সাক্ষাৎকার


শিল্প সাহিত্য ১১৮

আনোয়ার কামাল এর সাক্ষাৎকার
কবিকে ছন্দের ভেতরেই হাঁটতে হবে


 
জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৬৩ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তার ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। ছাত্রজীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায়।
ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে যুক্ত। প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য বই।
সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য পত্রিকা ‘নোঙর’। বর্তমানে সম্পাদনা করছেন সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ ‘এবং মানুষ’। রাজধানী ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী গৃহিণী। তাদের দুই কন্যা রয়েছে।
সম্মাননা: স্বরূপ সাহিত্য সম্মাননা (২০১৫), বিন্দুবিসর্গ পদক (২০১৯)।

১. লেখার শুরুটা কীভাবে? আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলেন কবে?

লেখার শুরুটা স্কুল জীবন থেকেই। দেয়ালিকায় লেখা লিখে লেখালেখি শুরু হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন দিবসে পত্রিকা বের করতাম। সেই সময়টা ছিল ১৯৭৭ সাল। ১৯৭৮ সালে কলেজে উঠেই নেশার মতো চেপে বসলো। তবে প্রথম থেকেই সিরিয়াসলি বিষয়টি নিয়েছি। এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

২. যতটুকু জানি, আপনি শুধু কবিতাই লিখেন না, আরো অনেক কিছু লিখেন। আসলে কোনটাতে বেশি স্বাচ্চন্দ বোধ করেন?

আমি কবিতা ছাড়াও ছড়া, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, সাহিত্য আলোচনা, সম্পাদনা, শিশুতোষ গল্প লিখে থাকি। এখানে প্রায় সবগুলো মাধ্যমই আমাকে আনন্দ দেয়। তবে কবিতায় স্বাচ্ছন্দ বোধ করি বেশি।

৩. কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণ আপনাকে কতটা টানে বা টানে না?

কবিতায় ধ্রুপদী প্রকরণ আমাকেও টানে। 

৪. কবি বা লেখেককে কতটুকু রাজনীতি সচেতন হতে হয়?

একজন কবি মানেই সে সমাজের অগ্রসর একজন মানুষ। সে কখনো কুসংষ্কার, অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের নাবিক হতে পারে না। কাজেই, তাকে অবশ্যই সচেতন এবং রাজনৈতিক সচেতন হতে হয়। তাকে যেহেতু সমাজের যাপিত জীবনাচার নিয়ে লিখতে হয়, পোড়খাওয়া মানুষের বেদনাকে কবি তুলে ধরে। কবিতায় প্রেম, দ্রোহ তার কবিতার উঠে আসে। সেকারণেই কবিকে রাজনৈতিক সচেতন হতে হয়। তবে তাকে সরাসরি রাজনীতি করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। 

৫. লিটলম্যাগ মানে শুধুই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা? আমার মনে হয় লিটলম্যাগগুলো নিজেই প্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে। আপনার মত কী?

প্রচল প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নাম ছোটকাগজ বা লিটলম্যগ। একসময় এ বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি ভাবা হতো। তাছাড়া লিটলম্যাগ যারা করছে, যাদের সাথে নিয়ে করছে, তারা নিজেরাও তো এক একটি প্রতিষ্ঠানের মতো দাঁড়িয়ে গেছে। এক অর্থে লিটলম্যাগ প্রতিষ্ঠান তো বটেই।

৬. ‘এবং মানুষ’ এর শুরুর গল্পটা বলবেন?

‘এবং মানুষ’ ২০১৪ সালে প্রথম বের করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ম‚লত: বৈশাখকে নিয়ে সবাই নানান আয়োজন করে থাকেন। তবে কবিতাকর্মীরা বৈশাখে একটি বৈশাখী কবিতা উৎসব করতে পারে না কেন? এ চিন্তাটা আমার মাথায় প্রথমে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের সাথে আলাপ করা হয়। এর মধ্যে কবি সোহাগ সিদ্দিকীকে আমি বিষয়টি নিয়ে খসড়া একটা ধারণা দেই। তারপর আমরা দুজন মিলে আরো কিছু সাহিত্য কর্মীকে নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে একটি বৈঠক করি। সেখান থেকেই ম‚লত: শুরু। এখন প্রতিবছর দুজন সাহিত্যকর্মীকে নগদ অর্থসহ সম্মাননা এবং একজন তরুন লেখককে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে বাংলা ভাষাভাষীর লেখকদের নিয়ে প্রতি বছর বৈশাখী কবিতা উৎসব করা হচ্ছে। এবার প্রস্তুতি নিয়েও করোনার কারণে করা সম্ভব হয়নি। এ সবকিছুর আয়োজন ‘এবং মানুষ’ এর ব্যানারে। 

৭. ‘‘এবং মানুষ’ তার চিন্তার জায়গায় কতটুকু লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?

‘এবং মানুষ’ মুক্তচিন্তার ছোটকাগজ। নতুনের কেতন উড়ানোর স্বপ্ন ধারণ করি। এখানে জীবনে ছাপার হরফে প্রথম লেখাটি ছাপা হয়েছে এমন অনেক তরুণকে আমি তুলে ধরেছি। মফস্বলের একজন লিখিয়ে প্রবীণ লেখকের সাথে নবীন একজন লেখকের সেতুবন্ধন করতে পেরেছে। খুঁজে খুঁজে বের করে প্রকৃত সাহিত্যকর্মীদের নগদ অর্থসহ সম্মাননা প্রদান করেছি। এছাড়া গত বছর থেকে তরুণ একজন লেখককে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। বৈশাখ নিয়ে বাঙালির নানান আয়োজন। তবে বৈশাখে কবিতা নিয়ে উৎসব নয় কেন? এ চিন্তা থেকেই প্রতিবছর বৈশাখী কবিতা উৎসব এর আয়োজন করে আসছি। ৫বার এ উৎসব করেছি। দুই বাংলার লেখকদের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয় এ আয়োজন। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি সংখ্যা নিয়ে পাঠোন্মোচনের মাধ্যমে একটি সাহিত্যকর্মীদের মিলন মেলার আয়োজন করে এসেছি। এসব দিক থেকে আমি মনে করি আমার লক্ষ্য কিছুটা হলেও প‚রণ করতে পেরেছি। 

৮. এ সময়ের কোন কোন কবির কবিতা আপনাকে ভাবায়, থমকে দেয়?

বর্তমান সময়ের অনেক তরুণ কবিই ভালো লিখছেন। অনেকের কবিতাই আেমাকে মুগ্ধ করে। তবে সেই কবিদের আবার সব কবিতাই না। অনেক কবিতাই টানে। তান নাম নাই বা বললাম। তবে এটা বলি তরুণ কবিদের নিয়ে আমি আশাবাদী।

৯. লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে কীভাবে দেখেন?

ফেসবুককে আমি কোনো অর্থেই খারাপভাবে দেখি না। এখানে একজন নীরেট পল্লীর লেখকও তার লেখা বা মতামত সহজেই তুলে ধরবার সুযোগ পাচ্ছে। আগে যেটা ছিল না। আগে লেখা প্রকাশ করার জন্য ডাকযোগে পত্রিকার সম্পাদক বরাবর পাঠাতে হতো। সম্পাদক মহোদয় অচেনা একজন লেখকের লেখা ছাপতে গিয়ে তাকে নানান দিক বিবেচনায় নিতে হতো। অনেক সময় মাসের পর মাস লেখা পাঠিয়ে একজন লেখককে অপেক্ষা করতে হতো। ফেসবুকে লেখার অবাধ সুযোগ হওয়ায় লেখকের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে হ্যাঁ, লেখার মান নিয়ে বা সম্পাদনা না করেই যে কোনো একজন লেখক তার লেখা নিমিষেই ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে করে মানহীন অনেক লেখা যাচ্ছেতাই ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। 

১০. বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের আলোচনা-সমালোচনা চর্চা কতটা গঠনম‚লক হচ্ছে?

তেমন হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা যারা সাহিত্য আলোচনা করছি, ম‚লত আলোচনায় তার ভালো দিকগুলোই তুলে ধরছি। উৎসাহ দিচ্ছি। পাশাপাশি যে গঠনম‚লক সমালোচনা হওয়া দরকার তা কিন্তু আদপে হচ্ছে না। আবার কেউ যদি সেই দিকে যায় তাহলে তার আবার নানান খেসারত দিতে হয়। এসব বিবেচনায় রেখেই হয়তো সমালোচনাটা খুব বেশি আগাচ্ছে না।

১১. লেখার সন্তুষ্টি নিয়ে কোন লেখককে কি কখনো থেমে যাওয়া উচিত? আপনার মতামত কি?

আমার মনে হয় প্রত্যেক লেখকেরই একটা অতৃপ্তি থেকেই যায়। লেখকের কাছে মনে হয়, তার সেরা লেখাটি এখনও লেখা হয়নি। এভাবেই তার জীবনের সিংহভাগ সময় কেটে যায়। তার আত্মতুষ্টি আর হয় না। কাজেই, কোনো লেখকেরই নিজের লেখার সন্তুষ্টি নিয়ে থেমে যাওয়া উচিৎ নয়। আমি আমার সেই লেখাটি এখনও লিখে উঠতে পারিনি। কাজেই লিখেই যাচ্ছি। হয়তো একদিন দেখা মিলবে সেই কাঙ্খিত লেখার।

১২. কবিতার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা বা প্যাটার্ন আছে?

কবিতা লেখার তো কলা কৌশল আছেই। ছন্দ, মাত্রা, রূপক, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, টানা গদ্য আঙ্গিকে এমন তরো কতো রকমফেরই কবিতায় পরীক্ষণীয়ভাবে হয়, হচ্ছে। যেভাবেই লিখে থাকুক না কেন আখেরে কোনটা টিকে থাকবে সেটাই হলো বড় কথা। ছন্দের বাইরে যে যতই লিখুক না কেন তাকে ছন্দের ভেতরেই হাঁটতে হবে; সেটা যে ফর্মেই হোক না কেন।

১৩. আপনার কবিতা আপনার সমসাময়িকদের থেকে কোন জায়গাটায় আলাদা বলে আপনি মনে করেন?

আমি আমার কবিতায় আমার নিজের চিন্তার স্ফ‚রণ পাঠকের জন্য সরল ভঙ্গিমায় তুলে ধরবার চেষ্টা করি। আমি মনে করি আমি যা লিখছি, তা যেন একজন সাধারণ পাঠকও সহজেই বুঝে নিতে পারে। আমার লেখা সমসাময়িকদের থেকে আলাদা কিনা তা অন্যরা বলবেন। এটা আমি বলবো না বা বলবার বিষয় নয়। সমাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে এবং মাটিলগ্ন মানুষের কথাই বলবার চেষ্টা করি। মানুষের যাপিত জীবনে ঘুণেধরা সমাজের অসংগতিগুলো কবিতায় প্রকাশ করার চেষ্টা করি।

১৪. বর্তমান সময়ের কবিতার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতা ও দুর্বোধ্যতার অভিযোগ বিষয়ে কিছু বলেন। কবি কি পাঠকের রুচির সাথে আপোষ করে কবিতা লেখা উচিত?

কবিতার দুর্বোধ্যতার অভিযোগ আগে ব্যাপক আকারে ছিল। পরবর্তী সময়ে এটা অনেকটাই কেটে গেছে। এখন একজন কবিকে পাঠকের কাছে যেতে হয়। পাঠক যদি তার কবিতায় দুর্বোধ্যতার কারণে পাঠই না করলো, তাহলে সেই কবিতা কেবলমাত্র বই বানিয়ে ড্রইংরুমে সাজিয়ে রাখার সমতুল্য হবে। এ অভিযোগ ইতোপ‚র্বেও ছিল এখনও আছে। 
নিশ্চয় কবি পাঠকের রুচির সাথে আপোষ করে লিখবে না। তবে লেখক তো পাঠকের জন্যই লিখেন। পাঠকই যদি না বুঝলো বা গ্রহণ করলো না। তবে তার সার্থকথা কোথায়?

১৫. কবির স্বাধীনতা কবিতাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

প্রত্যেক কবিরই ব্যক্তিস্বাধীনতা রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা এর মানসিক চিন্তার স্ফ‚রণ। কাজেই নিজ নিজ লেখার ভেতর তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। সেই দৃষ্টিতে দেখলে কবি তার চিন্তার স্বকীয়তার বাইরে চৌকাঠ পেরিয়ে যেতে পারেন না। এ কারণেই কবিতায় তার প্রভাব স্বভাবতই প্রতিফলিত হয়।

১৬. সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?

সাহিত্য যেমন সত্য-সুন্দরকে উপস্থাপন করে। সমাজের চিত্রকে তুলে আনে নিজ নিজ ভঙ্গিমায় তেমন ধর্মও সত্য সুন্দর। মানুষের কল্যাণের জন্য। বিপথগামী মানবজাতিকে সুপথে আনবার জন্য যুগ যুগ ধরে নবী রাসুলের আগমণ ঘটেছে। এখানে সাহিত্য একজন লেখক তার দেখা বিষয়কে কল্পনার আঁচড়ে রঙিন করে তুলে ধরছেন। তারও একটা বিশ্বাস রয়েছে। আবার ধর্ম কেউ দেখেনি। নবীগণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ওহীর লিপিবদ্ধ বয়ান থেকে মানবজাতি ধর্মগ্রন্থ পেয়েছে। এখানে প্রকট বিশ্বাসের বিষয় রয়েছে। ধর্ম তো বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। আপনার আস্থা না থাকলে বিশ্বাস স্থাপন না করলে তো ধর্ম পালন করা হবে না। সুতরাং এখানে সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মবিশ্বাস দুটি ভিন্ন মাত্রা বহন করে।

১৭. এখন কোন বইটা পড়ছেন?

এখন কথাসাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনাবলী পড়ছি। কবিতার বই কবি আবুল হাসান এর ‘রচনাসমগ্র’ ও আব্দুল মান্নান সৈয়দ এর ‘নির্বাচিত কবিতা’ পুণঃপাঠ করছি।

১৮. আপনার প্রিয় লেখক কারা?

প্রিয় লেখকদের তালিকা একটু দীর্ঘ। সবার নাম এখানে বলা ঠিক হবে না।

১৯. আগামীতে কোন বই বের করছেন?

প্রতি বছরের মতো আগামী বছরও আমার কবিতার বই এর পাশাপাশি একটি গল্পের বই বের হবে।

২০. বই প্রকাশের আপনার প্রকাশনী তরুণদের কীভাবে সহযোগিতা করে থাকে?

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আমি সবসময় তরুণদের সবচে বেশি অগ্রাধিকার দেই। কারণ, একজন তরুণ লেখক হতে পারে তার প্রথম বইটি বের করবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অথচ তার কোন ধারণা নেই। এমন ক্ষেত্রে আমরা তার লেখা প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে পান্ডুলিপি নিজেরা প্রস্তুত করতঃ তাকে দেখিয়ে নেই। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেই। প্রচারের ব্যবস্থা করি।  

শিল্প সাহিত্য ১০৩

মাহফুজুর রহমান লিংকন এর সাক্ষাৎকার
কবিতার ভাষাও মানুষের মুখের ভাষা হয়ে যেতে পারে।



মাহফুজুর রহমান লিংকন।
কবি ও প্রাবন্ধিক।
জন্ম: ১৭ মার্চ, ১৯৮০ এ বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়।
প্রকাশিত কবিতার বই
 ‘অমীমাংসিত ফুলের  দেবতা’।
বিন্দু, জঙশন, ওয়াকিং ডিসট্যান্স সহ অপরাপর লিটলম্যাগে নিয়মিত লিখছেন।

কেমন আছেন?

সত্যি কথা বলতে কি বয়স বাড়ার সাথে-সাথে ভালো থাকার পরিধিটা মনে হয় বেড়ে যাচ্ছে... সব মিলিয়ে ভালোই আছি মনে হচ্ছে...

লেখার শুরুটা কীভাবে?

আমি ইনিয়ে বিনিয়ে, বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলতে পারি না। সত্য গল্পটা এই যে, আমি নিজেও জানি না লেখালেখি কীভাবে শুরু করেছি। তবে কুড়িগ্রামের মত সাজানো গোছানো, নদীর আনাগোনাময়, ছোট্ট শহরটা আমাকে কবিতার মানুষ করে তুলেছে। পাশাপাশি যার কথা বলতে হয়, তিনি আমার দাদা প্রয়াত মনির উদ্দিন ব্যাপারি। শৈশবে সম্ভবত তাঁকে দেখে উজ্জীবিত হয়েছিলাম। তিনি ছিলেন সূফী ঘরনার লোক, শৈশবে দেখতাম খাজা মইনুদ্দিন চিশতির জন্ম ও মৃত্যু দিবসে সারা রাত বাউল গান হতো... এখান থেকে সম্ভবত কবিতার প্রতি কিছুটা মমতা জন্মে, লিখতে উদ্বুদ্ধ হই...

আপনার কবিতায় তাই বারবার ‘কুড়িগ্রাম’ উঠে আসে। কিন্তু দীর্ঘদিন ঢাকা এবং দেশের বাইরে থাকার যে অভিজ্ঞতা, তা আপনার কবিতায় অনুপস্থিত কেন?

ঐ যে বললাম, কুড়িগ্রাম শহরটা আমাকে কবিতার মানুষ করে তুলেছে... হয়ত প্রথম প্রেম কুড়িগ্রাম... তাই ফিরে ফিরে প্রথম প্রেমের অনুভূতি আমাকে তাড়িত করে...
দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকি, তবুও এই শহরটা আমার না... এমন ভাবনা আমাকে ভাবিত করেনা। আর আমার দু-একটি কবিতায় ঢাকার কথা উঠে এসেছে (যেমনঃ ‘বৃষ্টি এবং রিক্সা বন্দনা’)। তবে, দেশের বাহিরে যখন ছিলাম, তখন আমার আজন্ম প্রেমের সুতোয় আমি বাঁধা পরে ছিলাম। তার ফলে যা হয়েছে- আমি আসলে দৈহিকভাবে সেখানে থেকেও হয়ত সেখানে ছিলাম না... ওই সময়ের যে চোখ সে চোখ সত্যিকার অর্থে অন্ধ ছিল বলেই হয়ত আমাকে তাড়িত করতে পারে নাই... 

আপনার মতে কবিতা কী? কবিতা পাঠের প্রয়োজনীয়তা কী?

যে কোন কবিতা, তা কবির এক বিশেষ অভিজ্ঞতালব্ধ মুহূর্তের ফসল; অনুভ‚তি বা অনুভবের ভাষিক রূপায়ন। আমি মনে করি, কবিতা যতটা না বুদ্ধিবৃত্তিক আয়োজন তার চাইতে অনেক বেশি আবেগের অক্ষর, ভাষাবন্দীর খেলা। তবে শুধু আবেগিক প্রযোজনাই কবিতা নয়। কবিতাতে কবি প্রয়োজন অনুযায়ী সংযত আবেগের শৈল্পিক উপস্থাপন করেন। কবিতায় যদি এই নিয়ন্ত্রিত আবেগ সঞ্চালনের সাথে গঠনের সুষম প্রবাহ থাকে তখন তা উৎকৃষ্ট কবিতা হয়ে ওঠে। অর্থাৎ আবেগ ও অনুভবের সাথে চিন্তার যথার্থ শৈল্পিক সজ্জ্যায়নই কবিতা। এ অর্থে কবিতা ব্যক্তিনিষ্ঠ। কিন্তু যথার্থ শিল্পের শক্তি ও সৌন্দর্য এইখানেই যে তা ব্যক্তিগত ভাবের প্রকাশ হলেও হয়ে ওঠে সার্বজনীন। প্রকৃত কবিতার যাত্রা তাই ব্যক্তি থেকে বিশ্বের দিকে। পাঠক যখন কোন কবিতা পাঠ করে তখন সে নিজেও কবিতায় বর্ণিত অনুভ‚তি বা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। সাহিত্য মানুষের আবগেকে জাগিয়ে দেয়। কবিতা এই কাজটা সবচাইতে নিখুঁতরূপে করতে পারে। কবিতা পাঠের সময় পাঠকের সামনে তার নিজের ভেতর লুকানো জগতের প্রকাশ ঘটে যায়। সে নিজেকে আবিষ্কার করে বর্ণিল বিচিত্রতায়, বহুরূপী সময় আর নানামুখী অভিজ্ঞতার সদর দরজায়। নিজেকে এই যে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবিষ্কার আর ভেতরের আবেগের জাগরণ- এটা পাঠককে সুখ দেয়। এই আবিষ্কার আসলে নিজেকে নতুনভাবে সৃষ্টি করা। সৃষ্টির ফলে স্রষ্টার (পাঠক এখানে স্রষ্টার ভূমিকায়) সুখ লাভ হয়।

কবিতায় ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে আপনার চিন্তা জানতে চাচ্ছি।

মানুষের মুখের ভাষা কবিতা নয়। কবিতা নয় সংবাদপত্রের ভাষাও। এগুলো কবিতা হলে কবিতাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রয়োজন বোধ জন্মাত না। কবিতার কিছু লাইন মুখের ভাষার মতোই লাগে। কিছু-কিছু কবিতার লাইন মানুষের  মুখের ভাষার সাথে, চেতনার ভাষার সাথে, বোধের সাথে, অভিজ্ঞতার সাথে, প্রত্যাশার সাথে এতোই মিলে যায় যে, কবিতার ওই লাইনটি প্রবাদে পরিণত হয়। তাহলে মুখের ভাষার সাথে কবিতার ভাষার দূরত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? কিংবা ধরুন, রিকসাওয়ালার কণ্ঠে যখন কবি বলেন, ‘পেডেল মাইরা কি চান্দে যাওন যায়!’ তখনও দার্শনিকতার স্পর্শে সচেতন হয়ে ওঠে মন। সীমাবদ্ধতা ও প্রত্যাশার বিপরীতার্থকতাও ভেসে ওঠে। কিন্তু কথাটি তো নিছক মুখের ভাষা-ই। কিংবা বুদ্ধদেব বসু যখন বলেন, ‘সোনালী আপেল, তুমি কেমন আছ?’ অথবা শক্তি চট্টোপাধ্যায় যখন বলেন, ‘যেতে পারি- কিন্তু কেন যাবো?’ তখন?
তাহলে দেখা যাচ্ছে মুখের ভাষাও তার প্রচলিত অর্থকে ছাপিয়ে বিশেষ অর্থ বহন করতে পারে। তেমনি কবিতার ভাষাও মানুষের মুখের ভাষা হয়ে যেতে পারে। কবিতার বিশেষত্বও এখানেই। একটি শব্দকে সাধারণভাবে উপস্থাপন করলে সে সাধারণ অর্থই প্রকাশ করবে বা আভিধানিক অর্থই প্রকাশ করবে। কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ যদি আভিধানিক অর্থকে অতিক্রম না করতে পারে তাহলে বলতে হবে কবি তার ভাবকে শব্দের নদীর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারেনি। আবার সাধারণ মুখের ভাষাকেও সাধারণ অর্থ থেকে উপরে তুলে তাকে বিশেষ অর্থে অর্থায়িত করা যায়। তখন মুখের ভাষাও হয়ে ওঠে কবিতা। 
এভাবে দেখা যায় চিঠির ভাষাও কবিতা পদবাচ্য হতে পারে। সাধারণ অর্থে  কবিতার ভাষা তো সম্মোহনীয় ভাষা। তাই বলে সম্মোহনীয় স্বর সৃষ্টি করতে হলে শুধুমাত্র যে ঐন্দ্রজালিক পরিবেশ-পরিস্থিতি-ভাষার দ্বারস্থ হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সাধারণের ভেতর থেকেও তুলে আনা যায় বিবিধ গভীরতা।
কবিতার ভাষা এমন এক ভাষা-  ব্যকরণ দিয়ে যাকে সিদ্ধি করানো যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধ বিদ্যা কবিতার ভাষার কাছে প্রায়ই মূর্খ। তাই বলা যায়, কবিতার ভাষা একধরনের অভিনব নিরীক্ষাধর্মী। সম্পূর্ণরূপে যা অন্যরকম, অন্যরকম এর অভ্যন্তর। ফলে কোনোভাবে একবার যে প্রবেশ করবে তার কাছে মনে হবে চলে এসেছি মনোরম মনোহর দিকশূন্যপুরে। ফলে ফিরে আসা যায় না... প্রেমিকার সঙ্গে বুক খোলা  মাঠে শতশত গল্প করার পর ফিরে যাওয়ার মতো নিষ্পলক বিস্ময় নিয়ে ফিরে ফিরে আসার অসীম অঙ্গীকার...

কবিতায় কি গল্প বলা যায় ?

কবিতা মানেই তো স্বল্প কথায় গল্প বলা... 

আগামী দিনে বই প্রকাশের বিষয়ে পরিকল্পনা কী?

আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমার প্রথম এবং এখন অব্দি একমাত্র কবিতার বই ‘অমীমাংসিত ফুলের দেবতা’র পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের পরিকল্পনা আছে।

‘অমীমাংসিত ফুলের দেবতা’ পড়ার পর অনেক পাঠকের মন্তব্য ছিলো, এই কবিতাগুলোতে আমিত্বের প্রকাশ ঘটেছে তুমুলভাবে, বারবার। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?

আমি আমার নিজের মাঝে জগত সংসার দেখতে পাই। ফলে যেটা হয়েছে যে, সকলের কথা বলেও, আমি আমাকেই হয়ত ফুটিয়ে তুলেছি। আমি প্রায়ই একটি কথা বলি, পাঠক যদি কবিতার আয়নায় নিজেকে দেখতে না পায় তাহলে সে কবিতা সুখপাঠ্য হয়ে উঠে না। আমি চাই, কবিতার ভিতরে ঢুকে পাঠক নিজেকে আবিষ্কার করতে শিখুক। তাতে কবির সাথে কবিতার সাথে পাঠকের বন্ধন বেড়ে যাবে।

আপনি তো প্রবন্ধ লিখেন। প্রবন্ধের বই নিয়ে পরিকল্পনা কী? 

এখানে একটু গোপন কথা বলে ফেলি, লিটলম্যাগ বিন্দুর মুল কাণ্ডারী কবি সাম্য রাইয়ান আমার লেখালেখি জগতের দ্বিতীয় ঈশ্বর! ২০১২ সালের আগে আমি যা লিখেছি তা আমার নিজের ভিতরে বসে থাকা আর এক লিংকন আমাকে দিয়ে লিখিয়েছেন...। তবে ২০১২ সালে আমি প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে আসার পর কবি সাম্য রাইয়ান’র সংস্পর্শে আসি এবং ওর উৎসাহে বলেন আর জোরেই বলেন, আমাকে অনেক কবিতা সহ প্রবন্ধের জন্ম দিতে হয়েছে...
বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে আপাতত কাজ করছি (ইতোমধ্যে তিনটি গদ্য বিন্দুতে ছাপা হয়েছে)... ভবিষ্যতে যদি তেমন লিখা হয়ে যায় তাহলে বই আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে বৈকি... 

এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে ‘বোকাচোদা’ সম্বোধন করে। কবিদের মেরুদন্ড, স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?

কে, কারে কী কইলো, এই সব নিয়ে না ভেবে বরং এটা ভাবা উচিৎ “আমারে নিয়ে কেউ একজন ভাবতেছে... এই বা কম পাওনা কীসে! কবি সাম্য রাইয়ান প্রায়ই আমাকে একটা কথা বলে- ‘ভাই, কেউ যদি এক লাইনও কবিতা লিখে, তাহলে সে আমার ভাই।’ এর চেয়ে মহা সত্য বানী এই প্রসঙ্গে আর হয় বলে আমি মনে করি না। কবির চেয়ে সোজা মেরুদণ্ড জগতে আর কারো কি আছে! তবে আমি তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে বলবো, সমস্ত পৃথিবী জ্ঞানের ভান্ডার, যেখান থেকে যা পাবেন, সেটাকে লুটে নিয়ে, আপনার মননে, সৃজনশীলতায়, সৃষ্টিতে ঢেলে দিয়ে আপনার সৃষ্টিকে তথা আপনার প্রেয়সীকে সাজান। সারা পৃথিবী আপনাকে স্যালুট করবে। এইসব দলাদলি- গলাগলি আপনাকে সাময়িক তুষ্টি দিতে পারে, কিন্তু তা আপনাকে ধ্বংস করে দিতে সময় নেবে না। অতএব, সাধু সাবধান!

পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কী হতে চাইবেন?

কবিপত্নী!

আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী?

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আমি আমাকে ভালোবাসতে পারি নাই... 

সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ ‘শিল্প-সাহিত্য’ পত্রিকাকে। শুভকামনা।

শিল্প সাহিত্য ৯৭


রুখসানা কাজল এর সাক্ষাৎকার


গদ্যের খাতাটা  বিশাল একখন্ড জমির মত

জন্ম গোপালগঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তনী। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনার সাথে যুক্ত আছেন। ঢাকায় বসবাসরত।
প্রকাশনাসমূহ
উপন্যাস: তোমার জন্যে মেয়ে, আহা জীবন, কিশোরীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ, আলালদের আনন্দঘর
ছোটগল্প: নুনফলগল্পগুলি, জলের অক্ষর, রুখসানা কাজলের অণুগল্প, যৌথ ছোটগল্প নগরে নতুন খবর।

লেখার শুরুটা কিভাবে

শুরুটা পারিবারিক আবহে। আমি খুব ভাগ্যবান যে পরিবারের বড়দের লেখালিখি  পাঠ অভ্যাসের সাথে সাহিত্য নামের এক বিশাল আশ্রয়কে নিজের করে পেয়েছি।

আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলেন কবে ? 
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে পাঠক হিসেবেই মূল্যায়ণ করি। সর্বগ্রাসী পাঠক। লেখালিখির ধারাবাহিকতা রাখিনি। এটা আমার ইচ্ছে। সবাইকে লিখতেই হবে  ধারণায় আমি বিশ্বাস রাখিনা। তবে যখন লিখি সম্পূর্ণ নিবেদিত হয়েই লিখি। 

কেন গদ্য লেখেন
আমার মনে হয় গদ্যের খাতাটা  বিশাল একখন্ড জমির মতযে জমির উপর মানুষ তার জীবনকে যাপন করে নানাভাবে। এই যাপনে ছন্দ ভাঙ্গা এবং ছন্দিত হয়ে ওঠার বহু রঙিন বিভঙ্গ রয়েছে। আমার কাছে যাপনের এই বিভঙ্গ হচ্ছে গদ্য। আমি স্বচ্ছন্দে সেখানে ঘুরতে পারি। শুনতে শোনাতে পারি। অনায়েসে ছুঁতে পারি। সেভাবেই গদ্যকে ছুঁয়ে লিখে যাচ্ছি। 

প্রেরণার কোন জায়গা আছে কি
প্রতি মূহূর্তে প্রণোদিত হই। কখনও কারো লেখা পড়েকারো মন্তব্য বা সমালোচনা থেকে। আবার দেশের গোষ্ঠীবদ্ধ লেখকদের অনুচ্চার থেকেও আমি লেখার উৎসাহ পাই। 

লেখক বা কবিকে কতটুকু রাজনীতি সচেতন হতে হয়
হতে হয় এবং হয়ও। সেটি সচেতন বা অসচেতন দুভাবেই হতে পারে। কতটুকুতার নির্ণয় লেখক বা কবি নিজেই নির্ধারণ করে থাকেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এর ‘ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ যুদ্ধবিরধী উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু যুদ্ধটা কেন হয়েছিলরাজনৈতিক উচ্চাশার কদর্য চেহারাই  হচ্ছে যুদ্ধ।  উপন্যাসটি কি আমাদের ধারণা দেয় না একটি সময়ে বিশ্বের তা বড় রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা দখলের রাজনীতি সম্পর্কেবিশ্বসাহিত্যের ভান্ডারে এরকম বহু উপন্যাসগল্পকবিতাপ্রবন্ধ রয়েছে।  

 সময়ের কোন কোন লেখকের লেখা গল্প উপন্যাস আপনাকে ভাবায়থমকে দেয়
আমি পড়তে ভালবাসি বলে দেশ এবং বিদেশের অনেকের লেখাই পড়ি। কারো কারো লেখা পড়ে বিস্মিত হই। তাদের চিন্তাশক্তির সাথে সৃষ্টিকর্মের আশ্চর্য সম্মেলন দেখে অবাক হই। 

লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে কিভাবে দেখেন
লেখালিখির জন্য চমৎকার এবং প্রাণবন্ত একটি উন্মুক্ত খাতা।

লেখার সন্তুষ্টি নিয়ে কোন লেখককে কি কখনো থেমে যাওয়া উচিতআপনার মতামত কি?
এটি লেখকের নিজস্ব ইচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অজস্র লিখি না। আমার ভাবনার সাথে মনের মিশ্রণ ঘটলেই তবে আমি লিখি। সারাদিন রাত হাজার হাজার ভাবনা এসে নাড়া দেয়। কিন্তু লেখার জন্য মন চাই। সেই মনের সাড়া না মিললে কেউ যদি থেমে যায়  সে তার সুচিন্তিত ইচ্ছে। সাহিত্য জগতে অস্তিত্ব আছে জানাতে যা কিছু লিখে যাওয়া আমার না পছন্দের।

গল্প বা কবিতার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা বা প্যাটার্ন আছে
খুব জটিল ব্যাপার। আমি কি একটি জানালা বানাতে বসেছি যে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ঠিক রাখতে হবেধরাবাঁধা সংজ্ঞা বা প্যাটার্ণ আমি বুঝতে চাই না। 

আপনার গল্প আপনার সমসাময়িকদের থেকে কোন জায়গাটায় আলাদা বলে আপনি মনে করেন?
আলাদা ? কে জানেআমি জানি আমার লেখায় প্রেম বা রোমান্টিকতার খামতি রয়েছে। 

আপনি কি এক বসায় কবিতা বা কোন ছোট গল্প লেখেননা কি বারবার সংশোধন করেন
আমি বার বার সংশোধনকাটাকুটিতে আনন্দ পাই। একটি শব্দতার মানেব্যবহার খুঁজতে আমি গোটা দুদিন কাটিয়েছি বলে মনে আছে। আবার একটি শব্দ আবিষ্কার করে কি করে শব্দটিকে লেখায় যোগ্যতরভাবে স্থান দেব তা নিয়েও কয়েকদিন ভেবে গেছি।  এমনকি লেখা ছাপার পর নিজের বইয়ের অসংখ্য ভুল ধরে অখাদ্য লেখা হিসেবে স্বসমালোচলাও করি।

বর্তমান সময়ের কবিতা বা গল্পের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতা  দুর্বোধ্যতার অভিযোগ বিষয়ে কিছু বলেন। কবি বা গল্পকারের কি পাঠকের রুচির সাথে আপোষ করে কবিতা লেখা উচিত
গল্প বা কবিতা হবে লেখকের নিজস্ব ভাবনা। আর লেখার রীতিতে লেখক তার নিজস্ব ভাবনাকে আশ্রয় করেই লিখে থাকে বলে জানি। পাঠকরা হচ্ছেন ইচ্ছের ঈশ্বর। ইচ্ছে হলে পড়বেন। লেখক কেবল লেখার দাস হবেন। 

গল্পকার বা কবির স্বাধীনতা তার লেখাকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
স্বাধীনতা শব্দটি খুব আপেক্ষিক এবং প্রকারভেদে বিভক্ত। একজন গল্পকার বা কবির লেখায় কিছুটা হলেও প্রভাব থাকেই। 

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?
আমি মানবতার চরম উৎকর্ষে জীবন যাপন করতে ভালোবাসি। যাপিত পথে মন্দিরগির্জামসজিদ পরিক্রমণ করতে হয়। প্রতিটি ধর্মের প্রতি শুভেচ্ছা রেখে আমি আমার পথে চলতে পারি। এই যে এখন কোরআন শরীফ পড়ছি  মনে কোন দ্বিধা রাখিনি। আতিমারির এই মরণ ছোবলে ভয় পেয়েছি তাই পরমেশ্বর আল্লাহকে ডাকছি। আবার কিছু লিখছি পড়ছি। সাহিত্য  যাপিত জীবনের রেখায়ণ। কোন দ্বন্দ্বে দুলছি না।

এখন কোন বইটা পড়ছেনআপনার প্রিয় লেখক কারা?
আমার অসংখ্য প্রিয় লেখা আছে। লেখার সূত্রে সেই সময়ের জন্যে প্রিয় হয়ে উঠেন সেই লেখক। অলীক মানুষখোয়াবনামাপ্রদোষে প্রাকৃতজন পড়ে একটি লিঙ্ক খুঁজছি তেমনি কবি আবুল হাসান এবং রুদ্র মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহর সাথে জয় গোস্বামী পড়ছি কোন এক আশ্চর্য মিল খুঁজে পাওয়ার জন্যে।


শিল্প সাহিত্য ৯০


পলিয়ার ওয়াহিদ এর সাক্ষাৎকার


সাহিত্য ধর্ম নয় কিন্তু ধর্ম সাহিত্য

পলিয়ার ওয়াহিদ ২৬ ফাল্গুন ১৩৯২ (বাংলা) শুক্রবারযশোরের কেশবপুর উপজেলারঐতিহ্যবাহী পাঁজিয়ার অন্তর্গত পাথরঘাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গোলাম মোস্তফা সরদারমা ছাবিয়া বেগম। পাহাড় ঘেরা সিলেটে ফুলটাইম মিষ্টি কোম্পানিতে ম্যানেজারি আর পার্টটাইম এমসি কলেজে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও ঢাকা কলেজে স্নাতকত্তোর শেষে একটা জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
পৃথিবী পাপের পালকি, সিদ্ধ ধানের ওম, হাওয়া আবৃত্তি, মানুষ হবো আগে, সময়গুলো ঘুমন্ত সিংহের, দোআঁশ মাটির কোকিল


লেখার শুরুটা কিভাবে? আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলেন কবে? কেন কবিতা লেখেন?

পলিয়ার: কীভাবে যে শুরু করেছিলাম! ঠিক কি মনে আছে? তখন বোধহয় ফাইভে পড়ি। পড়শী কোনো মেয়ের উড়ো মনের বার্তা লিপিবন্ধ করতে গিয়ে প্রথমে বোধহয় ‘তোমার ওই মনটা আমি দেখি উড়ো উড়ো’ এভাবে শুরু করেছিলাম। এখনো উড়াউড়ি চলছে। তারপর মন আর পড়শীতে আটকে থাকেনি। সে উড়ে গেছে দূরে। সুরে সুরে অন্য শহরে। সীমানা পেরিয়ে ভিন্ন কোনো দেশে।
তারপর কপোতাক্ষের পানি গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে অনেক। আমিও গড়াগড়ি করেছি বুড়িভদ্রায় স্মৃতির অন্তরে অন্তরে ভৈরবের স্রোতে মিশে হাজির হয়েছি কুশিয়ারা আর সুরমার ঢেউয়ে। হয়তো উত্তেজনার পারদে আর আবেগের মহামারিতে তখন লিখেছি ঘরপালানো অক্ষর। পাউরুটি আর মিষ্টির দোকানে চাকরি করতে করতে শেষ করেছি বিএসসি অনার্স। কিন্তু আমি কখনো সিরিয়াস হইনি। অথচ জীবনজুড়ে আমার সিরিয়াসনেসের অভাব নেই! তবে সিরিয়াসলি শুরু করেছি ঢাকায় এসে সাংবাদপত্রে কাজ নেয়ার পর। ২০১০ সালে।
আর কবিতা কেন লিখি তার উত্তর অনেক লম্বা। যে কারণে মৌমাছি মধু আহরণ করে সে কারণে আমি লিখি। যে কারণে মাকড়শা জাল বোনে সে কারণে আমি লিখি। লিখি কারণে ও অকারণে। একটা সময় মনে হল, কবিতা লেখা ছাড়া আমি বোধহয় আর কিছু পারি না। আমার পিঠে যে দুটি ডানা গজানো হয়েছে সেখানে সবসময় স্বপ্নোরা উড়োউড়ি করে আর বলাবলি করে যে, তুই অক্ষম! সম্ভাবত অক্ষমদের কাজ-ই শব্দ আর ভাষা দিয়ে সক্ষমতার প্রমাণ মেলানো। কবিতা মানে স্বপ্নো। বিষ পান করে মধু বিতরণের যে স্বপ্নো সবাই দেখতে পারে না তাদের ‘না পারার’ স্বপ্নই আমার কবিতা লেখার কারণ। নিজের পলায়ন জীবনের প্রকাশ হচ্ছে কবিতা। 

এ সময়ের কোন কোন কবির কবিতা আপনাকে ভাবায়, থমকে দেয় ?
পলিয়ার: ‘এ সময়’ বলতে আসলে কোন সময়? ঠিক বুঝতে পারিনি। মাইকেল, রবীন্দ্র-নজরুল, জীবনানন্দ, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, বিনয় মজুমদার, আবুল হাসান, ফরহাদ মজহার, আবদুল মান্নান সৈয়দ, হেলাল হাফিজ, ময়ুখ চৌধুরী, রুদ্র, জয় গোস্বামী, নূরুল হক, মজিদ মাহমুদ, হয়ে সরকার আমিন, মুজিব ইরম, নয়ন আহমেদ, আলফ্রেড খোকন, মুহাম্মদ ইমদাদ, পাবলো শাহী, এনামূল হক পলাশ, জাহানারা-জুয়েল-ইমতিয়াজ-ফেরদৌস-নির্ঝর-বিজয় তারপর চলমান সময়ের নকিব মুকশি, হাসান রোবায়েত, সাইয়েদ জামিল, মাসুম মুনওয়ার, হিজল জোবায়ের, মোহাম্মদ জসিম, চঞ্চল বাশার, তাসনুভা অরিণ, শামীম আরেফিন, কবির কল্লোল, জিয়াবুল ইবন, হোসেন রওশন ভালো লাগে।
এ সময়ের বলতে হয়তো আমাদের সময়ের বুঝিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের সময় নিয়ে এখনো অপেক্ষা করতে হবে। কবিতার বর্তমান বড় নির্মম। ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত তবে সঠিক।

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়? 
পলিয়ার: সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাস বলতে আপনি বোধহয় সাহিত্যের ধর্ম আর বিশ্বাসের ধর্মের কথা বলেছেন। খুবই সুন্দর প্রশ্ন। সাহিত্যের ধর্ম সত্য, সুন্দর, আনন্দ। ধর্মেরও তাই। ফলে দুজায়গাতেই সৎ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার বিশ্বাস। আর সাহিত্য ও ধর্মের পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব হল, সাহিত্য ধর্ম নয় কিন্তু ধর্ম সাহিত্য। 

লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ওয়েবম্যাগগুলোকে কিভাবে দেখেন ? 
পলিয়ার: কার হাত দিয়ে লেখা প্রকাশ হচ্ছে এটাই বড় কথা। কোথায় প্রকাশ হচ্ছে এটা মোটেও গুণতির বিষয় নয়। সম্পাদক গুণী হলে যে কোনো প্রকাশ মাধ্যম-ই ভালো। আর যোগ্য সম্পাদক না হলে ওয়েবম্যাগ বলেন আর কাগজ বলেন সবই সময় নষ্ট। ভালো লেখা চিনতে হলে পড়–য়া যোগ্য সম্পাদক প্রয়োজন। ওয়েবম্যাগ আছে অনেক। লেখকরাই বা নাম জানে ক’টার? ‘মেঘচিল’কে রুচিশীল লাগে। পরস্পর, চিন্তাসূত্র, তীরন্দাজ গতানুগতিক। ‘শিরিষের ডালপালা’ আর ‘লাল জীপের ডাইরী’ কার্যত বন্ধ।  
লেখার সন্তুষ্টি নিয়ে কোন লেখককে কি কখনো থেমে যাওয়া উচিত? আপনার মতামত কি? 
পলিয়ার: প্রশ্ন-ই ওঠে না। লেখকের সন্তুষ্টির দরোজা চিরকাল বন্ধ। জোর করে তাকে খুলতে গেলে এমনি এমনি লেখার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পীকে জানতে হয় কোথায় থামতে হবে?
আপনার কবিতা আপনার সমসাময়িকদের থেকে কোন জায়গাটায় আলাদা বলে আপনি মনে করেন?
পলিয়ার: এটা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন। কিংবা সমালোচকরা। নিজের কবিতা অন্যেদের থেকে যেভাবে আমাকে আলাদা করে বলে বোধ করি তা হল, রোমান্টিসিজম ও ন্যাচারালিজম। সাথে সাথে আমি রিয়েলিজম তথা ম্যাজিক রিয়ালিজম ও সুররিয়ালিজম দ্বারা প্রভাবিত। শহরে থেকেও আমি মোটেও নাগরিক নই। ভাষায় ও শব্দে আমি প্রাকৃতিক কিন্তু বিশ্বাস ও চিন্তায় ভাববাদী। যুক্তিতে আমি মুক্তি খুঁজতে রাজি নই। মগজের চেয়ে আমার কাছে মনের দাম বেশি। ফলে সময়ই কাব্যের প্রকৃত নায়ক। সত্য, সুন্দর ও সাহসের সমাচারে আমি সমকালীন ও দ্বা›িদ্বক বস্তুবাদী। এসব মসলার মিশেলে যে শরবত হয় তার স্বাদ অন্যদের থেকে আমার কবিতা আলাদা করে রাখবে হয়তো সহজে।

আপনার কবিতা লেখার কৌশল মানে আপনি কি এক বসায় কবিতা লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন? কোন নির্দিষ্ট সময় আছে কবিতা লেখার?
পলিয়ার: আমি এক বসায় কবিতা লিখি। তবে কিছু দিন রেখে দিই। পরে বার বার ঘষামাজা করি। হাতে ছুরি থাকলে কার না অকারণে বৃক্ষের মুন্ডুপাত করতে আনন্দ লাগে! 
না আমার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই কবিতা লেখার। আমি চলন্ত অবস্থায় লিখি। গতিতে থাকলে আমার লেখা বেশি ধরা দেয়। গ্যাঞ্জাম ও গেদারিংয়ে আমি ভালো লিখতে পারি। তার মানে ভিড়ে আমি একাকী ও নীড়ে সঙ্গীন হতে পারি। মজার বিষয় হল, টিস্যুপেপার, সিগারেটের কাগজ, যে কোনো গাছের পাতায়, স্মৃতির মাথায় বা রাস্তায় পাওয়া ময়লা কাগজেই আমার সবচেয়ে বেশি লেখা হয়েছে কবিতা। এবং তা কয়েক মুহূর্তে। সেজেগুজে লিখতে পারি না, লেখা আমাকে সাজিয়ে তোলে।

বর্তমান সময়ের কবিতার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতা ও দুর্বোধ্যতার অভিযোগ আছে। আমার মনে হয় অপাঠকের পরিমাণ বেশি। আপনি কি মনে করেন? 
পলিয়ার: কবিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বলেই কবিতা অভিমানী। মুড়ির চেয়ে সন্দেশে মানুষের লোভ বেশি। তাই অভিযোগও বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। জনবিচ্ছিন্নতা ও দুর্বোধ্যতার যে শ্লোক পাঠক বলে তা কি শুধু কবির একার দোষ? জীবন জটিল হলে কবিতাও জটিল হবে এটাই নিয়ম। অভাব বা প্রয়োজন না থাকলে আবিষ্কার হবে কীভাবে? অপাঠক বলে আসলে কিছু হয় না। অপাঠক বললে পাঠকেই ছোট করা হয়। অমানুষ লিখতে গেলে যেভাবে অ-এর পর মানুষ লিখতে হয় তেমনি ‘কবিতার’ আগে ‘কবি’ লিখতে হয়। ফলে কবির জীবন যখন কঠিন হয়ে ওঠে তখন সে আর সহজ কবিতা কীভাবে লিখবেন? সহজের সাধনা যে দিন দিন দীন হয়ে যাচ্ছে। সেভাবে লীন হয়ে যাচ্ছে সরলতা। তবে জটিলকে সহজ করাও কিন্তু শিল্পীর কাজ। এমনটি বিশ্বাস করি আমি।
যা মানুষের বোধগম্য নয় তা কখনো শিল্প হতে পারে না। শিল্পীর কারবার-ই তো মানুষ। তাই মানুষকে বোঝানোর দায় তার উপর বর্তায়। এ ক্ষেত্রে আমি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে পারি বাংলাদেশের প্রখ্যাত দুই চিত্রকরকে। জয়নুল আবেদীন ও এস এম সুলতান। তাদের ছবি বোঝেন না এমন মানুষ আপনি আমাকে দেখাতে পারবেন না।  তবে হ্যাঁ এক চাটিয়া চিত্রকলার উদহারণ দিয়ে কবিতাকে সহজ করার উকালতি আমি করছি না। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কোন কবিতাটি সাধারণ মানুষ বোঝেনি? বরং সাধারণ পাঠক বা একটু অসাধারণ পাঠক যাই বলি না কেন সবাই যখন বোঝে তখনই সেটা অমর হয়ে ওঠে।

বর্তমানে পুরস্কারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে প্রকৃত লেখকের পুরষ্কার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পুরস্কার কি লেখকের স্বাধীনতাকে খর্ব করে, না করে না?
পলিয়ার: পুরস্কারের বিপরীত শব্দ তিরস্কার। ফলে এটা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া মামুলি ব্যাপার। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন কোনো লেখক কি পুরস্কার পাওয়ার জন্য লিখতে আসছে? আসেনি। লেখার পর তিনি কিছু সম্মান পান। তো সম্মান আপনাকে কারা দিচ্ছে? এটা একটা বড় ব্যাপার। যিনি লেখক পুরস্কার পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তার কোনো হেডেক নেই।

কবি বা লেখককে কতটুকু রাজনীতি সচেতন হতে হয়?
পলিয়ার: মানুষের প্রতিটি সংগ্রাম ও লড়াই রাজনীতির অংশ। এখন এই লড়াই সংগ্রামকে আপনি কোন পাল্লায় ওজন করছেন সেটা বিবেচ্য। আপনি যদি ভালো করে নজরুল আর জীবনানন্দ দাশের দিকে তাকান। তাহলে দেখতে পাবেন দুজন স্বতন্ত্র্য শিল্পী। আপতভাবে মনে হবে নজরুল রাজনীতি সচেতন। একই সঙ্গে বিদ্রোহী ও প্রেমিক। গান ও শব্দে মুখর। অন্যদিকে জীবনানন্দ ঐতিহ্য ও ইতিহাস সচেতন। বিরহী ও প্রেমিক। ভাব ও ভবে নিরব। তাহলে কী তাদের মূল পার্থক্য দ্রোহে ও প্রতিবাদে? ইতিহাসে কি রাজনীতি থাকে না? একই সালে জন্ম নিয়েও দুজন সমানভাবে আলাদা। নজরুলকে বুঝতে হলে যেমন নৃ বিজ্ঞানের সাব অল্টার্ন পাঠ করতে হবে। তেমনি জীবনানন্দকে বুঝতে হলে ইতিহাসের রাজনীতি বুঝতে হবে। নজরুল ধর্মের গর্ব (ইসলাম-সনাতন) ও মার্কসীয় দর্শন সমানভাবে কাজে লাগিয়েছেন। শহীদ কাদরী বলেছেন, নজরুল আমাদের নেরুদা। আমি বলল, জীবনানন্দ আমাদের এলিয়ট। কিন্তু তারা দুজনই রাজনীতি সচেতন ছিলেন। শিল্পী মাত্রই প্রতিবাদী স্বভাবের সন্তান। বীজে তাদের দ্রোহের গান আঁকা থাকে। কিন্তু পাতা ফুল ফল হতে হতে তারা আলাদা হয়ে যান। কেউ শিউলী তো কেউ গন্ধরাজ। ফুল হলেও তারা বৃক্ষের জাত। 

এখন কোন কি বই পড়ছেন?
পলিয়ার: এক সঙ্গে আমি একাধিক বই পড়ি। হোসেনউদ্দীন হোসেনের ‘বাঙলার বিদ্রোহ’, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’ ও মোজাফফর হোসেনের ‘বিশ্বগল্পের বহুমাত্রিক পাঠ’ পড়তেছি। সাথে জাহানারা পারভীনের কবিতা ও সরকার মাসুদের গল্পও পড়ছি। 

আপনার প্রিয় লেখক কারা?
পলিয়ার: প্রিয় লেখক তো অনেক। দেশের কবিদের নাম তো বলেছি উপরে। এবার বিদেশি বলি। জালালউদ্দিন রুমি, মির্জা গালিব, আল্লামা ইকবাল, কাহলির জিবরান, মাহমুদ দারবিশ, এজরা পাউন্ড, টি এস এলিয়ট, ডব্লিউ বি ইয়েটস, এডগার এলান পো, চিনুয়া আচেবে, পাবলো নেরুদা, শেলি, কিটস, নাজিম হিকতম, গুন্টার গ্রাসসহ আরো অনেকে। গল্পকার: মোপাঁসা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এ্যান্থন চেখভ, ফ্রানৎস কাফকা, প্রেমেন্দ্র মিত্র, রশীদ করীম, আল মাহমুদ, হুমায়ূন আহমেদ, শহীদুল জহির, আশান উজ জামান। উপন্যাসিক: লিও তলস্তয়, ভিক্টর হুগো, হেমিংওয়ে, জেমস জয়েস, সতীনাথ ভাঁদুরী, পাওলো কোয়েলহো, মানিক-বিভ‚তি-তারা।  

আগামীতে কোন বই বের করছেন?
পলিয়ার: এখনো ভাবিনি। তবে ‘না’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শিল্প সাহিত্য ৭৫
সাম্য রাইয়ান এর সাক্ষাৎকার

জন্ম ৩০ ডিসেম্বর
জন্ম ও বেড়ে ওঠা: বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। সম্পাদনা: লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’ (bindu.bangmoy.com)
প্রকাশিত পুস্তিকা:
সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট (গদ্য), বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা (কবিতা), মার্কস যদি জানতেন (কবিতা), হলুদ পাহাড় (কবিতা)।

করোনাকালীন এই সময়ে কেমন আছেন?
ভালো নেই। নিজেকে এখন সার্কাসের ক্লাউন মনে হয়। ভালো থাকার ন্যূনতম আয়োজন এদেশে নেই। জীবন নিয়ে এখানে চলে রাষ্ট্রীয় সার্কাস, যা বন্ধ হওয়া দরকার।
লেখার শুরুটা কিভাবে ?
এলেবেলে লিখতে লিখতেই শুরু। কবে, কীভাবে তা আজ আর মনে নেই। তবে এক দিনের কথা মনে পড়ে, সম্ভবত ২০০৫ এর কোনো এক বিকেল, রাশেদুন্নবী সবুজ আমায় ডেকে বললেন, “তুই তো লিখতে পারিস, এক কাজ কর, ‘স্বাধীনতা তুমি’ নামে একটা কবিতা লিখে দে- একটা প্রতিযোগিতার জন্য।” তো আমি সেদিন ওটি লিখেছিলাম, যদিও শেষপর্যন্ত প্রতিযোগীতায় পাঠানোর তারিখ বেমালুম ভুলে যাওয়ায় আর পাঠানো হয়নি। সম্ভবত ওইই প্রথম, কবিতা লিখবো মনস্থির করে লিখতে বসেছিলাম। এখানে একটি কথা বলে রাখি, ২০১২ পর্যন্ত আমার প্রায় সকল লেখাই আমি ফেলে দিয়েছি।
লিটল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম, আপনার মতে?
দুইটি ভিন্ন মাধ্যম। একটির সাথে অপরটির তুলনা চলে না।
এই সময়ের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা পড়েন সমসাময়িক কবিদের?
এমনিতে বই তো পড়িই। তাছাড়া, ‘বিন্দু’ সম্পাদনার সুবাদে প্রচুর নতুন লেখা পড়া হয়। পত্র-পত্রিকায় দুই ধরনের ‘জিনিশ’ কবিতা নামে প্রকাশিত হয়, এক হলো: যা কবিতা, দুই হলো: যেগুলো তা নয়। আমি সবই পড়ি, যা নজরে পড়ে যায়। এই সময়ে প্রচুর ভালো কবিতা লেখা হচ্ছে। এখনকার অনেক কবির কবিতাই আমি পড়তে পছন্দ করি।
কবির সাথে অকবির তফাৎ কতোটুকু?
প্রেমিকার সাথে গণিকার তফাৎ যতোটুকু
পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কী হতে চাইবেন?
‘কোয়ালা’ হতে চাইবো। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাণীটি তার জীবনের ৯৯% সময় খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটায়। ১% সময় সে তার জীবনসঙ্গী খোঁজে। খোঁজার জন্য খুব একটা কিছু ব্যতিব্যস্ত যে সে হয়, তাও নয়। কোনো সঙ্গী না জুটলে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
কবি মাত্রই দার্শনিক, কিন্তু দার্শনিক মাত্রই কবি না।
কবির স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?
কবির জন্য অতিরিক্ত কোনো স্বাধীনতার দাবি আমি করি না। মানুষের বেঁচে থাকবার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক স্বাধীনতা থাকলেই হলো।
এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কেন?
এখন তো কোনো পার্থক্য নজরে আসছে না। উভয়ই কলকাতার মান ভাষায় লিখছে। তবে পার্থক্য নজরে আসতো, যদি বাঙলাদেশের জেলায় জেলায় যে ভাষা বৈচিত্র্য, তা এদেশের কবিতায়- সাহিত্যে দৃশ্যমান হতো। 
সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?
ধর্ম নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
কবিতায় ছন্দের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
ছন্দ ছাড়া গাছে ফুল ফোটে না, বৃষ্টি ঝরে না। এমনকি শিশুর প্রথম কান্নাও ছন্দ ছাড়া নয়। জীবন ও জীবনহীনতার প্রতিটি সত্যবিন্দুতে রয়েছে ছন্দ। আর এই সব কিছু নিয়েই তো কবিতা
পুরস্কার একজন লেখকের জন্য প্রয়োজনীয়?
পুরস্কারের ক্রেস্ট, মেডেল লেখকের কোনও প্রয়োজনই নেই। কিন্তু টাকাটা খুবই প্রয়োজন।
‘চোখের ভেতরে হামিংবার্ড’ আপনার এ বছর প্রকাশিত কবিতার বই। এটিকে আপনি প্রথম বই বলছেন, তাহলে ‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’ বা ‘মার্কস যদি জানতেন’ এগুলোকে কি আপনি অস্বীকার করছেন?
নাহ্, অস্বীকার করবো কেন? হামিংবার্ডের ফ্ল্যাপে সবগুলোর নাম উল্লেখ করেছি তো। ফেব্রæয়ারি মাসে কিছু সংবাদপত্র যখন বইটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলো তখন আমি এ বিষয়ে বলেছিলাম। আবারও বলছি, বাকিগুলো ছিলো পুস্তিকা, এক থেকে দুই ফর্মার চটি। যেমন আমার প্রথম প্রকাশিত পুস্তিকা ‘সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট’ এক ফর্মার গদ্য সুবিমল মিশ্রকে নিয়ে, তারপর তিনটি কবিতার পুস্তিকা যথাক্রমে ‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’, ‘মার্কস যদি জানতেন’, ‘হলুদ পাহাড়’। এরপর চার ফর্মার বোর্ড বাঁধাই করে একদম বইয়ের রূপ দিয়ে প্রকাশিত হলো ‘চোখের ভেতরে হামিংবার্ড’।
বইটি প্রকাশের পর পাঠকদের সাড়া কেমন পেলেন? প্রকাশক নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়েছিলো কি?
আমি লিটলম্যাগের বাইরে আজ পর্যন্ত কোথাও লিখিনি। ফলে জনপ্রিয় হবার তরিকার বাইরে আমার অবস্থান। আর আমি বেসিক্যালি মূর্খ লোক। আমার মতো একজন লেখকের যে সামান্য কিছু কবিতা, গদ্য যে লোকে পয়সা খরচ করে কিনে পড়ে এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া। আমি জানি, এঁরা সব সচেতন পাঠক। কেননা, সচেতন পাঠক ব্যতিত কেউ লিটলম্যাগ পড়ে না।
হামিংবার্ড ব্যতীত সবগুলো পুস্তিকাই আমি নিজে ছেপেছি এবং নিজেই বিক্রি করেছি, ফলে পাঠকের সাথে সরাসরি আমার যোগাযোগ হয়েছে, পরিস্থিতিটা নিজে দেখেছি। ‘মার্কস যদি জানতেন’ পুস্তিকাটি তো আমি সম্পূর্ণ পাঠকের পয়সায় ছেপেছিলাম, পাঠক অগ্রিম টাকা দিয়েছিলো প্রকাশের জন্য। আসলে এর মধ্য দিয়ে নিজেকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার ঘাসফুল প্রকাশনীর মাহাদী আনাম নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু করেছেন। বিক্রিতেও আমার তেমন হাত ছিলো না। ফলে সরাসরি ব্যাপারটা দেখার সুযোগ এবার হয়নি আমার। কিন্তু অনেকে ফেসবুকে, ওয়েবসাইটে বইটি নিয়ে কথা বলেছেন, আলোচনা লিখেছেন, সেগুলো পড়েছি। আমি এ ভেবেই পুলকিত যে লোকে পয়সা খরচ করে এ বই কিনেছেন, পড়েছেন এবং এ নিয়ে কথাও বলছেন।
কোন কোন লিটলম্যাগে আপনি লেখা প্রকাশ করেন?
শিরদাঁড়া, প্রতিশিল্প, চালচিত্র, দ্রষ্টব্য, বিরাঙ, বয়ান, তৃতীয় চোখ, শাঁখ, ফেস্টুন, দেশলাই, উত্তরা এক্সপ্রেস, খনন, হারপুন, যদিও উত্তরমেঘ, ন্যাপথলিন, অবগুণ্ঠন, বাঘের বাচ্চা, এরকম আরও অনেক লিটলম্যাগে বিভিন্ন সময়ে লিখেছি এবং এখনও এর কোনো কোনটিতে লিখি, তবে গত প্রায় সাত/আট বছর থেকে বিন্দু, জঙশন, ওয়াকিং ডিসট্যান্স আর চারবাকেই নিয়মিত লিখছি।
লিটলম্যাগ ব্যতীত কোথাও লেখা প্রকাশ না করবার কারণ কী?
লিটলম্যাগই সাহিত্য প্রকাশের ঠিক জায়গা বলে আমি মনে করি। অন্য জায়গার কথা বলতে গেলে প্রধানত সংবাদত্রের দিকে আঙুল ওঠে। আমি সাহিত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ঐসবকে অপাত্র মনে করি। অপাত্রে লেখা দান করতে চাই না। সংবাদপত্র সংবাদ প্রকাশ করবে ঠিকমতো, সেটাই তার কাজ। সাহিত্য প্রকাশ করা তার কাজ নয়।
আপনি ২০০৬ থেকে লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’ সম্পাদনা করছেন। কিছুদিন আগে ওয়েবসাইটও হয়েছে বিন্দুর। এত বছর ধরে কেন প্রকাশ করছেন?
আমি বিন্দুর সম্পাদক হলেও বিন্দু আমার একার কাগজ নয়, আমাদের কাগজ, এর সাথে অনেকেই যুক্ত। সকলে মিলে আমরা এটি প্রকাশ করি। প্রথমে বিন্দু যে উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেছিলাম তা হলো, আমাদের লিখবার কোনো জায়গা ছিলো না। তাই একটা জায়গা দরকার ছিলো। এত বছর পরে এসেও মনে হয়, আজও কি আছে তেমন জায়গা, যেখানে আমরা হাত খুলে লিখতে পারি? বিন্দুর প্রয়োজনীয়তা আজও রয়েছে এজন্যই যে, আমরা আমাদের লেখাগুলো কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য যে কোনো শক্তির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই এখানে প্রকাশ করতে পারি। এখানে বলে রাখি, দিন দিন লেখক ও পাঠক উভয় দিক থেকেই পরিসর বাড়ছে, যা প্রমাণ করে বিন্দু প্রকাশ জরুরী। আর ওয়েবসাইট (নরহফঁ.নধহমসড়ু.পড়স) আরও আগেই দরকার ছিলো, নানা সীমাবদ্ধতায় তা করা হয়ে উঠেনি। ২০১৯ এর ২৬ মার্চ তা সম্ভব হলো। এতে আরও অধিক লেখা প্রকাশের এবং পাঠকের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ হলো।
সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ‘শিল্প-সাহিত্য’ পত্রিকাকে। শুভকামনা।

শিল্প সাহিত্য ৬৩
রওশন রুবী এর সাক্ষাৎকার





কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক।
বিএসএস সম্পন্ন করে এখন যুক্ত আছেন শিক্ষকতায়।
প্রকাশিত গ্রন্থ: ৫টি কাব্যগ্রন্থ, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৩টি উপন্যাস, ১টি কিশোর গল্পগ্রন্থ।
সম্পাদিত পত্রিকা: প্রগতি ও স্বপ্নীল অনুভব
স¤পৃক্ত আছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে।

লেখার শুরুটা কিভাবে ? 
নিজেকে আবিষ্কার করার মধ্য দিয়ে লেখার শুরু। মানে যখন নিজেকে চিনতে শুরু করলাম। তখন কাউকে বুঝতে দিতে চাইনি আমাকে। আর এই গোপন করার কৌশলের জন্য শব্দের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে আমাকে। শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে লেখাটা শুরু। পরে অবশ্য মানুষ এবং প্রকৃতি নিয়ে কাজ করবার চেষ্টা করছি। শব্দ প্রকৃত বন্ধু আমার, “সব বুঝে, সব বলে এবং আগলে রাখে।”

আর সিরিয়াসলি কবে লিখতে শুরু করা?
আমি সব সময় খেয়ালি। আমার সমস্ত স্বতন্ত্র তন্ত্র জুড়ে কেউ গেয়ে ওঠে, আমি গাই। কেউ শব্দের সীমান্ত খুলে দেয় আমি ভেসে যাই। তবে জানি, কোন কিছু অপূর্ণতা, ভাঙা-চোরা পরিতৃপ্ত আনে না। তাই প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা চলে। ভেঙে গড়ি আর গড়ে ভাঙি। তারপর হয়তো কখনো মননের ভেতরের ঝড় থামে। কখনো থামেই না। আমি অবলোকন করি ভিন্ন এক মনোরম প্রকৃতি। একটা ঘোর। ঘোর ছাড়া কিছু কি হয়েছে কখনো? সব জন্মই ঘোরের ফসল।

কেন কবিতা লেখেন? প্রেরণার কোন জায়গা আছে কি?
বেঁচে থাকার জন্য, ভুলে থাকার জন্য আর প্রতিবাদের মাস্তুলে ধাবমান হাওয়াকে আয়ত্ব করার জন্য লিখি। প্রত্যেকের প্রেরণার একটা জায়গা থাকে। নিরেট সত্য হলো আমার প্রেরণার কোন জায়গা নেই। মানুষের দেয়া নিকৃষ্ট আচরণ আমার প্রেরণা। আর সব শেষে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিয়ে আমার মধ্যে আমাকে খুঁজে পাওয়ার নাম প্রেরণা।

কবি বা লেখেককে কতটুকু রাজনীতি সচেতন হতে হয়?
কবি বা লেখককে সর্বেসর্বা হতে হয়। যে যত জানবে এবং সচেতন হবে তার লেখা ততই মেধহীন, সরস, ভাবপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ হবে। যা পাঠক মনকে নৃত্যকলার মতো আচ্ছন্ন করে রাখবে। সংগীতের মতো মুগ্ধ করে রাখবে।

লেখার সন্তুষ্টি নিয়ে কোন লেখককে কি কখনো থেমে যাওয়া উচিত? আপনার মতামত কি?
প্রকৃত লেখকের জীবনকাল সন্তুষ্টি আসে না। তাই থেমে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। লেখা স্রষ্টার দান, প্রকৃতরা চর্চায় থাকেন।

কবিতার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা বা প্যাটার্ন আছে?
অবশ্যই আছে। আমরা জানি পুঁথিবদ্ধ ভাবে কবিতার তিনটি ছন্দ আছে স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত। এছাড়াও কবিতা মুক্তকছন্দ এবং গদ্যছন্দে লেখা হয়। কবিতা হলো শব্দ, ছন্দ, ভাব, ভাষা, চিত্রকল্প ভাবকল্প, রূপকের সমন্ময়ে গঠিত শিল্পোত্তীর্ণ মুগ্ধ এবং সুগন্ধী এক অধ্যায়, যেখানে দর্শন, রসায়ন, বিজ্ঞান, তত্ত¡বিদ্যা, তথ্য প্রভৃতি বিষয়ের অবস্থা বুঝে উপনীত হবে। তখন পাঠে কবিতা পাঠ শেষে কবিতার নির্যাস বিমুগ্ধ হবে। যা তার বোধকে জাগ্রত করে ভাবনাকে প্রসারিত করবে। কবিতার সবটা পড়তে পারে সবাই কিন্তু বুঝা পারে না। এটা ধীরে ধীরে আবিষ্কার করতে হয়।

এখন কোন বইটা পড়ছেন?
ভি.এস.নাইপল এর ‘এ হাউজ ফর মিঃ বিশ্বাস’( ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী উপন্যাস)। শেক্সপিয়র থেকে কীটস, রবার্ট ফ্রস্ট থেকে ইলিয়ট (কালাতীত ইংরেজি কবিতার অনুবাদ সংকলন)। সিকদার আমিনুল হক এর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ পড়ছি।

এ সময়ের কোন কোন কবির কবিতা আপনাকে ভাবায়, থমকে দেয় ?
এটা বলা মুসকিল। অনেকর কবিতা ভাবায়, থমকে দেয় না। অনেকে আছেন লিখছেন, তবে ভাবনা সুদূর প্রসারি নয়। চিত্রকল্প আর ভাবকল্পে ফাঁটল। কিছু একটা জোড়াতালি দিয়ে ভীষণ পরিতৃপ্ত। কবিতার শুরু থেকে শেষ ভাবগত যেমন একটা মিল আছে। তেমনি তার শব্দে সুর লয় তালেও আছেন। শব্দ নিয়ে যিনি যত খেলবেন তিনি তত পাকা খেলোয়ার হয়ে উঠবেন। এখন দেখি কবিরা আত্ম-প্রসারে নিমগ্ন থাকেন। আত্ম-প্রসারের চেয়ে কবিদের কর্তব্য আত্মমগ্ন হয়ে কবিতাকে দাঁড় করানো। কবিতা তো শুধু শব্দের সাম্পান নয়। এ এক সত্তার আলোকপ্রবাহ। এই প্রবাহকে ধারণ করতে হবে। সৃষ্টি আর স্রষ্টাকে সবাই ধারণ করতে পারে না। ধারণ করতে পারে না বলেই বিপত্তি থেকে যায়। এর জন্য আত্ম-অহংকার দায়ী। তবু যদি বলতেই হয় তবে বলব এ সময়ের কবিদের মধ্যে যাদের কবিতায় প্রচুর দর্শন শিল্পোত্তীর্ণ চিত্রকল্প থাকে। যা ভিন্ন একটা আবেস সৃষ্টি করে। সেই সুদক্ষ শব্দচাষাদের কবিতাই ভাবায়। তবে থমকে দেয় না।

আপনার কবিতা আপনার সমসাময়িকদের থেকে কোন জায়গাটায় আলাদা বলে আপনি মনে করেন?
এ বিষয়ে বলব, “যে কথা পাঠক এবং বিশ্লেষকগণ বলবেন। সে কথা আমার না বলাই ভালো।” তবে আমার মনে হয় এখনো শুরুই করতে পারিনি। কবিতা বাতাসের মতো হাল্কা কিছু নয়। সে রহস্যেও সৌরজগত। যাকে আয়ত্তে¡র বিদ্যে রপ্ত করতে হয় ধ্যানমগ্ন হয়ে। যা পেরে উঠিনি।

লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে  ফেসবুককে কিভাবে দেখেন ?
মন্দ কী? যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষ। চলুক।

আপনি কি এক বসায় কবিতা লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন?
কিছু কিছু গতি নিয়ে আসে। তাকে রোধ করার করো শক্তি নেই। বেশির ভাগই বহুবার বহুরূপে সংশোধিত। অনেক সময় দেখি প্রথমে প্যাটানটিই নেই। কত কত প্রিয় বাক্য, বাক্যাংশ ফেলে দিয়ে নতুনকে আঁকড়ে নিতে হয়।

বর্তমান  সময়ের  কবিতার  বিরুদ্ধে  জনবিচ্ছিন্নতা  ও দুর্বোধ্যতার  অভিযোগ  বিষয়ে  কিছু  বলেন। কবি  কি পাঠকের  রুচির  সাথে  আপোষ করে  কবিতা  লেখা উচিত?
বর্তমান সময়ের কবিরা দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছেন এটা ঠিক। এতে করে তারা পাঠক থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেনও। কবিতার সহজলভ্যতা হৃদয়কে আন্দোলিত করে। মনন এবং মস্তিষ্ককে ভাবনায় জড়িয়ে রাখে। নতুন স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ করে। সহজে যা হৃদয় দোলায় তাকে কাঠিন্যে কেন জাড়ানো? কবিতা হবে মেঘের চেয়ে পেলব, শুভ্রতার চেয়ে স্নিগ্ধ, সমুদ্রের হাওয়ার চেয়ে প্রশান্তিময়, আগ্নেগিরির চেয়ে দীপ্ত, তলোয়ারের চেয়ে তীক্ষ্ন দুলদুলের চেয়ে চপল, ঝর্ণার চেয়ে মোহময়, আসলে কবিতা হবে নিসর্গের অনন্য ব্যঞ্জকে তৈরি ব্যাঞ্জন। যা অমর অমৃত। এর জন্য একজন কবিকে হতে হবে সাধক। সাধনায় জানতে চেষ্টা করবেন তাবত বিষয়। পড়তে হবে অধিক। পড়ার বিকল্প নেই। অনুভবে অন্যকে নিজের ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে অন্যের ভেতর। নিজ ধমনির রক্ত বিন্দু চলাচলের গতিবিধি নখদর্পনে থাকতে হবে। সর্বোপরি শব্দ ভান্ডার থাকতে হবে অপরিসীম। একজন কবি সব সময় পাঠকের রুচির উপর নির্ভর বা আপোষ করে কবিতা লিখতে পারবেন না। তবে তিনি পাঠকের কথা ভাববেন এবং চেষ্টা করবেন তাদের জন্য। তিনি যত জ্ঞানার্জন করবেন ততই তিনি আবিস্কার করতে পারবেন পাঠকের মন এবং জয় করবেন অসাধ্যকেও। তখন তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন না।

কবির স্বাধীনতা কবিতা কে কিভাবে প্রভাবিত করে?
কবির স্বাধীনতা কবিকে পুরোপুরি প্রভাবিত করে। কবিকে শৃঙ্খলে বন্দী বা কারা বন্দী করলেও তিনি থাকেন মুক্ত। একজন কবিকে অবশ্যই স্বাধীন সত্তার অধিকারী, বিচক্ষণ, স্ববিবেচক হতে হবে। কবি তার চিন্তার স্বাধীনতা দিয়ে অপার কাব্যময় এক কাল্পনিকজগত সৃষ্টি করবেন। সে জগতে তিনি ঘোরেমগ্ন শ্রেষ্ঠচাষা। তাঁর শ্রম অনাবাদী জমির বুকেও সোনালি ফসলের হাসি। তিনি সেই ফসলের মাঠ ছাড়িয়ে শিল্পময়তায় ঢুকে পড়বেন মানুষ থেকে মানুষের ভেতর, যুদ্ধ, শান্তি, মানবতা এবং সমস্ত সৃষ্টির ভেতর। তিনি সমাজের সর্বস্তরে প্রবেশ করে মর্মস্পর্শী আনন্দ বেদনা খুঁটে খুঁটে তুলে আনেন বিষ এবং মধু। তারপর তিনি তার ইচ্ছে অনুঃপাতে বিচরণে রূপকের আশ্রয় নেন। কবি তাই তার জগতে অবারিত, সুচিন্তিত এবং ব্যাপ্তিশীলতায় সুদীপ্ত ছাপ রেখে যান। যা কবিকে বাঁচিয়ে রাখে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
একজন কবি সমাজের এমন এক চোখ, যে চোখ দিয়ে সমাজের অন্তর-আত্মাকে এফোঁড় ওফোঁড় করা যায়। তিনি স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে যদি না পারেন, তবে এ চোখের মৃত্যু হয়। সেই মৃত চোখ কেতকী ফলের সমতুল্য।

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?
এটা একটা ব্যাখ্যা করার মতো প্রশ্ন। সংক্ষেপে এটুকু বলতে পারি “সাহিত্য আর ধর্ম দুটোই আলাদা বিষয়। একটা ঈশ্বর বা স্রষ্টার আরাধনা এবং তাঁর হুকুম মেনে চলার ক্রিয়া কলাপ। আরেকটা ঈশ্বর বা স্রষ্টার প্রদত্ত জ্ঞান চর্চা থেকে অর্জিত ফল।”
ধর্ম এবং সাহিত্য ভিন্ন হলেও সাহিত্য চর্চায় অবশ্যই ধর্ম আসবে এবং আসে। কবিতা লিখে কোন কোন মানুষ নিজেকে ঈশ্বর ভাবেন। আমি মোটেই সেই দলে নই। ঈশ্বর এক আলোকিক সর্বশক্তির মালিক। যিনি সর্বজ্ঞান সম্পূর্ণ। যতো মানুষ নিজেকে ঈশ্বর ভেবেছেন তত মানুষ একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন বা করবেন। কিন্তু ঈশ্বর বা স্রষ্টা কখনো তা গ্রহণ করবেন না। তিনি কারোর থেকে জন্ম গ্রহণ করেননি। মানুষ অবশ্যই জন্মগ্রহণ করেন। মানুষ কবিতা লিখতে পারবেন, চাঁদ, সূর্য, তারা, পানি, বাতাস, গাছ-পালা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারবেন না। তাই বলতে পারি সাহিত্যে ধর্ম থাকবে, ধর্মে সাহিত্য  নাও থাকতে পারে।

আপনার প্রিয় লেখক কারা?
এই তালিকা অবশ্যই লম্বা। সবার নাম নাইবা বললাম। যাঁদের নাম না বললেই নয়, তাঁরা হলেন- জীবনান্দ দাস, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শেক্সপিয়র, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বেগম রোকেয়া, সমরেশ মজুমদার, হাসান আজিজুল হক, ম্যাক্সিম গোর্কি, শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হেলাল হাফিজ, রফিক আজাদ, পাবেলো নেরুদা, নাজিম হিকমত, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি, কহলীল জিব্রান, সিকদার আমিনুল হক, কবিতা সিংহ, আল মাহমুদ, মহাদেব সাহা, আবু হাসান শাহরিয়ার।

শিল্প সাহিত্য ৫৬
সাজ্জাদ সাঈফ 



জন্ম- ১৯৮৪, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ:
কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা, মায়ার মলাট, ভাষার সি-বিচে, বহুদিন ব্যাকফুটে এসে
সম্পাদনা
নিহারীকা, ঈক্ষণ, ক্ষেপচুরিয়াস ওয়েবজিন(২০১১), পাঠচক্র ‘লাইফ আড্ডা’(বগুড়া, ২০১৪-২০১৫)।
সন্মাননা- ১ম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা’র জন্য বঙ্গভ‚মি বর্ষসেরা কবি: ২০১৯

লেখার শুরুটা কিভাবে ? 
লেখার শুরুটা আউটবুক পড়ে এবং শৈশবে মঞ্চ নাটক চর্চা করার ঝোঁকে নাটক লিখতে গিয়েই।

আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?
-শিল্প-সাহিত্য জীবন হতে বিচ্ছিন্ন যেমন নয় তেমনি জীবনও শিল্প সাহিত্যের ভিতর দিয়েই প্রাণবন্ত, প্রয়োজনীয় রকমের প্রকাশ্য। একে অন্যের সামনে আয়না স্বরূপ।

কবিতার এলেমেলো বিন্যাস। বাঁধনহারা প্রাণ আপনার লেখাকে দিয়েছে নিজস্ব স্বর । কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণ তোমায় কতটা টানে বা টানেনা ?
-কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণের হাত ধরেই কবিতায় প্রয়াসী হওয়া এবং এখন অব্দি ধ্রুপদীর টান আমি অস্বীকার করি না, আর বিবর্তন প্রাণ মাত্রেরই আছে আর যেহেতু প্রাণ ও প্রকৃতির আদিতম শিল্প কাব্য/কবিতা সেই সূত্রে কবিতাও সময়ে ভাষার ভ‚গোলে বিবর্তন নিয়ে এগোয় তবে ধ্রুপদকে ব্যাকগ্রাউন্ডে সাথে নিয়েই।

শূন্য ও প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করো। যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ? 
-দুটা পিঠাপিঠি দশক হয়েও নন্দনের সংহতিকে স্থির করে নিতে নব্বই যে তাগিদ নিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশের কবিতায় সেই তাগিদকেই স্পষ্ট করেছে শূন্য দশক। এছাড়া যুদ্ধময় বৈশ্বিক আবহাওয়ায় সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের জায়গাগুলি শূন্য দশকে যে হারে প্রশ্ন আকারে দেখা দিয়েছিলো এর অনেকাংশ উত্তরের কাজটা এগিয়েছে প্রথম দশক। এই পার্থক্যটা এতই সূ² যে এ’কে ভিতরে পরিস্কার ক’রে নিতে চাইলে চর্চাগুলিকে আরেকটু সময় দিতে হবে।

হাংরি, শ্রুতি, নীম, কৌরব, রৌরব , নতুন কবিতা এইসব আন্দোলন কবিতাকে কতটা বদলেছে ?
উল্লেখ্য আন্দোলনগুলি কবিতাকে ঠিক যতোটা বদলায়নি ততোটা বদলেছে কবিতা চর্চার এদেশীয় পরিবেশেকে।

কবিতায় কি গল্প বলা যায় ? 
-উনিশ শতকে রোমান্টিক ধারার ওপর দিয়ে হেঁটে এসে সতীর্থদের সমস্বরে মালার্মে প্রতীকীবাদের হয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষের ভাষাকে তার মৌল ছন্দোস্পন্দনে নিয়ে এসে তার মাধ্যমে অস্তিত্বের বিভিন্নদিকের রহস্যের প্রকাশ হল কবিতা’। এই হাইপোথেসিস ছাড়াও আধুনিক বাংলা কবিতার আচরণ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন কবিতায় গল্প বলা যায়।

সত্তর বা নব্বই- এর কোন কোন কবির কবিতা তোমায় ভাবায়, থমকে দেয় ? 
-বাংলা কবিতার জন্য সত্তর দশক এক উত্তাল জাতীয়তাবাদবেষ্টিত দশক হয়েও মিছিল-বিপ্লবের দাঙ্গা-হাঙ্গামা-স্বর উৎরে বা সাথে নিয়েও শিল্প আপন মনে খেলতে পেরেছে যাদেও লেখায় সে’ই জয় গোস্বামী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুবোধ সরকার, পার্থপ্রতীম কাঞ্জিলাল, গৌতম চৌধুরী, আবিদ আজাদ, আসাদ মান্নান, কামাল চৌধুরী, দাউদ হায়দার, ময়ূখ চৌধুরী, নাসিমা সুলতানা। নব্বই দশকে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, যশোধরা রায়চৌধুরী, মিতুল দত্ত, শামীম কবির, শামীম রেজা, মোস্তাক আহমাদ দীন, মুজিব মেহদী, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, সুমন রহমান, মজনু শাহ, ওবায়েদ আকাশ এবং আরো কয়েকজন কবির আবির্ভাব বিশ্বসাহিত্যে বাংলা কবিতার অভিনিবেশ ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিল এবং আছে।

এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদা' সম্বোধন করে। কবিদের মেরুদন্ড, স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ কি হারিয়ে যাচ্ছে? 
-তরুণ কবিরা নিজ নিজ সময়কালকে পরিবেশন করেন একদম ‘র’ আকারে। আদতে হাতে গোণা প্রকৃতই যারা কবি তাদের বাহিরে চটকদারিতা-গিমিকসর্বস্ব তরুণদের খুব সহজেই কুরুচিকর সংস্কৃতি দিয়ে বুঁদ করে থাকে তদীয় সময়কাল। এবং এরাই মেরুদন্ডে ভর করাতে চান সময়কালের অপ্রয়োজনীয় বোধগুলিকে, এতে করে তাদের দিকে চেয়ে মেরুদন্ডহীন দেখায় সকলকে। প্রকৃতই যারা কবি তাদের মেরুদন্ডের প্রমাণ তাদের লেখাপত্রেই বিদ্যমান, সব কালেই ইহা সত্য।

এই সময়ের কবিদের লেখা পড়েন ? কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ? 
-পড়ি, সময় দিয়েই পড়ি। এই সময়ে ভাবায় জুয়েল মোস্তাফিজ, তারিক টুকু, মাজুল হাসান, আরণ্যক টিটো, অনুপম মুখোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ মাহমুদ, সামতান রহমান, শুভ্র সরকার, হাসান রোবায়েত, হাসনাত শোয়েব, রিগ্যান এসকান্দার, সালেহীন শিপ্রা, মোস্তফা হামেদী, নির্ঝর নেঃশব্দ্য, অনির্বাণ সূর্যকান্ত,আল ইমরান সিদ্দিকী, অনুপম মন্ডল, আসমা অধরা, সাম্য রাইয়ান, কবীর হোসেন, নীহার লিখন, হোসাইন মাইকেল, নাজমুল হোসাইন, জুবিন ঘোষ, তানজিন তামান্না, ঋপন আর্য, অরবিন্দ চক্রবর্তী, রিক সৌরক, সরোজ মোস্তফা, হাসান মসফিক, আনিফ রুবেদ, সৌনক দত্ত, ইয়ার ইগনিয়াস, তানহীম আহমেদ, বেবী সাউ, সাদিক সত্যাপনসহ আরো কিছু কবির লেখাপত্র।

আপনার প্রিয় কবি, প্রিয় ঔপন্যাসিক ও প্রিয় গল্পকার কে এবং কেন? 
-প্রিয় কবি আবুল হাসান, ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, গল্পকার সাদাত হোসেন মান্টো। এঁরা সকলেই আধুনিকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি হতে মুক্ত মানস ও সত্যের অনুগামী ছিলেন এবং কাকতালীয়ভাবে ইতিহাসে গর্জে ওঠা জাতীয়তাবাদের খাঁটি প্রেমিক ছিলেন। 

কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন?
-একজন তরুণ লেখক তাঁর জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন সত্ত্বা/মানুষ হিসেবে নিজ আচরণকে জ্ঞান ও দায়িত্ববোধের বলয়ে পরিচর্যা করে।

শিল্প সাহিত্য ৫০  মঙ্গলবার ১৯ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২রা জুন ২০২০


দেবাশীষ ধর

সম্পাদক, বাঙাল,ঘুনপোকা (ছোট কাগজ)
প্রকাশিত কবিতার বইঃ
ফসিলের কারুকাজ (২০১৬,অনুপ্রাণন প্রকাশন)
দ্বিতীয় আয়না (২০১৮,খড়িমাটি প্রকাশন)

লেখার শুরুটা কিভাবে ?

স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে আমার ডায়েরি লিখার একটা অভ্যাস ছিল।নিজের যত সব কথা ভাবনা বা নিজের সাথে কোন ঘটনার কথা লিখে রাখতাম লুকিয়ে ডায়েরিতে।একটা অজানা আনন্দ কাজ করতো। নিজের চিন্তা ভাবনা অনুভুতিগুলোর একটা উপলব্ধির বোধ সম্ভাবনা তৈরি করে হয়তো সিরিয়াসলি লিখার প্রতি।অনেক কবির কবিতা পড়তে পড়তে কবিতার প্রতি একধরনের গভীর টানও হয়তো কবিতা লিখার আনন্দটা আরো বাড়িয়ে দেয়।এরপর ছাত্রজীবনের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক অনুভূতি লিখার প্রতি আরো জোরালো করে। আমি যখন লিটল ম্যাগে লিখা শুরু করি তখন সময়টা ২০০৮-০৯ সালের দিকে।      

আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই আদিমানবরা গুহায় সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকত। তাঁদের সমস্ত ভাবনার উপস্থাপন তারা হয়তো এভাবে প্রকাশ করতে চাইতো কিংবা সে তাঁর মনের আনন্দে তা করতো।অর্থাৎ তারা কোন অজানা কারনে এটা করতো, এটাকে আপনি যেভাবে দেখেন না কেন বিশ্লেষণ করেন না কেন। সমগ্র বিশ্বে এই আদিমানব থেকেই বহু ধারার নানান ভাষার ঢঙয়ের জীবনদর্শন শুরু হলো। এইখানে আমাদের যাবতীয় ধারনা চিন্তা জীবন যাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট যেটাকে আপনারা সভ্য বলেন আমরাই আমাদের প্রয়োজনে নন্দনতাত্ত্বিক দৃষ্টি মননে সামষ্টিক আনন্দকে শিল্প সাহিত্য বলি। আর এভাবেই হয়তো এর প্রয়োজনীয়তা আসে। আমাদের পারস্পরিক প্রেমই দুঃখই আমাদেরকে শিল্পের কাছে নিয়ে যায়।একটা মহানন্দযজ্ঞ বোধের জীবনকে আমরা খুঁজতে থাকি।আর তখনই আমরা শিল্প সাহিত্যের স্বাদ পাই।এটাই আমাদেরকে আরো প্রেম বাড়িয়ে দেয় বাঁচার স্বাদ খুঁজে পাই জীবনকে উপলব্ধি করতে পারি।মানুষের এই উপলব্ধি হয় বলেই এখনও সভ্যতা আছে।   

কবিতার এলেমেলো বিন্যাস।তুমুল চিত্রকল্প বাঁধনহারা প্রাণ তোমার লেখাকে তোমার লেখা করেছে।প্রথম দশকের নিজস্ব স্বর দিয়েছে  কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণ তোমায় কতটা টানে বা টানেনা ?

আসলে কবিতায় দশক বিচারে আমি কখনো বিশ্বাসী না। যে কোন সময় কবিতার বাঁক বদল হতে পারে নিজস্ব প্যাটার্ন তৈরি হতে পারে।যখন পড়ি সব ধরনের কবিতায় আমাকে টানে, ধ্রুপদীও আমায় টানে সবসময়।  

শূন্য  প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করো।যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ?

আগেই উপরে বলেছি কবিতায় দশক বিচারে আমার মতামত।কবিতার ক্ষেত্রে পার্থক্য হওয়ার জন্য দশকের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার মনে হয় না।কবিতার স্বর আঙ্গিক বা বিন্যাস যে কোন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একইভাবে হতে পারে কিংবা অল্প সময়ের জন্যও হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট করে দশক করে দিলে কবিতার বিচারে সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। মাইকেলের সময় যেভাবে কবিতা লিখা হতো তা দীর্ঘ দশক ধরে বিচরণ করেছে রবীন্দ্রনাথ এসে এটাকে নতুন রূপে আনেন।মূল কথা হচ্ছে কবিতার মৌলিক পার্থক্য বিচারে কোন নির্দিষ্ট সময়কে আপনি আবদ্ধ করতে পারবেন না।   

লিটিল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম ,তোমার মতে ? কেন ?

অবশ্যই লিটল ম্যাগাজিন।সাহিত্যের সম্ভাবনার ক্ষেত্র এবং শিল্প সাহিত্যের অগ্রসরমান হওয়ার জন্য লিটল ম্যাগাজিন ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যম কখনো হতেই পারেনা। লিটল ম্যাগাজিনই হচ্ছে সাহিত্যের সব রকম আন্দোলনের প্রণোদনা চিন্তার স্বাধীনতা এবং লেখক নিজেই একজন লিখতে লিখতে সাহিত্য কর্মী হয়ে উঠেন।    

কবিতায় কি গল্প বলা যায় ?

খুবি জটিল প্রশ্ন।আমার কাছে মনে হয় কবিতায় ঠিক গল্প বলা হয়না গল্পের কোন চিত্র বা অবয়ব কবিতায় আসতে পারে।কিন্তু কবিতার একটা নিজস্ব কাব্যভাষা থাকবে।   

এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদাসম্বোধন করে। কবিদের  মেরুদন্ড , স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?

আপনার প্রশ্নেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কে কাকে আড়ালে ‘বোকাচোদা’ বললো? আর এটার সাথে কবিতার সম্পর্ক কি? আড়ালে কিছু বলা কবির স্বার্থকতা হতে পারেনা।  

এই সময়ের কবিদের লেখা পড়ো ? কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ?

এই সময়ে এখন অনেকেই ভাল লিখছেন।লিটল ম্যাগ, সাহিত্য ব্লগ, ওয়েবজিনে নিয়মিত অনেকেরই পড়া হয়।সবার লিখার মধ্যেই কিছু না কিছু নতুন স্বাদ পাওয়া যায়, নাম বলতে গেলে অনেকে বাদ পড়ে  যাবে।  

কবিতায় ছন্দ  উপমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।

কবিতায় ছন্দ ব্যাপারটা কবিতার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ছন্দ হচ্ছে এমন একটি অনুভূতিপ্রবণ ভাষাকাঠামো চিত্র যাতে কবিতা বুনন হয় কবির মনের মতো করে ।কবির নিজস্ব উপলব্ধি অনুভূতিপ্রবণে  শব্দগুলোকে একটা ভাষাচিত্রের মাপকাঠিতে আনেন যাতে কবিতার প্রাণ হয়ে উঠে কবির ভেতরে আনন্দে।যে কোন ছন্দে কবিতা হতে পারে।এখন অনেকেই লিখছেন বিভিন্ন প্যাটার্নে ভিন্ন ধারার আঙ্গিকে।উপমা কবিতার নান্দনিকতাকে ঋদ্ধ করে এবং তাতে কবির অভিজ্ঞতালব্ধ চেতনার বোধের উত্তরণ পায়।

একজন কবি  দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?

একজন দার্শনিক তাঁর নিজস্ব চেতনায় যুক্তি বিজ্ঞান দিয়ে সমস্ত প্রকৃতি সমাজ জীবন জগৎকে বিচার বিশ্লেষণ করেন, জ্ঞানের একটি মৌলিক বিধান বানান, ভবিষ্যতের এর কোন যৌক্তিক চেতনার নীতিবোধের পরিবর্তনের মাপকাঠি তৈরি করেন ।
আর কবি তাঁর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ চেতনার উপলব্ধিকে প্রেম ভালবাসায় অনুভূতির চোখে ভাষা শব্দ রুপকল্পের মাধ্যমে তাঁর কোন এক নিজস্ব কল্পনার জগৎকে বানান, সমস্ত প্রকৃতি জীবন প্রেম অপ্রেম যন্ত্রণা হাহাকার আনন্দঘনকে নিয়ে নান্দনিকতার একটি বোধচিত্র তৈরি করেন।  

আপনি কি মনে করেন প্রত্যেক কবিই শুরুতে কোনো না কোনো কবির দ্বারা প্রভাবিত হনযা তার কবিতায়ও প্রকাশ পায়। যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।

হা এটা হতে পারে।একজন কবি শুরুতে অনেক কবির কবিতা পড়তে পড়তে কোন না কোন কবির কাব্যভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন।এবং তা কিছুটা তাঁর কবিতায়ও প্রকাশ পেতে পারে। এরকম পূর্বেও অনেক কবির ক্ষেত্রেও হয়েছে।কবি বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশসহ আরো অনেকেই শুরুতে তাঁদের কিছু কিছু কবিতায় পাশ্চাত্যের বেশ কবির কাব্যভাবনার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। প্রভাবিত হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু নিজ কবিতায় অবশ্যই কবির নিজস্ব মৌলিকতা থাকতে হবে যা উনারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তা করেছেন। এরকমও আছে একজন কবির ব্যবহৃত কোন নতুন শব্দ আরেকজন কবি তাঁর নিজের কবিতায় কোন লাইনে ব্যবহার করেছেন।আমার মনে হয় শুরুতে প্রত্যেক কবিই কোন না কোন কবির দ্বারা প্রভাবিত।তবে সেই অর্থে প্রত্যেক কবির কবিতায় একে অপরের সাথে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ থাকা চায়। এতেই কবির নিজস্বতা প্রকাশিত হয়।   

শিল্প সাহিত্য ৪২  সোমবার ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৫ই মে ২০২০

কবি সোয়েব মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালের ২৩ নভেম্বর,  গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায়। এখন মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটিতে চার বছর যাবত। ১৯৯১ সাল থেকে ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুলএরপর আদমজী ক্যান্টঃ কলেজএরপর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়এরপর কলেজ অফ ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টসাইপ্রাস। এখন অব্দি তাঁর পাঁচটি কবিতার বই  একটি সম্পাদিত কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।

লেখার শুরুটা কিভাবে ?
লেখালিখির শুরুটা মায়ের হাত ধরে কালোবোর্ডে লেখা প্রথম স্বরে  - লেখা থেকেই আর সিরিয়াস ভাবে কবিতায় আসা আমারসম্পূর্ণভাবে কবি রাকিবুল হায়দারের কৃতিত্ব।আমি শুধু রাকিব ভাইয়ের কথায় লিখে গেছি যা আমার ভালো লাগে মন্দ লাগে।

আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?
কোন প্রয়োজনীয়তা নেই - প্লেটোর অনুসারীরা তাই বলবে। কারণ প্লেটোতো বলেই গেছেন আদর্শ রাষ্ট্র চাইলে কবিদের বের করে দিতে হবে হা হা হা হা হা। মায়ের প্রয়োজনীয়তা লিখে বোঝানো যায় নাশিল্প সাহিত্য বিষয়টা তেমনই।

শূন্য  প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করেন  যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ?
প্রথমত বলে নেই কবিতার এইসব দশকওয়ারী পেটিবুর্জোয়া শব্দে আমার আপত্তি। যেহেতু এটা একটা সাক্ষাৎকার একটু জ্ঞানী ভাব নিতে হয়আভিধানিক হয়ে তাই বলছি  আমার মতে নব্বই এর একটা নতুন স্বর শুন্যদশক ধরতে না পেরে নিজেদের স্বর তৈরীতে গিয়েছিলো যা দূর্দান্ত হতে পারতো হয় নি কারণ যারা নিজেদের প্রভাবশালী ভাবে শুন্যের সবাই সরকারী বেতনভুক্ত এবং পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিক তাই শূন্যের কবিতা আমাদের অহেতুক কিছু ভারবাহি সময় দিয়েছে যা সত্তরের আর নব্বইয়ের গার্বেজ।
আর প্রথম দশক অফুরন্ত প্রাণসঞ্চারী এখানে সাংবাদিক একাডেমির পা চাটা দালাল কবি কমমনের আনন্দে লিখছে সবাইচেষ্টা করছে না তবুও হয়ে উঠছে যার যার কবিতা নিজস্ব কন্ঠস্বরের। কোন দশকের সাথে আপনি প্রথম দশককে মেলাতেই পারবেন না।

সত্তর বা নব্বইÑ এর কোন কোন কবির কবিতা আপনাকে ভাবায়থমকে দেয় ?
সত্তরের কবিতা বাংলায় (বাংলাদেশভারতের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলএকসাথে মানুষের কথা বলেছে প্রচুর শ্লোগান এসেছেমানুষের পাশে বসেছে।রাষ্ট্রের খেলা হাসতে হাসতে উড়িয়েছেনব্বই অনেকটা গোছানোর প্রথম অধ্যায়।টেবিল চেয়ারে বসা। আমার কাছে দুইদশক মিলে নবারুণ ভট্টাচার্যআবুল হাসানভাস্কর চক্রবর্তীরুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্প্রণবেন্দু দাশগুপ্তমৃদুল দাশগুপ্তসুনীল সাইফুল্লাহমজনু শাহওনীল ওসমানঅগাষ্টিন গোমেজ এদের কবিতা টানে।

লিটিল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যমআপনার মতে ? কেন ?
লিটল ম্যাগ একটা আন্দোলনযদিও  আন্দোলন স্থিমিত দ্বিধাগ্রস্ত এখন। আর ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যখন লিটলম্যাগ তার অবস্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ এবং একে অপরের গুষ্ঠি উদ্ধার করছে কিলিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক হয়ে উঠলো একটা স্বয়ংক্রিয় আলাদা কবিতার প্ল্যাটফর্ম।

আপনার প্রিয় কবিপ্রিয় ঔপন্যাসিক  প্রিয় গল্পকার কে এবং কেন?
প্রিয় কবি তো সবাই -  প্রশ্নের একটা ভাগ করে নেই কবিদের নাম উপরে বলেছিতাই উপন্যাসিক আর ছোটগল্পকারের নাম বলি ইশতিয়াক আহমেদমাহতাব আহমেদসুহান রেজওয়ানমাহবুব ময়ুখ রিশাদহামিম কামালএনামুল রেজা,তানভীর মেহেদীআহমেদ মওদুদ।

কবিতায় কি গল্প বলা যায় ?
কবিতায় কি কবিতা লেখা যায় প্রশ্নটা করছি বলুন তো।

এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদাসম্বোধন করে। কবিদের  মেরুদÐ , স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?
এটা একটা হাস্যকর প্রশ্ন হলোএর উত্তরে শুধু এতটুকুই বলা যেতে পারে যখন বানিজ্য আর প্রতিষ্ঠার লড়াই থাকে কবিতা থাকে না তখনই আড়ালে একে অপরকে এই টাইপ সম্বোধন করে।  কবিদের মেরুদРহারিয়ে যাচ্ছে মানেকবিদের মেরুদРএজ  ক্লাসিফায়েড অকুপেশন কবিদের মেরুদРছিলোনা। যেটা দেখা যায় কালক্রমিক ভাবে সবজায়গাতেই কিছু বেয়াদব ছেলেরা আসে এবং মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পেছনে শুধু ফুটো নয় মেরুদন্ড বলে অনমনীয় কিছু থাকেথাকতে হয়।

এই সময়ের কবিদের লেখা পড়েন ? কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ?
দেখুন আমি বুদ্ধিজীবী নই কিংবা হঠকারী মকিংবার্ড নই যে শুধু অতীতের আশ্রয়ে পরে থাকব। আমি খুব অহংকার নিয়ে বলতে পারি এই বাংলায় আজ ২০২০ সালে কবিতা লিখছে যারা তাদের প্রায় ৮৬কবি আমি চিনি তাদের টেক্সট চিনি এবং নিয়মিত পড়ি। আমার কাজ কিকবিতা পড়া। আমি যদি আমার সময়ের ভাষা না চিনি না বুঝি না পড়ি তাহলে কিভাবে হবে বলুন তোআমি আমার সময়ে আন্দালিবরাকিবুল হায়দারসাম্য রাইয়ানরাজীব দত্তহাসনাত শোয়েবহাসান রোবায়েতহিমেল হাসান বৈরাগীরাইসুল নয়নশুভ্রজিৎ বড়য়াকুশল ইশতিয়াকশাহরিয়ার শুভকৌশিক শুভইবনে শামসমাহমুদুর রহমানকার্তু সরকারঅর্ক অপুতামান্না তুলিইলতুত মন্ডললিংকনশুভ্র সরকার (সিনিয়রময়মনসিংহ) , খান রহুল রুবেল এদের কবিতা পড়ি চমকাই।

পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কি করতে চান ?
পরজন্ম বলে কিছু থাকলে আমি সকল বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠান এবং প্রাতিষ্ঠানিক কবিদের যারা বিক্রি হয় হয়েছে বারবার রাষ্ট্র আর প্রতিষ্ঠার কাছে অবনত মস্তকে তাদের কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখতে চাই রাস্তায়।

সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি বিষয়ে আপনার মতবাদ কী হতে কবি  কবিতার সংজ্ঞা কী হতে পারে?
আমার কাছে লাইন হচ্ছে
প্রায় অধ্যাপকেরা এবার একটা কবিতা লিখে দেখাও,
অনেক তো ডুগডুগি বাজালে,
বাজালে বগলে বিউগল
এবার অন্তত কবিতার সংজ্ঞা না লিখে
একটা কবিতা লিখে দেখাও।

কবির স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?
কবি' স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা এক জিনিস নয়যোণী আর জরায়ুর মধ্যকার সুক্ষ ফারাক আমাদের বুঝতে হবে।

এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কেন?
প্রতিটা অঞ্চল যেমন একই সাথে সূর্য উদয় আর অস্তমিত হয় না তেমনি দু দেশের ভাষাতেই রয়েছে বিশাল দূরত্ব যদিও দুই বাংলাই বাংলায় কথা বলে। কলকাতার ভাষাটা কেতাবী বাংলাবাংলাদেশের বাংলাটা ঝরঝরেরক্ত দেয়া বলেই হয়তো  পার্থক্যটা।

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্বকোথায়?
বিশ্বাস শব্দটাই তো ধর্মীয়সাহিত্য আর ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন ফারাক নেই দিনশেষে দুটোই আপামর জনগনের কথা বলে আর দিনের বেলায় হয় অর্থ উপার্জনের পথ।

কবিতায় ছন্দ  উপমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
কবিতা যেকোনো ভাবে হতে পারেছন্দ উপমা কবিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় আবার ফেলনাও নয়। মূল বিষয় হচ্ছে জানা থাকলে ভালো না জানা থাকলে মরে যেতে হবে তাও নয়।

কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেনএবং কবি কি সারা জীবন একটা কবিতাই লেখেন?
প্রচুর পড়তে হবে আমাদের প্রচুর হাটতে হবে জীবনের ভেতর ঢুকে পরে দেখে এসে মৃত্যু লিখতে হবে চোখে চোখ রেখে একটাই কবিতা।



শিল্প সাহিত্য ৩০  বুধবার ৩০শে বৈশাখ ১৪২৭, ১৩ই ২০২০


†jLvi ïiæUv wKfv‡e ?
GB cÖkœUv hZevi mvg‡b Av‡m, ZZeviB DËi e`‡j hvq| Av‡M wK e‡jwQ, g‡b _v‡K bv| bZzb K‡i wKQy ej‡Z nq| GUvi ˆeÁvwbK ‡Kv‡bv e¨vL¨v †bB| nq‡Zv A¶iÁv‡bi ïiæUvB †jLv‡jwLi ïiæ| Avevi eÜyievÜexi Rb¨ †jLv †cÖ‡gi wPwV‡KI cÖ_g mvwnZ¨ e‡j Pvwj‡q †`qv hvq| GgbI n‡Z cv‡i †h cÖwZw`b bZzb K‡i ïiæ KiwQ †jLv| Av‡M †hLv‡b †_‡gwQjvg, Zvici Avevi hLb wjL‡Z ewm, †mUvI ïiæ bq wK!

Avcbvi g‡Z wkí mvwn‡Z¨i cÖ‡qvRbxqZv wK?
Avwg ewj, wkí-mvwnZ¨ hw` gvbyl‡K wb‡`bc‡¶ wkíx‡K ¯úk© bv K‡i, Zvn‡j Gi †Kv‡bv cÖ‡qvRb ‡bB| Avevi Av‡iKUv w`K †_‡K ‡f‡e ‡`L‡j cÖ‡qvRb QvovI cÖ‡qvRb ˆZwi nq| GB †h wkïiv †`qv‡j B‡”Qg‡Zv AvuwKeyuwK K‡i, GUv AvcvZ`„wó‡Z A_©nxb n‡jI, GB e¨vcviUv wkïwU‡K wVKB Avb›` ‡`q|Zvigv‡b GUviI cÖ‡qvRb Av‡Q|

KweZvi G‡j‡g‡jv web¨vm| Zzgyj wPÎKí| euvabnviv cÖvY Avcbvi †jLv‡K Avcbvi ‡jLv K‡i‡Q| cÖ_g `k‡Ki wbR¯^ ¯^i w`‡q‡Q | KweZvi aªæc`x cÖKiY Avcbv‡K KZUv Uv‡b ev Uv‡bbv?
Avwg hLb KweZv co‡Z ïiæ Kwi, ZLbKvi mg‡q Avgvi cvV¨ KweZv †_‡K Avgvi †jLv KweZvi fvlv wKš‘ A‡bK Avjv`v| Avwg wbR¯^ fw½‡Z Avgvi K_v¸‡jv wjL‡Z †P‡qwQ| Avgvi g‡a¨ †h evK¨¸‡jv ˆZwi n‡q‡Q, †m¸‡jv‡K Avwg Avgvi †Pbv e¨vKi‡Yi ¯‹y‡j cvVvB wb| eis wb‡Ri B‡”Qg‡Zv mvwR‡q †`‡LwQ, †Kgb jv‡M| w`b‡k‡l GB mvRv‡bv‡ZB Avb›` †c‡q †MwQ|

k~b¨ I cÖ_g `k‡Ki KweZvi †Kvb †gŠwjK cv_©K¨ j¶ K‡iv| hv w`‡q `y‡Uv `kK‡K Avjv`v fvev hvq?
KweZvq `k‡Ki ‡hvM-we‡qvMUv KL‡bvB fv‡jv jv‡Mwb| k~b¨ `k‡K wb‡Ri LvZvq ‡jLv †jvKUv hw` cÖ_g `k‡K G‡m cvV‡Ki Kv‡Q cÖKvwkZ nq, Zv‡K Avgiv †Kvb `k‡Ki Kwe ej‡ev? Z‡e Avgv‡`i GLv‡b cÖPwjZ `k‡Ki †h fvMvfvwM n‡q _v‡K, †mB Abymv‡i K_v ejv hvq| k~b¨ `k‡Ki KweMY eo Kwe‡`i Qvqvq wQ‡jb| ZvB nq‡Zv Zv‡`i A‡b‡KB eo bv n‡q ebmvB n‡q‡Qb| Zv‡`i wbR¯^ fvlv ˆZwii jovBUv †h wQ‡jv bv, Zv bq| wKš‘ †mB jovBUv Ki‡Z wM‡q Zviv wbR¯^ GKUv RvqMv ˆZwi Ki‡Z e¨_© n‡q‡Qb| cÖ_g `k‡Ki Kwe‡`i Kv‡Q k~b¨ `k‡Ki GB Kweiv Av`k© n‡q DV‡Z cv‡ib wb| ZvB Zviv wb‡Ri g‡Zv K‡i wj‡L †M‡Q| †KD Zv‡`i ïa‡i †`evi bvg K‡i Zvi Abymvix evwb‡q †dj‡Z cv‡iwb| hw`I `yB-GKRb e¨wZµg †h †bB, Zv bq| Avgvi g‡b nq cÖ_g `kK †_‡KB `xN©hvÎvi Kwe †ei n‡q Avm‡eb|

nvswi, kÖæwZ, bxg, †KŠie, †iŠie, bZyb KweZv GBme Av‡›`vjb KweZv‡K KZUv e`‡j‡Q?
Av‡›`vjb gv‡bB wgwQj| Avi wgwQj gv‡bB bZyb w`‡bi †køvMvb| wgwQj gv‡bB AMwYZ KÚ¯^i| A‡bK A‡bK K_v| G‡Zv G‡Zv ¯^i wg‡j Aek¨B e`‡j‡Q A‡bK wKQyB|

ciRb¥ e‡j hw` wKQz _v‡K ZLb wK Ki‡Z Pvb?
ciRb¥‡K Avwg mgy`ªRb¥ ewj| Avevi hw` mgy`ªRb¥ nq, Avwg KweZvB wjL‡ev Avi AmsL¨evi †cÖ‡g co‡ev|

Kwei ¯^vaxbZv ej‡Z Avcwb Kx g‡b K‡ib?

Kwe Zvi cÖ_g D”Pvi‡YB wb‡Ri ¯^vaxbZv †NvlYv K‡ib|

GB mg‡qi ZiæY-ZiæYx Kweiv cÖ‡Z¨‡K cÖ‡Z¨K‡K Avov‡j Ô†evKv‡Pv`vÕ m‡¤^vab K‡i| Kwe‡`i †giæ`Ð, ¯^vfvweK ‡mŠRb¨‡eva nvwi‡q wK nvwi‡q hv‡”Q?

gRvi welq n‡jv, mevB A`„k¨ GKUv jovB Ki‡Q †h‡bv| evZv‡mi mv‡_ Zievwi hy‡×i g‡Zv| Avgvi hZUzKz g‡b nq, GUvi g~j KviY Aw¯ÍZ¡ msKU| wb‡Ri †jLv evK¨¸‡jvi cÖwZ Av¯’vnxbZv| bB‡j †K Kvi KweZv †K‡o wb‡”Q, †K Kv‡K †cQ‡b †d‡j GwM‡q hv‡”Q! KweZvi GB wgwQjUv cvkvcvwk nuvUevi K_v, G‡ZvUv `~i‡Z¡ bq| Z‡e hZUzKz Rvwb A_ev †`wL, GB we‡e‡`i KviY wKš‘ KweZv bq| †mªd e¨w³MZ Ø›Ø!

wjwUj g¨vMvwRb bv †dmeyK †KvbUv †kÖô gva¨g , Avcbvi g‡Z? †Kb?

wjwUj g¨vMvwRb Avi †dmey‡Ki g‡a¨ Zzjbv P‡j bv| †dmey‡K AvRKvj Avi me wKQyi cvkvcvwk mvwnZ¨I Kiv hvq| Avi wjwUj g¨vMvwRb ïiæ †_‡KB ‡Kej mvwn‡Z¨i| hw`I GLb †dmey‡Ki gva¨‡g †jLK Avi cvV‡Ki wbqwgZ ‡hvMv‡hv‡Mi Kvi‡Y Avgiv †dmey‡KB †ewk wjwL| GB RvqMvUvq wjwUj g¨vMvwR‡bi e¨_©Zv i‡q‡Q| Avgv‡`i (evsjv‡`‡ki) Av‡Mi mvwnwZ¨KMY wjwUj g¨vMvwRb Av‡›`vj‡bi bvgK‡i duvKv GKUv gq`vb mvwR‡q †i‡L †M‡Qb! A_P Avgv‡`i mvwn‡Z¨ wjwUj g¨vMvwR‡bi Gfv‡e LyP‡iv cqmvi g‡Zv c‡K‡Ui GK †Kv‡Y c‡o _vKvi K_v wQ‡jv bv| Avwg GLbI wek¦vm Kwi, mvwn‡Z¨i cÖ‡qvR‡b wjwUj g¨vMvwR‡bi AvwacZ¨ wd‡i Avmv DwPZ|

GB mg‡qi Kwe‡`i †jLv c‡ob? Kvi Kvi †jLv fvevq-gy» K‡i?

GB mg‡qi hvi †jLv cvB, Zvi †jLvB gy» n‡q cwo| KZw`b Avi Rxebvb›`, iæ`ª Avi Aveyj nvmvb c‡o w¶‡a †g‡U! Zvi‡P‡q eis bZyb KweZv¸‡jv co‡Z †ek jv‡M| wK `viæY me KweZv Zviv wj‡L hv‡”Q, BwZnvm n‡q hv‡”Q KweZvq! Avjv`v K‡i KviI bvg ej‡ev bv| Avwg mevi KweZv cwo| mevi KweZvB fv‡jv jv‡M| †h Kwe MZKvj cÖ_g KweZvUv wjL‡jv, Zvi KweZv c‡o †`Lyb| fveyb, †m wK ej‡Z Pvq| gy» n‡eb|

GKRb Kwe I `vk©wb‡Ki g‡a¨ cv_©K¨Uv †Kv_vq?
Kwe Avi `vk©wbK GB kã`y‡Uvq Avwg †Kv‡bv cv_©K¨ †`wLbv| Avgvi Kv‡Q mgv_©K kã g‡b nq|

Gcvi evsjvi KweZvi fvlv Ges Icvi evsjvi KweZvi fvlvi g‡a¨ cv_©K¨ KZUzKz Ges †Kb?

`yB evsjvi gvby‡li Rxeb Lye GKUv Avjv`v bq| wKš‘ GUvI mZ¨ †h c„w_exi me †`‡kB †gŠwjK AwaKvi GKB, wKš‘ cÖvwßi LvZvUv GKB _v‡K bv| ZLb †`Lv hvq GK RvqMvi Kwe †hB AwaKv‡ii Rb¨ KweZv wjL‡Q, Av‡iK RvqMvi Kwe nq‡Zv Ab¨ Av‡iKUv AwaKv‡ii `vex‡Z Kjg ai‡Q| Avevi †cÖ‡gi RvqMvq G‡m GKB my‡i K_v ej‡Q| wKš‘ myi GK n‡jI fvlvi cÖKvkf½x Avjv`v| ‡mUv GB evsjv‡ZI| GLvbKvi KweivI GKB fvlvi fw½gvq KweZv †j‡Lb bv|

KweZvq Q›` I Dcgvi cÖ‡qvRbxqZv m¤ú‡K© ejyb|

KweZv hw` bvix nq, Q›` Avi Dcgv Zvi AjsKvi| AjsKvi mnKv‡i wcÖq bvix‡K †hgb my›`i K‡i eY©bvKiv hvq, †Zgwb AjsKvi QvovI Zv‡K c„w_exi my›`iZg bvix wn‡m‡e eY©bv Kiv hvq| GUv Kwei GKvšÍ wbR¯^ †KŠkj| wZwb wKfv‡e Zvi KweZv wjL‡eb|

Avcwb wK g‡b K‡ib cÖ‡Z¨K KweB ïiæ‡Z †Kv‡bv bv †Kv‡bv Kwei Øviv cÖfvweZ nb, hv Zvi KweZvqI cÖKvk cvq| hw` GKUz e¨vL¨v K‡ib|

cÖfvweZ k‡ãi †P‡q AbycÖvwYZ kãUv e¨envi Kiv DwPZ| KweZv c‡ob bv, Ggb Kwe Avwg †`wLwb| Ab¨ KviI KweZv co‡Z wM‡q Zvi †Kv‡bv kã A_ev Dcgv nq‡Zv ûU K‡i Xz‡K co‡jv gv_vq| Gici wjL‡Z wM‡q †mB kãUv, DcgvUv G‡m hvq| GUv Lye ¯^vfvweK GKUv e¨vcvi| GUv‡K A¯^xKvi K‡i KweZv †jLv hvq bv|

wKfv‡e GKRb ZiæY †jLK Zvi Rxeb-`k©b‡K mg„× Ki‡Z cv‡ib?

ZiæY †jLK †h Rxe‡b Avb›` cv‡eb, †h Rxe‡b KweZv Lyu‡R cv‡eb, †m Rxe‡bi evB‡i `uvwo‡q RxebUv‡K wbqwgZ †`L‡eb| Avi hvwcZ Rxe‡bi fvebv †_‡K ˆZwi nIqv `k©b‡K wek¦vm Ki‡Z wkL‡eb|

শিল্প সাহিত্য ২২  মঙ্গলবার ২২শে বৈশাখ ১৪২৭, ৫ই মে ২০২০                             

কাল পরিক্রমায় থেমে নেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, থেমে নেই কবিরাও। কবিতার নিরীক্ষা ও প্রচল ভাঙার মিছিলে শামিল হয়েছেন যে কজন কবি, যাদের কবিতা ইতোমধ্যে পাঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে যাদের নাম, তাদের মধ্যে মীর রবি অগ্রগণ্য। কবিতার প্রকরণ, ব্যাকরণ ও প্রাঞ্জলতার পাশাপাশি সামঞ্জস্য মিথের শব্দগভীর ব্যবহারে কবি হয়ে উঠেছেন প্রিয় সব কবিতার জনক। প্রকাশিত বই অ্যাকোয়ারিয়ামে মহীরুহ প্রাণ, ইরেজারে আঁকা ব্ল্যাক মিউজিক ও ক্রস মার্কার। সম্পাদনা করেন ছোটকাগজ ঠোঙা। যুক্ত ছিলেন দৈনিক খোলা কাগজের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও। পেয়েছেন সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮।
    
লেখার শুরুটা কিভাবে ?

ছোটবেলায় আমি প্রচুর ছবি আঁকতাম। সেটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়কার কথা। ছবি এঁকে এঁকে আমার একজন দাদুকে দেখাতাম। তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মীর আবুল কাশেম। এই দাদুই আমাকে দিয়ে বিভিন্ন বই ও পত্রিকা আনাতেন। সেসবে রূপকথার বইও থাকত। পত্রিকায় ছোটদের পাতাও দেখতাম আর পড়তাম। এখান থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহটা সেই সঙ্গে লেখার শুরুটাও। ক্লাস ফাইভে থাকার সময় কবি জসিম উদ্দিনের ছুটির দিনে ছড়াটা নকল করে একটা ছড়া লিখেছিলাম বাংলা ভাষা নামে। এইযে শুরু আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। আমার প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল একটি ভাঁজপত্রে। এরপর রংপুরের একটি দৈনিকের শিশুপাতায়। তবে বড় অনুপ্রেরণাটা আসে দৈনিক ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসরে লেখা ছাপা হওয়ার পর। তখন আমি নিম্ন মাধ্যমিকের ছাত্র।

কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণ তোমায় কতটা টানে বা টানেনা ?

ব্যপারটা আসলে ভালো লাগা না লাগার । কখনো টানে, কখনো টানে না এমন আরকি। তাছাড়া সবার যে সবটা ভালো লাগবে এমন নয়। ব্যক্তি বিশেষে এটা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। আমার লেখার ক্ষেত্রে এটাকে আমি এড়িয়ে চলি। আমার চিন্তাটাই হচ্ছে প্রোজপোয়েট্রি নিয়ে। এটাই আমাকে টানে বেশি। তবে কবিতা চর্চার শুরুর দিকটার কথা যদি বলি, তবে আমি কিন্তু ধ্রুপদী কবিতার কাছেই ঋণি। এসব কবিতা পাঠ করেই আমি লিখতে এসেছিলাম। শুরুতে লিখতামও তাই।

প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করো যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ?

প্রথম দশকের কবিতার কথা যদি বলি তবে বলতে হয় এদশকের কবিরা কবিতাকে বিমূর্ততার দিকে নিয়ে গেছে। ঠিক যেরূপটা আমরা বিমূর্ত চিত্রকলায় দেখি। আশি ও নব্বইয়ের কবিতা থেকে তাদের এই যাত্রাটা কিন্তু ভিন্ন গতিপথের। ভাবনা, চিন্তা ও কল্পনার চিত্রায়নে তারা একধরণের কোলাজ তৈরি করেছে, যা আমাদেরকে একটি কবিতায় বিচিত্র ভাবনাচিন্তার অলিগলিতে ঢুকিয়ে দেয়। আমরা একদম নির্দিষ্ট কোনো ভাবনা বা চিন্তা পাইনা। বলব বহুমূখী দর্শনের যাত্রা। যা আমাদেরকে অন্ধকার ঘরের ভেতর ছেড়ে দেওয়ার পরবর্তী দৃশ্যকল্পের ইঙ্গিত করে যাতে একক কোনো সত্তা নেই। আর দ্বিতীয় দশকের কবিতার কথা বলতে গেলে বলতে হয় এই সময় পর্বের কবিরা কখনো ট্রাডিশনাল কখনো প্রোজপোয়েট্রির দিকে যাওয়া আসার ভেতর স্থির নয়। পলিটিক্যাল ভিউয়েও এরা অস্থির। পলিটিক্যাল অসচেতনাও লক্ষ্য করা যায় তাদের কবিতায়। একেবারে সরলিকরণ আবার গল্পের ঢংয়ে কবিতা বুনন বা অনেকটা বিমূর্ততা এই প্রজন্মের কবিতাকে চাঞ্চল্য করে তুলেছে। মৌলিক পার্থক্য বলতেও আমি এসবকেই নির্দেশ করব। আমার ব্যক্তি মতে প্রথম দশকের দিক থেকে দ্বিতীয় দশকের কবিতা আমাদেরকে আরো নতুনত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেমনটা ফারহান ইশরাকের কবিতা থেকে স্নিগ্ধা বাউল বা হাসনাত শোয়েবের কবিতা।

তুমি নিজেকে কোন দশকে ভাব বা আদৌ ভাব না?

আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হয় এই দ্বিতীয় দশক সময় পর্বেই। ২য়, ৩য় বইটারও প্রকাশ এই পর্বেই। কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিটাও এই সময়ে। বলতে হয় আমার উত্থান দ্বিতীয়ের শেষ পর্বে। কিন্তু এই সময় পর্বে যারা লিখছেন তাদের বয়স বিবেচনায় আমি জুনিয়র। বিধায় জেনারেশন গ্যাপটা কিন্তু অনেক। এক্ষেত্রে আমাকে অনেকেই তৃতীয় দশকে ফেলতে চান। এসবের উর্ধ্বে আমি মনে করি আমার কোনো দশকের ট্যাগের প্রয়োজন নেই। আমি সব সময় পর্বের কবি বলে ভাবতেই পছন্দ করি।

একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?

একজন কবি ও দার্শনিকের ভেতর পার্থক্য রয়েছেই। তবে দুজনকে আমি সময়ের দ্রষ্টা হিসেবে ভাবতে চাই। কথা থাকে, কবি শুধু তার সময়কে লিপিবদ্ধ করে যান আর দার্শনিক ঘটনার কার্যকারণকেও নির্দেশ করেন। কবি তা করেন না। কবির কাজও নয় সেটা। কিন্তু দার্শনিকের কাজ জগৎ ও জীবনের স্বরূপ আলোচনা করা ।

হাংরি, শ্রুতি, নীম, কৌরব, রৌরব, নতুন কবিতা এইসব আন্দোলন কবিতাকে কতটা বদলেছে?

এই সব কবিতা আন্দোলন কবিতাকে কতটুকু বদলিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আমি বলব এসব কবিতা আন্দোলন স্বতন্ত্র বাংলা কবিতা বলতে যা বোঝায় সেই দিক থেকে কোনো বদল ঘটায়নি। বরং আমাদের কবিতাকে ইউরোপিয়ান কবিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। যা স্বভ‚মি থেকে পরাধীনতারই দিকে যাত্রাকে বোঝায়। আমাদের কবিতা বলতে আমি তো আমাদের ভ‚গোল, আমাদেও লোকসমাজের গন্ধমাখা কবিতাকে বুঝি। যা ঐসব কবিতা আন্দোলনের কবিতায় খুঁজে পাই না। হাংরি, নীম, শ্রুতি, কৌরব, রৌরব বা নতুন কবিতা আন্দোলনের কবিতাকে আমাদের বঙ্গীয় ভাবধারার কবিতা বলে মানতে পারি না। তবে অখণ্ড বাংলার কবিতার পর স্বাধীন বাংলাদেশের কবিতা যাত্রাটা কিন্তু ভিন্ন। তাই আমি ঐসব কবিতা আন্দোলনের বাঁক বদলের সঙ্গে আমাদের দেশের কবিতার বাঁক বদলের সঙ্গে মিলাতে চাই না। আমি তো মনে করি এসব আন্দোলন আমাদের অখণ্ড বাংলার মূল কবিতা থেকেও অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে! স্বীকার করতে হয় তাদের কবিতায় উচ্ছৃঙ্খলার একটা চমক ছিল, কিন্তু তা সার্বজনীন হতে পারেনি!

এই সময়ের কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদা' সম্বোধন করে। কেন?

এটা সব সময়ই ছিল বলে মনে করি। এসবে পাত্তা দেওয়ার কিছু নাই। এটা স্রেফ নোংরামী ছাড়া কিছু না। ভাবারও কিছু নাই।

এই সময়ের কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ?

যারা বেঁচে আছেন এই সময়ে তাদের ভেতর মোহাম্মদ রফিক, খালেদ হোসাইন, ময়ূখ চৌধুরী, গৌরাঙ্গ মোহান্ত, আবু হাসান শাহরিয়ার, রহমান হেনরী, জুয়েল মাজহার, ফরিদ কবির, মাসরুর আরেফীন, সাজ্জাদ শরীফ, কাজল শাহনেওয়াজ, আহমদ নকীব, কফিল আহমেদ, ফারহান ইশরাক, সঞ্জীব পুরোহীত, হাসনাত শোয়েব, মমিন মানব, জিয়াবুল ইবন, বিজয় আহমেদ, টোকন ঠাকুর, আলফ্রেড খোকন, মারজুক রাসেল, আলতাফ শাহনেওয়াজ, রাদ আহমদ সহ আরো কজনের কবিতা আমাকে মুগ্ধ করে এবং ভাবায়। রথো রাফি, ফিরোজ এহতেশাম, মারুফ রায়হানের নামটাও যুক্ত হতে পারে।

লেখকের স্বাধীনতা বলতে তুমি কী মনে করেন?

লেখকের স্বাধীনতার পূর্বে আমি লেখকের উচ্চতর শিক্ষার প্রসঙ্গ তুলতে চাই। জাতিকে যেমন লেখকের কথা বোঝার জন্যও জাতিকে যথাযথ শিক্ষিয় শিক্ষিত করার পক্ষে আমি। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শিক্ষার উৎকর্ষতার পূর্বে লেখকের স্বাধীনতা প্রশ্নটাও যথাযথ ফলপ্রসু নয়। আমি কিন্তু লেখকের স্বাধীনতার বিপক্ষে বলছি না। স্বাধীনতার পক্ষেই বলছি। একজন লেখক তার রাষ্ট্র, সমাজ ও যাপনের দর্শন নিয়ে যা বলতে চান, তাকে কিন্তু তা বলতে দেওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নৈতিকতার ভেতর পরে বলে মনে করি। কিন্তু যে দেশে যথাযথ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বিজ্ঞানমনস্কতা সর্বপোরি শিক্ষার ঘাটতি থাকে, সেখানে লেখকের স্বাধীনতা হীতে বিপরীত ঘটায়। যেমন আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই ধরেন। এখানে কিন্তু সেই অর্থে তেমন লেখক শ্রেণির উত্থান ঘটেনি। যা ঘটেছে তাতে দলদাস, সাম্প্রদায়িক স্বার্থন্বেষি প্রতিক্রিয়াশীলের উদ্ভব ঘটেছে। যারা বিভক্ত তৈরি করে যাচ্ছে। এখন এই শ্রেণির সমাজ ও রাষ্ট্রের লেখকের স্বাধীনতা কতটুকু কার্যকর? মানবিক রাষ্ট্র কায়েম না হলে কিন্তু তা অর্থহীন। সাম্প্রদায়িকতার আঘাতে হুমায়ুন আজাদের মত অনেক লেখকেই বলি হতে হবে আর অপরদিকে ভূঁইফোর লেখক সম্প্রদায়রা নবীদের পর্যায় পৌঁছে যাবে। এক্ষেত্রে আমি কিছুটা সেন্সরশিপের পক্ষে। তবে শর্ত থাকবে বিজ্ঞানবাদীতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

ধর্মের সাথে সাহিত্যের কোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে কি?

সাহিত্য সমাজের দর্পণ, এটা একদম সেকাল থেকেই বলা হয়। মানুষের জীবন যাপন ও সভ্যতার সঙ্গে যা কিছু রিলেটেড তার সব কিছু নিয়েই সাহিত্য রচিত হয়। এক্ষেত্রে সাহিত্যের কোনো বিশ্বাস নেই। এটা প্রশ্ন করাটাও অবান্তর বলে মনে করি। সাহিত্য ও ধর্ম এক নয়। ধর্ম সাহিত্য রচনার একটি উপাদান কিন্তু সাহিত্য ধর্মের কিছু না। ধর্মের বিভিন্ন বিষয় সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে আসতে পারে কিন্তু ধর্মে সাহিত্যের কিছু নির্মিত হতে পারে না। ধর্ম ধর্মীয় সাহিত্য রচনার নির্দেশ দিতে পারে মাত্র। সেই নির্দেশিত সাহিত্য পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ওঠে। ধর্মের বিশ্বাস বিশ্বাসই। এর সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ ও মানুষের সম্প্রীতির বন্ধনের পক্ষে সহায়ক নয়। সেখানে সুসাহিত্য মানুষে মানুষে সম্প্রীতির চিন্তাকে উস্কে দিতে পারে। মানবিকতাকে জাগ্রত করতে পারে। একজন সৎ সাহিত্যিক বা লেখকের সাহিত্য বিভেদের পক্ষে হতে পারে না। সেখানে ধর্ম বরাবরই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে। সাহিত্য ধর্মের উদ্ভবের পূর্ব থেকেই বিদ্যমান। ধর্ম সাহিত্যকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। এখানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিরও বিষয় আমি দেখি না। কেউ হয়তো সাহিত্যে ধর্মের সমালোচনা আর ধর্মে সাহিত্যের সমালোচনা বলে উল্লেখ করতে পারেন। এটাকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে এটা মানতে হবে ধর্ম যেভাবে পক্ষপাতদুষ্ট, সাহিত্য কিন্তু তা না। এরূপ সাম্প্রদায়িক সাহিত্য বেশি দিন বাঁচেও না।

শিল্প সাহিত্য ১৫  মঙ্গলবার ১৫ই বৈশাখ ১৪২৭, ২৮ই এপ্রিল ২০২০




ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত (জন্ম ১৯৫৩) অসংখ্য কবিতা গল্প প্রবন্ধও ফিচার লিখেছেন। স্মৃতিচারণামূলক একটি গ্রন্থ (টুকরোগুলো) ছাড়াও চারটি কাব্যগ্রন্থ (বিকেলে হ্রদের ধারে, জিরাফের বাগান, মৎস্যকন্য ও জ্বলন্ত গিটার) এবং একটি গল্পগ্রন্থ (মিসেস মালহোত্রা ও অন্যান্য গল্প) আছে তাঁর লেখা। ভারত, বাংলাদেশ ও বিদেশের নানা পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দেশ, কৃত্তিবাস, শারদীয়া আনন্দবাজার, শারদীয়া বর্তমান, সন্দেশ, সুখী গৃহকোণ, অনুষ্টুপ, দুকূল, ভাষানগর, কবিতা পাক্ষিক, কবিকল্প, কবি সম্মেলন, যুগসাগ্নিক, দৃষ্টি (বাংলাদেশ), দৈনিক সংবাদ (বাংলাদেশ) ইত্যাদি। সুদীর্ঘ সরকারী চাকরি জীবনের নানা ঘটনা ও বিদেশভ্রমণ তাঁর লেখায় এক অন্য মাত্রা যোগ করে।

লেখার শুরুটা কিভাবে ?
স্কুল পত্রিকায়। শিশু সাহিত্য পত্রিকায়। তখন টিন এজার। চল্লিশ বছর দীর্ঘ বিরতির পর আবার পত্র পত্রিকায় প্রকাশ । সব খ্যাত পত্রিকায়, গল্প, কবিতা, ফিচার, ভ্রমণ।

কোনটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ অনুভব করেন?
কবিতা।

আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?
সঠিক শিল্প সাহিত্য মানুষকে উত্তরণে নিয়ে যায়। অনুভ‚তিতে জারিত করে, যা একান্ত প্রয়োজন।

লিটিল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম,আপনার মতে ? কেন ?
কোন বিরোধ নেই। দুটোই জরুরী। লিটল ম্যাগাজিনে প্রিয় লেখা খুঁজে দেখা যায়। ফেসবুক চলমান, পুরনো লেখা চাপা পড়ে যায়। 

কবিতায় কি গল্প বলা যায় ?
হ্যাঁ। 

এই সময়ের তরুণ-তরুণী প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদা' সম্বোধন করে। কবিদের  মেরুদন্ড , স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?
ওগুলো ব্যতিক্রম। নজর কাড়ার চেষ্টা। অবজ্ঞা করাই ভালো। 

আপনি কি তরুণদেও লেখা পড়েন, আপনার পরে যারা লিখছেন?
অবশ্যই পড়ি। 

আপনার প্রিয় কবি, প্রিয় ঔপন্যাসিক ও প্রিয় গল্পকার কে এবং কেন?
একাধিক। আল মাহমুদ, রহমান হেনরী, বিভাস রায় চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, রমানাথ রায়। কে নয়? ওবীন্দ্রনাথ, নজরুলই বা বাদ যাবেন কেন? বিস্তৃত আলোচনা করা যায় না। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন নাম জুড়ে যায় আমার তালিকায়।

পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কি করতে চান?
মানুষের কাজে লাগতে চাই।

লেখকের স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?
লেখকের স্বাধীনতা সোনার পাথরবাটি। সবাই বন্ধনে থাকেন। নিজের বিশ্বাসের বন্ধনে। সেও তো এক রকমের পরাধীনতা। আসলে নৈর্বক্তিক হওয়াটা প্রায় অসম্ভব।

এপার বাংলার লেখার ভাষা এবং ওপার বাংলার লেখার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?
ততটা পার্থক্য নেই। তবে কিছু শব্দের প্রয়োগ আঞ্চলিক বৈশিষ্টের পরিচয় বহন করে।

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্ব›দ্ব কোথায়?
নির্ভর করে ব্যক্তির মনোজগতের ওপর। পার্থক্য তেমন কিছু নেই। সাহিত্যের বিশ্বাসও অনেক সময় তীব্র হতে পাওে যেমন ধর্মের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই। 

কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন?
পড়তে হবে, কেবল সাহিত্য নয়। দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, লোকাচার, বিজ্ঞান- সবকিছুই অধ্যয়ন করতে হবে। নয়ত জীবন দর্শন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

2 comments:

  1. নিয়মিত সাক্ষাৎকার পড়তে চাই।

    ReplyDelete
  2. নিয়মিত সাক্ষাৎকার পড়তে চাই।

    ReplyDelete

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক