Wednesday, July 15, 2020

শিল্প সাহিত্য ৯২


মঙ্গলবার  ৩০শে আষাঢ় ১৪২৭, ১৪ই জুলাই ২০২০




কবিতা
বিপুল রায়
ইন্দ্রকানন

কিসে যে কি হয়, মন জুড়ে ভয় ভয়, কত কথা শুনে যাই কানে।
রাত কেটে দিন আসে, কেউ থাকে না পাশে, কোন কথার ঠিক কি মানে?
হাঁটা পথে গাড়ি চড়ি , গলি থেকে গলি ধরি
রাজপথ ঠিক কতদূর?
যেতে যে হবেই হবে, চিরকাল কে কবে, ডাক দেয় কোন সে সুদূর !
আমি সে আমি নই, ফুটপাত জুড়ে বই, সেক্সপিয়র, কিটস, বায়রণ।
হাতে পুরোনো বই, পথে ছড়ানো খই, পিছনে পড়ে থাকা যে বারণ ।
কেন এই ভয়ভাব, মনে কেন উত্তাপ, পথে থেকে ছুটি পথে পথে।
যেভাবে দিন কাটে, সে পথেই রাত হাঁটে, জীবন যেন বাঁধাগঁতে।

কিসে যে কি হয়, মন জুড়ে ভয় ভয়, কত কথা শুনে যাই কানে।
আকাশে আকাশ মেশে, কে দাঁড়ায় গা ঘেঁষে, কে জানে- কার শেষ ঠিক কোনখানে ?

জিতেন্দ্র দাস জিতু
হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ 

এখন সন্ধ্যা নামে মাঝ দুপুরে
একাকীত্বের অলস সময় গুমরে কাঁদে অন্তর দহনে
চারিদিকে দুর্বিষহ নিরবতা স্পর্শে মারা যায় দূরত্বের সীমারেখা লঙ্ঘন হলে
হায় নিয়তি, সবার আনন্দ দানে বা বাঁচার তাগিদে স্বদেশে, বিদেশে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত ছিলাম
একে অপরের সাহায্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতাম
অথচ ছোট্ট এক অণুজীবের কাছে আজ কতো অসহায়
কোথাও ঠাঁই নেই, মৃত্যুর মিছিলেও একা শ্মশানে বা গোরে
পালাবার এক চিলতে ভ‚মি নেই সবখানে মৃত্যু মৃত্যু আর মৃত্যু
দানব রুষ্ট হলে প্রকৃতি রক্ষা করে সেই প্রকৃতি বিমুখ হলে রক্ষা করবে কে?
মৃত্যু নির্ধারিত চরম সত্য জানি,
অবধারিত মৃত্যুর মিছিলে এক সারিতে দাঁড়িয়ে শোকে কাতর কাঁপছে শিরা উপশিরা,
কান্না শুকিয়ে গেছে হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ

সুধাংশু চক্রবর্তী
এসো ভালোবাসায় মুঠো ভরিয়ে দিই

অন্তরে অনুভব করি অদ্ভুত একটা মায়াবী আকর্ষণ
যখনই সামনে এসে দাঁড়াও
ভালো লাগার যে উত্তাল ঢেউ, ভেঙে দিতে যায় হৃদয়ের
পাঁজর, পারো যদি ভালোবাসা দিয়ে তাকে সামলিও
তুমি এবং আমি - দু’জনে মিলে তিল তিল করে
সঞ্চয় করি ক্ষণস্থায়ী যাপিত জীবনের সম্ভব্য যেটুকু পাথেয়...
ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই যে নেই তোমাকে অদেয়,
এসে দু’হাত ভরে সেটুকুই নাহয় নিয়ে যেও ।

প্রণব কুমার চক্রবর্তী
আত্মসাৎ

তেমন কিছু আঘাত নয়

স্পর্শমাত্র
ভেঙ্গে পরলো
আমার বর্ণময় সাজানো চালচিত্র

রাজপথে
সহসা হাজির
একদম মুখোমুখি আমরা দু’জনা
ভেতর আর
           বাইরের আমি

বৈশাখী দুপুরের ফুটিফাটা মাঠে
সরল পাখির দৃষ্টির মতো
দীর্ঘতর হচ্ছে
আমার
এক অজানা, অচেনা
গাঢ় নির্জনতা

আসলে
হাতের আঙ্গুলে
নাড়াচাড়া করতে করতে
সূর্যটা কখন যে পড়ে গেল অন্যের কোর্টে
বুঝতে পারিনি
আস্তে আস্তে নেমে এলো
দুপুর গড়িয়ে বিকেল
তারপর সন্ধ্যা এবং রাত্রি

রাত্রির কথা ভাবলেই
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে ওঠে
মনে পড়ে
শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে বসে
জোছনার আলোয়
তুমি আর আমি গান গাইছি
ভালোবাসার গান সেই আগের মতই

চিন্ময় বসু
রাত্রির উৎসব 

বৃক্ষহীন স্তব্ধ বন নামহীন শান্ত সঙ্গীত।
যখন হঠাৎ অলো ভেঙ্গে পড়ে চিতার পায়ের ধ্বনিতে
আর কথা ফেনিয়ে ওঠে জলপ্রপাতের মতো
তার দীর্ঘ ক্ষতও সেজে ওঠে নিখুত শব্দহীনতায়।
আনন্দ ফলের মত পরিপক্ক হয়।
হতে হতে সূর্য হয়ে ওঠে, সুর্য মানুষ হয়
মানুষ তারা হয়ে যায়,
আলোরও এতো রকমের শ্রেণী বিভাগ।
গাছ, রাস্তা, পাহাড় স্বচ্ছ ঢেউএর ভিতর প্রস্ফুটিত হয়
 সকাল এক বালিকার হাসি দিয়ে শুরু হয়েছিল।
কোকিলের গান পোড়ানো পালকের মত,
গান তার নগ্ন বাহুমূল দেখায়,
তার খালি পথ আর তার নগ্ন চিন্তা নিয়ে
আবেশের ওমে সুখি মুহূর্তগুলি শান দেয়।
জল, মাটি সুর্য সব এক বস্তু।
সময় আর ঘড়ি দ্রবীভ‚ত হয়, পাথর ও দৃশ্যাবলি উবে যায়,
তারা মুখ না ফিরিয়ে চলে যায় ।
স্মার্ট বন্ধুরা ঘূর্ণিপাকের ধার ঘেঁষে চলে যায়,
বাড়ী মন্দির মসজিদ গির্জা ছাড়িয়ে
ভোরের ট্রামে চেপে পৃথিবীশুদ্ধ, বিশ্বশুদ্ধ লোক উড়ান ধরে,
আমার শরীরও ছেড়ে দেয় আমাকে।
আমি স্বচ্ছতার ভিতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
সুর্য চারপাশ ঢেকে ফেলে, সব তার নজরের আওতায়
তার ভিতরে আমাদের অবগাহন,
তার দৃষ্টির কনীনিকায় আমরা কবে দগ্ধ হই ।
তার বিচ্ছুরিত আলোর ছটার গভীরে আমাদের অনিবার্য পতন,
ভাঙ্গা সঙ্গীত ও বাদ্যের মত আমরা পুড়ি
এতো টুকু চিহ্ন মাত্রও থাকে না।

রুহুল আমিন (রনি)
কথা এবং ব্যথা

ভেবেছো কী?
মুখ ফুটে কথা বলেছো কী?
বিবেকের কাছে এমনই হাজার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম;
উত্তরটা শূণ্যে ভাসছে...
খুঁজে বেড়ানো উত্তরটা এখনও মন-বন্দী!
উত্তরটা সরল-সোজা কিন্তু তীরের মতো শক্ত!
ছুঁড়ে দিলাম
থামবার শক্তি নেই।
কথা আছে
বলার মতো ভাষা নেই।
কথা একটাই
চোখ আছে দেখো
কান আছে শোনো...
পরিশেষ,
মুখ আছে বন্ধ রাখো।

অণুগল্প
কথা মনি
সাঈদুর রহমান লিটন

বাবুল সাহেবের ছোট মেয়ের নাম কথা। বয়স চার পাঁচ বছর হবে। তার একটি পুতুল আছে। ছোট পুতুল। ভারি সুন্দর দেখা যায়। লাল ফ্রগ পড়নে। বড় বড় ভুবন ভুলানো চোখ। অত্যন্ত ভাল লাগার মত একটি পুতুল। পুতুল তো পুতুলই। জড় পদার্থ। যার প্রাণ নাই। সে আবার কথা বলবে কেমনে? কিন্তু পুতুলটার গল্প বলছি সেই পুতুলটি কথা বলতে পারে। মেয়ে পুতুল। প্রযুক্তি নির্ভর পুতুল। পাওয়ার সাপ্লাই থাকলে পুতুলটি বলতে থাকে, গুড মর্নিং বন্ধুরা। সবাই কেমন আছ। এখন পড়ার সময় চলো পড়ি গিয়ে। এ রকম দুপুরে বলে শুভ দুপুর, এখন বিশ্রামের সময় চল বিশ্রাম করি, বিকালে বলে শুভ অপরাহ্ন, এখন খেলার সময় চলো খেলি। কথার এই পুতুলটি কথা কোলে কোলে রাখে। আদর করে, গোসল করায়, চুলে বেনুনি করায়, লিপিস্টিক পড়ায়, চোখে কাজল দেয়, খাওয়ায়, সাথে নিয়ে ঘুমায়।

কথা বলে এটা আমার মনি। তাই পুতুলটির নাম সবাই দিয়েছে কথা মনি। পুতুলটির সাথে কথার ভাব হয়ে গেছে, কথার সমস্ত জগত পুতুলময়, কথার চিন্তা চেতনা পুতুলকে ঘিরে। কথামনিকে পায়ের পর রেখে গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। বড় হলে স্কুলে পড়াবে। কান্না করতে নিষেধ করে, বই কিনে দিবে ছবি দেখে দেখে পড়াবে, আরো কত গল্প করে। বড় হলে সুন্দর রাজপুত্র দেখে বিয়ে দিবে। কথা তার মাকে বলেছে ছেলে দেখার জন্য। ভাল ছেলে হতে হবে। তার কথা মনি বড় হয়েছে বিয়ে দিবে। কথার মা রিক্তা বেগম কথামনির জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে।

কথার কোনো রাগ হলে কথা মনির সাথেই রাগ, কোন ভাল লাগা কথা মনির সাথেই শেয়ার করে। দিনে দিনে কথা কথামনি ভাল একজন মা হয়ে উঠছে। তার মা বাবার সাথে তার কোনো জ্বালাতন নেই, বিরক্ত নেই, ভাব নেই চাহিদা নেই। মোট কথার জগৎ কথা মনিকে ঘিরে। কথা মনিকে জরিয়ে ধরে ঘুমায়, ঘুম ভাঙে তাকে ঘিরেই।এক পরম শান্তিময় দিন কাল চলছে।

কথা মনির চিন্তায় কথা নিজের খাবারের কথা ভুলেছে বহুবার। কথা, কথা মনির জীবনের এক পরম আত্মীয়তে পরিণত হয়েছে। আত্মার আত্মীয়। যেন শত জনমের বন্ধন। কথা মনি কে কেউ কিছু বললে কথা কষ্ট পায়, দুঃখ পায়। ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদে। অবশ্য কথা কাঁদলে নাকি কথা মনিও কাঁদে। কথা মনি তার মাকে বলেছে। 

কথা বলেছে মা তুমি আমাকে বকো না। তুমি বকলে আমার কথা মনি কাঁদে।
কথা, তার পুতুলকে নিয়ে কাটিয়ে দেয় সারা বেলা দিন। কথার, কথা মনি ছাড়া আর কোনো বন্ধু নেই। বান্ধব নেই। সেদিন কথা তার মামা বাড়ি গিয়ে ছিল, সাথে কথা মনি ও ছিল। দুই একবার কথা বলেছে তার মাকে, মা আমার কথা মনির আজ মুখ কালো, কিছু খাচ্ছে না, মুখে হাসি নাই। অসুখ করলো নাতো। মা তুমি ওষুধ খেয়ে দিও। মা বলেছে ঠিক আছে দিমুনে। দুপুরে কথা ঘুমিয়েছিল মামা বাড়ি। ঘুম থেকে উঠে দেখে তার কথা মনি নাই। মাকে বলল আমার কথা মনি কই।

মামা কে বলে আমার কথা মনি কই। এ ঘর সে ঘর সকল ঘর তন্ন তন্ন করে দেখা হলো কথা মনি নাই। কথার চোখে এখন পানি, ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে। আমার কথা মনি, আমার কথা মনি এনে দাও। কথা মনিকে কোথাও পাওয়া গেল না। কথা মনি এবার জোড়ে চিৎকার করতে লাগল আমার কথা মনি তুই কই গেলি আমার কাছে আয়, আমার কাছে আয়। কথা মনি আর এলো না। কথা মনিকে পাওয়া গেল না। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো কথা মনিকে আর পাওয়া গেল না। কথা, সে রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম থেকে উঠে কথা আর কোনো কথা বলেনি। এখন আর কথা বলতে পারে না, বলতে শোনা যায় না।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক