Monday, July 20, 2020

শিল্প সাহিত্য ৯৭


 রবিবার  ৪ঠা শ্রাবণ ১৪২৭, ১৯ই জুলাই ২০২০




কবিতা
শুভ্র সরখেল
কলার পাতায় সত্য উপনিষদ 

কারো চোখ দেখে হিংসে করো না
ওটা ঈশ্বর প্রদত্ত ব্যাপার
কারো কণ্ঠ শুনে মোহিত হইয়ো না
ওটা ঈশ্বর প্রদত্ত ব্যাপার
কিন্তু একি !
তোমায় তো ঈশ্বর দুটোই দিলো!
তাহলে তো আমার রাগ হতেই পারে!

কারো ভ্রম দেখে কেঁদে ফেলো না
ওটা অস্তিত্বের ব্যাপার
কারো চলন দেখে রেগে যেও না
ওটা অস্তিত্বের ব্যাপার
কিন্তু একি !
তোমার তো অস্তিত্ব দেখছি, দৃশ্যমান!
তাহলে আমারটা গ্যালো কই?

কারো বিছানা দেখে বীর্য ডেকো না
ওটা পদার্থ এবং রসায়ানের কারসাজী
কারো শ্রম দেখে অবাক হইয়ো না
ওটা ধৈর্যের এবং অভিনয়ের কারসাজী
কিন্তু একি!
তোমার ভেতর টা তো দেখছি দুটোই ব্যালেন্স করে ফেলেছ!
আমার তো ওই বালের ব্যালেন্স টুকোই নেই!

জাহাঙ্গীর ডালিম
শ্রাবণ দিনে 

শ্রাবণে তোমাকে কি নামতে হবে
জল উঠোনে
ভিজতে হবে সকাল দুপুর
সারা বিকেল
বলতে হবে কোরাস করে-
দাও না ধুয়ে শ্রাবণ জলে
এই অতলে
একটু খানি শ্রাবণ দিনে
কে আমাকে বলতে পারেন-
বৃষ্টি জলের হিসাব কিতাব
ব্যাংকে যেমন জমা-খরচ তালগোলে
সব ঠেকছে মাথায়।
হেঁটে চলার ঠায় ঠিকানা ভুলে গেছি
নিত্য দিনের সংগী সাথী তাও ভুলেছি
যাদের সাথে অনায়াসে চলতে
পারি অনন্ত কাল
তাও ভুলেছি শ্রাবণে ভিজে এসে।

ধারাবাহিক গল্প
অন্ধকারাচ্ছন্ন
প্রণব কুমার চক্রবর্তী

পাঁচ
এই মুহূর্তে আমার নিজেকে মনে হচ্ছে আমি আগ্রার এই বাদশাহী কেল্লার অন্দরমহলের একজন মেহমান। চাঁদের রূপালী আলোয় শাহী মহলের নিঝুম হয়ে থাকা লাল বেলেপাথরের রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলটা যেন সেই মুহূর্তে এক আলোকিত বর্তমান হয়ে উঠেছে! জোছনার কোন বর্ধমান।
শুভ্রতার মতই আমাদের নেশার মাত্রাটাও যেন একটু একটু করে বেড়ে চলেছিল। হারেমের ভেতরের ইট, কাঠ এবং কংক্রিট, মহলের দেয়ালের গায়ে আঁকা সব নকশা এবং ছবি সবকিছুই যেন হঠাৎ জীবন্ত হয়ে, আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে! অন্ধকার থেকে ক্রমশ আলোকিত হয়ে উঠছে! ভেতর থেকে কেমন যেন একটা স্মৃতিমাদুরতার আকর্ষণ উঠে এসে- আমাকে রীতিমতো খোঁচানো শুরু করেছে!
মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের কোন এক সময় আমি এই মহলেরই কোন এক হাভেলি বা মঞ্জিলে কিছুকাল কাটিয়ে গেছি! কি জন্য একটা নাম ছিল আমার! কিন্তু বাদশাহী শাসনের কোপে পড়ে আমাকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল!
হঠাৎ, দেখলাম প্রাসাদের ভেতরের রংমহলটা যেন আলোয় সেজে উঠল। ভেতরের এবং বাইরের রক্ষী এবং প্রহরীরা ব্যস্ত হয়ে উঠল। আমার ভেতরে কেমন যেন একটা অদ্ভুত ব্যস্ততা অনুভ‚ত হওয়া শুরু করল। বুঝলাম সম্রাট অন্দরমহলের মেহেফিলে আনন্দ উপভোগ করতে। সারারাত ধরে সুন্দরী নর্তকী আর বাইজির নাচ এবং গানের সাথে সুরার ফোয়ারা চলবে!
মনে পড়ছে- অতীতে এই রকম বিশেষ রাত্রে আমাকেও অন্দরমহলের অন্যান্য রক্ষী এবং প্রহরীদের মতো ব্যস্ত হয়ে উঠতে হত।
হঠাৎ কানে ভেসে এলো টকবক টকবক ঘোড়ার গাড়ির আওয়াজ! 
চোখ ফিরিয়ে দেখলাম কালো দুটো আরবি ঘোড়ায় টানা চারপাশে রঙিন ঝলমলে কাপড়ে ঢাকা ঘোড়ার গাড়ি এসে কেল্লার রাজ-প্রাসাদের অন্দরমহলে প্রবেশের রাস্তার প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়ালো। গেটের প্রহরীরা সব শশব্যস্ত হয়ে উঠলো। রক্ষিরা সব ছুটে এসে গাড়িটাকে  গোল করে ঘিরে দাঁড়ালো। হারেমের মহিলা দারোগা এবং রাজন্য বর্গরা ছুটে এলে স্বাগত জানাতে। পালকিবাহকরা পালকি নিয়ে এসে দাঁড়ালো।
অতীতের অব্যাহত আমিও আগন্তুককে স্বাগত জানাতে উঠে দাঁড়ালাম। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম ঐ দিকে। হাভেলির অলিন্দের মোটা ধনের আড়াল থেকে দেখলাম, সাদা ঝলমলে সিল্কের ঢিলেঢালা কুর্তা পাজামা পরা এক অপূর্ব সুন্দরী মহিলা, সারা অঙ্গে দামি মণিমুক্তা খচিত স্বর্ণালংকার, মাথায় হীরক শোভিত বাদশাহী মুকুট আর হাতের বুড়ো আঙুলে মুঘল ঘরানার আয়না আংটি। ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে, একবার এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাসেম আলী বলে ডাক দিয়ে, পালকিতে উঠে ভেতরে চলে গেল। 
কাসেম আলী ডাকটা কানে যেতেই আমার কেন যেন মনে হলো, ওই মহিলা আমাকে কিছু নেবার জন্য ডাকলো। ভেতরটা কেমন যেন উঠাল পাতাল হওয়া শুরু করল।
আমি এগিয়ে গিয়ে ভেতরের ঢুকবার চেষ্টা করতেই রক্ষীরা আমায় আটকে দিয়ে বলল- আপ অন্দর নেহি যা সাকতে। বাদশা আভি হিয়া মাহফিল মানায়েঙ্গে।
মহিলাটির মুখের আদল টা আমার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। আগে ওকে কোথাও যেন দেখেছি।
(চলবে...)
রুখসানা কাজল এর সাক্ষাৎকার



গদ্যের খাতাটা  বিশাল একখন্ড জমির মত

জন্ম গোপালগঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তনী। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনার সাথে যুক্ত আছেন। ঢাকায় বসবাসরত।
প্রকাশনাসমূহ
উপন্যাস: তোমার জন্যে মেয়ে, আহা জীবন, কিশোরীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ, আলালদের আনন্দঘর
ছোটগল্প: নুনফলগল্পগুলি, জলের অক্ষর, রুখসানা কাজলের অণুগল্প, যৌথ ছোটগল্প নগরে নতুন খবর।


লেখার শুরুটা কিভাবে

শুরুটা পারিবারিক আবহে। আমি খুব ভাগ্যবান যে পরিবারের বড়দের লেখালিখি পাঠ অভ্যাসের সাথে সাহিত্য নামের এক বিশাল আশ্রয়কে নিজের করে পেয়েছি।

আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলেন কবে
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে পাঠক হিসেবেই মূল্যায়ণ করি। সর্বগ্রাসী পাঠক। লেখালিখির ধারাবাহিকতা রাখিনি। এটা আমার ইচ্ছে। সবাইকে লিখতেই হবে ধারণায় আমি বিশ্বাস রাখিনা। তবে যখন লিখি সম্পূর্ণ নিবেদিত হয়েই লিখি। 

কেন গদ্য লেখেন
আমার মনে হয় গদ্যের খাতাটা  বিশাল একখন্ড জমির মত; যে জমির উপর মানুষ তার জীবনকে যাপন করে নানাভাবে। এই যাপনে ছন্দ ভাঙ্গা এবং ছন্দিত হয়ে ওঠার বহু রঙিন বিভঙ্গ রয়েছে। আমার কাছে যাপনের এই বিভঙ্গ হচ্ছে গদ্য। আমি স্বচ্ছন্দে সেখানে ঘুরতে পারি। শুনতে শোনাতে পারি। অনায়েসে ছুঁতে পারি। সেভাবেই গদ্যকে ছুঁয়ে লিখে যাচ্ছি। 

প্রেরণার কোন জায়গা আছে কি
প্রতি মূহূর্তে প্রণোদিত হই। কখনও কারো লেখা পড়ে, কারো মন্তব্য বা সমালোচনা থেকে। আবার দেশের গোষ্ঠীবদ্ধ লেখকদের অনুচ্চার থেকেও আমি লেখার উৎসাহ পাই। 

লেখক বা কবিকে কতটুকু রাজনীতি সচেতন হতে হয়
হতে হয় এবং হয়ও। সেটি সচেতন বা অসচেতন দুভাবেই হতে পারে। কতটুকু? তার নির্ণয় লেখক বা কবি নিজেই নির্ধারণ করে থাকেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এর ফেয়ারওয়েল টু আর্মসযুদ্ধবিরধী উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু যুদ্ধটা কেন হয়েছিল? রাজনৈতিক উচ্চাশার কদর্য চেহারাই হচ্ছে যুদ্ধ। উপন্যাসটি কি আমাদের ধারণা দেয় না একটি সময়ে বিশ্বের তা বড় রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা দখলের রাজনীতি সম্পর্কে? বিশ্বসাহিত্যের ভান্ডারে এরকম বহু উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ রয়েছে।  

সময়ের কোন কোন লেখকের লেখা গল্প উপন্যাস আপনাকে ভাবায়, থমকে দেয়
আমি পড়তে ভালবাসি বলে দেশ এবং বিদেশের অনেকের লেখাই পড়ি। কারো কারো লেখা পড়ে বিস্মিত হই। তাদের চিন্তাশক্তির সাথে সৃষ্টিকর্মের আশ্চর্য সম্মেলন দেখে অবাক হই। 

লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে কিভাবে দেখেন
লেখালিখির জন্য চমৎকার এবং প্রাণবন্ত একটি উন্মুক্ত খাতা।

লেখার সন্তুষ্টি নিয়ে কোন লেখককে কি কখনো থেমে যাওয়া উচিত? আপনার মতামত কি?
এটি লেখকের নিজস্ব ইচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অজস্র লিখি না। আমার ভাবনার সাথে মনের মিশ্রণ ঘটলেই তবে আমি লিখি। সারাদিন রাত হাজার হাজার ভাবনা এসে নাড়া দেয়। কিন্তু লেখার জন্য মন চাই। সেই মনের সাড়া না মিললে কেউ যদি থেমে যায় সে তার সুচিন্তিত ইচ্ছে। সাহিত্য জগতে অস্তিত্ব আছে জানাতে যা কিছু লিখে যাওয়া আমার না পছন্দের।

গল্প বা কবিতার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা বা প্যাটার্ন আছে
খুব জটিল ব্যাপার। আমি কি একটি জানালা বানাতে বসেছি যে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ঠিক রাখতে হবে? ধরাবাঁধা সংজ্ঞা বা প্যাটার্ণ আমি বুঝতে চাই না। 

আপনার গল্প আপনার সমসাময়িকদের থেকে কোন জায়গাটায় আলাদা বলে আপনি মনে করেন?
আলাদা ? কে জানে! আমি জানি আমার লেখায় প্রেম বা রোমান্টিকতার খামতি রয়েছে। 

আপনি কি এক বসায় কবিতা বা কোন ছোট গল্প লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন
আমি বার বার সংশোধন, কাটাকুটিতে আনন্দ পাই। একটি শব্দ, তার মানে, ব্যবহার খুঁজতে আমি গোটা দুদিন কাটিয়েছি বলে মনে আছে। আবার একটি শব্দ আবিষ্কার করে কি করে শব্দটিকে লেখায় যোগ্যতরভাবে স্থান দেব তা নিয়েও কয়েকদিন ভেবে গেছি।  এমনকি লেখা ছাপার পর নিজের বইয়ের অসংখ্য ভুল ধরে অখাদ্য লেখা হিসেবে স্বসমালোচলাও করি।

বর্তমান সময়ের কবিতা বা গল্পের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতা দুর্বোধ্যতার অভিযোগ বিষয়ে কিছু বলেন। কবি বা গল্পকারের কি পাঠকের রুচির সাথে আপোষ করে কবিতা লেখা উচিত
গল্প বা কবিতা হবে লেখকের নিজস্ব ভাবনা। আর লেখার রীতিতে লেখক তার নিজস্ব ভাবনাকে আশ্রয় করেই লিখে থাকে বলে জানি। পাঠকরা হচ্ছেন ইচ্ছের ঈশ্বর। ইচ্ছে হলে পড়বেন। লেখক কেবল লেখার দাস হবেন। 

গল্পকার বা কবির স্বাধীনতা তার লেখাকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
স্বাধীনতা শব্দটি খুব আপেক্ষিক এবং প্রকারভেদে বিভক্ত। একজন গল্পকার বা কবির লেখায় কিছুটা হলেও প্রভাব থাকেই। 

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?
আমি মানবতার চরম উৎকর্ষে জীবন যাপন করতে ভালোবাসি। যাপিত পথে মন্দির, গির্জা, মসজিদ পরিক্রমণ করতে হয়। প্রতিটি ধর্মের প্রতি শুভেচ্ছা রেখে আমি আমার পথে চলতে পারি। এই যে এখন কোরআন শরীফ পড়ছি মনে কোন দ্বিধা রাখিনি। আতিমারির এই মরণ ছোবলে ভয় পেয়েছি তাই পরমেশ্বর আল্লাহকে ডাকছি। আবার কিছু লিখছি পড়ছি। সাহিত্য যাপিত জীবনের রেখায়ণ। কোন দ্বন্দ্বে দুলছি না।

এখন কোন বইটা পড়ছেন? আপনার প্রিয় লেখক কারা?
আমার অসংখ্য প্রিয় লেখা আছে। লেখার সূত্রে সেই সময়ের জন্যে প্রিয় হয়ে উঠেন সেই লেখক। অলীক মানুষ, খোয়াবনামা, প্রদোষে প্রাকৃতজন পড়ে একটি লিঙ্ক খুঁজছি তেমনি কবি আবুল হাসান এবং রুদ্র মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহর সাথে জয় গোস্বামী পড়ছি কোন এক আশ্চর্য মিল খুঁজে পাওয়ার জন্যে।


No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক