বই আলোচনা

শিল্প সাহিত্য ১০৬


‘একাত্তরের যুদ্ধবীর’ তিন যুদ্ধবীরের বীরত্বগাথা ইতিহাস আশ্রিত এক জীবনোপাখ্যান
আশিস রহমান

করোনাকালে অবসর সময়ে পড়ে শেষ করলাম সুনামগঞ্জের লেখক-গবেষক ও সাংবাদিক মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী'র লেখা সদ্য প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই 'একাত্তরের যুদ্ধবীর'। নাগরী প্রকাশনী প্রকাশিত ১২৭ পৃষ্ঠার এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আল নোমান।

সুনামগঞ্জের দুই জন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম, আব্দুল মজিদ ও একজন বীরাঙ্গনা নারী যোদ্ধা কাকঁন বিবির যুদ্ধকালীন অবদানসহ তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক স¤পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। উল্লেখ্য, এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধাই সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা। বইয়ের লেখক এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধার সান্নিধ্য এসেছিলেন। যে কারণে প্রাসঙ্গিক ভাবেই বইটির লেখায় লেখক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি এই তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব গাথা বিভিন্ন যুদ্ধের জবানি হুবহু তুলে ধরছেন।

বইটির শুরুতেই এসেছে একজন পাহাড়ি সংগ্রামী নারীর কথা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের নত্রাই গ্রামে এক খাসিয়া পরিবারে জন্ম নেওয়া নারী কাঁকাত হেনুইঞ্চিতা। জুম চাষী এই নারী জীবনের নানান টানাপোড়ন, ভাগ্য বিড়ম্বনা, প্রেম, ধর্মান্তরিত হওয়া, বিয়ে, গুপ্তচরবৃত্তি ও শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠা সবই সুনিপুণ ভাবে একাত্তরের যুদ্ধবীর বইটিতে বিধৃত হয়েছে। লেখক নিখুঁতভাবে ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সীমান্তের ওপারের পাহাড়ি কন্যা কাঁকাত হেনুইঞ্চিতা থেকে উঠে এসে এদেশের একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিবেটি হয়ে ওঠা বীরাঙ্গনা কাঁকন বিবিকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিবর্তিতে কাঁকন বিবির মানবেতর যাপিত জীবনের দুঃখকষ্টময় দিনগুলোর কথাও একাত্তরের যুদ্ধবীরে ফুটে উঠেছে। কাঁকন বিবির জন্ম, কৈশোরকাল, বিয়ে, পাক ব্যাংকারে সম্ভ্রমহানি ও যুদ্ধযাত্রা, গুপ্তচরবৃত্তি, যুদ্ধপরবর্তী জীবন, সংগ্রামী নারীর স্বীকৃতি, সর্বোপরি তার আত্মজীবনী বিধৃত হয়েছে বইটিতে।

বীরাঙ্গনা কাকঁন বিবির পরেই এসেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীর প্রতীকের প্রসঙ্গ। অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বীর ছিলেন একাত্তরের উত্তাল মুহূর্তে বয়সে টগবগে এক তরুণ শিক্ষার্থী। দেশমাতৃকার টানে এই তরুণ সিলেট টেকনিক্যাল কলেজ ক্যা¤পাস থেকে পালিয়ে এসে পরিবার স্বজনদের ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। অন্যান্য সতীর্থদের সাথে তিনিও ভারতে ট্রেনিং নিয়ে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সাহস ও বীরত্ব দেখিয়েছেন। আব্দুল হালিম শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা-ই নন একজন সৌভাগ্যবান মানুষ ছিলেন। ভাগ্যের ফেরে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ৫ বার বেচেঁ ফেরেছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে পাঁচবার ফিরে আসা চাট্টিখানি কথা নয়। শত্রুদের মোকাবেলায় নিজের শরীরে গ্রেনেড বেধে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেন। যা এখনো কল্পনানীত এবং একজন নিখাদ দেশ প্রেমিকের পক্ষেই শুধু সম্ভব। যুদ্ধকালীন সময়ে এই বীর যোদ্ধা ছাতকের জাউয়া সেতু ধ্বংসে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। একাত্তরের যুদ্ধবীর বইয়ে সঙ্গত কারণেই লেখক তাকে ছাতকের জাউয়া সেতু ধ্বংসের নায়ক হিসেবে অবিহিত করেছেন। অসীম সাহস ও বীরত্বের ফলশ্রুতিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে স্বাধীনতা পরবর্তীতে বীরপ্রতীক খেতাবে সম্মানিত করা হয়। বইটির এই অংশে বীরপ্রতীক আব্দুল হালিমের জন্ম, বেড়ে ওঠা, কৈশোর কাল, যুদ্ধে অংশগ্রহণ, যুদ্ধ পরবর্তী জীবন পর্যায়ক্রমে তুলেধরা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের পর তার সহযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বীর প্রতীকের প্রসঙ্গ এসেছে। হালিম ও মজিদ দুজনই ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একই এলাকার বাসিন্দা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও এই দুই বন্ধু একসাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কাধে কাধ মিলিয়ে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। সবকটি বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে হালিম ও মজিদ দুজনই পর¯পরের সাথী যোদ্ধা হিসেবে একসাথে অংশগ্রহণ করেছেন। কি আশ্চর্য মিল দুজনের মধ্যে! তারা একই সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং একই যুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একইসাথে বীরপ্রতীক খেতাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আব্দুল মজিদ ছোট্ট বেলা থেকেই দূরন্তপনা ছিলেন। সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ টান ছিলো তার। মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগেই ৬০ এর দশকে তার শৈশবে তিনি ‘রাজপুতের ছেলে’ নামক সফল মঞ্চ নাটকে সেনাপতি রঘুদেবের চরিত্রে অভিনয় করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাতকের রাউলি ব্রীজ ধ্বংস, সোনাপুরের কাভারিং ফায়ার, জাউয়া সেতু ধ্বংসের অভিযান, ঝাওয়া সড়ক ও রেলসেতু ধ্বংস অভিযান, রায়ত গ্রামের যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস দেখিয়েছেন তিনি। বুরকি যুদ্ধে তার দুঃসাহসী রণকৌশল যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের খেসারত স্বরূপ তার বসতবাড়ি, ফসলিজমি ও ফলজবৃক্ষ সম্পূর্ণ ভাবে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা। বইটিতে পূর্ববর্তীদের ন্যায় আব্দুল মজিদেরও জন্ম, বেড়ে ওঠা, কৈশোরকাল, যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ যুদ্ধপরবর্তী জীবনের বিভিন্ন দিক বিধৃত করেছেন লেখক।

সর্বোপরি বীরাঙ্গনা কাকঁন বিবি, আব্দুল হালিম বীর প্রতীক ও আব্দুল মজিদ বীরপ্রতীককে ভালোভাবে জানতে এবং তাদের বীরত্ব গাথা যুদ্ধের স্মৃতি রোমান্থনের জগতে প্রবেশ করতে পাঠকের জন্য একটি পছন্দের বই হতে পারে একাত্তরের যুদ্ধবীর। এক্ষেত্রে লেখক ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। যারা মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রের রোমাঞ্চকর ঘটনা পড়তে ভালোবাসেন তারা এই বইটি পড়ে মজা পাবেন। বইটি অনলাইন পরিবেশক রকমারি ডটকমেও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের পৌরবিপনীর মধ্যবিত্ত থেকেও বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

শিল্প সাহিত্য ১০১   বৃহস্পতিবার ৮ই শ্রাবণ ১৪২৭, ২৩ই জুলাই ২০২০


রৌদ্রপ্রলাপ: বহুধারায় বিস্তৃত অনুভবের কথকতা
জারিফ এ আলম

কবিতা সবসময় মননশীল মানুষের মুখাপেক্ষী। এর ওপর কারো জোর খাটে না। আর অনুভ‚তি যে এখানে হৃদয়ের দিকে কেন্দ্রগামী তা বলাই বাহুল্য। কবি নাসিরুদ্দিন শাহ্ একদম প্রতিশ্রুতি নিয়ে লিখতে বসা কবি। তার কাছে কবিতা যে কমিটমেন্ট দাবি করে তিনি তাকে নিয়ে সাজিয়ে তোলেন ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র অর্থাৎ কবিতার বিষয় এগিয়ে যায় আত্মকথাকে ছাপিয়ে বিস্তৃত বহির্বিশ্বের দিকে। আন্তর্জাতিকতা ঠাঁই করে নেয় কবিতার অবয়বে। এ কারণে তার কবিতার ভাষা পায় প্রেম, যাপিত জীবনের গ্লাণিকর সময়, নিঃসঙ্গতা, বিভিন্ন অসঙ্গতি আর মৃত্যুর মতো পরিচিত বিষয়। তার প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘অস্তগামী জংশন’(২০১৭)। এরপর খানিক বিরতি নিয়ে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ ‘রৌদ্রপ্রলাপ’(২০২০)। প্রথম কবিতগ্রন্থের পর দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ বোধের যে বিস্ময়কর পরিবর্তন তা বুঝতে মোটেও বেগ পেতে হয় না।‘রৌদ্রপ্রলাপ’ কবিতাগ্রন্থ এ কারণেই স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার কারণ, এখানে প্রতিটি কবিতার প্রারম্ভে বিদেশি কবি কিংবা শিল্পীদের কয়েকটি করে পঙক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মার্লো, লোরকা, বায়রন, নেরুদা, ভ্যান গগ কিটস এঁদের নাম করতে পারি। এরকম পঙক্তিনির্ভর কবিতা কখনো দেখা যায় সুভাষ মুখোপাধ্যায় কখনো জয় গোস্বামীর কবিতায়ও। ব্যক্তিপ্রম কবি নাসিরুদ্দিন শাহ্ কবিতায় তুলে ধরেন সার্বজনীনরূপে। প্রেমের জন্যে যে হাহাকার, যে উদ্বিগ্নতা তার যেনো প্রতীকী রূপায়ন সবার মাঝেই ভাবাবেগ তৈরি করে। আর কবিতায় মূর্ত হয় এভাবে,

হৃদয় অরণ্যে ঝরো বাতাস আঘাত হানে
বিলোল জোয়ারের উচ্ছ¡াসে; যেখানে নেই কোন
প্রেমের প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড; কেন এ
ঝড়! একি প্রেম নাকি অনবদ্য সীমাহীনতায়
গভীর নীল কোন অস্থিরতা!
(প্রেম কি)

যাপিত জীবনে নানা বোধ, স্নায়বিক অস্থিরতা কখনো কখনো তুমুল আলোড়ন তৈরি করে মনে। নিজের ছায়াও কখনো তার অস্তিত্ব জানান দেয় কিংবা বহু ছায়ার মাঝে সেও চলে মহাকালের দিকে। এ যেনো নার্সিসাসের সেই আত্মমগ্নতার ঘোর। এখানে সেটিই প্রতিভাত হয়,

মধ্যবিত্ত আতত ছায়াগণ নিয়মিত খোঁজ রাখে তাদের
একবমত্ত সম্ভাবনার বাস্তবতায়। আলো আর আঁধারিয়া
চোখ অবতল দৃশ্যের ব্যতিক্রমী প্রিজম পান করে যায়
অবসরের স্তব্ধতায়। একি এক চ‚ড়ান্ত নার্সিজম!
(আতত ছায়াগণ)

মৃত্যুচিন্তা মানুষের মনে সৃষ্টির শুরু থেকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মিশরের ফারাও রাজাদের মৃত্যুর পর  তদের দেহ মমি করে রাখা হতো। এটা সেই মৃত্যুচিন্তা থেকেই উদ্ভূত। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্যে মানুষ কতো চেষ্টাই না করেছে! তবু একে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি কখনো। বর কবি নাসীরুদ্দিন শাহ্ তার অনুভ‚তির ছকে মৃত্যুর চিত্ররূপ এঁকেছেন এভাবে,

দুটি চোখ তাড়িয়ে বেড়ায়
স্পর্শের বেদিতে যাপন
কলাপাতা নড়ে গেলে বুঝবেন
মৃত্যু এগিয়ে আসছে ধীরে
জানালা খুলে দেবেন
একমাত্র মৃত্যুই দেবে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ

মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবীতে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সংগ্রাম করে যেতে। জীবন বাঁচাতে, স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে। যারা এই পথপরিক্রমায় পিছিয়ে যায় তারা মূলত ছিটকে পড়ে বর্তমান থেকে। শেক্সপীয়রের ভাষায়, রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করে যেতে হয়। আর মায়ার খেলা চালিয়েই যেতে হয়। কবির কবিতা আশাবাদী করে জীবনের পথে, 

থেমে যেতে নেই প্রমিত এই ক্ষণে
উতপ্ত উন্মাদ যাযাবর
অর্থহীন ফানুস কাচঘরে
পড়ে আছে নৈঃশব্দ্যের হিমঘরে
থেমে যেতে নেই প্রমিত এই ক্ষণে
মায়ার খেলা ভুলে থেমে যেতে নেই

‘রৌদ্রপ্রলাপ’ কবিতাগ্রন্থেও রৌদ্রপ্রলাপ কবিতাটি এখানে বিশেষত্বের দাবিদার। এই যে মানুষের জীবনে কতো চাওয়া-পাওয়ার হিশেব এসব কেবল বাড়তেই থাকে। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। সে চলে দুর্বার গতিতে। তবু কখনো সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে ডাকে এভাবে,

বেঁচে থাকার ট্রেন চলেছে নির্বাক প্রদোষে
রৌদ্র প্রলাপে বটপাতা ঝিরিঝিরি গান গায়
ঘুমঘোর মৃত্যু এসে কানাকানি করে যায়
যেন সমস্ত অচল মুদ্রায় প্রাণ ফিরে পাষাণে
(রৌদ্রপ্রলাপ)

কবি নাসিরুদ্দিন শাহ্ তার ‘রৌদ্রপ্রলাপ’ কবিতাগ্রন্থে কবিতার বিষয় বিন্যাসে অত্যন্ত সচেতন। যা নানা রং-রূপ-রস কবিতাগ্রন্থটিকে আলাদাভাবে চেনার সুযোগ করে দেয়।

শিল্প সাহিত্য ৫৪ শনিবার ২৩শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৬ই জুন২০২০


কবি সৌমেন সাউ ও ‘যদি সব সত্যি বলতে পারতাম’
শান্তম 

“এই পৃথিবীর কেউ জানে না / আমার একটি আশ্চর্য সুন্দর গাছ আছে / এই পৃথিবীর কেউ জানে না / এই পৃথিবীর কেউ জানে না / যার জন্য আমি আরও এক হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারব / আরও এক হাজার বছর” (এই পৃথিবীর কেউ জানে না)।
শুধু কী মুগ্ধতা! না আলোর গান! কবি সৌমেন সাউ সন্ধান করে চলেছেন এক আলোবিন্দুর। যে শুধু তার আলো দিয়ে বহুবর্ণ পৃথিবীকে পরিচিত করে না, চিনিয়ে দেয় অন্ধকারকেও; সমূহ অন্ধকারের ভেতরের আলোকেও। এত এত অসুন্দর! সুন্দও কোথায়! সমাজ ও পৃথিবীর তির্যক দৃষ্টির পাশে সে ভীষণ একলা-
“এখানে - ওখানে / তীর্থের কাকের মতো বসে থাকা দু-একটি মানুষ / ফুল কুড়িয়ে যায় / কথার আড়ালে, চোখের আড়ালে” (নির্ভরতা)
কবিকে আহত করে এই পৃথিবীতে ক্রমশ ফুরিয়ে আসা ভালোবাসা-
“তুমি জানো না তৃণা / এখানে কেউ কাউকে ভালোবাসে না / এখানে মানুষের চারপাশে সারাদিন ধুলো ওড়ে / কেউ কাউকে দেখতে পায় না”। (নিরাশ্রয়)
তাই তাঁর প্রার্থনা-
“এই পৃথিবীকে সবাই যেন ভালোবাসে” (প্রার্থনা)
কবির চোখ পৌঁছে যায় সম্পর্কের রহস্যময় প্রদেশেও। তিনি লক্ষ্য করেছেন বহুদিন ধরে সম্পর্কের আপাত সহজ রূপের ভেতরে মিথ্যেগুলি থাবা বসায়, মিথ্যে সত্য হতে চেয়ে ধ্বংস করে সংবেদ ও সূ² হৃদয়বৃত্তিগুলিকে-
“এই ভঙ্গুর পৃথিবীতে / কেউ একজনও আর একজনকে বোঝে না / তবু প্রত্যেকে কাউকে না কাউকে জড়িয়ে ধরে বলে / আমি তোমার সবটুকু বুঝি যা কেউ বোঝে না “(এই ভঙ্গুর পৃথিবীতে)
তাই দুঃখের কাছে গিয়ে বলেন-
“আমি আমার অন্ধকার মাখা গ্রামে / একা পৃথিবীর কথা লিখছি / বিপর্যয়কে একপাশে সরিয়ে / আমাদের রাখাল ছড়ানো রোদে প্রেমের মুকুট পরেছে / আর তাকে ঘিরে চড়ুই, ফিঙে, শালিক নেচে যাচ্ছে”(এই পৃথিবী)
এত ধ্বংসে শোকসন্তপ্ত পৃথিবী । কিন্তু ধ্বংসের সমান্তরালে সৃষ্টিও নিয়ত ক্রিয়াশীল-
“বৃষ্টি হল খুব / সৃষ্টির দিকে সমস্ত দরজা খুলে গেল-” (ধর্মরাজ্য)
অসুখ আক্রান্ত এই পৃথিবীকেও তিনি দেখতে পেয়েছিলেন বেশ কয়েকবছর আগেই। তাঁর দূরদৃষ্টি পাঠককে অবাক করবেই-
“কিছু হোক কিংবা না হোক / একবার তো ভালো হোক পৃথিবীর ছোঁয়াচে অসুখ”  (আয়ুষ্কাল)
এই অসুখ থেকে বেঁচে ওঠার গানও তিনি গাইলেন সেদিনই-
“বহুদিন একা হয়ে আছি, বহুদিন / বহুদিন গাছ হয়ে আছি / মানুষের ভিতর, অনন্ত নীল আকাশের নীচে / একা হয়ে নিজের কাছে একা উঠে দাঁড়াই” (একা হয়ে আছি)
বাংলা কবিতার এই সহজিয়া সাধক কত সহজ করে বলেন ভালোবাসার কথা,  আশার কথা তা সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার কাছে বিস্ময় বলেই মনে হয় । কতখানি কবিতাময় তাঁর শব্দগুলি কিম্বা শব্দগুলির মাঝখানে থাকা শূন্যস্থান-
“আজ কুড়ি জুন, তোমার জন্মদিন / তুমি অশোকগাছের নীচে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা ভাবছ / যে-কথা এর আগে কেউ এমন করে কখনো ভাবেনি / আমি  একজন্ম থেকে আর-এক জন্মের দিকে পা রেখে বলি / কবি, আরও বৃষ্টি, আরও ভালোবাসা এনে ভরিয়ে দাও / এই বাংলার ভগ্ন হৃদয়গুলি” (তোমার জন্মদিনে )
পঞ্চান্নতম বসন্তের সামনে দাঁড়ানো এই কবি জীবনকে এঁকে চলেছেন গভীরতম ভালোবাসায় । আলোর সন্ধানে নিমগ্ন এই কবিকে শুধু শ্রদ্ধা নয় অন্তরের ভালোবাসাও।

শিল্প সাহিত্য ৫৩ শুক্রবার ২২শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৫ই জুন২০২০
ফিহা সমীকরণ: হুমায়ুন আহমেদ
কামরান সরকার
     
উপন্যাসে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখ। যেখানে মানুষ জাতি দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এক দল সাধারণ মানুষ আর এক দল মানুষের তৈরি মেন্টালিস্ট। যারা অধিক মানবিক গুণ সম্পন্ন। যাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা রয়েছে। যারা মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উপন্যাসের নায়িকার নাম হুমায়ুন আহমেদ স্যার নিজের ব্যাক্তিগত নাম ব্যাবহার করেছেন। উপন্যাসের মূল চরিত্র মহামতি/মহামহি ফিহা। যিনি একজন পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি সময় সমীকরণ নিয়ে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষদেও মেন্টালিস্ট নিয়ে কৌতুহল। সাধারণ মানুষরা মেন্টালিস্ট সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে না কিন্তু মেন্টালিস্টরা সাধারণ মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা চাই পৃথিবীতে শুধু মেন্টালিস্টরা থাকবে। উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ খুব অল্পসময়ের, চরিত্র সংখ্যাও খুব অল্প। প্রত্যেকটা সাইন্স ফিকশন/ উপন্যাস/ গল্পের মত এই গল্পের সমাপ্তিও খুব সাধারণ সাইন্স ফিকশনের মত হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু এই অল্প কয়েক পৃষ্ঠার গল্পের মধ্যে লেখক স্পেশ টাইম এর এত সুন্দর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। বিশ্বব্রহ্মান্ড এর সময় যে চক্রাকারে ঘুরছে সেটাই প্রকাশ হয়েছে।
ভাল লাগা উক্তি: মানুষ দেবতা বিশ্বাস করে না কিন্তু মানুষের ভিতর থেকে দেবতা খুঁজে বের করতে পছন্দ করে

প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ, প্রকাশনী: আফসার ব্রাদার্স, পৃষ্ঠা: ৭৮ মূল্য: ১২৫

শিল্প সাহিত্য ৪৮ রবিবার ১৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩১ই মে২০২০
ময়ূরাক্ষী : হুমায়ুন আহমেদ   
কামরান সরকার

ময়ূরাক্ষী নদীকে একবারি আমি স্বপ্নে দেখি। নদীটা আমার মনের ভেতর পুরোপুরি গাথা হয়ে যাই।

ময়ূরাক্ষী হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর হিমু সিরিজের প্রথম বই। বইটিতে হিমুর রহস্যময় চরিত্রটা এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, এমন পাগল একটা চরিত্র কিন্তু সবাই ভালোবেসে ফেলবে। হিমুর নদীটা তার পছন্দ তাই নদীটাও হিমু তার পছন্দের মানুষদের দিতে চায়। উপন্যাসের হিমুর বন্ধবী রূপাকে নদীর নাম দেয়, হিমুর ফুপাতো বোন রিনকি ও তার জামাইকে নদীটি ব্যাবহার করতে দেয়।
উপন্যাসে হিমুর আশেপাশের চরিত্র এবং তাদের সাথে হিমুর কথা-বার্তা, হিমুর ভাবনা চিন্তা ও হিমুর বাবার উপদেশ দিয়ে লেখক মহাপুরুষের কিছু গুণ প্রকাশ করেছেন। হিমুর বাবার উপদেশ মহাপুরুষেরা মায়ার বাহিরে থাকবে,  সম্পদের চিন্তা থাকলে কষ্ট থাকবে। উপন্যাসের মজিদকে দিয়ে নির্লিপ্ততার উদাহরণ দিয়েছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার মধ্যে একটা মজা আছে সেটা হিমুকে দিয়ে বুঝেছি, আর এই বিষয়টাই আমার কাছে হিমু চরিত্রের সবচেয়ে মজা লেগেছে।  
 ময়ূরাক্ষী উপন্যাসের কিছু কিছু উক্তি খুব ভালো লেগেছে-
-মহাপুরুষ হচ্ছে এমন একজন যাকে  পৃথিবীর কোনো মালিন্য স্পর্শ করেনি।         
-কিছু কিছু প্রশ্ন আছে যা কোনোদিন করা হয় না। 
-যা পাওয়া যায় না তার প্রতি আমাদের আগ্রহের সীমা থাকে না। মেঘ আমরা কখনো স্পর্শ করতে পারি না বলেই মেঘের প্রতি মমতার আমাদের সীমা নেই।
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ, অনন্যা প্রকাশনী পৃষ্ঠা: ৭৫ দাম: ১৩৫ টাকা

শিল্প সাহিত্য ৪৫  বৃহস্পতিবার ১৪ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৮ই মে২০২০
রাতুলের রাত রাতুলের দিন : মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল   
কামরান সরকার
বইটির ঘটনা প্রথম থেকেই অনেকটা অবাস্তব মনে হবে। রাতুলের লাফিয়ে জাহাযে উঠা থেকে শুরু করে অনেকটাই নায়কের ওভার একটিং হয়েছ। সবারই বইটা পড়ে তাই মনে হবে।
কিন্তু বইটি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। নিজেকে নায়ক হিসেবে ভেবে পড়তে লাগলে অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে। বইটি এডভেঞ্চার উপন্যাস হিসেবে খুবি পাঠ-দায়ক। বইটিটে লেখক তার ধারণা গল্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীটা যে কম্পিটিশনের উপর টিকে আছে সেইটা প্রমাণ করেছেন কিন্তু পৃথিবীতে টিকেতে হলে একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে সেইটা দেখিয়ে দিয়েছেন।
গল্পে লেখক কিছু চরিত্র তুলে এনেছেন যেই চরিত্র গুলোর সাথে আমারা পরিচিত কিন্তু তাদের ভিতরের মানসিকতা আমাদের দৃষ্টির অগোচোরে ।  সেই চরিত্র গুলা লেখক আমাদের সামনে বাস্তবের মত ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটাতে আমার পথশিশুর সাথে সবার আচরণটা আমাদের বাস্তব জীবনের প্রতিছবি ফুটিয়ে তুলেছে। বইটি প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন।
আমি উপন্যাসটি অনেক বার পরেছি। যত বার পড়েছি খুব ভালো লেগেছে। পড়বেন বইটি অবশ্যই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।

শিল্প সাহিত্য ২৩  বুধবার ২৩ শে বৈশাখ ১৪২৭, ৬ই মে ২০২০

পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর পড়ে যা মনে হলো
জারিফ এ আলম

কবি ওবায়েদ আকাশের কবিতাগ্রন্থ 'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর(২০২০)। কবিতাগ্রন্থটিতে তার বেড়ে ওঠা গ্রামের (সুলতানপুর) যে চিত্র তুলে ধরেছে তা বাংলার প্রতিটি গ্রামেরই এক অপরূপ ছবি। মধ্যযুগের কাব্য অন্নদামঙ্গল চণ্ডী মঙ্গল মনসামঙ্গলে যে টোটেম ট্যাবুর পরিচয় পাওয়া যায় সে-রকম পরিচিতি 'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর' কবিতাগ্রন্থেও পাই। সে-সময়কার কবিতাগুলোতে কবিরা তাদের কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা হিশেবে বিভিন্ন দেবীর স্বপ্নাদেশের কারণে কবি তার কাব্য সৃজনে ব্রতী হয়েছেন; কাব্যসূচনাপর্বে এটা উল্লেখ করেছেন। তারপর তার নাম তার ধাম তার বংশপরিচয় বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। আধুনিকমনস্ক কবিরা তা উল্লেখ করেন নিজস্ব চিন্তাকল্প দিয়ে। কবি ওবায়েদ আকাশ তার কবিতাগ্রন্থের প্রথম কবিতায় নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে,
'আমার পক্ষে দাঁড়ালো সুলতানপুর
আর প্রতিপক্ষ-
কুমার নদের পার, ১২ নং ইউনিয়ন পরিষদ, ধুলো-ওড়া পথ, ষড়ঋতু অন্তবর্তী প্রাচীন বিদ্যালয়, তেমাথা, বোর্ড অফিস, খেয়াঘাট
ডাকঘর-খলিলপুর বাজার, উপজেলা-রাজবাড়ী সদর, আর
জেলা: রাজবাড়ী।
(সুলতানপুর প্রতিপক্ষ)

টোটেমের যে ব্যবহার তা কবি নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। একারণেই কবির কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়,
'আমার ঘুমের ভেতর বিভোর নাচিয়ে এক
হরিয়াল ঠ্যাং
ধূসর নকশার ভাঁজে, নিভৃতে
দুচোখ মুদ্রিত মুকুর, কিশোর বয়স
ঝাঁকবাঁধা হরিয়াল-দিনে
মগ্নপাঠে উড়ে যায় পালকের ছুঁতায়
             (হরিয়ালের ঠ্যাং)

ট্যাবুর কথা মধ্যযুগের কাব্যে অনেকভাবে তার পাশাপাশি টোটেমও ছিলো। বিভিন্ন গাছপালা, নদী, পশুপাখি টোটেমের অন্তর্ভুক্ত হতে দেখা যায়। ট্যাবু বিষয়টি হয়ে উঠেছিল বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ওপর। কবি ওবায়েদ আকাশ তাই উল্লেখ করেছেন। তেমনি একটি কবিতা এরকম,
'সে তো সেউ নিতান্ত চারা-বেলা
বুঝেছি কি শুভঙ্করের ফাঁকি!
তবু মনে পড়ে-গা ছমছম
বাটিচালানের রীতি, আজব হাত-খোলা!
      (বাটিচালানের ভীতি)

এছাড়া মাধুকরী ভয়, সুলতানপুরে ওঠে আততায়ী চাঁদ, বাত খসাই, শিঙ্গা লাগাই এই পর্যায়ের কবিতা।
'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর' কবিতাগ্রন্থ নানা স্বাদের কবিতার সন্নিবেশ; যা লৌকিক-অলৌকিক বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কৈশোর-তারুণ্যের নানা ঘটনার এক মোহময় জীবনের আখ্যান। আর কবির কাছে তাবৎ পৃথিবী নয় নিজগ্রামকে মনে হয় রঙিন মনে হয়েছে। তার ভাষায়,
'আর আমি জানি পৃথিবীটা সাদাকালো আর
সুলতানপুর অবাধ রঙিন।'
       (ফিরে যাওয়া তার চেয়েও রঙিন)

আর কে না জানে, নিজ গ্রাম, জন্মভূমি রঙিন আর বিচিত্র অনুভবের! 'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর' কবিতা গ্রন্থটিকেও বলা যায় নানারঙের বহুবর্ণিল চিত্র ও ভাবনার মেটাফর।

শিল্প সাহিত্য ১৯  শনিবার ১৯শে বৈশাখ ১৪২৭, ২রা মে ২০২০

সফিক জামান এরমাসাইমারা ওয়াইল্ড সাফারি
ইমা নুর

যারা প্রকৃতিপ্রেমী, বন্যপ্রাণী প্রেমী এবং ভ্রমনকাহিনী খুব পছন্দ করেন তাদের জন্য মাসাইমারা ওয়াইল্ড সাফারি দুর্দান্ত একটি বই।
কেনিয়ার মাসাইমারা ওয়াইল্ডদের নিয়ে লেখা চমৎকার একটি ভ্রমনকাহিনী। এই বইটিতে লেখক তার বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার কথা চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
লেখক খুব কাছ থেকে সেখানকার বন্যপ্রাণীদের বিচরণ করতে দেখেছেন, দেখেছেন তাদের হিংস্রতা। দেখেছেন সিংহির শিকার ধরাশায়ী করার জন্য প্রানান্তকর পরিশ্রম ক্ষিপ্রতা এবং কোন রকম পরিশ্রম ছাড়াই পশুরাজ সিংহের খাবার গ্রহণের অগ্রাধিকার। আর দেখেছেন হিংস্র হায়েনার সিংহদের খাবার চুরি করার অভিনব পদ্ধতি।
আফ্রিকার মাসাইমারার ওয়াইল্ডবিস্টদের প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রাম খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন।মাসাইমারার গ্রেট মাইগ্রেশনের সময় দুর্গম খোরস্রোতা মারা নদী পারাপারের সময় বন্যপ্রাণীরা কিভাবে জলে ওৎ পেতে থাকা হিংস্র কুমিরের খাবারে পরিণত হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনা প্রবাহগুলো আপনারা জানতে পারবেন।
লেখক হট ইয়ার বেলুনে চড়ার নিজের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথাও সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।সেখানে তিনি কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে মাসাইমারার বিস্তীর্ণ বিশাল তৃনভূমি, হাজার হাজার প্রাণীদের বিচরণ এবং সাভানার অন্যরকম একটা বিস্ময়কর জগৎ স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
শুধু ওয়াইল্ড সাফারি নিয়েই নয় সমগ্র কেনিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মাসাই জনগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনাচরণ খুব দারুনভাবে বর্ণিত হয়েছে।আপনি যখন বইটি পড়বেন তখন এক দারুন ঘোরলাগা কাজ করবে। আপনার কাছে মনে হবে আপনিও কেনিয়ার মাসাইমারার দুর্গম, গা ছমছমে পরিবেশে হিংস্র জন্তুদের সাথে বিচরণ করছেন। এই বুঝি আপনিও যেকোন সময় তাদের খাবারে পরিনত হবেন। আমার সাথে তা- হয়েছিলো।
এক কথায় বইটি অসাধারণ লেগেছে!আপনারা যারা এখনো বইটি পড়েননি তারা দেরি না করে বইটি সংগ্রহ করুন এবং পড়ুন।আশাকরি আপনাদেরও অনেক ভাল লাগবে।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক