বুধবার
১৭ই আষাঢ় ১৪২৭, ১লা জুলাই ২০২০
কবিতা
কমল কুজুরদূরত্ব - সত্যি ও মিথ্যা
যত দূরেই থাকো
তুমি কিন্তু শুধুই আমার!
ভেবেছো দূরত্বটা একটু বাড়িয়ে নিলেই
ভুলে যাব আমি; কিংবা ভুলতে
পারবে তুমিও!
না! সেটা হবার নয়।
আমাদের মধ্যকার দূরত্ব বিশ মাইল
থেকে একশত বিশ কিংবা আশি
হলেই কেল্লা ফতে-
হয়তো এমনই ভেবেছো তুমি!
এ কক্ষনো হবে না।
দূরত্ব যতই হোক
তুমি শুধুই আমার!
তোমার ছোট্ট দুটি পাখা মেলে উড়ে
বেড়াও সারা আকাশময় সাদা মেঘের
খেয়ায় নীল আকাশে-
তোমার অবাধ বিচরণ;
আমার মনে রংধনুর রং ছড়ায়
রাঙিয়ে তোলে ভ‚বন!
যত দূরেই থাকো না কেন
তুমি শুধুই আমার
যতক্ষণ চাও উড়ে বেড়াও।
তবে ফিরে এসো নিশি পোহালে;
কারণ -
আমার আকাশের বিস্তৃতি মহাশূন্যের
সীমানা ছাড়িয়েও অনেক দূরে তোমার
সাধ্য কি তার বাইরে যাওয়ার!
তাই যত দূরেই যাও
তুমি শুধুই আমার!
মাহফুজুর রহমান লিংকন
মাতাল হতে বড্ড ইচ্ছে করে
আজ ভীষণ রকম মন খারাপের দিন
এমন দিনে আমার মাতাল হতে বড্ড ইচ্ছে করে-
যাপিত সময়ের নষ্ট স্বপ্নগুলো আঙুলে বেঁধে
মদে চুবিয়ে খেতে ইচ্ছে করে...
পুষ্টিহীন ভালোবাসার তাড়নায় কাছাকাছি কোন স্বর্গে বসে
যুবতীর ঠোঁট ভেবে মদের গ্লাসে চুমু দিয়ে মাতাল হতে ইচ্ছে করে...
আজ অন্যরকম মন খারাপের দিন
এমন দিনে আমার মাতাল হতে ইচ্ছে করে
আওয়াজ তৈরির গুহায়
প্রজাপতি অন্ধকার মধ্যে প্রজ্বলিত হয়
মদের কাপের শাশ্বত এই রহস্য ভাঙতে
দেখিস আমি একদিন সত্যিই মাতাল হব...
জাহাঙ্গীর জয়েস
সুদিন
একদিন সুদিন আসবে
মেহেদি পাতার মতো রঙিন হবে আমাদের জীবন পায়ে হাঁটা সব পথ কৃষ্ণচ‚ড়া রাধাচ‚ড়া ফুলে ফুলে
ছেয়ে যাবে...
নদীচরের বালুঘরের মতো ভেঙে পড়বে
শোষণের যতসব গুলাঘর
সমস্ত অস্ত্রকৌশল ভুলে যাবে দুনিয়া
শ্রম আর ঘামে কেবল বেড়ে ওঠবে ফুলের মাঠ
বৃক্ষ আর মিষ্টি রোদ্দুরে হেসে ওঠবে সমস্ত দুনিয়া...
রুশো আরভি নয়ন
চুলকানি
রাজনীতিতে রাজা আছে
কোথাও আজ নীতি নেই,
সম্পদের পাহাড় আছে
মনুষ্যত্বের ইস্তফা দেই।
সন্ত্রাসীরাও দেশে আছে
ধর্ষণের আজ বিচার নেই,
ভালোতে চুলকানি আছে
বেজায়গাতে মলম দেই।
নেতাকর্মী লাখো আছে
অযোগ্যতার অন্ত নেই,
আতিপাতি নেতার হাতে
দেশটা তাই ছেড়ে দেই।
বিশ্বব্যাপী করোনা আছে
স্রষ্টার প্রতি ভীত নেই,
গার্মেন্টস ঠিকি খোলা আছে
উপাসনালয়ে তালা দেই।
লকডাউন নামেই আছে
সচেতনতার বালা নেই,
ত্রাণ চুরি গম চুরিতে
তাদের কোন জুড়ি নেই।
রাজাকার আজও আছে
একটা শুধু মুজিব নেই,
কৃষকের পেটে লাথি দিয়ে
তেলা মাথায় তেল দেয়।
বঙ্কিমকুমার বর্মন
সাক্ষী
আমাকে সাক্ষী রেখে কক্ষপথ মজেছে বনভ‚মির প্রেক্ষাপটে। তারাদের মৌন নগরী লজ্জায় মুখ ঢাকে পাতার আড়ালে, গুছিয়ে রাখে রুমালের ভাঁজে বুনোফুলের শৌখিনতা । এভাবে আরো একটি মাদুর বিছানো আকাশ শাল-সেগুনের দেশে নেচে নেচে বিলি করছে গোধূলিস্নান, পায়ে পা মিলিয়ে কেটে গেছে রাত্রিদিন। আঁধারের ডানা রেখে গেল দশদিক বৃক্ষঢেউ । আমি তাঁকে চিনি, সে একটা ভীষণ দাঁড়াবার জায়গা। এখানে উজ্জ্বল রোববারগুলি হাত নেড়ে জানায় সবুজ সংকেত। চলো আছড়ে পড়ি পলিমাটির ঘুম খুঁড়ে, মেলে ধরি ফাঁকে ফাঁকে উর্বরতার মায়াশ্রম। খুঁটে খুঁটে ছুঁড়ে ফেলি চুষে খাওয়া গর্জনের ছিবড়া ।
বিপুল রায়
তাই হোক
তাহলে তাই হোক -
আমি ছাড়ি, তুমি ধর হাল।
রাত্রি কেটে আসুক নতুন সকাল।
তাহলে তাই হোক -
আমি চোখ বুজি, তুমি খোলো চোখ।
ত্যাগের পর শরীরী সম্ভোগ।
তাহলে তাই হোক -
আমি চুপচাপ ,তুমি দেখাও রোখ।
উচ্ছ¡াসের পর শেখাও সবক।
তাহলে তাই হোক -
আমি হারি, তুমি হও আহাম্মক।
আমার ধন সম্পত্তি ক্রোক।
তাহলে তাই হোক -
আমি যাই, তুমি সামলাও লোক।
যারা কাঁদছে, তাদের মেটাও শোক।
তাহলে তাই হোক -
আমি নই, তোমার দ্যুলোক-ভূলোক।
কর আমার সাম্রাজ্য ভোগ।
তাহলে তাই হোক -
আমি উৎশৃঙ্খল তুমি সাধক।
আমি অগোচর তোমাতেই ঝোঁক।
তাহলে তাই হোক -
আমি অন্ধকার তুমি আলোক
আমি নরকে তুমি স্বর্গলোক।
তাহলে তাই হোক -
আমি যাত্রী তুমি চালক।
আমি চির দুখী তুমি অশোক।
রাহুল বর্মন
অশরীরি প্রেম ??
অশরীরি প্রেম ??
তাও তো একটু আড়ালে গেলেই,
চোখের কাজল ধেবড়ে যায়!
ঝরনার মত চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায়!
ওড়না মাটিতে হামাগুড়ি দেয়...
এগুলো সত্যি ?? নাকি,
আদরের আবেশে মৃদু শীৎকার গুলো??
কিন্তু ঠোঁটের গভীরে গেলে,
চুমুও যে
আদিখ্যেতা জানে...!!
ধারাবাহিক গল্প: শেষ অংশ
সে রাতে কেউ ছিলনাআপন রহমান
পারিবারিক কলহের কারণে আমি মা বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এক দিকে চাকরি অন্যদিকে ইরাকে নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাই আমি। অনেক কষ্টে ওকে লালন পালন করতে থাকি। ছবি আকার প্রতি ছোটবেলা থেকেই ওর খুবই আগ্রহ ছিল। স্কুলের আর্টের শিক্ষকও ওকে আগ্রহের সাথে সাহায্য করত আর বলত ইরা একদিন এদেশের বড় নামকরা আর্টিস্ট হবে। দেখতে দেখতে মা আমার অনেক বড় হয়ে গেল। কলেজ পাশ করে বায়না ধরল আর্ট কলেজে পড়বে। পড়বে তো পড়বেই। কোন কারও কথা সে বুঝতে চায় না। আমি পড়ে গেলাম দোটানায়। একদিকে মেয়ের ইচ্ছা অন্যদিকে তাকে ছেড়ে আমাকে থাকতে হবে কোনটা করব ভেবে পাচ্ছি না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়ের ইচ্ছাই পূরণ করবো। ওকে ভর্তি করে দিলাম আর্ট কলেজে। দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। একদিন দুপুরে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে ইরার কণ্ঠ-বাবা...বাবা। - আমি বেড রুমে শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা পড়ছিলাম। বইটা একপাশে রেখে দৌড়ে গেলাম। বারান্দায়। ইরাকে দেখে আমি হঠাৎ যেন থমকে গেলাম। ইরা! ইরার সঙ্গে অচেনা একটা ছেলে। ইরার হাত ছেলেটির হাতে ধরা। ইরা বল্ল ও আমার ক্লাসমেট বাবা। আমি নিজেকে কিছু সামলে নিয়ে বললাম এসো তোমরা ঘরে এসো, ওরা ঘরে গেল। আমি চুপ-চাপ নিজের ঘরে ফিরে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ইরা আমার ঘরে এসে ভয়ে ভয়ে বলল ছেলেটির নাম ধ্রুব। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। আমি বললাম বলো। ইরা বল্ল বাবা আমি আপনাকে না জানিয়ে বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। দয়া করে আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আমি ধ্রুবকে বিয়ে করেছি ও আমার স্বামী। কথাটি শোনার পর আমি নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। আমি ওর গালে স্ব-জোরে একটা চড় মেরে বসলাম। আর; আর বললাম বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে আর কোনদিন যেন তোর মুুখ আমাকে দেখতে না হয়। আসলে যে মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে আমি আমার পৃথিবীটা দেখেতে পেতাম। যাকে ঘিরে আমার আশা আকাঙ্খা স্বপ্ন সবকিছুই। সেই আমাকে না জানিয়ে এত বড় একটা কাজ করেছে আমি সেটা সেদিন মানতেই পারিনি। সারারাত আমি ঘুমাতে পারলাম না। যে মেয়ের গায়ে আমি কখনো একটি পিঁপড়াকেও কামড় বসাতে দেয়নি আজ সেই মেয়েকে আমি নিজে মারলাম? ভাবলাম; এ বয়সে টুকটাক ভুল সবারই হয়। তাছাড়া প্রেমে পড়লে কারো ভালো মন্দ, জ্ঞান থাকে না। ভাবলাম সকালে গিয়ে ওর মুখ থেকে সব শুনে সম্ভব হলে সব কিছু মেনে নেব। --সম্ভব হলে মানে ? ছেলেটার অনেক অর্থকড়ি দাদা ঠাকুরদাদার বংশীয় মর্যাদা এসব থাকলে? না, না বাবা তুমিও আমাকে ভুল বুঝছো। ওসবের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার আদরের কন্যাকে আমি চেয়ে ছিলাম। গরীব হলেও নম্র, ভদ্র মানুষের মত মানুষের হাতে তুলে দিতে। আজকাল কার বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের বিয়ে দেয় ভাল পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে নয়। পাত্র-পাত্রীর বাবা ঠাকুরদার বংশ মর্যাদা আর টাকার সঙ্গে। আসলে বাবা; পৃথিবীতে অর্থবিত্ত বংশ মর্যাদা ও সব কিছুই না, ওসবের মধ্যে সুখ থাকে না। একটা ভালো মানুষের সঙ্গে কুড়ে ঘরে বাস করলেও সেখানে স্বর্গীয় সুখেরতৃৃপ্তি অনুভব করা যায়। আর একটা বংশীয় মর্যাদাবান বিত্তবান মানুষরূপী পশুর সঙ্গে অট্টালিকায় বাস করলেও সেখানে ভোগ করতে হয় নারকীয় যন্ত্রণা। আমি চেয়েছিলাম মেয়েটাকে একটা সু-পাত্রে দান করতে। কিন্তু পরদিন সকালে উঠে দেখি ইরার ঘরের দরজা খোলা। ইরা কিংবা সেই ছেলেটা কেও নেই। আমি সমস্ত বাড়ি তাদের খুঁজতে লাগলাম। কাজের মেয়েটা জানালো-‘আপায় খুব বিয়ানে চইলা গ্যাছে, আর বলছে আর কুনো দিন ফিরা আইবো না’ পরদিন জানতে পারলাম ইরা এবং সেই ছেলেটি ঢাকায় এক বন্ধুর বাসায় আত্নহত্যা করেছে। ও বাড়ির দারোয়ান এবং তার বন্ধু ওদেরকে বাঁধা দিতে যাওয়ায় ওরা ওদেরকেও মেরে ফেলে। তারপর নিজেরা বিষপান করেছে। আসলে ওরা ওদেরকে কোন শত্রুতার জেরে মারেনি। কোনো-কোনো মানুষ আত্মহত্যা করার পূর্বে অনেক বেশি হিংস্র হয়ে যায়। ওদের বেলায় হয়তো তাই ঘটেছিল। - মাষ্টার বাবুর কথা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। তাহলে ইরা, নীরব যাদের সঙ্গে আমার এতটা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ওরা সবাই অশরীরী আত্মা! এমনকি ঐ দারোয়ানটিও?
তাহলে; তাহলে কী? সে রাতে আমার সঙ্গে কেউ ছিল না?
No comments:
Post a Comment