বুধবার
৩১শে আষাঢ় ১৪২৭, ১৫ই জুলাই ২০২০
কবিতা
ম্রিতোষ তত্রাচ#২৩০৬১৯
বিচ্ছিন্নতার সকল দরজা-জানালা খুলে রেখেছি-আসতে পারো যেতেও পারো ইচ্ছে খুশি অথবা থাকতে পারো গাছের মতো স্থীর-বাতাসে নড়তে পারো পাতার মতো ঝরতে পারো হলুদ হলে-বিকেলের পাখি ডানায় উড়তে পারো-
সম্পর্কগুলো মিথ্যে যেনেও- বাঁধতে পারো
কাঁদতে পারো-হাসতে পারো
ঋত্বিক গোস্বামী
বাসনা
(কোনো এক প্রিয় কবির স্মরণে)
মদ আমাকে প্লাবিত করেছ তুমি
তোমাতে দুর্বার অবগাহন ছিল একদিন
ছিল প্রত্যন্ত ভাসান আমার,
আজ রিক্ততায় যখন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত আমি
যখন একটিও প্লবতা অবশেষ নেই কোষেতে কলাতে
অঙ্গে অঙ্গে নেই সাঁতারুর নিপুণ কৌশল
আমাকে তোমার সেই ঐশী শক্তি দাও মদ
আজ আমি মাতাল করব সমস্ত পাথর চরাচর।
আল-আমীন আপেল
"দুঃখ"
মেঘ গলে পড়লেই তোমরা তাকে বৃষ্টি
বলো, আসলে ওটা তো মিকাইলের
দুঃখ!
পাহাড়ের বুক ফেড়ে বয়ে আসা ক্রন্দনধ্বনিকে
বলো ঝরণা- ওটা তো আসলে পাহাড়ের
দুঃখ!
মো. আরিফুল হাসান
বৃষ্টির জন্য কয়েকটি কোরাস
যেনো আমি জলাবদ্ধতা, -তোমার থই
থই বুকে, যেনো আমি আগুনের চশমা
তুমি ভুল করে ভালোবাসোনি। আসলে
ভালোবাসা আমাদের যুগল ভুল ছিলো
রমনীয় মুখে মা ডাকটি শুনতে সুন্দর।
আমার বাহুতে তোমার ফণা দোলে।
সিদ্ধার্থ সিংহ
অপারগ
বন্যায় সব ভেসে গেছে
ক’টা জামাপ্যান্ট ছাড়া কিছুই আনতে পারিনি...
ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলেছিল সে।
হঠাৎ করে ঘরে আগুন লেগে গেলে
কিংবা আচমকা ভ‚মিকম্প হলে
মানুষ কী নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে! কী নিয়ে!
ও রকম কোনও দিন যদি আমার জীবনে আসে
তা হলে কী কী নেব? কী কী?
তার একটা তালিকা তেরি করে রেখেছিলাম আমি।
সেই তালিকার প্রথমেই ছিল
আমার কবিতার খাতা,
দ্বিতীয় স্থানে ছিল
আমার পোষা বেড়ালছানা,
আর তৃতীয় স্থানে
ছেলেবেলায় পাওয়া আমার প্রথম প্রেমপত্র।
চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তমে আর কী কী ছিল
এখন আর মনে নেই।
যে দিন সত্যি সত্যিই ওই ভাবে আমাকে বেরিয়ে আসতে হল
সে দিন কি কিচ্ছু নিতে পারলাম না
না সেই প্রেমপত্র, না সেই ছোট্ট বেড়ালছানা
না সেই কবিতার খাতা
কিচ্ছু না। কিচ্ছু না। কিচ্ছু না।
এমনকী, নিজেকেও সঙ্গে করে আনতে পারলাম না।
আইরীন কাকলী
নক্ষত্র রঙের সুখ
ডুব জলসায় জীবন জলরং পথে বেঁকে
রংধনু আবিরে রক্তিম চোখে শূন্যতার
ধুলো সরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
দেখি আমার নক্ষত্র যাচ্ছে দূরে সরে;
প্রেমের তাবিজ বেঁধে সমুদ্র পথে যাত্রা।
উত্তাল তরঙ্গের চূড়ায় অস্পষ্ট লক্ষ্য,
একটা অনিশ্চয়তা ধরে রাখার চেষ্টায়
স্বপ্ন দেখি এক আকাশ নক্ষত্র রঙের সুখের।
সে সুখের পায়ে রূপোর নূপুর দেবো বেঁধে
সে সুখের গলায় দেব দোপাটি ফুলের মালা
সে সুখের হাত সাজাবো মেহেদী রঙের আল্পনায়
সে সুখের সিঁথিতে দেবো রংধনু সিঁদুর...
জলে জবা বিসর্জন দিয়ে
সুখের মন্দিরে পূজো হবে রোজ...
সোমনাথ বেনিয়া
ঊনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ - ৩২
না থাকার বিষয়টি, থাকার চেয়েও বেশি থাকা অনেক সময়
যার মুখ দেখলে ঝগড়া, তার তোতলাজীবন অনুতাপের কারণ
ধরে নাও বসে আছি বিচ্ছেদ শেষে, তখনই ডেকে উঠলো ডাহুক
কী আবেশ, ঝুলবারান্দার ভিতর ভিন্ন এক বারান্দার রোদ
উজ্জ্বল, মৃত্যুর রঙ কতটা উজ্জ্বল হলে হাঁটাপথ, ছায়াপথ
পায়ের তলার স্পন্দন বোঝে ভ‚মিকম্পের সরল ছেলেমানুষি
রাগ নেই, বিরাগভাজনের প্রশ্ন নেই, অথচ আশ্চর্য আকাশ
বেদনা ব্যয়বহুল বলে অল্প খরচে মনের ভাঙন খুচরো পয়সা
তাই লেখার শেষে অযাচিত যতিচিহ্নের বিমূঢ় অহংকার জাগে
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিপন্নে যে ঠোঁট কামনার ধুলোময় চৌরাস্তার মোড়
রাতের প্রহরী জাগে, পাকস্থলীতে অ্যালজোলামের স্বপ্ন নিয়ে
এখানেই সব কথা বলতে হবে, অনন্তের ঠিকানা পোড়োবাড়ি
সাতপাকে বাঁধা পড়েছে হৃদয়, মনের দ্বিধা কড়ে আঙুলের আড়ি
খাতুনে জান্নাত
ব্রিজ
ভেঙে পড়ছে ব্রিজ
কংক্রিট জ্বরে কাৎরাচ্ছে সামনের রাস্তা
কত সাধনা করলে সাধু ভেস্তে গেল ঘাম ও জঞ্জালে
গাছের ডালে ঝুলছে ঘুড়ি ও চামচিকা
মিলেমিশে থাকে মুক্তি ও বদ্ধতা
ব্রিজ ভেঙে পড়ছে
ঝুলে পড়ছে বাগান
চৈত্রের পুকুর থেকে উড়ে যায় মাছ
সম্পর্ক থেকে খুলে পড়ে হাড়
মাংসের ডিবি ধরে এগিয়ে যাচ্ছে উইপোকা...
মুণ ভোর নাচছে তা ধিন তা ধিন-
বজলুর রশীদ
ধনী বিষয়ক
জুয়াড়ি জলসা ঘরে
আগে পতনের চিন্তা কেউ করে না
উত্থানে যত কৌশল, কীভাবে আসবে
অনিবন্ধিত সম্পদে ধনী বিষয়ক পদবী।
তাই লোভে কেউ রূপান্তর ছদ্মবেশী-
পতনের ভয়ে চেহারা লুকিয়ে
ভাবেনি স্বর্গ জোঁড়া সুখের
বাস্তবতায় মানচিত্র পাহারা দেয়।
বোধনের গতি এখন দিনের প্রস্থানে
কেঁচো খুঁড়তে জেগে উঠছে
কোথাও সম্মুখ যোদ্ধার দল;
করোনাকালীন সময়ে
অনুতাপ ওরা কুড়ে কুড়ে খায়
তাদের এবার বিচার হবে...
ধারাবাহিক গল্প
অন্ধকারাচ্ছন্নপ্রণব কুমার চক্রবর্তী
এক
শেষপর্যন্ত কেল্লার সিকিউরিটি ইনচার্জ রজনীশ গ্রেভারের কথাতেই সুন্দরলাল বাধ্য হয়েছিলেন, রাত্রের গান-বাজনার আসরটাকে গেস্ট হাউজের ঘর থেকে টেনে বাইরে কেল্লার ভেতরে রাজকীয় মহলের বাগিচায় নিয়ে যেতে ।
আসলে, আগামীকাল সকালেই আমরা এখান থেকে অন্যত্র চলে যাব । তাই বিকেলে আমাদের ঘোরাঘুরি পর্ব মিটিয়ে সন্ধ্যায় সুদীপ্ত নিজেদের মধ্যে একটা আলোচনা করে ঠিক করলো যে সন্ধ্যার পরে সবাই একসঙ্গে বসে একটু মাল ঝাল খেয়ে, গান-বাজনা এবং আনন্দ ফুর্তি করে, আমাদের এই সফরের প্রথম পর্বের শেষ রাত্রিটাকে সেলিব্রেশন করব। কেউ অন্য থা করেনি। সত্যজিৎ সঙ্গে সঙ্গেই সকলের কাছ থেকে চাঁদা তুলে, একটা থোক টাকা বিশ্বজিতের হাতে দিয়ে বলেছিল - সন্ধ্যার পরে ঘরেই গোটা ব্যাপারটা অ্যারেঞ্জ করতে, আর কেল্লার কেয়ারটেকার এবং সিকিউরিটি ইনচার্জকেও ইনভাইট করতে ওই আসরে আসার জন্য। সেই মতই সুন্দরলাল রজনীশজিকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যার একটু আগেই এসে হাজির । বাদশাহী কেল্লার গেস্ট হাউসে আনন্দ-ফুর্তির আসর। সেই আসরে বাদশাহী মেজাজ আনার জন্য, সবাইকে বলা হয়েছে পাঞ্জাবি আর পাজামা পরতে। অতিথিরাও অন্যথা করেনি ।
বিশ্বজিৎ ঘরটাকে বেশ সুন্দর করে রঙিন কাগজের চেনো আর স্টিকার দিয়ে সাজিয়েছে ।
হাশরের ড্রেসকোডের সাথে মিল রেখে প্রত্যেকের জন্য কাগজের রঙিন টুপি কিনছে । ঘরের টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে গোটা কয়েক দামি মদের বোতল - রাম আর হুইস্কি । একটা বড় কাগজে রং দিয়ে লিখেছে - ‘ফেয়ারওয়েল টু আগ্রা’।
- ইয়ে তো বরিয়া ব্যাপার! কিস লিয়ে মানায়া জাতা ? রাজনিশ সাহেব জানতে চায় ।
সুন্দরলাল কিছু বলবার আগেই সুদীপ্ত ওদের দু’জনের মাথায় দুটো কাগজের টুপি পরিয়ে দিয়ে বলে - নাথিং । বাট টু গেট টুগেদার অ্যান্ড রিলাক্স ।
- কিউ ?
- আজ এখানে আমাদের শেষ দিন। কাল সকালেই চলে যাব। সেই কারণেই আমরা আপনাদের সবাইকে নিয়ে রাত্রে এখানে একটু আনন্দ ফুর্তি করতে চাই।
- ভেরি নাইস। রাজনিশ বাবু কাল বিলম্ব না করে সুন্দরলালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন - হাজী ? ইয়ে ফাংশন ঘারমে আচ্ছা নাই লাগতে। বাহার মে লে চলে। ও মহলকা গার্ডেনমে। হাম আভি কুছ গানা আউর নাচনেওয়ালিকো বুলাকে লে আতে।
- ঠিক হ্যয় । হাম আভি করবাতে। সুন্দরলাল হাত দিয়ে ডেকে নেয় গেস্ট হাউজের ছেলেদের ব্যাপারটাতে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম । (চলবে...)
ধন্যবাদ। তবে আমার কবিতা থেকে কোন না কোন শব্দ বদলে যাচ্ছে প্রতি সংখ্যায়। শেষের লাইনের প্রথম শব্দটা ছিল ‘মুন্ডহীন ভোর নাচছে তাধিন ধিন’। এটা অনাকাঙ্খিত। জনাব সম্পাদক খেয়াল রাখবেন দয়া করে।
ReplyDelete