অণুগল্প

শিল্প সাহিত্য ১১২


কিছুই হয়নি

নির্মাল্য ঘোষ 

ম্যাসেঞ্জারে প্রথম আলাপ।তারপর কয়েকটি ভালো ভালো কথা বলে প্রেম নিবেদন ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন করা।তারপরেই আচমকা একদিন গোপন ছবি চেয়ে বসা।প্রথমে অমত থাকলেও অভিনয়ের কাছে হার স্বীকার। ফোটো পাঠাল।ধীরে ধীরে আরো গোপন ফোটো গেল  সেও বিশ্বাস অর্জনের জন্য নিজের কিছু ফোটো পাঠিয়েছিল। ধীরে ধীরে মেয়েটি দেখল তার পাঠানো গোপন ফোটোগুলো সবার হাতে হাতে। সোস্যাল মিডিয়াতে ছয়লাপ। সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল হঠাৎ কে যেন ছিঁড়ে নিল। পরিবারসমাজ চোখ লাল করে বিছিন্নতার তোড়জোড় শুরু করে দিল। প্রশাসন পরিবারের নালিশ  পেয়ে তদন্ত করার আশ্বাস দিল। কিছুদিন বাদে মেয়েটির সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গেল তার ঘর থেকে। সহানুভূতি কিম্বা সমালোচনার ঝড় উঠল। ঝড় থেমে গেল। জীবন এগিয়ে চলল। তারপর আরো  একটি মেয়ে ম্যাসেজ পেল তার মোবাইলে- " যদি ভালবাসো তাহলে যেটা আমি দেখতে চাই এক্ষুণি পাঠাও।

শিল্প সাহিত্য ১১০


মহামারী

বিপুল রায়

আলুর বস্তা কাঁধ থেকে নামিয়ে রেখে খুব জোরে হাঁচে বিশু । শরীরটা বেশ কিছুদিন ভাল নেই। গায়ে জ্বর। 

বাদলের পাশে বসে সে বিড়ি ধরায়। আজ শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। গত দু’মাস কামাই বন্ধ। তার বউ শিবানী চার বাড়িতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে। তারাও কাছে আসতে বারণ করেছে। প্রথম দু’মাস ঠিক মতন মাইনেপত্তর দিয়েছিল। গত মাস থেকে তাও বন্ধ।

বাদল সকাল সকাল আলু, পিঁয়াজ, আদা, রসুন নিয়ে বসে পড়েছে। খদ্দেরের অভাব নেই। কেউ তেমন দরদামও করছে না।

বিড়ির শেষ টানটা জোরে দিয়ে বিশু মিনমিনে স্বরে বলল, বাদল আমার পাওনাটা দিয়ে দে। বাড়ি ফিরে যাব। শরীরটা ভালো ঠেকছে না। সামনের বস্তা তুলে কুড়ি টাকা বের করে বাদল বিশুর দিকে বাড়িয়ে দিল।

এ কিরে? পঞ্চাশ ছাড়। সকাল থেকে দশ বস্তা আলু বয়ে আনলাম। তোর আক্কেল কি রকম?

ঝাঁঝিয়ে উঠে বাদল, যা পেলি তাই নিয়ে কেটে পড়। মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করিস না। লক ডাউন চলছে। দেখছিস তো খদ্দের নেই।

বাজার থেকে চলে আসে বিশু। গায়ে জ্বরটা আবার বেড়েছে। ধীর পায়ে বাড়ির সামনে এসে দেখে পুলিশের গাড়ি, পাশে অ্যাম্বুলেন্স । তাকে দেখেই পাড়ার ছেলেরা পুলিশ অফিসারকে বলে, স্যার, এসে গেছে। ধরুন স্যার। ওর বেশ কিছু দিন জ্বর। খুক খুক কাশি, সর্দি। নির্ঘাৎ করোনা স্যার। বিশু করোনা হাসপাতালে দু’দিন পর মারা যায়। তাকে শেষবারের জন্য  দেখতেও পায় না শিবানী।



শিল্প সাহিত্য ১০৯


এবং কুমুদ

শুভা গাঙ্গুলি

কুমুদিনী ছাদে তাঁহার মেঘসদৃশ কেশদাম শুকাইতেছিলেন, তিনি প্রত্যহ দুপুর দুইটা হইতে চার ঘটিকা ছাদে ঘুরিয়া ঘুরিয়া গান করিতে করিতে তাঁহার চুল শুকান। কুমুদিনী ঊনত্রিশ বৎসর বয়স্কা বাল্যবিধবা, বাল্যে ছয় বৎসর বয়সে কুলীন প্রথায় বিবাহ নয় বৎসরে বৈধব্য যোগ, কুমুদ স্বামীকে চিনিত না, মরিলে বিন্দুমাত্র দুঃখিত হয় নাই, পিতৃদেবের স্বচ্ছল অবস্থা তাই তাহার জীবন সুখেই কাটিত, কিন্তু তাহাকে তখনকার নিয়ম কানুন অনুযায়ী  গৃহবন্দী হইয়া থাকিতে হইতো।

 

গল্প এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো, কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো কুমুদের দাদা বিলাত হইতে তিনটা পাশ করিয়া ফিরিয়া আসিলে, সে আসিয়া কহিলো কুমুদ লেখাপড়া শিখিবে, কেবলমাত্র নির্জলা উপবাস করিয়া জীবন কাটাইবে না।

বিদ্যাসাগর মহাশয় মেয়েদের শিক্ষা নিয়া অনেক ব্যবস্থা করিয়াছেন, কুমুদ বিদ্যালয়ে যাইবে আর পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্পকর্মও শিখিবে, খেলাধুলাও করিবে। রায় বাড়ীতে বড় ছেলের কথা মান্য করা হইতো, তাই কুমুদের বন্দীদশা ঘুচিলো কিন্তু অন্য অশান্তি দেখা দিলো। তাহার বয়সী মেয়েদের অভিভাবকরা এই রীতিকে প্রশ্রয় দিলো না ফলে কুমুদ সখীহীন হইলো, কিন্তু কুমুদ দমিবার পাত্রী নয়। সে সকলকে বুঝাইয়া গুটি কতক ছাত্রী জোগাড় করিলো, পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলো, ইস্কুল পাস করিলে দাদা পুনরায় বিবাহের চেষ্টা করিতে লাগিলো, ততদিনে। বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবা বিবাহ আইন পাশ করিযাছেন, সেই হেতু দাদা বোনের বিবাহের জন্য ব্যস্ত হইলো।

কুমুদ ছোটবয়সে বিবাহ নামক প্রণালী সম্পর্কে কোনো ধারণা করিতে পারে নাই, এখন দেখিলো এবং বুঝিলো আইন পাশ হইলেও বাল্য বিধবার বিবাহ সহজ নহে, নারী ঘরে পচিয়া মরিবে কিন্তু বাহিরের জগতে যাইতে পারিবে না।

কুমুদ দুই একবার দাদার কথা মানিয়া পাত্রপক্ষের সামনে বসিলো, কিন্তু তাহাদের প্রথা  শুনিয়া নিজেই নাকচ করিলো।

কুমুদ নিজেই গ্রামের মেয়েদের লেখাপড়ার পাঠ দিয়া তাহাদের মানসিক শক্তি বাড়াইতে লাগিলো, নানারূপ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোবৃত্তির বাহিরে যে একটা সুস্থ জগত আছে সে তাহাদের শিখাইলো, কাজে তাহাকে প্রচুর অসুবিধার সামনে পড়িতে হইলেও সে পশ্চাদপদ হয় নাই।

এত অবধি গল্প মোটামুটি ঠিক চলিতেছিলো, এইবার ঘটনায় নয়া মোড় আসিয়াছে, কুমুদিনীর পাশের বাড়ীতে কোলকাতা হইতে এক মাষ্টার আসিয়া ছেলেদের স্কুলে জয়েন করিয়াছে, বিশ বছরে গ্রামে প্রচুর উন্নতি হইয়াছে, মেয়েদের ইস্কুল ছেলেদের ইস্কুল সব কিছুই কুমুদ আর ওর দাদার আন্তরিক প্রচেষ্টায় গঠিত হইয়াছে, মেয়েরা এখন চারদেয়ালের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অশিক্ষিত গৃহবন্দী অবস্থায় দিনযাপন করে না, জ্ঞানের আলো গ্রামে প্রবেশ করিয়াছে।

খোঁজ লইয়া জানা গেছে নতুন মাষ্টার এখনও বিবাহ করে নাই সাংসারিক কারণে, এক্ষণে সে ছাদে বিচরণরত কুমুদকে দেখিয়া কিঞ্চিত বিচলিত হইয়াছে, সম্ভবত: সমাজসংস্কারক কুমুদ এবং সংসারসুদারক মাষ্টার কুমুদের দাদার পরামর্শে একত্র থাকিবে।

কুমুদ দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্না সুন্দরী এবং স্বাধীনচেতা, সাধারণ জনতার ভাষায় দজ্জাল কিন্তু মানুষটির কাজে সারা গ্রাম উৎসাহিত। অলিখিত লকডাউন হইতে নারী জাতিকে মুক্তি দিয়াছে।।


শিল্প সাহিত্য ১০৭


অভাবনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা
রানা জামান

তৃণভোজী প্রাণীদের সারিটা বেশ লম্বা। সবাই চারপেয়ে। সবাইকে বিষণ্ন দেখাচ্ছে। ওদের কাউকে না কাউকে বাঘ ধরে নিয়ে এসেছে। এতক্ষণে খেয়ে ফেলেছে কিনা বুঝতে পারছে না। ওরা এ-ও ভাবছে যে খেয়ে ফেললে ওদেরকে দেখা করার জন্য খবর দেবে কেনো?

সারির প্রথমে আছে একটা জেব্রা। শেয়ালের ইশারা পেয়ে গুহার ভেতরে ঢুকলো জেব্রাটা। গুহার ভেতরটায় আলো-আঁধারের মিশ্রণ। ঐ আলো-আঁধারে একটা নেকড়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুকটা কাঁপছে ওর। ইতিপূর্বে ও কখনো কোন নেকড়ের এতো কাছে আসে নি এবং কোন নেকড়ে ওদের কাউকে এতো কাছে পেয়ে হামলে না পড়ে ছেড়ে দেয়নি। সে এ-ও ভাবছে: ভয় পেয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেলে ভাইটাকে তো খাবেই, ওকেও খুঁজে পেয়ে ওখানেই খেয়ে ফেলবে। সৃষ্টিকর্তা কী দেহ দিয়েছে ওদের-এরা দেখলেই হামলে পড়ে ওদের উপর ছিড়ে-ফেড়ে খাওয়ার জন্য। এসব ভাবতে ভাবতেই জেব্রাটা গুহার আরো গভীরে ঢুকলো।

ওখানে একটা বাঘকে বসে থাকতে দেখে জেব্রার হৃৎস্পন্দন বাড়তে শুরু করলো। মনে মনে বললো: সব রাক্ষস এক জায়গায় কেনো? ভাইকে ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে ভাগবে নাকি? আপনি বাঁচলে বাপের নাম?
তখন বাঘটা বললো, ভয় নেই জেব্রা, তোমাকে খাবো না। তোমার ভাইকেও খাই নি।
জেব্রা বিনয়ের সাথে বললো, আশ্বস্থ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ব্যাঘ্র মহাশয়।
-কী ব্যাপার? প্রাগৈতিহাসিক কালের সম্বোধন কেনো? বাঘ স্যার বলো, শার্দুল স্যারও বলতে পারো। যাকগে।
যেজন্য তোমাদের ডেকেছি।
-বলুন শার্দুল স্যার!
বাঘ মুচকি হেসে বললো, আদিপিতা থেকে শুরু হয়েছে আমাদের শিকার ধরার জন্য ছুটাছুটি। আমরা কখনো কোন খাবার পাতে পাই না। প্রচণ্ড ছুটাছুটি আর দৌড়াদৌড়ির পর একটা শিকার ধরে ওটাকে মারার পর খেতে শুরু করবো না শ্বাসপ্রশ্বাস সামলাবো! কী একটা অবস্থা তখন! পৃথিবী এখন অনেক এগিয়েছে। খাবারের পেছনে ছুটাছুটির দিন শেষ করতে হবে। তাই সিংহ মহারাজের সাথে আলোচনা করে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটাই তোমাদের জানাবো। তখন তোমরাও আমাদের দেখে ভয়ে ছুটাছুটি করবে না।
জেব্রা অত্যন্ত খুশি হয়ে বললো, তাহলে সিদ্ধান্তটা তাড়াতাড়ি বলুন শার্দুল স্যার!
তুমি প্রতি মাসে দশটা দু’পেয়ে প্রাণী দেবে। খবরদার! বক দেবে না কখনো! বকের গায়ে শুধু হাড্ডি! তুমি তোমার গোত্রের সবাইকে এই ম্যাসেজটা জানিয়ে দেবে।
আমার ভাই শার্দুল স্যার?
পাঁচটা মুরগি দিয়ে নিয়ে যাবে। যাও এখন। পরেরটাকে পাঠাও।
জেব্রা গুহা থেকে বের হয়ে কারো কথার জবাব না দিয়ে ঢুকে গেলো জঙ্গলে।

চিত্রা হরিণটা শেয়ালের ইশারা পেয়ে ভেতরে ঢুকে নেকড়ে দেখে কাঁপতে লাগলো থরথর করে। মনে মনে বললো: যেহেতু জেব্রা বেরিয়ে গেছে অক্ষত দেহে, সেহেতু ওর-ও কিছু হবে না।
নেকড়ে নরোম গলায় বললো, আরেকটু ভেতরে যাও চিত্রা। ওখানে মহামন্ত্রী বাঘ বসে আছে।
বাঘের নাম শুনে কাঁপুনি বেড়ে গেলো চিত্রা হরিণের। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো সেখানেই।
পতনের শব্দে বাঘ এগিয়ে এসে নেকড়েকে বললো, নাকেমুখে পানি ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরাও নেকড়ে।

এভাবে একের পর এক তৃণভোজি প্রাণী গুহায় ঢুকে বাঘের নির্দেশ নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে জঙ্গলে।

এক সময় খরগোশ ঢুকলে বাঘ ক্ষেপে গিয়ে বললো, তুইও লাইনে এসেছিস? তুই তো আমার কাচ্চি বিরিয়ানি!
তোকে তো রেহাই দিতে পারি না! বলেই বাঘটা খরগোশকে খপ করে ধরে দুই কামড়ে খেয়ে ফেললো চিবিয়ে। একটা পায়ের কিছু অংশ থাবা ফসকে মাটিতে পড়ে গেলে নেকড়েটা দ্রুত তুলে পুড়ে নিলো মুখে।

তখন গুহা কাঁপিয়ে একটা হাতি ভেতরে ঢুকে বললো, আমিও ঘাস খাই। আমাকে ডাকলে না কেনো বাঘ। তুমি তো এখন মহামন্ত্রী!
তখন মহারাজা সিংহ এসে বললো, আপনি আমার মন্ত্রীপরিষদের সম্মানিত সদস্য। আপনি কল্যাণ মন্ত্রী ঐরাবত।
ঐরাবত বললো, বাহ! তাহলে আমার খাবার এনে দেবে কে?


শিল্প সাহিত্য ৯১


মুখোশ পরা সভ্যতা
শুভা গাঙ্গুলি

আরব্য উপন্যাসের সেই বাদশা যিনি গল্প শেষ হলেই স্ত্রী’র গলা কাটতেন, তাঁর পাগলামির জবাব দিয়েছিলেন এক বিদূষী রমণী প্রমাণ করেছিলেন মহিলারা সর্বপ্রকার গুণের অধিকারী, সেক্ষপিয়ের ও সেটাই বলেছেন তাঁর শাইলক গল্পে।
আর মহীয়সী যামিনী সুন্দরী ও প্রমাণ করেই ছাড়লেন তাঁর লোহার সিন্দুক থেকে সোনার সীতাহার চুরি করেছে, শহর থেকে কিছুদিনের জন্য খুড়তুতো দিদির বনেদি বাড়ীতে বেড়াতে আসা, লেখাপড়ার জানা, সুন্দরী ফটফট কথায় কথায় ইংরাজী ঝটকা মারা এলিস বোস।
কিন্তু ঘটনাটা  অন্যদিকে টার্ন নিতেই পারতো, নিচ্ছিলোও ঠিকমতো,
বাধ সাধলো বহুদিনের পুরোনো ডেইজি একটি রাস্তার নেড়ি কুকুর, যাকে যামিনী দেবী রথের মেলা থেকে কুড়িয়ে আনেন,
বাড়ীর পুরোনো চাকরবাকর’দের চেনা একটা ছেলেকে মালীর কাজ দিয়ে বহাল করেছিলেন, সে একটু চনমনে ঠিকই, সময়ে অসময়ে হুটহাট করে যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ে ঠিকই, সন্দেহজনক মনেই হয়। তবে চুরি সে করেনি সেটা প্রমাণ করলো ডেইজি।
চোস্ত প্যান্ট পরে মেমসাহেব ছেলেটিকে দোষী সাব্যস্ত করে বাড়ীর গাড়িতে উঠবেন
এমন সময় প্রচন্ড বেগে ডেইজি এলিসের পশ্চাৎদেশে মারল এক জব্বর কামড়।
ভরা জনতার সামনে  প্যাণ্টের পিছনের ভাগ অনেকটাই, রমণীর
শীলতা হানি করে ছিঁড়ে নামালো
বন্ধুবৎসল ডেইজি,
রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লো টুকরো টুকরো করে কাটা হার পশ্চাৎ দেশ উন্মুক্ত করেই,
মালীকে পরম ভালোবাসায় আপাদমস্তক চেটে গিন্নীমার কোলে বসলো ডেইজি।
হতভম্ব এলিসের লজ্জা নিবারণ করলো দিদি নিজের আঁচল দিয়ে,
পিসিমা যামিনী দেবী বললেন- লজ্জার কিছু নেই, ডেইজি ফিমেলডগ,
সব মিটে গেলে, মেয়েটিকে মুক্ত করে যামিনী দেবী বললেন-
অহংকারটা ওই পচা পুকুরটায় ফেলে বাড়ী যাও,
আক্কেলটা হওয়া ভালো।
তবে কেউ জানে না ওটা গিল্টি করা হার ছিলো।।


শিল্প সাহিত্য ৮৮


না,গল্প নয়
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

পালস বিট দেখতে গিয়ে ডা. বসাক দুটো স্পন্দন পেলেন। অজান্তেই চমকে উঠে
মূর্ছিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন সেই নিষ্পাপ পবিত্র মুখে বেদনার আলপনা।
ডা.বসাকের মন খারাপ হয়ে যায় কুমারী মেয়ে অনেক যন্ত্রণা অপমান সহ্য করতে হবে।
সুশ্রী মেয়েটির মুখে এক অদ্ভুত মায়া। মনে অপত্যস্নেহের ঢেউ। বন্ধু দয়ালকে বলেন, একে কোথায় পেলি?
Ñআখন বাজার দিয়ে আসছি হঠাৎ দেখি মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে তুলে রিক্সায় তোর চেম্বারে নিয়ে এলাম।
Ñকার মেয়ে কোথায় বাড়ি জানিস?
Ñসে ঠিক জানা যাবে। ভাবিস না। তুই সুস্থ করে তোল দেখি।

জ্ঞান ফেরার পর আস্তে আস্তে ডা.বসাক সব জানলেন। তাঁর মুখে রামধনুর আনাগোনা।
মনে পড়লো কদিন ধরেই তাঁর ছেলে একটি মেয়েকে বিয়ে করার বিষয়ে মায়ের সঙ্গে জেদাজেদি করছে। বুদ্ধিমান ছেলে তাড়াহুড়োর কারণ মাকে জানায়নি। তবুও তিনি রাজি নন, ছেলেও অনড়। তিনি তখন মাঠে নামেননি, আজ একেবারে রেফারির ভ‚মিকায়।
ভুল হয়তো করেছে কিন্তু ছেলে দায়িত্ব অস্বীকার করেনি, এজন্য তিনি গর্ব অনুভব করেন। এখন ছেলেকে নায়ক ও স্ত্রীকে দজ্জাল ভিলেন মনে হয়।
অসম্ভব সম্ভব হলে গল্পই মনে হবে, তবু সত্য হোলো, বিনু এখন ডা.বসাকের পুত্রবধু।
এবং তিনি ও তাঁর স্ত্রী তৃতীয় প্রজন্মের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

শিল্প সাহিত্য ৮৭


একটা ঝুরঝুরে আঙুল
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

আঙুলেই গেঁথে আছে সেইসব দিন। ঝুরঝুরে আঙুল এখন লাঠি হয়ে গেছে। পা এখন গাছ। প্রকৃত স্বাদুফল এখন আর নেই। তবু একবুক মাঠ প্রশস্ত হয়ে আছে বিল-কান্দায়। বিঘে বিঘে খন্দের কথা কণ্ঠ বেয়ে গরুর গাড়ি চড়ে আসে। চোখের মণি বেয়ে উঠে আসে মাছ খেপলার ঘের বেয়ে। চৌধুরী মিঞা আর আসে না জ্যাঠাদের বাঁশতলায় নলি-সুতো হাতে। চকচকে নাইলনের সুতো দেখিয়ে বলত এগুলো জাপানী-কট। আমরা জাল বোনার পাশেই খেলতাম একবিদ্যা চীনা কাঁচের গুলি। চৌধুরী চেয়ে থাকত জাল বোনা ফেলে। তার চোখ হয়ে গুলি, আর আমাদের ছিটানো গুলি হয়ে যেত জাল...

বিকেলের আকাশ হয়ে যেত নবার কামারশালা। লাল লোহা দেগে পিটিয়ে চ্যাপ্টা করে দিত মেঘের মিনার।

গরু নিয়ে ফিরে যেত সুরজের ভাই। বজ্রের মতন পাচন ছুঁয়ে যেত লেজ।

এখন স্মৃতিরা শুধু মনের মধ্যে ট্রাংক গড়ে তোলে। দস্তাবেজ বেঁধে রাখি পিঠমোড়া।

তবুও হাটখোলা ঝুরি নামায়। প্রোথিত করে মহাকাল... সেখানে মদের মহড়া দিতে উঠে পড়ে জটা। হাতের তালুতে চুমু দিয়ে অদ্ভুত বাঁশি বাজায়। ডান হাতে হেঁসো ঘুরিয়ে উঠে যায় তালগাছে তাড়ির বাজারে। চিল্লিয়ে যেন হাট মেলে দিত ডগায় ডগায়। অশ্লীল ভাষা দিয়ে ঘোষণা করে যেত- বিকেলে বিক্রি হবে তাড়ি, ভবের বাজারে। চৌধুরী নুরানিতে হাত রেখে বলত-তওবা তওবা!

তবুও কি পথে পড়ত না ধুলো ? তবুও কি এঁদো সরণী বেয়ে নেমে আসতো না তেলচোঁয়া ফুলকো চাঁদ সন্ধানী গ্রাম্য বালকের মত? তবুও কি শুক্লপক্ষে পনেরোদিন উজ্জ্বল কাস্তে ঝুলে থাকতো না আকাশের ফসলী মাঁচায়?

মদনা থেকে গরীব সনাতন মন্ডল কাপড়ের সাদা আকশির ঝোলায় পেড়ে নিত নালশের ডিম।  কোলকাতার ঝিলে অফুরন্ত বাবুরা মাছ ধরবেন মদ মাখিয়ে।

সব স্মৃতিই কি ভাঁপা বাক্স হয়ে যায় ? বাক্স-পেটরা? 

কোনও একদিন মধ্য-জ্যোৎস্না তরল হয়ে এলে চৌধুরী মিঞা ঘোলা কাঁচের চসমা পরে চুপিচুপি মাকে এসে বলত- ভাবিসাব চা করেন। কাল আপনার পুকুওে খেপলা ফেলবো...

আমরা বারান্দায় ঝুঁকেঝুঁকে পড়তাম পিদ্দুমের আলো... পড়তাম গঙ্গাফড়িংয়ের ঠ্যাং ছিঁড়ে কতবার চাপ দিয়ে ওঠানো নামানো করা যায়... পড়তাম কয় ফাঁসের খেপলা জাল শুরু করে শেষে কয় ‘মালি’ নামাতে হবে নীচে? পড়তে পড়তে একদিন পৃষ্ঠা থেকে সব কালো অক্ষর উবে গেল। হাতে রইলো সাদা বই।

এইসব কথা আঙুলে লেখা আছে...
আঙুল এখন ঝুরঝুরে...
আঙুল এখন লাঠি...

ঘড়ি
সোমনাথ বেনিয়া

বিয়ের পর সাজন্তর এই প্রথম পুজো। দোকানে কেনাকাটি করতে গেছে। তার বউ সোনালির একটি শাড়ি পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম! এই দামে শাড়িটি কেনা সাজন্তর আর্থিক সামর্থ্যরে বাইরে। কিন্তু সদ্য বিয়ে করা বউ চেয়েছে। সাজন্তর হাবভাব দেখে সোনালিও কিছু বুঝতে পারে। তাই সে বলে - জানোতো শাড়িটির সব ভালো, কিন্তু রঙটা যেন কেমন একটু ম্যাড়মেড়ে। জরির কাজগুলি কেমন আলগা। ভালো হবে না বুঝলে!
সাজন্তও সবটা বোঝে! কিন্তু তার মন মেনে নিতে পারে না। বিয়ের পর এই প্রথম পুজো। সব কিছুর মধ্যে একটা নতুন গন্ধ আছে। তার কাছে সোনালির এই চাওয়াটিও প্রথম। অথচ সে ব্যর্থ! সে কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছিল না। ঠিক করলো মোবাইল আসার পর যেহেতু ঘড়ির আর তেমন কোনো কদর নেই তাই সে তার আশীর্বাদের ঘড়িটি বিক্রি করে দেবে বলে মনস্থ করলো। ব্রান্ডেড প্রোডাক্ট। দাম পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। তার চেনা একটি ঘড়ির দোকানে গিয়ে সে ঘড়িটিকে বিক্রি করলো। আশানুরূপ দাম পেল। সেই দামের সঙ্গে তার আগে ধরা শাড়ির বাজেটের টাকা নিয়ে, দোকান থেকে সোনালির সেই পছন্দ করা শাড়িটি কিনে এনে, তাকে সারপ্রাইজ দিল। সোনালি খুব খুশি।

পুজো এলো। অষ্টমীর রাতে দু-জনে বেরোবে। সোনালি তৈরি। সে আগেই ঠিক করে রেখেছিল যে অষ্টমীর দিন সাজন্ত আশীর্বাদের ঘড়িটি পড়ে তার সঙ্গে বেরোবে। ঘড়িটি পড়লে সাজন্তকে বেশ দেখায়। আশীর্বাদের ঘড়ি বলে তার আবার একটি বাড়তি গুরুত্ব আছে। আলমারি খুলে ঘড়িটি দেখতে না পেয়ে সোনালি, সাজন্তকে জিজ্ঞাসা করে - কী গো, তোমার ঘড়ি কোথায়?
কোন ঘড়ি!
কোন ঘড়ি আবার! আশীর্বাদের ঘড়ি!

সাজন্ত দেখল এই সুযোগ। সে বলে - দেখ, কোথায় রেখেছো। জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার মেয়ে কী তুমি। কার তলায় কাকে চাপা দিয়ে রেখেছ। এখন খুঁজে পাচ্ছ না।

ইচ্ছে কোরে সাজন্ত সোনালির উপর এই দোষ চাপিয়ে দিল, যাতে সোনালি এটাকে নিয়ে আর বেশি দূর না এগোয়। তাহলে ধরা পড়ে যাওয়ার চান্স আছে।

সোনালি ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে আছে। সাজন্ত কিন্তু খুব খুশি। সে পেরেছে! চোখ মুছিয়ে দেওয়ার ছলনায় সে সোনালিকে জড়িয়ে ধরে বুঝতে পারে, ঘড়িটি কিন্তু তার হৃদয়ে টিক্ টিক্ কোরে অনবরত ঘুরেই চলেছে ...


শিল্প সাহিত্য ৮৪


বস্ত্র বিতরণ ।। প্রণবকুমার চক্রবর্তী 


     ক্লাবের জন্মদিনে সামনের মাঠে গরীবদের বস্ত্র দেয়া হচ্ছিলো। অন্যান্যদের মতো ওর নামটাও বার বার মাইকে বস্ত্র প্রাপক হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। সব্বাই সুন্দরীর মতো বয়সের। বলা হচ্ছে- এক্ষুণি গিয়ে ক্লাবে সভাপতির সাথে দেখা করতে। নিবারণের বছর পনের-ষোল বছরের মেয়ে সুন্দরী তো রীতিমতো অবাক - ওর নামটা বারবার উচ্চারিত হওয়ায়। ওকে এখানে কেউ চেনেনা। জানেনা। কোনদিন এই রকম বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আগে কাপড়ও নেয়নি। অথচ, ওর নামটা ডাকছে!

      সুন্দরীর কাপড়টা প্রয়োজন । লোভও হচ্ছে নেবার, কিন্তু যেতে ভয় হচ্ছে। কী করবে, বুঝে উঠতে পারছে না। একপাশে সরে দাঁড়িয়ে সুন্দরী যখন ব্যাপারটার উপরে নজরদারি চালাচ্ছে, সেই সময় ক্লাবের, ক্লাবেরই একজন লোক এসে ওকে সভাপতি ডাকছেন বলে সঙ্গে নিয়ে যায়। সুন্দরী সভাপতিকে দেখেই বলে ওঠে - ই মানুটা ইখানেতে আসিএেঁ জুটিছে! মুই, উয়ার দিয়া কাপড়টো লিবোক নাই। ই মানুষটা মোট্টে ভাল্যো লয়। ই মানুষটা আজ যাদের সব

কাপড়টো দিচ্ছেক, পরেতে উয়াদের মধ্যে থেইকে কম বয়সের মেয়েগুলারে বাড়িতে ডাইকে পাঠাএিঁবে। বুঝিছেন নাই, উ মানুষটার চরিত্তিরটা বহুত খারপ বটে। মুই চললোম।

      ব্যাপারটা শুনে অনুষ্ঠানে হাজির থাকা সবাই এ ওর মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করা শুরু করলো।


শিল্প সাহিত্য ৮৩


উপহার
আম্মানসূরা

স্বামী- এই নাও বিশ হাজার টাকা। এই মাসের পাঁচটা দাওয়াতের গিফট এরমধ্যে সারবা। কারে কত গিফট করবা সেটা তুমি ভেবে বের করো। আমি অফিসে গেলাম। 
স্বামী অফিসে যাবার পর স্ত্রী হিসাব কষতে বসেন, “সালেক সাহেব বিশাল ধনী মানুষ, তার জন্য দশ হাজার রাখতেই হয়। জয়ন্ত বাবু ত বেশ বড় নেতা। তাকে পাঁচের নিচে দেয়া যাবেই না। পাশের বাড়ির ভাবির মেয়ের জন্মদিনের গিফট দুই এর নীচে দিলে প্রেস্টিজ থাকবে না। শেফা ভাবির ম্যারেজ ডে’তেও নাহয় দুই এর মধ্যে একটা শাড়ি দিব। কাজের বুয়ার নাতির জন্মদিনের জন্য এক হাজার টাকা, দুই দিতে পারলে ভাল হত, থাকগে, ও গরিব মানুষ, ওরে এক দিলেই খুশি হবে।” 
পাঁচটা দাওয়াত শেষে স্ত্রী দেখলেন, কেবলমাত্র বুয়ার দাওয়াতেই তার জন্য স্পেশাল বসা, খাওয়া ও ঘরের ব্যবস্থা করে তাকে স্পেশাল মানুষের সম্মান দেয়া হয়েছিল আর সালেক সাহেবের অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশী সাধারণের কাতারে ছিল সে।

আম চোর ও ছোট বাবু
সাঈদুর রহমান লিটন

বাবুদের আমের বাগান। খুব সুপরিচিত বাগান। দীর্ঘ দিন ধরে বাগানটির সুনাম, দুর্নাম ছড়িয়ে আছে। আমাদের হাই স্কুলের পাশে বাগান। প্রতিবারের মত এবার ও আম ধরেছে। বাবুদের আম বাগানের বিশেষত্ব হলো বাগানের প্রতিটি গাছের আম কাঁচা মিঠা । কাঁচা মিঠা আমের মজাই আলাদা। চাকু দিয়ে কেঁটে কচকচ করে চিবিয়ে খেলে মনে হয় নাটোরের কাঁচা গোল্লা খাচ্ছি। কাঁচা মিঠা আমের লোভ সামলানো বড় দায়। বাবু বাড়ির ছোট বাবু আম বাগানে টঙ উঠিয়ে পাহারা দেয়। আম বেথুলের মত ধরে ঝুলে আছে। সবুজ আম। ছোট গাছ। আম গুলো যেন আমাদের দিকে চেয়ে থাকে। বাগানে অনেক আমের গাছ। আমরা স্কুলের দশম শ্রেণির ৪/৫ জন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম বাবুর কাছ থেকে চেয়ে কাঁচা মিঠে আম খাব। অনেকে অনেক মন্তব্য করল, তার মধ্যে দিদার বলল বাবু যে কুঞ্জুস চাইলে দিবে না। হারাণদের বাড়ি বাবুদের বাড়ির পাশে। হারাণ, বাবুর আচার আচারণ ভাল জানে। ও বলল বিষ্ণু কাকু জান থাকতে একটা আম ও দিবে না। ছোট বাবুর নাম বিষ্ণু গোসাই। তবু ও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বাবুর কাছে আগে আম চেয়ে দেখবো যদি দেয় তাহলে খুব ভাল না দিলে অন্য ব্যবস্থা করবো। আমাদের খেতেই হবে আম, তা যে ভাবেই হোক। আম তো আমরা খাবই। আমাদের দলে আম খাওয়ার বন্ধু সংখ্যা বাড়তেই লাগল। অবশেষে গেলাম ছোট বাবুর কাছে বললাম দাদু আমরা চার পাঁচ জন বন্ধু কাঁচা মিঠে আম খেতে চাই। দাদু বলা মাত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। আম খাওয়ার কথা শুনেই আর কোনো কথা না বলেই দিল লাঠি দিয়ে ধাওয়া। আমরা হাঁপাতে হাঁপাতে স্কুলের পর চলে এলাম। কিন্তু আমরা আমের লোভ ছাড়লাম না। তারপর দিন, কাকলীকে ডেকে আমাদের দলে নিলাম। কাকলী আমাদের বান্ধবী। খুব সুন্দর। ভারি চালাক মেয়ে। দারুণ বুদ্ধি রাখে। ছোট বাবুর একমাত্র মেয়ে ঢাকায় থাকে। কাকলীকে মেয়ের মত ভাবে। কাকলীকে মা বলে। তাই ভাবলাম কাকলীকে ব্যবহার করবো। কাকলি ও রাজি হলো। কাকলী কে মেয়ের মত ভাবলেও একটা আম ও দেয় না। কাকলীর ও আম খাওয়ার লোভ আছে। আমরা এখন আম খাওয়ার দলে ২৫/৩০ জন। আমাদের কথা হলো কাকলী, শিল্পী, সোহেলী, সুচিত্রা, মাধুরী ওরা বাবুর সাথে গল্প করবে আমরা বাগানের অপর প্রান্তে আম পাড়বো। ভাবনা মতই কাজ শুরু হলো ওরা বাবুর সাথে গল্প জমিয়ে তুলে আমরা কয়েক জন টিফিন টাইমে আম পেড়ে আনতে শুরু করলাম। আম খাওয়া এভাবে নিয়মিত চলছে। বাবু কাকলীদের সাথে নিয়ম করে সারা দুনিয়ার গল্প জুড়ে দেয়। টিফিন শেষ হলে ওরা চলে আসে। আমরা আম খাই। আমাদের সাথে আরো অন্য ক্লাশের বন্ধুরাও যোগ দিয়েছে। কয়েক দিনে আমের বাগানে আম প্রায় শেষ হতে চলল। শুধু বাবু যেখানে পাহারা দেয় ওখানে কয়েকটা গাছে আম আছে। আমরা হরদম কাঁচা মিঠে আম খেয়ে চলছি। বাবু ওখানে বসে থাকলে আর আম পাড়তে পারছি না। তাই কাকলী বাবুকে বলল কাকু, আজকে আপনাদের বাড়ি যেয়ে গল্প করব। এখানে আর ভাল লাগে না। বাগান তো নানা জনে না কথা বলে। বাবু মেয়েদেরকে মেয়ের মত মনে করে আমের কথা ভুলে যায়। যথারীতি বাবুদের বাড়ি টিফিনের সময় আড্ডা শুরু হলো বাবু ও খুব খুশি। কাকলীদের চা মুড়ি খেতে দেয় প্রতিদিন। বাবু আর বাবুর স্ত্রী এবং কাকলীরা আসর জমিয়ে তোলে। আর আমরা নির্বিঘ্নে আম পাড়তে শুরু করি।


শিল্প সাহিত্য ৮০


দাওয়াই
রাজা ভট্টাচার্য 

মানুষটা আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এমন মানসিক রোগীর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাতে হবে? যাই করি, তাতেই প্রতিবাদ। সবেতেই ফ্যাসিজমের গন্ধ পায়। বাজার, দোকান, ঘরের কাজ - সবই করে। তাই বলে, খবরদারি করবে? সংসার আমার, আমাকেই তো চালাতে হবে। সেখানে তো বেশি গণতন্ত্র করার জায়গা নেই। সবটা একা হাতে সামলানো যায় না, আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে, তার মধ্যে বার বার কেউ ভুল ধরলে, লেজি বললে, ইররেস্পন্সিবল বললে, অন্য বউদের সঙ্গে তুলনা করলে। গায়ে হাত তো উঠবেই। গাল পেড়ে আর কতক্ষণ গায়ের ঝাল মেটে? তখন পালটা হাত চালায়। এই দেখুন, মেরে কী করেছে! 

ভুল হলে সেটা সবার সামনে ধরবে? সবাই সব কিছু জানে? তা-বলে সেটা পাবলিক করবে? আর অতো শেখার কী আছে? শিখতে গেলে, পড়তে গেলে অনেকটা সময় চলে যায়। আমি একটু স্লো, বাট স্টেডি। ইন ফ্যাক্ট, কাজ করার তো দরকার কোনোদিন হয় নি। তাই করিও নি। এখন দরকার হচ্ছে, করছি। কিছুটা করি, বাকিটা লোক দিয়ে করাই, মুল্য গুণে দিই। সুপারভাইজিং-ও একটা কাজ। চাপ দিয়ে বাঁকা পিন সোজা করতে হয়। মাথা গরম হবেই। তারপরেও কাজ পেন্ডিং থাকলে আমি কী করবো? আমি তো আর লেজি নই। তা-নিয়েও সারা দিন পিছনে লেগে থাকবে।

বিন্দুমাত্র ভালবাসে না আমায়। সারা দিন ল্যাপটপ আর ফোন নিয়ে পড়ে আছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ না ছাই! আমি থাকতেও গার্ল ফ্রেন্ড লাগে ! ধরে ফেললেই আমায় পুট ডাউন করে! এতো সাহস! আমার অ্যাংজাইটি বেড়ে যায়, আমি ভায়োলেন্ট হয়ে যাই। তখন আমি ফ্যাসিস্ট! ওর চিৎকারে পাড়া অস্থির। সম্মানটা কোথায় থাকে বলুন ! প্লিজ ডাক্তারবাবু, একটা কিছু করুন অ্যাট লিস্ট যেন বশে থাকে এতো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, রিঅ্যাকশন, ভায়োলেন্স - আমি আর নিতে পারছি না।

খসখস করে প্রেসক্রিপশন লিখলেন ডক্টর মুখার্জি। বললেন, শাসক আর শাসিতের চিরায়ত সম্পর্ক। দুজনকেই আগে নিউট্রালাইজ করতে হবে। এই বড়ি সকাল বিকেল খাবার আগে দুজনেই খান। ছ’ মাস পরে আসবেন। হাজার টাকা।

মিছিলের কাজ
প্রণবকুমার চক্রবর্তী 

রোজ সকালে ওরা সবাই হরিতলার মোড়ে এসে জড়ো হয়। ওরা মানে সনাতন, নৃপেন, নিয়ামত, বুধাইরা। সবাই দিন-মজুর। সকাল থেকেই সাবাই হাঁটুমুড়ে দ হয়ে বসে থাকে। লোকজন এসে দর-দস্তুর করে নিয়ে যায় - কাজ করাবার জন্য। জন-মজুরের কাজ। ওই জায়গাটার তাই স্থানীয় নাম, জন-মজুরের হাট।

আগে ওখানে যারা এসে বসতো, তাদের সব্বার কোনদিন কাজ জুটতো। অবার হয়তো কোনদিন জুটতোও না। হতাশ  হয়ে অনেকেই ঘরে ফিরে যেতো। আবার  মাঝে মাঝেই পার্টির সব লোক এসে সবাইকে তাদের দলের মিছিলে নিয়ে যেতো। বিনিময়ে শুধুমাত্র দিতো চারটে রুটি আর আলুর দম। হাতে কিছুই দিতো না। ওতেই যেতে হতো। আসলে, তখন একটা পার্টির জোর ছিলো। না শুনলে, ওখানে পরের দিন থেকে বসাই বন্ধ করে দিতো।

কিন্তু, ইদানীং সেই সমস্যাটা আর নেই। প্রায় সব দিনই বিভিন্ন দলের নেতা এবং লোকজন এসে ওদের বিভিন্ন সমাবেশ এবং  বিক্ষোভে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যায়। আজ এখানে তো, কাল সেখানে! টাকার অংকটাও বেশ ভালো! না দিলে, যাবে না। অন্য দলের সাথে যাবে। আগে থেকে টাকা দিয়ে দলের পতাকা ধরিয়ে, বুকিং করে যেতে হয়। লোককে সংখ্যার হিসাবটা দ্যাখানোর জন্য।
এটাই ইদানীং গরীব মানুষের রোজগারের একটা ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরাতন বোর্ডটা পাল্টে একটা নোতুন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে - মিছিলের চাকরি।


শিল্প সাহিত্য ৭৪


চম্পাকলির দিনরাত্রি
স্বপঞ্জয় চৌধুরী

শহরের ব্যস্ততম রাস্তা তার পাশে একটি পার্ক। পার্কে লাগানো সারি ঝাঊগাছ, নানা পদের দেশি বিদেশী ফুলের গাছ। প্রাত ভ্রমণে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার একটি জায়গাই আছে ফ্রিডম পার্ক। এখানে সবাই বুক ভরে স্বাধীন ভাবে নিশ্বাস নিতে পারে। যারা এখানে নিয়মিত মর্নিং ওয়াকে আসেন তারা হয়তো দেখে থাকবেন। একটা দশ বারো বছরের মেয়ে প্রতিদিন ভোর বেলা এখানে শিউলি ফুল কুড়াতে আসে। ফুল ভালোবাসে এজন্য নয়, এ ফুল কুড়িয়ে ওরা মালা তৈরি করে। শুধু ও নয় ওর মতো অনেকেই ফুল কুড়ায় এই পার্কে। মেয়েটির নাম চম্পাকলি। জন্মের সময় দাদি নাম রাখতে চেয়েছিল চম্পা আর নানি রাখতে চেয়েছিল কলি। নাম রাখা নিয়ে সেকী বিশাল বাহাস। তারপর বাপ বুদ্ধি দুইজনের নামই চ‚ড়ান্ত করেন -ওর নাম হবে চম্পাকলি। আজ দাদি, নানি, বাপ কেউই বেঁচে নেই। ভিটে বাড়িটাও গিলে খেয়েছে নদী। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো তাকে এই ফ্রিডম পার্কে ফুল কুড়াতে হতো না। প্রতিটি শিউলি ফুলের ভেতর সে এক একটি ভাতের দানার ছবি দেখতে পায়।

ওদের মহাজন কলিমুদ্দি সরদার। বিশজনের ফুল কুড়ানো ও ফুল চুরি করার একটা টিম আছে। ফুল কুড়িয়ে মালা বিক্রি করে কমিশন দিতে হয় কলিমুদ্দিকে। দুইশ টাকা ফুল বেঁচলে পঞ্চাশ টাকা কলিমুদ্দির। এভাবে প্রতিদিন বিশজনের কাছ থেকে মোট এক হাজার টাকা কমিশন আদায় করে কলিম। চম্পাকলির মা বাসায় কাজ করে। চম্পাকলি ফুল বিক্রি চাল, ডাল, তেল, নুন এসব কিনে নিয়ে যান। গায়ে গতরে বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। মায়ের তাই অনেক চিন্তা। এভাবে আর কতদিন ফুল বিক্রি করে চলবে। আর কয়েক বছর গেলে তাকে গার্মেন্টস এ চাকরি নিতে বলবে। আজ খুব বেশি বেচা বিক্রি হয়নি। শহরের মানুষগুলো বেরসিক হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। ফুল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এখন প্রেমিক প্রেমিকারা পার্কে যায় না। তারা ঘুরতে যায় রেস্টুরেন্ট অথবা সিনেপ্লাক্সে। তার উপর দেশে নাকি কী এক ভাইরাস এসেছে তাই রাস্তাঘাটে গাড়ি ঘোড়া মানুষজন দিনদিন কমে যাচ্ছে। সামনের সপ্তাহ থেকে নাকি গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ করে দিবে। তখন কী হবে? মায়ের কামাই চলে যায় ঘর ভাড়া দিয়াই। আগে মা পাঁচ- ছয়টা বাসায় কাজ করতো। গেলোবার টাইফয়েড হয়ে শরীরের বল কমে গেছে। ভারী জিনিস উঠাতে পারেনা তেমন। দুই তিনটা পুরোনো বাসায় তাকে কাজে রেখেছে। তাই বাধ্য হয়েই তাকে ফুল বিক্রি করতে হয়। নতুবা তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে।

সপ্তাহ খানেক পর শহরে লকডাউন ডাকা হলো। চম্পাকলির মা শোমেলাকে বেতন দিয়ে আপাতত এক মাসের জন্য বিদায় দিয়েছে। বেতনের টাকা বস্তির ঘর ভাড়া দিয়েই শেষ। ফুল বিক্রি বন্ধ। রাস্তায় গাড়ি নেই মানুষ নেই। পুলিশ যাকে দেখছে তাকেই লাঠি পেটা করছে। কলিমুদ্দিরও ধান্দা বন্ধ। এদিকে শোমেলার শরীরেও জ্বর। ঘরে চাল ডাল নেই। শুনেছে বড়লোকেরা নাকি রাস্তায় এসে চাল, ডাল, আটা, মুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। চম্পাকলি খাবারের সন্ধানে ঘরের বাহির হয়। অনেক ক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়েও কোন ত্রাণদাতার দেখা পেলোনা। আজ তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। মায়ের জ্বর বাড়ছে ক্রমশ। একটা ওষুধ পাতি কিনে দিবে সেই টাকাও নাই। বিষণ্ন মনে সে বস্তিতে ফিরে আসে। বস্তির মোড়ে কলিমুদ্দির সাথে দেখা। কলিমুদ্দি নাকি নতুন কোন ব্যবসা বাহির করছে শর্টকাটে ইনকাম। চম্পাকলি তার কাজের কথা জিজ্ঞাসা করে। কলিমুদ্দি খিল করে হেসে বলে। এই ব্যবসা হইলো ত্রাণের ব্যবসা। যাবি ত্রাণ নিবি সেইখান থিকা আমারে কমিশন দিবি, যাবি? চম্পাকলি সরল মনে মাথা নাড়ে। সে কলিমুদ্দির সাথে পাশের গলিতে এক অভিজাত বাড়ির ভেতরে যায়। দারোয়ানকে আগে থেকেই বলা আছে সব। দারোয়ান কলিমুদ্দির দিকে তাকিয়ে বুড়ো আংগুলের থামস আপ দেখায়। চম্পাকলির বাড়ির ভেতরে পা রাখা মাত্রই তার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। পাঁচতলা ফ্ল্যাটে ওকে ঢুকিয়ে দিয়ে নিচে চলে আসলো কলিমুদ্দি। ফ্ল্যাটের মালিক শরাফত সাহেব বউ বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়ি। চম্পাকলিকে আনার জন্য তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এমন সুরভিত না ফোটা ফুলের দাম পাঁচ হাজার টাকায় বিকোলো? চম্পাকলির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সে পালাতে পারছেনা,  চিৎকার দিতে পারছে না। তার মতো দূর্বলদের জন্য এ পৃথিবী নয়। যে এতদিন ফুল কুড়িয়ে সংসার চালিয়েছে সে আজ নিজেই ফুল হয়ে গেছে। এক ঘণ্টা পর মাথা নিচু করে সে ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে আসে। তার চুল উস্কো খুস্কো, চোখ বিধ্বস্ত নীড় ভাংগা পাখির মতো। কলিমুদ্দি তার হাতে এক হাজার টাকার দুটো নোট ধরিয়ে দেয়, দারোয়ানকে এক হাজার টাকা দেয়। আর পকেট থেকে গুলের কৌটা টাবের করে ঠোঁটের ভিতর গুল গুজতে গুজতে বলে আমি কাউরে ঠকাই না। হে হে হে। চম্পাকলি এলোমেলো চুল গুচ্ছ খোঁপা করে নেয়। বাজার থেকে চাল, ডাল আর মায়ের জন্য ওষুধ কিনে নিয়ে যায়। তার পা গড়িয়ে পড়ছে ফিনকে ফিনকে কাচা রক্ত।


শিল্প সাহিত্য ৭১


আকাঙ্ক্ষা
লোকমান হোসেন 

ইন্সপেক্টর রশিদ বারান্দা দিয়ে পায়চারী করছেন। কিন্তু পায়চারী ফোরাচ্ছে না। অথচ খুনী তখনও ঘরের মধ্যে। বুকশেলফের পেছনে হামাগুড়ি দিয়ে বসে আছে। লাশটা মর্গে এখনো। ডোম প্রস্তুতি নিচ্ছে কাটাকুটির। ডাক্তার সাহেব এখনো আসেননি।

ইন্সপেক্টর রশিদ তদন্ত কাজে খুবই দক্ষ। দেশের বেশ চাঞ্চল্যকর কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সুরাহা করেছেন তিনি। মার্ডার মিস্ট্রি গুলে খাওয়া মানুষ। তবুও এ কেসটা আগাচ্ছে না।

নিপাট ভদ্রলোক সাইমন সাকিব। একটা বহুল প্রচলিত দৈনিকের সম্পাদক। মাঝে মাঝে টিভি চ্যানেলে টকশোতে অংশ নিতেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে খ্যাতি ছিল। হয়তো সেখান থেকেই শত্রুতার সূত্রপাত। ভিন্নমতের উপর শ্রদ্ধা, সহনশীলতা এদেশে নেই বললেই চলে।

দরিদ্র ছমিরন সারাদিন ভিক্ষা করে যা যোগাড় করে তাই দিয়ে দিনাতিপাত করে। একদিন রেলস্টেশন এ ভিক্ষা করার সময় স্টশনের পুরনো ওয়েটিং রুমের বাথরুমে একটা লোককে খুন হতে দেখে ফেলে সে। তারপর থেকে তাড়া খেয়ে নিরুদ্দেশ হয় ছমিরন।

কোন একটা বিশেষ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রের আঘাতে মারা যায় ওই এলাকার প্রবীণ একজন মানুষ। খুনীরা ক্ষমতাসীন দলের শ্লোগান দিতে দিতে চলে যায়। অতঃপর সেখানে সৃষ্টি হয় একের পর এক হত্যাযজ্ঞ।

অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে তারা সবাই এক জায়গায় বন্দী।

নানা ধরণের বিচিত্র সব চরিত্র নিয়ে সবসময় ভাবনায় থাকেন নাফিস আহমেদ। স্ট্রোক জনিত কারণে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মনে হতে থাকে, আহা চরিত্রগুলোকে যদি কোনো ভাবে মুক্তি দেয়া যেত!

অন্তিম মুহূর্তে একজন থ্রিলার লেখকের আর কি চাওয়ার থাকতে পারে!


শিল্প সাহিত্য ৭১


শহরের ভেতরের শহর
কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর

মেয়ের খালি একটাই প্রশ্ন- “বাবা, এককথায় তুমার কোলকেতাকে কেমন লাইগে?” “আরে আমি কি তুর মতো লিখাপড়া জানা ম্যাইয়া মানুষ যি তুর মতো ওমনধারা কথা বলতে পারব। এই যি ‘পশ্নো’ তারপর হলো গিয়ে ‘এককুথায়’ ইসব কথায় তো আমার মুখ থেকা ভালো করে বের হয়লাকো।”

সি শুনে মেয়ের পরথম পরথম ইমুন ধারা হাসতো... তা বইললে হবে না হাসলে যেন মুখ থেইক্কা মুক্ত ঝরে পড়ে। মেয়েটা হওয়ার পর চম্পা বইললে- “শোনো, আর ছেলেপুলে লোবো না... ইকেই মাইনুষের মতো মাইনুষ কইরবো।” আমি বইললাম- “বেশ তাইই হবেক।”

বিড়িটা ধরিয়ে আপনমনে কথা বলতে বলতে প্রভু খেয়াল করেনি কখন পৌরসভার আর্বজনার গাড়িটা এসে গেছে। গাড়িটা ফাঁকা করে চলে গেলে, ও সেখান থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেট, জলের বোতল, মদের বোতল তাছাড়াও টুকটাক নানান জিনিস আলাদা করে বস্তায় ভরবে। গাড়িটা আস্তে আস্তে ডালার পেছন দিকটা উঁচু করছে, আগে বেলচায় করে লোকেই ফেলতে, এখন আপনা-আপনি পড়ে; আগে অবাক হয়ে ওদিকে তাকিয়ে থাকত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। ও এখন হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওর সারাদিনের রোজগারের রসদ ঠিকঠাক পড়ছে কিনা।

গাড়ির ডালাটা নামতে নামতে যেন রাস্তার উপর উঠছে, ও একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো। অন্যদিন ওর আসতে দেরি হয়ে যায়, আজ সক্কাল সক্কাল চলে এসেছে; অন্যেরা আসার আগেই ও কাজ হাসিল করে চলে যাবে। 

প্রথমে গিয়েই একটা বড়ো ক্যারিপ্যাকেটে হাত দিল। এরকম প্যাকেট থাকলে ওর বেশ আনন্দ হয়। কারণ ওতে অনেক জলের বোতল একসাথে থাকে। আবার কোন মদের আসরের হলে, বড়ো অঙ্কের টাকাও পাওয়া যায়, “একি প্যাকেটটা হাত দিতেই এরকম নড়ে উঠল কেন?”

অতিসন্তর্পণে প্যাকেটের বাঁধা মুখটা খুলে ফেলল, “একটা আস্ত বাচ্ছা মেয়ে, মইনে হচ্ছে অখনই হইছে। কি গায়ের অং। একুনো বড়ো ঘইরের মেয়ে না হয়ে যাই না।” প্রভুর হাত পা কিরকম হিম হয়ে আসতে লাগলো। “এটা কি কারও পাপের ফইসল, নাকি মেয়ে হইছে বুলেই-” ও খুব ভয় পেয়ে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে গুমরে উঠল। নিজের মেয়ের উদ্দেশ্যে বলতে থাকলো-“ওরে তুর প্রশ্নের এককথায় উত্তর আজ আমি দিতি পারব। সি তুই যতই লিখা পড়া করিস। আজ মুখ্য প্রভুর কথাকে কাটতে তুই তো ছাড় গোটা কোইলকেত্তা পারবেক লাই।” 


শিল্প সাহিত্য ৬৭


সাহস
রুখসানা কাজল

চকচকে ফ্ল্যাটের পাঁচতলা। 
ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র তানিম ঝুম বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে পড়াশুনো  করছে। রাত ফুরোলেই বায়োলজি এক্সাম। ইউট্রাসের গঠন আঁকতে আঁকতে তানিম পেন্সিল ছুঁড়ে ফেলে দেয় । বৃষ্টির তান্ডবের সাথে ও ঘরে আবার মার খাচ্ছে ওর  মা। ভাল লাগে না আর। রোজ রোজ মাকে পর্যুদস্ত দেখতে একটুও ভাল লাগে না ওর। 

খুব ছোটবেলায় মায়ের ফোলা কপাল, আহত ঠোঁট দেখে ও জানতে চাইত, কি হয়েছে মা ? কে মেরেছে তোমাকে ? 
মা তখন ম্লান হেসে জানাত, অই রাক্ষস এসেছিল রাতে। তুমি তখন ঘুমুচ্ছিলে বাবা। 
আমাকে ডাকলে না কেন ? আমি মেরে দিতাম রাক্ষসকে। মা তখন কি যে সুন্দর করে হাসত। হাসতে হাসতেই বলত, তুমি বড় হয়ে ওঠো। দেখো রাক্ষস তখন পালিয়ে যাবে ভয়ে। 

তানিম এবার ও লেভেল দিচ্ছে। রাক্ষসটাকে চিনতে পেরেছে। কিন্তু কিছু করতে পারছে না। ওর চোখের জল রক্তের মত জমে যাচ্ছে দু’চোখে। যেদিন মা মার খায় সেদিন তানিমের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখতে চেষ্টা করে কালশিটে পড়া ফোলা মুখ। 

অনেক ভেবেছে তানিম, আব্বু কেন এমন করে ? অথচ খুব যে খারাপ মানুষ তা নয় । তানিম যেটুকু বুঝতে পেরেছে, তাহলো ক্লাশ নাইনের ফাইন্যাল পরীক্ষা দিয়ে আম্মু তার এক সহপাঠি বন্ধুর সাথে  সমুদ্র দেখবে বলে পালিয়ে  গেছিল।  প্ল্যান করেছিল কক্সবাজার যাবে। সমুদ্র দেখে আবার তারা ফিরে আসবে। দোষ হচ্ছে, আম্মুর সহপাঠি ছিল একজন ছেলে।


এ ঘটনার পর তানিমের নানানানু আর দেরি করেনি। আম্মুকে ঢাকায় এনে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। বিয়ের সময় আম্মুর সমুদ্র দেখার তিনদিনের এডভেঞ্চারের কাহিনীটি তারা গোপন করে গেছিল। তানিমের যখন ছ’মাস বয়েস, সে সময় আম্মুর বাবার বাড়ি চাঁদপুর বেড়াতে গিয়ে কিভাবে যেন জেনে গেছিল আব্বু।  

আম্মুর আর পড়াশুনা হয়নি। বহুকষ্টে এসএসসি পাশ করতে পেরেছিল। তারপর তানিম হলো। আম্মু তানিমকে কোলে নিয়ে আবার পড়তে চেয়েছিল। আব্বু নাকি তখন রাগ রাগ হয়ে বলেছিল, অনেক হয়েছে। ছেলে ফেলে আবার কার সাথে পালিয়ে পাহাড় দেখতে চলে যাবে ! এবার ঘরসংসার কর। 

দরোজা খোলার শব্দ হয়। আব্বু বা আম্মু কেউ হয়ত বেরিয়েছে। ডাইনিং এর লাইট জ্বলে উঠতেই তানিম ওর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ফ্রিজের পাশের জানলা দিয়ে এক পশলা বিদ্যুৎ চমক দিয়ে যায়। 

তানিমের আব্বু অবাক হয়।  বিব্রত মুখে জানতে চায়, তুই ?  কি লাগবে তোর ? পানি খাবি? 
না তোমার সাথে কিছু কথা আছে আব্বু । ড্রইং রুমে এসো। ছেলের শান্ত ঠাণ্ডা গলা শুনে গ্লাস হাতেই ড্রইং রুমে এসে বসে। তানিম সরাসরি প্রশ্ন করে, আব্বু তুমি কি চাও মেরিনা আক্তার আন্টির মত আম্মুও তোমাকে ছেড়ে চলে যাক ?  

এবার হাত কেঁপে ওঠে ওর আব্বুর। টেবিলে গ্লাস রেখে অদ্ভুত চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। অই মুহুর্তে কোন উত্তর দিতে পারে না। ছেলের চোখে আগুন । অথচ কি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুইচবোর্ডের পাশে।
আব্বু বিহেভ ইয়রশেল্ফ। আম্মু ত কখনো তোমার পাস্ট নিয়ে কিছু বলে না। আমি কিন্তু আম্মুকে নিয়ে বেরিয়ে যাবো। ওয়ার্ড ইজ ওয়ার্ড।


শিল্প সাহিত্য ৬৬


পাখির জ্বর ও করোনার বিরূপতা
সাঈদুর রহমান লিটন

তিন দিন চলে গেলো। মেয়েটি জ্বরে কাতরাচ্ছে । স্থানীয় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কোনো কিছুতেই জ্বর কমছে না। মেয়েটির নাম ময়না। অনেকে আদর করে পাখি বলে ডাকে । পাখির নামে নাম তাই। বয়স বারো-তেরো হবে। গ্রাম্য ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নাই। সিজোনাল জ্বর। দু’দিন গেলেই সেরে যাবে। ডাক্তারের কথা কে আর শুনে। এক কান দুই কান করে পুরো গ্রাম জেনে গেলো পাখির জ্বরের খবর।
প্রতিবেশি রহিম চাচা তাদের বাড়িতে বলে দিল, খবরদার ঐ বাড়িতে কেউ যাবে না। আর ও বাড়ি থেকে কেউ যেন এ বাড়িতে আসেনা। তার কথা অমান্য করে এমন সাধ্য কার। এ বাড়ি সে বাড়ি করে পাখিদের বাড়ি অলিখিত লক ডাউন হয়ে গেলো। গ্রাম শুদ্ধ সবাই এটাই বিশ্বাস করলো যে পাখির করোনা হয়েছে। চতুর্থ দিন গত হলো পাখির জ্বর গেলো না। পাখির মা বাবা বাড়ির বাইরে যাবার অনুমতি হারালো। গ্রামের মেম্বার শাসিয়ে গেলো, দেখ পাখির বাপ, তোমাকে ভাল জানি, ভালবাসি, তাই আস্তে একটা কথা বলি তুমি বাড়ির বাহির হইতে পারবা না। কি আর করা পাখির বাবা-মা বাড়ির বাইরে যায় না। পাখি, পাখির মা-বাবার একমাত্র সন্তান। পাখির মা-বাবার ঘুম নাই চোখে। ঘরে খাবার শেষ হয়ে গেলো। বাজার-সদাই নাই, কে করে দিবে। মহা ঝামেলা। একটা গতি হলো মেম্বার ফোনে জানিয়ে দিল, আমি কাউকে দিয়ে চাল, ডাল কিনে তোমার উঠানে রেখে আসবো তুমি নিয়ে নিও। টাকা তার হাতে দিয়ে দিও। খাবার চিন্তা গেলো। কিন্তু গ্রাম্য ডাক্তারকে গ্রাম্য মাতুব্বররা বৈঠক ডেকে বলে দিল, দেখ ডাক্তার তুমি আর ঐ বাড়ি যেতে পারবে না। তুমি ঐ বাড়ি যেয়ে পাখির চিকিৎসা করলে আমরা আর তোমার কাছে যাবো না। ডাক্তার সমস্যা বুঝানো চেষ্টা করলেও গ্রামবাসি তা শুনেনি। অগ্যতা ডাক্তার পাখিদের বাড়ি যায় না। পাখির ৫ম দিনেও জ্বর যায়নি। পাখির মা বাবা এবার ভেঙ্গে পড়ে।
মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করে। আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই। পাখিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো যান চালক যেতে রাজি হলো না। পাখিদের বাড়ি থেকে উপজেলা আট কিঃমিঃ। পাখির হেঁটে যাওয়ার সামর্থ নেই। ৬ষ্ঠ দিনে পাখির জ্বর কমতে শুরু করলো। পাখির মা বাবা একটু শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ৭ম দিনে পাখি মাকে বলল মা ভাত খাবো। পাখি খাওয়া শুরু করলো। পাখির জ্বর নেই। পাখি পুরোদমে সুস্থ। মা -খুব খুশি হলো। ভাবলো তাহলে পাখির করোনা হয়নি। তারা আগেই জেনেছে করোনা হলে চৌদ্দ দিন জ্বর থাকে। তাদের মনে পাখি সুস্থ হবার আনন্দ। পাখির মা বাবা ভাবলো তবু ও পাখির একবার করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল। তাই তারা রাস্তায় বের হলো। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। গেদু চাচা রাস্তায় ছিল ওদের দেখে তড়িঘড়ি বাড়িতে ঢুকলো, ছালেহার মা রাস্তার পাশে কাপড় শোকাচ্ছিল সে কাপড়ে মুখ লুকালো, রাস্তার পাশের দোকান খোলা ছিল দোকান বন্ধ হয়ে গেলো, পাখির বয়েসি কয়েক জন বাচ্চা খেলছিল পাখিদের দেখে পাখি, পাখি বলে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।

শিল্প সাহিত্য ৬৫


একদিন আমরাও অমানুষ হয়ে যাবো

বঁঁধন অধিকারী


আমারও ইচ্ছা ছিলো মানুষ হয়ে বাঁচবো, কিন্তু ইতর শ্রেণির অমানুষগুলো আমাকে থাকতে দেয় নি। থাকতে দেয় নিমামরা মেয়েটাকেও! অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে মরে ছিলো টিকলির মা।

সেদিন ঘোর অমাবস্যা রাত, টিকলিকে ঘুম পাড়িয়ে... টিকলির বাবার অপেক্ষায় বসে ছিলো টিকলির মা। হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনলো, মনের ভেতর কেমন যেন করে উঠলো? টিকলির মায়ের...

সামনে হাজির এলাকার কুত্তারা, সাথে কয়েকটি পোষাবিড়াল। টিকলি মা উঠতি বয়সী মহিলা, চোখে পড়েছে কুত্তাদের... আর রেহাই নেয়! ধর্ষণ করলো টিকলির মাকে! টিকলির বাবা তখনো বাড়ি আসেনি, যখন আসলো তখন ভাঙাঘরের একপাশে পড়ে ছিলো টিকলির মা। টিকলির বাবা বিমর্ষ হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। 

১২ বছর পর,

টিকলি এখন ক্লাস টেনে পড়ে, দেখতে শুনতে মোটামুটি ভালোই। যে কোনো বয়সী পুরুষ তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু খারাপ চোখ তো শকুনেই দেয়। এবার রেহাই পেলনা। তাদেও উত্তরসূরীরা তাকেও ঠিক তার মায়ের মতোই ভোগ করলো। 

বিচার চাইবার যায়গা নেই! বিচার করার লোকও নেই। যারা বিচার করে, তারা সবাই একই গোয়ালের গরু। ধাপে ধাপে বংশক্রমে লুটধর্ষণ করেই যাবে, কোনো কথা বলার থাকবেনা। আমরা গরীব সারা জীবনই মার খেয়ে যাবো। আমরা গরীব সারা জীবন ধর্ষিত হয়ে যাবো। একদিন এমনই করে আমরাও অমানুষ হয়ে যাবো।


উড়তে পারিনি

তপনকুমার দত্ত


তিড়িং তিড়িং করে উড়ে উড়ে এসে স্বপ্নময়দের গন্ধরাজ লেবু গাছে বসছে কত রঙে সাজা কুট্টি কুট্টি পাখিগুলো। স্বপ্নময় ভাবছে- দেখবো, নাকি মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করবো। ভাবতে ভাবতে মোবাইল ছাড়াই মজা পেল আরো। একটি দুটি কুরুক  কুরুক করে মিষ্টি ডাকে জমিয়ে দিল কান। ভরিয়ে দিল প্রাণ। স্বপ্নময় আরো নীবিড় হতেই ফুরুৎ ফুরুৎ করে উড়ে গেল সব। একেই বলে পাখিদের ইচ্ছে। স্বপ্নময় বলে ওঠে- ‘যা। চলে গেলি। আবার আছিস।’ আর ভাবতে থাকে-হয়তো দূরে আরো কোথাও আরেক গাছে বসে গল্প-গানে জমিয়ে তুলবে ওরা। হয়তো ওদের মধ্যে সৃষ্টির উল্লাসে মাতবে দু’জন একান্ত কোনো ডালে।

স্বপ্নময় ঘরে ঢুকে বিড়- বিড় করে বলে-কত ইচ্ছে পূরণ হয়নি আজও। শুধু তোদের মতো উড়তে পারিনি বলে।


চিরসবুজ চলাচলে

বঙ্কিম কুমার বর্মন


এই দেহভার খুঁটে রাখি। সূর্যাস্ত আক্রান্ত ছিঁড়ে ফেলি উটকো ঝামেলায়। হাসির আস্তরণে জমে উঠছে ধূলোবালির সারল্য, তাতে প্রতিবেশী মাঠ ঢেলে দিয়েছে সতেজ উদার। শুধু কিছু অন্ধকারের নির্যাস দু’হাতে মেখে ততবার জিভে বুঝে নিয়েছি আগুনের স্বাদ। অসামর্থ্য সংসারের হালে পাঁচিলের যাবতীয় পেশি সেঁকে নিচ্ছে উষ্ণ বিরহের তরতাজা বুক। কোনো জলশব্দের গোপন প্রহর দু’পায়ে ঠেলে চলেছে আমার বয়স। শক্ত হাতের মুঠোয় রেখেছি ভিন্ন উড়ানের কাহিনি। যার সমস্তটাই শুরু অরণ্যের ভ‚মিতল দিয়ে। হেলে পড়ে বনাঞ্চল চুলখোলা বারান্দার সিঁথিতে। এইসব নিশিযাপন খুনসুটি ডানা ঝাপটায়, তাঁদের অপূর্ব ঋতুরা পাড়ি জমায় ময়ূরপঙ্খীতে। কতবার সিঁড়িও চালিয়েছে স্নেহময় শূন্যের সাইকেল। গলে যাচ্ছে নিশ্চিত কেউ আমাদের ফেরিময় পেয়ালায়। কিছু ভাবনার গলি টুকটাক খসে পড়ে, তাঁদের ডানায় রাশি রাশি নুনের যৌবন উদযাপিত হয়। আমি সেইসব স্পর্শ বিকিয়ে দিয়ে পিপীলিকার মিষ্টি শিকার শিখছি হৃদয়ের চিরসবুজ চলাচলে।


শিল্প সাহিত্য ৫৮


শেষ ইচ্ছে
জাহিদুল মাসুদ

এক ফাঁসির আসামীকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনার জীবনের শেষ ইচ্ছা কি? আপনি কি বিশেষ কারও সাথে দেখা করতে চান?’
আসামী উত্তর দিল, না।
‘আপনি কি বিশেষ কোন খাবার খেতে চান?’
‘না।’
‘আপনার জীবনের কি এমন কোন সাধ ছিল যা এখনো পূরণ হয়নি?’
‘মৃত্যুকে সামনে রেখে মানুষের মাথায় এসব চিন্তা আসে কি করে?’
‘তাহলে আপনার বিশেষ কোন ইচ্ছা নেই?’
‘আছে। কিন্তু তা আপনারা পূরণ করতে পারবেন না।’
‘বলুন, শুনি।’
‘আমি একবার মৃত্যুকে দেখে ফিরে আসতে চাই। দেখাতে পারবেন?’
‘বলেন কি! তা কি করে হয়? তবে একটা গবেষণা সংস্থা আছে, ‘নেয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স’। কিছু রুগী এই গবেষণায় মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসে। কিন্তু পুরোপুরি মৃত্যুর পর কেউ ফিরে আসে না। সর্ব শক্তিমান ছাড়া এ ক্ষমতা মানুষের নেই।’
‘তাহলে আমার কোন শেষ ইচ্ছে নেই।’   


শিল্প সাহিত্য ৫৭


সুখ

নুসরাত রীপা


বস্তির একটা ঝুপড়ির সামনে রিকশাটা দাঁড়ালো। এক পঙ্গু মধ্যবয়সী লোক জহিরকে দেখে বেরিয়ে এলো। তার মুখে আকণ্ঠ বিস্তৃত হাসি। তার পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলো নারী কিশোর বৃদ্ধ নানা বয়সী আরো পাঁচ-ছয়জন।

বস্তির এই ঝুপড়ি ঘরের বাসিন্দাদের কাছে জহির মানুষ নয়, ফেরেশতা!

এই দরিদ্র পরিবার টির উপার্জনক্ষম মধ্যবয়সী লোকটি এক্সিডেন্ট করে পা ভেঙে গেলে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। লকডাউনের এ সময় তার স্ত্রী যে সব বাসা বাড়িতে কাজ করতো তারাও ছাড়িয়ে দেয়। আট সদস্যের সংসারটা মুমূর্ষু যখন তখন জহির এদের দেখা পায়। বাচ্চা গুলো ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছিল- দৃশ্যটা দেখে চোখে জল আটকাতে পারেনি সে।

জহির লোকটির চিকিৎসা করাতে এবং যতদিন সুস্থ্য বা হয় ততদিল চলার জন্য অফিস থেকে পাওয়া অগ্রিম টাকাটা খরচ করে ফেলেছে। কথাটা হিনুকে অনায়াসেই বলতে পারতো। হিনুর মন অনেক কোমল। কিন্তু জহিরের এখন চাকরি নেই। টাকাটা অফিসের দেওয়া দু’মাসের বেতন ছিল। সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে সেটা অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় হিনু টাকাটা দান করতে দিতো কী না এটা ভেবেই কথাটা আর বলা হয়নি।

একদিন অবশ্য হিনুকে সব বলবে জহির। তবে এখন না। নিজেদের একটু কষ্টের বদলে একটা পুরো পরিবার বেঁচে গেছে শুনলে হিনু রাগ করবে না নিশ্চয়ই!
জহির লোকটার কুশলাদি জেনে ফিরে আসছিল, তখন একটা দুই আড়াই বছরের শিশু ভীরু ভীরু পায়ে জহিরের কাছে এগিয়ে এলো। শিশুটির হাতে একটা আধা খাওয়া রুটি, জহিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, নেন নেন নে নে-

বাচ্চাটার চোখে মুখে ভরা পেটের তৃপ্তি, জাহিরের মুখে নিজের অজান্তেই সুখের হাসি ফুটে ওঠে।

শিল্প সাহিত্য ৫৪

প্রেমের ধারাপাত
তপনকুমার দত্ত

যখন তোমার না থাকা কিছু আমি দিতে পারি, তখন তোমার পূর্ণতা দেখি আকাশ ভরা তারার মতো। যখন আমি বহু ভাবনার চাপে নীরব উদাসী হয়ে থেমে পরি, তখন তুমি এসে ‘থামলে হবে না আমি আছি’ বলে এক পশলা বৃষ্টির মতো চনমনে করে তোলো আমার হৃদয় প্রান্তর।
 একেই বলে প্রেম । প্রেম তো প্রেমই।
ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা। ঝিরঝিরে হাওয়ায় জাগে প্রেম। উভয়েই হৃদয় যাপনে হয়ে ওঠে কাছাকাছি জমাট বরফ। বরফ গলে প্রেমের উত্তাপে, ঘটে ঝরণা প্রবাহ। সৃষ্টি হয় নতুন জাতক। জাতকের প্রেম। আবার পূর্ণতা। ঘনিষ্ঠতা। বরফ। ঝরণা। জাতক।
এইভাবে  দিনদিন বেঁচে থাকে অন্তর্হীন প্রেমের ধারাপাত ।

সিকান্দারনামা
লোকমান হোসেন

সকাল হলে বিছনাপাটি গুটিয়ে রাখে মায়। চৌকিটা উদোম হয়ে সারা গায়ে ধুলো মাখে। বেড়ার ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে সূর্যের আলোর সরু ধারা তখন ভিতরে প্রবেশ করে। পুবের ঘর থেকে বাজানের হট হট, র র, প প শব্দ এসে সিকান্দরের কানে ধাক্কা দেয়। গরুগুলো সারাদিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। - কইরে সিকান্দর উঠ। তর বাপের সাথে যা। রান্ধা হইলে ভাত নিয়া যাইস, চুক্কা দিয়া পুডি মাছ রান্ধুম আজকা। খুব ভোরে, ফজরের আজানের সময় হিম বাতাসে উঠে মায়ের ডাকা-ডাকিতে বাবার সাথে হাল নিয়ে যায় সিকান্দর। গরুগুলোর জিরান নাই। জিরান ততক্ষণ, বাজান নারকেলের হুক্কায় কয়েক ছিলিম তামাক দিয়ে গুড়–ক গুড়–ক টান দেয়, যতক্ষণ। ক্ষেতে আগাছা জমলেই উইডার নিয়ে যায় সে। গোছা গোছা আগাছা উইডার ঠেলে আয়নার মতন পরিস্কার করতে হয় জমি। ইউরিয়া, পটাশ সার দেওয়া লাগে মাঝে মাঝে। অগ্রহায়ণ মাস এলে ধান কেটে দুলকি তালে ঘসর ঘসর আওয়াজ তুলে কামলারা বাড়িতে নিয়ে আসে। একটার পর আরেকটা ধানের মুড়ি দিয়ে গোল করে সাজিয়ে রাখে উঠানে। শীতের সময় সেই ধান থেকে তেরি চালের পিঠা রোদে পিড়ি পেতে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা। বছর, দুই বছরে একবার বানের পানিতে ভেসে যায় সব। তখন বড়ই অভাব। বর্ষার পানি থেকে হালুক তুলে খিদা নিবারণ করা লাগে। বড় দুর্দিন তখন সবার। গ্রামের সবাই তখন ধানের বিনিময়ে ঋণ আনে জমিদার বাড়ি থেকে। গ্রামে এই বাড়ির নাম বড় বাড়ি। সেই ঋণ শোধ না করতে পারায় এক সময় জমিই বড় বাড়ির অধীনে চলে যায়। সাঁঝবেলায় দু’মুঠো খেয়ে এশার নমাজের আগেই ঘুম। কুপির তেল বাঁচানো দরকার। লেখাপড়ার তত বালাই নাই।
সেই সিকান্দর হঠাৎ বদলে যায়। স্কুলে ভাল ছাত্রের খাতায় নিজের নাম লেখায়। তারপর ফাইভে বৃত্তি পায়। এইটে বৃত্তি পায়। মেট্রিকে বোর্ডস্ট্যান্ড করে। সম্মিলিত মেধাতালিকায় সাত। সাংবাদিকেরা তার বাড়িতে ভিড় জমায়। তিনি আজ সিকান্দার সাহেব, একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। সেই গ্রামের সিকান্দরকে পাল্টে সিকান্দার। নামে একটি আ-কার যোগ হয়েছে। লেজ হিসেবে জুটেছে ‘সাহেব’। শহরের বিজলী বাতি আর এসির বাতাসের কারণে চৈত্রের রোদের কথা ভাবতেই দরদর করে ঘামেন তিনি নিশ্চয়ই। গ্রাম থেকে আসা সিকান্দার সাহেবের এক আত্মীয় কাম দর্শনার্থী তার ড্রইংরুমে বসে এ বিষয়গুলোই ভাবছিলেন। শহুরে, শিক্ষিত, আরামবিলাসী সিকান্দারের নস্টালজিক হওয়ার সময় কই!

শিল্প সাহিত্য ৫৩

বাবার অঞ্জতা
প্রণবকুমার চক্রবর্তী 

শেখর মিত্র সেদিন সকালে থানার ক্যাশ-বুকটা আপ-টু-ডেট করে যোগ করতে ব্যস্ত, এমন সময় ওর ছেলে পপাই মাস্টার হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির হলো। বললো- বাবাই? তুমি বলছিলে অঙ্কগুলো সব করতে পারলে ক্যাডবেরি সেলিব্রেশন চকলেটটা কিনে দেবে।
আমার ওগুলো সব করা হয়ে গেছে। মা খাতাটা দেখেছে। বলেছে সবগুলো ঠিক হয়েছে বলে খাতাটা ওর সামনে এগিয়ে ধরে।

শেখর তখন ক্যাশবুকে যোগটা করতে এতটাই ব্যস্ত, চোখটা ক্যাশবুকের পাতাতেই রেখে গম্ভীর গলায় বললো- পপাই? ঠিক আছে পরে দেখবো। তুমি এখন বাড়িতে যাও। অযথা বিব্রত করোনা।
কথাগুলো শুনে বাচ্চাটা মুখ ভেটকে কান্না মাখানো সুরে বলে- এ মা! কী বাজে লোক। কথা দিয়ে, কথা রাখে না। ঠিক আছে, আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলবো না। নিজের ডান হাতের কেনো আঙুলটা বাবার দিকে দেখিয়ে বলে- তোমার সাথে আজ থেকে আমার আড়ি। 

পপাই রাগ করে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু , পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নন্দিবাবু গিয়ে ওকে ধরে থামিয়ে বলে- মেজদা? আপনার কিন্তু পপাই মাস্টারের সাথে এমন ব্যবহার করা মোটেই উচিত হয়নি। ওকে যখন কথা দিয়েছন, সেটা আপনার রাখা উচিত। যান না ওকে নিয়ে মধুর দোকানে। চকলেটটা কিনে দিন। কতক্ষণ আর লাগবে?
আমি তো আছি। কেউ এলে সামলে দেবো।

শেখর আর কথা না বাড়িয়ে ক্যাশবুকটা নন্দির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে- বেটার, এই যোগটা করে দে তো।

পপাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দোকান থেকে চকলেটটা কিনে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিতেই  বাচ্চা পপাই মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ জানিয়ে বলে ওঠে- মা ? এটা তোমার মোটেই ভালো কাজ হয়নি।
     - কোনটা? মা জানতে চায় ।
     - এই যে তুমি বাবাকে একদম অঙ্কেও যোগ করা শেখাওনি। আজ নন্দিকাকুকে যোগটা করে দিতে বললো ! ছিঃ! ছিঃ! লজ্জ্বার ব্যাপার ।
শেখর কী বলবে ভেবে না পেয়ে ছেলে আর বৌয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে- ঠিকই তো। তুমি যদি আমাকে যোগ করাটা ঠিক মতো শেখাতে, তাহলে তো নন্দিকে যোগটা করবার কথা বলতে হতো না।

শিল্প সাহিত্য ৫২ বৃহস্পতিবার ২১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৪ঠা জুন ২০২০

চরিত্রহীন চরিত্র
লোকমান হোসেন

‘তীব্র রোদের মাঝেই বিশ্বরোডে ভাঙ্গাচোরা চা স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাশেদ। তার পরনে নীল শার্ট আর কালো জিন্সের প্যান্ট।’ এটুকু লিখেই থেমে যায় তরুণ লেখক তামীম কামরুল। দুয়েক লাইন লিখে থেমে যাওয়ার মত লেখক নয় সে। নতুন লেখক হলেও কব্জির জোর তার ঈর্ষনীয়। কাহিনী বিন্যাস, চরিত্র চিত্রনে দারুণ মুন্সীয়ানার ছাপ রয়েছে তার বিগত রচনাগুলিতে। তাছাড়া সে লিখেও একনাগাড়ে। প্রথমে সে পুরো গল্পটা মাথায় সাজিয়ে নেয়। অতঃপর একসাথে লিখতে বসে। ফলে গল্প দানা বাঁধতেই যা দেরি হয়। নামাতে দেরি হয় না। কিন্তু হঠাৎ সেদিন এক লেখকের গল্পসমগ্র পড়তে গিয়ে সে দেখল ওই লেখক নাকি তার গল্পের চরিত্রটিকে মাঠে ছেড়ে দেন। এরপর চরিত্রই নাকি নিজে থেকেই নিজের পথ খুঁজে নেয়। এভাবেই গল্প এগিয়ে যায় তরতর করে। হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকারেও এরকমটা পড়েছে সে। ফলে সে সিদ্ধান্ত নেয় এমনি একটা চরিত্র তৈরি করে কোন রাস্তার মোড়ে ছেড়ে দেবে। চরিত্র যদি নিজে নিজেই গল্প দাঁড় করাতে পারে তাহলে তো প্লট নিয়ে এত চিন্তা-ভাবনা করা লাগে না। অতএব এক অলস দুপুরে সে গড়গড় করে লিখে, ‘তীব্র রোদের মাঝেই বিশ্বরোডে ভাঙ্গাচোরা চা স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাশেদ। তার পরনে নীল শার্ট আর কালো জিন্সের প্যান্ট।’ এটুকু লিখে সে লক্ষ্য করে চরিত্রের হাত-পা গজায় কিনা কিংবা কাহিনী কোনোদিকে মোড় নেয় কিনা। চরিত্রটিকে সময় দিতে তামীম একটা সিগারেট ধরায়। ধরিয়ে চোখ বন্ধ করে দেখতে চায় রাশেদ এখন কি করছে। চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘরে ঢুকে তার স্ত্রী। স্বামীর এ ধ্যান দেখে বিরক্ত হয় সে। লেখালেখি করলে ধ্যানমগ্ন হওয়া লাগে! আশ্চর্য! পাগলের কারবার। নাহ্। রাশেদ আগের মতই ঠায় দাঁড়িয়ে। তামীম আরো অপেক্ষা করে। ধুর! পাগল নাকি। লেখক না লিখলে চরিত্র আগাবে কোত্থেকে? মনে মনে বলে তামীম। এমন সময় তামীম অবাক হয়ে দেখে, রাশেদ যেন একটু নড়াচড়া করছে। বাহ, বেশ। পকেট থেকে কি যেন বেরও করল। ওমা, এ তো গাঁজা। দু'হাতে পিষে একটা সিগারেটে ভরে সে। হায় হায়। তারপর আস্তে ধীরে এগুতে থাকে। তামীম খেয়াল করে কোথায় যায় সে। চোখ বন্ধ কওে দেখতে থাকে। রাশেদ হাঁটছে ফুটপাত ধরে। সামনে আরেকটা লোক হাঁটছে। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় রাশেদের লক্ষ্য সামনের লোকটা। এমন সময় রাশেদ হুট করে লোকটার পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগটি সরিয়ে ফেলে। লোকটা কিছু বুঝতে পারেনা। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল স্কুল-ব্যাগ কাঁধে সুন্দর একটা মেয়ে আসছে রাস্তা ধরে। একা। তার পেছন পেছন রাশেদ.. ও মাই গড। আঁতকে উঠে তামীম কামরুল। চোখ মেলে ধাতস্থ হয় সে। নাহ্, এভাবে কোন চরিত্রকে অভিভাবকহীন একলা মাঠে ছেড়ে দেয়া যায়না। তবে তো চরিত্র চরিত্রহীন হবেই। একটানে গল্পের লাইনটা কেটে ফেলে সে।

শিল্প সাহিত্য ৫১  বুধবার ২০শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩রা জুন ২০২০

সত্যিকারের বন্ধু
সিদ্ধার্থ সিংহ

রিকির বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কীরে, এরা তোর বন্ধু?
রিকি ওর বাবার মুখের দিকে তাকাল, হ্যাঁ।
--- এরা তোর বন্ধু! যাদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তুই  ক'পা এগিয়ে গেলে, যারা তোর জামার পিছন ধরে টানে?
--- হ্যাঁ, টানে।
--- তুই আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা ঝর্ণা কলমের মুটকি খুলে তোর পিঠে কালি ছিটোয়?
--- হ্যাঁ, ছিটোয়।
--- তার থেকেও আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা নর্দমা থেকে দলা দলা নোংরা তুলে তোর পিঠে ছুড়ে মারে?
--- হ্যাঁ, মারে।
--- আর তখন তুই ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পড়ি কি মড়ি করে প্রাণপণে পা চালাস? কী, তাই তো?
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, একদম ঠিক বলেছ। আমি চাই, ওরা এ সব আরও করুক। ওরা যত এ সব করবে, আমি তত ওদের ও সবের হাত থেকে বাঁচার জন্য জোরে জোরে পা ফেলে ওদের থেকে আরও একটু এগিয়ে যাব।
ছেলের কথা শুনে বাবা তো অবাক, কী বলছিস!
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, আমি ঠিকই বলছি। এরা এগুলো না করলে আমি এগোতেই পারতাম না। এরাই আমার আসল বন্ধু। সত্যিকারের বন্ধু।

শিল্প সাহিত্য ০৯  বুধবার ৯ই বৈশাখ ১৪২৭, ২২ই এপ্রিল ২০২০

জামা

আমিনুল ইসলাম সেলিম

 

নূরগঞ্জ প্রতিনিধি অনন্য জাহেদ মাউথপিস নিয়ে প্রস্তুত। তার গায়ে মোটা পিপিইমুখে সার্জিক্যাল মাস্কহাতে গ্লাভস। প্রেস টিভির সংবাদ উপস্থাপিকা ইরিকা জান্নাত বলছেন-দর্শকএই মুহুর্তে আমাদের নূরগঞ্জ প্রতিনিধি জাহেদ রয়েছেন নবপল্লী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে যেখানে চাল চুরির অপরাধে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হাওলাদারকে। জাহেদআপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? -জান্নাতআমি শুনতে পাচ্ছি। জাহেদ রিপোর্টিং শুরু করলেন। জান্নাত এবার মূল প্রশ্নে এলেন, -জাহেদআপনি কি আমাদের বলতে পারবেনগণপিটুনির সময় হাওলাদারের পরনে কী ছিলো? -হ্যাঁ জান্নাতধন্যবাদ। আসলে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি আসলেসেটা হলোমানেএলাকাবাসী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে যেটা আসলে বলছিলেনতাতে আসলে এটা বোঝা যায়আসলে তার পরনে যা ছিলোতা কারো আসলে দৃষ্টিগোচর হয়নি। -জাহেদজাহেদ আপনি থামেন। আপনি কি বলতে চাচ্ছেনতিনিমানে আমার বলতে খুব লজ্জা করছেমানে তিনি কি উলঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন? -না জান্নাত। বিষয়টা আসলে  রকম নয়। আসলেআমাকে আসলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী যেটা বলছিলেনসেটা হলোতার পরনে আসলে কোনো কাপড় ছিলো না।  বিষয়ে আমি আসলে জানতে চাইলে একজন আসলে আমাকে জানাচ্ছিলেন যেতাকে আসলে উলঙ্গ হয়েছিলেন বলা ঠিক হবে না আসলে...’ জান্নাতের মেজাজ কিছুটা লাফালাফি করে। উপরে নিচে। তিনি বলেন, ‘আহা জাহেদকী বলছেন বুঝতে পারছি নাআচ্ছাআমাদেরকে আপনি কি এটা বলতে পারবেনমানেযে লোকটা আপনাকে বলেছে যেচেয়ারম্যানকে উলঙ্গ হয়েছিলো বলা যাবে নাসে আসলে চেয়ারম্যানের সহযোগী কিনা এবং চেয়ারম্যান বিষয়ে তার আর কী বক্তব্য ছিলোজাহেদ... -হ্যাঁজান্নাত। নামানে তারামানে  লোকটিসহ অন্য আরও কমপক্ষে তিনজন আসলে আমাকে নিশ্চিত করেছেন যেতার পরনে আসলে অনেক আগে থেকেই আসলে কাপড় ছিলো না। এবার উপস্থাপিকা পুরোপুরি বিরক্ত। -আচ্ছা জাহেদথামেন। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেনআপনি কি জানতে পেরেছেনতিনি কোথায় পলাতক রয়েছেনজাহেদজাহেদহ্যালোহ্যালোজাহেদআপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? -অপর প্রান্ত থেকে স্পষ্ট কোনো সাড়া না পাওয়ায় লাইন কেটে দিয়ে ইরিকা জান্নাত আবার দর্শকমুখি হলেন, -দর্শকআপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেনআমাদের প্রতিনিধি কী বলতে চেয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেনতার পরনে অনেক আগে থেকেই কাপড়মানে জামা ছিলো না। তাহলে একটা কাপড়হীন লোককে গণপিটুনি দেয়া কতোটা যুক্তিসঙ্গতআমাদের অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত। দর্শকআমরা এবার একটা ছোট্ট 'চুতরা পাতার বিড়িব্রেক নিচ্ছি। ফিরছি আরও সঙবাদ নিয়ে। সঙ্গেই থাকুন।

শিল্প সাহিত্য ৪৫  বৃহস্পতিবার ১৪ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৮ই মে২০২০ 
অপারেশন
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

কর্পোরেশনের লরি বস্তিবাসীকে নিয়ে ফেলে দিল ধাপায়। কেউ জানলো না। ভোরবেলা প্রথম সূর্যের আলোয় দেখা গেল একটা বাচ্চা হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসছে...

ভিক্ষা
প্রণবকুমার চক্রবর্তী 

একটা সাহিত্যের আড্ডয় যাচ্ছিলাম  সঙ্গে আরোও  দু"জন সাহিত্যিক বন্ধু  বাস থেকে "পান্থনিবাসেনেমে চা খাচ্ছি আর নিজেদের মধ্যে সামাজিক ন্যায় অন্যায় বোধ নিয়ে আলোচনা করছি  হঠাৎ , গুটি কয়েক ভিখারী এসে একে একে হাত পাতলো। 
এই ভাগো তো এখান থেকে  কিছু  হবেনা বলে রমেন আর ইয়াছিন ওদের হটিয়ে দিলো 
আমি ওই ফাঁকে পাশের দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট আর ফেরৎ খুচরো "টা টাকা হাতে নিয়ে ওখানে এসে দাঁড়াতেই , বাচ্চা কোলে করে এক ভিখারিনী এসে হাত পাতলো  বললো - বাবু ? গতকাল থেকে বাচ্চাটা কিছুই খায়নি  কিছু দাও না গো  তোমার মঙ্গল হবে 
দেখে খুব খারাপ লাগলো  হাতে ধরে থাকা খুচরো টাকা "টা ওর হাতে দিতেই ,  সেটা দেখলো  তারপরপাঁচ টাকার কয়েনটা আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললো - বাবু ?  তোমার মঙ্গল হোক  কিন্তু , তোমার বোধহয় একটি ভুল হয়েছে  বেশি দিয়ে ফেলেছো  ভিখারীকে কেউ এতো বেশি ভিক্ষে দেয় না 
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম  পারলাম না   আমাকে সেই সুযোগ না দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে অন্য পাশে চলে গেলো 

শিল্প সাহিত্য ০৪  শুক্রবার ৪ঠা বৈশাখ ১৪২৭১৭ই এপ্রিল ২০২০
gvqv
†gvnv¤§` Rwmg
Nyg fvO‡ZB GK Qz‡U Iqvkiæ‡g- bv Kivi g‡Zv †Kvbg‡Z eªvk K‡i gy‡L cvwbi SvcUv w`‡q †eWiæ‡g wd‡i G‡jv AvwbKv|
Zvi gb GLb bZzb Avb›`, D‡ËRbv I f‡qi †`vjPv‡j `yj‡Q|
wP‡ji g‡Zv †Quv †g‡i mvBW e¨vMwU Zz‡j wb‡jv †m| MZiv‡Z ¸wQ‡q ivLv RvgvKvco Avi UzKUvK `iKvwi wRwbmcÎ G‡K G‡K e¨v‡M fi‡Z jvM‡jv| mewKQy fiv n‡q †M‡j GKUz nuvd †Q‡o evuP‡jv †hb| PzcPvc `uvwo‡q fve‡Z jvM‡jv wKQz ev` co‡jv wK bv|
evievi Nwo †`L‡Q AvwbKv| Nwo‡Z ZLb 5Uv 23|
GZUzKz e¨v‡M Lye †ewkwKQy †bqvi my‡hvM †bB| MZ Rb¥w`‡b evevi †`qv njy` †WªmwUi Rb¨ gbLvivc nq AvwbKvi| †WªmwU‡K †ei K‡i e¨v‡Mi cv‡k ivL‡jv †m| gbLvivc n‡jv `v`xgvi †`qv Rwicvo †giæb kvoxwUi Rb¨| †mwU‡KI G‡b nv‡Zi Kv‡Q ivL‡jv|
mg‡qi mv‡_ mv‡_ evo‡Z _v‡K gbLviv‡ci gvÎv| G evwo‡Z Avi †Zv †divi m¤¢vebv †bB, A_P-¯§„wZweRwoZ gvj-mvgvb¸‡jv †hb Ki‡Rv‡i wgbwZ Ki‡Q m‡½ hv‡e e‡j| AvwbKvI Zv‡`i‡K nvZQvov Ki‡Z Pvq bv|
AvwbKvi ¯§„wZKvZi †Pv‡Li mvg‡bB ÿz`ªvqZb e¨vMwU †hb f~uBqvevwoi eo `xwN n‡q hvq! AvwbKv †Nv‡ii g‡a¨ `v`yi †`qv bxj d«K, fvBqvi †`qv †gKvc e·, gv‡qi †`qv Mnbv, Rb¥w`‡b cvIqv K‡qKwU wcÖq Dcnvi, wcÖq †jLK‡`i eB; Ggb A‡bK wcÖq wcÖq wRwbm R‡ov Ki‡Z _v‡K| wKš‘ e¨vMwU †m¸‡jv wMj‡Z A¯^xKvi Ki‡Q Zxeªfv‡e|
evB‡i cvwL WvK‡Q| cvwL‡`i GB WvK AvwbKvi Lye wcÖq, Av‡iv wcÖq GB evwoUv| evwoi Qv` Avi KvVev`vg Mv‡Qi mv‡_ Szj‡Z _vKv †`vjbv| Avi G evwoi gvbyl¸‡jv? Zviv wK Kg wcÖq?
AvwbKv _g‡K `vuovq| gb e`‡j hvq| †dvb ev‡R| iæ`« †dvb w`‡q‡Q|
AvwbKv †dvbwU wiwmf K‡i| e‡j—m¨wi iæ`ª, Avwg AvmwQ bv| Avgv‡K †c‡Z n‡j evev-gv‡K ivwR Kiv‡bvi †Póv K‡iv|

Pvj †Pvi
iwdKzj bvwRg
GK`g nv‡Z bv‡Z aiv c‡o‡Q| ZvI Ggb gnvgvixi w`‡b!hLb c…w_exi me gvbyl Bqv bvdwm Bqv bvdwm Ki‡Q|wVK ZLb †nwKg †g¤^v‡ii N‡ii †g‡S †_‡K G‡K G‡K Îv‡Yi AvVv‡iv e¯Ív Pvj D×vi K‡i‡Q cywjk|evZv‡mi MwZ‡Z LeiUv Qwo‡q †M‡jv cy‡iv kvwšÍinvU MÖv‡g| †jvKRb †`uŠ‡o Avm‡Q †g¤^v‡ii evwo w`‡K|B‡Zvg‡a¨ Le‡ii KvMR I wUwfi †jv‡KivI P‡j G‡m‡Q| †KD †KD cy‡iv NUbv †gvevBj jvB‡f cÖPvi Ki‡Q|
`y'Rb Kb‡÷ej †nwKg †Pviv‡K Miæi `wo w`‡q †eu‡a †i‡L‡Q| Kyievwbi Miæi g‡Zv MÖvgevmx Zv‡K AvMv‡Mvov †`L‡Q| †g¤^v‡ii mKj Kv‡Ri mnKvix gwR` †nwKg‡K Kv‡bgy‡L ej‡jv,'KBwQjvg ûRyi,GB MR‡ei wf‡Î Pzwi KB‡ib bv| ûb‡Qb Avgvi KZv?hvb,Gnb †R‡j wMqv cuBPv g‡ib|' gv_v wbPz K‡i jvwU‡gi g‡Zv wSg a‡i Av‡Q †nwKg| nVvr †m gwR‡`i UzwU †P‡c a‡i,'nvivwgi ev”Pv gwR`, ZzB Avgvi j‡M Bgyb wbgyKnvivwg Ki‡Z cviwj?'

শিল্প সাহিত্য ০৩  বৃহস্পতিবার ৩রা বৈশাখ ১৪২৭১৬ই এপ্রিল ২০২০
cuvwPj
†mvgbv_ †ewbqv
bbx mvnvi evwo‡Z cvovi G-`j G‡m ej‡jv, KvKz evwoi evB‡ii cuvwPj PzbKvg Kiv‡eb bv| ï‡b bbxevey AvgZv-AvgZv K‡i ej‡jb, †Kb ej‡Zv! gv‡b, wVK eyS‡Z cvijvg bv|
- LyeB mnR KvKz| Avcwb bv Ki‡j Avgiv K‡i †`‡ev| kZ© ïay GKUvB| IB PzbKv‡gi Dci Avgv‡`i cvwU©i cÖwZwbwai bvg _vK‡e| mvg‡b wbe©vPb, eyS‡ZB cvi‡Qb| bbxevey †`L‡jb GB my‡hvM| ej‡jb, wVK Av‡Q| Z‡e kZ© n‡jv †fvU wg‡U hvIqvi ci Avevi PzbKvg K‡i cÖwZwbwai bvg gy‡Q w`‡Z n‡e| G-`j k‡Z© ivwR n‡q †Mj|
iv‡Z cvovi we-`j G‡m GKB cÖ¯Íve ivL‡jv Ges bbxevey G-`j‡K hv e‡jwQ‡jb, we-`j‡K GKB K_v ej‡jb| we-`jI k‡Z© ivwR n‡q †Mj|
G-`j h_vixwZ cuvwPj PzbKvg K‡i c‡ii w`b bvg wjL‡e e‡j P‡j †Mj| we-`j welqwU Rvb‡Z †c‡i G-`‡ji m‡½ Sv‡gjv euvwa‡q w`j Ges mgvav‡bi Rb¨ bbxeveyi Kv‡Q Avm‡jv| bbxevey `yB `‡ji w`‡K nvZ‡Rvo K‡i ej‡jb,
- †Zvgiv mevB cvovi †Q‡j| †Zvgv‡`i mevB‡K Avwg †mœn Kwi| ZvB KvD‡K †div‡Z cvi‡ev bv e‡j IB K_v e‡jwQjvg| GLb ejwQ cuvwPjUv wb‡R‡`i g‡a¨ mgvb fv‡e fvM K‡i `‡ji cÖPvi Pvjv‡Z cv‡iv|
bbxevey f`ª †jvK e‡jB cvovq cwiwPZ| †ek ¸wY gvbyl| GKevi ejv‡ZB cuvwPj e¨envi Ki‡Z w`‡”Qb GUvB wekvj e¨vcvi|
`yÕ`jB bbxeveyi K_vq mvq w`‡q cuvwPjwU A‡a©K K‡i cvwU©i cÖPv‡ii Kv‡R e¨venvi Ki‡jv| †fvUce© wg‡U †Mj| `y-`jB cybivq G‡m cuvwP‡ji wb‡R‡`i e¨eüZ Ask cybivq mv`v PzbKvg K‡i w`‡q †Mj|
GLb bbxevey is wgw¯¿ †W‡K cuvwPjwU‡K wb‡Ri g‡bi g‡Zv K‡i is Kiv‡Z-Kiv‡Z fve‡Qb Avm‡j cuvwPjwU Kvi ...

শিল্প সাহিত্য ০২  বুধবার ২রা বৈশাখ ১৪২৭১৫ই এপ্রিল ২০২০
Bb‡fjvct `¨ †b·U wm‡bgv
†gvnv¤§` Rwmg
†`vZjvi wmuwoi mv‡_ wZbZjvi wmuwoi SMov GLb Zz‡½| †KD Kv‡iv gyL †`‡L bv| G‡K A‡b¨i KvQ †_‡K `~‡i m‡i †M‡Q| ga¨LvbUv duvKv, ay‡jv Do‡Q| GLb PviZjvq †cŠQz‡Z n‡j jvd w`‡Z n‡e|
jvdv‡bvi Af¨vm †bB ¸jRv‡ii| fvix kixi wb‡q GZUv jvdv‡bv hvq bv|
K¨v‡givq †PvL †i‡L ¸jRvi †Ui cvq Zvi †fZ‡iI Ggb wekvj GKUv duvKv RvqMv| †mLv‡b KZ¸‡jv Ue, gvwUfwZ©| g„ZcÖvq K¨vKUvm, fvOv †MvjvcMvQ, g„Z iRbxMÜv ï‡q e‡m mgq cvi Ki‡Q U‡e U‡e|
GZw`‡b ¸jRv‡ii KvQ †_‡K `~‡i m‡i †M‡Q eD-ev”Pv, eÜy-KwjM, GgbwK kÎyivI| duvKv n‡q †M‡Q, `yfvM n‡q †M‡Q Rxeb| weev`gvb wmuwoi g‡Zv|
¸jRvi GLv‡b G‡mwQ‡jv wm‡bgv evbv‡Z| A_P †m PviZjvq †cŠQz‡Z cvi‡Q bv|
AMZ¨v `vjvbwU †_‡K †b‡g G‡jv †m, Ab¨ `vjv‡b hv‡e|
Awf‡bZv `xj gyn¤§‡`i evwo‡Z DB‡KÛ cvwU©| cv_y‡i Rwg‡Z Ryg‡¶Z, †Mvjvc †ejx wkgyj| †bwZ‡q cov eq¯‹v ayZzivI| ¸jRvi GKwU nvmœv Zz‡j wb‡Z †P‡qwQ‡jv,  wKš‘ Zvi Av‡MB nvmœv‡nbv wb‡RB Zv‡K Zz‡j wb‡jv|
nvmœv wKsev †nbvi †Mvjvwc wkdb kvox, nvZvKvUv eøvDR Avi wPKb ÷ª¨v‡ci eªv| 36 eqm wKsev ey‡Ki gvc Dfq †¶‡ÎB gvbvbmB| `y'‡Uv wmuwo G‡K Ac‡ii w`‡K G¸‡”Q| Zviv †U‡i‡mi w`‡K P‡j †Mj|
†nbv h_v_©B iƒcmx| Sjg‡j| Zvi Rxe‡b Ab¨ wm‡bgv Av‡Q| ¸jRvi †mBme wm‡bgvq XyK‡Z PvB‡jI †nbv wd‡i ZvKv‡Z Pvq bv| Lvg bv Lyj‡j †hgb †fZ‡ii `ytmsev`wU cov nq bv| ¸jRvi LvgwU †Lv‡jwb, eis bv Ly‡j nv‡Z a‡i ivL‡Z fvj jvMwQ‡jv Zvi|
LvgwU‡K ¯úk© K‡i cyjK cvq ¸jRvi| Pzgy Lvq| KPjvq| `jvB gjvB K‡i| 36 Av`k©| cuvP AvOz‡j Lvc †L‡q hvq|
GKUv AvU©wdj¥ Ki‡ev Gevi| Bb‡fjvc| †Zvgv‡K Kv÷ Ki‡Z PvB|
Avgv‡K Lv‡g fi‡Z PvI? Av‡M wb‡R †Zv †Xv‡Kv gkvB|
†nbvi nvwm wibwSwb‡q ev‡R| g„`y g„`y Uzs Uvs kã nq|
¸jRvi mixm…c nq, †`vZjvi j¨vwÛs‡q Kv‡iv cv‡qi AvIqvR †bB, wbf©‡q Lv‡g Xz‡K hvq †m|
wdi‡Z wdi‡Z ivZ cÖvq †kl| †nbv †h wmuwo¸‡jv †e‡q Dc‡i DV‡Q †m¸‡jvi ga¨LvbUv duvKv| ¸jRv‡ii wmuwo‡ZI Ggb GKUv duvKv Av‡Q| A_P Zviv †hLv‡b wm‡bgv K‡iwQ‡jv †mB wmuwo¸‡jv †Kgb GKUv Av‡iKUvi Dc‡i Dey n‡q c‡o wQ‡jv| GË KvQvKvwQ!
Avjv`v Avjv`v `iRvi Zvjvq cÖvq GKB mg‡q Pvwe †XvKvq Zviv| †h hvi Lv‡g Xz‡K hvq|
duvKv wmuwo¸‡jv c‡o _v‡K †hgb wQ‡jv| Avi †mB k~b¨ RvqMvq K‡qKwU Ue c‡o _v‡K Ah‡Zœ, U‡e U‡e ïK‡bv †XuomMvQ|

শিল্প সাহিত্য ০১  মঙ্গলবার ১লা বৈশাখ ১৪২৭১৪ই এপ্রিল ২০২০
gwng †R‡M I‡Vv
Kwei weUz
nVvr `xN© c_ †nu‡U †nu‡U hLb cv'Uv GKUz a‡i G‡m‡Q, gwn‡gi †m gyn~‡Z© †Lqvj nq †m †Kgb GKUv †Pbv A‡Pbvq †gkv‡bv RvqMvq P‡j G‡m‡Q| gvby‡li †Kvjvnj †bB, wiKkvi Nw›U, Mvwoi kã A_ev †Kv‡bv wKQzi MÜ, wKQyB Zvi †MvP‡i Avm‡Q bv †h‡bv|
gwng Abygvb Kivi †Póv K‡i RvqMvUv †Kv_vq| Ggb wbS©ÅvU RvqMv ïay ¯^‡cœB †`Lv hvq, nVvr g‡b DuwK w`‡q hvq -Avwg ¯^cœ †`LwQ bv †Zv? cigyn~‡Z©B †n‡m I‡V| Ggb fvebv fvevi h‡_ó KviY †_‡K hvq| ¯^cœ‡K †hgb Abvqv‡mB †R‡MB AvwQ †f‡e †bqv hvq, †Zgb †R‡M †_‡KI DrKÉv ¯úk© K‡i hvq - G ¯^cœ bq‡Zv! gwng g‡b Kivi †Póv K‡i †Kv_vq hv‡”Q †m| wVK g‡b co‡Q bv| - wVK Av‡Q Amyweav bvB nuvU‡Z _vwK, g‡b c‡o hv‡e|'
Ggb K‡iB AvRKvj fvebvi Af¨vm n‡q †M‡Q| wKš‘ MšÍe¨ g‡b Ki‡Z bv cvi‡j †Kvb w`‡K nvuU‡e †m| GKUz `vuovq Mv‡Qi Qvqvq, †Pv‡L c‡o `ywU m‡`¨vRvZ KzKz‡ii ev”Pv †e‡Nv‡i Nygvq GKUv Av‡iKUvi kix‡i kixi Wzwe‡q| - `y'‡Uv †K‡bv, Avi ev”Pv KB? gwng Gw`K Iw`K ZvKvq| evwK ev”Pv‡`i †Luv‡R| ev”Pv‡`i gv‡KI| kxZ kxZ jvM‡Q kix‡i - Avnv‡i ev”Pv¸‡jv wbðB iv‡Z Lye Kó †c‡q‡Q! - Av‡kcv‡k gqjvi fvMviI‡Zv †Pv‡L co‡Qbv, evwo N‡ii wPýI †bB| gwng AvU‡K c‡o GLv‡b| cvk w`‡q GKRb gvbyl P‡j hvq, wVK fv‡e ZvKv‡j †Pv‡L co‡Zv `yRb w`bgRyi GKUz `~‡i `uvwo‡q m¨v‡Ûj nxb gwn‡gi w`‡K Lye †KŠZznj wb‡q ZvwK‡q Av‡Q| nVvr GKwU †cvqvwZ weovj jvd w`‡q †b‡g Av‡m †Kv_v †_‡K †hb| †mw`‡K ZvwK‡q ev”Pv `y‡Uvi gv‡K cvIqv †M‡jv g‡b K‡i e‡m gwng| †Kv‡bv LUKv †bB, AmvgÄm¨I g‡b nq bv| gwng †`‡L wK my›`i AvKvk †P‡q Av‡Q Zvi w`‡K|
nVvr †cUUv †gvPo w`‡q I‡V, †m `ªæZ evwo †divi iv¯Ív †Luv‡R, A_P g‡b c‡o bv| Gici `…k¨ cv‡ë mvg‡b a~a~ ïb¨Zv| †Pv‡L c‡o Kviv †hb †nu‡U hvq, ûm K‡i †cQb †_‡K D‡o hvq, Zvici Zvi cy‡iv kixiUvi `Lj wb‡q †bq| gwng †MvOvq- Avwg evwo hvgy| wb‡Ri Kv‡QB bvwjk K‡i Avwg evwo hvgy| ÿzav jvM‡Q| wKQy‡ZB g‡b K‡i DV‡Z cv‡i bv wKfv‡e evwo wdi‡e †m| GKUy AwbwðZ AvksKv wb‡q wb‡R‡K cÖ‡eva †`q -GUv ¯^cœ, GUv ¯^cœ| wbðB Avwg †R‡M DV‡ev...

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক