বুধবার ৭ই শ্রাবণ ১৪২৭, ২২ই জুলাই ২০২০
এই সংখ্যা শুধুই কবিতা’র
ক্ষুধার বঙ্কিম পথে হাঁটতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে মুক্তির সনদ
হাতুড়ির ঠাসঠুস কবিতা জড়িয়ে পড়ছে কাকসন্ধ্যার ফ্যাক্টরিতে
অনির্ধারিত শ্রম ঘন্টায় মার্কস্ হতে থিতিয়ে পড়ছে সমবন্টন
সূই-ছিদ্রের দাসত্বের জীবন হতে মুক্তির ফরমান কবে যে গ্যালাক্সি ধরে উড়ে গেছে
দূর হতে দূরে, আলোকবর্ষে
অথচ এখনো ধূলি উড়া অতীত নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে স্মৃতি
এই সন্ধ্যায় পাতার সম্ভ্রম কেটে বের হচ্ছে আলোর দীর্ঘ তলোয়ার
জোড়া চোখে বিঁধছে তার পুলক কিংবা-
বিঁধছে বাবার লাশের মতো উত্তর দক্ষিণ শায়িত মজা খাল,
আগাছার সবুজ কাফনে আবৃত যার পরিত্যাক্ত দেহ,
দেহে হেইচি আর কলমির ঢলে পড়া লতানো খিলখিল
এসবের কিছুই বুঝে না জীবন সত্বের এই ছায়াচিত্র
ক্ষুধার বঙ্কিম পথে হাঁটতে গিয়ে চেতনারা আলপথে হোঁচট খায়,
হারিয়ে ফেলে বুক পকেটের মুক্তির সনদ
সাজ্জাদ সাঈফ
রাবার বাগানে দিনরাত্রি
আর এ’ই লেখাপত্র, এ’ই ঘুমভাঙানো ফেনায়িত রোদ, সকাল-সকাল
ক্ষুরধার তলোয়ারে ফালি ফালি হয়ে, ছড়িয়ে পড়ছে গানে, রাবার বাগানে।
ডোমেদের চোখে চোখে মড়া সেঁকা দেয়া
ভ্রান্ত আগুন জ্বলে, বেদে নারীদের
এই পথে যাওয়া-আসা দেখি;
কতকাল এক শিকারী আঙুল, তাক করে রাখা
সুন্দরের দিকে, ছেনি-ছোঁয়াহীন মিনারের দিকে;
উড্ডয়নে!
মসজিদের ছায়া খেয়ে-খুঁয়ে, ফিরে যায় পিঁপড়ার শুমারি;
‘দুনিয়া’ ‘দুনিয়া’ বলে ডাকি- সাড়া আসে, ছায়া-প্রচ্ছায়া আসে;
বিস্মৃতি হতে উকি দেয় মাচাফুল, রোদ পেয়ে জ্বলজ্বল করে
প্রাচীন স্বপ্নের ভেতর।
সজল রানভী
“শোক সংগীত”
চোদাবোকা রাষ্ট্র নিজের পোঁদে বাঁড়া ঢুকিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনায়।
আমরা শুনি মৃত্যুর আহাজারি। আমরা শুনি কাফন ছাড়া দাফন। আমরা শুনি ডাল ভাতের নিম্নবিত্ত জীবন। আমরা শুনি পুঁজিপতিদের মেদওয়ালা স্ত্রীর হোগায় তেলের খনি। আমরা শুনি ভাঁড় মন্ত্রীদের আয়ুতে হেব্বি কারেন্ট। আমরা শুনি দ্যাশে মাল নেই। আমরা শুনি সিগারেটের আকাশচুম্বী দাম। আমরা শুনি করোনায় তিনের নামতা।
নিজের পোঁদে বাঁড়া ঢুকিয়ে বোকাচোদা রাষ্ট্র চোদাবোকা রাষ্ট্র আমাদেরকে উন্নয়নের গল্প শোনায়। আমরা শুনি আমাদের নিজ নিজ অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার শোক সংগীত।।
অনার্য নাঈম
হৃদ্যতা বেঁচে থাকে কাশফুলের নরম ছোঁয়ায়
অহর্নিশ শরীর থেকে ঝরে পড়ে ঘাম;
ঘাম-বিন্দু পানির যমজ ভাই,
তবু পানির সাথে ঘামের হৃদ্যতা নেই
বিবাহিত সম্পর্কের মতো প্রয়োজন হয়।
অহর্নিশ তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে;
ধ্যান-বিন্দু তুমি, তোমার কালো চোখ;
তোমার সাথে সময়ের কোন হৃদ্যতা নেই
সে শুধু বয়ে চলে আমাদের নিয়ে।
অহর্নিশ ভালোবাসতে ভালো লাগেনা
অথচ ভালোবাসা ভালো লাগার পূর্ব-প্রজন্ম।
আবু জাফর সৈকত
বলদ-অলদ
শান্তি শান্তি
ও’ম শান্তি
রিফ্লেকশন রিয়েকশান
একটু একটু ¯শ্লিপী
ঢুলু ঢুলু গুলু গুলু
তুমি কতো ভালো
(তুমি আমি হইতে পারো, আমি তুমি হইতে পারি)
স্টেইনলেস চামচ
সোনার চামচ-
এুখে তুলে ছুঁই ছুঁই চুই চুই
চলো যাই কুয়াশা চাদরে একটু শুই
গুডো গুডো ফিলিংস
ও মন। হি হি হি। খিল খিল সাউন্ড
একটু না হয় হল অদল-বদল
তুমি আমি অলদ-বলদ
জাহিদুল মাসুদ
কবি
কবিতায় পুড়ছি;
পুড়ছে ঘর-সংসার।
তোমার মুখের রেখায়
একদিন জ্বলেছিল যে আগুন
রাত জাগা চাঁদের উপমায়
কবে যেন সে আগুন চাঁদ হয়ে গেল।
চাঁদের আগুনে হেঁটে হেঁটে
আজীবন পুড়ছি কবিতায়।
সাম্য রাইয়ান
দাঁত মাজা আর চাকু ধার দেয়ার মধ্যে আদতে কোন পার্থক্য নেই, যদিও বিষয়দুটিকে আলাদা মনে হয়
তার একটা গ্লাস ছিল
তার একটা গ্লাস ছিল। সেই গ্লাসে সে জলপান করত। অবশ্য দুধপানও করত। তবে ইদানীং প্রকৃত দুধপ্রাপ্তিজনিত দ্ব›দ্ব এবং মূল্যবৃদ্ধিহেতু জলপানপাত্র হিসেবেই তা থিতু হয়েছে। তবে আরো একটা বিশেষ ক্ষেত্রে এর নিয়মিত ব্যবহার লক্ষ্যনীয়, চাপানক্ষেত্রে। বাড়িতে খুব একটা, প্রায় কখনোই চা বানানো হয়ে ওঠে না; বিশেষ সময় ছাড়া। তাই প্রতিদিন সকালে পাশের চা-দোকানে যেতে হয় ঐ গ্লাস নিয়ে। আর দোকানী সকালেই বেশ ব্যস্ত-ব্যস্ত একটা ভাব নিয়ে উচ্চ থেকে, আশীর্বাদের মতো, গ্লাসে ঢেলে দ্যায় চা।
প্রতিদিন যে দৃশ্যে আক্রান্ত হতে হতে
আমরা প্রতিদিন যাওয়া-আসার মাধে পূর্বাংশে/অনুচ্ছেদে বর্ণিত চা-গ্লাসযুক্ত দৃশ্য অবগত হই। অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া এই দৃশ্যের প্রতি আমার বিশেষ মনোযোগ জন্ম নিতো না, যদিনা আমার মানবতাবাদীফ্রেন্ডটি এই বিসয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। আমি ব্যাথিত হই... আহারে... ওহ্...
মেশিনচালিত শহুরে দিনরাত্রি
আবার প্রথম থেকে, নতুন করে লিখছি পুরোটা
বিগত সময়ের কর্মকে কেটেকুটে, ব্যাপক
কাটাকাটি হলেও নতুনে রয়েছে ছাপ, পুরানের
চিহ্নিত হচ্ছে ধীরে, না-লেখা কলম, তেলের কাগজ
তা-হোক, তবু আবিষ্কৃত হোক প্রকৃত যাপন
আদিম শ্রমিক আমি; মেশিন চালাই।
মেশিনে লুকানো আছে পুঁজির জিন
চালাতে চালাতে দেখি আমিই মেশিন
- মেশিন
শহরে প্রতিদিন একই মানুষ
একই ভাবে
একই সময়ে
একই পথে
একই গন্তব্যে চলে যায়।
একটার পর একটা দিন, একটার পর একটা রাত, একটার পর একটা মাস কেটে যায়। বাবার ঘাড়ে থাকাকালীন সময়গুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। আমার সাবেক মানবতাবাদীফ্রেন্ডটি বহুজাতিকের গু-মুত চেটেচুটে বেশ আয়রোজগারের একটা ব্যবস্থা করে লুম্পেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েও,পৃথিবী নাট্যশালাহেতু এই রঙ্গমঞ্চে সমাজ-উন্নয়নকর্মী চরিত্রে অভিনয় করতে থাকে।
দোকানী আশীর্বাদ করে গুচ্ছগ্লাসে
তাদের প্রত্যেকের একটা করে গ্লাস আছে। সেই গ্লাসে তারা জলপানকরে, চাপানকরে। একটিমাত্র টিউবঅয়েল থাকার কারণে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে গ্লাস বাড়ায়, জলপানকরে। চা-দোকানের বাইরে, উঠোনে বসে, আশীর্বাদ করার মতো করে নিজ গ্লাস বাড়ায়, চা নেয়; চাপানকরে। দোকানীর ব্যস্তভাব কখনোই কাটে না।
পৃথিবীর দেহে ধার হচ্ছে জঙধরা চাকু
দীর্ঘদিন পর একসকালে আমি ঐ পথে যেতে তাকে দেখতে পাই, এভাবে তাকে আমি কখনো দেখিনি, তার ঐ গ্লাসটি ছাড়া, সে তখন দাঁত মাজছে...
শম্পা বিশ্বাস
অসন্দিগ্ধ কাকাতুয়া
সুখের সময় পালকের প্রাচুর্য আনে
বিপদে কথা বলে আমার সমর্থনে,
যুক্তি, তক্কো, বুলির চাবুুকেই প্রমাণ করে দেয় আমি কাঠগড়া নই।
হাতের কব্জিকে বানিয়েছে সে রাজগদ্দি,
রক্ষার প্রয়োজনে নখের আঁচর বসাতেও পিছুপা হয়না সে।
দুধের রমণীয়তার মাথায় অর্ধচন্দ্র মুকুটের ঝুঁটি দুলে দুলে এটাই সে বোঝায় প্রভুকে পোষ্যর অভাব কখনো দেয় না বুঝতে-
অভিনয় তো কল্পচরিত্ররা করে
কাকাতুয়া আরেক নাম প্রভুত্ব ও বিশ্বস্ততার।।
সিদ্ধার্থ সিংহ
ওর দিকেই
ষষ্ঠ শ্রেণি অবধি পড়েছে মেয়েটি
কোনও গুণ নেই
একটা মাত্র স্বামী, তাকেও ধরে রাখতে পারেনি।
এর তার বাড়ি কাজ করে
আমার বাড়িতেও।
বর্ষাকাল, কখন ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে যায়!
ওকে বললাম, আকাশটা দেখ তো, ছাতা নেব কি না
ও জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল---
শ্বেতশুভ্র হিমালয়ের চ‚ড়ায় সূর্যের ছটা
এক দঙ্গল পাগলা ঘোড়ার হাওয়ায় ভেসে যাওয়া
পালটে-পালটে যাওয়া ডাইনি বুড়ি
আরও কত কী!
গলির মুখ অবধি গিয়ে দেখি গাছটার তলায় কত বকুল ফুল পড়ে আছে
কী সুন্দর গন্ধ!
টপাটপ ক’টা তুলে ঘরে রাখার জন্য ওর হাতে দিতেই
ও তাতে দেখতে পেল সুদর্শন চক্র, অশোক স্তম্ভের চরকা।
ফেরার সময় কিনেছিলাম একগুচ্ছ রজনীগন্ধার স্টিক
ফুলদানিতে রাখার জন্য ওকে দিতেই
ফুলগুলো ওর কাছে হয়ে গেল কতগুলো বিধাব মেয়ে।
ষষ্ঠ শ্রেণি অবধি পড়েছে মেয়েটি
কোনও গুণ নেই
একটা মাত্র স্বামী, তাকেও ধরে রাখতে পারেনি।
কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকায় না
অথচ আমার চোখ বারবার ওর দিকেই চলে যাচ্ছে
ওর দিকেই...
১০০তম সংখ্যায় শুভকামন।
ReplyDelete