Friday, July 31, 2020

শিল্প সাহিত্য ১০৮

বৃহস্পতিবার ১৫ই শ্রাবণ ১৪২৭, ৩০ই জুলাই ২০২০




কবিতা
শুভ্র সরখেল
লালা গালিচার কেচ্ছা 

এই পথে এসো
স্নিগ্ধতা পাবে!
দিন শেষে প্রেমের পুঁথি মালা হারিয়ে যেতে পারে কথিত রাষ্ট্রের নকশা থেকে!
তবুও এই পথে এসো
অনেক শান্তি পাবে আশা করি।

এই পথের ধুলোয়
রঙের ষড়যন্ত্র পাবে!
দিন শেষে কষ্টের থালা নিয়ে দ্বিধায় পরতে পারো ঠাকুমার রান্নার ঝাল নিয়ে!
তবুও এই পথে এসো
অনেক বিশ্বাস পাবে আশা করি!

এই পথের দূরে কেউ থাকে না
নিঃসঙ্গতা পাবে!
দিন শেষে অন্তত কারো হাসির ভেতর লুকানো ভুতের পোট্রেট দেখা যায় না!
তবুও এই পথে এসো
অনেক গুলো নিজেকে খুঁজে পাবে আশা করি!

অনিক সাহা
জারুল গাছ ও দু’কাঁধে জমে থাকা দুঃখ

১.
মা যেন ছিল ছোট্ট উঠোনটিতে গড়ে ওঠা জারুল গাছ
আমরা সবাই আগাছার ন্যায় বেড়ে উঠেছি!
ভাগ বসিয়েছি মাটি থেকে পাওয়া জল, খাদ্য ও খনিজে...
মা পরম মমতায় হেসে দিয়েছিল ঠাঁই।। 
ঝড়ের মৌসুমে গাছটির বড় বড় ডাল ভেঙ্গে পড়তো,
একা একাই জারুল গাছটি আগলে রাখতো আমাদের!
আমরা ভাবতাম,
জারুল গাছটি কি বোকা?

২.
দু’কাঁধে জমে থাকা দুঃখগুলোকে আরো ভারী করে দিয়ে আমরা বসে পড়তাম বাবার দু’কাঁধে...
ঝড় এলে মাটি পিচ্ছিল হয়ে মাঝে মাঝে কাঁদা হয়ে যেত,
কিন্তু আগাছাগুলোর কোন ক্ষতি হয়নি

৩.
আজ ব্যস্ত নগরীতে ভীষণ ব্যস্ত জীবন... 
সেই জারুল গাছটি জোছনা রাতে এখনো মস্ত ছায়া হয়ে থাকে পুরো উঠোন জুড়ে
বাবার কাঁধ থেকে দুঃখগুলো গামছা দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছি কতবার...
পারিনি....
না পারাগুলো ফুল হয়ে ফুটতে থাকে একটা
দুইটা... তিনটা... এমনি অসংখ্য...
আমরা দুই ভাই অবাক চোখে দেখি কেবল
ওদিকে ঝড় আসলে বাবা এখনো উঠান থেকে কুড়িয়ে নেয় দুঃখগুলো!

বঙ্গ রাখাল
বিষাদী পেরেক

তোমাকে মনে পড়ল-নিঝুম রাতে
যখন একা একা ঘুমায়-পাশ শূন্য
তুমি বলেছিলে- ফুলের মালা আনতে
আমি নিয়ে এসেছি ফুল-বাগানকুসুম
কিন্তু দেখ-
তুমি আমি কেমন বন্ধি

হাতে-পায়ে বিষাদের বিদ্ধ পেরেক
চল-ফুলের মালা গাঁথি
তুমি-আমি বরণ করি হিমায়িত নিজেকে।

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 
ক্ষুদ্র-বৃহৎ

ওড়ার জন্য আকাশও কখনো ছোট পড়ে যায় 
বাস করার জন্য একটা মন
সে তুলনায় কিছুই না 

এক জীবন বাঁচার জন্য কত আর্তি
কত আকুতি, কত মিনতি
অথচ বাঁচার জন্য একটা জীবন 
যথেষ্ট নয় মোটেও, বরং অনেক ছোট

কত স্বপ্ন  দেখা বাকি, কত কিছু বোঝা বাকি 
কত বন্ধুত্ব অধরা, কত মন না-ছোঁওয়া 

এক সুদীর্ঘ, তৃপ্তির ঘুমে যেন কেটে যায় 
এক আস্ত পাখিজীবন, 
খুঁটে খুঁটে তুলে আনা অভিজ্ঞতায়
ভরে ওঠে সময়ের ঝুলি

প্রহরগুলো কাটে যেন শূন্যে তাকিয়ে থেকে 
সকালের হলদে রোদ মেখে
সোনালী বিকেলের অন্তহীন অপেক্ষায় 
ধ্রুপদী সঙ্গীতের রাগাশ্রয়ী মূর্ছনায়
দুলতে থাকা প্রহরের ঝিল্লিসুতোয় 

খাঁচার থেকে বেরিয়ে এলে
আকাশ সত্যিই ছোট মনে হয়



সোমের কৌমুদী
নৌকার পাটাতনে ঘুমায় প্রহর

ভরা যুবতী নদীর বুকে ছলাৎ ছলাৎ জল 
শুদ্ধ করে তোলে দু’তীরের সবুজকে
সবুজকে করে তোলে আরো সবুজ, করে তোলে প্রাণবন্ত। 
দিগন্তহীন নীল আকাশ নিজেকে হারায় নদীর জলে।

নদীর বুকের ছলাৎ ছলাৎ জলে 
সদ্য নির্মিত রঙিন পালতোলা নৌকা এগিয়ে চলে
পাটাতনে ঘুমন্ত কাশফুল সকাল
রঙিন পালের ছেঁড়া খোপ স্নিগ্ধ সকালকে বিমর্ষ করে তোলে।  

নৌকা ছুটে চলে প্রহরের পর প্রহর পেরিয়ে
গ্রামের পর গ্রাম পাটাতনে খুঁজে নেয় আশ্রয়
মহাকালের মত দীর্ঘ দুপুর শেষে একটা সোনালী বিকাল
হেলে পড়ে পাটাতনে, বিমর্ষ সকালের মাঝে নিজেকে লুটায়।

প্রহরের শেষে প্রহর আসে, শেষ হয় অষ্টপ্রহর 
নৌকা ছুটে চলে, এগিয়ে যায় সামন থেকে আরো সামনে
সোনালী বিকাল ফের মিলে স্বচ্ছ শুভ্র প্রাতে
তবু রাত আসে না, আঁধার ভেড়ে না নৌকার পাটাতনে।

অভ্র আরিফ
ইদানীং মানুষ

মানুষ ততটুকু যায়, যতটুকু তার হৃদয় চায়
শিশুর নরোম গালের মতো  
হৃদয়ে, দেখো কি নিপূণ ক্ষত!
এ হৃদয় নিয়ে আমি কার কাছে যাই...
গাঙুরের জলে ভেসে ভেসে চলে গেলাম বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে জীবনানন্দের চোখ খুঁটে খায় ধানশালিক
আর সেলফি তুলে বনলতা সেন।
বস্তুতঃ মানুষ এখন কোথাও যায় না। এরা হৃদয় খায়...

মীর সাহাবুদ্দীন 
মা মানে নদী, নদী মানে বহমান- মহাযুদ্ধ 

আমাকে তুমি কি মনে করেছ অন্ধকার নাকি-
আলো; ভাবতে ভাবতে সময় পেরিয়ে গেল
আমি কি হব, কি আমার আগামী!
ভাল্লুক বা মাকড়সা হেরে গিয়েও জিতার গল্প শোনেছ
নাকি খরগোশ আর কচ্ছপের
কিছু ঠাওর করতে পারনি; কেননা -
মানুষের মুখে না শব্দটাই সবচেয়ে বেশি
যার চাকচিক্য হাইট খই ফোটা কথার প্রাচুর্য বেশি
ভালোবাসার সকল মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

বাবা বলতেন এটুকু আসার জন্য
হাঁটতে হাঁটতে জুতোর তলা ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল 
একটা শার্ট দিয়ে বছর কাটিয়েছি 
মাষ্টারি করে জীবনটা তালি দিয়েছি
এসবের কিছুই শুনতে ভালো লাগেনি
কেননা চোখ ফোটে আলো দেখেছি এবং-
শূন্যে সবুজ ও লাল পেয়েছি
চারদিকের পরিবেশে আলো আর রঙিন মানুষকেই দেখেছি
দিনশেষে আমি আমার মাকেই ভাবি
আমিও চাইতাম আমার মায়ের-
অনেক গুলো শাড়ি থাকুক লাল নীল ও গোলাপি 
মায়ের কোন চাহিদা পাইনি কেননা তিনি বাবাকে বুঝতেন। 

বাবা হঠাৎ করে এক পীরের প্রেমে পড়ে
গুটিয়ে যায় কিছু মানুষ থেকে ভালোবাসা থেকে
হয়তো কিছু অন্ধ ধার্মিকতাও তখন তাকে খেয়ে ফেলেছিল

গৃহ যুদ্ধ আমার কখনো পছন্দ ছিলনা
ফ্যামেলি কোলাহল মনে হত মহাযুদ্ধ
নারী মানে নদী নদী মানে বহমান
আমিও মায়ের আঁচল বাইতে বাইতে হয়ে উঠি ধৈর্যশীল
এখনো চলছি যত ভাবছি পৃথিবীর ঘরে ঘরে মহাযুদ্ধ তত বেড়ে চলছে...

ধারাবাহিক গল্প
পচন
স্বপঞ্জয় চৌধুরী

পাঁচ
এরপর এগারো বছর কেটে গেলো। ফুলমন বিবি পটল তুলেছে প্রায় ছয় বছর আগে। কুসুম যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে সলিমকে। বস্তির মানুষ অবশ্য ওর নাম দিয়েছে পচন। ওর পচন নামের আড়ালে ভালো নাম আব্দুস সলিম ঢাকা পড়ে গেছে। 
সবাই ওকে পচন নামে ডেকেই স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করে বেশি। কুসুমও ওকে এখন পচন নামে ডাকতে শুরু করেছে। অবাধ্য এ ছেলেটি সারাদিন পথে পথে ঘুরে বেড়ায় আর কুসুম মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে খেটে মরে। ব্র্যাক স্কুলে ওকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুলে একদিন যায় তো তিনদিন যায় না। ওর বয়সী আরো অনেক ছেলেদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়ায়। রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে আবার কখনোবা বুড়িগঙ্গার ময়লা পানিতে ঝুপাঝুপ ডুব দিয়ে সেরে নেয় গোসল। বাসে উঠে বলে ভাড়া নেই, হেলপার এক চপেটাঘাত দিয়ে নামিয়ে দেয়। পরের স্টপেজে এরকম আরো নানা ঘটনা ঘটিয়ে থাকে অবাধ্য বালক পচন। 
ইদানিং বিড়ি সিগারেটের পশ্চাৎদেশ কুড়িয়ে টান দিতেও নাকি শুরু করেছে। মাঝেমধ্যে গঞ্জিকাসেবকদের কাছ থেকে এক দুটান ভাগও পেয়ে থাকে। ময়লা সাদা রঙের ছেঁড়াফাটা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত বালক পচনকে মাঝে মাঝে গার্লস স্কুলের সামনে দেখা যায় কারো কাছ থেকে আইসক্রিম চেয়ে খেতে। ওর ভাষ্য মতে আফারা খুব ভালো হয় চাইলেই দেয় কিন্তু ভাইয়ারা দেয় ধমক তাই তেনাগো কাছে চাই না। কখনোবা রাতের বেলায় একা একা ঘুরে বেড়ায় ঢাকার রাজপথে। মাঝরাস্তার আইল্যান্ড ধরে দু’হাত দু’পাশে প্রশস্ত করে শৃঙ্খলমুক্ত পাখির মতো যেন উড়ে যায় দূরে। (চলবে...)

1 comment:

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক