গুলো-সংকুচিত
ফুটবে কি ফুটবে না, ভয় ভয় চারিদিক,
স্বপ্নের নদী স্রোত পাশে মাথা তুলে,
বালি গুলো ধুসর রঙেতে চিক্ চিক্!
পার্কের বাগানে জলে ভেজা পাপড়ির পাতা,
কত দিন দেখেনি সে কচি কাচা দোলনায় ঝুলে!
সবুজ ঘাসের ডগায় জল ভরা অপেক্ষা,
আগামীর স্বপ্নদের কবে নেবে স্নেহ বুকে তুলে!
এগিয়ে যাবে সবাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি-
সন্তান বুকে চেপে মায়ের শপথ
কত বড় মহামারী দেখে নেব
পারো যদি আটকাও জীবনের পথ।।

অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

নদী

গুড়ো হয় বুড়ো হয় ছাতু হয় নদী
বুকের ভেতরে তার কলতান।
খাবি খায় সাঁতরায় ঠিকানা টাঙিয়ে
নদীর জন্ম নদী সন্তান...

অভিমানে সাতখানে ঢেউ ভাঙি আমিও
হিসাব রেখেছে তার চরাচর।
চলে যাব গলে যাব মোহনার গন্ধে
মনেতে পুষেছি নদী দিনভর...   

দুলাল কাটারী 

সুবর্ণরেখার তীরে 

ব্যকুল দুটো প্রাণ সারা মাসের শেষে হাতে হাত রেখে, চোখে চোখ রাখলে ধীরে ধীরে
মৃদু মন্দ বাতাসের অচকিত জড়িয়ে জড়িয়ে ধরা
তুলতুলে নরম পড়ন্ত বিকেলে, সুবর্ণরেখার তীরে।
শরতের এক খন্ড নির্লজ্জ্য সাদা মেঘ তোমার আঁচলের ফাঁকে উঁকি মারবে, এমন এক লগ্ন।
লাজুক তোমার আবেগি কপালে ও গালে বিন্দু বিন্দু জলকণা
লীনতাপের ছোঁয়ায় বাষ্পায়নে মগ্ন।
একজোড়া শালিক সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে আমাদের মাথার উপর গাছটিতে বসবে
কানাকানি শুরু করবে, তোমার রূপ বর্ণনায় ব্যস্ত।
স্থীর নয়নে ব্যকুল আশা গুলি মন থেকে ঠোঁটে আসবে।
অভিমানীর হৃদয় গলনাঙ্ক নামতে নামতে পৌঁছে যাবে শূন্য
সুবর্ণরেখা মন ভিজিয়ে, উপত্যকা কাঁপিয়ে, শিহরণ জাগিয়ে,
দুক‚ল ছাপিয়ে বইবে তখনও।

শিল্প সাহিত্য ১০০



শম্পা বিশ্বাস

 

অসন্দিগ্ধ কাকাতুয়া


সুখের সময় পালকের প্রাচুর্য আনে

বিপদে কথা বলে আমার সমর্থনে,

যুক্তি, তক্কো, বুলির চাবুুকেই প্রমাণ করে দেয় আমি কাঠগড়া নই।

হাতের কব্জিকে বানিয়েছে সে রাজগদ্দি,

রক্ষার প্রয়োজনে নখের আঁচর বসাতেও পিছুপা হয়না সে।

দুধের রমণীয়তার মাথায় অর্ধচন্দ্র মুকুটের ঝুঁটি দুলে দুলে এটাই সে বোঝায় প্রভুকে পোষ্যর অভাব কখনো দেয় না বুঝতে-

অভিনয় তো কল্পচরিত্ররা করে

কাকাতুয়া আরেক নাম প্রভুত্ব ও বিশ্বস্ততার।।



শিল্প সাহিত্য ৯৯

হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

উপহার

প্রতিটি গাছের পাতায় প্রেমের আগুন ছড়িয়ে গেছে, ঝড়ের পর চাঁদ উঠল
ঝড়ের সঙ্গে সে কি বৃষ্টি!
উপক‚লে আসমুদ্রহিমাচলে
সবাই বলল বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
ঘোড়ার খুরে নিষ্পেষিত হল মাটি
নদী উপকূল থেকে উপক‚লে ফোন বেজে উঠল
পথ ভুল করে হাওয়া এল হরির লুটের বাতাসা
নিয়ে তার দুটো হাত একটা পরম, আরেকটা চরম, পরম বলল 
তোমাকে দেখলে সমস্ত শব্দের মাত্রা, ছন্দ হারিয়ে যায় চরম বলল পরমকে 
মৃদু, নরম অথচ অসম্ভব কঠিন
অনুশাসন আমি জীবনে মানিনি

বৃষ্টি ধারার ভিতর দিয়ে বেরিয়ে এল তাদের এক একজনের সত্যি
এখন ভোর হয়ে এল, চোখে মুখে জল দিচ্ছে
শিশির ধানশীষ বেলপাতা
ঝড়ের পর চাঁদ ওঠার মতো সোদা গন্ধময় ঘাস ছড়িয়ে রইল চরাচরে, উপকূলে আসমুদ্রহিমাচলে এ জন্মের শেষ উপহার...

অনিন্দ্য বড়ুয়া

হরণ 

ছেঁকে যাচ্ছি সমুদ্রের অনিশেষ ঢেউ
মৈনাকে জড়িয়ে আছে বাসুকির বিষমাখা দেহ,
বিষমবাহুর নিচে শঙ্খিনী অস্থির হলে
ভদ্রচোখও বারবার চরিত্র হারায়
না- বোঝার ভান করা শিখেছো তো বেশ 
ব্যস্ত হয়ে আছো তাই ফুটে যাওয়া মুগ-মন্থনে
এই ফাঁকে
পোড়-খাওয়া রসুনেরা বিদ্রোহে ফেটে পড়ে
টগবগে বলকের মুখে-
নিঃশেষ হওয়ার আগে হয়তো বা
নিস্তারের দুর্লভ অধিকারই চায়
রন্ধনের কলা জান- ঘ্রাণে তা জেনেছি
না-বলার শিল্প বালা শিখেছো কোথায়?

মিলন ইমদাদুল

কবি  

একজন কবি যে পথে হেঁটে চলেন একান্তে-
গভীর চিন্তায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে,
অসুরেরা সে পথে থুথু ছিটায় বারংবার!

তবুও কবির মনে এতোটুকু লাগে না দাগ
থাকে না কোনো ঘৃণা -কিংবা অভিশাপ!

কবি নিঃসন্দেহে হেঁটে চলেন প্রতিবার,
কেননা কবিই একজন মানুষ- যিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন,

আঘাতের প্রতিঘাত অস্ত্র দিয়ে নয় 
ফুল দিয়েই দিতে হয়...

গৌতম চট্টোপাধ্যায়

মুমূর্ষু আঙুল 

পোকার মত কিলবিল করে উঠে আসছে
হাজার হাজার আঙুল...
নালা- নর্দমা'র ভেতর থেকে,
ঘিঞ্জি গলি বেয়ে
ধ্বসে যাওয়া ম্যাকাডেমাইজড্ রাস্তায়, কালচে...
সরীসৃপের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছে...
একটি আঙুল আরও কত আঙুলকে
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে...
কৃষ্ণ গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসা এ আঙুলের
কোনও নখ নেই, কোণায় রক্ত জমাট,
চুষে চুষে খেয়েছে জোঁক, বিবর্ণ, পরিত্যক্ত...
এ আঙুল জিভ ছুঁতে পারে, টানতে শেখেনি
এর খিদে লাগে না, আগুন জ্বলে না,
ঘাম ঝরে ঝরে আগুন স্তিমিত!
এ আঙুল তবলীগি ভাইরাস নয়
এ আঙুল পাথর ছুঁড়তে শেখেনি
এ আঙুল একলব্য’দের...
বয়ে বেড়ায় পঞ্চবর্ষীয় যোজনার কালি!
অর্জুন, কর্ণ এর মতো নেই এদের বীরত্ব
এরা চিরকাল বিস্মৃত, উপেক্ষিত,
ছোট; সামান্য দৃশ্য!
আত্ম- রক্ষা আর নির্ভরতার ধনুষ্টংকার
শুনতে না চাওয়া কত শত দ্রোণাচার্য
এদের কাছে দক্ষিণা নেয় রোজ!
আর ছড়ানো ছিটানো রাস্তায় 
মুমূর্ষু এ আঙুলের প্রতিক্ষণ চলে 
শ্রাদ্ধ নিমিত্ত ভোজ!!!

শিল্প সাহিত্য ৯৮

উদয় সাহা

সুশান্ত

মনের মত করে মেঘের পিঠে রঙ মাখতে মাখতে
চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে

অথচ দেখ আমাদের অনেকেই
রোজ রাতে তারা গুনি

তারা গুনতে গুনতে ভোর হয়ে যায় 

উঠোন জুড়ে শ্রাবণের ধারাবিবরণী 
স্কেচবুকে ঘষটে ওঠে শীতকাল
                              সংলাপহীন


নাদিম সিদ্দিকী

শঙ্খধ্বনি

আজ সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়ে যদি বলতে না পারি
কলমের লৌহ দৃঢ়তায় যদি লিখতে না পারি,
যদি না পারি রঙিন আভাষ ছড়াতে তোমার বুকে
তবে জন্মভ‚মির গর্ভে শাশ্বত ইতিহাস বলে দেবে
আত্মকেন্দ্রিক পৃথিবীতে আমি কতোটা অপরাধী
কতোটা জীর্ণ-শীর্ণ মনস্তত্তে¡ ভরপুর আমাদের সভ্যতা।

হে আধুনিক পৃথিবীর ডিনামাইট সভ্যতা
আমি তোমার কাছে জানতে চাই?
প্রাত্যহিক জীবনে ক্ষমতার এই নগ্ন লালসায়
এভাবে আর কতোকাল, আরও কতোদিন
বুলেটের নিষ্প্রাণ শব্দ চিৎকার করবে
আরো লাশ চাই, আরো লাশ চাই।

আর কতো লাশ চাই তোমার
আর কতো রক্তে ভিজলে মাটি
মুক্ত হবে জন্মভ‚মি, মুক্ত হবে ইতিহাস
আমি জানতে চাই?
এবং
জানাতে চাই অনাগত ভবিষ্যৎকে
এভাবে আর কতোকাল, আর কতোদিন
প্রভাতেই ঝড়ে যাবে রক্তিম ভাস্কর!

গোবিন্দ সরকার

শব্দের শক্তিশেল

অব্যর্থ অস্ত্র
ছুড়ে মারো পাখি মরবেই
আবার কোমল স্থানের নির্ভুল জড়িবুটি।

তূণীরের এই বাণ রহস্যঘন।

শব্দ, তুমি এত ধাতব কেন?
পাথর করতেও পারো আবার গলাতেও পারো।

তামান্না মেহেরুন 

মহাকালের যাত্রীরা 

রাত্রির স্টিমার থেমে গেলো বুনো ঝোপে
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম
ভয় নেই হে মহাকালের যাত্রীরা
এই বুনো ঝোপ আমার পোষা
এই থৈ থৈ জল আমার
এই নষ্ট ইঞ্জিন আমার
এই ত্যক্ত স্টিমার আমার
নীল দিগন্তের ফাঁকিবাজি মেঘ
আসমান চেড়া ফরমালিনের গন্ধ
পাখিদের ডানায় ঘুণে ধরা পালক
নদীর বুকে ভেসে উঠা লাশ
আমি আবারো চেঁচিয়ে উঠলাম
ভয় নেই হে মহাকালের যাত্রীরা
এই মেঘেরা আমার
এই ফরমালিনের গন্ধ আমার
এই ঘুণে ধরা পালক আমার
এই লাশ গুলাও আমার
জলন্ত নদী সাগরের সঙ্গম
চোখ পোড়ানো কালশিটে সমাজ
জীবন থেকে হারিয়া যাওয়া মানুষ
তোমার জিহ্বার বেপর্দা
অতঃপর কয়েক ফোঁটা দেশাত্মবোধ
আবার চেঁচিয়ে উঠলাম
ভয় নেই হে মহাকালের যাত্রীরা
এসব আমার কিচ্ছু না কিচ্ছু না।

শিল্প সাহিত্য ৯৭


জাহাঙ্গীর ডালিম

শ্রাবণ দিনে 

শ্রাবণে তোমাকে কি নামতে হবে
জল উঠোনে
ভিজতে হবে সকাল দুপুর
সারা বিকেল
বলতে হবে কোরাস করে-
দাও না ধুয়ে শ্রাবণ জলে
এই অতলে
একটু খানি শ্রাবণ দিনে
কে আমাকে বলতে পারেন-
বৃষ্টি জলের হিসাব কিতাব
ব্যাংকে যেমন জমা-খরচ তালগোলে
সব ঠেকছে মাথায়।
হেঁটে চলার ঠায় ঠিকানা ভুলে গেছি
নিত্য দিনের সংগী সাথী তাও ভুলেছি
যাদের সাথে অনায়াসে চলতে
পারি অনন্ত কাল
তাও ভুলেছি শ্রাবণে ভিজে এসে।

শিল্প সাহিত্য ৯৬


চন্দন মিত্র

ঘর 

ফেরার জন্যে ঘর থাকা চাই ঘরে
যেন পায়ের শব্দ শুনেই চিনতে পারে

নচেৎ বৃথাই বৃত্তে ঘোরা
                ঘরের মধ্যে ঘর আছে যার 
                তার ফেরাটাই ফেরা 

তখন মেট্রো স্টেশন ঝিলের ধার বা পার্কে
                একলা মানুষ থাকতে চাইবে আর কে 
           
ঘরের ছায়ায় সবাই যদি ঘর পায়
পথের  পাগল দেখবে সেও ঘরে যায় 


কিরণ আহমেদ

সমান্তরাল

কথার ভেতর স্মৃতিনদীর সুরাসব
চোখের ভাষায় মিষ্টি প্রেমের অনুভব
নাকটাও বেশ নিখুঁত-বুনন সব মিলে
ঠোঁটেচুমোর উষ্ণ আভাস ফুটছে যে...

তোমার কথাই ভাবছি আমি౼ খুব অধীর
দিন ফুরালো ভাটির টানে গোমতীর
আজও জ্বলে বুকের ভেতর౼ এই দিলে
সূর্যও তাই পোড়া মনটা খুঁটছে যে...

তুমি আজো আগের মতো প্রেমময়ী
আগের মতোই দীপ্তি ছড়াও౼ অন্বয়ী
তুমি এসে মিশে যাও আ-কাশ নীলে
দিগন্তের ওই হাসি আমায় লুটছে যে...

তোমার জলে সাঁতরে বাঁচে স্বপ্নরা
প্রেমের বুকে দিব্যি আছি, নেই জরা
মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে মন-ঝিলে
দেখি আজও সমান্তরাল ছুটছো যে...

শিল্প সাহিত্য ৯৫


হরেকৃষ্ণ দে 

খিল

নিত্য সকাল ডাকছে গতর নিত্য বাঁচার ছন্দে
স্বপ্নগুলো ভাতের জলে ফুটছে
দিনকে দিন স্বপ্নগুলো কুটছে
ঘামের জলে খাইখরচে কাটছে ভালো মন্দে।

গল্প হয়ে লাখ টাকায় স্বপ্ন পায়ে ছিঁড়ছে কাঁথা
লালস্বর্ণের মোটা ভাতে ঘুরছে
ভাদর দুপুর ঝিমধরা মন ধুঁকছে
বুকের ঠ্যালাই পাঁজরগুলো কাটছে মাথা।

জীবন খাতার মলাট ছেঁড়া গামছা ঘেরা কোমর
কব্জিগুলো টাল খেয়ে যায় মাটিতে
গাইতি শাবল যত্নে থাকে জামবাটিতে
দরজা ভাঙে পেটের বানে খিল আঁটে ভদ্র শহর।

মৃন্ময় মাজী

যোগ চিহ্ন

তাদের মাঝে যোগ চিহ্ন
এঁকে দিয়েছিল একটা পার্ক।
সাক্ষী ছিল ঠোঙা আর ঝালমুড়ির
শেষ ঝালের চিঠি সকল...
টিয়া পাখির ঠোঁট রাঙিয়ে ছিল যোগ,
যত্ন রেখেছিল অর্জুন গাছের কোটরে।
তারপর...
কাঠুরে গাছ কেটে কাঠ নিয়ে গেছে
টিয়া পাখি উড়ে গেছে...
অসময়ে ঝরে গেছে
দুটি গোলাপের ফুল...

শামিমা সুমি

প্রত্যাশার কবর

অভিমানের তীর আর তোমার দিকে হানবো না
অধিকার যেখানে ক্ষীণ প্রত্যাশার কবর সেখানেই,
দুরালাপনীতে তোমার কণ্ঠ ভাসলে ভাবি এবার মুখ হাসবে
কিন্তু আমার মন খারাপে তোমার মন কাঁদে না কখনোই।
তুমি কারণ জানতে চাওনা কখনো ব্যয় করতে চাও না বাক্যাংশ
আমার চোখে ব্যথার নদী হলে তুমি ভাসাবে তাতে
তোমার আহ্লাদে আমার স্বপ্নভাঙা কাগজের নৌকো
হাঁটুজলে ডুবে গেছে আমার এতদিনের স্ত‚পাকৃত সাধ।
বড্ড অবেলায় বড় অসময়ে মন নিয়ে খেলেছো আমার
পাঁজর ভাঙা বেদনায় কতোটা তা শুধু জানে দূরের পাহাড়,
রাতের আঁধার বলেছে আমায় চুপিচুপি কাছে ডেকে
শোন মেয়ে জগত ভালোবাসে না কেউ কেউ খেলে যায়।
ঈশ্বরকে বলেছি জমা রাখো অশ্রুসকল তোমার অঞ্জলিতে
প্রকৃতিকে বলেছি তুলে রাখো বুকে আমার সকল দহন,
ভালোবেসে যারা নিঃস্ব হয় তাদের হারাবার ভয় থাকেনা
মৃত্যুর পর এপিটাফে লিখে রেখে যায় হন্তারকের নাম।

রুমকি আনোয়ার

সময়

প্রথম সিকোয়েন্স- ক্ষুধার্তের কবিতা লিখে একটি রক্তাক্ত হাত
যে হাত একদিন কামড়ে ধরেছিল নিজের হাত।
দ্বিতীয় সিকোয়েন্স- হাতল দেয়া চেয়ারে চিন্তাক্লিষ্ট নেতা
ধ্যানী শালিকের মত।
তৃতীয় সিকোয়েন্স- নো রিলিফ ফর বাংলাদেশ
দে ডু বিজনেস উইথ কিউবা
চতুর্থ সিকোয়েন্স- বাসন্তীর পড়নে মাছ ধরার জাল
সাংবাদিকের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠে
পঞ্চম সিকোয়েন্স- রফিক আজাদ ‘ভাত দে হারামজাদা
নয়ত মানচিত্র খাবো।’
ষষ্ঠ সিকোয়েন্স- খুসখুসে কাশি নিয়ে কয়লা দিয়ে
মন্বন্তরের চিত্র এঁকে যাচ্ছেন জয়নুল আবেদিন।
সপ্তম সিকোয়েন্স- চাল, কেরোসিন, লবনের পারমিট
তাহের উদ্দিন ঠাকুর, খন্দকার মুশতাক।
অষ্টম সিকোয়েন্স- গনেশ উল্টে হরি লুটে
সব চামচার দল।
নবম সিকোয়েন্স- পড়ে থাকে নেতার লাশ
দ্যা প্যাট্রিয়ট লেখেনি কেউ তখন।
দশম সিকোয়েন্স- আজও কবিতা আঁকে একটি রক্তাক্ত হাত
মৃত্যু আসে কি বিষণ্ন সুন্দরে।

তন্ময় বিশ্বাস

আলোর খোঁজে


মহামারী, অন্ধকার, হতাশার মাটি খোঁড়ার পর -
এক অমোঘ আলো বিড়ালের মত পাশে এসে বসে-
চাটতে থাকে পচন ধরা হাত-পা, ক্ষয়ে যাওয়া ঘিলু!
ভয়ে কুঁচকে যাওয়া চামড়ায়,বাড়ি মেরে মেরে দেখে-
অস্তিত্ব!

অমাবস্যার বিমর্ষ চাঁদের মত মনে হয় তখন!

তবু আলোর এক অদ্ভুত শক্তি আছে, অন্ধকার ছেঁকে ছেঁকে-
আমাদের মনের মধ্যে পুঁতে দেয় জীবনের-শুক্রাণু!
চলমান বৃক্ষের উপর লেখে অস্তিত্বের গান!

আলোর উপর বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এখন-
বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে সূর্যকে-
যে আলো একদিন লাটাগুড়ি থেকে মূর্তি পর্যন্ত হেঁটেছিল ।

শিল্প সাহিত্য ৯৪


সুজাউদ্দৌলা

ফটোসেশন অথবা আসল কাহিনি

ক্যামেরায় আমার ছবি ভালো আসেনা
      মেয়েটি বলেছিল
আসলে ক্যামেরার সামনে আমি
ঠিক নরমাল থাকতে পারিনা
আর তাই ছবি তুলিনা এমনকি
মোবাইলে সেলফি পর্যন্ত না
আসলে ছবি তোলা আমি পছন্দ করিনা
আসলে আ আসলে তোতলাচ্ছিল সে
আসলে কাঁদছিল মেয়েটি---

অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী 

বুদবুদ

কি এমন মনে ছিল জোনাকির আলো
মাটির ভেতরে ছিলো নিষ্প্রাাণ গাছ।
কি এমন ছবি ছিল কালো শুধু কালো
ছড়ালে না জমিনে তা আনাচ কানাচ।

কি এমন শিকড়েরা পাথরের বুকে
থাবা দেয় শুষে নেয় বাঁচানো পৃথিবী...
চাঁদ তারা স্বপ্নেরা ডোবে সম্মুখে।
বেঁচে থাকে বুদবুদ মাছেদের খাবি...

আর কিছু বেঁচে থাকে মাঠে বোনা ধান   
চাপ চাপ পড়ে থাকে শূন্য উঠান। 

অনিক সাহা

জ্যাম

আষাঢ়ের একটি খরতাপের দিনে
ভ্যাপসা গরমে মুখ বুঁজে পড়ে থাকি বাসের ভিতর।
কানে গোঁজা ইয়ারফোনের সীমানা ভেদ করে পৌঁছায় এ্যাম্বুলেন্সের তীব্র চিৎকার।
আঁৎকে উঠে মুখ বাড়িয়ে দেখি,
আবারও কোন নেতার গাড়ি যাচ্ছে নাতো!


শিল্প সাহিত্য ৯৩


ঋত্বিক গোস্বামী

বাসনা
(কোনো এক প্রিয় কবির স্মরণে)

মদ আমাকে প্লাবিত করেছ তুমি
তোমাতে দুর্বার অবগাহন ছিল একদিন
ছিল প্রত্যন্ত ভাসান আমার,
আজ রিক্ততায় যখন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত আমি
যখন একটিও প্লবতা অবশেষ নেই কোষেতে কলাতে
অঙ্গে অঙ্গে নেই সাঁতারুর নিপুণ কৌশল

আমাকে তোমার সেই ঐশী শক্তি দাও মদ
আজ আমি মাতাল করব সমস্ত পাথর চরাচর।

আল-আমীন আপেল

"দুঃখ"


মেঘ গলে পড়লেই তোমরা তাকে বৃষ্টি
বলো, আসলে ওটা তো মিকাইলের
দুঃখ!
পাহাড়ের বুক ফেড়ে বয়ে আসা ক্রন্দনধ্বনিকে
বলো ঝরণা- ওটা তো আসলে পাহাড়ের
দুঃখ!

মো. আরিফুল হাসান

বৃষ্টির জন্য কয়েকটি কোরাস

যেনো আমি জলাবদ্ধতা, -তোমার থই
থই বুকে, যেনো আমি আগুনের চশমা

তুমি ভুল করে ভালোবাসোনি। আসলে
ভালোবাসা আমাদের যুগল ভুল ছিলো

রমনীয় মুখে মা ডাকটি শুনতে সুন্দর।
আমার বাহুতে তোমার ফণা দোলে।

আইরীন কাকলী

নক্ষত্র রঙের সুখ

ডুব জলসায় জীবন জলরং পথে বেঁকে
রংধনু আবিরে রক্তিম চোখে শূন্যতার
ধুলো সরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
দেখি আমার নক্ষত্র যাচ্ছে দূরে সরে;
প্রেমের তাবিজ বেঁধে সমুদ্র পথে যাত্রা।
উত্তাল তরঙ্গের চূড়ায় অস্পষ্ট লক্ষ্য,
একটা অনিশ্চয়তা ধরে রাখার চেষ্টায়
স্বপ্ন দেখি এক আকাশ নক্ষত্র রঙের সুখের।
সে সুখের পায়ে রূপোর নূপুর দেবো বেঁধে
সে সুখের গলায় দেব দোপাটি ফুলের মালা
সে সুখের হাত সাজাবো মেহেদী রঙের আল্পনায়
সে সুখের সিঁথিতে দেবো রংধনু সিঁদুর...
জলে জবা বিসর্জন দিয়ে
সুখের মন্দিরে পূজো হবে রোজ...

সোমনাথ  বেনিয়া

ঊনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ - ৩২

না থাকার বিষয়টি, থাকার চেয়েও বেশি থাকা অনেক সময়
যার মুখ দেখলে ঝগড়া, তার তোতলাজীবন অনুতাপের কারণ
ধরে নাও বসে আছি বিচ্ছেদ শেষে, তখনই ডেকে উঠলো ডাহুক
কী আবেশ, ঝুলবারান্দার ভিতর ভিন্ন এক বারান্দার রোদ
উজ্জ্বল, মৃত্যুর রঙ কতটা উজ্জ্বল হলে হাঁটাপথ, ছায়াপথ
পায়ের তলার স্পন্দন বোঝে ভ‚মিকম্পের সরল ছেলেমানুষি
রাগ নেই, বিরাগভাজনের প্রশ্ন নেই, অথচ আশ্চর্য আকাশ
বেদনা ব্যয়বহুল বলে অল্প খরচে মনের ভাঙন খুচরো পয়সা
তাই লেখার শেষে অযাচিত যতিচিহ্নের বিমূঢ় অহংকার জাগে
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিপন্নে যে ঠোঁট কামনার ধুলোময় চৌরাস্তার মোড়
রাতের প্রহরী জাগে, পাকস্থলীতে অ্যালজোলামের স্বপ্ন নিয়ে
এখানেই সব কথা বলতে হবে, অনন্তের ঠিকানা পোড়োবাড়ি
সাতপাকে বাঁধা পড়েছে হৃদয়, মনের দ্বিধা কড়ে আঙুলের আড়ি

খাতুনে জান্নাত

ব্রিজ

ভেঙে পড়ছে ব্রিজ
কংক্রিট জ্বরে কাৎরাচ্ছে সামনের রাস্তা
কত সাধনা করলে সাধু ভেস্তে গেল ঘাম ও জঞ্জালে
গাছের ডালে ঝুলছে ঘুড়ি ও চামচিকা
মিলেমিশে থাকে মুক্তি ও বদ্ধতা
ব্রিজ ভেঙে পড়ছে
ঝুলে পড়ছে বাগান
চৈত্রের পুকুর থেকে উড়ে যায় মাছ
সম্পর্ক থেকে খুলে পড়ে হাড়
মাংসের ডিবি ধরে এগিয়ে যাচ্ছে উইপোকা...
মুণ ভোর নাচছে তা ধিন তা ধিন-

বজলুর রশীদ

ধনী বিষয়ক

জুয়াড়ি জলসা ঘরে
আগে পতনের চিন্তা কেউ করে না
উত্থানে যত কৌশল, কীভাবে আসবে
অনিবন্ধিত সম্পদে ধনী বিষয়ক পদবী।
তাই লোভে কেউ রূপান্তর ছদ্মবেশী-
পতনের ভয়ে চেহারা লুকিয়ে
ভাবেনি স্বর্গ জোঁড়া সুখের
বাস্তবতায় মানচিত্র পাহারা দেয়।
বোধনের গতি এখন দিনের প্রস্থানে
কেঁচো খুঁড়তে জেগে উঠছে
কোথাও সম্মুখ যোদ্ধার দল;
করোনাকালীন সময়ে
অনুতাপ ওরা কুড়ে কুড়ে খায়
তাদের এবার বিচার হবে...

শিল্প সাহিত্য ৯২

বিপুল রায়

ইন্দ্রকানন

কিসে যে কি হয়, মন জুড়ে ভয় ভয়, কত কথা শুনে যাই কানে।
রাত কেটে দিন আসে, কেউ থাকে না পাশে, কোন কথার ঠিক কি মানে?
হাঁটা পথে গাড়ি চড়ি , গলি থেকে গলি ধরি
রাজপথ ঠিক কতদূর?
যেতে যে হবেই হবে, চিরকাল কে কবে, ডাক দেয় কোন সে সুদূর !
আমি সে আমি নই, ফুটপাত জুড়ে বই, সেক্সপিয়র, কিটস, বায়রণ।
হাতে পুরোনো বই, পথে ছড়ানো খই, পিছনে পড়ে থাকা যে বারণ ।
কেন এই ভয়ভাব, মনে কেন উত্তাপ, পথে থেকে ছুটি পথে পথে।
যেভাবে দিন কাটে, সে পথেই রাত হাঁটে, জীবন যেন বাঁধাগঁতে।

কিসে যে কি হয়, মন জুড়ে ভয় ভয়, কত কথা শুনে যাই কানে।
আকাশে আকাশ মেশে, কে দাঁড়ায় গা ঘেঁষে, কে জানে- কার শেষ ঠিক কোনখানে ?

জিতেন্দ্র দাস জিতু

হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ 

এখন সন্ধ্যা নামে মাঝ দুপুরে
একাকীত্বের অলস সময় গুমরে কাঁদে অন্তর দহনে
চারিদিকে দুর্বিষহ নিরবতা স্পর্শে মারা যায় দূরত্বের সীমারেখা লঙ্ঘন হলে
হায় নিয়তি, সবার আনন্দ দানে বা বাঁচার তাগিদে স্বদেশে, বিদেশে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত ছিলাম
একে অপরের সাহায্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতাম
অথচ ছোট্ট এক অণুজীবের কাছে আজ কতো অসহায়
কোথাও ঠাঁই নেই, মৃত্যুর মিছিলেও একা শ্মশানে বা গোরে
পালাবার এক চিলতে ভ‚মি নেই সবখানে মৃত্যু মৃত্যু আর মৃত্যু
দানব রুষ্ট হলে প্রকৃতি রক্ষা করে সেই প্রকৃতি বিমুখ হলে রক্ষা করবে কে?
মৃত্যু নির্ধারিত চরম সত্য জানি,
অবধারিত মৃত্যুর মিছিলে এক সারিতে দাঁড়িয়ে শোকে কাতর কাঁপছে শিরা উপশিরা,
কান্না শুকিয়ে গেছে হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ

সুধাংশু চক্রবর্তী

এসো ভালোবাসায় মুঠো ভরিয়ে দিই

অন্তরে অনুভব করি অদ্ভুত একটা মায়াবী আকর্ষণ
যখনই সামনে এসে দাঁড়াও
ভালো লাগার যে উত্তাল ঢেউ, ভেঙে দিতে যায় হৃদয়ের
পাঁজর, পারো যদি ভালোবাসা দিয়ে তাকে সামলিও
তুমি এবং আমি - দু’জনে মিলে তিল তিল করে
সঞ্চয় করি ক্ষণস্থায়ী যাপিত জীবনের সম্ভব্য যেটুকু পাথেয়...
ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই যে নেই তোমাকে অদেয়,
এসে দু’হাত ভরে সেটুকুই নাহয় নিয়ে যেও ।

প্রণব কুমার চক্রবর্তী

আত্মসাৎ

তেমন কিছু আঘাত নয়

স্পর্শমাত্র
ভেঙ্গে পরলো
আমার বর্ণময় সাজানো চালচিত্র

রাজপথে
সহসা হাজির
একদম মুখোমুখি আমরা দু’জনা
ভেতর আর
           বাইরের আমি

বৈশাখী দুপুরের ফুটিফাটা মাঠে
সরল পাখির দৃষ্টির মতো
দীর্ঘতর হচ্ছে
আমার
এক অজানা, অচেনা
গাঢ় নির্জনতা

আসলে
হাতের আঙ্গুলে
নাড়াচাড়া করতে করতে
সূর্যটা কখন যে পড়ে গেল অন্যের কোর্টে
বুঝতে পারিনি
আস্তে আস্তে নেমে এলো
দুপুর গড়িয়ে বিকেল
তারপর সন্ধ্যা এবং রাত্রি

রাত্রির কথা ভাবলেই
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে ওঠে
মনে পড়ে
শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে বসে
জোছনার আলোয়
তুমি আর আমি গান গাইছি
ভালোবাসার গান সেই আগের মতই

চিন্ময় বসু

রাত্রির উৎসব 

বৃক্ষহীন স্তব্ধ বন নামহীন শান্ত সঙ্গীত।
যখন হঠাৎ অলো ভেঙ্গে পড়ে চিতার পায়ের ধ্বনিতে
আর কথা ফেনিয়ে ওঠে জলপ্রপাতের মতো
তার দীর্ঘ ক্ষতও সেজে ওঠে নিখুত শব্দহীনতায়।
আনন্দ ফলের মত পরিপক্ক হয়।
হতে হতে সূর্য হয়ে ওঠে, সুর্য মানুষ হয়
মানুষ তারা হয়ে যায়,
আলোরও এতো রকমের শ্রেণী বিভাগ।
গাছ, রাস্তা, পাহাড় স্বচ্ছ ঢেউএর ভিতর প্রস্ফুটিত হয়
 সকাল এক বালিকার হাসি দিয়ে শুরু হয়েছিল।
কোকিলের গান পোড়ানো পালকের মত,
গান তার নগ্ন বাহুমূল দেখায়,
তার খালি পথ আর তার নগ্ন চিন্তা নিয়ে
আবেশের ওমে সুখি মুহূর্তগুলি শান দেয়।
জল, মাটি সুর্য সব এক বস্তু।
সময় আর ঘড়ি দ্রবীভ‚ত হয়, পাথর ও দৃশ্যাবলি উবে যায়,
তারা মুখ না ফিরিয়ে চলে যায় ।
স্মার্ট বন্ধুরা ঘূর্ণিপাকের ধার ঘেঁষে চলে যায়,
বাড়ী মন্দির মসজিদ গির্জা ছাড়িয়ে
ভোরের ট্রামে চেপে পৃথিবীশুদ্ধ, বিশ্বশুদ্ধ লোক উড়ান ধরে,
আমার শরীরও ছেড়ে দেয় আমাকে।
আমি স্বচ্ছতার ভিতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
সুর্য চারপাশ ঢেকে ফেলে, সব তার নজরের আওতায়
তার ভিতরে আমাদের অবগাহন,
তার দৃষ্টির কনীনিকায় আমরা কবে দগ্ধ হই ।
তার বিচ্ছুরিত আলোর ছটার গভীরে আমাদের অনিবার্য পতন,
ভাঙ্গা সঙ্গীত ও বাদ্যের মত আমরা পুড়ি
এতো টুকু চিহ্ন মাত্রও থাকে না।

রুহুল আমিন (রনি)

কথা এবং ব্যথা

ভেবেছো কী?
মুখ ফুটে কথা বলেছো কী?
বিবেকের কাছে এমনই হাজার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম;
উত্তরটা শূণ্যে ভাসছে...
খুঁজে বেড়ানো উত্তরটা এখনও মন-বন্দী!
উত্তরটা সরল-সোজা কিন্তু তীরের মতো শক্ত!
ছুঁড়ে দিলাম
থামবার শক্তি নেই।
কথা আছে
বলার মতো ভাষা নেই।
কথা একটাই
চোখ আছে দেখো
কান আছে শোনো...
পরিশেষ,
মুখ আছে বন্ধ রাখো।

শিল্প সাহিত্য ৯১

মিলন ইমদাদুল

মৃত্যুপাঠ

আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে কবর দিও
যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়-
তবে আমার চোখ দুটি'কে যেন নয়!
এ চোখে আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই...!

মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পড়তে পড়তে-
কখন যে নিজেই ঘুমিয়ে পড়বো
অন্তীম যাত্রার পথে ,
এ সত্য জানার ক্ষমতা নিজেরও নেই!

মৃত্যুকে ডান হাতে নিয়ে চলছি দিবারাত্রি-
জীবন নদীর তীরে,
শৈশব স্মৃতিরা যেখানে আকঁড়ে ধরে!

মৃত্যু যে কতো কষ্টের-
মরেছেন যিনি তিনিই ভালো জানেন...!

মানুষ মরে গেলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে তার ছায়া-
একমুঠো তৃষ্ণার্ত রৌদ্দুর বহুমুখী মায়া


মজনু মিয়া

নির্লজ্জ ছোঁয়া 

ইতরপনা নয় তো প্রেম নদীর মত উদার
নির্লজ্জ ছোঁয়া বেহায়াপনা
কামুক হলেও অপন্দনীয়।
মনের ছোঁয়া চোখের দেখা কিংবা
ঠোঁটের কামড়ানি
নিকট প্রেমের দাম বাড়ায় সে।
অচেনা বা অজানাকে এমন ভাবে দেখো না-
নিদয় হয়ে চাপটে আঘাত করে,
কিংবা ডাকে গায়ের লোক ন্যায্য বিচার চেয়ে।

তোমার আমার সম্পর্কটা এমন হতে পারে
চাঁদের মত দেখা শুধু নিরবে কোনো আবদার না,
ছোঁ’তে যাওয়া কেন?
এসেই ছোঁ’বে তোমায় মন দিয়ে তা
নদী যেমন সাগর পানে ছুটে।

তন্ময় পালধী

হত্যা

ছুরি হতে আসেনি আততায়ী,
প্রয়োজনই বা কী?
যে কথার লহরিতে সুরের কথাকলি জাগে,
অকালবসন্ত নেমে আসে
আঙিনা জুড়ে হাসনুহানার মুগ্ধ সৌন্দর্য
ঘিরে থাকে ঘিরে থাকে হৃদয় সীমানা।

বন্দুক বা অন্য অস্ত্রেরও প্রয়োজন বুঝি ছিল না।
আসলে কথার বিনুনিতে
ছুঁয়ে যেতে থাকে ভালবাসার অলিগলি।
যে স্পর্শে দোলা লাগে,
আর চকিত চাহনিতে চাঞ্চল্য,
নিদাঘপীড়িত তপ্ত অনুভূতি
শীতলতম হয়ে ওঠে।
আমার পৃথিবীতে সুরের প্লাবন আসে
কত্থকের ছন্দে মুখরিত হয় ব্যস্ত আমিত্ব
যে অক্ষরের জাদু সমারোহে বাঁচার প্রেরণা।

কিন্তু হৃদয়ের গহীন রহস্য অজানাই রয়ে যায়
অস্ত্র নয় যখন কথাতেই ভালবাসা খুন হয়।



জয়ন্ত ব্যানার্জী

ঝাপসা আলেখ

তুমি যেন অনেকটাই সরে দূরে,
হাসি মুখটা আবছায়ায় গেছে সরে।
তোমার অবয়বের ধরণটা যেন ঝাপসা,
আমার দু’চোখে বাষ্পের বাধা আবছা।
ভালোবাসা যখন পিছন ফিরে চায়,
বুকের ভিতর নিঙড়ে উঠে মোচড়ায়।
বৃষ্টি ধুয়ে অশ্রু-ভেজা নোনা,
মিষ্টি জলে ভাসায় দুখের দানা।
তোমার বুঝি একই অভিমান?
ঝাপসা কাঁচে, ভাপের আস্তরণ?
একটু তুমি এগোতেও তো পারো,
অস্পষ্টে, দু’হাত বাড়িয়ে ধরো।

রফিকুল নাজিম

কাঁহাতক প্রতীক্ষা

কোনো কোনো যুগল সারারাত পূর্ণিমার জন্য অপেক্ষা করে
কোনো কোনো কবি কবিতার উদোম শরীর পড়ার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে টেবিলে। রাজনীতিবিদ অপেক্ষা করে ভোটের।
একপ্লেট ভাতের জন্য ভুখা মানুষটাও খুব অপেক্ষায় থাকে।

অথচ আমি এইসবের কোনোটার জন্যই অপেক্ষা করিনা
এই পাংশুটে ও বিমূর্ত আবেগে আমার কখনো রুচি হয়না।
সামনে যা পাই-সবকিছুতেই সুন্দর দ্যাখি; উপভোগ করি,
যেমন: চলতিপথে নাম না জানা বনফুল, সেই ছোট্টপাখি,
সদরঘাটের লঞ্চে দ্যাখা কাজলটানা চোখের সেই মেয়েটা;
যার চোখে চোখ রেখে মনে হয়েছিলো এইতো সেই চোখ!

অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষা করার মত বদাভ্যেস আমার নেই
সামনে যা পাই-সবই গোগ্রাসে গিলতে থাকি; উপভোগ করি।
যেমন উপভোগ করতাম তোমার বুকের সেই তিলটার ওম
এবং ঐ তিলের ওমের প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে সেই কবেই আমি চাতক হয়ে গেছি!


শিল্প সাহিত্য ৯০


উৎপল বাগ
রাতকথা

নিশুতি রাতের অন্ধকারে নিশাচরীয় লীন ঠোঁটে
অব্যক্ত প্রতিধ্বনি
মেঘের আড়ালে নির্ঘুম চাঁদের নিদ্রালু চাউনি !
জল থৈ থৈ রুদালী বুকে প্রতিবন্ধী ছোঁয়ায়
স্বপ্নকথার খোঁজ ঝিঁঝিঁ লাগা দুচোখে
হিমশীতল বাষ্পের চুপ কথা।
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনিতে
চুপিসারে নামে হৈমন্তিক রাতকথা
শেষ হয়ে যায় কয়েক মুহূর্তে।
দুচোখের নীচে গঙ্গা যমুনার পাড় ভাঙা ঢেউয়ে
বুকের বিভাজিকায় জমানো নুড়ি পাথরের ঘর্ষণ
সরীসৃপ শ্লথ গতির বিবর্তন !
সমান্তরাল পথের ধারে আগাছার জঙ্গলে
বিস্মৃত অতীত।

শিল্প সাহিত্য ৮৯


দ্বীপ সরকার

বিরান হওয়ার রাত

একটা বিরান হওয়ার রাত-
জামদানি কুয়াশার ভেতরে, চারপাশে জ্বালাময়ী ঝোপঝার
লুণ্ঠণের আওয়াজ থেকে আসছে রাতের ডাক
কবরের পাশে বসে বসে রাতকে করছি আয়ত্ব
অদ্ভুত অপেক্ষা সব!   

সেদিনের সেই ভৌতিক রাতের কথা ভুলিনি-
ক্ষণে ক্ষণে বিরান হচ্ছি, বিরান হচ্ছে পাশে বসা রাত
ভয়ার্ত শিয়ালের ডাকে নেচে উঠছে শরীর
হাতের কবজি জুরে পেতনিদেও ছায়া পড়ে আছে যেনো
বৃক্ষের মর্মরও বেশ ঢুকে পড়ছে, শিউরে উঠি
কাঁপে গলার ভেতরকার অনুগত আওয়াজ!

তবুও নিজেকে দাঁড়িয়ে রেখেছি, বসে রেখেছি-
আরেকটু পরেই ঢুকে যাবো কাঙ্খিতের গতরে

অপেক্ষার ভেতরে আরো কতোনা ব্যাপার থাকে বাপু!


শিল্প সাহিত্য ৮৮



রুশো আরভি নয়ন


করোনা তোকে অভিশাপ

যুদ্ধ চাই।
স্বাধীনতা হরণের যুদ্ধ,
প্রকৃতির সাথে বোঝাপড়ার যুদ্ধ।
এ যুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো নয়,
প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো অবলোকনো নয়।
এই যুদ্ধ অদৃষ্ট, দুষ্ট,অলক্ষ্মী করোনার বিরুদ্ধে।
যাকে বলে ঘোলা পানিতে মৎস্য স্বীকার।

আজ আমি মন থেকে তোকে অভিশাপ দিচ্ছি,
তুই নিস্তেজ হয়ে পড়বি নিজের লাগানো দাবানলে,
জ্বলে পুড়ে হয়ে যাবি কয়লা।
শেষ হয়ে যাবে তোর দাপট, মেজাজ আভিজাত্য।
তোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে আজ আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। জাড়ি করলাম ৪৪...

হয়তো Ak47 রাইফেলের মতো অনবরত গুলি বর্ষণ করতে পারবোনা তোর নিষ্ঠুরতার অস্তিত্বে, তাই আজ স্যাভলন, ডেটল, ডিটারজেন্টের পাওয়ারেই তোকে আঘাত করার নীল নকশা তৈরি করেছি।
আজ আমি তোকে রগড়ে দেবো, ঝলসে দেবো,করে দেবো ভস্ম।
আজ আমি হয়ে উঠলাম লড়াকু সৈনিক, আজ আমি হয়ে উঠলাম ভ্যাকসিন, মাস্ক, ত্রাণ, স্যানিটাইজার।
আমাকে আজ লড়তে হবে, প্রতিরোধ করতে তোর তৈরি মরণআঘাত।

আমাকে চাইলেও আর ঘড়ে বন্দী করতে পারবেনা কেউ। সরকার, মন্ত্রী-মিনিস্টার, পুলিশ-প্রশাসনকেও না। আমি ছিন্ন করবোই আজ সব বাঁধন।
আমাকে আজ লড়তে হবেই, দেয়ালে পিঠ ঠেকবার  আগেই অস্ত্র হাতে তুলতে হবে, হতে হবে সূর্যের মতো কঠোর।
আমাকে হতে হবে করোনায় প্রাণঘাতী মৃত লাশের কাফন, হতে হবে শেষ যাত্রার খাটি, কখনো বা ধোঁয়াই মুড়ানো আগরবাতি।

জামাল দ্বীন সুমন


পৃথিবীতে রাত নেমেছে

উঠে এসো কৃষক যাদুকর
এসো কোদাল হাতে মাঠে নামি-
যুদ্ধের অস্ত্রগুলো ফেলে দাও
রক্তাভ হাতে কাস্তে ধরি
গড়ে তুলি ফসলের বুনিয়াদ।
সূর্যাস্তের অবনমিত সময়ে
রাত নেমেছে পৃথিবীতে
লৌহনির্মিত রাত শেষে জেগে উঠো
জেগে উঠো ব্রতচারী প্রাণ।
দেখো যোদ্ধার কালোমুখে দীপ্ত শপথ
অন্ধকারে লুকানো তীক্ষ্ন তলোয়ার
এবার যুদ্ধ হবে মানব রক্ষার
আঘাতে আঘাতে হত্যা করো
ধ্বংসবাদী মানুষের রক্তমাখা হাত
ভেঙে দাও হত্যাকারীর জৈবিক চোখ।
আবার সবুজে সবুজে ভরে যাক পৃথিবী
নদী-সমুদ্রে গড়ে উঠুক জীবের আবাস
হৃদয়ভ‚মিতে আসুক প্রেম প্রসবন
মানুষের ছায়ানীড়ে ধ্বনিত হোক মুক্তির গান।


আদিত্য অনীক


ভালোবাসি বলেই তো নাকি


এই যে আমি তোর দিকে চেয়ে থাকি,
এই যে আমি দিনরাত্রি তোকে দেখি,
তুই সুন্দর বলেই তো নাকি?
এই যে এত সারাদিন ঝগড়াঝাঁটি,
ছুতায় নাতায় কথায় কথায় খুনসুটি,
বুকের মধ্যে থাকিস বলেই তো নাকি?
এই যে এত মাথায় মাথায় ঠুকাঠুকি,
কথায় কথায় অর্থহীন বকাঝকি,
মনের মিল আছে বলেই তো নাকি?
এই যে ঘরে মিথ্যে বলে বাইরে বেরোই,
ঘড়ির কাঁটা বন্ধ করে পথ চেয়ে রই, ভালো লাগে বলেই তো নাকি?
এই যে মেলায় যাবার জন্য ডাকিস,
ভিড়ের মধ্যে শক্ত হাতে ধরে রাখিস,
হারিয়ে যাবার ভয়েই তো নাকি?
এই যে এত ছলাকলা বুকের মধ্যে আগুন জ্বলা,
‘ভালোবাসি’ এই কথাটি আজো যে যায়নি বলা,
ভালোবাসি বলেই তো নাকি?


শিল্প সাহিত্য ৮৭


জারিফ এ আলম


উৎসের দিকে ফেরা

অনেক দিনের ঘরে ফেরবার তাড়া নিয়ে
ঘাম আর কামের কাহিনিপাঠ ছেড়ে
মগ্ন হয়ে জেগে থাকে বিনিদ্র দুটি চোখ,
আর সুরেলা ঠোঁটের মোহনীয় আহ্বান।
মৌমাছি প্রলোভিত হয়; প্রতিদিন দরদামে কেনাবেচা হয়,
অযুত নিযুত মানুষের জীবন-স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা।

গীতিকার মহুয়া তাই ডুকরে কেঁদে ওঠে বারবার
কী যে আকুতি খেলে গেছে মনে তার!
ভুলের বিভ্রমে সেও খুঁজেছিলো সুখের সঙ্গম;
সে’বছর ঘরভাঙা ঝড়ের পূর্বাভাসে সের কেঁদেছিল।
নিখোঁজ কতো সংবাদে কতো বছর ভরে গেছে
তবু শোকের পোশাক-আশাক খুলে ফেলে
গায়ে এখন শোভা পায় দুঃখ ভোলানো সঙ্গীত।
নিষিদ্ধগ্রন্থে লেগে থাকে চকচকে চোখের প্রলুদ্ধ চাহনি
একান্তপাঠে মনোযোগী ছাত্রের মতো জেগে থাকে চোখ
লাল টেনিস বল হয়ে ঘুরে বেড়ালো তোমার বক্ষযুগল।
তোমাদের নিবিড় পাঠে জেনেছি মহুয়া-মলুয়া গীতিকায়
সকল আশ্রয় খুঁজে নেয়, হৃদয় নামক দুর্ভেদ্য নগরী!

মনিরা রহমান


বিচ্ছিন্ন কিছু বোধ

যখন কোনো অন্যায়ে মূক হয়ে থাকি
তখন মনে হয় সত্যিকারের
মূক হওয়া ছিল ভাল

যখন অন্যায় কোনো দৃশ্য দেখে
বন্ধ করি চোখ
তখন মনে হয়
অন্ধ হওয়াই ছিলো ভাল

যখন প্রতিবাদে হাত উপরে না তুলে
গুটিয়ে নেই নিজেরই দিকে
তখন হাতহীনতাকেই শ্রেয় মনেহয়

যখন প্রতিবাদী মিছিলে গুটিকতক পা দেখে
অবশ হয়ে যায় পা, শেকড় গাড়ে মাটিতে
তখন মনে হয় গাছ হওয়া ছিলো ভালো

প্রতিনিয়ত ন্যুব্জ হতে হতে
   ন্যুব্জ হতে হতে
    মানুষের অবয়বে হই অন্যকিছু
প্রকৃতির শক্তির রূপান্তরে
কত ক্রিয়া কত বিক্রিয়া
অতঃপর পাথর হও ...


সাঈদুর রহমান লিটন


এখন আর কান্না নয়

কান্নার শক্তি নাই আর
কেঁদেছি অনেক- সকাল বিকেল সন্ধ্যায়
অফিসে, আদালতে, রাস্তায়।

কেঁদে কেঁদে হয়রাণ, বিবেক দেখেনি
চোখ নেই কানা সব, কালা
আমার অস্তিত্ব জুড়ে খোদার তাড়ণা
দেখেও না দেখে হেঁটেছে পথ।

হাঁটতে শিখেছি এখন। আজও অফিসে আদালতে রাস্তায়
হাটে-বাজারে-গঞ্জে হাঁটি ভিন্ন রকম পথে।
আর এখন কাঁদিনা
অনেকে কাঁদে আমার জন্য, ভয়ে, লজ্জায়
ঘৃণায়---

রহিম উদ্দিন


বিনিময়

তুমি ভালোবাসলেই নবরূপে গড়তে পারি-
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান
মিশরের খুফুর পিরামিড
শিখে নিতে পারি-
হায়ারোগ্লিফিক্স, আর;
আমি ভালোবাসলেই মুখোমুখি দাড়াতে পারি-
র‌্যাডক্লিপ লাইনে ...
পাখির ভঙ্গিমায় বলতে পারি-
দ্যা মোর ইউ লাভ মি; দ্যা মোর আই লাভ ইউ।


শিল্প সাহিত্য ৮৬


শান্তম
 
তুই

ভাগ করে নিই এই পাওয়া । তুইও 
তুলে দিস তোর দু’মুঠোর একমুঠো

মৃত্যু এলে কীভাবে তোকে দেব 

কিম্বা আমাকে তুই ! এই ভেবে 
না-ঘুমোনো তোকে জাগাতে জাগাতে 

একেকবার নিজের ভেতরে পৌঁছে যাই 

দেখতে পাই আমি আর আমি নই 
অন্য কেউ। যেন সত্যি এক তুই

অনিমেষ সিংহ

গোলাকার

চাকায়, চাকায় গড়িয়ে যাচ্ছে ছেলেটা।
পুঁথির ভাঁজে ভাঁজে, কতো যে আঙুল!
আঙুলে আমার, তৃষ্ণা,
আমার, ক্ষুধার পিং পং বল-
লাফাতে লাফাতে, নদীর দিকে চলে যাচ্ছে!

নদীটা দূর্গের চারিদিকে পাক খায়;
পাক, খেতে খেতে-
উঠে যায় ওপরে

মুক্তি তুমি চাকার মতো দেখতে?
গড়িয়ে যাওয়ার মতো দেখতে!

মুক্তির পিছনে ছেলেটি, সকাল থেকে হেঁটে যাচ্ছে।

হরেকৃষ্ণ দে 

ম্যানিয়া

ফাই ধরে সময় এগিয়ে চলে 
বিরক্তি পথ আগলায়
চোখের সাথে নাকের ১৮০ ডিগ্রি এঙ্গেল

বিকৃত থুতুনিতে আকুপংচার করতে করতে
নিজেই ম্যানিয়া কবলে ভেসে চলেছ

ঘুমের ঘোরে বগল বাজিয়ে
বিড়বিড় করে বলে চলেছ
“ক্ষ্যাপেও শান্তি নেই”


মমতাজ মম

কাজলা খোয়াব

হাওরের ধলা পানিতে কালা মাইয়্যাও রঙিলা শাপলা তুলে,
সাদা আর গোলাপি'র অদেহা সুতায় মালা গাঁথুনের গিট্টু তুলে।
কালা মাইয়্যা গতরের রঙ খুইল্যা দুই চক্ষে কাজল টানে,
রাইতের আন্ধারে হেই কালা কাজল খোয়াব দেহে গোপনে। 
কালা মাইয়্যার কালা চুলে মেঘ নামে আসমান ভাইঙা,
গতরে আষাঢ়ের লাহান বান উছলায় পিরিতের লাইগ্যা।
কালা মাইয়্যার গালের গর্তে বেডা মাইনষের শরীল লালচায়,
হাওরের জলে পাও ডুবাইলে পোনা মাছেরাও ঠুকরায়। 
আসমানের ডাহে যেমুন কই মাছ উজাইয়্যা উঠে হাওরের পাড়ে,
বয়সের ডাহে কালা মাইয়্যার গোপন তল্লাট গুলানও উজাইয়্যা উঠে নজরে। 
হাওরের ভাসান মাঝির লাইগ্যা সে পরান বান্ধে অগোচরে।

গোপেশ রায়

হেরিটেজ বিল্ডিং 

হেরিটেজ বিল্ডিং থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম আমাকে এগিয়ে যেতে হবে- তুমি কুয়াশার চাদর দিয়ে অঙ্গ ঢাকছ
এখন দুচোখ ঘুমানো অতীত স্বপ্ন দেখাছে আমার ভবিষ্যত-
ছেড়ে দাও মায়াকাটা প্রহরগুলি, কেটে যাক ধোঁয়াশা!
আমাকে ছেড়ে দাও যেতে হবে অনেকটা পথ -
কারা যেন ফিসফস কথা বলে, বলুক। তাদের কথায় কান দেবনা আর আমাকে যেতে হবে। পথ থেকে সরাও ব্যরিকেড!
ভাঙা ইঁটের স্তূপ ঘেঁটে কী খুঁজছো নিশাচর! পিছুটান দিওনা ছেড়ে দাও-
আমাকে যেতে হবে সামনে, অসীমে ...

নাদিম সিদ্দিকী

প্রথম যৌবনে

ভালোবেসে সবাই পায় কোমল গোলাপ
আমি পেয়েছি আগুনের নদী।
হাজারও মিথ্যে গোলাগের ভীড়ে
এক মানবী সুভাষ না দিক
পোড়াতে তো পারবে
দুঃসময়ের এই মিছিলে

আমি তাকেই পেতে চাই প্রথম যৌবনে।


শিল্প সাহিত্য ৮৫



সফিকুজ্জামান


স্বর্গস্বপন

এক সোনার ঝালরে মোড়া
কলি ফুটা সকাল বেলায়
কচি শিউলি গাছের ডালে সাতরঙা প্রজাপতি দেখে
মনে হলো আমি ঈশ্বরের উদ্যানে আছি।
আল কাওছার থেকে বুঝি
ছিটকে পড়েছে রূপালি মাণিক নরম সবুজ ঘাসের শরীরে।
পৃথিবীর মেরুদন্ড বেয়ে বেলা যখন মাথার কাছাকাছি ডানামেলে উড়ে এলো
একদল মেঘ।
ঝোড়ো হাওয়ার পালে চেপে মেঘের ওপারে উড়ে গেলো
আমার স্বর্গস্বপন
এখন পূব আকাশ জুড়ে
প্রজাপতি রঙা রঙধনু
রঙের বাহার
আর আমি আছি পৃথিবীর
মাটির উপর ...


অনিক সাহা


বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ

কান পাতলেই শোনা যায়
প্রতিদিনের স্বাস্থ্য বুলেটিন
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ
ভেসে আসে চিৎকার
সচরাচর মৃত্যু যেভাবে আসে, তেমন
নয়;
অদৃশ্য জীবাণুর আঘাতে ছিন্নভিন্ন সবকিছু
জানালার কাঁচ গুলো টেনে দিই জোর করে
আমি তো বেশ আছি,
আমার আলিশান এপার্টমেন্টে!
তবু অন্তরে খচখচ করে,
আমার এখনকার ছুটি গুলো ঠিক ছুটি নয়
গৃহবন্দিত্বের হাহাকারের শব্দ
চাপা পড়ে যায় ক্ষুধার্ত মিছিলের শব্দে।
টহলরত পুলিশের ক্রমাগত মাইকিং,
‘আপনারা ঘর থেকে বের হবেন না’
অসহায় আমি ছুটতে থাকি এ ঘর থেকে সে ঘরে,
আচ্ছা, মৃত্যু কি এখানেও হানা দিতে পারে?
দুপুরের সংবাদে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেব,
অথচ কিছুদিন আগে শিরোনাম হয়েছিলো মঙ্গলে অভিযান!
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ উপেক্ষা করে
আমি বারান্দায় এসে দাঁড়াই
সামাজিক দূরত্ব আমাকে বিচ্ছিন্ন করেছেÑ
আমার বন্ধু, আমার স্বজনদের থেকে।
আমি চাইলেই এ দীর্ঘ ছুটিতে ঘুরতে যেতে পারছি না
সাজেক, কক্সবাজার, রাঙামাটি, সিলেট কিংবা সুন্দরবন!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ত্রাণ চোরদের নিয়ে হইচই,
সেসবে মনোযোগ না দিয়ে বুকভরে শ্বাস টেনে নিই
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ
ধীরে ধীরে আমার ফুসফুসে প্রবেশ করে!
... মৃত্যুর গন্ধ টেনে নিতে নিতে এ ভুতুড়ে শহরে নিজেকে
মৃতই মনে হয়!


শিল্প সাহিত্য ৮৪



সংজ্ঞায়িত।। অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

কষ্ট খুঁজে পাইনি আর কোনো দিন
একটি মাত্র সংজ্ঞায় ভরে ওঠে বিবিধ অভিধান।
মাকে নিয়ে আসা বড় সার্থক হয় রূপকথা বিলের কাছে। 
খড়ি দিয়ে পেড়ে আনি সাদা বকফুলের পাপড়ি
বড়া পেয়ে উছলে ওঠে তরল সরিষা।
হাঁসেরা ঠোঁটে বিকেল নিয়ে ফিরে আসে ঘরে ...
আমার পড়ার পাটি জায়নামাজ হয়
মা তখন জাপটে ধারে অনুজ্জ্বল হাঁড়িকুঁড়ি আর উজ্জ্বল কুপি ...
এ সবই এক বিকেল হয়ে যায়
এক বিকেল সংজ্ঞা।
এক বিকেল অভিধান ...
যে অভিধানে ডুবে যায় এখন এই হসপিটালে শুয়ে থাকা দুঃসহন লিপি।


অবলুপ্তি।। শুভজিৎ বোস

সকালের ভিড়ে হেঁটে যায় সুন্দর ফুলের কুঁড়িরা
তাদের কাত্তো মুখে হাসি, তো কারো মুখে অদৃশ্য প্রতিবাদ,
শহর ছেড়ে গাঁয়ের আনাচে কানাচেও তারা হেঁটে যায়, শুধুই হেঁটে যায়,
তাদের সারাদিনের সঙ্গী কত না অজীব!
গাঁয়ের মাঠঘাট, শহর পাড়ার ময়দানগুলিতে আজ শুধু খাঁ খাঁ রোদ্দুরের হাজিরা,
এগিয়ে যায় তারা উর্দ্ধশ্বাসে!
কেউ ডাকলে বলে এখন না, আমাকে পৌঁছতে হবে খুব তাড়াতাড়ি,
সকাল, বিকেল, সন্ধ্যে তাদের কাছ থেকে হাসি কেড়ে নেয়,
কচিতেই হরণ করা হয় তাদের কাছ থেকে মাঠ-রোদ্দুর, মিঠে স্বাধীনতা,
আসে না সকাল, ওঠে না সূর্য!
হারিয়ে যেতে থাকে তাদের ধৈর্য্য।
নতুন দিনে, উৎসবে, পরবে তাদেরকে এ কোন সকাল উপহার?
ছিল কত উৎসব, আনন্দ, উদ্দীপনা!
আজ না আছে খেলা, না আছে অন্য কান্ড-কারখানা!
আছে স্বাভাবিকতার পথ রুখে নানান বায়না!
ওরা এভাবে! এসব কিছু কিন্তু চায়না।

দুঃখশাস্ত্রবুলি।। অনিমেষ প্রাচ্য

বাতাসের উৎফুল্ল লিপ্সায়, আমি ব্যথিত হই; কেউ কেউ খুঁজে পায় সভয়ে বেদনার চেয়ে বিস্তীর্ণ সাগরের
সুখ- আমি তবু নিঃসঙ্গ মাকড়ের মতো বেদনার নাভিক‚প খুঁজে ক্লান্ত হই। এ দ্যাখা, শোক স্থিতির মতো দৃঢ়।
পৃথিবীর সংকীর্ণ শুকড়ের দিকে তাকিয়ে, অস্থিত ময়ূরের কথা মনে পড়ে, সমস্ত সুখ য্যানো সেইসব বায়ুসেবিকার প্রাপ্য।
ব্যর্থ শুকড় শুকানো জিহ্বা নিয়ে, জন্মের যন্ত্রণা পুষে, সামুদ্রিক জোছনার পা চাটে।
অথচ, অশ্বত্থের বৃক্ষের দিকে মেলে ধরি, প্রজাপতির হাড়; স্বপ্নের লালসাগুলি অথবা।


শিল্প সাহিত্য ৮৩



জাহাঙ্গীর ডালিম 


কলম খানা রেখে দিও 

কাকে কী দিচ্ছ আমি জানি না,
জানতে ও চাইবো না।
যাকে খুশি দিও সারা দুনিয়ার
সোনা দানা বালা খানা ---
আমার জন্য রেখে দিও শুধু
তোমার কলম খানা।


আল-আমীন আপেল


“আয়ু ফুরানো দিন”

প্রায়শ মাথা বরাবর দিনবেলা জেগে থাকে সূর্য,
আর দিন ফুরালেই রাত- আকাশ জুড়ে ওঠে
একটা কামনাময়ী চাঁদ! কিন্তু, আজ হঠাৎ
কোনো আলো নেই- ঘুমিয়ে
গেছে রাত; শুধু জেগে
আছে অমাবস্যা
চাঁদ।

খাতুনে জান্নাত


কাল দেখা হলে

কাল দেখা হলে চুমু খাবো ঠোঁটে-
ঠোঁট থেকে তুলে নিও ভুল-চুমুর অদেখা দর্শন,
নিঃশ্বাস-হাহাকার
‘ফুল নেবেন ফুল’ আগ্রহী ফুল-শিশুদের মতো
ভুল জমা আঙুলের ভাঁজে।
সে-সব কি মোছে স্পর্শের শিহরে!
কাল রাখবো বিকেল দুপুরের সাথে-
ঘর ভাঙা আর্তনাদ, নিঃস্ব-কালিঝুলি রাত থেকে
খসুক অনাগ্রহে রোপিতর জন।
চুমুর সিঞ্চনে রূপকথার জিয়ন কাঠি-স্পর্শ
স্পর্শ দাঁড়াক জীবনের সমান সমান
কাল দেখা হলে চমুু খাবো ঠোঁটে-
ঠোঁট থেকে মুছো ভুল-চুমুর অদেখা দর্শন।

সোমনাথ বেনিয়া 


প্রিয় নিরুদ্দেশ - ৮

প্রতিটি পথের একটি ভুল ঠিকানা থাকে
কিছু মানুষের অভিপ্রায় হারিয়ে যাওয়া
অথচ পিছনে ফেলে আসা অবসর, বীজ
প্রতিটি গাছের একটি মোড় থাকে, চিহ্ন
কত সাবলীল, পথিকের হালকা জিরানো, শুরু
প্রতিটি যাত্রার একটি আপেক্ষিক ভয় থাকে
কথাবার্তা চালু হলে সাহসের করিডোর, আশ্রয়
নিখোঁজের সন্ধানে প্ল্যাকার্ড হাতে হৃদয়, প্রশ্রয় ...

গৌতম ঘোষ


“প্রায়শ্চিত্ত”

ভালো থেকো ভালো রেখো
করোনাকে একসাথে রুখো
জীবন তরী বাইতে দিয়ো
ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়ো।
এই তো দারুণ সময় এসেছে হাতে,
সকলকে কাছে টেনে নেও আপন করে,
পিতা-মাতা, ভাই-বোন, কাকা-কাকি,
যাদের রেখেছিলে দূরে বহু দূরে।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যাস্ত রেখেছিলে
অর্থ উপার্জন আর ভোগ বিলাসিতাতে,
কখনো কি ভেবেছো একবার তাদের কথাকে
যাদের ত্যাগ আর অবদানে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ করতে,
প্রতিষ্ঠিত করতে, বঞ্চিত করেছো তাদের সকলকে?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একান্ত আপনে
একমুহূর্ত নিজের সাথে একান্তে আলাপে
এখনো কি হয়না অনুশোচনা?
এখনো সময় আছে, অন্তর থেকে-
নাও আপন করে, সব কিছু দূরে সরিয়ে
দূর করে সব বাঁধা, মান-অপমান ভুলে
পাশে এসে দাঁড়াও, মনের কালিমা ত্যাগে
আনন্দে ভরে উঠুক তোমার জীবন নতুন করে।।

সুজাউদ্দৌলা


প্রকৃতির টিটকারি

অতর্কিতে গেরিলা আক্রমণের মতো
এক পশলা বৃষ্টি এক ঝাঁক মৌমাছির
হুল ফুটানোর মতো ভিজিয়ে গেল
আর এই দৃশ্য দেখে খিলখিল হাসির মতো
চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো রোদ
আমি ভোজসভা থেকে খেতে না পাওয়া
নিমন্ত্রিতের মতো ফিরে যাই অপমানে
মাথা নিচু করে প্রকৃতির টিটকারি সয়ে-


শিল্প সাহিত্য ৮২



প্রণবকুমার চক্রবর্তী

আমি তাই হাত পেতেই রইলাম

যদিও আসবে না জানি, 
আসবেও না আর কোনদিন 
তবুও 
তোমাকে আজ 
আবার বলছি করজোড়ে 
ফিরে এসো 
ফিরে এসো আরোও একবার
আমার এই ভাঙাচোরা ঘরে
এখানে 
এখনও দাঁড়িয়ে আছে 
মাথা উঁচু করে
শাল-পিয়ালের জঙ্গল 
তোমার অপেক্ষায় .....

লাল মাটির পথে
অজয়, অঞ্জনা কিংবা 
কোপাই নদির পাড়ে
ভালবাসা আর ভালোলাগার 
সেই  গান আর 
সংলাপগুলো 
অহরহ তোমাকে খুঁজে খুঁজে 
ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ...

উদভ্রান্ত ঝোড়ো হাওয়ায় 
ভেঙে যাচ্ছে সব ঘর-বাড়ি 
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে পথ-ঘাট
অন্ধকারে 
ঢেকে যাওয়া মধ্যাহ্নে 
চারপাশে ধ্বনিত হচ্ছে
জরাজীর্ণ জীবনের আর্তনাদ ...

এখনই তোমাকে বড্ড প্রয়োজন আমাদের

বড্ড প্রয়োজন 
ভয়ঙ্কর এই অন্ধকারকে প্রত্যাঘাত করে
আতঙ্কিত মনের অন্তস্থলে 
ধ্বনিত করা
মানবিক নিস্ক্রমনের পথ আর
শ্বাশ্বত আনন্দের স্বাদ বন্টন করা 

আমি 
তাই তোমার আশায়
ভিখারীর মতো হাত পেতেই রইলাম ...


শিল্প সাহিত্য ৮১


মহীতোষ গায়েন


বিপ্লবের উলটপুরাণ

বিপুলা পৃথিবীতে এখন উষ্ণ প্রস্রবণ ধারা...
হারিয়ে যাচ্ছে সুখ-বৃষ্টি, হারিয়ে যাচ্ছে গান,
দোদুল্যমান দৃশ্য-কল্প-স্বপ্ন, ওষ্ঠাগত সজীব সত্তা,শান্তি-
অস্থিরতার মধ্যে আগামী ভবিষ্যৎ খানখান।

মননে কৃষ্টি বাসা বাঁধেনি, সোচ্চার তাই অন্ধ প্রতিবাদ-
অবরোধে সন্ত্রাসে সুভাষিত বচনে গ্রাম-গঞ্জ-শহর,
জীবিকার উৎসপথে উন্নয়নের দিশা ...
সংগ্রামের শপথ নেওয়ার এ-সময় প্রহর।

কথায় কথায় উল্টোপথে  হাঁটা ...
মানুষ শুধুই হচ্ছে দিশেহারা,
জল্লাদেরা শাসিয়ে গেল ...
সমাজ তাই বেবাক গতিহারা।

উদ্ধত সংলাপ; আমরা রাজনীতি করি ...
জনগণের আশাপ্রদ সমর্থনে আছে তারা,
পেটে দানা-পানি না জুটলেও অলভ্য জমিতেই
রোপণ করবো বিপ্লবের নবজাতক চারা।


শিখা গুহ রায়


অবহেলা কলমৈ

শূণ্য অনুভ‚তি গুলো ছুঁয়েছে নীল আকাশের বুকে।
মুহূর্তেই কালো মেঘে ঢেকে গেছে পৃথিবী, চারিদিকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে গর্জনের সাথে সাথে বৃষ্টি ওফ আর পারছিনা নিজেকে ধরে রাখতে।
আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে, দগ্ধ চোখে ঢেলে দিয়েছে অসমাপ্ত চুম্বন,
ভালোবাসার চোরাবালিতে সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে গেছে আমার।
বুকের ভিতর হাজারো দগ্ধ ক্ষত জমানো অন্ধকার কষ্টের কষাঘাতে বোবাকান্না হৃদয়ে জমাট বেঁধেছে রং হলুদ, সাদা আর নীল।
অভিমান আর দুঃখ গুলো আজ নির্বাক, তাকিয়ে থাকি দূরে, সিমানা ছাড়িয়ে, ব্যর্থতার গ্লানি আগ্লে বুকে।
একদিন ঠিক আকাশের নীচে দাড়িয়ে মনে খুলে কাঁদবো, আজন্মের হৃনে খুঁজে বেড়াবো না পাওয়া অনুভূতি গুলোকে।
জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, কেউ ভালোবেসে আগলে রেখেছে, আবার সেই ভালোবাসা আমাকে নিঃশেষ করেদিয়েছে,
শুধু পাইনি খুঁজে আমার মাঝে লুকিয়ে থাকা আমার আমি-টাকে।


তন্ময় পালধী


আকাঙ্ক্ষা

হে হৃদয়, নীরবতা ভাঙো
ঝড় উঠেছে
অশান্ত এ সময়ে
শব্দগুলো চুপিচুপি
ঘর ছেড়ে মাথা কুটে
ভাষার দুয়ারে
আর
দানবের আস্ফালনে কেঁপে উঠি
হে হৃদয়, নীরবতা ভাঙো।

মো. আরিফুল হাসান 


শ্রদ্ধা ও ব্যাথা মিশ্রিত আলাপন

বুকের ভেতর একটি বাঁশির সুরে, হারিয়ে
যাবো হারিয়ে যাবো আমি। একটি বিষাদ
গুমরে কেঁদে মরে, মিথ্যে আমি হয়েছি
বদনামি।

বুকের বেতর উতালপাতাল ঢেউ, বুকের
ভেতর বাজে ঝড়ের সুর। মূর্ছনা এক ছড়িয়ে
পড়ে বুকে। কানে বাজে প্রিয়ার পায়ের
নূপুর।


শিল্প সাহিত্য ৮০


ঝুমা মজুমদার


উপেক্ষা 

দু’আঁজলা জল দিয়েছি বলে, তোমাকেও যে ফেরৎ দিতে হবে এমন তো কথা নেই---
যে ভালোবাসে সে এক মেঘডুরে নদী ফিরে তাকায় না, পাছে কাঁদাও যদি
ঠিক স্পর্ধা নয়
তবে উপেক্ষা কে উপেক্ষা করি বরং উপেক্ষা আগুন থেকে আলো তুলে ধ্রুপদীর স্বয়ম্বর সভা থেকে বিতাড়িত কর্ণের মুখের সামনে ধরি সেখানে এখন কুরুক্ষেত্র বলিরেখায় মৃত্যু প্রশান্তি নীলকণ্ঠ পাখীর খোঁজে সহজিয়া সুর আর জোছনার ঘাটে
ঘাটে বাঁধে না তরী

অঞ্জন চক্রবর্তী


গভীর বাণী 

গোমরা মুখে জমছে এ কোন সংকেত----এত অভিমান!
নীল শাড়ি ঘিরে.... মেঘ, ভিজতে জানি বলেই কি
এত বিষাদ---
এইতো দাঁড়িয়ে আছি। জানিনা বরাদ্দ কতটা ধারা
অপেক্ষার রাতে কতটা ভিজব--- জোনাকি অন্ধকারে কাঁথা বুনে চলে অবিরাম
বলো, মাটির কত গভীরে গেলে শোনা যাবে অলিন্দের উঠা নামা--- শঙ্খের বোল?
উঠোনে দাঁড়িয়ে আমি কুড়াব না কোনো কথপোকথন
বরং ক্ষয় ভয় যত ধুলো লেগে আছে এতোদিন
তোমার বর্ষণ মন্দিরায় রিনি ঝিনি নেচে শুদ্ধ-স্নাত হয়ে
ধুয়ে দেব সব ধুয়ে যাবে ক্লান্ত পথের দাগ।
মুগ্ধতা দিয়েছ তুমি
এ কোন কবিতার পাতায় লিখে গেলে একটি নাম
বর্ষণমূখর সর্বনাম।

স্বপন চট্টোপাধ্যায়


আমার কবিতা উদ্ধত যৌবনা

কবিতা বুকের পুঞ্জীভ‚ত সুখ আমার মনের গোপন অভিসার, অন্তরে লালিত প্রেম সুধারস দেখি ছাপার অক্ষরে তোমাতে বারবার।।
চাইনা কবিতা হোক ছন্দবদ্ধ মার্জিত হোক কবিতা তোমার ভাষা, এলোমেলো হোক গাঁথা
কবিতার মালা অন্তমিল ছাড়াই ট্রেজিক ভালবাসা।।
আমার কবিতা হোক উদ্ধত যৌবনা নীল জোছনাস্নাত মায়াবী রাতের কথা, মাদকতায় ভরা অশ্লীলতার কাব্য শুস্ক ঠোঁটে জমা অভিমান ব্যথা।।
কবিতা তোমায় ভীষণ ভালবাসি ফেসবুকেতে পড়লাম তোমার প্রেমে, লিখছি কবিতা নাকি প্রেমপত্র? থাক, তার আর কাজ নেই কিছু জেনে।।

অনিমেষ প্রাচ্য


এখানে প্রার্থনার বদলে শুয়ে থাকে নদী

ক্যানো য্যানো ভুলে যাই সব। সব ভুলতে ভুলতে, এই পাহাড় আর ঠোঁটের সাদৃশ্য নিয়ে কবিতা লেখা আরও দীর্ঘ হতে পারে। সময় য্যানো, মেষপালক।
কী এক অতিক্রান্ত মৃতঘুম, আমাকে প্রচ্ছন্ন করে।
সরাইখানাতে ঘুমিয়ে থাকে মাতাল প্রভু;
আমি বোলি মন্দির, -এখানে প্রার্থনার বদলে শুয়ে থাকে নদী; ঈশ্বরের মদ খাওয়া চোখের দিকে তাকালে, প্রেমিকার কথা মনে পড়ে।
অথচ,-পৃথিবীর সব চোখই নিষ্পাপ।
বরং, প্রশ্ন করা যেতে পারে তাকে
যার প্রেম অতি ক্ষীণ
‘কী নিয়ে বাঁচো তুমি? ব্যর্থ হও; এবং প্রত্যাশাকে আরও দৃঢ় করো।’
ঘাসকে আমি প্রেম বোলি। সেইসব আকস্মিক দৃশ্যের প্রতি, ঢুকে পড়ি। অথবা ধরা যেতে পারে,
বেইলী রোডে শুয়ে থাকা, রমণীর হৃদয়- যা, পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুন্দরতম ঘাস।

রমেন মজুমদার


ক্ষয়িত সোপান

যে সোপানে নিত্য স্বাক্ষী ধৌত অপরাধ!
কত খুনির হাত-পা ধোয়া এমনি করেই চলে
এমন স্বাক্ষীর পাষাণ বেদী কিসের বড়াই সাধ?
পাপও ধুই, পুণ্যও ধুই, আঁখি মিলে দেখি!

কেউ দেখেনা আমার চোখ থাকতে অণুবীক্ষণ,
নষ্ট পাপের জল ধুইয়ে দেই প্রতি বর্ণে বর্ণে;
-তবু তাদের খামুস থাকে পাপে ভরা মন!
যন্ত্র ছাড়াই মন্ত্র পাঠে পাপিষ্ঠ রয় তুর্ণে।

অন্তের কুঠুরী জানে শব্দ ভাঙার যন্ত্রনা!
নষ্টামী লুকিয়ে রাখে ধৃষ্টতার মন্ত্রণা!
বিশৃঙ্খল আর উশৃঙ্খল হয় উলঙ্গের নায়ক,
বেশ্যার বেসাতি বুক আমি তার হই বাহক।

কত নষ্টের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছি যুগযুগ ধরে,
কত শব্দ ডিঙিয়ে কাব্য আসে থরে থরে নষ্ট-ভষ্ট! অতিষ্ঠ,
অনিষ্ট, সব বর্ণ মালা;
-রসদের গুপ্ত পরাকাষ্ঠ হয়ে ভাঙে প্রেম ডালা।

সাঈদুর রহমান লিটন


নির্লিপ্ত চিন্তা

কবে পূর্নিমা আর কবে অমাবস্যা
এখন বুঝি এসব হয় না আকাশে
দিব্য শক্তি লোভ পেয়েছে আগেই
বোধ শক্তি নির্লিপ্ত, বর্বর ।

মাঝে মাঝে নিজেকেই চিনে উঠিনা
তাল গোল পেকে যায় এই আমি আর সেই
আগের মতই নাকি বেশি সুন্দর!
বিচার বোধ সভ্যতা হারানোর মতো।

মানুষ আর জন্তু মিলে মিশে গেছে
নাকি আমার চিন্তা ধারা?
পোশাক ওদের প্রয়োজন হয়না
মানুষ শখ করে ছেড়েছে।
তাই আর বিবেচনা কে দোষ দেই না।

অনেক কিছুই বুঝি না আজ,
দেশ টা মনে হয় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে।
চোখের সমস্যা, নয়ত দেখার,
আগে মনে হয় দু’পায়ে ঠিকই হাঁটতো।
আজ হাঁটে না, মনে হয় পারে না।

কেয়া সরকার


হবো আমি ---

কৃষ্ণনিশি আমি তোমায় ভালবাসি
চাই না আর রাত জাগা চাঁদের চোখে
চোখ রাখতে
তারার চোখেরজল চুমুক দিতে দিতে
আজ আমি বড় ক্লান্ত
তবুও আমি পিপাসার্ত।
তোমার বুকটা কি শান্ত, নিঝুম যেন
বিশাল তেপান্তর
তুমি না ঠিক শুভেন্দুর মতো অজেয়
দুর্নিবার;
ঠিক যেন মরিচীকা ছুঁতে গেলেই হারিয়ে
যায় বারবার।
তোমার বুকে মুখ গুঁজে একটু ঘুমতে দেবে
সে ঘুম যেন সহজে না ভাঙ্গে রেষ চলে
অনন্তর
জানো আমি আর হতে চাই না ময়না,
চাই না হতে অশ্রুমতী
তোমার বুকে ঠাঁই দেবে---
হবো আমি তোমার পূর্ণশশী।


শিল্প সাহিত্য ৭৯




রুশো আরভি নয়ন


চুলকানি 

রাজনীতিতে রাজা আছে
কোথাও আজ নীতি নেই,
সম্পদের পাহাড় আছে
মনুষ্যত্বের ইস্তফা দেই।

সন্ত্রাসীরাও দেশে আছে
ধর্ষণের আজ বিচার নেই,
ভালোতে চুলকানি আছে
বেজায়গাতে মলম দেই।

নেতাকর্মী লাখো আছে
অযোগ্যতার অন্ত নেই,
আতিপাতি নেতার হাতে
দেশটা তাই ছেড়ে দেই।

বিশ্বব্যাপী করোনা আছে
স্রষ্টার প্রতি ভীত নেই,
গার্মেন্টস ঠিকি খোলা আছে
উপাসনালয়ে তালা দেই।

লকডাউন নামেই আছে
সচেতনতার বালা নেই,
ত্রাণ চুরি গম চুরিতে
তাদের কোন জুড়ি নেই।

রাজাকার আজও আছে
একটা শুধু মুজিব নেই,
কৃষকের পেটে লাথি দিয়ে
তেলা মাথায় তেল দেয়।


বিপুল রায়


তাই হোক

তাহলে তাই হোক -
আমি ছাড়ি, তুমি ধর হাল।
রাত্রি কেটে আসুক নতুন সকাল।

তাহলে তাই হোক -
আমি চোখ বুজি, তুমি খোলো চোখ।
ত্যাগের পর শরীরী সম্ভোগ।

তাহলে তাই হোক -
আমি চুপচাপ ,তুমি দেখাও রোখ।
উচ্ছ¡াসের পর শেখাও সবক।

তাহলে তাই হোক -
আমি হারি, তুমি হও আহাম্মক।
আমার ধন সম্পত্তি ক্রোক।

তাহলে তাই হোক -
আমি যাই, তুমি সামলাও লোক।
যারা কাঁদছে, তাদের মেটাও শোক।

তাহলে তাই হোক -
আমি নই, তোমার দ্যুলোক-ভূলোক।
কর আমার সাম্রাজ্য ভোগ।

তাহলে তাই হোক -
আমি উৎশৃঙ্খল তুমি সাধক।
আমি অগোচর তোমাতেই ঝোঁক।

তাহলে তাই হোক -
আমি অন্ধকার তুমি আলোক
আমি নরকে তুমি স্বর্গলোক।

তাহলে তাই হোক -
আমি যাত্রী তুমি চালক।
আমি চির দুখী তুমি অশোক।

রাহুল বর্মন 


অশরীরি প্রেম ??

অশরীরি প্রেম ??

তাও তো একটু আড়ালে গেলেই,
চোখের কাজল ধেবড়ে যায়!
ঝরনার মত চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায়!
ওড়না মাটিতে হামাগুড়ি দেয়...

এগুলো সত্যি ?? নাকি,

আদরের আবেশে মৃদু শীৎকার গুলো??
কিন্তু ঠোঁটের গভীরে গেলে,
চুমুও যে
আদিখ্যেতা জানে...!!


শিল্প সাহিত্য ৭৮


নাদিম সিদ্দিকী


রুদ্ধশ্বাস

এই মৃত্যু-মিছিলের দেশে এই কালো মেঘের শহরে
হয়তো একদিন বেলা আড়াইটা বাজবে
একদিন মিডিয়ার হাজারো কর্মী মাইক্রোফোন হাতে
অধির আগ্রহে ভিড় করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে
টিভির সামনে চেয়ে থাকবে পুরো দেশ
কী হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর!
ভাবতে গিয়ে যেন নিশ্বাস আঁটকে যাচ্ছে সবার
কী হতে যাচ্ছে
কী হতে যাচ্ছে এই মৃত্যু-মিছিলের দেশে!

নিশ্চুপ রাতের শেষে যেমন আসে সোনালী প্রভাত
তেমনি একদিন উল্লাসের বার্তা হাতে
আসবেন ডা. মীরজাদী সেব্রিনা।
এ কোনো গণ-অভ্যুত্থানের ব্রিফিং নয়
নয় কোনো টেরোরিস্ট গোষ্ঠীর আত্মসমর্পণের
এ ব্রিফিং জীবনের সাথে মৃত্যুর অনিবার্য যুদ্ধের
তার দিকে চেয়ে থাকবে পুরো দেশ।
সমবেত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলবেন-
“বিগত চৌদ্দ দিনে দেশে কোনো
কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় নি।”

বলামাত্রই যেন অশ্রুপাতে সিক্ত হবে তার চোখ
অজান্তেই ঝাপসা হয়ে আসবে বৃদ্ধ বাবার চশমার কাঁচ
মাস্ক খুলে সন্তানের কপালে মা খাবে স্নেহের চুমু
শহর জুড়ে ছুঁটবে বিজয় মিছিল
সম্মুখ যোদ্ধাদের সম্মানে উড়ে যাবে যুদ্ধ বিমান।

এই মৃত্যুমিছিলের দেশে এই কালো মেঘের শহরে
হয়তো একদিন বেলা আড়াইটা বাজবে
শাহবাগ পরিবাগ চষে বেড়াবে পাগল প্রেমিক
টিএসসি’র মোরে চায়ের কাপে উঠবে ঝর
কিন্তু, সেদিন আমি বেঁচে থাকবো তো!
বেঁচে থাকবে তো স্বপ্নের বাংলাদেশ!
একদিন যেথায় মেলেছে ডানা ভয়হীন শৈশব।

মো. আরিফুল হাসান 


নীল নক্ষত্র থেকে

নীল নক্ষত্র থেকে আমাদের মুখোমুখী
জলজজীবন, না তৃষ্ণা না ছায়াপথ

তুমি পান্ডুলিপি ভুল কর জানলে আগামী
সারল্যে আমরাও সবুজ আর অপেক্ষার
বিস্ফোরণ ভাবতে ভাবতে তুমি পাখি।

না আগামীর লাবণ্য নয়, তুমি বিস্ময়
বিভাতুর। যেনো তুমি জানতেও পারোনি

তন্ময় বিশ্বাস


অলেখা-অদৃষ্ট

স্রোত উঠেছে -
অভিজ্ঞানহীন!

হিমচাঁপা ফুল ঝরে গেছে বসন্তের আগে!
অভিমানী স্রোতে!

বেদনার মানচিত্রে এখন আকাশ পরিষ্কার।
করোনার নিশানায় শুধু চিৎকার-হাহাকার!

ঈৃথিবী থেকে ক্রমে ঝরে যায়- ওম, লতানো বাতাস
সিন্দুক থেকে চুরি যায় নকশিকাঁথা, যাবতীয় উচ্ছ্বাস!

কোথায় ঠিকানা লুকিয়ে রেখেছ অভীষ্টের?
যেখান দৃশ্যমান বলিরেখাগুলি জড়ো হয়-
লেখা হয়
রক্তাক্ত-অদৃষ্টের!

আহাদ উল্যাহ


হিম হাত

দুটো হিম হাত ঘাড় জড়িয়ে।
ভোর রাতে  যখন বৃষ্টির জল
অবিরাম ঝরে পড়ে পাতা বাহারের
পাতায়। ঘুমের ভিতর জেগে উঠে চেতনা। কাল ঘুমের
মায়াবী কুয়াশা থেকে থেকে
জমে আছে ঘোলা জলের
মত। ধূসর পাথর, সাদা হাড়।
শীতল সাপের মত আমার
ঘাড় জড়িয়ে দুটি হিম হাত।

সাব্বির হোসেন 


দাবি

কিছুক্ষণের জন্য আমায় তোমরা নিষিদ্ধ কর
আমি মুখ খুলে চিৎকার করে বলতে চাই
আর কালো চশমা পরে নয়
মানবতার চোখ দিয়ে পড়তে চাই জীবন সমীকরণ।

জং ধরা কলমের খোঁচায় লিখতে চাই
স্বাধীন বর্ণমালা
লিখতে চাই - আমিও বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচতে দাও
আমি বিশ্বাস করি এ ধরণী আমার পাঠশালা।


শিল্প সাহিত্য ৭৭


তপনকুমার দত্ত


করোনা কালীন এক লাইনের  দশটি কবিতা

তাই তো জীবন শক্ত করেই বাঁধছে মাস্ক করোনা লড়ায়ে।

করোনা এ এক অদ্ভুত মন খারাপ যাপন।

এখন সময় ভালোকে আঁকড়ে গভীরে থাকার।

এ এক অদ্ভুত সময় মনন গাঁথছে ভিন্ন যাপনলিপি।

বালিশে থাকে না মাথা ঘোরা দুর্যোগে জাগে লকডাউন শরীর।

স্বপ্নের ঘোরে দেখি অতীত যাপন।

করোনা আতঙ্কে থমকে আছি আমি আমার পৃথিবীও।

লকডাউন বিধিতে চেনা চোখে কথা বলে দুই মাস্কধারীতে।

লকডাউনের দিন গাছেদের ছায়া দেখি মানুষ বিহীন।
১০
জানালা দরজা খুলে আলো নিই ঘরে করোনা মৃত্যু বাড়ে রাতের আঁধারে।

মজনু মিয়া

 
আক্রান্ত সময় 

ক’দিন আগেই ভালো ছিল পৃথিবী, ভালো ছিল মানুষ
পাগলা হাওয়া লেগে পালে, মানুষ হয়ে গেছে বেহুশ।
স্তব্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে আনাগোনা,
কর্মহীন জীবন সদা সংশয় কি হয় কি হয় নিত্য এ ক্ষণ গুনা।
ডাষ্টবিনে এখন আর কুকুরগুলোও দেখি না, ওখানে খাবার নেই
দেককান পাঠে চলে অবরুদ্ধ অবস্থা ভেতরে সুখ হারা এমনিতেই।
অর্থের ঝনঝন এখন কমে আসছে বাহারী ভাব নেই, রঙ তামাশায়
কেউ কেউ দেখে ঘেউঘেউ করে মরছে না খায়ে ওপাড়ার কুকুরগুলো।
বাঁচা দায় হয়েছে এমন আক্রান্ত সময়ে, কবে মিলবে নিস্তার?
কোথাও এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না, কারণ পৃথিবী আক্রান্ত রোগে বিস্তার।

খাতুনে জান্নাত


যাবতীয় সন্তাপ

পথ চিনতে চিনতে সকালগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে ভোর...
বৈশাখ গুজরাতে গুজরাতে চৈত্রের খরায়
টেবিলে চায়ের বাষ্প, সিগারেটের ছাই।
কিটেরা মিলেমিশে গুছিয়ে নেয় সংসার।
এরই ফাঁকে কেউ কেউ লিখে ফেলে অগনিত প্রেমপদ্য।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে পাহারাদারের সতর্কিত হুইসেল
অথচ চুরি হয়ে যায় প্রতিদিনের  মনিমুক্তো;
কারও কারও মতো আমরা টুপিতে ঢাকি অন্ধকার ও যাবতীয় সন্তাপ...

শুভ্র সরকার


ফুলের আয়ু নিয়ে, গাছের কি
দুঃখ হয়?


এবং সমস্ত ফুলই তো জারজ!

তার ত্বক
তার আয়ু
তার ভান
তার রুহ
তার ভাষা

তার সমস্ত শরীর জুড়ে ঘাঁ!

অথচ
ফুলের
বিরহে

বুকের ভিতর ঘেমে উঠছে কথারা-


কথোপকথন এমন দরজা;
যার দু’পাশে দু’জন মানুষ, অন্যপাশে ভেবে নিচ্ছে-
নিজেকে...


হাতুড়ির নিচে পেরেকের হৃদস্পন্দন বোঝ? 

আহমেদ সুমন 


স্বপ্নচর

একদিন বলেছিলে আমায় ঘরে তুলে নিবে
কিন্তু আজ;  সমাজের দোহাই দিয়ে
ফেলে গেলে একা
এই স্বার্থপর পৃথিবীতে।

তবে কি তখন শুধু মোহ 
আর লালসা ছিল?
নাকি লোক দেখানো আবেগ?

আর আজ তুমি বিবেকের কাছে
নিজেকে মিলিয়ে নিচ্ছো
হিসাব কষছো তোমাতে।

আমি চাই না এই ভালোবাসা
সর্বনাশার মূল হোক,
বিধির বিধান অলঙ্ঘনীয়
যাচ্ছে জীবন, যাবেই তো,
কষ্ট নেই তাতে।


শিল্প সাহিত্য ৭৬


মৌসুমী মিত্র


অন্তরাত্মা

তোমায় খুঁজতে যাইনা আর বাইরে
নিত্যদিনের কাজের মাঝে আছো হৃদয় জুড়ে
তোমাকে খুঁজতে হয় না কোনো ছবিতে
জড়িয়ে আছো আমার হৃদয়খানিতে
ঘরসংসার টুকিটাকি কাজের মাঝে
মনে পড়ে তোমার খুনসুটি
আর জানো তো একলাই হেসে উঠি,
সবাই বলে পাগল নাকি!!
১০ টা বাজলেই মনে হয়, ওষুধটা খেয়েছো তো!
বেরোবার সময় রুমাল, চশমা আর মোবাইল টা নিতে ভুলে যাও নি তো!
তোমার যা ভুলো মন! চলতে গিয়ে আনমনে কখন খাও হোঁচট
আরো কত কি! সব কি যায় বোঝানো...

বুক চাঁপা কষ্টটা ভাতের হাড়ির ঢাকনা খোলা বাষ্পের সাথে দিই মিশিয়ে।
চোখের জলটা ছল করে লুকাই পেঁয়াজের ঝাঁঝে।
আনমনে সব্জি কাটতে বসে আঙ্গুলটা কেটে গিয়ে রক্ত ঝরে।
সেটা কি বুকের রক্তক্ষরণের থেকে বেশী-
সীমন্তিনীর আচড় কাঁটা সেকি ঐ চোখের জলের গোপন দাগের চেয়েও গভীর?
রাত্রি দিনের জপের মালা যে ‘তুমি’
কোনো নাম নয়, শুধু একটা শব্দতে আছো মিশে তুমি
শুধুই ‘তুমি’।

সোমনাথ বেনিয়া


ঊনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ- ১১

সমবেত শক্তিতে মৃত্যুর উলটো পিঠের সমুদ্রে ঢেউ
অবসাদকে লিখতে, হতাশা বুঝতে, প্রেমকাহিনি চুপ
অপরাজিতা ফুটে আছে, গরলের বিস্ময় চিহ্ন ধরি
অতিকষ্টে সকালকে গামছা স্বরূপ কাঁধে ফেলে দাঁড়াই
মেঘলা প্লাবন জানালার গরাদে রাখে মিষ্টি প্রায়
দূরবর্তী মাটির টবে আগাছার দঙ্গল বাঁচার আশা
কে জানে মধ্যরাতে মরু বুকে তুষার যুগের কথা
ছোটো ডোবার ভিতর মারিয়ানা খাতের স্বপ্ন দেখা
কিংবা পায়ের গোড়ালিতে মিছিলের লবণাক্ত স্লোগান
যাওয়াই যায় ভিন্ন পন্থার থেকে রকমফের ঋণ নিয়ে
কার অস্থির ভুলে অফুরান ভাঙি বিন্দুর ছায়াতলে...

নিধি ইসলাম


নির্জনতায়

চারিদিকে কষ্টের আঁধার
স্মৃতিরা খেলা করে মনের গহীনে,
ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি নির্জনতার আঁধারে
জীবনের সব সুখ দুঃখ হাসি কান্না হারিয়ে।

কত আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেম মনের ঘরে
হঠাৎ দমকা বাতাসে সবকিছু হয়ে যায় এলোমেলো
পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দূরে হারিয়ে গেল জীবনের মানে!

নির্জনতার অন্ধকারে জীবনের লেনদেনে
থেমে গেছে জীবনের গল্প স্মৃতিরা মিশেছে ধূলিকণায়
বিষাদগ্রস্ত জীবনে ছুঁয়েছে শূন্যতা!
শুনশান জীবনের বারান্দায়
চুপসে যাওয়া কল্পনার অকাল মৃত্যু ঘটে গেলো
আমার অজান্তেই জীবনেরে ফাঁকা রাস্তায়।

এখন কোথাও কোনো আলো নেই
চারিদিক শুধু অন্ধকারে ঢেকে গেছে চরাচর
কল্পনার পাখনায় অসংখ্য জরাজীর্ণ ভার।

ওাস্তায় রাস্তায় মানুষের অবিরাম কোলাহল মুখরিত
তবুও ভালো থাকার অভ্যাসটাই
হারিয়ে গেছে জীবনের খাতা থেকে
এখন শুধু ক্লান্ত পথিকের মত দীর্ঘশ্বাস
ঝরে পড়ে বারংবার অশান্ত হৃদয় মাঝে।

অনিক সাহা


বুভুক্ষ

ব্যস্ত রাজপথ হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ
চেনা শহরের অচেনা আঁধারে
আবছায়ায় দাঁড়িয়ে দুজন
ইতস্ততঃ সন্দিহান!
আমি

‘তুমি... পজিটিভ নও তো?’

‘মানে... অই আর কি,
 ভয়! ’

মৃত্যুময় চারপাশ,
মায়াময় হাতছানি
‘এসো আলিঙ্গন করি বুকে!’

চুপসে যাওয়া মনোমালিন্য এখন হয় খুবই কম!

হাঁটতে হাঁটতে দেখা গেল লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় মানুষ 
পেটের ক্ষুধা বোঝে না ভাইরাসের,

সামাজিক দূরত্ব ভুলে
তুমি আমি,
তাই ওদের কাতারে দাঁড়াই!

জাহাঙ্গীর আজাদ


গায়ত্রী সন্ধ্যায়

মান ভাঙাতেই মন্ত্র শেখে কি কেউ ?
রাগে অনুরাগে ক্ষোভে অভিমানে তুমি।
তোমার নামটি সাবিত্রী ছিলো তাই
প্রিয় নামে কভু ডাকি নি রজতরেখা,
মান ভাঙাতেই মন্ত্রের চারুপাঠ,
গায়ত্রী শ্লোক তোমার জন্যে শেখা।

অথচ তোমাকে পেয়েছি তিনটি রূপে
চেতন অর্ধচেতন আর অচেতনে,
প্রত্যুষে তুমি ধারণ করো যে রূপ
মধ্যাহ্নেই সে তুমি ভিন্নতরো,
ভর সন্ধ্যায় গলিত স্বর্ণে দেখা
তোমার জন্যে গায়ত্রী শ্লোক শেখা।


শিল্প সাহিত্য ৭৫


রিয়ানো


নতুন পৃথিবী

নতুন পৃথিবী সাজাবো
নতুন আয়োজনে
সকল যাতনা ভুলে
ভালোবাসা ও যতনে
চেনা পৃথিবীর অচেনা রূপ ধুয়ে

কালকেও নয় কেউ একা,
লকডাউনের অভিশাপ পেরিয়ে
মিলেমিশে সকলে  আমরা
এ পৃথিবীকে করে যাব বাসযোগ্য

অভিজিৎ চক্রবর্তী 


স্বীয়  

অসংখ্য মন্দিরের ভীড়ে
মাড়িয়ে যাওয়া ফুল হয়ে পড়ে থাকি।
পূজো নিতে পারছি না বলে
দুধের বদলে মাটিতে দিচ্ছি গড়াগড়ি।
উঠোনে আজ শোভাবর্ধন সভা চলছে!
বিক্রিত পণ্যের মতো দামী নই,
আমাকে কিনে নেবে কে?
কে দেবে ঘন সন্ধ্যার বুকে ধূপের প্রলেপ!
জন্ম থেকেই সেই সলতে হয়ে জ্বলছি
ব্যবহারের আগেই যাকে নাকচ করেছে পৃথিবী।

মোহাম্মদ আবুল হাচান মিয়া


অস্থির আঁধার

ভোরের আলো
সূর্যের নদী
বাগানে ঘুম ঘুম ফুল!

ফুলেরা দুলে ওঠে
নেচে নেচে
বিষাদ পর্ব অলি!

ফুলেরাও নিজেকে নষ্ট করে, অবুঝ হয়!
সেই ভয়ানক সুন্দর
সকাল
রোদে জ্বলে ওঠে রঙের ছোঁয়া
ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ!

হাসে পূবের হাওয়া
মধুর অনুরাগ সুবর্ণ কলস ভাসে নদীজল!

দুয়ারি হিসেব
পাল তোলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
বৃষ্টি ধোয়া চাঁদ!

মুগ্ধ হয় সৌখিন বড়শী;
যেভাবেই
বিলাসী উদ্যান;

বন্দী একুরিয়ামে মাছ!

ভোর বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বসা কাক
কাঁদে স্বভাবের শহর!

অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী


অমৃত

কেমন করে ঈশ্বর ধরেন কম্পাসের কাঁটা
কেমন করে উগরে ওঠে বাতি
কেমন করে দিনগুলো সব সামনে এগিয়ে যায়
এক ঈশ্বরই জানেন তিনি শুধু ঈশ্বর প্রজাতি...

তাদের পাড়ায় শব্দ ছিল না কোনো
শব্দ যাপনে অক্ষম ছিল পাড়া
শব্দের গায়ে লেবেল ছিল তা মৃত
অমৃত শুধু শব্দখেকো বখাটে লক্ষ্মীছাড়া

বসতগুলো এমনি করেই বেদনা সিরাপ খায়
বাংলা অথবা তাড়িও খায় খিস্তি উঠলে মনে।
একে অন্যের ইট খসিয়ে ভিত ধ্বসাতে চায়
ভিতগুলো সব ঝাঁপিয়ে তখন বাঁচোয়া বীজ বোনে। 


শিল্প সাহিত্য ৭৪


অমিতাভ মীর


হেঁটে যায় সন্ধ্যামণি

মৈনাকের জলপ্রপাত পাহাড় থেকে নেমে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলে নদীর কাছে- নদীও যদি চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়; বলো, ঝর্ণার কি দোষ আছে তাতে?

কাঁখের কলসিতে চোখের সবটুকু আলো ভরে হেঁটে যায় সন্ধ্যামণি দিগন্তের পথ ধরে, প্রগাঢ় অনুরাগে অন্ধকার মৈথুনে মেতে মনের সব রঙ ছিনিয়ে নিয়ে,
যদি সময়ের গল্প পটে এঁকে রাখে; জোছনার দোষ কতটুকু দেয়া যাবে?

বিনিদ্র রাতে আমিও বাতায়নে জেগে হংস মিথুনের মৈথুনের রঙে ভিজে, নিজেকে পুড়িয়ে যাই অনিদ্রার হাতে, তুমি;
বিলাসিতা বোলো না যাপিত এই সময়কে।

শুভ্রা কোনার


আমি আধুনিক

ধানবাদ -- ভারত
আধুনিকতার মোড়ক মুড়ে --তুমি আমি অস্থির,
বলে চলেছি অনর্গল- অন্তরাত্মা বধির,
একলাফে ওপরে উঠি--- একলাফে নীচে, সামাল দিতে আমিও কাবু- বেসামাল তুমিও নিজে
স্বাধীনতা ভাসছে দেখো--- ফাঁকা অন্তরীক্ষে,
আধুনিকতা চেপে ধরে- রেখেছি কেমন বক্ষে।
আমি ধবল হয়ে চেয়েছিলাম বাঁচতে---
চেয়েছিলাম চেতনার বিকাশ ঘটাতে।
শূন্য হয়ে রয়েছি সব একাকী---
বহমান মরীচিকা সভ্যতার প্রেক্ষাপটে।
তবুও তুমি কি যেন--- বলতে চাও আমায়, আমি শুনবো না ভেবেও-- বার বার ফিরে তাকায়।
আজকাল কেউ পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয় না,
গুমরে ওঠে স্নিগ্ধ নিশ্বাস আধুনিকতার বাতাবরণে
আমি-তুমি আধুনিক হয়ে বসে আছি কিনারায়,
ভুলে গেছি সব সত্য-মিথ্যে---
শুধু বেঁচে আছি--- অন্যের ইশারায়।।

জাহাঙ্গীর ডালিম 


বর্ষার প্রেম

বর্ষণ মন্দ্রিত সন্ধ্যায়
ভিজে ভিজে
হতে হবে একসায়
ই-ভরা ভাদরে ভাদরে
জ্বর বিনে গতি নেই আমার ? 
ঠিক এখনটায় তুমি যদি আসতে
ওগো দরদিয়া
এক খানা কালো কুচ কুচেছাতা

শীলা ঘটক 


য়তো এটাই জীবন 

কখনো কখনো একটা হৃদয় আকাশ হয়ে যায়
একটা মন নদী হয়ে যায়
এক টুকরো অভিমান বয়ে আনে বৈশাখের নতুন উষ্ণতা।
হয়তো এটাই জীবন।
কখনো কখনো কিছু রাগ সাইক্লোন হয়, কালবোশেখের গোধূলিতে।
কিছু চুপ করে থাকা কথারা
গান অথবা স্লোগান হয়
কালের বিবর্তনে!
হয়তো হয়তো-বা!
অনুভবে অনুরণনে
বুকের মাঝেই রেখো তাকে।
ভালো-বাসা যদি না দিতে পারো
ভালোবাসাটুকু দিও তাকে।
হয়তো এটাই জীবন।
কিছু দুঃস্থের কান্না আর্তের চিৎকার
পৌঁছায় না সহায়তার হাত
কেঁদে ওঠে মন
হয়তো এটাই জীবন!
কিছু অন্যায় কিছু অবিচার
মানতে পারেনা মন
ছিন্নভিন্ন করে রক্ত দিয়ে মুছে দিতে চায় মন
এই কলঙ্কিত ক্ষণ!
পিছুটানে অক্ষমতা
হয়তো এটাই জীবন।

রুহুল আমিন (রনি)


হাটে হাঁড়ি ভাঙা

বেলাশেষে কোথায় হারিয়ে যাবো কে জানে?
সবাই স্বার্থপরতা দেখায়,
কেউ কেউ দেখায় উদারতা!
কে জানে?
কোথায় হারিয়ে যাবো আমরা......

অন্যায়ের বিচারটা কার গরমে,
যেনো কিছুই হয়নি!
মোরলরা সব টাকার গরমে ভাবসে গেছে।
কে জানে?
কোন বেলায় কোকিল আমারে ডাক দেয়!
যতোদিন থাকবে তুমি, থাকবে হাতে শক্ত লাঠি,
কে জানে?
কার কপাল পুড়বে, পড়বে সেদিন পিঠে লাঠি।
দেখবে আগে বিবেক, দেখবে সুধী করবে বিচার,
ভাঙবে হাটে হাঁড়ি।


শিল্প সাহিত্য ৭৩


এম. এম. বাহাউদ্দীন


বিচার চাই

আমিও একদিন জয়নাল হাজারীর মতো তোমার বিচারের দাবীতে রাজ পথে দাঁড়াবো অনামিকা।
হৃদয়ের চুক্তি ভঙ্গের দায়ে টানাবো ব্যানার।
জড়ো করে ফেলবো সমস্ত ভগ্ন হৃদয়ের মানুষ।
রাজ পথের গাড়ি আটকে করে দেবো হরতাল।
যে সমস্ত কবিদের ঠকিয়ে ধরেছো রাজ হাত,
তারাও দাঁড়িয়ে যাবে রাস্তায় হাতে হাত রেখে।

কোর্টের বারান্দা, কলেজের মাঠ, আর্ট গ্যালারী,
একুশের বই মেলা, বিজয় উৎসব, বা শোক সভা,
কিছুই করতে দেবো না আমি, না মানলে দাবী।
শিশুর ভুমিষ্ট হওয়া বা রোগগ্রস্থের চির প্রস্থান,
সব কিছু থমকে দাঁড়াবে করোনার লক ডাউনের মত।

অনশন করবো আন্না হাজারীর মত আমৃত্যু।
না। দাবী না মানা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির হাতেও স্পর্শ করবোনা পানি বা ফলের জুস।
তুমি বা তোমরা স্বামীর বুকে শুয়ে শুয়ে
টেলিফোনের ওপাশ থেকে দেবে শান্তনা।
আমরা কিছুতেই তা মানবোনা।

পৃথিবীর ইতিহাসে, দেয়াল লিখনীতে,
তোমাদের নাম উঠে যাবে গভীর ঘৃণায়।
তবুও রাজ পথ অবরোধ করবো তোমার বিচারের দাবীতে।
জয়নাল হাজারী, হেলাল হাফিজ, হেফজুর রহমান,
বা হালের চির কুমারেরা থাকবে সে মিছিলের অগ্রভাগে।

মোশরাফি মুকুল 


শারীরিক দূরত্ব

তোমাকে গোলাপি মাস্ক ভেবে সেঁটে নিচ্ছে যারা উর্বর ঠোঁটের চতুর্দিকে
এবার তাদের তীব্র রসায়ন এবং শারীরবৃত্তের বিজ্ঞাপন থামাতে বলো।
আমরা সামাজিক দূরত্বের পরিধি বাড়ানোর কথা বলছি,
খুলে ফেলছি শারীরিক দূরত্বের জিপার।

নষ্ট আঙুল দিয়ে ভ্রষ্ট নগর মেপে দেখি-
এখানে মূলত পাথরকুচির মতো কাণ্ড ও পাতা ছাড়া ফুল-ফল, শরীর বলে কিছু নেই।

সুজাউদ্দৌলা


বৈকালিক

উড়োজাহাজের মতো ফড়িংগুলি ইতস্তত
উড়ছে বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাসে
কালো যুদ্ধবিমানের মতো একটি ফিঙে
ঠোঁটে গেঁথে নিয়ে বসছে মেহগনি গাছে
ফটোসাংবাদিকের মতো আমি দেখছি
ক্যামেরাবিহীন; ছবি তোলার দায় ছাড়া-

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


অজস্র কথামালা

তার শরীরের পরতে পরতে ধরা
                          অজস্র কথামালা...
মনের অন্দরে ধরা আছে
কিছু বিমূর্ত ঘটনার
                          ছায়াময় স্মৃতি...

কঙ্কালসার এই উলঙ্গ সময়ের
চোখের তারায়
থমকে দাঁড়িয়ে আছে
                        পূর্ণিমার চাঁদ...

বিধ্বস্ত
বিপর্যস্ত

সংক্ষিপ্ত অবসরের ফাঁকেই
ভালোবাসার বাসন্তিকা ট্রেন
ডাক পেয়ে
                      চলে যায় দূরের গন্তব্যে
রেখে যায়
পথের দু’ধারে
পোড়ামাটির সব ঘর-বাড়ি, গেরস্থালি আর
নিদ্রাহীন দিবারাত্রির কাব্য

কেঁপে ওঠে অন্ধকারের রোদ

অজস্র কথামালার ঘাড়ে চেপে
ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দিনের নিস্তব্ধতা...


শিল্প সাহিত্য ৭২




রাজীব পাল


ভ্রমণ

নিজের ভেতর ক’পা চুবিয়ে হাঁটা দিলে হে?
চু কিত্ কিতে কাটা দাগ ডিঙিয়ে ফেরা
সন্ধেরা, ও পায়ের পাতায় কুঁকড়ে যাওয়া,
কতটুকু ভ্রমণ মেপেছো বুকের ভঙ্গুরতায়?

লক্ষ যোনি, হাঁপিয়ে ওঠো, শ্বাসকষ্টের
শ্বাসযন্ত্রে নামিয়ে রাখা ঘোড়ার মাথা
স্বপ্ন দেখুক ঘাসের মাঠ, সূর্য ডুবে যাচ্ছে
নিজের ভেতর হেঁটে ফিরে আসছো কি?

সাব্বির হোসেন


আঁধার থেকে আলোয়

এই শহরের প্রত্যেকটি অলিগলি
দরজা, জানালা, দেয়ালের কার্নিশে
এঁটে থাকা ভেন্টিলেটর,
বিছানার চাদর,
ড্রেসিংরুমের বোবা চিরুনি,
বেসিনের আয়না,
আর চুমকি বসানো লাল পার্সে
জ্বলতে থাকা কালো টিপ
আমার নিত্যকার বিষাদের সাক্ষী।

এক একটি হিংস্র নটরাজের থাবায়
বিকিয়েছি পুষ্পমঞ্জরি
এলিয়েছি বসন্তের টগবগে শরীর
নখের আগ্রাসনে
রাজপথ থেকে রাজপথে
চৌকাঠ থেকে পালঙ্কে
আঁধারের মৃত শিল্প হয়ে
সময়ে অসময়ে ঘড়ির কাঁটার
ইশতেহার হয়ে।

আমি মুনিয়া,
তবুও স্বপ্ন দেখি হয়তো একদিন
কবির বনলতা হব
হয়তো হব ডার্ক লেডি অফ শেক্সপিয়ার
নিষ্প্রাণ প্রতিমা আবার জীবন্ত হবে
দুর্লভ ফুল হয়ে স্বজন সভ্যতায়।


শিল্প সাহিত্য ৭১


অভ্র আরিফ


ভুল

ইন্টারভ্যু বোর্ডে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো,
“পৃথিবীর রাজধানীর নাম কী?”
আমি মনে করতে পারলাম না।
তারপর জিজ্ঞেস করলো, “ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান কোথায় জানেন?”
আমি এটাও ভুলে গেলাম। অথচ আমার ভুলে যাওয়ার কথা না
অথচ আমরা রাত জেগে এসব মুখস্ত করি।

ফিরতিপথে ট্রেনের সিটে মাথা হেলিয়ে মনে হলো,
পৃথিবীর রাজধানীতো আমার হৃদয়
ব্যবিলনের শূন্য উদ্যান আমার মস্তিষ্ক
নিজেকে ধিক্কার দিলাম। কী আশ্চর্য!
জীবনের দেনা শোধে মানুষ অনায়াসেই হৃদয় আর মস্তিষ্কের কথা ভুলে যায়!

সারাটা যাত্রাপথে আসন্ন ভুলের মাশুল ভাবতে ভাবতে
ত্রিশটা স্টেশন পার হয়ে আমি গন্তব্যে নেমে যাই।
কিন্তু একী! এ রুক্ষ, ধূসর, ঊষর গন্তব্যস্থল কখনো আমার নয়
আমার দেশ-  পাহাড়, সমুদ্র ও সবুজের দেশ।
বুঝলাম, ভুল টিকেটের যাত্রী হয়ে ভুল গন্তব্যে পৌঁছে গেছি
ততক্ষণে আঁধার ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামে প্রায়।

ভুল স্টেশনের যাত্রীদের কেউ আর কোনোদিন ফেরত নেয়না।
আমার সমুদ্র আর সবুজ পাহাড়ের জন্য আমি নিঃশব্দে কাঁদলাম।

অতঃপর, নিয়তিকে মেনে নিয়ে এবং কিছু করার না পেয়ে
রুক্ষ-ধূসর ঊষর জমিতে হৃদয় ও মস্তিষ্কের ব্যবহার করে
আমি পাহাড়, সবুজ ও সমুদ্রের আবাদ শুরু করলাম।

সুমন মন্ডল


প্রতিবন্ধক জীবন 

নিজেই নিজেকে খুঁজে চলেছি সারাক্ষণ
কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে খামোখা নাটক করছি
আমি এক অন্য আমি হওয়ার চেষ্টা করছি
নিজেকে ধীরে ধীরে ভুলতে শুরু করেছি
সত্যিই কী পৃথিবী আরেকটু সহজ হতে পারতো না?
জানি বাস্তবটা কঠিন
তবে কিছু মানুষ সেটিকে আরও দুর্ভেদ্য করে তুলেছে
কেন এই লোক দেখানো কার্যকলাপ?
যে যা তাকে সেরকমভাবে বাঁচতে দেওয়া কী খুব অন্যায়ের?

নীহার জয়ধর


কাপুড়ে কথা 

তোমার কাপুড়ে কথা কেটে নিয়ে পীরানে পাতলুনে
আমি অপেক্ষা করি,
শাড়ির উপত্যকা বা ঘনিষ্ট অন্তর্বাসে
একই বাতাস খেলবে,
আমারই মনোমত ।

আঁশের নিবিড়ে যাইনি কখনো
দেখিনি পর্দার পেছনের গল্প
পাট-মেস্তার ক্ষেত, কাপাস বাগান
অথবা গুটিপোকার ঘর ভেঙে কীভাবে লাস্য পায় সূতা ...

এখন সাইকেলে ওড়না,
বাইকে স্পর্শকাতর স্কার্ফ,
সাহসী অভিমানে বক্ষবন্ধনী,

অথবা চুল না বাঁধার সেই প্রতিজ্ঞায় সেদিন
ঋতুমতীকে আড়াল করছিল যে একাকী বস্ত্র
তারপর নেমে আসা ছায়াপথ ব্যাপী কৃষ্ণকরুণা
সেদিন আমি শুধুই অনুজ দুঃশাসন।

এমন মিথ, মহাকাব্য, ইতিহাস শেষ হয়ে গেলে
সমর্পিত চোখ ক্ষেতের পাশে বাকল বা আঁশে

তোমার সূতার খবর চাই
ভাত কাপড়ের থালায় প্রায়শ্চিত্ত সাজাব
একটা সেতুর জন্য,
তোমার কাপড় তোমার মাপেই নতজানু হবে
আগামী শীতে শরীর- হৃদয়ে  সে উষ্ণতা মুখোমুখি পেতে।


শিল্প সাহিত্য ৭০


সুবীর দাস


ভাত হত্যা হলে 

একহাত ধরে দারু টানে, আরেক হাত ধরে গরু ।
ভাত হত্যা হয় বলে, ধর্মাবতার, শেষ দূরে থাক বিচার কি হতে পারে শুরু ?
কে সে আসামী ?
ধরো অন্ধ ও বধির রাষ্ট্রের মতো আমি।।
যে আমার চোখে পৃথিবীর সেরা কবিতা ---
বিজ্ঞান নয়, ধর্মের বটিকা চিবুতে চিবুতে উপভোগ করি বিজ্ঞাপন বা বিনোদন বিচিত্রা !
বিধিনিষেধ ? মায়ের ভোগে
অভিকর্ষ টানে বিবর্তন যোগে !

যখন কথা বলে উলঙ্গ বাজার ঈশ্বরের চেয়ে বড় সত্য!

কাজী আতীক
বদলে যাচ্ছে সামাজিক সংস্কৃতির ধরন

এই কিছুদিন আগেও পশুর শিং আর মানুষের কনুই
একই কাজে ব্যবহৃত হতো, অর্থাৎ বলা যায় সমার্থক ছিলো
অথচ এই সংক্রমণ সময়ে বদলে গেছে কনুইয়ের ব্যবহার
এখন কনুইয়ে কনুই ঠেকিয়ে হয় উষ্ণ সম্ভাষণ
হাত মেলানো ইদানিং তলপিতলপা সহ সমাজচ্যুত প্রায়।

আগে ঘরে না এসে সামনে থেকে আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব
এমনকি পরিচিত কেউ চলে গেলে মন খারাপের বিষয় হতো
আর এখন ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েই কুশল বিনিময়টা দস্তুর।

মাজহার জীবন 
সন্ধ্যাবাতি

তুমি যেন সন্ধ্যাবাতির শিখা
কোনো এক গাঁয়ের কুড়েঘরে
মৃদু হাওয়ায় হাওয়ায় দোল খাও
একটা জলন্ত জিহ্বা যেন
গুনগুনাও প্রেমের কাসিদা
আমি সেই আশিক
তোমার ইশকের ডাকে
পতঙ্গের মত ঢলে পড়ি তোমার কোলে
এক অনিবার্য ধ্বংসের আয়োজনে

সন্ধ্যাবাতি সবার আলো
প্রিয় মরণ আমার,
প্রিয় মাসুক আমার

রুদ্র সাহাদাৎ 
আবার আমাদের দেখা হবে

দেহপাঠের রচনা পড়তে গেলেই রিরংসা জাগে
উদবাস্তু মন পালাতে চায়,
জীবনের সীমানা পেরিয়ে আরো দূর বহুদূর,
কোনো অজানায়, আমাদের দেহপাঠ হয়নি
                                      আজও
এই বসন্তেও।

কখন কী বলছি, কখন কী করছি, ঈশ্বর জানে।

প্রতিক্ষায় থেকো, এই করোনাকাল গেলে
আবার আমাদের দেখা হবে।

তন্ময় পালধী
অনুভূতি

নক্ষত্রের বিছানায় শুয়ে
একটা একটা তারার অবয়বে,
তোমার লাবণ্যদ্যুতি ঝলমলিয়ে উঠছিল যখন,
আমি ধ্রুবতারা হয়ে থাকতে চেয়েছি।
চেয়েছি চাঁদের মতো স্নিগ্ধ হব
আঙিনা জুড়ে খেলা করব সারাক্ষণ
তুমি সেই স্নিগ্ধ জোছনায় স্নান করতে করতে,
আমার গভীরে ডুবে যাবে।
ভেবেছি গভীর হব পাতালের মতো,
যেখানেই দাঁড়াও আমারই ধারক পাবে,
আমি সেই ভার বহন করতে করতে,
তোমাতে আমাতে লীন হব।
লীন হয়ে যাবে সময়ের স্রোত-
সম্পর্কের পাড় ছুঁয়ে,
সামনের দিকে তোমার পরিণতি বোধে-
আমি সমুদ্র হয়ে সব মান অভিমান শুসে নেব।
 ----------------------------------------- কথা
                                                       
বসন্ত বাতাস যখন মন ছুঁয়ে খেলা করতে চায়,
গহীন হৃদয়ে, তখন কথাগুলোর মিষ্টতায়,
তীব্র আসক্তি ঝরে পড়ে চোখ মুখ দেহ বেয়ে। স্পর্শের ও গন্ধ আছে
আছে শব্দহীন অনাবিল প্রশান্তির অনুভব,
সে কথা বুঝতে বুঝতে কথাতেই ঘোর ভাঙে।
এসবই অলীক কল্পনা নিছকই স্বপ্নের মায়াজাল,
হিসেবী সম্পর্কের রসায়নে,
ভাষার রাজমহল যেভাবে রচেছিলে তুমি,
সে মগ্নতায় ডুবে ছিল আমার আমিত্ব,
টুপটাপ ঝরে পড়া বৃষ্টির মতো রাঙানো কথায়,
ঘুণধরা! তবু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চায়।

মুতাকাব্বির মাসুদ
চোখের লাশ

এখানে এই চোখের বেলকনিতে
এক চিমটি আলো ছিলো
এক ঝাঁক আলোমতি জোনাক ছিলো
ভালো ছিলাম ভালোই আছি!
তোমায় নিয়ে ভালো থাকবো বলে এখন আমি
একেবারে গ্রহণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি!
চোখের জলে তোমার চোখের আলোয়
আমার এ পথচলা!
অন্তর বাহিরে কেবল
কখনো আলো কখনো আঁধারের খেলা!
তোমার আমার অতি নিকটবর্তী সম্পর্কের
দূরবর্তী মধ্যগগনে, আজ এই মধ্যবয়সে
বয়সী চশমার অনুদ্বেগ শরীর বেয়ে,
কেবলই নামে সমুদ্রের হিমশীতল দুর্বোধ্য
বরফ পেঁজার বিন্দু
তোমারই অনুদানে পাওয়া
অনধিগম্য আলোর শরীরে খেলে
আজ মৃত আলোর কণা
আলোর ঘরে আলোর দ্যোতিত আঁধার
তাহলে আমি কি দেখেছি চোখের আলোয়
তোমারই চোখের লাশ?

মিলন ইমদাদুল
প্রিপারেশন অব সুইসাইড

আত্মহনন বিষয়টা মোটেও এতোটা সহজ নয়-
যতোটা না মুখে বলা যায় !
আত্মহত্যায় অবশ্যই পূর্ব প্রস্তুতি থাকা একান্ত প্রয়োজন।

কোন একদিন বুকভরা ব্যথা নিয়ে ভাবলেন-
নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে বাঁচবার ইচ্ছে নেই আপনার!
ভেবেচিন্তে সত্যিই ঠিক করলেন নিজেকে হত্যা করবেন কোন ঔষধে!
কিংবা জনমানবহীন একটি দোচালা ঘরে ফ্যানে
চুপচাপ ঝুলিয়ে পরবেন!

পরেরদিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে
নির্জনে চললেন শক্ত মজবুত রশি হাতে!
এবং কাঁপা কাঁপা হস্তে টুলে দাঁড়ালেন,
ফাঁসিটা গলায় ঝুলানোর প্রায় ত্রিশ সেকেন্ডে পূর্বে-
সহসা মনে পরলো...

গত মেলায় কেনা প্রিয় বইটি এখনো পড়া হয়নি-
অতঃপর নেমে পরলেন মেঝেতে
ফ্রেশ হয়ে নিলেন এবং বইটি পড়লেন আপনমনে,
তৃতীয় দিন আপনার সত্যিই মনে হলো-
“আত্মহত্যার চেয়ে বেঁচে থাকাই বরং শ্রেয়”!


শিল্প সাহিত্য ৬৯


আশিক আকবর
বেশ্যালয়ে এসো

তীর্থ প্রবেশ কালে প্রার্থনা করো। প্রস্থান কালে হাতাও পকেট। দ্যাখো, খুচরো টুচরো আছে কিনা বিড়ি ধরাবার। নারীসঙ্গে ঐ স্থানই শ্রেষ্ঠ দেবালয়। কোআরেনটাইন সাঙ্গ হলে, ওখানেই কবিসঙ্গে আড্ডা পেটাবো।
সর্বজনে আদরে কহিবো। স্বাক্ষাৎ যদিবা চাহ, বেশ্যালয়ে এসো। মদ মাংসে নিষেধাজ্ঞা নেই। সস্তাতেই মিলে জিলে সব। অনিষিদ্ধ পৃথিবীর মতো বড় বড় পাত্তি লাগে না। শিখতেও হয় না নারীর ব্যাকুল বোবা ভাষা। সরব এখানে নারী পুরুষ অধিক। এইস্থলে কমরেড রিক্রুট অতিব সহজ। যদি চাহ কমরেড ভ্রাত!

সজল রানভী
“বিসর্জন অথবা বিষ অর্জন”

তুমুল কবি হতে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করেছি তুমুল ভালোবাসা । ছিঁড়ে ফেলেছি সংসারী স্বপ্নের খতিয়ান ।
মুক্ত । অথচ পেট’নীতির নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাখির ডানা মেলতে পারিনা যখন তখন।
ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যঞ্জনা মুছে ফেলে লিখতে পারিনা কাঙ্ক্ষিত কবিতা।
আঁকতে পারিনা মায়ের মতো নারী।
পাহাড়ের জরায়ু ভেদ করে যে নদী বয়ে গেছে আমার পৈতৃক ভিটেমাটি গিলে ফেলে,
সে নদীতে নোঙর ফেলবো ফেলবো করে ছাব্বিশ ক্যালেন্ডার। প্রজাপতির নাভিতে একটাও চুমু নেই।
ফুলকে ভুল দিয়ে অংক কষতে কষতে ফলাফলে নামিয়ে ফেলি ভীষণ শূন্যতা। ভীষণ একাকীত্ব।
সঙ্গমরত টিকটিকির যাপিত সুখে অসুখ জমে যায় সমস্ত বুকে। চোখে নরকের অন্ধকার। অভুক্ত কুকুরের হা হুতাশ।
তুমুল কবি হতে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করেছি তুমুল সংসার । ছিঁড়ে ফেলেছি, পাশাপাশি শুয়ে থাকা সাড়ে তিন দু’গুণে সাত হাত জীবনের চিত্রপট ।।

শান্তম 
একটি ভুল 

রাখালের অন্যমনস্কতা ও বই হারানোর
অনেকদিন পরে প্রভুর গোরু হারানোর
ঘটনাকে জুড়ে দিয়ে বাবা বারবার
গোপালকে সুবোধ বালক বলতেন

অথচ মা কিছুই বলত না

রাখালের যে উপায় ছিল না কোনও
সে কথা অনেক বড় হয়ে নয়
অনেক বয়স হলে যখন জানলাম
তখন দেরী হয়ে গিয়েছে ভীষণ

মোহাম্মদ আবদুর রহমান
ফুটবলের মত

আমি শিক্ষিতও নয়
আবার মূর্খও নয়
দুটোর মাঝামাঝি
ঠিক যেন ফুটবলের মত।
শিক্ষিত ও মূর্খ উভয়েই
লাথি দিয়ে ঠেলে ফেলে দিতে চাই
পরস্পরের বিপরীত দিকে ।
আমি যখন লাথি খেতে খেতে প্রবেশ করি কারও ঘরে।
অন্যরা মেতে ওঠে উল্লাসে
আবার টেনে নিয়ে যায় মাঝখানে।
আমি আর্তনাদ করে বলি
আমি শিক্ষিত
আমার কাছে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্র।
শিক্ষিতরা জিজ্ঞাসা করে
তোর কাছে সরকারি কোন কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের কাগজ আছে?
মাথা নত করে শিকার করি না
তবে তুই কিসের শিক্ষিত?
মাথা পেতে নিই আমি মূর্খ।
শিক্ষিতরা হাসতে হাসতে লাথি দিয়ে ছুড়ে ফেলে মূর্খের দলে।
তারাকে বলি আমি মূর্খ
মূর্খরা বলে কৃষিকাজ করতে পারবি
আমি বলি না।
তবে বিশ্ব বিদ্যালয়ের মানপত্র আছে
বলি হ্যাঁ।
তাহলে তুই শিক্ষিত
আমি মেনে নিই তাদের কথাও।
তারাও আবার লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে
শিক্ষিতদের মাঝে।
এভাবে লাথি খেতে কেটে যায় সারাবেলা
অসলে আমি তো সমাজের ফুটবল
গড়তে থাকি সবার পায়ের তলায় ।

বঙ্কিমকুমার বর্মন
চোখ

অলীক কান্না ঢেলে দেয় প্রতিটি সন্দেহ চোখ
আমার নরম শিখা ছুঁয়ে থাকুক শান্তির সমীকরণে
কেমন অবাধ্য হয়ে উঠছে চুঁইয়ে পড়া নির্জনতার সঞ্চয়

উড়ে যাও উঁচু নিচু স্বাদ ভুলে পিপাসার বুনুনে
দ্যাখো সোহাগে ডেকে নেবে কাছে ঘামফুল
উঁকি দেয় রাস্তার তৃষ্ণা এদিক ওদিক বৃষ্টি পথ ঘুরে ঘুরে

অলস্যতা ঘেঁটে ঘেঁটে এখন ক্লান্ত হয়ে উঠি
কেমন জড়িয়ে উঠছে পাবে সূর্যের ফাগুন
আস্ত শামুকের গতিপথ বদলে নিচ্ছে দূরবীনের গালিচায়

চেয়েছি ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের জ্যামিতিক চকচকে রূপকথা।


শিল্প সাহিত্য ৬৮


মাহফুজুর রহমান লিংকন
এই তো কয়েকদিন আগে মধ্যরাতে...

আহ্লাদি জ্যোৎস্না শহরের ওপাশ থেকে
কবিচুলের সিঁড়ি বেয়ে ধেয়ে এসে...
নিমজ্জিত চোখে
মহিলা কলেজ পার হতেই
জেলা শহরের নীল রঙে ভীত হয়ে যায়।
সঙ্গীহিনা - ভীত জ্যোৎস্নার বিশ্বস্ত সাথী
কবি একা!
কবি, পার্কের দীঘির দিকে এগুতেই
একটি কুকুর মধ্যরাতে স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করে
মিশে যায় ছবির মতন...
নববধূ তারপর বর, দুই, তারপর এক,
আদম এবং ইভ, তার সঙ্গী, চাঁদ তারপর সূর্য।

জ্যোৎস্না; কবি এবং কুকুর মিলে
নিষ্প্রাণ শহরের পাথুরে ঘুমকে
ভেঙ্গে দেয় নিখুঁত ঠোঁটের বাঁধাই করা
শাণিত বাণীতে!

সিদ্ধার্থ সিংহ
অক্সিজেন সিলিন্ডার

যে দিকে তাকাচ্ছি
দেখছি, সবাই ছোট্ট ছোট্ট অক্সিজেন সিলিন্ডারের ট্রলি
টানতে টানতে যাচ্ছে
বাজারে... অফিসে... বিয়ে বাড়িতে...
বইয়ের ব্যাগ নয়, নানান রং আর ডিজাইনের
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে
কেউ হামাগুড়ি দিচ্ছে
কেউ দোল খাচ্ছে
কেউ হা ডু ডু খেলছে
রাতে ঘুমানোর সময়েও সবার নাকে লাগানো
অক্সিজেন মাক্স।

যে দিকে তাকাচ্ছি
সে দিকেই এই একই দৃশ্য
কিন্তু বুঝতে পারছি না
সালটা কত!

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
শোধন

ধুলোর ঘূর্ণিতে যে মুখ আঁকা তার নাম ধূলি।
জলের চক্র থেকে তৈরি মুখের নাম দিই জলদা।
মেঘের পাহাড়ে আঁকা মুখ মেঘবতী ছাড়া আর কী?
ঘন জঙ্গলে যে মুখ সবুজ আঁকে তাকে বলি শ্যামলী।
দূরের পাহাড় বা কুয়াশায় যে টানে তার নাম অধরা।
ছলাৎছল জলের নূপুর যে কন্যা হরিণশিশুর মতো
চঞ্চল ছন্দ ধরে নাচে না ডাকলেও সে মৃগনয়না।
নীরস মরুর দমফাটা তৃষ্ণায় যে মুখ জলের চিকন
ছলনার গন্ধমাখা বাঁচার স্বপ্নসুখ আলেয়া তুমি।

এতগুলি মুখ বা মুখোশ ডানায় গাঁথা গতির জীবন।

কোন রসায়নে প্রতিটি কন্যামুখ এক ও একক ?
পবিত্র মুখের আলো মুছে দিতে আগুন বা কালিমা
কয়েকটি ধর্ষণকামী জীব নরকের অন্ধকার মাখে
তাদের জন্য কিছু ঘৃণা আর সর্বভুক আগুনদহন।

মহৎ সেই কাজের নাম রাখি জঞ্জালশোধন।

আপন রহমান
কবিজনম

কবিরা বড্ডবেশি সুখ পিয়াসী হয় কিন্তু দু:খের সাথে গড়ে ওঠে তাদের নিগূঢ়তম সম্পর্ক!

কবিজনম মানেই -
বিচ্ছিন্নতা, বেদনা, বিষাদ, বিরহ, বন্দী আর ব্যবচ্ছেদ।
এ জনম এমনিই জনম
যে জনম থেকে চাইলেই পালানো যায়না, ঈশ্বর নিজেই অন্ধকারে মুড়ে রাখেন ফেরার পথ!
কবি  স্রষ্টা!  (না ঈশ্বর নয়)
কবিতা পবিত্রতম সৃষ্টি!
যাকে ছুড়ে ফেলা যায়না
ছেড়ে থাকা যায়না।
কবির বুক বড় পবিত্রতম বুক
যেখানে থাকে সমুদ্র্রর মত গভীরতম ভালবাসা।
কবির মস্তিষ্ক মহত্তম কিছু
যেখানে থাকে ঈশ্বর প্রণীত মহত্তম সংকলন।
কবিরা নদী ও নক্ষত্রের কথা বলেন,
মানুষ এবং পৃথিবীর পক্ষে  কখনও কখনও জ্বলে ওঠে কবির বারুদীয় কলম!
কবির শব্দের বারুদীয় বিস্ফারণে
কখনও বা কেঁপে ওঠে শোষকের চেঁয়ার!
কবি শ্রমিক-শব্দ শ্রমিক
যে শ্রমের মূল্য তথাকথিত সমাজ, সভ্যতা কখনও দেয়নি।

কবি প্রেমিক- বিরহী প্রেমিক

প্রেম আর ভালবাসাহীনতায়
ভুগতে-ভুগতে অধিকাংশ কবির জনম হয়ে ওঠে- বিরহী প্রেমের পূর্ণদৈর্ঘ্য রূপকথা!
কবি মানেই, নিশি মানব -নিশাচর-চাঁদমানুষ।
-কবিতার পরিচর্যা করতে করতে
কখন যে কেটে যায় এক একটি রাত!
অবশ্য-
কবিদেরও মাঝে মাঝে ঘুম পায়
ঘনঘন হাই ওঠে,
তবুও
কবিরা ঘুমাতে পারেনা
শব্দ ও ছন্দের ভাঙা -গড়া করতে করতে কখন যে শুকতারাটা বিলীন হয়ে যায় আকাশের গর্ভে ;
কবি ও কবিতা পায়না তা টের!
কবিদের সঙ্গী হয় কবিতা
প্রেম হয় কবিতার সঙ্গে
কবি আর কবিতার মিতালী চলতে থাকে রাতের গোপনে।
এভাবেই একে-দুইয়ে-তিনে
চলতে থাকে কবিজনম...


শিল্প সাহিত্য ৬৭


আবু জাফর সৈকত
বচন

নীরিক্ষার ভারে ভারে আপনার তত্ত¡ বড় বেশি জালাতনের কারণ হয়ে পড়েছে।
নয় ছয় বুঝিয়ে অন্যের লেজ কাটতে ব্যস্ত। এইবার একটু ক্ষান্ত দিন। প্লিজ!

শ্রমিক বুঝেনা জ্ঞান; শ্রমের মূল্য চায়-
আন্দোলনের ব্যয় না বাড়িয়ে চায় কাজ
দীনাতিদীন মৃত্যুপ্রহর অথবা অভিশাপ চায় না
শাসন আসন থেকে মজুরের পাশাপাশি একটু মৃদু হাসি।

জাহাঙ্গীর জয়েস 
বিষকাঁটা

আমাদের যত্নে গড়া স্বপ্নগুলোও কখনো কখনো বিষকাঁটা হয়ে ওঠে :
আমাদের তুচ্ছ চাওয়া- পায়ে হাঁটা পথ, জলাশয় মেঘমুক্ত আকাশ কিংবা চায়ের কাপেও কারো কারো স্বেচ্ছাচারী হাসিতে ফুটে ওঠে রক্ত!

মিথ্যা মহিমায় আজ কোনো বিকার নেই
অপমানে, নির্যাতনে আজ কোনো বিকার নেই
অনাচারে, অবিচারে আজ কোনো বিকার নেই

আজ আনন্দ বিক্রয়মূল্যে : কতো বেশি দাম উঠলো; রঙিন পোশাকে আজ ঢেকে রাখি বিষকাঁটা!

রাহুল ব্রাহ্মণ
পাহাড় প্রেম...

একটা গাঢ় কালো রঙের অন্ধকার...
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরে উঠে যায়,
কালচে নীল হয়ে মেশে তারাদের ছায়াপথে।
আকাশের বুকে এক ঝাঁক জোনাক বিন্দু!
আমি ঘাসের নরম গালিচায় শুয়ে স্বপ্নের জাল বুনি,
পাহাড়ের রূপকথাময় বাস্তবে!

একটা নিস্তব্ধতার ঘোর... পাহাড়ি রহস্য...
মিশে যেতে থাকে আমার চারপাশে, হাওয়ায়... গাছগাছালিতে... সারা পাহাড় জুড়ে!
গহসা কোনো নাম না জানা উদাসীন পাখির ডাক...
আমার স্বপ্নের জাল বোনা থমকে যায়,
আমি তখন বাস্তব থেকে দূরে.. অনেক দূরে...

একটা আরাম... ভীষণ ভালোলাগা...
হঠাৎ সমুদ্র তার গভীরতার দোহাই দিয়ে তর্ক বাধায়; বলে,
“বেশ তো ছুটে এসছিলে আমার কাছে এক মনখারাপী মরশুমে!”
আমি বিনা বাক্যব্যয়ে জিতিয়ে দিয়ে পাহাড়কে!
আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করি,
আমার স্বপ্ন প্রসারিত হয় পাহাড়ি শীতঘুমে...

খাতুনে জান্নাত
বৃষ্টিমুখ

বৃষ্টিতে ভেসে যায় হুতাশন
অপরিচিত ঝনাৎকারে পড়ে থাকা কাৎরা কাৎরা সময়ের 
সহগামী কম্পন,
জাগ্রত শিল্প,
অনুরণনের সুনিবিড় পাঠশালা ছুঁয়ে-
ফাৎনা কাঁপিয়ে চলছে বৃষ্টি ঝমঝম
কদম ফুলের নিমগ্নতা মিশে যায়
অস্তিত্বের রোয়াওঠা উঠুনের স্রোতে...

অসুখ ও আমাদের মাঝে বৃষ্টি প্রাচীর

চুপিসারে তোমার কণ্ঠ ভালো থাকার মিষ্টি রিমঝিম
গন্তানের চোখের মতো আগ্রহী ভোর
মায়ের চকচকে চোখে শুভ হোক নন্দন কালের গল্প,
হাতে ভেজা পাতার চিঠি
গন্ধরাজ মুখ যেন কবিতার সিম্পনি
ক্রন্দনের দাগ-মোছা গীতালি বাতাস...

মহাশূন্যতার কোল ভারী করে বেঁচে থাকার আগামী
বিভোর হবার শাগ্রাম, পাহাড়পুরের ইতিকথা;
বৃষ্টিতে মিশে থাকে দ্রাবিড় জীবন-
ফসলের আদিবাসে লেখা মনুষ্য ইতিহাস...

তন্ময় বিশ্বাস
জীবন

বেদনা-বৃক্ষ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে সুঁই নদীতীরে-
জল ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে যায় রাত!
চোখের কোনায় জমে ওঠা স্মৃতির-মন্দিরে
শ্বেতপত্রে লিখে রাখা  ঝিল্লির নাম!

ধানের ছড়ার উপর যে শব্দ ব্রহ্মত্বের উপলব্ধি এনেছিল-
সেই ম্লান শব্দ ক্রমে  গিলছে জীবন, রূপকথার-আত্মহীনতা,
জীবন-তো হস্তান্তরযোগ্য নয়, প্রিয়তমা!

এখন অশ্রুর সিঁড়ি বেয়ে কষ্ট নেমে আসে বুকে,
জারজ গাছের মত ফলহীন পড়ে থাকে জীবন!
মেঘেদের ব্যাথা লাগে! বৃষ্টির আঘাতে  ঝরে যায়-
বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকা সমস্ত ওম!

তবু, শেষ চিঠি লেখা হয় শেষ ট্রেন চলে যায় কবরের
শূন্যতা ঘেসে-
হাঁক দেয় কোলাহল, যন্ত্রণার নতুন উৎসস্থল!
জীবন এগিয়ে চলে জীবনের নামে!

মৃণাল কান্তি পণ্ডিত
বিজয় রথ

ভীষণ অবাক লাগে
প্রথিবীর এই নতুন রূপ দেখে
আধুনিকতার যাঁতাকলে
মানুষ যেন বদলে গেছে
আবেগের বিবর্ণ প্রহর ঘিরে
বেদনার সিঁড়ি বেয়ে।
কষ্টগুলো আহত পাখির মতো
ছটফট করেই বাঁচে;
প্রতিশ্রুতির আলপনা
মনের সীমারেখা টানে
স্বপ্ন-মনে প্রতীক্ষার প্রান্তরে নীরবে অশ্রু ঝরে।
মাতাল কোনো ঝড়ো হাওয়ায়
ক্লান্ত সভ্যতার সাথে
মূক ইতিহাসের মতো
লৌকিকতা আজ বিদ্রুপের মৌন হাসি হাসে।
বৃদ্ধ পিতা-মাতা আজ জীবনের বোঝা
ছেলের হাতে পিতা খুন নিত্য হেথায় ঘটে
সন্তান মেয়ে হলে ছুঁড়ে ফেলে ডাস্টবিনে
দ্বেষ-হিংসা মন্ত্রণায় মালা গেঁথে,
সম্পর্কগুলো অথর্ব বিকলাঙ্গ জোড়াতালি দিতে দিতে।
একালের মানুষ সুখের সঞ্চারে
মনুষ্যত্ব রেখেছে দূরে,
বিভোর মানুষ ঘুরে ফিরছে বিজয় রথের আশে।

সাঈদুর রহমান লিটন
এক আকাশ রোদন

চোখে ভাল দেখা যায়না আজ
চোখের ছানি, পাহাড় ছুঁয়েছে
এক বিকেল, এক সন্ধ্যা নতুবা রাত।

খুব যে বেশি পথ পারি দেওয়া তা নয়
বরং কত ঘাটে ফেলেছি নঙর,
পড়ন্ত দুপুর হিসেব কষেণি,
গুনে গুনে তবু ও পড়ছি নামতা।
স্মৃতিভ্রম মানুষ।

সত্যি বলছি আজো আদর্শলিপি মনে আছে,
মন চষে যায়, স্মৃতির পড়ে রাখে লাঙল
ফসল ফলেছে বটে আদর্শ ফলেনি মোটে।

এক আকাশ রোদন আজ সঙ্গী
স্মৃতিরা কোলাকুলি করে ঝাপসা চোখে
রাতের তারা নীরব সাক্ষী, আজ আর আকাশে তারা নেই, মেঘেরা নিয়েছে আশ্রয়।


শিল্প সাহিত্য ৬৬


অভিজিৎ চক্রবর্তী 
মে আই কাম ইন
                       
তোমার ক্রমাগত প্রস্থানে জল শুধু মুছে গিয়েছে নদীর ভাঙন, ক্ষয়ে যাওয়া অংশের ভেতরে জীবাণুরা চালাচ্ছে চুনকাম। অসংখ্য অসুখের ভীড়ে নগ্নতা দেখে গেছে সুস্থ এক দোপেয়ো মাছি অথচ প্রতিদিন নরম পর্দার আড়ালে ক্রমশ নগ্ন হয়ে উঠছে চাহিদা!

সরকার মামুন
বিনোদন

তাসের একটা দুনিয়া আছে...
বায়ান্ন তাসের খেলায় রাজা, রানীর সাথে থাকে গোলাম, থাকে পাইক বরকন্দাজ।
আচ্ছা জোকার দুজন কেনো থাকে?
জোকার দুজন, সে দুনিয়ায় বিনোদন দেয় নাকি!

বাহ! কি ভীষণ রকম করে ওরা হাতে হাতে ছড়িয়ে যায়, আর জোকার দুজন তখনো হাসে।
মূলত সবাই সবার বিনোদনের জন্যই।
শুধু অবস্থানের জন্য, কিছুটা সময়ের এদিক ওদিক হয়,
হাত বদল হয় ক্ষমতার!!

মজনু মিয়া 
পিছুটান 

তোমার হৃদয় জোরে যার ছবি ছিলো
তার খবর তুমি নিচ্ছ বাতাসে কাছে
পিঁপিলিকার কাছে মৃত্তিকার কাছে,
আবার দেখি ঘাসফড়িং এর কাছে
কিংবা গাঙচিলের কাছে।
কেন? একবারও কি আমার কাছে জানতে
চেয়েছো?
যার দেহের গন্ধ মিশে আছে তোমার দেহে
যার চোখের মনিতে আজও ভাসে তোমার ছবি,
হাঁটতে বসতে উঠতে যে কোনো ভাবেই
তোমার কথা আমার যেমন মনে পড়ে তেমনি তো
তোমারও থাকার কথা।
সব ভুলে যাও তবু আমার কেনো থাকে
তোমার প্রতি পিছুটান?

আহমেদ সুমন 
পৃথিবীর কাছে প্রশ্ন

নিস্তব্ধ রাতে দূর আকাশে তাকিয়ে
কুয়াশায় আচ্ছন্ন এই পৃথিবীর কাছে
জানতে খুব ইচ্ছে হয়;
শত আঘাত, যন্ত্রণা সহ্য করে নেওয়া
মহীয়ান, ক্লান্ত মানুষগুলো
কেনো আজো নির্ঘুম রাত কাটায়?
শহরের অলিতে-গলিতে আজো কেনো?
ভবঘুরের মত চরিয়ে বেড়ায়
সুদর্শন, বুদ্ধিদীপ্ত, নক্ষত্রময় যুবক।

পঙ্গুপিতা, শয্যাশায়ী মায়ের আর্তনাদ
এই পৃথিবীর বুকে কী প্রতিধ্বনিত হয়না?
শীর্ণ জামা গায়ে জড়ানো
বোনের হৃদয়ের কোণে লালিত স্বপ্ন,
এই পৃথিবী কী উপলব্ধি করেনা?
পথ শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে
তার হৃদয়ের লুকানো ব্যাথা,
এই পৃথিবী কেনো বুঝতে পারেনা?

ক্ষুধায় কাতরানো শিশুর আর্তনাদ,
গৃহ হারা বৃদ্ধ পিতার হাহাকার,
গৃহিণীর শূন্য উনুনের ধোঁয়ার ক্রন্দন,
এই পৃথিবী কী শুনতে পায় না?

তবে কেনো এই সবুজ ঘাস, কোকিলের কুহুতান?
কেন এই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ?
তবে চারদিকে কেনো এত সাম্যের জয়গান?

তবুও, স্বপ্ন দেখি, কান পেতে থাকি,
কোন এক নিস্তব্ধ রাতে তারকারাজি
আমায় বলবে;
মহীয়ান মানুষগুলো আজ ঘুমন্ত,
সুদর্শন, নক্ষত্রময় যুবক আজ ব্যস্ত,
বোনের গায়ে আজ ফুটফুটে লাল শাড়ী,
পথ শিশুর মুখে আজ দুরন্ত হাসি।

তৃষ্ণার্ত কাকের মতো, আজো ঘুরি আমি
সে সুদিনের আশায়।
জীবনের তরী বেয়ে যদি ওপারে চলে যাই
তবুও, রাতের তারা হয়ে দেখতে চাই;
আবারো এই ধূসর পৃথিবী মুখরিত হবে,
সবুজের সমারোহে!

বঙ্গ রাখাল
হে জন্মাত্রী, হে পিতৃভূমি

বাবুজী ঐ দেখো, ধান্যঢেউ
আজ আর নদীতে জলঢেউ নেই
মাঝি ভাসমান গাঙচিল- সঙ্গী সাম্পান
হাঁটুরে রৌদ্রখরতাপে ভাঙাফাটা সন্ধ্যা তারা
জোস্না রাতে নিঃসঙ্গ চুলের গিলে খাওয়া
বীজশামুকের ঠোঁটে বিস্মৃত নদী...

চাঁদ সভ্যতা কেড়ে নিয়েছে বুকের-রৌদ্রছায়া
যান্ত্রিকতা বেগ দিলেও নিয়েছে আবেগ
মানুষ পিতৃপরিচয়ে অন্তরবতী হয়-
জংধরা সভ্যরাতে।

আজ আমার যেতে ইচ্ছে করে
ফেলে আসা ঋণজোস্নার কাছে
যেখানে-ছোট্ট গ্রাম
পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত ধান্যঢেউ
নিমজ্জিত সকাল মাতৃকতায় পুতুল খেলে

চাষীর গায়ে লেগে থাকা মৃত্তিকা
স্মরণ করিয়ে দেয়-আদিম মুগ্ধতার ইতিহাস।

কাঠুরের নিষ্ঠুরতা পেষণে ক্ষরণে
মনের গহিনে ডুকরে ওঠে
জন্মভূমি - পালকগ্রাম
গোলকনগরের কথা।

একদিন শরণার্থীদের সাহায্যে
গভীর মমতায় এ গ্রাম-
হৃদয়ে ঠায় দিয়ে সহস্রাধিক
অন্ধকারে ডুবে যাওয়া
আশ্রয়হীন রাজহাঁস...

যে গ্রাম তার কণ্ঠে ধারণ করে
যাত্রাপালা, গাজিরগান, কবিগান আর মহিয়ান
কিছু গুণী দগ্ধতার হ্যাজাক
যার সুবাতাস আজও প্রবাহমান।

তোমাকে প্রণমী জননী
হে জন্মাত্রী, হে পিতৃভূমি...


শিল্প সাহিত্য ৬৫


রহিম উদ্দিন 

অভিমানী জাফরুল্লাহ


হ্যালো জাফরুল্লাহ চৌধুরী , 

আপনি তো বঙ্গবন্ধুর ভাই,

যুদ্ধের সময় লন্ডনে নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়েছেন,

প্রেসিডেন্ট জিয়ার ব্ল্যাক চেক, মন্ত্রীর পদও নেননি

তথাপি আপনার নামে এতো মামলা!

রাষ্ট্রদ্রোহী, ফল চোর, মাছ চোর, জমি দখলকারী, চাঁদাবাজি কিছুই তো বাকি রইল না।


পত্রিকা মারফত জানলাম, আপনার করোনা পজিটিভ

ডাক্তারদের অনুনয় বিনয়ের পরও নাকি ওষুধ নিচ্ছেন না

আপনি নাকি এও বলছেন,

যে ওষুধ সাধারণ মানুষ কিনে ব্যবহার করতে পারবে না,

সেটি আমি নিবো না,

প্রয়োজনে মারা যাবো,

সরকারকে ওষুধের দাম কমাতে হবে,

আমার কথা হলো আমাকে বিনামূল্যে দিতে হবে না, 

দাম কমান যেন অসহায় মানুষের নাগালে থাকে।


এসব কেন করতে গেলেন?

আজকে শুনলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপার্সনও আপনার খোঁজ খবর নিচ্ছেন,

আপনাকে তো ফ্রিতে ওষুধ দিতে চেয়েছিলো রাষ্ট্র

তারপরও শুধু শুধু অভিমান করতে গেলেন

আপনি হয়তো জানেন না,

আপনার অভিমানে এদেশ এ জাতির কিছুই যায় আসে না!


আপনি দোয়া চেয়েছেন,

না চাইলেও দোয়া করতাম!  

দু’হাত তুলে দোয়া করি

সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন।

কেন জানেন? এ জাতি যা পায়, আপনাদের মত কিছু অভিমানী মানুষের কাছ থেকেই পায়।


সাহিন আক্তার কারিকর

নষ্ট ঘড়ির কাঁটা 


প্রেমবোধ, আপ্লুত নারীর প্রশস্ত পথ ধরে

নেমে আসছে শ্রাবণ 

ধ্বজাধারী যাজক অস্তিত্বের অন্তরায় সৃষ্টি করছে মস্তিষ্কে।


কাউন্সিল-মৈত্রীর নষ্ট ঘড়ির কাঁটা ধরে হাঁটছে ক্লিওপেট্রা

মোমবাতি হাতে রাস্তায় জর্ব চার্নক 


পারগেটরি বাদাম ভাজা চিঁবুতে চিঁবুতে জর্দাপানের থুথু ফ্রেস্কো ও ভাস্কর্যের মেঝেই

তত্তে¡র অনুপুঙ্খে ঢেকে দিচ্ছে বিরুদ্ধাচরনের কয়েক দশক।

স্যালভেশনের হাত ধরে-

অনুতাপ ও কনফেশন।


ভার্জিন মেরির বমি পাচ্ছে

প্রিন্টিং প্রেস - এক্স রশ্মির তাপ নিয়ে ঘুমাচ্ছে যিশু...


পলিয়ার ওয়াহিদ

ক্ষুধামন্দার কারণ হতে পারে


যার মাথার উপর কাক বসে আছে

সে কীভাবে কোকিলের কথা ভাবে!


কবিতার রহস্য ধরতে গিয়ে

লোকটি ম্যাজিক দেখিয়ে দিলো।


উত্তরের বারান্দায় ডাকছে যে বিড়াল

তার সুর আপনার ক্ষুদামন্দার কারণ হতে পারে!


May cause anorexia

 

Crow have been sit on whose head

How he thinks about cuckoo!

 

Going to catch mystery of poetry

The man showed magic!

 

The cat that's calling on the north balcony,

its melody may cause your appetite!


শুভ্র সরকার

পাখিদের স্তনের নীচে গাঙের ছায়ায়

ভেসে ওঠা মীনের অভিনয় 


হরিণটানা দুপুর- মাছ থেকে আলগা হয়ে আসা শালতার গাঙ চিৎ হয়ে পড়ে থাকে পাখিদের স্তনের নীচে। কলঘরে ধুয়ে রাখা স্নান- উড়তে থাকা কোঁচকানো পাঞ্জাবির পকেটে চুপচাপ দোল খায়। ছেঁড়া ফিতে স্যাণ্ডেল হাতে নিয়ে সমস্ত খুশবু শরীর সেলাইয়ে ঝুঁকে পড়লে- গাছেদের ছায়ারাও কোনও একদিকে খুব চলে যাবার সাধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। 


এদিকে, পাখিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পাঠ করা ছুটির আবেদনে ছড়িয়ে পড়ে তোমার অপার ধানখেত।


দীর্ঘশ্বাসের মতো বেরিয়ে যাই

কিন্তু কার কাছে যাবো, আমি?


শীত জানে: বসন্তেরও আছে- অতীত!


সোমনাথ বেনিয়া

ঊনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ- ২


যে শরীরে রূপ নেই, অপরূপ তার ঘূর্ণিবায়ু

ইচ্ছার ভিতর ক্যামেরার ম্রিয়মাণ ঝলকানি

কার কাছে রাখবে গুপ্ত বাসনার প্রিয় ...


দেখলে সন্ধ্যা, মুখের উপর নিম্নচাপ, পরিযায়ী

কোন পথে প্রতিক্রিয়া শেষে অকাল বর্ষণ

হিসেব না মিললে মনের চৌকাঠ ময়ূরের পেখম

পথচলতি লোকের কথা ফলিত বিজ্ঞান


নামতার ঘরে আড়ষ্ট জিভ আয়ুর ব্যর্থ গল্প ...


কমল কুজুর

অমলিন


তোমার হাসি ছাড়াই কেটে যায়

বিবর্ণ দিনগুলি,

এক দুই তিন এমনি করে

অযুত বছর!


শহরের পথগুলো ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়

অবিরত বিমর্ষতায়,

দেয়ালেতে নোনা ধরে আবার

নূতন করে!


পথকলিদের উচ্ছিষ্ট কুড়োনের ব্যস্ততা

যায় বেড়ে, আগের চেয়ে

প্রতিযোগিতাও হয় ভীষণ

পথকুক্কুরের সাথে!


ধীরে ধীরে বটগাছটার বয়স যায়

বেড়ে ঢের, বাড়ে শুকনো ডাল,

পাতাও পড়ে ঝরে তেমনি করে

তোমার তরে!


হৃদয়ের আঙিনায় শুধু বেজে যায়

তোমার নূপুরের সুর,

আগেরই মতোন রিনিঝিনি সুরে

হৃদয় নেয় কেড়ে!



শিল্প সাহিত্য ৬৪


কায়েস সৈয়দ

সুদ


কৃষক তুমি লাউগাছ, পৃথিবী একটা মাচা

বেঁচে থাকি আমরা

খেয়ে লাউডগা

---------------------------------

আচাষা-

শরিফার মতো

যাও তুমি পচে

আমরা তবু বেঁচে থাকি পাঁচ পার্সেন্ট সুদে!


অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

চোখ তুমি অন্ধ হয়ে যাও


এই যে এত কাচের উপরে আঙুল রেখে তোমাকে ছোঁয়ার বাসনা

সত্যি কি বন্ধুত্ব দিয়ে বোনা? 


এই যে এত পশু পাখি রাজপথে নেমে লুটে নিচ্ছে শহুরে আদর

সত্যি চাইনি এ ভোর।


চাইনি অনেক কিছুই দেখেছি যা রঙিন বিজ্ঞাপনে

তাই ক্লান্তি নামে মনে।


রাজনীতি বন্ধুত্ব আর ধর্মের বেসাতি বাড়ে সুদে 

চোখ ডোবে নোনা বুদবুদে...    


আপন রহমান

উত্তাপ


পাথরকে আঁকড়ে ধরে

জীবনের দু:খ ভুলতে চেয়েছিলাম

পাথরও মোমের মত গলতে শুরু করল।


অত:পর সূর্যের কাছে গেলাম

দু:খের উত্তাপগুলো রাখার জন্য,

সে জানাল নিজের উত্তাপে সে নিজেই জর্জরিত।


পরিশেষে কি আর করা

নিজের উত্তাপে-

নিজেই ভষ্ম হতে থাকলাম।


ক্রমশ; সে উত্তাপকে আরও বেশি

আলগা করে দিতে থাকল

বেদনার বিষণ্ন বাতাস।


মীর সাহাবুদ্দীন

নিরাপদে থাকুন


কাউকে বলিনি ভালো থাকেন।  কেননা আমি জানিনা তার ভীতরে ক্ষুদারা পিড়ায় কিনা। তার পরিবার না খেয়ে আছে কিনা। অনেককেই চিনি দিন আনা দিন খাওয়ার মানুষ। তারা হাত পাততে ও জানেনা। আমিও স্বল্প আয়ের একজন। কিছু জমানো টাকা ছিল  আগামি দিন ভালো আসবে এ ভেবে পাশের পরিবারকে দান করেছি। মানুষের তাতে কি হয়েছে এক দিন দুইদিন চলবে তারপর....

তবুও সবাইকে বলি নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে থাকুন দূরত্ব বজায় রাখুন।


তানহিম আহমেদ

নিদ্রিতাকে


ভাগ্যের তস্য গলিতে। লটকে থাকে... খণ্ডিত

ঈশ্বরের নাম। ঝুলে থাকে- বেদনার আপক্ব

ফল। ঈগলের ডানা থেকে। অক্ষম মানুষের

সমগ্র তল্লাট জুড়ে। ঘাসের মতোন। গজিয়ে

ওঠে কল্লোলমুখর চারা। চলিষ্ণু- বৃক্ষমুখ।


স্টোরি অব টেইলস- চুকে যায় সব, রাত্রির

পাঠশালা। থমকে যায়। ব্যগ্র কণ্ঠস্বর।


নিদ্রা এবং- প্রতীক্ষা। মানুষের শ্রেষ্ঠ সঞ্চয়;


হিসেবে তালা থাকে কাঞ্চন। অথচূ ঘোর

অসময়ে ঈশ্বরও ভুলে যান সুন্দরের সংজ্ঞা।


রফিকুল নাজিম  

মায়ায় বাঁচো

(জর্জ ফ্লয়েড এর স্মরণে)


সাদার বুটের নিচে কালো

কালোর বুটের নিচে সাদা,

সাদা কালোর ঘৃণার বোঝা

টেনেই যাচ্ছেন বর্ণগাধা!


জাতপাত আর বর্ণবিদ্বেষে

আগুন দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে,

হিংসা ক্রোধের বিষের বানে

সাদা কালো মরছে ধুঁকে।


অধর্মের বর্শায় আহত ধর্ম

বেনিয়ারা লুটছে সব,

মানুষ মারে মানুষ মরে

রক্ত হোলির মহোৎসব।


মায়ার ধর্মে বাঁচো মানুষ

মনে প্রেমের রঙ মাখো,

সাদা কালোর ঘৃণা মুছে

মায়ার হাতে হাত রাখো।


সজিব তুষার

কৃষকের জন্য কবিতা


পাকা ধান গাছের মাথা যেভাবে নত হয় কৃষকের ভোঁতা লাঙলের কাছে,

যেভাবে পাকা ধানের শীষ নুয়ে যায়...

নত হও ওই কৃষকের শ্রমের কাছে,

ঋণী হও তার শিল্পে,

ঈমান আনো সংগ্রামী জীবনে;

তাঁর গুজে যাওয়া পেটের ভিতর লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর আজন্ম ক্ষুধা।

বিশ্বাস রাখো তাঁর হাতের মুষ্টিতে,

তাকিয়ে দেখো...

ওই মুষ্টি কখনই তোমাকে অভুক্ত রাখেনি,

ওই মুষ্ঠীর শর্করায় তোমার পেটে মেদ জমে-

তুমি হাটতে পারো,

চলতে পারো,

কাজে যাও;

তুমি হয়ে ওঠো হৃষ্টপুষ্ট সু-পুরুষ

তুমি হয়ে ওঠো সু-কোমল নারী,

হয়ে ওঠো ফ্যাসীবাদী শাষক-

হয়ে ওঠো বিপ্লবী নেতা,

হয়ে ওঠো ধর্মগুরু! 

তবে প্রথমেই ঈমান আনো - ওইসব হাড় লিকলিকে কৃষকের উপর,

এই ফসলি জমিন তার জীবন

এখানেই তার সাধনা,

সে তোমার পঁচিশ তলা সেক্রেটারিয়েট বুড়ি আঙুল দেখায়,

সে জানিয়ে দেয় সংসদের সব হিসেব নিকেষ থেমে যাবে এই ক্ষুদ্র ধানে;

পঞ্চাশ ফ্লোরের কারখানা বন্ধ সে থামলেই,

তাই এখনও সময় আছে-

ঈমান আনো।

একজন খেটে খাওয়া কৃষকের মুষ্টি তোমার জন্য ভাবে,

তোমার ক্ষুধার্ত চেহারা

অপুষ্ট শরীর-

শিশুর ক্ষুধার্ত চিৎকার। 

আহঃ,

সে দিনভর খেটে মরে,

শাদামলা গুঁজে নেয়,

দুই টান বিড়ি ফুঁকে-

প্রস্তুতি নেয় যুদ্ধের

এক কলসী পানি, চটের বস্তা, এক বোল ভাত- শুটকি ভর্তা

লাঙল-জোয়াল কাধে নিয়েই নেমে যায় যুদ্ধে,

এই যুদ্ধ তোমার জন্য-

এই যুদ্ধ তোমার শিশুর জন্য

এই যুদ্ধ প্রতিটি মানুষের জন্য

এই যুদ্ধ ক্ষুধার বিরুদ্ধে কৃষকের,

এই যুদ্ধ অভুক্তদের জন্য;

ক্ষুধাই অদৃশ্য দোজখ

ক্ষুধাই অদৃশ্য আজাব,

সৃষ্টির যন্ত্রণা ঈশ্বর সহ্য করতে পারেনা,

তার প্রচন্ড কষ্ট হয়

খুরে চলে মাটি,

পানি দেয় মাঠে-

হাল বায়

সার দেয়

শুকায়,

আবার হালবায়

শুকায়

সার দেয়,

বীজ ঢালে চষা জমিনে;

একদিন হাসি ফুটে তোমার মুখে! 

চিকেন ফ্রাই, বিফ ভূনা, কালা ভূনা দিয়ে--

গিলে খাও তার টসটসে হাতের ফোসকা-

ধাড়ালো পাতায় ফালা ফালা হওয়া আঙুল,

ক্ষত হয়ে যাওয়া পা

কাচিঁর আঘাতে চিড়ে যাওয়া- রক্ত মিশ্রিত মাংসের দলা,

রোদে পুড়ে কালো হওয়া শরীর;

খাওয়া শেষ!

এখন অন্ততঃ ঈমান আনো তার শ্রমে,

তার শিক্ষা নিশ্চিত করো

তার চিকিৎসা নিশ্চিত করো;

তার ছেড়া লুঙ্গীটা বদলে দাও

তার বাড়ির ছাদের ফুটো বন্ধ করো;

তাকে কীটনাশক দাও-

উন্নত সার দাও;

উন্নত প্রযুক্তি দাও,

দেখবে পৃথিবীর সব শান্তি ফিরিয়ে আনবে;

যুদ্ধবাজ পৃথিবীকে আদর দিয়ে ভরিয়ে দিবে ফসলে,

ক্ষুধা নিয়ে খেলা বন্ধ করে দিবে

কর্পোরেট দালালদের, 

ট্যাকনোক্রেট ক্ষুধা-

একদম চুদে দিবে;

তারা ক্ষুধা নিয়ে কোন আর্ট চুদেনা,

তারা ক্ষুধা নিয়ে মুনাফার স্বপ্ন দেখেনা,

তারা ক্ষুধা নিয়ে খেলতে পারেনা! 

তারা স্বপ্ন দেখে এক ক্ষুধাহীন পৃথিবীর,

স্বপ্ন দেখে বাসযোগ্য পৃথিবীর

তাই এখনও সময় আছে,

ঈমান আনো-

ঈমান আনো খেটে খাওয়া কৃষকের মুষ্টিতে,

ওই মুষ্টি তোমাকে কখনও ক্ষুধার্ত রাখবেনা।


শিল্প সাহিত্য ৬৩

সৌরভ বর্ধন
খিদে

এখন আমি ফোঁটা ফোঁটা চোখ
প্রবল আত্মসাৎ করি দিনে তিনবার :
একবার ধুলোর বদলে সকালে
দুপুরের দিকে একবার রোদের পরিবর্তে
আর একবার জলের স্থলে রাত্তির বেলা

ফলত আমার যাপন থেকে ক্রমশ
এই ধুলো-রোদ-জল হারিয়ে যাচ্ছে
তাদের স্বাদ ঘ্রাণ অনুভব আমি ভুলে যাচ্ছি

তাই জীবনের কাছে পরিবেশের
এসব জৈবিক উপাদানের গুরুত্ব কী
তা জানবার অঙ্গীকার আমাদের নেই আর

আমি ধুলোহীন বায়ুর সখ্য
আমি রোদহীন আলোর স্পর্শ
আমি জলহীন নদীর ক্ষত বয়ে চলেছি দেহে

একদিন এই সময় আমাকে মাটি খুঁড়ে বার করবে
আমার ছত্রে ছত্রে লেখা থাকবে ভগ্নাংশের ইতিহাস
-কী প্রবল খিদে নিয়ে আজ ঘুমোতে চাইছি আমি

প্রণবকুমার চক্রবর্তী
আমাকেই যেতে হবে

স্বপ্ন ভেঙে পড়ার আর্তনাদে
চিন্তিত ঠোঁটের মতো কেঁপে ওঠে
আকাশের ঝুল বারান্দা

চমকানো সূর্যের
চমকানো চোখে
মরুপ্রান্তরের ধূসর ছায়া
আস্তে আস্তে সিঁড়ি ভেঙে
নেমে আসে মনের অভ্যন্তরে
যেখানে
মৃত্যুর গন্ধমাখা রাজ-প্রহরী
ঋতুবতী কবিতার অক্ষরগুলোকে
ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে .....

আলাপন সঙ্গীত মুলতুবি রেখে
অভিমানে
বাসন্তিকা সুন্দরী
কোনও এক ঊষর  ভূমিতে হেঁটে হেঁটে
নিজের মতো চলে গেছে
আমাকেই যেতে হবে ফেরাতে তাকে ...

শিল্প সাহিত্য ৬২

স্বপঞ্জয় চৌধুরী
আগুন পাখি

পাখির চোখে আগুন দেখে ভুলে গেছি শৈশবের মানে
স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝ বরাবর পড়ে আছে
কিছু নীড় ভাংগা খড়ের কুটো,
পাখি হতে চেয়ে বার বার খুনী হয়ে যাই
শিশু হতে গিয়ে ডুবে যাই পাপের শহরে।
আমায় পেছন থেকে টেনে রাখে অতীত, স্মৃতি, বিস্মৃতি
আমায় বেধে রাখে সংখ্যায়, ব্যমো ও ব্যাধিতে।
আমি আকাশ ছুঁতে গিয়ে বার বার ডানা ঝাপটাই
নিচে ভ‚পতিত হই, ভস্ম হতে গিয়ে আবার সৃষ্টি হই।
পাখির চোখে আগুন নয় জ্বলছে নতুন সম্ভাবনা।

সাকিব জামাল
জীবন একটি সংখ্যামাত্রঃ সবুজ অথবা লাল!

আঁধার এবং আলোর পার্থক্য নেই পৃথিবীর বুকে এখন!
দিনে রাতে করোনার ভয়ঙ্কর ছোবলে ছোবলে
ক্লান্ত মানবজাতি আজ দিশাহীন।
প্রচণ্ড ঝড়ে দমকা হাওয়ায়
অশান্ত নদীতে উথাল-পাথাল ডিঙ্গী মাঝে
সাঁতার না-জানা শংকার জীবন।
প্রথমত আক্রান্তের সংখ্যা তালিকায়।
শনাক্ত কিংবা অশনাক্ত!
তারপর কিছুদিন বাঁচার লড়াই...
অবশেষে, সুস্থ্য অথবা মৃত।
পরিণতিতে হিসাবের খাতায় বাড়ে একেকজনে একেকটি-
সবুজ অথবা লাল সংখ্যা!

পুনশ্চ, দুঃসময়ের পৃথিবীতে নিয়তি নির্ভর মানুষ। যেখানে-
জীবন একটি সংখ্যামাত্রঃ সবুজ অথবা লাল!

রাজীব পাল
ঘোড়া

সন্ধের টেবিল সারা রাত জেগে থাকে
চার পায়ে তার ঘোড়ার জীবন ...

এখন ভেবে নাও
শূন্যতা না মানচিত্র
জিভ গজিয়ে ওঠে কী দেখে তোমার?

এরপর না হয় ডানা ও পায়ের গল্প ...

আহমেদ সুমন 
পৃথিবীর কাছে প্রশ্ন

নিস্তব্ধ রাতে দূর আকাশে তাকিয়ে
কুয়াশায় আচ্ছন্ন এই পৃথিবীর কাছে
জানতে খুব ইচ্ছে হয়;
শত আঘাত, যন্ত্রণা সহ্য করে নেওয়া
মহীয়ান, ক্লান্ত মানুষগুলো
কেনো আজো নির্ঘুম রাত কাটায়?
শহরের অলিতে-গলিতে আজো কেনো?
ভবঘুরের মত চরিয়ে বেড়ায়
সুদর্শন, বুদ্ধিদীপ্ত, নক্ষত্রময় যুবক।

পঙ্গু পিতা, শয্যাশায়ী মায়ের আর্তনাদ
এই পৃথিবীর বুকে কী প্রতিধ্বনিত হয়না?
শীর্ণ জামা গায়ে জড়ানো
বোনের হৃদয়ের কোণে লালিত স্বপ্ন,
এই পৃথিবী কী উপলব্ধি করেনা?
পথ শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে
তার হৃদয়ের লুকানো ব্যাথা,
এই পৃথিবী কেনো বুঝতে পারেনা?

ক্ষুধায় কাতরানো শিশুর আর্তনাদ,
গৃহ হারা বৃদ্ধ পিতার হাহাকার,
গৃহিণীর শূন্য উনুনের ধোঁয়ার ক্রন্দন,
এই পৃথিবী কী শুনতে পায় না?

তবে কেনো এই সবুজ ঘাস, কোকিলের কুহুতান?
কেন এই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ?
তবে চারদিকে কেনো এত সাম্যের জয়গান?

তবুও, স্বপ্ন দেখি, কান পেতে থাকি,
কোন এক নিস্তব্ধ রাতে তারকারাজি
আমায় বলবে ;
মহীয়ান মানুষগুলো আজ ঘুমন্ত,
সুদর্শন, নক্ষত্রময় যুবক আজ ব্যস্ত,
বোনের গায়ে আজ ফুটফুটে লাল শাড়ী,
পথ শিশুর মুখে আজ দুরন্ত হাসি।

তৃষ্ণার্ত কাকের মতো, আজো ঘুরি আমি
সে সুদিনের আশায়।
জীবনের তরী বেয়ে  যদি ওপারে চলে যাই
তবুও, রাতের তারা হয়ে দেখতে চাই;
আবারো এই ধূসর পৃথিবী মুখরিত হবে,
সবুজের সমারোহে!

শিল্প সাহিত্য ৬১

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
সমান্তর

তত্ত¡গুলো আত্মস্থ করে পথটিকে বন্ধু ভাবা যায়
নদীর মতো নামিয়ে দেওয়া মাটিতে ডানা ঝাপটাই
আসলে তা ডানা নয় ফ্লিপার মাত্র
কাঁটাপালকের সময় ছেড়ে যাই পিছনে ছোটা পতঙ্গ
ময়নামাসি বহুদিন আগেই বলেছিলো বেশিক্ষণ বসতে
দিস না বাপু শিকড় গজাবে। কুটুম জাঁকিয়ে বসার আগেই
শান্তিপুরি খাতিরে বিদায় দিবি।

তবুও কিছু বোকা লোক গাছে ঝুড়ি পেতে পাখি ডাকে
অথচ পাখি নয় কিছু জোঁক ডানা ঝাপটায় ধুলো ওড়ে
জীবনের সংজ্ঞা ভুল ছিন্ন সম্পর্কের স্নায়ুবিষ অদম্য
অন্তরের হিসাব গুলিয়ে পাহাড়ি পথে ছুঁড়ে দেয় ...

ভ্রমণানন্দ নয় পাথুরে জীবনের দৈনন্দিন রক্তক্ষরণ।

সুমন মণ্ডল
ছি!

ছি অমানবিক মানুষ
ঘৃণ্য তোমার এই আচরণ
পশুর ওপর আজ তুমি যা করলে,
আর যাই হোক
তোমায় মানুষ বলা সাজে না
পশু তো না’ই
আর কবে হবে তোমার শুভবুদ্ধির উদয়
আজ পশুর সাথে করেছ
কাল নিজের পরিবারের সাথে করতেও পিছপা হবেনা
ঠিক এরকম করেই বিনষ্ট করছ তোমার অস্তিত্ব
অবশ্য কার কিবা এসে যায়
পৃথিবীতে এসেছি, থাকব, খাব, ধ্বংস করব
এইতো শিখছ আর শেখাচ্ছ প্রজন্মকে
দেখো কতদিন তোমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারো
কেননা পশু ক্ষমা করলেও
বসুমাতা তোমায় কখনোই ক্ষমা করবেন না!

রুদ্র সাহাদাৎ
যদি

ঘুমহীন রাত্রিসমুহ দীর্ঘ লাগে অন্যদিনের তুলনায়
একটা নির্ঘুম রাত্রি কেউ যদি কিনে নিতো
বেঁচে দিতাম বিনাপয়সায়।

শর্তহীন যদি কথা হতো, দেখা হতো ভালোবাসায়
একসমুদ্র পাড়ি দিতাম এক নিমিষেই।

স্বার্থহীন যদি হতো মানুষ
চোখ বন্ধ করেই বেঁচে দিতাম স্থাবর অস্থাবর সব
 বেঁচে দিতাম বিনাপয়সায়।

মাঝেমাঝে রিরংসা জাগে কেনো বুঝে উঠতে পারি না
আমার নভোমণ্ডল জুড়ে রঙিন ফানুসগুলি
জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে পুড়ে রঙহীন অদৃশ্য হয়।


সাজ্জাদ সাঈফ
তমা সিরিজ: লিলিপুট

এখানে আমিও লিলিপুট দেখো
উদাত্ত গ্রীষ্মের দেশে, দেখা ও ছোঁয়া নেই
আজকাল আমাদের!

কফিনে শোয়ালে তুমি
দেখে যাবে তারে একবার?

হয়তো বৃষ্টিতে কাদাপথ চারধারে, হয়তো-বা
বাজ পড়ে সর্ষে দেখবে, বিষণ্ন যুবক চোখে;

কেউ কেউ ড্রপ দেয়া ঢেউ-
কারো থাকে মিথ্যা মায়া
হাত ছুঁয়ে মনে মনে কেউ
পাল্টাবে নিজের ছায়া!

সেইদিন, ফণিমনসার ধারে
ভূগোল বাজাবে নাকি, ক্ষুধাতুর মানুষের গান?

হয়তো-বা রোদে বসা কাক, শক খেয়ে
ঝুলবে তারে, আর, ভিড় ঠেলে হাঁটে যানজট-ধুলা;
এতোসব সিন আর দেখাও হবে না কখনো?

কার কি-যে চিঠি এসে তাপিয়ে গিয়েছে রোদ
হুডখোলা স্মৃতির টেবিলে, অতোখানি প্রেম তুমি
দু’হাতে ছিঁড়েছো তমা, মনেও পড়ে না?

আপন রহমান
নিশিতা তোমাকেই বলছি

স্লীপিং ট্যাবলেট আর ব্ল্যাক কপি ; এখন আমার নিত্য দিনের সঙ্গী। সুখের সাথে দেখা হয়না বহুকাল!
শুকপাখির সুদৃশ্য পালক পেয়েও
হারালো যে হেলায় তার আবার সুখ!
অবস্য হারিয়ে ছিলাম তোমার সুখের জন্যই। ভেবে দেখো...

নিশতা;
আমি দু:খের সাথে বেঁধেছি জনম, আজনম বন্ধনে। আমার চারিদিকে আজ আচ্ছাদিত গভীর অমানিশার গাঢ় অন্ধকারে!
জানিনা ;
“আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দু:খের কাল? ”
অথবা আদৌ কাটবে কিনা।

নিশিতা;
তোমার কি আর সময় আছে এই ব্যর্থ পিছিয়ে পড়া মানুষটির আরক্ত জীবন কথা শোনার। তুমি  তো এখন ভাসছো
স্বপ্নের সমুদ্রে-
সুখের ময়ূরপঙ্খী নায়ে-
সুনীল সাগরের নীলাভ্র জল,
এখন আছড়ে পড়ছে তোমার চন্দন রাঙা শরীরে। তুমি তো খুঁজে পেয়েছো শুক পাখির সুদৃশ্য পালক । স্বগীর্য় সুখের পরশে আজ ধন্য তুমি; ধন্য তোমার জীবন।
আর আমি?
মিথ্যা প্রেমের দহনে পুঁড়ে-পুঁড়ে আজ পরিণত অঙ্গার!
বুকের পাঁজরে জমা ভষ্ম!
জেনেও বোকার মত তুমি বার বার জানতে চাও আমি কেমন আছি?

নিশিতা- প্রিয়তমা আমার ;
তুমি তো জানো তোমাকে ছাড়া আমি কেমন থাকতে পারি?
এ প্রশ্নের উত্তরটা ; কেউ না জানুক - একাদশী’র মুমূর্ষু ঐ চাঁদটা বেশ ভালোই জানে আর জানো তুমি। কারণ; প্রায় রাতেই তো ওর সঙ্গে তোমাকে নিয়ে আমার অনেক কথা হয়। ও ছাড়া আমার আর কে আছে বলো ? কে আর শুনবে আমার এ ব্যর্থ প্রলাপ।

নিশিতা;
তোমাকে হারানোর পর বেঁচে থাকার তাগিদে অথবা জীবনের প্রয়োজনে বহু ঘাটের জলে তৃষ্ণা নিবারণের ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছি বটে । কিন্তু তোমার সরোবরের সে অমৃত সম জলের তৃষ্ণার সাধ আর কোথাও মেলাতে পারিনি!

আচ্ছা নিশিতা;
তুমি কি পেরেছো? জলের তৃষ্ণা দুধে মেটাতে? নিশিতা, আমারে কান্দাইয়া তুমি যদি সুখ পাও। তাহলে আমি কেঁদেও সুখী। অনেক সুখী। সেই কান্নায় এই আমি হবো, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুখী মনুষ।

নিশিতা ;
প্রিয়তমা আমার।
-আমি তোমার সুখে কাঁদতে পারি, হাসতে পারি ঢের
কত ভালবাসি তোমায় পাওনা বুঝি টের?


যদি ভালোবাসা না দাও ক্ষতি নেই। এভাবে মুঠো ভর্তি ঘৃণাই ছুঁড়ে মেরো... আমি তোমার ঘৃণাকেই,  ভালোবাসার প্রাপ্তধন ভেবে নিয়ে, ভরে রাখবো হৃদয়ের গোলা ।

নিশিতা ;
জানিনা প্রিয়- তোমাতে এতো বেশী মুগ্ধতা কেন আমার!!!
একটা নিমেষের জন্য তোমাকে ভুলে থাকতে পারিনা আমি । আমার চোখের সম্মুখে সর্বক্ষণ ভেসে থাকে তোমার চাঁদমুখ । প্রতি নি:শ্বাসে
নি:স্বাসে আমার ভেতরকার থেকে কে যেন বলে ওঠে তোমার নাম!

জানো নিশিতা ;
তুমি হারিয়ে যাওয়ার পর। আমি উন্মাদের মত দেশ হতে দেশে কল্পনায় বাস্তবে কত-শত রমনীর মাঝে যে খুঁজেছি তোমাকে। পায়নি! যা পেয়েছি, সবই মরীচিকা সবই দূরাশা! দু:খের চোরাস্রোতে ঘুরপাক খেতে খেতে । অবশেষে যে বন্দরে এসে ভিড়িয়েছি আমার জীর্ন তরী। সেখান থেকে হয়তোবা আর ফেরা হবেনা আমার! হয়তোবা ভোরের আবছা আলোয় শরীর পেঁচিয়ে দেখা হবেনা তোমার চাঁদ মূখ আর এ জনমে!

জানো নিশি ?
কাল রাতে তোমাকে নিয়ে এক দারুণ স্বপ্ন দেখলাম;
দেখলাম-
তুমি  নীল শাড়ী পরেছে। কপালে পরেছে নীল টিপ। হাতে নীল চুড়ি। শরতের পড়ন্ত বিকালে। নির্জন মাঠে। আমি বসে আছি। তুমি চন্দন রাঙা পা ফেলে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছো। আমি তন্ময় হয়ে তোমার দিকে চেয়ে আছি। বহুদিন পর আমার হৃদয় গঙ্গায় যেন শুরু হলো প্রলয়ের তাণ্ডব আমি তাকিয়ে আছি। নিথর চোখে তাকিয়ে আছি তোমার দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি আমার খুব কাছে চলে এলে। আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রশ্ন করলে।

তুমি;
তুমি কেমন আছো নীল? উত্তর দেওয়ার ভাষা যেন আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে কাতর স্বরে তুমি আবার প্রশ্ন করল- কী হল তোমার?

আমার দু’চোখের পাতা ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোঁটা অশ্রু। ঐ দু’ফোঁটা অশ্রুই ছিলো আমার সকল প্রশ্নের উত্তর।

তখন তুমি তোমার নীল আঁচল দিয়ে অতি যত্নে আমার চোখ মুছে দিতে-দিতে বল্লে-জানি তুমি ভাল নেই। কিন্তু নীল, আমি কী ভাল আছি ? আমি কী সুখে আছি ? আমি বললাম কেন ? তুমি তো ভাল থাকার জন্যই আমাকে রিক্ত করে চলে গেছো দূরে- বহুদূরে। তুমি একটু হাসলে, তারপর, তারপর কোথায় যেন মিলিয়ে গেলে আবার!

আমি চিৎকার করে ডাকলাম নিশিতা, নিশিতা ফিরে এসো। প্রিয়তমা আমার ....

তুমি এলেনা ; আর আসবেই বা কেন ? তোমার কি আর সময় আছে?
এখন আমার কথা শোনার ? না স্বপ্নে না বাস্তবে- কোন ক্ষেত্রেই হয়তো তুমি আর আমার কাছে ফিরে আসতে চাওনা। তবুও এখন আমার বেশ ভালোই লাগে; তোমার উপেক্ষা, তোমার মৌনতা, তোমার কটাক্ষ, অবহেলা- উপহাস সবকিছুই আজ আমি; ভালবেসে মুঠোয় ভরে রাখি। পরম আদরে।

নিশিতা;
এখন বসন্ত-চারিদিকে শিমুল পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার ছড়াছড়ি। কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় চোখ রেখে দেখো, দেখতে পাবে আমারই বুকের রক্তক্ষরণ ।

নিশিতা; আর পারছিনা।
প্রচন্ড জ্বরে পুঁড়ে যাচ্ছে শরীরের জমিন। সেবা দূরে থাক একটু শান্তনা  দেওয়ার মানুষও আজ আমার পাশে নেই। বেশ কিছু দিন যাবৎ বিছানা আমায় ছাড়তেই চাইছেনা। কি বোর্ডের উপরে নিজের আঙ্গুল গুলোও আর নড়াচড়া করতে চাইছেনা। তাই আজ এ পর্যন্তই। ভালো থেকো... নিশি... নিশিতা আমার...

শিল্প সাহিত্য ৬০

অনন্যা গোস্বামী
একদিন ঠিক...

আর আমিও একদিন সবুজ রঙে গুলে
সৃষ্টি করবো শহরের ভ্রূণ।
নবজাতক আকাশের পাতলা ঠোঁটে নূপুর পরে নাচবে হলুদ জবার পাতা।
শিমুলতুলোর নৌকা ভাসবে
পিচঢালা মরুতটে।
সেদিন দেখো...
হ্যামিলনে ছুটে বেড়াবে
অর্ফিউসের করতালধ্বনি।
গোলাপি মেঘের দল দরজা খুলে দেবে মিনা বাজারের প্রকোষ্ঠে।
সেদিন তোমরা মিটিও দাম
হাসির মুদ্রায়।
একদিন ঠিক...
আমিও উড়ে যাবো
একারুসের ডানায় চড়ে।
হ্যালোউইনের রাতে ছড়িয়ে দেব রক্তগাঁদার রেণু...
দুর্বায় জমা বৃষ্টিজলে কানামাছি খেলবে রিক্সার টুঙটাঙ।
আড়মোড়া ভাঙা নাগরিক সন্ধ্যায়
 সূর্য উঠবে হাই তুলে।
ঝলমলে রৌদ্রে কেঁপে কেঁপে
জলসা মাতাবে রাতের জোনাকি।
আর একদিন...
আমি বনবাসে যাব লোকালয় সাথে নিয়ে।
সে পর্যন্ত ছুটি দিলাম তোমাদের।
যত ইচ্ছা জোলাপাতি খেলো।
জীবনের জঙ্গলে!

সাব্বির হোসেন 
আলিঙ্গন

সীমানা পেরিয়ে যখন তোমার কোমলতা স্পর্শ করেছিল আমার ঘন চুলে,
তখন দুটো রাষ্ট্র এক হয়ে জন্ম দিয়েছিল আরেকটি নতুন রাষ্ট্র।
সেদিন মরা নদীতে নতুন জীবন পেয়েছিল ব্রহ্মপুত্রের ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ,
বসন্তের মাতাল বাতাস আর জোনাকিদের নিদ্রালস যাওয়াআসা মনে করে দিয়ে ছিল ছোটবেলার পবিত্র পুতুল খেলা।
তেমনি ভাবে আজও স্পর্শ পেতে চাই প্রতি পূর্ণিমাতে,
নখের আঁচড়ে এঁকে দিও মহাত্মা সুখ।

আশরাফ মাহতাব
দুই দুয়ারী

কর্ণকুহরে ফিসফিস মন্ত্রের স্খলন-
“দুয়ারী, ভুলেও দরজা খোলোনা,
ভ্রষ্টলগ্ন চলছে, রাহু গিলে নিয়েছে চাঁদকে,
কুহক কাপালিক মৃত শবের আসনে বসে
করছে প্রেতের আরাধনা।
দুয়ারী দরজা খোলোনা।
তোমার দুই দুয়ারের চৌকপাট হা হলেই
সহস্র প্রেত এসে তোমার টুটি চেপে ধরবে,
হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাবে বলির নৈবেদ্যে!
দুয়ারী, ভুলেও দরজা খোলোনা।”

যুগের পর যুগ চলে যায়।
জুজুবুড়ির ফিসফিস ভয়-মন্ত্রে কান পেতে
দুয়ারীরা আর দরজা খোলেনা।
অন্ধকার প্রকোষ্ঠে শীতার্ত কুকুরের মত
ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে।
একদিন...
দুয়ারীর দুই দুয়ার চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়।
শুধু রুদ্ধ হয়না জুজুবুড়ির অট্টহাসির সেই মুখ-দুয়ার।

প্রসেনজিৎ বসাক (চৈত)
দু’চাকার স্রোত

গিটারের তারে জামা সহ হেঙ্গার। ভুলে ভরা বাক্স।
সুমন...
একহাতে বিড়ির মোথা আর অন্য হাতে সীলমোহর।

হৃদয়ের উঠোন চিরে মহানন্দার গতিপথ

ছিপে আজকাল পাখি ওঠে। হ্যাঁ পা..খি
কিন্তু ...
মাছ নয়।

এ কে এম আবদুল্লাহ
নি:সঙ্গ ছায়া

মাসান্তে প্যাঁচার ডানায় চিঠি আসে।
আর রাত গভীর হলে- আমাদের সাহারা চিঠি পুড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে। সাহারার সাথে রোজ কথা হয় তারাফুলের। সেখানে প্রজাপতি, কোকিলের মতো গান করে। সাহারার চোখ পড়ে থাকে তারাফুলের বাগানে।

মাঝেমধ্যে সাহারা কবুতর হয়ে যায়। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উড়ে যায় আকাশে। আর আমরা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখি- সাহারার ডানাঝাপটানো দৃশ্য।

শান্তম এর কবিতাগুচ্ছ 

নিরপেক্ষ 

আসছি । আসছি। একথা বলেই
রোজ ফিরে আসতে হয়

না এলেও। এই ঘর এই দোর

থেমে যাওয়া অপেক্ষায়
আলো, তুই বল তাও কি আমার!

অন্তরবাস

এখন সে কথায় রাগ নয়। দুঃখ নয়

আনন্দ হয়। আনন্দেও ভেতরে এক শিশু

পাগল না হতে পারার সহজ যন্ত্রণায়
একমুখ হেসে একা একা বড় হয়ে যায়

সুখ

আকাশ গভীর হলে ক্ষতে ক্ষতে
শোকের শিশুটি ঘোরে। ডানা মেলে

ওড়ে ওড়ে । ছায়া পড়ে
বড় হয় ছায়া । শিশুটিও

অসুখ সারে না। শুধু বড় হয় মানুষের মন

সজল কুমার টিকাদার
লিখতে লিখতে

এবড়ো খেবড়ো পাহাড় ছিল;
খোঁচা খোঁচা গাছ, জঙ্গল ঘেরা চারপাশ।
একটু জায়গা পরিষ্কার করে তার গায়
চক দিয়ে লিখতে থাকি
গদ্য-পদ্য কিছু কথা।

লিখতে লিখতে লিখতে লিখতে...
ক্রমে মসৃণ হতে থাকে সে।
তারপর ভোর রাতে
ফসলফলা সমতল মাঠ

এক সবুজ খাতা!

শিল্প সাহিত্য ৫৯

শুভ্র সরখেল
প্রেম

কদম ফুলের জ্বরের বিছানায়
তোমার ক্ষুদ্র যৌন যাপন !
আমার রঙিন নখের প্রতি তোমার এতো আগ্রহ ?
একটু স্নিদ্ধ প্রেম দিতে পারো আমায়?
যেখানে শুধু একটু ঘুম হতে পারে ঈশ্বরের পথ---
কিংবা---
প্রেম ?

মৃত্যু কতটা সত্যি হলে তোমার প্রেমের অবয়ব হতে পারে শূন্য ?
আমার মনের হাঁড়িতে নীল চুলের পরীরা নৃত্য করে আবিরাম ।
আসো না আরেকবার আমরা মিথ্যে বলি---
সত্যের মতো করে আরেকবার!

মিলন ইমদাদুল
আমার মৃত্যুর পর

মৃত্যুর পর আমার লাশ প্রথম যখন বাড়িতে নিয়ে আসলো স্বজনেরা-
আমার মা তখন কান্নায় বিভোর,বাবা অঙ্গান হয়ে গেলেন মিনিটেই !
কাঁদলেন পাড়া পড়শি অনেকেই কিন্তু আমার বোন-
না আমার বোনটি কাঁদতে পারেনি একটুও !
আসলে আমার এমন অকাল মৃত্যু ও মানতে পারেনি মোটেও

আত্মীয় স্বজন সবাই আসলো, আমাকে গোসল করানো হলো!
সবাই আমাকে শেষবার দেখতে ইচ্ছুক-
আর আমি বাবাকে দেখতে ইচ্ছুক!
মনে হচ্ছে কতোকাল ধরে বাবাকে দেখিনা-

লাশটিকে খাঁটিতে রেখে সোজা চললাম বাবার ঘরে-
না সেখানে বাবা নেই ,
বোনকে বললাম বাবা কোথায়?
ও আমার কথার কোনো জবাব দিলো না!

ছুঁটে চললাম কলপাড়ে দেখি বাবা শুয়ে আছেনÑ
আর দু’চার জন পানি ঢালছেন বাবার মাথায়!

আমি জিঙ্গেস করলাম কি হয়েছে বাবার ?
আমার কথার কেউ কোনো উত্তর দিলোনা-
যেন কেউ কিছু শুনছেই না!
আমি রাগ করে পুনরায় খাটিতে এসে শুয়ে পড়লাম!

আমার চোখে প্রচুর ঘুম, যেন কতোকাল ঘুমাইনা একা
মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে
আচ্ছা মা কি এখনো কাঁদছে, আমার শোকে!?

সরকার অরুণ কুমার
তবে এবার যাই

দেখবার মতো মুখ নাই
সব মুখ বুজে থাকা ডাকের বাক্স।
নির্জনের সময় এসে হাওয়া দিয়ে যায়
শিরায় এসে ধাক্কা খেয়ে আবার
ফিরে যায় সন্মোহনী।

তপ্তদেহে ছুঁয়েছিলাম উড্ডীন বক্ষমুখ
যা জন্মসূত্রে
পিছু নিয়ে ঘুরছে অনন্ত উন্নয়ন
যেখানে রক্ত ছুঁয়েছে হারামের স্রোতে
কোনো প্রকার নালিশ ছাড়াই।

প্রিয় ঠোঁটের কাছে নেমে আসে উন্মত্ত চুমু
এই তো ব্যক্তিগত পবিত্রতা ...
একচক্ষু ঈশ্বর অবাক তাকান
বিষণ্ন সময় চলতে থাকে ...
কে যেন বলে ওঠে, “তবে এবার যাই”

কায়েস সৈয়দ
কহর

বৃষ্টি
ধানক্ষেত
দুপাশে অরণ্য
পিচঢালা পথে ছড়ানো ছাতার সৌন্দর্য
এ’পথ ধরে স্বর্গে যাওয়া যেতো,
যেখানে যাচ্ছি সেটা স্বর্গ নয়, শহর!

কামরুন নাহার রুনু
আলো হবো আলো

আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে করেছি স্বর্গবাস
ওগো জ্যোৎস্না-ভরা অভিমানী রাত
এখন আমার যতো রঙ-রূপ সবই তোমার দেয়া
আজ চোখের জলছবিতে শুধুই তোমার আসা-যাওয়া।

এই কৌমুদী রাতে দিগন্তের প্রশস্ত বুকে
আকাশের দেয়াল ডিঙিয়ে একঝাক উল্কাপিণ্ড
তৃষ্ণার্ত মরুভ‚মির বুক বরাবর জলের কারুজ মন
ছুঁইয়ে দিলো পাথরের বুক, আর সেই থেকে
এক-সমুদ্র ভালোবাসার রঙ নতুন করে জন্ম নিলো।

পৌষের সোহাগী কাচের জানালায়
আঙ্গুলে আঁকি যুবতী রাতের নিঃশ্বাস
কোজাগরী জ্যোৎস্না ছুঁয়ে চাঁদের গায়ে
আঁকা দেখি তোমার ত্রিভুজশৈলী...

শিল্প সাহিত্য ৫৮

রহমান মুজিব
আমি একটি পয়সা

আমি একটি পয়সা, আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছি সেই
হাঁটভাঙা সন্ধ্যার বাড়ি ফেরার পথে। কলম্বাসের কম্পাস
পারো তো খুঁজে দাও গ্যালাক্সি বনের ধ্রুবতারা

একটি বধির পথও কবি। অথচ কবি জানে না-  কার
নির্মম পা পিষ্ট করে কার বুকের আধুলি। প্রিয় শহর-
আমায় খুঁজে পেলে সযত্নে রেখে দিও তোমার         
বুক পকেটে, কখনো বাজতে দিও না অহমের অনর্থক
ঝনঝন, গড়িয়ে যেতে দিও না গন্তব্যহীন ডাস্টবিনে

আমি একটি পয়সা, হাত বদলের খেলায় নিপতিত
আমার যাপনের চারণভ‚মি, অথচ একটি পাখির
শীষেও আমার ঘুম ভাঙল না

অপার অরণ্য
সূত্রপাত

আমার কিশোরকালের মেয়েরা ঋতু দিয়ে বুক ঢাকত
আর খড়া দিয়ে চোখ
সূত্রমতে বর্ষায় তাদের জল থাকে না বুকে
নদীর যৌবনে বুকের ওড়নায় তুলে আনে মাছ
প্রথম চড়ুইভাতি এমন ওড়না পেতে বসা
আয়োজন থাকলেই এরপর থেকে
লালকিশোরির ওড়না খুঁজতে থাকি

কলেজি মেয়েরা মাদুর পেতে পিকনিক বানালে
ওড়না খুঁজতে গিয়ে তাদের বুকের দিকে তাকাই
একেকটি দুঃখী পর্বত যেন বুকের মধ্যেই ঘুমায়
মুঠো মুঠো আন্দোলনের ডাক
বুক থেকে বেরিয়ে আসে কণ্ঠসঙ্গীত
বাজে নিরাপদ সড়কের দাবি
বুকের মধ্যে কোটাবিরোধ দপদপিয়ে জ্বলে

আজ আগুনচাপ স্মৃতিশোক ঢেকে নিতে
মেয়েরা বুজি বুকের উপর ওড়না পেঁচিয়ে রাখে?
সেই থেকে আমিও নরম, লাজুক ঘাসফুল
কোথাও আর চড়–ইভাতি হলে ওড়না খুঁজি না
লেপ্টে গজা ঘাস-মাটিতে ফুটতে থাকি

শ্রী শতানীক ভট্টাচার্য্য
ঘুম নেই

ছুটে চলেছি জিওল প্রাণের সন্ধানে,
একটা শূন্য রাস্তা আরেকটা শূন্য  রাস্তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে--
জমাট বাঁধা বিটুমিনের অন্ধকারে ঘনিয়ে আসে ঘন কালোমেঘ,
সমগ্র ছায়াপথ যেন নেমে আসে পৃথিবীর আলো মাখা গায়ে!
দানব ছায়া বুঝে নেয় ইহকালের হিসাব-নিকাশ,
রাত্রির স্বপ্নে পাহাড়ের ঘুম ভাঙ্গে পৃথিবীর
দমবন্ধ গর্ভে!

বাঁধন অধিকারী
শুকর কখনো শুদ্ধ হয় না

কাল বা কালের অপেক্ষায় যে রাত্রি
সে রাত্রি মিশে গেছে আঁধারে,
আমি নামক অধম নিষ্ক্রীয় হয়ে গেছি;
বাউটা বাতাসে।
রাজ্যের শাসনকর্তা,
১৫ মিনিটের ভাষণে যা বললেন,
লেলিয়া দেওয়া শুকররা ঠিক তার উল্টো টা করে দেখালো।
চলছে দিন-দুপুরে ছিনতাই।
গরীবের হক মেরে খাওয়া শিয়ালগুলো
পন্ডিতগিরি করে ঠিকই খেয়ে যাচ্ছে, যাবে আগামীতে
আবাল জনগণ দেখে আর ঘুমায়।

কাজী জুবেরী মোস্তাক
পরাধীনতার কবর

যখন অশালীন আগুন মানবতা, নীতি ও আদর্শকে
গ্রাস করে;
তখন জ্বলন্ত আগুনের মতো চিৎকার করে রাষ্ট্রের প্রান্তর।
আর একটা পাগল ক্রোধের আগুনে এই শহরটাকে
জ্বালিয়ে দেয়;
এবং ঘৃণার চোখে তাকিয়ে থাকে এ পোড়া শহরের
আঙিনায়।

যখন এই শহরের কোন ব্যালকোনীতে বসে ধর্ষনের
খবর পড়ি;
তখন মনে হয় যেন আত্মঘাতী হই আর যা ইচ্ছা হয়
তাই করি।
প্রতিনিয়ত যখন ভঙ্গুর শরীর থেকে জীবন ছিনতাই
হয়ে যায়;
অনাকাঙ্খিত মৃত্যু তখন এই শহরেই অনেক সস্তায় পাওয়া যায়।

পত্রিকার ব্যালকোনী জুড়ে যখনই স্থান পায় খুনির মুক্তির খবর;
রাষ্ট্র তখন মানচিত্রের মাঝে খুঁড়ে চলে পরাধীনতার একটা কবর।

ইলা লিপি
ক্রেজি

খুব ভাঙতে ইচ্ছে করছে
ঝড়ের গতিতে
তুমুল তান্ডবে
ফেরারি
         পরিযায়ী
আলোতে
নিমগ্ন চারু........
ছিটানো খই
ফুটছে.. ফাটছে
উড়ছে রঙীন ঘুড়ি
ক্লেদ সরিয়ে হেঁটে যাচ্ছি...
নেশায় ঝরে জোসনার রসিকতা
বুকের ওমে শান্তির খনিজ
ভাঙতে ইচ্ছে করছে...

মোহাম্মদ আবদুর রহমান
ফুটুক প্রেমের ফুল

তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
নিজকে একবার কর প্রশ্ন
দেখ কি উত্তর পাও
জানি এই প্রশ্ন করার সৎ সাহস তোমার নেই ।

তুমি শুধু পারো আগুন জ্বালাতে
পুড়াতে চাও আমার ঘর
কিন্তু ভুলে যেয়ো না
তুমিও পুড়বে সেই আগুনে
কারণ তুমি আর আমি একই ঘরের অধিবাসী।

শুনো সোনা ভুলে যাও সকল ভেদাভেদ
নিভিয়ে দাও প্রতিহিংসার আগুন
বাড়িয়ে দাও ভালোবাসার হাত
গড়ে তুলি আলোকময় ভুবন
ফুটুক প্রেমের ফুল।

আবু জাফর সৈকত
জনপদ


ফকফকা নীল হইয়া ভাসছো
হাসছো
খেলছো
সাঁতারে মুগ্ধ হচ্ছো পাথারের পলে
ছবি ছবি গ্রাম গুলি র্দৌড়াচ্ছে অবলিলায়
কিচির মিচির শব্দও এখন অমেলা
এই সত্য - সবই ফসিল
হাইব্রিড শস্যের বিনির্মাণ
বাতাসগুলোও কর্পোরেট মুক্তি নয়
কখনো নয়

শিল্প সাহিত্য ৫৭

সজল রানভী
“এস্কান্দারের খালাকে আমার প্রেম”

এস্কান্দারের খালা আমাকে ফুল বিষয়ক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ব্লাউজ খুলে বের করলেন জোড়া কদম।
শেখালেন ফুল গাছের যত্ন আত্তি
নিংড়ানো, সেচ পদ্ধতি, পরিপক্কতা, ঘরে তোলার আদিম শ্লোক।

যদিও প্রেমিকা আছে আমার।
ঘরে কিংবা ঘাড়ে তোলার তাবিজ কবজ যদিও মুখস্থ করেছি বহুকাল আগেই।
যোনিফুলে মুখ ডুবিয়ে মধু সংগ্রহ
ছয় নয় চোষাচোষি
সাপের মতো জড়িয়ে পেঁচিয়ে শুয়ে থাকা।
যদিও থেকেছি। যদিও এঁকেছি সাড়ে তিন হাতের দুটো কবর। তবুও প্রেমে পড়লাম।

আবারো, আবারো প্রেমিকা যোগে নিয়ে আসলাম এস্কান্দারের খালা।
খেলবো খাবো খাবো খেলবো
চাষবো চুষবো বাহুমূলে ঝুলে থাকা নেশার বোতল । মাতাল হবো, যেমনটা মাতাল হয়েছিলেন এস্কান্দারের অন্যসব পাঠক।
এক নলা বন্দুক, দুটি গুলি দিয়ে খুলি উড়িয়ে দেবো-
যারা এইসব চাষাবাদের ঘোর বিরোধী।।

নৌশিয়া নাজনীন
শরীরে আমার ছোবল

বিষধর সাপে-কাটা মানুষ আমি,
দেহের জোড়ায়-জোড়ায়, রন্দ্রে-রন্দ্রে ঢুকে গেছে নীল বিষ।
অহর্ণিশ আমি ছটফট করছি-
লতা পাতার কোনো ঔষধেও কাজ হয়নি,
আমার রক্তনালী ছিঁড়ে যাচ্ছে- আমি আর পারছি না- 
বয়ে যেতে রক্তনদীর বিষজল।

সমস্ত মাংসের কোষে-কোষে অসহ্য যন্ত্রণা,
আমার দেহের মাংসগুলো কেটে নাও-
ছড়িয়ে দাও বীজ বপনের মতো টুকরো-টুকরো করে,
মাংসের ঘ্রাণে প্রিয় মাংসলোভী ওই সব-
জন্তু- জানোয়ার প্রেমিক ঘাতকেরা খেয়ে-খেয়ে-
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হোক নীল পীরামিড।

আর সমস্ত মাংস ক্ষয়ে যখন আমি হবো কংকাল প্রেমিকা-
রাতের নিশাচর দিনের উন্মাতাল কে আছো যে স্বেচ্ছায়-
চুম্বনে-চুম্বনে চুষে নিতে বেদনায়-
আধা ডুবন্ত জীবন-গ্লাসের উপচানো নীল সর্পবিষ।

সিদ্ধার্থ সিংহ
প্লিজ

আমাকে একটু পরামর্শ দিন

সবাই যেমন একদম নিচুতলা থেকে ওপরতলা অবধি
সেভেন্টি-সেভেন্টি টু পার্সেন্ট নজরানা দেন
আমি তার থেকে কিঞ্চিৎ বেশিই দেব।

বললে, ছেলেদের দিয়ে এলাকা দখল করিয়ে দেব
যাদের মুখ আর দেখতে চান না
তালিকা দিলেই, হাসতে হাসতে নামিয়ে দেব তাদের মাথা,
যে সব মিডিয়া আপনার ভজনা করবে না
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে দেব তাদের মুখ।

যা বলবেন এবং যা বলবেন না
আমি সেটাও করে দেব,
আপনি শুধু আমাকে একটু পরামর্শ দিন-
কী করলে এই শাসক দলের বড় মন্ত্রী বা নেতা না হই
অন্তত একজন কাউন্সিলর যাতে হতে পারি।

আর, একজন কাউন্সিলার হলে?
সব দিয়ে-থুয়ে, ফেলিয়ে ছড়িয়ে
চার-ছ’টা মেয়েছেলে পুষেও
বছর শেষে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা তো ঘরে তুলতে পারব।

আপনি শুধু আমাকে একটু পরামর্শ দিন
একটু পরামর্শ, প্লিজ।

বঙ্কিম কুমার বর্মন
কুরুক্ষেত্রের মাটি

প্রাপ্তি দাও খানিকটা ডুব সাঁতারে। যেন পেয়ে যাই সোনাযুগের প্রশ্নময় হরিণ। দলা পাকানো রুপালি সন্ধ্যার ঘ্রাণ ঢুকে পড়ে। বহুদিন পর বৃষ্টি হচ্ছে একটা নেবু রঙা বেদনায়। অজান্তেই ঘুঘুর ডাক উল্লাসের সুতোয় টাঙিয়ে রাখে ঘুমন্ত মেয়েবেলা। বাতাসের ক্ষতবিক্ষত হাসি সশব্দে ময়ূর হয়ে যায়, তাঁর নিয়মিত পিঠে ঝুঁকে আছে বাহুল্য জিজ্ঞাসা। কেমন সুদূর একটা শীতল বিশ্বাস আমাকে উঁকি দেয়। আমি তাঁর রুক্ষ চুলের খোঁপায় লাল গেন্দা ফুল গেঁথে দিই। দীর্ঘ চুম্বন রেখার ঘনত্ব কমবেশি বাজিয়ে নেয় মুক্ত নিবাস। ঝকঝকে যন্ত্রণার তরল অনুবাদ দৃশ্যে প্রসারিত হতে থাকে একাকীত্বের মরসুমে, বরং নয়নের সংলাপ কাঁচা ঢেউ সাজায় ওষ্ঠের মেহগনি প্রপাতে। অঢেল ডানা ঝাপটানো প্রচ্ছদচিত্রে দাঁড়িয়ে একেকটা প্রতিবেশী গাছ, ভরসা বুনে যাচ্ছে মনখারাপে। এলোমেলো দৃষ্টিরেখা আঁকছে শালপ্রজন্মের অঙ্গে যবানবন্দী চিত্রনাট্য। প্রস্তাবিত কুসুম দুপুরের অনন্ত মগ্নতা  নিয়ে হাঁটে গ্রামদেশ। শহরের কপালে জলবায়ু নক্সায় কুরুক্ষেত্রের মাটি। 

আশিক আকবর
লেনিন, বিদায়

শুধু পানিতে রুটি ভিজিয়ে লেনিন যখন খাচ্ছেন
তখন রাশিয়ার মুক্ত কৃষকরা লেনিন কে ঘেরাও করতে যাচ্ছেন
সকালের নাস্তার রুটির সাথে ভাজি কেন কম জানতে
যখন অসুস্থ খুব ভ্লাদিমির ভ্লাদিমির
তখন সোভিয়েত এর সমস্ত ক্ষমতা ছেড়ে গ্রামের বোনের কাছেই,
রাজধানীতে আসতে পারেন না আর
এক দেড় বৎসর
তার কোটের হারিয়ে যাওয়া বোতামের স্থলে 
শ্রমিকা কমরেড এর লাগানো বেমানান বোতামটি আর নই
ক্রেন দিআ নামানো হচ্ছে লেনিন এর মূর্তি
অপূর্ব ভাস্কর্য
বনে পুঁতে দেআ হচ্ছে তার জোড়া মাথা
উফ!
ঐ লেনিন কে আবার উদ্ধার করছেন খণ্ডিত রাশিয়ার শ্রমিক 
ভাই আমার
দেশে দেশে লেনিনেরা মৃত, ভণ্ড, লেবাস সর্বস্ব...
লেনিনের পক্ষ থেকে লেনিনের জন্মদিনে লাল থুতু নিক্ষেপ করছি 
ওদের সাধের সমাজতন্ত্র লাগবে না আমার
কমিউনিজমের দূর স্বপ্নের পৃথিবী আমি চাই না
আমার পুঁজিই ভালো
পুঁজিবাদই ভালো
জুয়ার টেবিলে বসতে কেউ করবে না মানা
বেশ্যালয়ের হাজার হাজার যোনিস্তনছলাকলাবেচা রমণীদের সামান্য অর্থেই পাবো কৃত্রিম আদর
চাই কি লটকে যেতে পারি নীল দড়ির ফাঁসিতেও
বিদায় লেনিন
বিদায়
সাশা ছোট্ট ভাইটি আমার 
জন্মদিনেই তোমাকে বিদায়
কার্ল মার্কসের বাড়ির দিকে যাবো না আর
এঙ্গেলস কে পেলে অধিক আড্ডা পিটাবো
চা পান করবো 
খুব বেশী খারাপ লাগলে
মুচি বাড়িতে যেয়ে মদ খাবো
কচ্ছপ রান্না দেখবো
শুয়োরের ঘোৎ ঘোৎ শুনবো
কোনো কমিউনিসট খোঁজ নিতে এলে বলবো
আসো মদ খাই
মাগী লাগাই
তারপর তোমার মুখস্ত করা রণনীতি রণকৌশল শুনবো নে
লেনিন
শতাধিক তম জন্মদিনে
ঘুমাও, ঘুমাও, ঘুমাও, ঘুমাও, ঘুমাও
এ জীবনে জাগবার ডাক পেলে
জাগাবো নে


শিল্প সাহিত্য ৫৬

বঙ্গ রাখাল
সুখে থাক মানুষ

কোমল সেক্সে মাতে ফুলের সৌরভ নিংড়ীয়ে মাতালপুরুষ।
অস্তিত্বহীন ভাসমান- এক পদ্ম
আমাদের সূকপাখি
বনবিড়ালের ভয়ে অতিষ্ট মালিকসহ পাখিমন
আইনী উদগ্রীবতায়- মানুষের বিশ্বাস নেই।

প্রয়োজন হলে সংবিধান পাল্টে যাবে-
তবুও সুখে থাক মানুষ।

জাবেদ ভূঁইয়া
পৃথিবীর একটি গ্রাম থেকে

সেতুটি দৃশ্যমান! তারপরে-- বাড়িটি এখনও আড়ালে!

পৃথিবীর একটি গ্রাম থেকে আরেটি গ্রামের  সম্পর্ক
কোলাহলে আড়াল হয়ে যাওয়া নৃত্যের মতন!

যে সুর দিয়ে প্রেমিকার বাড়ি দেখা যায় না!
সাগরের ঢেউ  মতন শুধু একটার পরে
আরেকটা আসে
শাড়ি বদল হয়ে গেলে প্রেমিকের বাড়ি বদল হয় না!
দুরন্ত সাহসে হাঁটছে-- শুধু
কেউ শহরে, কেউ গ্রামে!
হয়তো তুমিও হাঁটছো!
দৃশ্যমান সেতুর আড়ালে যে বাড়িটি
এরচেয়েও বেশী আড়ালে যে সম্পর্ক ---
তাকে নিয়ে হাঁটতে দ্বিধা -- সেই বাড়ির দিকে!

সৈয়দ আসাদুজজামান সুহান
অনুভবে তুমি

হৃদয় জুড়ে সে হেঁটে বেড়ায়, মুক্ত অবাধ বিচরণ
তার অপলক দৃষ্টিতে যেন এক মায়াবী সম্মোহন
খোঁপায় ফুলের মালা, গন্ধে মাতোয়ারা চঞ্চলা মন
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে অনুভবে জাগে আলতো শিহরণ।

সে আসে রোজ স্বপ্নের দেশে, মায়াবী আবেশে
কোমল স্পর্শ অনুভব করি, বুকের ঠিক বাম পাশে
লোবানের সুগন্ধি মাখা অঙ্গে আমাতে যায় সে মিশে
হঠাৎ চুপিসারে করে প্রস্থান, সারা রাতের গল্প শেষে।

সে যে নয়তো কোন কল্পনা, নয়তো কোন বাসনা
কিংবা জৈবিক শিহরণে জেগে উঠা কোন কামনা
সে যে আমার হাজারো রজনীর একাগ্র আরাধনা
মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই তার পবিত্র প্রেমের কাব্য বন্দনা।

মাহফুজুর রহমান লিংকন
কোন এক ভরা দুপুরে...

কী রূপে বিমূর্ত সময়,
বাক্সের গহীন থেকে তুলে আনে
আপোষহীন দুঃখ!
যদি দুধের ভিতরেও
দুঃখই ঢেলে দেয়া হয়,
তবু ঝর্ণা
পাহাড়গুলোতে প্রবাহের তৃপ্তিতে
আমি থেকে আমিতেই
ভালোবেসে বয়ে যাবে।
আমাকে হারিয়ে দেবার প্রত্যাশা
কীভাবে প্রবাহিত!
ভুলিয়ে রাখার এই যে আয়োজন...
তবু বাদামের খোসায়
ভালোবাসা তৈরি করা
গল্পবন্ধ দুপুর,
রেলগতি
ছুটে চলা শৈশব
টকিজের দরজায় এসে,
পিঁপড়ের মতো দুধসাঁতার কাটে
শাদা পর্দার রঙিন ছবির মাঝে!

জাহাঙ্গীর জয়েস 
ন্যায় বিচার

আসুন মহামান্য সেবকগণ-
সিংহের মতো কেশর ফুলানো মহান প্রভুদের হুকুম তামিল করার জন্যে নির্বিচারে লুণ্ঠন করতে গিয়ে যারা অনেক কষ্ট করেছে- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!
যারা পতঙ্গের মতো ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, গ্রাম-গঞ্জ- তাদের অনেক পরিশ্রম গিয়েছে- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!

আসুন মহামান্য সেবকগণ-
দেশের জন্যে ধর্মের জন্যে জীবনের পরোয়া না করে যারা খুনকে নিজেদের আত্মার আগুনে পরিশুদ্ধ করে তুলেছিলো, যারা ধর্ষণকে করে তুলেছিলো মহিমান্বিত আর গণহত্যাকে দিয়েছিলো শিল্পের মর্যাদা- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!

আসুন মহামান্য সেবকগণ-
যারা আর বেঁচে নেই তাদের মনে রাখার কোনো মানে হয়! যারা বেঁচে নেই- তারা ত্রিশলক্ষ হোক আর ত্রিশ কোটিই! তারচেয়ে যারা বেঁচে আছে আসুন সেই সব মহান পুরুষদের যথার্থ খেদমত করি- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!

আসুন লুণ্ঠন করি, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেই, তাজা তাজা সবজির হাটের মতো খুনের হাট বসাই, কুকুরের মতো গণহত্যায় মেতে উঠি...

মহামান্য সেবকগণ নিশ্চয়ই আমাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।

শিল্প সাহিত্য ৫৫
গোবিন্দ সরকার
দুঃখ ব্যতীত সুখ

জীবনের গলিপথ অমানিশা
দূর হতে টিপিটিপি মোহাচ্ছন্ন সুখের ক্ষীণ আলো

এটাই বুঝি পুষ্প ছড়ানো সুখের ঠিকানা!

সিঁড়ি ভেঙে হাঁটতে গেছি যেই---
আড়ি পেতে প্রহর গুনছে দুঃখনদী
ছেনি দিয়ে পাথর সড়ানো
পৃথিবীর সব যন্ত্রণা এসে হাজির
ঠাঁয় দাড়িয়ে অহেতুক চোখ রাঙানি
মুখভারে কারি কারি অভিমান
বেদনারা পেয়ে বসেছে আশকারা
মেঘ ভেঙে গর্জন আর বৃষ্টি নামার সামিল।

বুকে হাত রেখে সহসা আশ্বাস সবেধন নীলমণি
লক্ষ্য শুরু গন্তব্যে-----
হে মহাজীবন! কে দুঃখ ব্যতীত সুখ স্পর্শ করেছে?

সুকান্ত দাস
করিডর

বারবার মুছে ফেলা বৃত্তপথ। প্রতিদৃশ্যেও ফেরানো মুখ। পলেস্তারা খসা।

মরমী গানে বিষ মেখে দেখি সেও জ্বলে ওঠে - দাবানল প্রিয়

কুহকিনীর রূপ। পড়নে শিফন শাড়ি। একান্তজনেরা চিনিয়ে দেয় প্রিয় করিডর

এখানে কোন শহীদবেদী নেই। চেনা গিলোটিন।
আপাদ চিরে নিলে কিছু ঋতুরাগ বেরোতেও পারে।

বিষাদ আব্দুল্লাহ
কাম তাড়িত চাঁদ

চাঁদের আলোর ঢেউয়ে ঢেউয়ে চলো 
কলা গাছের নৌকা বানিয়ে 
আমরা ভাসতে থাকি পুকুরে

চারদিকে নরম ঠান্ডা বাতাসের তাণ্ডবে 
আমাদের কাম দেহে ঝরো ঝরো ঘাম ঝরবে
আমরা ভুলে যাবো প্রথম ছোঁয়ার স্বাদ...

শত কিলোমিটার দূরে অথচ 
চাঁদের আলোর ভেতরে তোমার গন্ধ পাই

তুমি তুমুল নিনাদে কেঁপে কেঁপে কেঁদে ওঠছো যেনো,
দুইখানে ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ঘুম ভেঙে তছনছ... 

সাঈদুর রহমান লিটন
ঝলসানো দুপুর

ক্রমান্বয়ে হাঁপিয়ে উঠছে সময়
প্রখর আলোয় জীবন চলে
চাঁদের সাথে প্রিয়ার সদৃশ এখন নেই
দুপুরের ঝলসানো রোদে দেখি প্রিয়ার মুখ।

প্রেম বাষ্প হয়, দূরে কোথাও উড়ে যায়
চৌচির মাঠ, অথবা নিরেট শিলা
পড়ে থাকে বিছানায়
ছুঁতে গেলে ফের আঘাতে ফিরে আসি।

চোখে দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলে
বুকটা ক্রমান্বয়ে জ্বলসে গেছে
দগদগে ঘা কারো পরশে শীতল হয়না
অসহ্য যন্ত্রণায় মুখ লুকাই বালিশে,
বালিশ ভিজে আষাঢ়ের বর্ষায়।


আবু জাফর সিকদার
অনলবর্ষী

আলাপকে বলেছি বহুবার,
চুপ করে থেকো;
নীরবতা হলো শান্ত, সুবোধ
বুক টানটান নতুন কবরের মতো
আহা! কী অবলীলায় তুমি
বায়বীয় ফানুসে হাপরের বাতাস ঢুকিয়ে
মহাকাশ জয়ের রোজনামচা বানাও!
গোবরের ভেতর একটি গোলাপঝাড়
বেড়ে উঠার অর্থ কী তবে,
তার সৌরভ ও সুগন্ধিও বদলে যায়?
মাকালের লতাপাতাফলেও নাকি আছে ঔষধিগুণ
রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠা বাঁটফুলেও লুকিয়ে থাকে শেফা
তুমিই কেবল প্রতিহিংসার অনলে
জ্বালিয়ে রেখেছো রাবণের অনির্বাণ চিতা।

শিল্প সাহিত্য ৫৪
শুভ্র সরকার
পোস্টমাস্টারের শার্টের রঙ ছিল
হারানো জুতোর


এবং চিনে নিতে পারলে, কেউ কেউ পথ হয়ে যায়। পেরিয়ে গেলে, শুধু নামটাই পড়ে থাকে। কুড়িয়ে নেয়ার অজুহাতে কলতলায় আধধোয়া কাপড়ে সারাবেলা বেজে ওঠে শরীর। শরীর থেকে মন অব্দি পৌঁছানোর পথটা- তোমার চোখ। কেউ আমার কথা জানতে চাইলে, তুমি তার দিকে একবার তাকিও।

এদিকে, তোমার কথা মনে পড়লে-

এখনও হারানো জুতোর ভিতর ফেলে আসি আমার সমস্ত চেনা পথ!


পোস্টমাস্টারের শার্টের ভিতর, কেউ অসাবধানে
খুলে দেখে- মানুষ মূলত ডাকঘর!


মানুষ একটা ঘরে- যেখানে আরও অনেক মানুষ থাকে।

সাহিন আক্তার কারিকর
সংলাপ ভাঙা স্বর 

নদীর ধর্ম নিয়ে মাঝি - মল্লার তর্ক হল
প্রভাতের অন্তিম সুর
ভেসে আসছে শঙ্খচিল পোষাক...
পাতিলেবু হাত ধরে জল ভাত কর্ম খুঁজছে ।

আকারের কোনো অঙ্ক নেই
নিজস্ব শৈলীর শ্লীলতাহানির করে রক্তের দাগ চেনাচ্ছে কথক...
অথচ কল্পনার নির্দিষ্ট ফাঁদ পেতে মাছ ধরছে মাছরাঙা।

ইতিহাসের আংলোরা সমালোচনা করছে পিছনে
উইপোঁকা ঢিবি থেকে পড়ে মৃত্যু হল
বজ্জাত মেয়ের
যত সহজে না পিরিয়ড শেষ হয়।

ঠিক তখন,
নাকে রুমাল চেপে ভারতবর্ষ উঠে আসছে
ধর্মনিরপেক্ষ একটি সংবিধান।

নতুন সূর্য উদয়ের পুরাতন ভাবনা নিয়ে বাসা বাঁধছে কোকিল,
আদৌতে যার সংসার বনবাস।

তর্জনির ছিদ্র পথে গুলি ছুঁড়ে ফায়দা লুটছে ফিঙে
ফড়িং এর সাথে বাসর করল না বিল চড়–ই

আক্ষেপ দু’জনার, কারও পেট ভরেনি...

কমল কুজুর
প্রার্থনার ক্ষণ

দিনগুলি তেমনি রয়েছে
শুধু রাতগুলো হয়েছে দীর্ঘ
সন্ধ্যে হতেই শ্মশানের আঁধার যেন
গলা টিপে ধরে সমস্ত পৃথিবীর ;
আর
কোন এক অজানা শঙ্কায়
ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতোই
খাবি খেতে থাকে অসহায় মানুষ-
- নিজ নিজ বন্দীশালায়।

লক্ষ কোটি টাকার তৈরি পরমাণু অস্ত্র
ড্রোন মাইন আরো কত কি -
সবই যে ব্যর্থতায় মুখ লুকায় ;
আজ কোথায় ইতালি যুক্তরাষ্ট্র স্পেন চিন
মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্র যত
সব আশা ছেড়ে
- করে হায় হায়।

বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ নেই, নেই প্রতিকার
মানুষ ম’রে অকাতরে
বাতাসে যেন বিষ ভাসে
এক দুই তিন-
এমনি করেই যেন আসে এগিয়ে মৃত্যুর দিন।

রোজ তবু সূর্য ওঠে
রাঙা কিরণে আঁধার দূরে যায় সরে
দূর্বল মানুষ স্বপ্ন খোঁজে,
বাঁচার স্বপ্ন, সুন্দর এক আগামীর স্বপ্ন
“এই পৃথিবী আমাদের হবে,
হবে মানবতার জয়।”

রানা জামান
বইগুলো চলে যায় হকারের হাতে

এতো কিছু এতো সম্পদের মাঝে জুতোর হিসাব রাখে না কেহই
জুতোর উপরে ছড়াছড়ি ব্রা’র সাথে পেন্টি উভয় লিঙ্গের
রান্নাঘর শুকনো থেকে তারা গোণা রেস্টুরেন্ট ব্যস্ত থালার গুঞ্জনে
সময়ের পাগলা ঘোড়া দেশ থেকে দেশান্তরে লাগাম বিহীন
ব্যবসার লেখাপড়া গুলো দ্যুতি ছড়িয়ে ধূলোর স্তর অন্যবর্ণে
এমন দ্যুতির আকর্ষণে এক প্রকাশক তাঁকে প্রধান অতিথি করেন আগ্রহে
বইয়ের মোড়ক খোলা হলে ঘ্রাণ না শুঁকে বাহিরে এসে ফেলে দেন ডাস্টবিনে
প্রকাশক কিংবা লেখকের লাভ না হলেও নাম হলো সংস্কৃতি সেবক হিসেবে অনেক
বুভুক্ষু লেখক পাবার প্রত্যাশা নিয়ে যায় তাঁর অট্টালিকায় সময় বুঝে
 লেখকের দেয়া বইগুলো জমে গেলে অনায়সে চলে যায় হকারের হাতে
ওসব বাড়িতে বই-এর আলমিরা রেখে সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয় ভাবে না কেউ।

শিল্প সাহিত্য ৫৩
হাসান ওয়াহিদ
উদ্বাস্তু

ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাস মেখে সেই কবে
ভিটেমাটি ছেড়েছিলাম
মাঝখানে দলা পাকানো পাঁচ-পাঁচটি দশক।
এখন আমরা খেতে কাজ করতে যেতে পারি না
দুপুরের রোদে পিঠ রেখে গাছের তলায়
বসতে পারে না আমাদের ছায়া
এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপ কোথায় নেই আমরা?
আমরা এখন একাকী খড়কুটো
বাতাসে ছড়িয়ে যায় অভিমান
আমাদের জীবনের বিনিময়ে প্রতিদিন
জেগে ওঠে ঈশ্বর---
আমাদের হাতের দশটা আঙুল এখন
ভয়ানক বিপজ্জনক অস্ত্র
ঝলসানো সূর্যের দিকে আমাদের ইচ্ছেরা শিস দেয়।

এখন আমরা প্রচণ্ড অভিমানী
শীতকাল তোরঙ্গে রেখে সারাদেহে
মেখে নিয়েছি গ্রীষ্মকাল
অফুরান শোকের কবিতা বুকে নিয়ে জীবন ফুরিয়ে এলে
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ধুলিকণায় আমরা মিশে যাই।
আমরা নতুন জিনিস, আমাদের নতুন নাম উদ্বাস্তু।

রহিম উদ্দিন
ফন্দি-ফিকির

আজব এদেশ আজব নিয়ম আজব যে তার সবকিছু
লোক দেখানো সহায়তায় করছে নিজের জাত নীচু
চাউল দিচ্ছে ডাউল দিচ্ছে দিচ্ছে পিয়াঁজ টমেটো
সঙ্গে আরো আলু দিচ্ছে তুলছে সবাই ফটো
মানছে না কেউ সোশ্যাল ডিস্টেন্স ঘুরছে দ্বারেদ্বারে
এমন দানে যদি খানিক নিজের সম্মান বাড়ে
এই দলে আজ যদু-মদু কর্তাবাবু ও চেয়ারম্যান
তাকেই যেন নির্বাচনে দলের একখান টিকিট দেন
সবই তাদের ফন্দি-ফিকির বুঝতে নেই আর বাকী
হিসাব করে দেখি সবি অন্ধজনে ফাঁকি
তবুও ভাই তারাই হাতেম তারাই আলোর দিশারি
হুকুম নয় এই রাজ-রাজাদের বলছি মিনতি করি
করবে যদি সাহায্য ভাই কর না রাতের আঁধারে
বস্তাগুলো রেখে আয় না দুঃখির ঘরের দুয়ারে।

তপন রায় 
অমাবস্যার অন্ধকারে

অমাবস্যায় কোন প্রকারেই পাইনি, পেলাম পূর্ণিমায় তোমাকে, জ্যোৎস্না
অনেকদিন সামলে অন্ধকার রেখেছিলাম দূরে
তখন ভোর থেকে বিকেল অবধি কর্মক্লান্তি
পারিয়ে দিত ঘুম সন্ধ্যের আগেই।
তখন তুমি দেখোনি আমাকে, রাখোনি
আমার চোখে চোখ।
কোন এক কুক্ষণ শুরু করিয়ে মাতিয়ে রেখেছে
আমাকে অমাবস্যার অন্ধকারে
এ সময়ে এসে ভাল করলে তুমি, জ্যোৎস্না
অন্ধকার আমার ভালো লাগে না।
আমার ছেড়ে রাখা পোষাকে, জড়িয়ে ধরার
সময় আমার শরীরে যদি লেগে থাকে একফোঁটাও
অন্ধকার, মুছে ফেলো তোমার আলোয়।

হীরক বন্দোপাধ্যায়
বৃষ্টিদিন

মাঝে মাঝে পা পিছলে যায় জলের ফোঁটায়
তখনই তাকায়, কেউ দেখছে না কেউ শুনছে না
তবু আকাশে লাফ দেয় পুঞ্জমেঘ
কবেই ভেঙেছে লকগেট
বোয়াল সরপুটি হলুদ বেলেমাছ
জাল নিয়ে নেমে পড়ে যেখানে ব্রিজ
দুদিকে গাড়ি ঘোড়া সামলে নিন
যেখানে শীত করে দিকবদল
হালকা চাপা স্বর আবহমান
ঝাঁপিয়ে ছুটে আসে অন্ধকার, শব্দে ভেঙে যায় হ্যালো চেক মাইক টেস্টিংওয়ান টু থ্রি
যাত্রা গান নাকি ঝুমুর নাচ
হায় মরি মরি এতো রক্তদান
পাউরুটি কলা আর হাসের ডিম, আসর জমে গেছে হালকা জ্যাম, ছেলেরা রক্ত দেয় মেয়েরা
দেখছে, ঐ যে বাপ্তুর মা, গাজন-ই হবে বুঝি
ভেবেছে কেউ, বিনীত অনুরোধ আপনাদের
জীবন দান মানে কী উচ্ছ¡াস
স্বপ্নে হানা দেয় হেলেন হান্ট
ছোট্ট নীচু  বক্স সবুজ তার... আহা
বর্ষা নেই তবু বৃষ্টিদিন...

পলিয়ার ওয়াহিদ
সঙ্গনিরোধ শুক্কুরবার

মহাব্বতের মহামারিতে ঘরবন্দী
চন্দ্রিমা উদ্যানে মন তবু হাঁটে
পাতাভর্তি গাছের নাদুস-নুদুস ভঙ্গি
মেয়েটি রপ্তানি করে আমার ভেতর!

সে আমাকে উপহার দেয়
করুণার সাদা ফুল
যেন ভালোবাসার ময়লা!
করোনায় মানুষের আরাম-আয়েশ
সবই তো শরীরের ময়লা এখন!

বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছে দুঃখ
চুলার ওপর ফুঁপাচ্ছে অভাব
বিচ্ছেদের পাণ্ডুলিপিতে জমিয়ে 
আড্ডা দিচ্ছে অভিযোগ!
সবাই আমার দিকে- আঙুল তুলেছে
তামাশার দৃষ্টি ভরে!

আজ মহান জুম্মাবার
পবিত্র মিলনের দিন!
কানে আতরের তুলো গুজে
ন্যাপথলিনে ভাঁজ করা পাঞ্জাবী গলিয়ে
কেন আমি প্রভুর সামনে দাঁড়াব না?

আমাকে জানতে হবে
এই মহামারীর কল্যাণ কিসে?
আমরা তো একত্রে ছিলাম!
কেন তিনি পৃথক হবার
বাসনায় মজলেন?

তাহলে কী?
আমাদের একত্রে থাকার মধ্যে
কোথাও মহাব্বতের অভাবছিল!
নাকি?
সুখ কুড়াতে কুড়াতে
গুছিয়ে ফেলেছি যেসব অসুখ
তারই ওষুধ এই
বৈশ্বিক অবসর

Quarantined Friday

Prisoned in house in the epidemic of love
Even then my mind in the moonlit garden are walking
Plump approaches of the leafy tree
the girl exports these inside me!

She gives me gifts
White flowers of compassion
That is like dirt of affection!
All comforts of the men in Corona—
These are also dirt now of the body!

Sadness is lying on the bed squatting
The starves sob on the boiler
In the manuscript of estrangement densely
Objection keeps company of idle talkers
Everyone is pointing fingers to me
with the jokes-full-eye

Today is a great Friday
Holy Reunion Day!
To put perfumed cotton in my ears,
naphthalene in Folded Panjabi that`s to melt
why should I not stand to my Allah?
I need to know
What's the welfare of this epidemic?
We were together!
Why He would be intoxicated into desire doing separate?

What than in our being together
was there a lack of love somewhere,
wasn't it?
To load greed continuously
We have fixed these diseases
That's medicine this—Global leisure

শিল্প সাহিত্য ৫২

আরণ্যক টিটো
নতুন বোতল পুরোনো মদিরা
...
তাহার ভাষা বদলে দিয়ে
তাহার
গানটি তুমি
সাধো
মনের তানপুরায়
তোমার ভাষায় গানটি তাহার বাজে...
যেন
নতুন বোতলে পুরোনো মদিরা! ...
তাহার কথায়
রাঙাক তোমার ভাষা
ভাসুক খেয়া... তাতে আমার কী!
তারচে
খুঁজবো আমি
নতুন কথায় নতুন ভাষায়
কোথায়
বাঁকছে নদীরা...

সাকিল আহমেদ
সংসার

আহেরী  ভৈরব রাগে রাধি সংসার অম্বল
এখানে চাঁদ শিল্পের বড়া খায়
জ্যোৎস্নার প্লাবনে ভাসে নক্ষত্র রাত
ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় কে কার কফিন !

আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা খায় রোগ
ভালবাসা, কামরাঙা টক, আসছে মাহেন্দ্র যোগ।

আমাদের টু হুইলার সংসার, শামুক জীবন
ছাাতিমের ডালে পাকে স্নেহহীনরোদ

এখানে চাঁদ শিল্পের বড়া খায়
শিল্পিত হাসি হাসে সুতরাং,  অথকিম ডোম 
আহেরী ভেরব রাগে রাঁধি ওঁম, সংসারঅম্বল।

জাহিদুল মাসুদ
বিছানা

একদিন তোশকটা উল্টিয়ে দেখি
অনেক ক্লান্তি জমে আছে
আমার শরীর নিংড়ে ক্লান্তিগুলো
তোশকের তলায় জড়ো হয়েছে।
তোশকের অন্য পাশটা উল্টিয়ে দেখি
অনেক ঘুম জমে আছে
আমার বহু রাতের ঘুমগুলো
জমে জমে অন্ধকার মৃত্যু হয়ে আছে।

সজিব তুষার
ডিয়ার কমরেড

ডিয়ার কমরেড
আমি জানি আকাশ একদিন নিকোশ অন্ধকারে ডুবে যাবে
ফিকে হয়ে যেতে পারে চাঁদের জোছনা
সূর্যের প্রখরতা কমে যাবে
বিবর্তন কিংবা ধ্বংস হয়ে যাবে ব্রহ্মান্ড
শ্বাস আটকে আসতে পারে মূহুর্তের ভিতর
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
মনে রেখো পৃথিবীর শেষ অসম দেওয়াল মাটিতে মিশাতেই আমাদের জন্ম
শেষ সূর্যোদয়ের জন্যই আমাদের আস্ফালন

ডিয়ার কমরেড
হয়তো গাছ একদিন ছায়া ফেলবেনা পিপাসিত পথিকের গায়
পাখিয়ারা গাছে ধরবেনা ফল
সোনালী শীষে জন্মাবেনা ফসল
শত ফুল ফোটার আগেই ঝরে যাবে কলি
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
মনেরেখো পৃথিবীর শেষ ফসলটি উৎপাদন করতেই আমাদের হাতে কাস্তে
শেষ ফুলটি ফোটতে দেওয়ার জন্যই আমাদের স্লোগান

ডিয়ার কমরেড
দেখবে একদিন সাইবেরিয়ান দ্বীপে খেলবেনা ঘন হাওয়া
আমাজানে থাকবেনা কোন প্রাণ
বরফ ঝরলেও কাঁপবেনা কোন বৃদ্ধ
ইয়েমেনের হাড়ওয়ালা কোন শিশু
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
মনেরেখো পৃথিবীর শেষ বৃদ্ধটির শীত নিবারনের জন্যই আমাদের জন্ম
শেষ শিশুটিকে সুস্থ রাখতেই বুকে লিখেছি বুলেটের নাম

ডিয়ার কমরেড
কান পাতো শোনো ফ্যাসিস্টদের জয়ধ্বনি
হায়নার মত ডিক্টেটরদের এই উল্লাস
কেমন শুনলে!
যন্ত্রনা হচ্ছে খুব!
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
আজ ভেবে নাও কী চাও তুমি!
রাস্তা দুটো মাত্র আমাদের কাছে
হয় বিপ্লব 
নাহয় মৃত্যু
এই নাও বিষ 
পান করো
বাঁচতে চাও!
তবে চিৎকার দিয়ে বলে দাও,
‘ইন্টারন্যাশনাল, মিলাও হে মানব জাত।’

শিল্প সাহিত্য ৫১
আবু জাফর সৈকত
ওয়াক্ থুঁ

তোমার সামনে একটা মদ পাত্র
ঢেলে দিই-
সম্পাদিত আলো
কুয়াশা
তুমি বিকৃত মুখে মুর্ছিত
একদলা রক্ত
ওয়াক্ থুঁ
বুকে
মুহুর্মুহু করেছ আঘাত
রাষ্ট্র
আমিও জানি আসমানী কিতাব
ওয়াক্ত হয়েছে তোমার
ফোঁটা ফোঁটা ঝড়েছে
নখ
আঙ্গুল
পা
নীচ থেকে উপরে
গলে গলে পড়ে চোখ, কপাল, চুল

তোমাকে আবারও ওয়াক্ থুঁ

রেহমান আনিস
নিশীথ প্রদীপ

আঁধার বনের রাত জাগা কোড়া পাখি,
মানস গহীনে আরো বেশি আলো জ্বালো। 

এ চোখ তো নেশা ভরা মাঝনিশি
ভরা যৌবন, তুমি আনমনে জেগে ওঠো!

ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে অবিরাম, আহা 
জেগে ওঠো! জেগে ওঠো ! 

হাতের তালুতে নাড়াবো তোমাকে সাধে
মেলে রূপ তুমি বারবার জেগে ওঠো।

অমাবস্যার ঘোর রাত্রির ঘোরে
এসো, জাগো মশারির কোণে।

মিটিমিটি তবু সবুজ পিদিম জ্বেলে
আলোকিত করো, জেগে ওঠো হৃদ, মনে।

তারকাবিহীন মেঘলা আকাশ দেখে
অকারণ কেন বারবার মনে পড়ে!

ক্ষণজীবি পাখি! নিষ্প্রভ আলো জ্বেলে
স্বপ্নেরা কেন অকারণ মরে পুড়ে!

প্রেমময়ী দেবী! আছি পথপানে চেয়ে
কখন আসবে, কখন জাগবে তুমি!


এন. সত্যেন্দ্রনাথ
তবুও বয়ে চলে... ১

মানুষ...
জবজবে পোষাক,
বাচ্ছাটাকে কাঁধে পলিথিন জড়িয়ে, বৃদ্ধ মাকে একহাতে টেনে হিঁচড়ে ,
হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলমুখী,
ঝড়ের কোপে ধনুক,
অর্ধউলঙ্গ, -বাঁ-চা-ও...

মানুষ...
সুতারবাগ টপকে নোনাজল হুহু করে ঘরের দিকে,
কোনরকমে পালিয়ে এসেছি ইস্কুলে;
আমার গরু ছাগলগুলো বাঁধা
গোয়ালে গো...
ওরা আর..... বাঁচবে না গো।

মানুষ...
নির্বাক, কে কোথায় বোসে...
ধনী নির্ধন একাকার,
একটাই পরিচয়- শিকার, দুর্গত।
জলের তোড়,
দোতলায় ওঠা হিড়িক হুড়মুড়িয়ে,
ছাত্রছাত্রী-অভিভাবক-গ্রামবাসী,
বাঁচার লড়াই।আতঙ্ক।

মানুষ...
দেখলো, আমিও নিস্পন্দ...
উড়ে গেল তিনতলার শেড...
ভেঙে পড়লো সাইকেল শেড,
পাঁচিলগুলো একে একে,
বিরাট বিরাট গাছ 
ওরাও যেন বলছে-
বাঁচতে চাই, বাঁচাও...
আমার জয়কৃষ্ণপুর এ.এন.বিদ্যাপীঠ।

তবুও বয়ে চলে... ২

আমাদের ম্যানগ্রোভ...
শুকনো কঙ্কাল, পুড়ে গেলে যেমন;
আমাদের পুকুর খাল বিল...
পচামাছে দুর্গন্ধময়,
আমাদের সুতারবাগ...
বিধ্বস্ত হারানো সুর,
ব্যর্থতার দায় নিয়ে এবড়োখেবড়ো  নত মাথা, হয়তো লজ্জায়...

আমার পশ্চিম পুরকাইত পাড়া,
বাউর পাড়া, পয়লাঘেরী, বৈদ্যপাড়া-মিস্ত্রীপাড়া,
পূর্ব পুরকাইতপাড়া...
চোখে মুখে আতঙ্ক-
আমার ঘোষপাড়া, মন্ডলের ঘেরী, খাঁয়ের ঘেরী, ছাতুয়া...

ব্যস্ত...
যে যার ভাঙা ঘরে তালি দিতে;
পেটে কিল মেরে।
আবার গাছগুলো ডানা মেলবে,
আমরাও....
এটাই জীবন।

যদি কখনও এক দুই করে হা হুতাস গুনতে ইচ্ছে করো...
এক নিমেশে গুনে নিতে পারো ইট বালির ছাদওয়ালা অস্তিত্বগুলো,
হিসেব পেয়ে যাবে....
সঙ্গে নিও তেষ্টার জল।

ব্যস্ত যে যার ভাঙা ঘরে তালি দিতে,
জীবন বয়ে চলে।

মীর সাহাবুদ্দীন
প্যাঁচাল

কিছু কবিতা কিছু গান সাময়িক
একটা ভালোলাগা চিরদিন
অথচ চোখদুটি কত কত টানে কত নজরে ছুঁয়ে যায় প্রতিদিন
একটা পছন্দের ছায়াছবি কতবার ভালোলাগে
একাধারে একটা গান কতবার শুনলে তিতো লাগে
একটা মানুষ কতবার চাইলে ফিরিয়ে দিলে আর আসেনা
ভিক্ষুক বা প্রেমিক।
কখন মানুষ বলে মানুষ একটি জীবিত লাশ
কখন শেষ বেঞ্চের ছাত্রটা দেশের সর্বোচ্চ পদে পেয়ে যায়
প্রেমিক প্রেমিকার মহামারী কখন আসে?
কত বয়স হলে মানুষের চাকুরি জুটে
যৌগ্যহীন মানুষ সার্টিফিকেট অর্জন করে
কখন না জানা অ আ ক খ মানুষটি সবার প্রিয় হয়ে উঠে
মানুষের মন কেনবা সরকারি চাকুরি জন্য লাইন ধরে
কিছু অবহেলিত মানুষ
কিভাবে অমরত্ব লাভ করে

তানহিম আহমেদ
কমলালেবু

হঠাৎ.... কখনো- কমলালেবুর খোসার মত- তুমি
লেগে থাকো অবহেলিত মূক পুষ্পের গায়ে। অমৃত
ভাঙা বিক্ষত ধাতব খণ্ডের ভেতর কোনো বিরল
একক হেমন্তের অর্কেস্ট্রা। হারানো ভাষায়। বিমূর্ত
বেহালার সুরে- শোনায় কাক্সিক্ষত ধ্রুপদী সংগীত।
তার বুক থেকে উড়ে গিয়ে শিকারী ঈগল। কেবলি
জানিয়ে যায় মূলত পৃথিবী এক বৃহৎ কমলা লেবু।

শিল্প সাহিত্য ৫০
কায়েস সৈয়দ
লকডাউন

নর্দমা করেছি নদী
উজার করেছি বন
উল্লাস করে পাখি খেয়ে
খাঁচায় ভরেছি আত্মহত্যার নিশ্চিন্ত দুপুর
----------------------------

থমকে থাকা সময়
----------------------

দেখো-
দ্বীপের নাভিমূলে
গোলাপ হয়ে ফোটে কাঁকড়ার দল
সমুদ্রের স্তনজুড়ে
পান করে ডলফিন হীমশীতল জল
কাছিমেরা ফিরে এসে ডানায়- ছড়িয়ে দিচ্ছে
শুভ্র থোকা থোকা ওম
দোল খায় কানে সাগরলতা

অপেক্ষা করো-----পৃথিবী সাজছে
--------------নতুন করে বাঁচার

রিয়ানো
নক্ষত্রের রোদন

রাসেল আমাকে ইদানীং বেশ এড়িয়ে চলছে.....
কেন, কে জানে!

এখন আর শীতকাল নয়। তাই হয়তো
ওর পক্ষ থেকে মেসেঞ্জারে আসে না কোন উষ্ণ বার্তা-‘এসো সন্ধ্যায় হাঁটি!’
গ্রীষ্মের রুক্ষ হাওয়া ওর আবেগের পাত্র জলশূন্য করেছে
হয়তো বা!

সবকিছুই এখন ধূসর এবং বিষণœ।
পৌষের সান্ধ্যকালীন কুয়াশার মতো
ড্রয়িংরুমের কোলাহলবিহীন আড্ডায় এখন আর
আবেগের চর্চা করা হয় না।
আমি জানি, তুমি বলবে-
'এটা একান্তই আমার নিজস্ব উপলব্ধি!'
কিন্তু আমি, এর সাথেই বসবাস করে আসছি যুগ থেকে যুগান্তরে,
কাল থেকে কালান্তরে!

হাসানুজ্জামিল মেহেদী
শৈশব ফিরে চাই

কমরেড,
চলো রাজনীতি করি শৈশবকে ফিরিয়ে আনার।

রাজপথ জুড়ে দীর্ঘ মানবন্ধন হোক,
শ্লোগানে মুখর মিছিল,
প্ল্যাকার্ডে লিখা থাক ‘শৈশব ফিরে চাই’,
শহরের দেয়ালেও লিখা থাক তাই।

জেগে ওঠো বন্ধু,
সময় কই শৈশব না পাওয়ার নিয়ম মানার।

অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
মৃত দুঃখ

এই বিপুল জলরাশি কত মানুষের চোখে আশ্রয়
নিয়েছে বলতো!
কত মানুষ বন্যা মেখে বুকে উজ্জ্বল বাতাসে ভরিয়ে তুলছে ফুসফুস...
কত গাছ উপড়–লে বল ফসলের জমি বান্ধা হয়ে ওঠে
কত মানুষ রাস্তায় উঠে এলে তাকে প্রতিবাদ বলা যায় ?
কত নোনা জল খন্দ ভাসিয়ে দিলে
বাদাবন দুঃখের চোখ হয়ে যায়?
প্রশ্নের গতি ঝড় হয়ে এলেও 
রাজধানী মুখো হয় না কোনদিন
দুঃখেরা শুধু নুইয়ে পড়ে মৃত ফসলের সাথে। 

আপন রহমান
ভূমিহীন জমিদার

ছেঁড়া বুক পকেট জুড়ে আজ
রাজকীয় বসন্ত,
ভ‚মিহীন জমিদার আমি
ওষ্ঠের ভাঁজে- এক আকাশ অভিমান!
রোদ পালানো মেঘের নীচে দাঁড়িয়ে-
ধ্রæপদী বিষাদের রঙে খুঁজে ফিরি
হারানো সে স্মৃতি......
জীবন এখন শুকিয়ে যাওয়া নদী
হৃদয়ের ক্যানভাসে
জলরঙে আঁকা
হতাশার সুবিশাল মূর্তি।
বৃত্তবন্দী আজ -
আমার ঘুণে ধরা স্বপ্নগুলো
পাওয়া-না পাওয়ার খাতা জুড়ে
অনর্থক আঁকিবুকি;
তবুও বেঁচে থাকা......
অন্তহীন প্রতীক্ষার পাহাড় বুকে নিয়ে...

শিল্প সাহিত্য ৪৯ 
আনিকা তামান্না
অন্তত একবার দেখা হোক

অন্তত একবার আমাদের দেখা হোক
আমি আপনাকে বসন্তের একটা গোধুলি বিকেল উপহার দিতে চাই,
যেখানে শহরের কোনো কোলাহল থাকবে না
রাস্তার দুপাশে থাকবে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ
আপনি খানিকটা ফুল নিয়ে আমার কানে গুজে দিবেন
দুজন মুগ্ধ হয়ে কোকিলের ডাক শুনবো।
অন্তত একবার আমাদের দেখা হোক
আপনি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমাকে একটা সন্ধ্যা উপহার দিবেন
তারপর কিছু কবিতা পড়ে শুনাবেন,
আমি বায়না ধরব আরো কিছুটা সময় থাকার জন্য।
অন্তত একবার আমাদের দেখা হোক
আপনার দেওয়া ভালোবাসা দিয়ে
আমি তিল তিল করে একটা পাহাড় বানিয়েছি, তা দেখাতে চাই
আকাশ সমান ভালোবাসি আপনাকে
এই কথা শুনার পর আপনার অনুভ‚তি কেমন হয় তা বুঝতে চাই।
আচমকা একদিন হুট করেই বৃষ্টি নামল
আনমনে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি,
আপনার কথা মনে পড়ছে খুব
আপনার জন্য আমার মন খারাপ
অন্তত এই কথা বলার জন্য হলেও
একবার আমাদের দেখা হোক!

সোমের কৌমুদী
মুখোশ

শুধু ভালোবাসার জন্যই ভালোবাস
দায় থেকে ভালোবাসা নিলে সৃষ্টি,
সে ভালোবাসার উপর সেঁটে যায় মুখোশ।
ঔদ্ধত্য
হীনমন্যতা
বৈপরীত্য
সে মুখোশের আড়ালে করে বাস।
একটু ভিন্ন মতেই মুখ থেকে খসে পড়া মুখোশ দেখি।

ভালোবাসা না হলে ভালোবাসাকে ভালো রাখার  জন্য
সময় শেষে সে ভালোবাসা বুকে মারে ছুরি,
হৃদয়ে জন্ম নেয় ভালোবাসাহীন ক্ষত।
অশান্তি
কিংবা জীবন জুড়ে
আত্মগ্লানি।
ভালোবাসার জন্য মানুষ নাই, মুখোশ শত শত।
মানুষ না পেয়ে মুখোশের গায়ে মানুষের ছবি আঁকি।

সাব্বির হোসেন
ম্যানগ্রোভ 

ভালোবাসি চঞ্চলা রমণীর হাসি; চিত্রা হরিণ
ভালোবাসি সাগরের তীর ঘেঁষে বেড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভের বাঘিনীর প্রসব বেদনার কান্না।
ভালোবাসি নরম মাটির আলগোছে ডুবে থাকা বন্য পশুদের পদচিহ্ন
জানাই শত কোটি প্রণাম।

বাঙালির গভীর ধমনীতে নিমন্ত্রণ তোমার
যদিও আমি মুখ লুকিয়ে বাঁচি
এই কৃত্রিম জীবনে সাধ্যহীন কামনায়
তবুও বলছি আজও শুনে নাও
পাহাড়ের কোলে স্বপ্ন দেখে ফুরায় দুপুর।

কলের শব্দ, হিংস্র খুনি বসতি, বিষাক্ত তরল আর ধারালো কুড়াল সব সময়ের মেপে যাওয়া ক্ষণিকের অতিথি
ভয় নাই ভয় নাই
তুমি প্রেমিকা আমার চোখে
শিল্পের দীর্ঘতর দেবতাত্মা
তাই বলছি-
কখনও সময় পেলে চলে এসো
আমার বুকে
অন্ধকার শীতল বিহ্বল প্রান্তে
আলোকময় লাইট হাউজ ডিঙ্গিয়ে
দেখি তোমার সুশ্রী মুখচ্ছবি প্রভাতে।

শৈশবে দেখেছি কুয়োর জল
দেখেছি চিকচিক বালুকায় নদীর চর
শুঁকেছি বাদাম পাতার ঘ্রাণ
যদিও আমি টানা বর্ষণের কামনায় আপ্লুত হইনি কখনও
তবুও দেখেছি বেলা শেষে ধুয়ে যায় কাঁকর মাটি আর ভিনদেশি পাথর
গাঙ্গেয় বদ্বীপের মুগ্ধ কাজল হয়ে হেসে ওঠে ঈশ্বর, তোমার ভেতর।

রাজীব পাল
পিছনে অন্ধকার

গেরুয়া রঙের বিকেল ফুটছে যেন
এখন কি তবে একতারাতে আঙুল ছোঁয়ানোর সময়?
এদিকে কৌটায় তো এখনও সাপের নড়াচড়া, ফোঁস...
সঞ্চয় ঘিরে রাখে অসংখ্য কিলবিল
পাশ ফিরে জেগে থাকে আত্মগোপন
পিছনে অন্ধকার,  স্বপ্নদোষ মেশানো কলকল শব্দে ঢেউয়ের মতো ঝাঁপায়

একতারা রে, তোর বেজে ওঠার লগ্ন
বয়ে গেল যে, যতটুকু গেরুয়া ফুটছে
বিকেল নিভিয়ে ঝরে যাবে সন্ধ্যেয়...

শিল্প সাহিত্য ৪৮

সরকার অরুণ কুমার
ঠেলা জাহাজের খালাসী

প্রস্তুত হও সাহসী বীর। বহিছে বিপন্ন সময়
স্বার্থে ভরা দুনিয়া, মনে শুধু কলহের সুর
আদর্শের খুঁটিগুলো স্বার্থের ধাক্কায় নড়বর,
শয়তানের অশুভ মন্ত্র আদমেরে ফেলে মৃত্যুর ফাঁদে।

খোঁড়া পা খানায় পড়ে বেশী। ঘরকাটা জীবন শুমারি
থাবায় থাবায় তুলে নিচ্ছে আয়ু
সত্যটা বললেই ক্ষিপ্ত হন ধর্মরাজ!
অশুভ নসীব, খানাখন্দে ভরা জীবনে ক্ষণেক বিশ্রাম
অনর্থক মিথ্যা ভাষণ, আগুনের খাপরা নিয়ে আমরা চিরকাল
খারিজ হয়েছি দোটানার অন্ধকারে।

গর্দভের পিঠে যেন খারে দজ্জাল
জীবনের খেয়ানদীতে আমরা
ঠেলা জাহাজের খালাসী
নাকাল হতে হয় প্রভুদের কাছে।

রফিকুল নাজিম 
অপ্রেমিক

তোমার চোখের তারায় কতটুকুন মায়া ঘুমায়,
কতটুকুন দুষ্টু আর্তি খেলা করে; ঠিকই মাপতে পারি।
তোমার ঠোঁটের কোণে কতটুকুন বিদ্যুৎ চমকায়
কতটুকুন নিষিদ্ধ গন্ধম ঝুলে থাকে; জানি গো নারী।

তোমার বুকের তিলক দু'টো কতটুকুন ওম খুঁজে 
কতটুকুন উষ্ণতায় সুখের বিলবোর্ডে তৃপ্তির রঙ ছিটায়?
কতটুকুন আদরে তোমার এলোচুল হাওয়ায় উড়ে
কতটুকুন রাগে রক্তিম রঙে কানে রক্তজবা সাজায়?

তোমার গোপনীয় ভ‚মির কতটুকুন উর্বর- চাষযোগ্য 
কতটুকুন ঘামে বীজ থেকে চারা হয়? সব হিসেবই রাখি,
কোন ঋতুতে কোন ফুল ফুটে; কোন পাখি গায়
কত ডেসিবল শব্দে হুংকারে মেলো তোমার আঁখি...

আহা! অপ্রেমিক আমি-তোমার আকাশে দেইনি উঁকি
জানি না-কতটুকুন কার্বন লুটোপুটি খায় যখনতখন, 
কতটুকুন অভিমানে এসিড বৃষ্টিতে পোড়ে তোমার মন
কখনো খুঁজিনি- তোমার হৃদয়ে কেন এতো রক্তক্ষরণ?

সাজ্জাদ সাঈফ
তমা সিরিজ: স্বরলিপি

ট্রেনে চেপে শহরের বুকে নেমে এলো 
দূর গঞ্জের মেঘ-

এইখানে ফোনের টাওয়ার, হিম বাতাসে মাথা দোলায়
নতুন ধানের গন্ধে দাড়িয়াবান্ধা খেলে, হাওয়া তার কানে কানে
জোনাকের পাঠশালা খোলে, রমরম করে হারানো চিঠির সুর।

নাও তমা, হেরফের; 
তোমার দিকে নগরজীবন বাড়িয়ে দেবে শিম-ফুল;
মথুরা-বাঁশরী ঘিরে থাকবে, ওজনোস্তর; 

নাও দু'হাত ভরে, অতল প্রেমের নিচে চাপা পড়া
সভ্য ও সভ্যতার গান, স্বরলিপি তার!

শুভ্র সরখেল
প্রলাপ 

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
দীর্ঘ জীবন সে চায় না।
মানুষের মন সে বুঝতে পারে না---
নিজেকে বুঝতে শেখে নাই---
ডাকসু, চলচিত্র, রিয়ালিটি শো, মানব বন্ধন, ক্যাম্পাস ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি---
সে কিছুই বুঝতে চায় নি জীবনে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
বাঁচতে সে চায় না ।
গাছের ছায়া সে বুঝতে চায় না ---
দালানের উচ্চতা সে ধরতে জানে না ---
শৈশব, ইস্কুল পালানো, ছেঁড়া ঘুড়ি, রাস্তায় বলাকা, এলাকার সেলুন ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি ----
সে কিছুই পায় নি একদম নিজের মতো করে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
মৃত্যু খুব আপন তার কাছে ।
রেল লাইনের অংক সে বুঝত না ----
বাগধারার শব্দ সে জানতো না ----
জমির কেস, জুম্মার নামাজ, সন্ধ্যায় উলুধ্বনি, পুলিশের গন্ধ, ককটেলের রঙ ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি ----
সে কিছুই চিনতো না ভালো করে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
আবার বাঁচতে হবে আরেক সন্ধ্যা তোদের সাথে ?
অনেক ইত্যাদি নিয়ে কাটাতে হবে আরেকটি সন্ধ্যা ?
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি


RukaiyaPakhy
 “Ohh Love!”

Someday, my dear!
Someday I'll be paralyzed with happiness.
Holding a glass of Red Wine in left
I'll chain you with magic.
You'll be traumatized for a while!
Seeing you puzzled-
I'll smile,
Kiss on forehead,
Seize your hands for saying-
'YOU'RE UNDER ARREST!’'

শিল্প সাহিত্য ৪৭ 

সরকার অরুণ কুমার
ঠেলা জাহাজের খালাসী

প্রস্তুত হও সাহসী বীর। বহিছে বিপন্ন সময়
স্বার্থে ভরা দুনিয়া, মনে শুধু কলহের সুর
আদর্শের খুঁটিগুলো স্বার্থের ধাক্কায় নড়বর,
শয়তানের অশুভ মন্ত্র আদমেরে ফেলে মৃত্যুর ফাঁদে।

খোঁড়া পা খানায় পড়ে বেশী। ঘরকাটা জীবন শুমারি
থাবায় থাবায় তুলে নিচ্ছে আয়ু
সত্যটা বললেই ক্ষিপ্ত হন ধর্মরাজ!
অশুভ নসীব, খানাখন্দে ভরা জীবনে ক্ষণেক বিশ্রাম
অনর্থক মিথ্যা ভাষণ, আগুনের খাপরা নিয়ে আমরা চিরকাল
খারিজ হয়েছি দোটানার অন্ধকারে।

গর্দভের পিঠে যেন খারে দজ্জাল
জীবনের খেয়ানদীতে আমরা
ঠেলা জাহাজের খালাসী
নাকাল হতে হয় প্রভুদের কাছে।

রফিকুল নাজিম 
অপ্রেমিক

তোমার চোখের তারায় কতটুকুন মায়া ঘুমায়,
কতটুকুন দুষ্টু আর্তি খেলা করে; ঠিকই মাপতে পারি।
তোমার ঠোঁটের কোণে কতটুকুন বিদ্যুৎ চমকায়
কতটুকুন নিষিদ্ধ গন্ধম ঝুলে থাকে; জানি গো নারী।

তোমার বুকের তিলক দু'টো কতটুকুন ওম খুঁজে 
কতটুকুন উষ্ণতায় সুখের বিলবোর্ডে তৃপ্তির রঙ ছিটায়?
কতটুকুন আদরে তোমার এলোচুল হাওয়ায় উড়ে
কতটুকুন রাগে রক্তিম রঙে কানে রক্তজবা সাজায়?

তোমার গোপনীয় ভ‚মির কতটুকুন উর্বর- চাষযোগ্য 
কতটুকুন ঘামে বীজ থেকে চারা হয়? সব হিসেবই রাখি,
কোন ঋতুতে কোন ফুল ফুটে; কোন পাখি গায়
কত ডেসিবল শব্দে হুংকারে মেলো তোমার আঁখি...

আহা! অপ্রেমিক আমি-তোমার আকাশে দেইনি উঁকি
জানি না-কতটুকুন কার্বন লুটোপুটি খায় যখনতখন, 
কতটুকুন অভিমানে এসিড বৃষ্টিতে পোড়ে তোমার মন
কখনো খুঁজিনি- তোমার হৃদয়ে কেন এতো রক্তক্ষরণ?

সাজ্জাদ সাঈফ
তমা সিরিজ: স্বরলিপি

ট্রেনে চেপে শহরের বুকে নেমে এলো 
দূর গঞ্জের মেঘ-

এইখানে ফোনের টাওয়ার, হিম বাতাসে মাথা দোলায়
নতুন ধানের গন্ধে দাড়িয়াবান্ধা খেলে, হাওয়া তার কানে কানে
জোনাকের পাঠশালা খোলে, রমরম করে হারানো চিঠির সুর।

নাও তমা, হেরফের; 
তোমার দিকে নগরজীবন বাড়িয়ে দেবে শিম-ফুল;
মথুরা-বাঁশরী ঘিরে থাকবে, ওজনোস্তর; 

নাও দু'হাত ভরে, অতল প্রেমের নিচে চাপা পড়া
সভ্য ও সভ্যতার গান, স্বরলিপি তার!

শুভ্র সরখেল
প্রলাপ 

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
দীর্ঘ জীবন সে চায় না।
মানুষের মন সে বুঝতে পারে না---
নিজেকে বুঝতে শেখে নাই---
ডাকসু, চলচিত্র, রিয়ালিটি শো, মানব বন্ধন, ক্যাম্পাস ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি---
সে কিছুই বুঝতে চায় নি জীবনে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
বাঁচতে সে চায় না ।
গাছের ছায়া সে বুঝতে চায় না ---
দালানের উচ্চতা সে ধরতে জানে না ---
শৈশব, ইস্কুল পালানো, ছেঁড়া ঘুড়ি, রাস্তায় বলাকা, এলাকার সেলুন ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি ----
সে কিছুই পায় নি একদম নিজের মতো করে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
মৃত্যু খুব আপন তার কাছে ।
রেল লাইনের অংক সে বুঝত না ----
বাগধারার শব্দ সে জানতো না ----
জমির কেস, জুম্মার নামাজ, সন্ধ্যায় উলুধ্বনি, পুলিশের গন্ধ, ককটেলের রঙ ইত্যাদি
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি ----
সে কিছুই চিনতো না ভালো করে ।

রহমান চাচা প্রায়ই বলতেন
আবার বাঁচতে হবে আরেক সন্ধ্যা তোদের সাথে ?
অনেক ইত্যাদি নিয়ে কাটাতে হবে আরেকটি সন্ধ্যা ?
কিংবা
আরও অনেক ইত্যাদি


RukaiyaPakhy
 “Ohh Love!”

Someday, my dear!
Someday I'll be paralyzed with happiness.
Holding a glass of Red Wine in left
I'll chain you with magic.
You'll be traumatized for a while!
Seeing you puzzled-
I'll smile,
Kiss on forehead,
Seize your hands for saying-

'YOU'RE UNDER ARREST!’'


শিল্প সাহিত্য ৪৭  শনিবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩০ই মে২০২০
মীর সাহাবুদ্দীন
কালের কলঙ্ক

শহরে অনেক কবি আসে কেউ আবার ফিরে গ্রামে
কর্ম  সংসারে
রাজনৈতিক মাঠে
প্রেম পাঠে
হেঁটে যায় স্পর্শ থেকে জ্ঞানের ভিন্ন শাখায় অলস সময়ে

মানুষের ব্যথায় আন্ধার উপর-নিচ
তিরস্কার ভেঙ্গে যে এগিয়ে যায়...
মূলত কবিতায় যাকে খেয়ে ফেলে
অনেক অমিলে
ঘৃণার প্রান্ত হতে
ধার্মিক থেকে
মৃত্যুর পর
মন্দ  বীভৎস মানুষের যুগ হতে আলোর দিকে...
যেন সুন্দর দালান বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা

আমরা কেবল মৃত্যুর পথিক
আমাদেও চোখ চাকচিক্যনরম মাংসে এবং বিকারে
লবন চিনি মিশ্রণ করে পানি ঢালার মত।
নেটওয়ার্ক কমিয়ে নিচ্ছে আয়ু
দীর্ঘ বাঁচার ইচ্ছেই বা জনার
সুইসাইডের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে
সব পেয়ে গেলে চাহিদা নতুন রূপ নেয়
অধিক হতাশা নিয়ে মৃত্যু থেকে যে বেঁছে যায়
আলোচিত হয়ে একদিন টকশো জমায়
জন্মায় গল্প হতে গল্প
সংগ্রাম একটি সুখ
তিরস্কার কুসংস্কার পৃষ্ঠে যাবার-
রুলারের মত নিজ থেকে নিজকে
ভিন্ন মানুষের ভিন্ন গল্পে
ইতিহাসেযুদ্ধে
আর আমাদের থেকে যায় কালের কলঙ্ক।

অনির্বাণ ঘোষ
রূপসী

তুমি প্রশান্ত চিরদিন
আমি অস্থির প্রতিদিন,
দৈনিক বেড়ে চলে মুগ্ধতার প্রহর...
মেঘখানি উড়ে যায়,
রঙিন সন্ধ্যা ডাক পাঠায়
...অদৃষ্ট হাসে।

তার কথা রাখবে না কেউ আর
বাদল দিনে জল ঝরে বারবারনিরুদ্দেশ...
তবু জোছনা মিলেমিশে একাকার,
পাহাড়চড়োর সাথে।।

সায়ন্তনী হোড়
প্রকৃতিগত চিহ্ন

ছায়ার ভেতর থেকে আঙুল সরে আসছে
ক্ষোভ ভেঙে পড়ছে আকাশের গায়ে
চুমুক দেওয়া মুহূর্তেও কোণায় আছড়ে পড়ছে
ঘনীভ গোধূলি

জলীয় শাঁখের উপর এখনও উলুধ্বনির চিহ্ন লেগে আছেএকটা মৌমাছিও সৌরভহীন আকুলতায় ভুগছেনা আজ। ঘাটের ওপাশে ফেলে আসা চিন্তাভাবনা পচে গেলে আমার আলমারি থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়
তেলচিটে বিকেলের ম্যাপে আবার রামধনু আঁকিযদিও এখন আত্মশুদ্ধির পথে আর কোনো বাধা নেই
শুধু রক্ত চুষতে ব্যস্ত অবহেলার কথোপকথন।

সরোজ মোস্তফা
শরতের কবিতা-

খাল পাড়ের ছুটন্ত জোনাকির মতো কৃষক
বাড়ির চাঁদ দেখ খুঁজে নেয় মান্দার ফুলের দীঘিবৌচি খেলা মাঠ।
জেনেছি এই সংসার বিয়ার ক্যানের বুদবুদ!
সন্ধ্যা তেলেঙ্গার ডাকে কতো বিকাল যে ছিদ্র হয় জিজ্ঞাসায়!
সবাই কি খুঁজে পরশির লগবই!
সর্বত্র একাকিত্বের রঙজীবন  চোখ দশদিক থেকে ডাকে
দেখবন্দনার ঘন্টি ছাড়া আশ্রমের কাক সূর্যকে একাই ডেকেছে জল-কলমির ভোরে।

ভাতের ফুটন্ত হাড়ি দেখে ঈর্ষা কেন!
খবর না পাঠালেও পলাশের ডাল ঘেঁষা হাওয়াতেই
পৌঁছে দিই আমার আয়না!

রাস্তা পেরুনো সাথীকে কে ডিলিট করে।
ট্রেনের জানালা থেকে দূরে খাল পাড়ে
আপন গাছের তলে দরদি নিঃশ্বাস!

শরতের কবিতা-

জীবন শেখাচ্ছে শরতের চাঁদসার্জারির টাকা জোগাড় না হলে
যে ভাবে বাড়ে ক্যান্সারের ফোঁড়া ঠিক সে ভাবেইকবরের ঘুম ছাড়া
আমরা কিচ্ছু শিখিনি! ...

শান্তম
জল

মন দিয়ে জলের মনের কথা শুনে
এই পাড় জলকেই কানে কানে বলে
ভালোবাসা আসলে জল। জলের সহজ
যেমন সহজ নয় হয়ে ওঠা তেমন সহজ

শিল্প সাহিত্য ৪৬  শুক্রবার ১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৯ই মে২০২০

জাহিদুল মাসুদ
চোখের ভূগোল -১

অচেনা এক মহাবিশ্ব আচম্বিতে
তোমার কাব্যিক চোখের পাতায় খুলে গেছে
বেদনার মতো রাত্রির পটভূমিতে
জ্যোৎস্না জ্বলা একটি সমুদ্র চেয়ে আছে।

ক’ ফোটা সমুদ্র পড়লে ঝরে
অভিমান কিম্বা প্রতীক্ষার
ভালোবাসা রচিত হয় বিশুদ্ধ ভোরে
এ পৃথিবী স্বাদ পায় প্রথম কবিতার।

জাহাঙ্গীর জয়েস
বিপ্রতীপ

আমাদের নৃত্যরত দিনগুলো আমাদেরই উপহাস করে কুকুরের চেয়েও মন্দ জীবন দেখে তবুও আমরা রূপ চর্চায় ব্যস্ত: ডানের চুল বাঁয়ে নেই বাঁয়ের চুল ডানে ; ভ্রূপ্লাকের যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখি গ্লাসের ভেতর ; মিথ্যে হাসির ঝংকারে কাঁপিয়ে দেই সমস্ত শহর!
আহ- আনন্দ, বিবিধ জীবন...

মাহফুজুর রহমান লিংকন
জানুয়ারির মহুয়া

বিছানার পাশেই দেয়াল, তবুও
মহুয়া বাতাসে কাঁপুনি
জমে থাকা আলোর খেলা
ধোঁয়াশার শব্দে আঘাত
টিকটিকির সঙ্গম
বিছানাতেই ক্রুশবিদ্ধ যীশুর যন্ত্রণা!

কোমরের নিচে মাংসকণার চিৎকার
কেমন যেন
উপরে সরল মেঘ
ক্রোধের সাথে জটলা
যাজকীয় যত্নের অসভ্য প্রতিধ্বণি
অনুশোচনা মত অনুপ্রবেশ
মুসার আত্মকষ্ট নিয়ে শুয়ে আছি!

মা, নদীর মতো
কাঁদছেন, বেঁচে থাকার ক্লান্তি
চোখে প্রবাহিত
ধীর তত্ত্ব
সমস্বরে কেঁদে ফেলি!
RukaiyaPakhy
 “Inside out”

That day I dreamt my Lord
Staring at Him, I smiled.
But He didn’t care!
When I stopped smiling, He started laughing!
He laughed, laughed, laughed a lot and told-
‘Poor creature!
Sunnah, that you played!
Not enough, not enough, not at all!
Laugh like Me, it’s life saving!
Smiling is awesome but laughter’s Medicine!’

শিল্প সাহিত্য ৪৫  বৃহস্পতিবার ১৪ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৮ই মে২০২০

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
মানুষ হও

একদিন কবিতার চরণ গুলো সাপ হয়ে
বের হবে; তোমার মস্তিষ্কে দংশন করতে
সেদিনের জন্যে প্রস্তুত আছো তো, নাকি
শব্দের অপব্যবহারে আবারও নতজানু
হয়ে চোখে ধুলো দিবে আর নয়তো ফাঁকি।

আয়নাতে শুধুই নিজের চেহারা দেখেছো
ভেতরের রূপটা দেখার চেষ্টাই করোনি;
কখনো প্রশ্নও আসেনি, কেন বিবেক ভ্রষ্ট
চক্ষু লজ্জা ভুলে চললে আপন খেয়ালে
ক্রমাগত পঁচে গলে নিজেকে করেছো নষ্ট।

আচ্ছা বাঁচবে কতদিন, শত হাজার বছর?
এতো দাম্ভিকতা; আছে নাকি অমৃত সুধা!
তবে কেন জাহির করো মূর্খের মত অহম
স্তব্ধ হও, শুদ্ধ জ্ঞানে শাপমোচন করে নাও
নয়তো আস্তাকুঁড়ে যাবে ফুরিয়ে গেলে দম।

পলিয়ার ওয়াহিদ
মোকাবিলা

ভিটামিন ডি-এর মতো হাসুন
শরীরে রোদ মেখে করোনা তাড়ান
হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে লাভ কি?
মোকাবিলা ছাড়া মুক্তি নাই

Facing

To laugh like Vitamin-D
To sweep Corona to smear with the sun in your body
What is benefit in sitting to close down your hand-feet?
Have any final release without facing?

মাহমুদ হাসান আবির
ডিমপোঁচ হাসি

রাতের মৃত্যু হলে হরিণ শাবকেরা হেঁসে ওঠে। ভেজা মাটিতে বাবলা ঝোঁপের গ্রাফিতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, পায়ে হাঁটা পথে যাদেরকে দেখা যেতো। চাঁদর গায়ে মৌচাকে বসে থাকা লার্ভাদের অসহায় লাগে ভীষণ, আত্মহত্যার গায়ে কাঁটা জড়ানো বলে।
অভিশাপেদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে, গর্তে লুকায় দিন। ডিম পোঁচ হাসিতে জড়িয়ে আসে শহর, আমরা ভালো থাকি সকলে।            

অনুপম মন্ডল
বাসকলতার পাশে
.
যেভাবে ভোরের বাতাসগানের বিষণ্ণ কলিটিকেছুঁয়ে যায়উন্মাদনায়তাঁর মতো করেসন্ধ্যাতারার মতো ভীষণ নিঃসঙ্গ এই শেষ পদসে কুড়িয়ে নিচ্ছেমলিন আঁচলে
.
বুড়ো বটের ঝুরি একে বেঁকেওই তালপুকুরের আরও গভীরে নেমেছে। পাড়ে তেলকুচো লতা। ঘন গাঢ় তার ডাঁটার আড়াল থেকে ব্যাঙ ডাকে। গম্ভীরনাদী। জ্যোৎস্নার ছায়ার ভেতরেপিঁপড়ের বাসার ওপর হয়তো বা ঝুঁকে পড়ে তারাঝুমকো গাছটি।
.
অস্পষ্ট আলোর নিচে বয়ে যাওয়াঅই সাঁঝবেলাথোকা থোকা আঁধার ভরা পাথরকুঁচি গাছ থেকে মুছে নিচ্ছেঅস্তায়মান স্বরাভাষআমিতার ক্লান্ত মুখের পরে স্তিমিত দীপখানি তুলে ধরি— দেখিবকুল-বীথির তলে কার ফেলে যাওয়া ডালিভরে আছেসুরের অঙ্কুরে।
.
সন্ধ্যাতারাতোমার আঁচলের খুঁট খুলেএকটি দুটি করে আলোর-বাকল খসে পড়েরাত্রির পরে। কোথাও ওই বনলতিকার শোভাঢেকে দিয়ে যাচ্ছে দূরের রাগমালা। নিঃসঙ্গ কেতকীর মতো। যেনতাঁর আঁখির সম্মুখেকোন কারিগরগেঁথে চলেছেপুরবীর রেখা দিয়ে অনির্দেশ্য বাণীর আভাস।
.
প্রখর রৌদ্রে ভিজে যাওয়া পঙক্তিগুলোঝরা শেফালীর মতো ঝরে গেছেপথের দুপাশে। দূরের গাছপালার ভেতর দিয়ে কারো অবনত মুখআরসিঁদুরে মেঘের অইপারে সার-বাঁধা হিজলের মাথাঘুমে ঢলে পড়েযেনএই বন্ধনঅনাবৃত মধ্যাহ্নের ভেতর নীরবেক্রমশ শিথিল হয়ে আসছে। অনালোকিত ভৈরবীর বিভূষায়।

নাজমুন নাহার নাসরিন
নিখুঁত বীভৎস

তুমি যে নেড়িকুত্তা আগে থেকে বুঝবো কি করে? কাছে এসে তবে বুঝলাম। শরীরে ক্ষত নিয়ে গোমড়ামুখে ফিরলাম।
তুমি যে কামড়াতে পারো বিষাক্ত দাঁত দিয়ে; পা দিয়ে হেছেড়ে ঝরাতে পারো রক্ত এমন কি চামড়া এক মুখে গাপ করে গিলতে পারো প্রেম। এ তো আমি দেখলাম অনুভব হারিয়ে।
তুমি আরো পারো নষ্ট করতে সাজানো বাগান, না ফোটা ফুলের কলি গুলো মুছে দিতে।
রঙ্গিন রাত্রিকে করতে পারো ব্যথার কল্লোল। দুমড়ে দিতে পারো কিশোরীর গজে ওঠা সদ্য জামরুল।
চোখে তোমার প্রেম দেখিনি, আবেগে দেখিনি ভালোবাসার।
শহরের নিষিদ্ধ বার থেকে প্রতি অন্ধকার বাড়ি ফেরা রূপ দাসীদের সাথে শরীর নিয়ে খেলা মদ খেয়ে মাতলামো সব তোমার রোজকার অভ্যাস। একটু একটু করে সব খেলে উত্তেজক মাংস, উপোসী যৌনাঙ্গ সবশেষ ঘাড় মটকে দিলে।
তুমি দাবানল, কামখোর একটা। প্রেম বোঝনা শুধু বোঝো খেলা খেলা।
নিভু নিভু আলো অন্ধকারে যেমন ঢলে গন্ধহীন কাশফুল হয়ে যুগলবন্দী থেকে বঞ্চিত হলে।।

শিল্প সাহিত্য ৪৪  বুধবার ১৩ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৭ই মে২০২০

মিজান মজুমদার
করোনার আত্মকথা

প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও যদি
লালসার লকলকে জিহ্বা
গুটিয়ে নেবে তুমি
আমি চলে যাবো।

যদি অঙ্গীকারাবদ্ধ হও
আধিপত্যের আগুনে আর পুড়বেনা
কোনো মি
চলে যাবো আমি।

যদি শপথ লও
ক্ষমতার দম্ভে আর কোনো
রক্ত খাবেনা তুমি
চলে যাবো আমি।

যদি প্রতিশ্রুতি দাও
পাপ  পতন ড়ায় দাঁড়িয়ে
আর কোনোকালে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করতে
খুন ধর্ষন  লুন্ঠনের আয়োজন করবেনা
চলে যাবো আমি।

যদি অন্তরীক্ষে একটি বীজ লাগাও;
জীবন প্রেমের
পরমতসহিষ্ণুতার
পরম্পরা ভালোবাসার
চলে যাবো আমি।

যদি দম্ভ আর ক্রোধের বিষবাষ্প থেকে
বেড়িয়ে আসো তুমি
যদি রত হও ক্ষমা প্রার্থনায়
চলে যাবো আমি।

যদি প্রতিশ্রুতি দাও
পৃথিবী নির্মাণে পাপের গুহা থেকে
বেড়িয়ে এসে পূন্যের জোয়ারে ভাসবে তুমি
চলে যাবো আমি।

সুমন মন্ডল
প্রকৃত রাজা

আকাশ আজ স্বচ্ছ
বাতাস আজ নয় বিষাক্ত
পাখির জন আজ আনাচেকানাচে
দূষণ আজ পরিত্যক্ত
আমরাই আজ দূষণের ভাগীদার
পাচ্ছি তাই সাজা
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে
প্রকৃতি তুমিই রাজা।

শিল্প সাহিত্যা ০৯  বুধবার ৯ই বৈশাখ ১৪২৭, ২২ই এপ্রিল ২০২০

শফিক সেলিম
সোনার মাকরি

মাকে আমি কখনো সাজতে দেখিনি
ঠোঁটে লিপস্টিক
স্নো বা পাওডার
লম্বা চুলের ফিতা বা ক্লিপ
পায়ে দেয়ার আলতা
এগুলোর মায়ের কিছু ছিলো না

তবে মায়ের একটা কানের মাকরি ছিলো
স্বর্ণের
মা সেটা পড়ে ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখে চুল আচঁড়াতো
এটাই তার সর্বোচ্চ সাজুগুজু

মা আমার পরীক্ষা আগামী মাসে

তারপর মা তার কানের মাকরি খুলে
রসো কর্মকারকে দিয়ে বলতো - দুই মাস পরে নিয়া যামু;
সুদ নিয়া ঘুরামু নাদাদা

তয় এতো ট্যাকা দিবার পারুম নাদিদি

২৫' লাগবো আমার। দেওদাদাপুলার পরীক্ষা
সময় মতোই দিয়া দিমু

নাদিদিআমি পারুম না
দেওদিমানি তো কইলাম
যা পারুম নাতা চাইলে ক্যামনে দিমু
তুমি যাওআমার কাম আচে

রসো কর্মকার কাজে মন দেয়

মা বসে থাকেনকালো বিবর্ণ মুখ
আমি তার আঁচল ধরে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকি
বাইরে আসিহোটেল থেকে পানি খাই
ক্ষুধায় পেট পুরে যেতে থাকে

প্রতিবারই রসো দা সে চেনা মাকরির খাটিত্ব পরীক্ষা করতেন এবং ওজন দিতেন
মা গুনে গুনে আমার হাতে টাকাগুলো দিতেন

লজ্জ্বায় আপমানে আমি ছোট হয়ে যেতাম

এখনো পরীক্ষার শব্দটি শুনলেই  মায়ের মাকরির কথা মনে পড়ে
ভয়ে লজ্জ্বায় আমি ছোট হয়ে যাই

পরীক্ষার প্রতিশব্দ কি তবে মায়ের কানের পাঁচআনা
সোনার মাকরি


সঞ্জয় আচার্য
বাঁশিওয়ালা

একদিন চালফুটো ফাঁকা ঘরে
দায়রাবান্দা খেলতে খেলতে শিশুকে সে বলল-
এসো এবার চোর পুলিশ খেলি।
তখন থেকে শুরু লুকোচুরির গাজন উৎসব।
 লুকায় তালকুঠুরীতে তো  অন্ধকপে-
 কার্ণিশ আড়ালেসে তখন
পিছন দ্বারে।
এইভাবে কেটেছিল পুরো চড়ককাল
খেলার সমগ্রতা শিশু তখনো শেখেনি,
খোঁজার নামে আলটপকা শূণ্য ঘরে ফুঃ দিয়ে সে
কত যে ধূলো ওড়ালো-কত যে ভাইরাস...
এমন উলঙ্গ হয়নি কখনো ঘর

সেই শূণ্য ঘর তখন থেকেই হ্যামলিন হয়ে বাঁশির জাদুতে রসাতলে টেনে নিয়ে চলেছে আমাদের।

জ্যো তি র্ম   মু খো পা ধ্যা 
দাহপর্ব

ভাবতে ভাবতে আঘাতগুলো সব বাসি হয়ে আসে
আঘাত বলতেনিজেকে দাহ করতে করতে
যা কিছু ডোমের লাঠি...
পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিভিয়ে ফেলেছি নিজেকে
তবুসেই অতৃপ্ত নাভি
আজও আগুন খেয়ে চলে


শিল্প সাহিত্য ০৮  মঙ্গলবার ৮ই বৈশাখ ১৪২৭, ২১ই এপ্রিল ২০২০
 
নাহিদ ধ্রুব
মনোলোভা

উত্তুরে হাওয়ার পাশে তুমিও হিজল
গেয়ে ওঠো কী এক সিন্দুকী স্বরেÑ
হয়তো বনস্পতি ছায়ার অনুকূলে
ঘুমায়ে পড়িতেছে সব মৌসুমি ঝড়ে

বনের ভেতর হেঁটে যাইতেছি একা
শিকারিপাখি তুমি কার কথা বলো
কোন ইশারায় মন ব্যাকুল ভ্রমেÑ
জেগে উঠিয়া বুঝি ঘুমায়ে গেলো!

এমন অনবদ্য মনোলোভার টানে
ফেলে এসে হিয়া কাঁদে ইশারায়Ñ
আড়ালে তুমিতবু অনুগ্রহ করো
পাতা নয় এই বুঝি প্রাণ ঝরে যায়!

সৈয়দ সাখাওয়াৎ
মড়ক সংবাদ-

যেনবা ভ্রƒণের মাঝেশুনি পাতায় পাতায় শব্দ
গাঢ় কোন অন্ধকারে ডুবে যাওয়া চরাচরে
একাÑশব্দের চেয়েও বেশি কোন এক নীরবতা
ভাঙছেউল্কার মতোদূর থেকে খসে পড়া তারা।

কোন পরিণতি নেইনেই কোনো স্বপ্নের আহ্লাদ
আছে ক্রমাগত ক্ষয়Ñ
জন্ম থেকে মৃত্যু-নিরবধি।

এসময় মনে পড়েমেহেরুন সন্ধ্যাবেলা তুমিÑ
আমার সাথে উড়ছোপেছনে চলে যাচ্ছে শহর
আমরা ক্রমশ ঢুকে পড়িজল  জঙ্গলেশূন্যে
সহসা স্মৃতির মাঝেবিবিধ মাইলেজ ফলকে।

আমাদের বন্দীদিনেবেঁচে থাকার তীব্র সাহসে
শহরে বাঘবন্দীপরস্পরের মুখের দিকে 


মাহিরা রুবি
একটি বাউলগাছ

চন্দ্রনাথ যখন সময় থেকে হারিয়ে যায় তখন একরাশ আঁকিবুকি ঢুকে পড়ে স্নানের ঘরে। মুখোশে তখনো রোদের ঝিলিক।
সংসারে প্রতিটি মানুষ কোথাও না কোথাও পাথর অথবা ত্রিভুজ নদী।
চন্দ্রনাথ আজ একটি বাউলগাছযার ডালে শিশুরা রোজ ঝুলিয়ে দেয় লাল রঙের বেলুনঅভিমান আর বিপুল বড়দিন।
এইসব ঋষিলিপি পড়তে পড়তে শরীরও জমিয়ে রাখে নিমফলের মতো ঘড়ি।
আজ ঘুমকে ভালোবেসে বারবার জেগে ওঠে চন্দ্রনাথ।

ইকতিজা আহসান
গাজিপুর -

গাজিপুরএক রহস্যপুর
দূরের দেশ

পরিণতিহীন মায়াবীজ!

গাজিপুর হতে গাজিপুর কতদূর?

ক্লান্ত হয়ে ওঠা রোদের চিহ্ন ধরে
এই মাড়িএই ধেয়ে আসা মন্বন্তর একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে

তবুগাজীপুর
অনতিক্রম প্রতিবেশীর বাড়িকুয়াশা-কণ্টকিত
অনেক দূর.... বিভ্রমপুর!


শিল্প সাহিত্য ০৭  সোমবার ৭ই বৈশাখ ১৪২৭, ২০ই এপ্রিল ২০২০

মীর রবি
পুরুষ

উত্তর খুঁজে ফেরা কজন নাবিকহাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে করতে ভুলে যায় রক্তপাতের ইতিহাস। যুদ্ধ  খুনে ধ্যানমগ্ন ঋষিতাওয়াফে ফেরা মুসাফির পুরুষের গল্প বলে। ইয়া আল মুমিনুনসৃষ্টি  ধ্বংসের ভেতর স্বয়ম্ভুরমহান পুরুষ নফসে হেজাজআত্মস্বীকৃতির মাঝে প্রশান্তি খোঁজে এবং বিশ্বাস করতে থাকে মালিকানা তারতাবত সৃষ্টি তাদেরই অধীন

রোদ্দুর রিফাত
বিভীষিকাময়

যাদুকাটা নদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাত,
পাখি নামক প্রায় দুই হাজার শ্রমিক
ঠোকরে ঠোকরে খেতো সে ভাত
অথচ করোনা ভাইরাসের বিভীষিকাময় অবস্থার
শিকার হয়ে ক্ষুধার্ত পেটে শক্তিহীন পাখার
পালক ফেলে ফিরছে নীড়ে অসহায় চোখ নিয়ে
অথচ পুত্রের মা অপেক্ষায় ছিলো কমলা রঙের
কোমল বিকেলের তিনশো-পঞ্চাশ টাকার আশা করে
কিন্তু নিয়তির লেখা দুইশত টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে
আধ-ক্লান্ত দেহ নিয়ে নিরিবিলি নরম নদীর মতো।

সেবক বিশ্বাস
গোলাপের বাগান এখন বর্জ্যরে ভাঁড়ার

ওরা যেভাবে রেখে গিয়েছিল পৃথিবী,
আমরা পারিনি রেখে যেতে সেই পৃথিবী উত্তরসূরিদের হাতে।
গোলাপের বাগান এখন বর্জ্যরে ভাঁড়ার!
নন্দন পৃথিবী আমরা ভরিয়ে দিয়েছি অসহ্য বিষে!
বিশুদ্ধ ফুসফুস এখন পোড়া সভ্যতার ছাইদানি!
সব সবুজ কাটা গেছে লোলুপদের পৈশাচিক করাতে!
পেছনের পৃথিবী আর নেই!
নদীগুলো শুকিয়ে গেছে অনন্ত অভিমানে!
অরণ্য এখন পিশাচের ফুয়েল-
পাখিরা উড়ে গেছে অভিশাপমুখে।
বহুদিন হলো বাবার দেখানো সেই আকাশ দেখি না আর-
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে অসীমের নীল,
রাতের তারামুখ মুছে গেছে দারুণ দূষণে!
উত্তাপে উত্তাপে আমরা গলিয়ে ফেলেছি বরফের পাহাড়!
কয়েক বসন্ত পরেই জানি ভেসে যাবো মরা মাছের মতো-
জলের পৃথিবীতে তখন ডুবসাঁতার খেলবে
জলের জীবেরা!
পরিচ্ছন্ন তরলের তলে আমরা প্রতœতত্ত¡ হবো বিলুপ্ত ডাইনোসরের মতো!
নতুন কোনো হোমোস্যাপিয়েন্স হয়তো খুঁজে নেবে আমাদের অর্বাচীন খুলি
কোনো এক কালে তার ক্রমগবেষণায়!

হাসনাইন হীরা
সময় বলতে কিছু নেই

আমার ব্যক্তিগত ঘড়ি
সাতটার ঘরে গিয়ে আটটার ঘন্টা দিয়ে বসে।

আমি  ঘন্টা আগালাম না পিছালাম!
ভাবতে ভাবতে
আরো  ঘন্টা পেরিয়ে যায়
আমার  ঘন্টা আর মাপা হয় না।

ভাবিআরো  ঘন্টা সুযোগ পেলে
বসে যাবো দশটার কোটায়;
অথচ আমার দশটা দশদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

অম্বরীশ ঘোষ
ব্যবধান

থিতিয়ে মাঠ পার হচ্ছে
          গানওয়ালা
চোখের জলের গতিপথে ছাইস্তুপ
জন্মের সংজ্ঞা হাতড়ে ফিরছে অন্ধকার
চেনা দূরত্বে সাবলীল হচ্ছে
          কাক  কাকতাড়য়া

অঞ্জনা দেব রায়
তোমাকে দিলাম একমুঠো শিউলি

তোমার সাথে এক আকাশ তারা দেখব বলে তোমার হাতে তুলে দিলাম আমার সমস্ত রাত 
তোমার কণ্ঠে পরিয়ে দিলাম
আমার সুরের মালা,
রামধনুর সাত রঙ মুছে দিয়ে নিজের মনের রঙে
রাঙিয়ে দিলাম তোমাকে।
কোনো অজানা ভয়ে আমাকে যতেœ তুলে রাখি
তোমার জন্যে।
আজ না হলেও কাল তুমি আসবে,
ভালোবেসে কাছে এলে একমুঠো শিউলি দিয়ে বলবো
ভালোবাসিশুধু তোমাকেই ভালোবাসি 
 
শিল্প সাহিত্য ০৬  রবিবার ৬ই বৈশাখ ১৪২৭, ১৯ই এপ্রিল ২০২০ 

সৌরভ বর্ধন
সমুদ্র বদল

দুদিকে সমুদ্র নিয়ে হাঁটছিযখনতখন দখল হতে পারি।
পালানোর পথ বহু নীল দূরে---- গ্যাসীয় নাভিকুণ্ডে!

একটি শিশির বিন্দু বরাবর হাঁটতে যাদের ভালো লাগে
তাদের সন্মানে আমি জুতোর ফিতে খোলাই রাখি,
নুড়িটা কুড়িয়ে নেবার ঠিক পরমুহূর্তে যে ঢেউ আসে
তাকে অবেলা বলা যায়---- ধীরেসুস্থে এভাবে সময়ও

ধরাবাঁধা ছক ক্লকওয়াইস ঘুরিয়ে নেওয়া যায় সেভাবেই
প্রতিদিন একেকটা গাছের বৃক্ষচ্ছেদন ছোটবেলাদের
চোখের খোঁপায় গুঁজে নেয় উত্তমাশা অন্তরীপের ভোর

আবদার কীভাবে মাথায় রাখা যায় জানি নাতবুও
রাখতে বলি------- ছেঁড়া সাইটোপ্লাজম ছিঁড়তে বলি
------- কঙ্কালগ্রন্থি ফেরত উড়ন্ত কার্বন!

সুষুন্মাকান্ড বরাবর উঠে আসা অ্যান্টাসিড
লঘু মস্তিষ্কে ভর করেভারসাম্য বদলে যায় সারাদেহে।

অনন্যা গোস্বামী
তোমার-আমার চেনা পৃথিবী

এইসব দিনরাত্রি একদিন শেষ হবে।
এইসব স্মৃতিকথাসুখকাতুরেনিদ্রামগ্ন দিনযাপনের ইতিবৃত্ত একদিন অতীত হবে।
এইসব জমাটবাঁধা ব্যথাতুরআড়মোরা ভাঙা সকাল দুপুর গড়িয়ে গড়িয়ে প্রবাহিত হবে আমাদের ইতিহাসের নদীতে।
আর এই যে যারা এই সময়ের ভাঁজে ভাঁজে লিখে রাখছে আমাদের কল্পিত সুখের মোহগাথা,
একদিন তারাই নতজানু হয়ে প্রার্থনা করবে নিজেদের স্বপ্নময় কাঙ্খিত দিনযাপনের স্বর্গ।
একদিন এই ঘর ঘর আবেশের অবকাশ ছিন্ন হবে।
পড়ে রইবে পেছনের দিনপঞ্জির পাতা।
একদিন এই কল্পলোকের বসবাসপরিক্রমা শেষ হবে।
ফুরিয়ে যাবে সব হতাশ্বাসের হুতাস।
আর সেদিন তোমার-আমার কল্পিত সংসারের লাল-নীল দেয়ালগুলো গড়বে আড়াল।
দুর্গ তুলে দেবে মাঝখানে জীবননদের সুদীর্ঘ সব স্রোতের।
একদিনযেদিন এইসব দিনযাপনের ইতিবৃত্ত হবে রচিত,
সেদিন আমরা কেবল পেছনে ফিরে চাইব।
মিষ্টি অতীতের দীর্ঘশ্বাসে ভিজবে আমাদের গালঠোঁটকণ্ঠ।
একদিন এইসব রাত্রিদিন শেষ হয়ে যাবে।
আমরা ছুটব আবার,
ফুটব ক্যাকটাসের ফুলের মতো।
আমাদের হাতের-হাতেরদৃষ্টিরপরশের বাঁধন যাবে ছুটে।
আমরা পরিশ্রম করবক্লান্ত হবদ্রæ হবে নিঃশ্বাসের গতি আমাদের।
বুকের খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটাবে আত্মমগ্নতার পাখি।
একদিন এই ঘরকুনো ঘরকন্যার গান থেমে যাবেস্তব্ধ হবে ঘুম ভেঙে তোমার মুখ দেখা সময়ের গুনগুন সুর।
পাখিরাও ডাকবে এমনি করেইসূর্যও উঠবে এমনি ঝলমল করেদিনগুলি হবে রঙিন আবার হাজারো আঙুলের স্পর্শে।
সেদিন হয়তো পৃথিবী বদলে যাবে,
কিংবা হয়তো বদলাবে না।
কিংবা হয়তো পৃথিবী এমনএখন যেমনগুমড়ে কাঁদবে বোবাবধিরঅবোধ শাবকের মতো।
হয়তো কাঁদবে তেমনই করে যেমন করে তুমি-আমি উপুড় হয়ে কান্না লুকাই বাহুর পর্দা টেনে।
একদিন এসব রোজকার ছল ফুরিয়ে যাবে।
পৃথিবী আর আগের মতো থাকবেহয়তো থাকবে না।
আমরা কেবল বেঁচে থাকব।
বেঁচে থাকার চেষ্টা করব।
কোনোমতে টিকে থাকবলড়াই চলবে আগেরই মতো।
একদিন আমরা শুঁয়োপোকার গুঁটি ভেঙে মেলব ডানা।
প্রজাপতির জীবন পাব দুটি দিনেরমুহূর্তে তা ফুরিয়ে যাবে দৃষ্টিভ্রমে।
একদিন সব তেমনই হবে যেমন ছিল বহু আগে।
তুমি-আমি চিনব না আর কাউকে বোধ হয়,
পথ কাটিয়ে চলে যাবকাকতালভুলে দেখব নাহয়।
একদিন এসব গল্প হবেস্বল্প রবে বলবে কথা,
বাজবে তারে সুরের মতো।
একদিন  সুর হারিয়ে যাবেবদলে যাবে সময়মুখের বলিরেখা
সবকিছু ঠিক বদলে যাবেনয়তো হয়তো এমনই রবে।
তোমার-আমার চেনা পৃথিবী ভেঙে পড়বে,
তোমার-আমার চেনা পৃথিবী মনে পড়বে।


শিল্প সাহিত্য ০৫  শনিবার ৫ইা বৈশাখ ১৪২৭, ১৮ই এপ্রিল ২০২০

মিজান মজুমদার
মনোভূমি

আমি এক অথর্ব অর্বাচীনও বলতে পারো কেউ কেউ,
শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিতে পারো অনায়াসেই..

প্রলয়ের সূচনায় যখন সাবধান বাঁশী বাজিয়েছিলেন
ভবিতব্যের বাংলা দর্শনে ব্যস্ত বিজ্ঞানী,  আমি তখন
হেসে উড়িয়ে দিয়েছিকরোনার চেয়ে ঢের শক্তিশালী
বলে করেছি আস্ফালনএক টুকরো কাগজ মুঠোয়
পুরে দিয়ে বলেছি ; যা বাবা বাড়ী যাহ!

প্রলয়ের দামামাকে ঠুনকো হাঁড়ির শব্দ ভেবে
আমি ক্ষেপন করেছি সময় সময় আসেনি বলে,
আমার মস্তিস্কে ক্ষমতার দম্ভ বলে আমি অপেক্ষা
করেছি কাউন্টডাউন ঘড়ির কাঁটার ঘুর্ণায়মান অবয়বে,
আমার নাসারন্ধ্রে মানুষের পোড়া মাংশের ঘ্রাণ লেগে
আছে বলে আমি প্রতীক্ষায় থেকেছিছুটি বলে ছড়িয়ে
দিয়েছি অনুজীব জলে  স্থলে।

অতঃপর আমি স্ব দর্পে ঘোষণা করেছি আমার প্রস্তুতি!
যদিও আমার কোনো একে সাতচল্লিশ নেই
ভাসমান মাইন নেই
গোলাবারুদ নেই
গুলি নেই টিয়ার শেল নেই
যুদ্ধ জাহাজ নেই
পারমানবিক শক্তি নেই।

আমার সন্মুখ সমরের যোদ্ধাদের পড়িয়ে
দিয়েছি মিছে বর্ম
হাতে তুলে দিয়েছি খেলনা পিস্তল।

আমার অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে
মরছে আমার যোদ্ধাগন
মরছে আমার প্রজাগন
অবশ্য প্রজাদের কাছে আমা কোনো
প্রতিশ্রুতি ছিলোনা।

আমার অক্ষমতার  খেয়ালে
ভেসে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার
আমার অন্ধত্বের কালে
চাল চোরে বেড়ে উঠছে চরাচর।

অনুজীব ছড়িয়ে বলি ঘরে থাকো তুমি!
দেখে নাও কী বানাই আমার মনোভূমি!

রথীন বণিক
সেকি

সব স্তন খুব তাড়াতাড়ি গোলাপ হয়ে যাবে
দু চাকার ব্যাস ঠেলে
বৃত্ত
অদ্ভুত
এক লোভ
প্রমাণ ছাড়াই এতোর
গুটিসুটি
না খেয়ে
শত
দেখ ছোটো
অন্য কারোর
পায়খানায়

জারিফ  আলম
জন্ম যদি তব এপ্রিলে এবং কিছু অদলবদল

এমন ডিপ্রেসনের কু-ঝিক-ঝিক সময় এসেছে
কে যেনো আলাদা করে রেখেছে আমার পোশাক;
হ্যাঙারে ঝুলে আছে ছায়ার শরীরআকুল সম্মোহনে।
নির্জনাদের বাড়িতে দুপুর বেলায় শ্মশানের নীরবতা নেমে এলে
তার মনে যে তৃষ্ণার ছড়াছড়ি তা নিয়ে কাব্য করতে ছাড়ে না
বয়ঃসন্ধি পেরোনো তরুণেরা

নির্জনা গোসলটোসল সেরে টাওয়াল দিয়ে মাথা জড়িয়ে রাখে রোদে শুকায় কামিজসেফটিপিনে ঝুলতে দেখি
(প্রয়োজনীয় গোপন পোশাক সুগন্ধি মাখা)
মনটা যদিও দৌড়ে বেড়ায়এইখানে সে স্বস্তি খোঁজে।
এপ্রিলে... দুপুরে... বিকেলের হেলে পড়া ছায়ায়...

মোকলেছুর রহমান
তোমার তরঙ্গ

বুকের ভিতরে বাঁ-পাশে একটা যন্ত্র থাকে
হৃদয়,
তাকে ধরা যায় নাছোঁয়া যায় না
শুধু অনুভব করি শ্বাস-প্রশ্বাসে
সেখানে থাকো তুমি।
তোমাকে লালন করি
পোষ মানাতে চাই
অথচ তুমি পোষ মানো না...

হিমালয় থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র তুমি
তোমার জলরাশি সমুদ্র বিস্তৃত
সেই সমুদ্রজল সেঁচতে সেঁচতে
শুকাতে মরিয়া আমি!
জল শুকানোর পরিবর্তে
জলতীর্থে থৈ থৈ বিস্তৃত সীমানা
উথাল-পাথাল তোমার তরঙ্গ
তছনছ করেচুড়মার করে আমার দুকূল
আহা কত বোকা আমি
তোমাকে লালন করিতোমার কথা শুনি
অথচ তোমাকে দূরে সরাতে চাই।
তোমারনা না আমার
বুকে চর জাগাতে কী মরিয়া আমি!

শিল্প সাহিত্য ০৪  শুক্রবার ৪ঠা বৈশাখ ১৪২৭, ১৭ই এপ্রিল ২০২০


অম্বরীশ ঘোষ
তবুও

অবেলার গ্রীবা বেয়ে ঘাম নেমে গেছে
শামুকের খোলে খেলছে সূর্যাস্তের প্রতিবিম্ব
কর্মহীনের পথফেরায় বাজছে মৃত্যুনিষাদ

অভিশাপ কুড়াবো বলেই এতো বসন্ত আসে
যাপনজুড়ে কেউ মাখিয়ে দেয় অন্ধবিলাপ
অজান্তে অসীম কুড়িয়ে জমা করে ফেলি সীমাবাক্সে

ক্লাইম্যাক্সের দিকে যাত্রা অন্য পথে গোছানো থাক
বোসবাড়ির তালপুকুরিয়া চাঁদ আমাকে চেনে না
আমি মিলনের গান গাইতে গিয়ে ছাই মেখে এলাম

ভালোবাসার কামাতুর জিভের স্বাদে ঘৃণা চুষে খেয়েছি
তবুও অমাবস্যার তারার আলোয় আকাশগঙ্গা খুঁজে রাখবো


বাদল শাহ আলম
অতপর তুমি আমাকে নির্বিচার হত্যা করেছিলে

সেদিন ছিলো পিদিম জ্বালা ঘর । চোখে চোখ রাখতেই হৃদয়ের গভীরে ঝড়
দিনে সূর্য রাতে নক্ষত্র । চলার পথ ছিলো না অন্ধকার
সবকিছুকে হার মানাতো আমাদের মিলিত সংগ্রাম ।

একদিন সভ্যতা এলো । সভ্যতা !
সেটিও তোমার আমার হাত ধরেই ।

অংকে বেশী বেখেয়ালি ছিলাম । লাভ ক্ষতি ধার ধারিনি কখনো ত
তুমি বেশ চতুর ছিলে । ভীষণ চতুর !
সভ্যতার দোহাই দিয়ে র্ধম বানালে । শ্রেণী রাষ্ট্র ঈশ্বর

সভ্যতা এবং ঈশ্বরের দোহাই দিয়েই তুমি সব কিছু অধীন করে নিলে । নির্লজ্জ অধীন
বলেছিলাম শুধু প্রকৃতিতে সবাই সমান।

সেদিন তুমি প্রকৃতি ও আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে । সভ্যতার ও বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে
হত্যাপর্বে মেতে উঠলে ধর্মে অধর্মে রাষ্ট্রে অরাষ্ট্রে শ্রেণী আরো কতকিছুতে ।

মনে পড়ে কোন এক দিন আ্যনসাইনট ম্যারিনারের গল্প শুনিয়েছিলাম
তুমি বিদ্রæপ এবং ক্রুর হাসি হেসেছিলে ।
গ্যালিলিওর বাটনে হাত রেখে এর পর আ্যরো এন্ড দা সং শুনিয়েছিলাম
অতপর তুমি আমাকে হত্যা করেছিলে । একাট নির্বিচার হত্যা

উদয়ার্ণব
সংলাপ

আমার কবিতার বুকে ভর করে আছে
ব্যর্থ হৃদয়ের সংলাপ, জীবনের খুনসুটি

ঘুমের মধ্যে এক মস্ত দানবকে দেখে আমি শিউরে উঠি
শিউরে উঠি এই কথা ভেবে, আগামীকাল আমাকে আবারো একটা যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে

একটা ছাদের নিচে বহু মানুষের বসবাস
একটা ছাদ উড়ে গেলে বহু মানুষ বেঘর হয়ে পড়েন
তবু একটা কিনারা খুঁজতে খুঁজতে যখন সামান্য ডিঙি পাল তুলে অন্ধ ভবিষ্যতে দেশে পাড়ি জমায়
আমাদের হাড় বিশ্বাসের আঙ্গুলে আস্তানা খোঁজে


শিল্প সাহিত্য ০৩  বৃহস্পতিবার ৩রা বৈশাখ ১৪২৭, ১৬ই এপ্রিল ২০২০

উবাইদুল্লাহ রাফী
গ্রাসিত

কোনো স্থান ক্যানো ভাবা গেলো না আর? যারে ভালোবাসি, এতো পর্দার পরও, তার চেহারাই শুধু উজ্জ্বল হয়ে আসে।
নিচ থেকে উঠতে উঠতে অনেকবার যদিও গিয়েছি পড়ে, আমি প্রতিবার উঠতে চেয়েছি, ঐ চ‚ড়াদৃষ্টে আমি দাঁড়ানোর প্রেরণা পেয়েছি।

তাপ ও বিশ্রামবিনা এই শীতে, খাঁজহীন পাহাড়ের উপর উঠেছি, ক্রমশ স্ফীত শীতে, সেইখানে থাকা শুধু মোমে হাত দিতে পারি নি; শিখার বাহু আর উচ্চতা আমার চামড়াকে ছিটকে দিয়েছে দূরে। তবু সেই শিখা মনে রেখেছি, বারবার ধরতে চেয়েছি।

শিখার সেই চ‚ড়া ছাড়া কি হেতু আর ভাবতে পারি নাই কিছু; প্রচুর পাহাড় পেরিয়ে সেই মোমের টিলাই আজো ভাবি;
শুধু তারে গ্রাস করার দিকে, এই শীতে ক্যানো নিজেই গ্রাসিত থাকি?

ফরহাদ নাইয়া’র কবিতা

বিকেল কি নারিকেল
কদবেল আমড়া
বিকেলের গায়ে থাকে
সকালের চামড়া।
দুপুর কি নুপুরের
টুপুরের তোয়ালে
দুপুরকে টানে রোজ
তিনমুখো বোয়ালে।
সকাল কি মহাকাল
অকালে পাকে রোজ
সকালের পিছু লেগে
দুপুরের ভুরিভোজ।
রজনী কি সজনীর
গজনীর মহারাজ
রজনীর বাম বুকে
লুকানো সে কারুকাজ।।

আসমা বেগম
নির্বোধ

এতো সব বাণী বার্তার
অনেকেই ডেম কেয়ার
দাড়িয়ে মুখোমুখি মৃত্যুর

আমরা যখন মুর্খ-নির্বোধ
তখন গুনতে হতে পারে-
অকল্পনীয় খেসারত

চারদিকে মৃত্যুপুরী
কাল নিশি দিচ্ছে ডাক
ঘুম কাতুরে এবার জাগ!!!

অরবিন্দ চক্রবর্তী
অবান্তর

নিজের শার্টটা একদিন গাছকে পরিয়ে বললাম
তুই, মানে আপনি কি অরবিন্দ?
গাছ চুপচাপ
কোনো উত্তর পেতে না পেতেই
দেখি কাঁটার প্রাচীরে জোনাক জ্বলে।

একদিন নিজগৃহ থেকে আলোর প্রতি ছুড়লাম প্রশ্ন
সকল জোনাক কি অরবিন্দের ঘরের বাল্ব?
সেই থেকে তোমাদের বাড়ি চিত্রল উৎসব।

ঘটনার হইরই থেকে এখন বুঝি
রহস্যের অন্তরালে চলচ্চিত্র থাকে
আরও থাকে চুড়ির টুংটাং, বাসনের ঝনঝন।

যার বিষাদ নিয়ে কেউ কেউ হাসি বাজায়,
অন্ধকারে আয়নার ব্যক্তিসজ্জা নিয়ে অলৌকিক ভাবে।

নাদিয়া জান্নাত
আমার মা এবং রবীন্দ্রনাথ
----------------------------------------------------------------------
আমার ছোট বেলায় মা স্লো ভলিউমে গান বাজাতো সারাদিন। আমি তখনো রবীন্দ্রনাথের মানে জানতাম না। রবীন্দ্রনাথ মানে
“চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি” - এই বোধটাও হয়নি তখনো। আমার তখন ছেলেবেলার বয়স। আমি মুখস্ত করতাম-

"চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাঁদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।"

তখন বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠতো। মনে হতো,
আমাদের গ্রামে কেন কোন  ছোট নদী নেই! অথচ বৈশাখ ভাবলেই
"গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে" অনুভূতিটা সারা মন ছুঁয়ে যেতো।

আমি আমার মায়ের বাজানো গান শুনতাম। ভালো লাগতো না। আমি তখনো জানতাম না এই ভালো লাগছে না এবং ভালো লাগছে সমস্ত কিছু এ দুয়ের মাঝেই আছে রবীন্দ্রনাথ।

হলো না, হলো না, হলো না বলেই চমকি চমকি উঠি, বয়সটা আমার একটু আগেই এসেছে। পুরোনো চৌকাঠ, পুরোনো বাড়ি এবং চোখ বন্ধ  করলে একটি ইছামতি নদী। আমি সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে নদী খুঁজতাম। বৃষ্টি চাইতাম। বৃষ্টি নামলে ছোপ ছোপ দাগ বসতো মাটিতে। আমি কারো পায়ের ছাপ খুঁজলাম।
আচ্ছা সেসময় কি বুড়ো রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাড়ি আসতো?
কিন্তু আমি তো সমস্ত দিন যা কিছু তরুণ তাকে ভালোবেসেছি।
আমি জেনেছি ভালোবাসা মানে বুকের ভেতর হুটহাট আসা জলোচ্ছ¡াস।
ভালোবাসা মানে খোলা গহনার বাক্স। শাড়ি এলোমেলো পরে আছে বিছানার পাশে। ভালোবাসা মানে এক্ষুণি আসতে পারে একটা দূর্যোগ।

আমি যখন প্রথম রবীন্দ্রনাথ শুনি তখনো ভালোবাসা বুঝতাম না। শুধু বুঝতাম মা রোজ অপেক্ষা করছে বাবার জন্য। বাবার অফিস পাঁটচায় ছুটি।
বাবা বাড়ি ফিরতো রাত নটায়।
মা সন্ধ্যা বাতি জ্বালাতো। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতো বাবার সাদা পাঞ্জাবি।
বাবা বাড়ি ফিরলে আমরা দু ভাই বোন দৌঁড়ে যেতাম বাবার কাছে। মা ঘরেই থাকতো। চুপচাপ হাতে নিতো বাবার বাজারের ব্যাগ। মা কি বাবাকে ভালোবাসতো?
ভালোবাসলে চুপচাপ থাকতে হয় এটা কি রবীন্দ্রনাথ মাকে শিখিয়েছিলো?

শিল্প সাহিত্য ০২  বুধবার ২রা বৈশাখ ১৪২৭, ১৫ই এপ্রিল ২০২০


অদিতি শিমুল
দাহ্যগন্ধ-১
----------------------------------------------------------------------
আমি রাজহংসী বলছি---
কেটে-কেটে পানির ওপর দিয়ে
ভাসছি আমি---ভাসছে সময়---!
চেনা বীভৎস জগৎ থেকে অনেক দূরে
ভেসে চলে এসেছি। তোমরা কেউ আমাকে
খুঁজে আর পাবে না ---
ছিলাম কোথায়---কোনখানে! কোথায় যাব!
আমি রাজহংসী, না-হলে আমার চারিদিকে কেন
এত জলরাশি! একটি পাতা ভেসে যায়---হাত বাড়িয়ে ধরতে যাই--পারিনা---আমার তো হাতই নাই--পুড়ে গেছে---আমি কেবল কান্নার শব্দ পাই!!!
কে কাঁদে!----নাকি কোনও পাখি! রাতচরা পাখি!
ঘুমঘুম সুরে --সাপখেলানি মায়ায় কে গায় অশ্রæত এই গান? এই অসময়ে কেঁদে লাভ নেই।
তোমরা জানো না? আমিও প্রেমিকা---কারোর স্বপ্নের সাধনার হীরামন পাখি!!!
এই লওহেমাহফুজের স্বীকৃত মানুষ রূপ ছিল আমার---এতোটুকু সন্দেহ নাই---তোমরা যারা মানুষ, বিশ্বাস করো---এখন আমি আগুনে পুড়ে---আমি যেন আমি না, চেয়ে চেয়ে দেখি---দূর নাকি নিকটে---বুঝিনা কিছুই।মানুষের গন্ধ পাই! দাহ্যগন্ধ উড়ে আসে আশেপাশে! অসহ্য যন্ত্রনা!!!
আমি যেন আমি না ---আমার শরীর জুড়ে যন্ত্রনা-
আমার বাবা নাকি নাকি ভাই---নাকি প্রেমিকপুরুষ!
আমার শিক্ষক? সম্ভ্রম লুটে নেয় আমার!
তোমাদেরতো "মানুষ " নাম!
সেই নিয়মে আমিও মানুষ ছিলাম  কিন্তু এখন আমি লাশ---শবদেহ---আমি এখন কবর---মায়ের চোখের আজন্ম পানি!!!
আমি রাজহংসী--নারী--- আমি জননী---আমি কন্যা---
আমি প্রেমিকা কারোর,স্বপ্নের ঐশ্বর্য ---

আমি যেন আমি না--- কারোর কন্যা নই---বোন নই---প্রেমিকা নই---আমি অ-নে-ক দূরের কেউ।

শাদা-শাদা হাঁসের স্রোত, কাফনে মুড়ে রাখা প্রাণ,
আমিও অপরূপ সেজে ---এক সারিতে!
হতে পারে তোমাদের পৃথিবীতে এভাবে
সারি-সারি রাজহংসী মরে যায় কিংবা তোমরা মেরে ফেলে দাও--- এখানে কেউ আর পারবেনা ছুঁতে আমাকে।

ভুল দ্রাঘিমা---ভুল প্ল্যানেট---ভুল স্থানে---
যেখানে আমি মানুষ নামক মাংসাশীদের বীভৎস জিভের খাদ্য হই ---অই নরকের আমি কেউ নই---কেউ না।

শিল্প সাহিত্য ০১  মঙ্গলবার ১লা বৈশাখ ১৪২৭, ১৪ই এপ্রিল ২০২০

সরকার অরুণ কুমার
স্বপ্ন প্রত্যাশা

এসো হে বৈশাখ
সোনা রঙ মেখে সবুজ আঙিনায়
সত্য উচ্চারণে --+++
ছড়াও সুগন্ধি সৌরভ।
মুঠো মুঠো স্বপ্ন ছড়িয়ে দাও
রোদেলা উঠোন আর পলিমাখা ঘরে
প্রীতি পাক অনেক নিঃশ্বাস নিবিষ্ট চিত্তে।

বসন্তে দোলে পাতা
রঙ লেগে থাকে বাতাসের গায়
তুমি এক বিস্ময়......
যেখানে পাপ থাকে না
মেঘের বাড়ি থেকে নেমে আসে হাসনাহেনা ভোর।

সকালে ঘুম ভাঙে একরাশ প্রত্যাশায়
অপেক্ষা করি একটি দিনের
দূর হোক দুঃখ জঞ্জাল
ফুল চঞ্চলতায় হেসে উঠুক আহত অতীত
তোমার চোখের ভাষায়।


কাজী শোয়েব শাবাব
তুমি আর তোমার শহর ছেড়ে আসার পর

চলে যাচ্ছি
চলে যাচ্ছি বহুদূর
কখনো কর্তব্য বড় বেশি নিষ্ঠুরÑ
পেছনে তুমি, তোমার শহর আর
বুকের ভেতর দীর্ঘ হাহাকার!

কী যেন ফেলে এসেছি কোথাও...
কী যেন ফেলে এসেছি কোথাও...


বিনয় কর্মকার
নিছক কবি

কাঁকর বাছতে-বাছতেই পার হয় ভাতবেলা।  
শেষ-ট্রেন মিস করে, প্ল্যাটফর্মকেই ভালোবেসে ফেলে কবি।
আর মানুষই মানুষকে ভাবে বোকা!

অথচ গন্তব্য কিংবা প্ল্যাটফর্ম;
উভয় থেকেই মৃত্যুর দূরত্ব সমান।


3 comments:

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক