সিদ্ধার্থ সিং

সিদ্ধার্থ সিংহ


ওর দিকেই


ষষ্ঠ শ্রেণি অবধি পড়েছে মেয়েটি

কোনও গুণ নেই

একটা মাত্র স্বামী, তাকেও ধরে রাখতে পারেনি।

এর তার বাড়ি কাজ করে

আমার বাড়িতেও।


বর্ষাকাল, কখন ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে যায়!

ওকে বললাম, আকাশটা দেখ তো, ছাতা নেব কি না

ও জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল---

শ্বেতশুভ্র হিমালয়ের চ‚ড়ায় সূর্যের ছটা

এক দঙ্গল পাগলা ঘোড়ার হাওয়ায় ভেসে যাওয়া

পালটে-পালটে যাওয়া ডাইনি বুড়ি

আরও কত কী!


গলির মুখ অবধি গিয়ে দেখি গাছটার তলায় কত বকুল ফুল পড়ে আছে

কী সুন্দর গন্ধ!

টপাটপ ক’টা তুলে ঘরে রাখার জন্য ওর হাতে দিতেই

ও তাতে দেখতে পেল সুদর্শন চক্র, অশোক স্তম্ভের চরকা।


ফেরার সময় কিনেছিলাম একগুচ্ছ রজনীগন্ধার স্টিক

ফুলদানিতে রাখার জন্য ওকে দিতেই

ফুলগুলো ওর কাছে হয়ে গেল কতগুলো বিধাব মেয়ে।


ষষ্ঠ শ্রেণি অবধি পড়েছে মেয়েটি

কোনও গুণ নেই

একটা মাত্র স্বামী, তাকেও ধরে রাখতে পারেনি।

কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকায় না

অথচ আমার চোখ বারবার ওর দিকেই চলে যাচ্ছে

ওর দিকেই...




অপারগ

বন্যায় সব ভেসে গেছে
ক’টা জামাপ্যান্ট ছাড়া কিছুই আনতে পারিনি...
ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলেছিল সে।

হঠাৎ করে ঘরে আগুন লেগে গেলে
কিংবা আচমকা ভ‚মিকম্প হলে
মানুষ কী নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে! কী নিয়ে!

ও রকম কোনও দিন যদি আমার জীবনে আসে
তা হলে কী কী নেব? কী কী?
তার একটা তালিকা তেরি করে রেখেছিলাম আমি।
সেই তালিকার প্রথমেই ছিল
আমার কবিতার খাতা,
দ্বিতীয় স্থানে ছিল
আমার পোষা বেড়ালছানা,
আর তৃতীয় স্থানে
ছেলেবেলায় পাওয়া আমার প্রথম প্রেমপত্র।
চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তমে আর কী কী ছিল
এখন আর মনে নেই।

যে দিন সত্যি সত্যিই ওই ভাবে আমাকে বেরিয়ে আসতে হল
সে দিন কি কিচ্ছু নিতে পারলাম না
না সেই প্রেমপত্র, না সেই ছোট্ট বেড়ালছানা
না সেই কবিতার খাতা
কিচ্ছু না। কিচ্ছু না। কিচ্ছু না।

এমনকী, নিজেকেও সঙ্গে করে আনতে পারলাম না।







সিদ্ধার্থ সিংহ


অ্যালজাইমা

কিছুই মনে রাখতে পারছি না আর।

কে যে বলেছিল, অমুক সম্পাদকের সঙ্গে আপনার তো দারুণ যোগাযোগ
আমাকে একটু আলাপ করিয়ে দিন না ...
কে যে বলেছিল, পা অপারেশনের পর দিন দিন আরও সমস্যা হচ্ছে
ভাল কোনও অর্থোপেডিক থাকলে বলবেন তো ...
কে যে বলেছিল, আমাদের বাড়িওয়ালাটা খুব খারাপ মানুষ
আপনার তো ছত্রিশটা বাড়ি
ছোট্ট একটা ঘর হলেও হবে, দেখুন না যদি হয় ...

কে যে কী বলেছিল!
কিছুই মনে রাখতে পারছি না আর
তাই এরটা ওর
ওরটা তার
আর তারটা এর সমস্যা ভেবে আমি যেই সমাধান করতে যাই
অমনি বুঝতে পারি
আমি  কী কেলেঙ্কারি করে ফেলেছি ...

কিছুই মনে রাখতে পারছি না আর
গুলিয়ে যাচ্ছে, গুলিয়ে যাচ্ছে, গুলিয়ে যাচ্ছে কোনটা পুচুসোনা, কোনটা মেঘনা আর কোনটা টুসু ...



****************************



প্লিজ


আমাকে একটু পরামর্শ দিন


সবাই যেমন একদম নিচুতলা থেকে ওপরতলা অবধি

সেভেন্টি-সেভেন্টি টু পার্সেন্ট নজরানা দেন

আমি তার থেকে কিঞ্চিৎ বেশিই দেব।


বললে, ছেলেদের দিয়ে এলাকা দখল করিয়ে দেব

যাদের মুখ আর দেখতে চান না

তালিকা দিলেই, হাসতে হাসতে নামিয়ে দেব তাদের মাথা,

যে সব মিডিয়া আপনার ভজনা করবে না

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে দেব তাদের মুখ।


যা বলবেন এবং যা বলবেন না

আমি সেটাও করে দেব,

আপনি শুধু আমাকে একটু পরামর্শ দিনÑ

কী করলে এই শাসক দলের বড় মন্ত্রী বা নেতা না হই

অন্তত একজন কাউন্সিলর যাতে হতে পারি।


আর, একজন কাউন্সিলার হলে?

সব দিয়ে-থুয়ে, ফেলিয়ে ছড়িয়ে

চার-ছ’টা মেয়েছেলে পুষেও

বছর শেষে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা তো ঘরে তুলতে পারব।


আপনি শুধু আমাকে একটু পরামর্শ দিন

একটু পরামর্শ, প্লিজ।



ঘটনাটা ওদেশের


ভদ্রমহিলা গেছেন শপিংমল-এ।

সারা সপ্তাহের জন্য কিনছেন চাল-ডাল, আলু-পটল, তেল-লঙ্কা

শো-কেস থেকে জ্যাম-জেলি, সেন্ট, দুধের কৌটো

ঝুড়ি থেকে মুরগি, জিইয়ে রাখা মাছ

কোণের কাউন্টার থেকে ওষুধপত্র।

যেতে যেতে নজরে পড়ল সামনের খাঁচায় কতগুলো বালক।

স্বামী ভীষণ ব্যস্ত, তিনি আরও।

ফাইফরমাস-খাটা রোবটদের থেকেও এগুলো অনেক সস্তা

তাই এক পলকেই পছন্দ করে ফেললেন তাগড়াই একটা।


বাড়ি ফিরে ছেলেটাকে বললেন, জল দিতে

ছেলেটি দিল না।

এটা করতে বলেন, সেটা করতে বলেন

কিন্তু কে শোনে কার কথা!


ভদ্রমহিলার কেমন সন্দেহ হল

তিনি এক হ্যাঁচকায় খুলে নিলেন ছেলেটার জোব্বা

পিঠে চোখ পড়তেই--- এ কী!


তিনি আলু-পটল, জ্যাম-জেলি, মুরগি-মাছ

এমনকী, ওষুধগুলোও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন

--- নাঃ, সব ঠিক আছে, শুধু এই একটা জিনিসেই

দোকানদার তাকে বড্ড ঠকিয়েছেন

এর ডেট এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে অনেক আগেই।


ভদ্রমহিলা ছুটলেন দোকানে

এই ত্রুটির জন্য ক্ষমা-টমা চেয়ে

দোকানদার তাঁকে বেছে নিতে বললেন অন্য একটা বালক।

তার পরে হাঁক পাড়লেন।

ধুমসো মতো দুটো লোক এসে

ছেলেটাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল ভেতরে।

সেটা দেখে ভদ্রমহিলার বড় মায়া হল, তিনি জিজ্ঞেস করলেন---

ওকে কি আপনার মেরে ফেলবেন?

নির্বিকার ভাবে দোকানদার বললেন---

না না, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আছে না...


No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক