সোমবার
২৯শে আষাঢ় ১৪২৭, ১৩ই জুলাই ২০২০
কবিতা
মিলন ইমদাদুলমৃত্যুপাঠ
আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে কবর দিও
যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়-
তবে আমার চোখ দুটি'কে যেন নয়!
এ চোখে আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই...!
মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পড়তে পড়তে-
কখন যে নিজেই ঘুমিয়ে পড়বো
অন্তীম যাত্রার পথে ,
এ সত্য জানার ক্ষমতা নিজেরও নেই!
মৃত্যুকে ডান হাতে নিয়ে চলছি দিবারাত্রি-
জীবন নদীর তীরে,
শৈশব স্মৃতিরা যেখানে আকঁড়ে ধরে!
মৃত্যু যে কতো কষ্টের-
মরেছেন যিনি তিনিই ভালো জানেন...!
মানুষ মরে গেলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে তার ছায়া-
একমুঠো তৃষ্ণার্ত রৌদ্দুর বহুমুখী মায়া
মজনু মিয়া
নির্লজ্জ ছোঁয়া
ইতরপনা নয় তো প্রেম নদীর মত উদার
নির্লজ্জ ছোঁয়া বেহায়াপনা
কামুক হলেও অপন্দনীয়।
মনের ছোঁয়া চোখের দেখা কিংবা
ঠোঁটের কামড়ানি
নিকট প্রেমের দাম বাড়ায় সে।
অচেনা বা অজানাকে এমন ভাবে দেখো না-
নিদয় হয়ে চাপটে আঘাত করে,
কিংবা ডাকে গায়ের লোক ন্যায্য বিচার চেয়ে।
তোমার আমার সম্পর্কটা এমন হতে পারে
চাঁদের মত দেখা শুধু নিরবে কোনো আবদার না,
ছোঁ’তে যাওয়া কেন?
এসেই ছোঁ’বে তোমায় মন দিয়ে তা
নদী যেমন সাগর পানে ছুটে।
তন্ময় পালধী
হত্যা
ছুরি হতে আসেনি আততায়ী,
প্রয়োজনই বা কী?
যে কথার লহরিতে সুরের কথাকলি জাগে,
অকালবসন্ত নেমে আসে
আঙিনা জুড়ে হাসনুহানার মুগ্ধ সৌন্দর্য
ঘিরে থাকে ঘিরে থাকে হৃদয় সীমানা।
বন্দুক বা অন্য অস্ত্রেরও প্রয়োজন বুঝি ছিল না।
আসলে কথার বিনুনিতে
ছুঁয়ে যেতে থাকে ভালবাসার অলিগলি।
যে স্পর্শে দোলা লাগে,
আর চকিত চাহনিতে চাঞ্চল্য,
নিদাঘপীড়িত তপ্ত অনুভূতি
শীতলতম হয়ে ওঠে।
আমার পৃথিবীতে সুরের প্লাবন আসে
কত্থকের ছন্দে মুখরিত হয় ব্যস্ত আমিত্ব
যে অক্ষরের জাদু সমারোহে বাঁচার প্রেরণা।
কিন্তু হৃদয়ের গহীন রহস্য অজানাই রয়ে যায়
অস্ত্র নয় যখন কথাতেই ভালবাসা খুন হয়।
জয়ন্ত ব্যানার্জী
ঝাপসা আলেখ
তুমি যেন অনেকটাই সরে দূরে,
হাসি মুখটা আবছায়ায় গেছে সরে।
তোমার অবয়বের ধরণটা যেন ঝাপসা,
আমার দু’চোখে বাষ্পের বাধা আবছা।
ভালোবাসা যখন পিছন ফিরে চায়,
বুকের ভিতর নিঙড়ে উঠে মোচড়ায়।
বৃষ্টি ধুয়ে অশ্রু-ভেজা নোনা,
মিষ্টি জলে ভাসায় দুখের দানা।
তোমার বুঝি একই অভিমান?
ঝাপসা কাঁচে, ভাপের আস্তরণ?
একটু তুমি এগোতেও তো পারো,
অস্পষ্টে, দু’হাত বাড়িয়ে ধরো।
রফিকুল নাজিম
কাঁহাতক প্রতীক্ষা
কোনো কোনো যুগল সারারাত পূর্ণিমার জন্য অপেক্ষা করে
কোনো কোনো কবি কবিতার উদোম শরীর পড়ার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে টেবিলে। রাজনীতিবিদ অপেক্ষা করে ভোটের।
একপ্লেট ভাতের জন্য ভুখা মানুষটাও খুব অপেক্ষায় থাকে।
অথচ আমি এইসবের কোনোটার জন্যই অপেক্ষা করিনা
এই পাংশুটে ও বিমূর্ত আবেগে আমার কখনো রুচি হয়না।
সামনে যা পাই-সবকিছুতেই সুন্দর দ্যাখি; উপভোগ করি,
যেমন: চলতিপথে নাম না জানা বনফুল, সেই ছোট্টপাখি,
সদরঘাটের লঞ্চে দ্যাখা কাজলটানা চোখের সেই মেয়েটা;
যার চোখে চোখ রেখে মনে হয়েছিলো এইতো সেই চোখ!
অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষা করার মত বদাভ্যেস আমার নেই
সামনে যা পাই-সবই গোগ্রাসে গিলতে থাকি; উপভোগ করি।
যেমন উপভোগ করতাম তোমার বুকের সেই তিলটার ওম
এবং ঐ তিলের ওমের প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে সেই কবেই আমি চাতক হয়ে গেছি!
বাঁধন অধিকারী
দেখা হবে কি না জানি না?
চোখের ইশারায় বায়বীয় কম্পন...
নিখাঁদ ভালোবাসার মায়াজাল।
আমি আর তুমি যা ভাবি নি,
প্রকৃতি যা ভাবে নি, তারই সম্মুখীন আমরা।
একটি মায়াজাল আমাদের অস্তিত্ব পোঁড়ানোর কারিগর।
পুঁড়তে পুঁড়তে...
ধরতে ধরতে...
নিঃশেষ হওয়া ব্যথার পথে...
যেখানে সমীহিত হবো আমরা সবাই।
দেখা হবে কি না জানি না ?
অণুগল্প
মুখোশ পরা সভ্যতাশুভা গাঙ্গুলি
আরব্য উপন্যাসের সেই বাদশা যিনি গল্প শেষ হলেই স্ত্রী’র গলা কাটতেন, তাঁর পাগলামির জবাব দিয়েছিলেন এক বিদূষী রমণী প্রমাণ করেছিলেন মহিলারা সর্বপ্রকার গুণের অধিকারী, সেক্ষপিয়ের ও সেটাই বলেছেন তাঁর শাইলক গল্পে।
আর মহীয়সী যামিনী সুন্দরী ও প্রমাণ করেই ছাড়লেন তাঁর লোহার সিন্দুক থেকে সোনার সীতাহার চুরি করেছে, শহর থেকে কিছুদিনের জন্য খুড়তুতো দিদির বনেদি বাড়ীতে বেড়াতে আসা, লেখাপড়ার জানা, সুন্দরী ফটফট কথায় কথায় ইংরাজী ঝটকা মারা এলিস বোস।
কিন্তু ঘটনাটা অন্যদিকে টার্ন নিতেই পারতো, নিচ্ছিলোও ঠিকমতো,
বাধ সাধলো বহুদিনের পুরোনো ডেইজি একটি রাস্তার নেড়ি কুকুর, যাকে যামিনী দেবী রথের মেলা থেকে কুড়িয়ে আনেন,
বাড়ীর পুরোনো চাকরবাকর’দের চেনা একটা ছেলেকে মালীর কাজ দিয়ে বহাল করেছিলেন, সে একটু চনমনে ঠিকই, সময়ে অসময়ে হুটহাট করে যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ে ঠিকই, সন্দেহজনক মনেই হয়। তবে চুরি সে করেনি সেটা প্রমাণ করলো ডেইজি।
চোস্ত প্যান্ট পরে মেমসাহেব ছেলেটিকে দোষী সাব্যস্ত করে বাড়ীর গাড়িতে উঠবেন
এমন সময় প্রচন্ড বেগে ডেইজি এলিসের পশ্চাৎদেশে মারল এক জব্বর কামড়।
ভরা জনতার সামনে প্যাণ্টের পিছনের ভাগ অনেকটাই, রমণীর
শীলতা হানি করে ছিঁড়ে নামালো
বন্ধুবৎসল ডেইজি,
রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লো টুকরো টুকরো করে কাটা হার পশ্চাৎ দেশ উন্মুক্ত করেই,
মালীকে পরম ভালোবাসায় আপাদমস্তক চেটে গিন্নীমার কোলে বসলো ডেইজি।
হতভম্ব এলিসের লজ্জা নিবারণ করলো দিদি নিজের আঁচল দিয়ে,
পিসিমা যামিনী দেবী বললেন- লজ্জার কিছু নেই, ডেইজি ফিমেলডগ,
সব মিটে গেলে, মেয়েটিকে মুক্ত করে যামিনী দেবী বললেন-
অহংকারটা ওই পচা পুকুরটায় ফেলে বাড়ী যাও,
আক্কেলটা হওয়া ভালো।
তবে কেউ জানে না ওটা গিল্টি করা হার ছিলো।।
No comments:
Post a Comment