সাম্য রাইয়ান

সাম্য রাইয়ান


জন্ম ৩০ ডিসেম্বর
জন্ম ও বেড়ে ওঠা: বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। সম্পাদনা: লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’ (bindu.bangmoy.com)
প্রকাশিত পুস্তিকা:
সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট (গদ্য), বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা (কবিতা), মার্কস যদি জানতেন (কবিতা), হলুদ পাহাড় (কবিতা)।

সাম্য রাইয়ান

দাঁত মাজা আর চাকু ধার দেয়ার মধ্যে আদতে কোন পার্থক্য নেই, যদিও বিষয়দুটিকে আলাদা মনে হয়


তার একটা গ্লাস ছিল

তার একটা গ্লাস ছিল। সেই গ্লাসে সে জলপান করত। অবশ্য দুধপানও করত। তবে ইদানীং প্রকৃত দুধপ্রাপ্তিজনিত দ্ব›দ্ব এবং মূল্যবৃদ্ধিহেতু জলপানপাত্র হিসেবেই তা থিতু হয়েছে। তবে আরো একটা বিশেষ ক্ষেত্রে এর নিয়মিত ব্যবহার লক্ষ্যনীয়, চাপানক্ষেত্রে। বাড়িতে খুব একটা, প্রায় কখনোই চা বানানো হয়ে ওঠে না; বিশেষ সময় ছাড়া। তাই প্রতিদিন সকালে পাশের চা-দোকানে যেতে হয় ঐ গ্লাস নিয়ে। আর দোকানী সকালেই বেশ ব্যস্ত-ব্যস্ত একটা ভাব নিয়ে উচ্চ থেকে, আশীর্বাদের মতো, গ্লাসে ঢেলে দ্যায় চা।


প্রতিদিন যে দৃশ্যে আক্রান্ত হতে হতে

আমরা প্রতিদিন যাওয়া-আসার মাধে পূর্বাংশে/অনুচ্ছেদে বর্ণিত চা-গ্লাসযুক্ত দৃশ্য অবগত হই। অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া এই দৃশ্যের প্রতি আমার বিশেষ মনোযোগ জন্ম নিতো না, যদিনা আমার মানবতাবাদীফ্রেন্ডটি এই বিসয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। আমি ব্যাথিত হই...  আহারে...  ওহ্...


মেশিনচালিত শহুরে দিনরাত্রি

আবার প্রথম থেকে, নতুন করে লিখছি পুরোটা

বিগত সময়ের কর্মকে কেটেকুটে, ব্যাপক

কাটাকাটি হলেও নতুনে রয়েছে ছাপ, পুরানের

চিহ্নিত হচ্ছে ধীরে, না-লেখা কলম, তেলের কাগজ

তা-হোক, তবু আবিষ্কৃত হোক প্রকৃত যাপন

আদিম শ্রমিক আমি; মেশিন চালাই।

মেশিনে লুকানো আছে পুঁজির জিন

চালাতে চালাতে দেখি আমিই মেশিন

- মেশিন

শহরে প্রতিদিন একই মানুষ

একই ভাবে

একই সময়ে

একই পথে

একই গন্তব্যে চলে যায়।

একটার পর একটা দিন, একটার পর একটা রাত, একটার পর একটা মাস কেটে যায়। বাবার ঘাড়ে থাকাকালীন সময়গুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। আমার সাবেক মানবতাবাদীফ্রেন্ডটি বহুজাতিকের গু-মুত চেটেচুটে বেশ আয়রোজগারের একটা ব্যবস্থা করে লুম্পেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েও,পৃথিবী নাট্যশালাহেতু এই রঙ্গমঞ্চে সমাজ-উন্নয়নকর্মী চরিত্রে অভিনয় করতে থাকে।


দোকানী আশীর্বাদ করে গুচ্ছগ্লাসে

তাদের প্রত্যেকের একটা করে গ্লাস আছে। সেই গ্লাসে তারা জলপানকরে, চাপানকরে। একটিমাত্র টিউবঅয়েল থাকার কারণে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে গ্লাস বাড়ায়, জলপানকরে। চা-দোকানের বাইরে, উঠোনে বসে, আশীর্বাদ করার মতো করে নিজ গ্লাস বাড়ায়, চা নেয়; চাপানকরে। দোকানীর ব্যস্তভাব কখনোই কাটে না।


পৃথিবীর দেহে ধার হচ্ছে জঙধরা চাকু

দীর্ঘদিন পর একসকালে আমি ঐ পথে যেতে তাকে দেখতে পাই, এভাবে তাকে আমি কখনো দেখিনি, তার ঐ গ্লাসটি ছাড়া, সে তখন দাঁত মাজছে...


******************

লোকালয়ে

এত রক্তপাত ভেঙে- আধোলীন পথ ক'রে
কার কাছাকাছি যাবো, কার ঘুমের মধ্যে ঢুকে পড়বো,
কারই বা হৃদয় থেকে ছিঁটকে পড়বো তুমুল;
আলোড়িত শীতের সকাল!

বন্দুকের গভীর থেকে বেরিয়ে তোমার কাছে
ছুটে যাবো বলে ঘুম থেকে উঠি!

ইচ্ছে করছে প্রতিটি ভোরের কানে মুখ লুকিয়ে
বলি, সমূহ ঢেউ থেকে ছিঁটকে যাচ্ছে তুষারখণ্ড মন।
পাড়ার মসজিদে মিনার থেকে মর্মতলে দীর্ঘ হাহাকারে
সকালভর্তি বেদনাদানা বিপুল আহ্লাদে ভেসে যাচ্ছে।
অনন্ত উন্মোচনের মধ্যপথে আশ্চর্য নিপুনতায় ভাঙা কাচ
লুকিয়ে ফেলছে পুরোনো প্রেমিকের জুতো।

তবু অলৌকিক পালকের মহিমাগাঁথা ধরে হাজির হলে
সমাধিমন্দিরে, আমি ভিন্ন উচ্ছ¡াসে লোকালয়ে ফিরে যাবো।

উজ্জয়িনীকে

তামাক ফুলের দেশ - রসুনের বন
ক্লান্ত কুটোপণ্যের পসরা অথবা
নবীন মৃত্যুগন্ধা বিছানায়; কোথাও
থেকোনা লীন। এমনই কতোদিন
নদীফলের দেশে কতো মেয়ে ঢেউয়ের
চূঁড়ায় ভেসে - চলে গেছে দূর-তেপান্তর।
তোমারই মতো তারা ঘুমের ভেতরে নেমে এসেছিলো
বেড়ালের ডানা থেকে রূপোলী রাত্রিতে।
অচেনা ডাকাতেরা লুট করে গেছে
আমাদের 
অগণিত
গোলাপী পাপড়ির মতো ভোর।
সেইসব বেদনা ফোটার দিনে একটা দূরাগত
প্রতীককে সঙ্গীতে রূপ দিতে দিতেই
অনাহুত দিনগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে!


বরই পাতার দেশ

অসুস্থ্য ভোরের মুখে দাঁড়িয়ে
ভাবি, কার কাছে যাবো!
বরই পাতার দেশ, উপ-দেশ
এ কেমন ঝরণাধারা?

জ্বরের মূর্ছনা! ভোর থেকে রাত।

কবরভূমিতে দাঁড়িয়ে
থাকে, অন্ধকার ফলানো
চুপচাপ গাছ।

মরহুম পাতাগুলি শুধু
আটকে তাকে জীবনের পরে।
সহজ বেদনা নিয়ে
অর্ঘ্যডালা জাগে
জ্বরের মৌনতা ভেদ করে।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক