বৃহস্পতিবার
১লা শ্রাবণ ১৪২৭, ১৬ই জুলাই ২০২০
কবিতা
সাজ্জাদ সাঈফতমা সিরিজ: স্বরলিপি
ট্রেনে চেপে শহরের বুকে নেমে এলো
দূর গঞ্জের মেঘ-
এইখানে ফোনের টাওয়ার, হিম বাতাসে মাথা দোলায়
নতুন ধানের গন্ধে দাড়িয়াবান্ধা খেলে, হাওয়া তার কানে কানে
জোনাকের পাঠশালা খোলে, রমরম করে হারানো চিঠির সুর।
নাও তমা, হেরফের;
তোমার দিকে নগর জীবন বাড়িয়ে দেবে শিম-ফুল;
মথুরা-বাঁশরী ঘিরে থাকবে, ওজন স্তর;
নাও দু’হাত ভরে, অতল প্রেমের নিচে চাপা পড়া
সভ্য ও সভ্যতার গান, স্বরলিপি তার!
সুজাউদ্দৌলা
ফটোসেশন অথবা আসল কাহিনি
ক্যামেরায় আমার ছবি ভালো আসেনা
মেয়েটি বলেছিল
আসলে ক্যামেরার সামনে আমি
ঠিক নরমাল থাকতে পারিনা
আর তাই ছবি তুলিনা এমনকি
মোবাইলে সেলফি পর্যন্ত না
আসলে ছবি তোলা আমি পছন্দ করিনা
আসলে আ আসলে তোতলাচ্ছিল সে
আসলে কাঁদছিল মেয়েটি---
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
বুদবুদ
কি এমন মনে ছিল জোনাকির আলো
মাটির ভেতরে ছিলো নিষ্প্রাাণ গাছ।
কি এমন ছবি ছিল কালো শুধু কালো
ছড়ালে না জমিনে তা আনাচ কানাচ।
কি এমন শিকড়েরা পাথরের বুকে
থাবা দেয় শুষে নেয় বাঁচানো পৃথিবী...
চাঁদ তারা স্বপ্নেরা ডোবে সম্মুখে।
বেঁচে থাকে বুদবুদ মাছেদের খাবি...
আর কিছু বেঁচে থাকে মাঠে বোনা ধান
চাপ চাপ পড়ে থাকে শূন্য উঠান।
অনিক সাহা
জ্যাম
আষাঢ়ের একটি খরতাপের দিনে
ভ্যাপসা গরমে মুখ বুঁজে পড়ে থাকি বাসের ভিতর।
কানে গোঁজা ইয়ারফোনের সীমানা ভেদ করে পৌঁছায় এ্যাম্বুলেন্সের তীব্র চিৎকার।
আঁৎকে উঠে মুখ বাড়িয়ে দেখি,
আবারও কোন নেতার গাড়ি যাচ্ছে নাতো!
কমল কুজুর
নিম
তোমার উঠোন জুড়ে শিউলি ফুল
মন তারি সুবাসে মোহিত
জানালার পাশে রজনীগন্ধা
শুভ্রতায় ভরিয়ে রাখে সারাক্ষণ।
তোমার পোষা বিড়াল পিউ
“মিউ মিউ” করে
জড়িয়ে রাখে আদরে, আর
সবার ভালবাসায় সিক্ত
হও তুমি রোজ।
বেশ আছ তুমি!
তাই না?
তোমাদের সদর দরজার কাছে
যে নিমের গাছটি আছে;
দেখেছ কি!
পানির অভাবে শুকিয়ে কাঠ
দিনকে দিন হয়ে গেছে কংকাল
তোমার দেয়া পানিতেই যে
বেঁচে ছিল এতদিন!
পৃথিবীর আলোবাতাস ভালবেসে নয়,
শুধু তোমার অনুরাগে-
শুধু তোমারি জন্যে,
যার জীবন ধারণ
একেবারেই ভুলে গেছ তাকে?
তোমারও কি নেই কিছুমাত্র ঋণ!
সোয়েব মাহমুদ
কবি এবং ষাট পয়সা বৃত্তান্ত
ষাট পয়সার নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা কবি’র প্রতিবাদে রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে যায়
কবি, কবি’র দাঁড়ানো হয়না সমাজে!
কবি ভুলে গ্যাছে কবে খেয়েছে ভাত পরিবারে,
কবে হেসেছে প্রাণখুলে?
বাবা মাথা হেঁট করে বাজারে যায়,
মা সেলাই করে কবিপুত্র জন্মের কষ্ট।
কবি ভুলে যায় বোন কবে দিয়েছিল শেষ পরিচয়।
প্রেমিকা বলে গেছে যাবার সময়-
উঠতে পারলে ষাটপয়সার কাগজ থেকে দেখা করে বিয়ে খেয়ে যেও পরবর্তী সয়ম্বর সভার।
কবি বসে থাকে রোদ জর্জর চোখে, মশাল জ্বলা বুকে।
চায়ের দোকানের খিস্তি খেউরে অথবা তীব্র আর্তনাদে।
শহর গড়ায় সভ্যতায়।
রাষ্ট্র দাঁড়ায় বিনির্মাণের উন্নয়নে,
কবি দাঁড়াতে পারেনা,
কবি হাঁটতে পারেনা বুকে ব্যাথা খুব।
কবি’র আঙ্গুলে দাঁড়ানো পতাকা উপহাস করে,
কবি বাড়ি ফেরেনা
ঘর হারানো লোকমুখে শোনা কালো কৌতুকে।
রাস্তায় মাঝে দ্যাখা হয় কিছু
ফেরীওয়ালা, কায়কাওসের ছেলে অথবা বিব্রত ময়ুরের সাথে।
দ্যাখা হয় বেনিয়া বেশ্যাদের উর্বর স্তনবাহী অনুর্বর যোণীনির্ভর মেদের সাথে।
দ্যাখা হয় ধর্ষক কবিতার পুরষ্কার নেয়া একুশের স্মরণসভা।
দ্যাখা হয় কুকুরের পা তুলে পেচ্ছাপ করা নষ্ট আয়োজিত কবিতা উৎসবের।
এত কিছু দ্যাখতে দ্যাখতে দ্যাখা হয়না,
কবি পিতার মলিন মুখ,
কবি মাতার বিষণ্ন চোখ,
বোনের ভেজা আঁচল,
প্রেমিকার ন্যায্য অবহেলা।
কবি বাড়ি ফেরেনা,
কবি মিছিলে যায়, মিছিলে ঘুমায়।
বাবা জেগে থাকে।
কবি পিতারা মারা যান সন্তানের প্রথম কবিতায়।
কবি’ মাতাদের আত্মহত্যার কারণ প্রথম লেখা-অ।
তবুও কি থামে কবি, থেমেছে কি কখনও?
জনতার আগুন কলমে নিয়ে অধিকারের দাবীতে লেখা ফেষ্টুন,
প্রেমিকার ওড়নায় আদায়কৃত নামাযের কারণে ব্রাত্য সে
সামাজিক সাপ্তাহিক বাজারের ছোট ফর্দে।
তবুও থেমেছে কি কখনও মহানায়ক!
কবি পিতারা কবি জন্মের অভিশাপে বন্ধ করেছেন যৌনক্রিয়া
কবি মাতারা রুদ্ধ করেছে পথ জরায়ুর।
তবুও কিছু কি এসে গ্যাছে কবিতার?
আর তাই
জনশ্রুতি আছে একজন কবি’র, একজন মহানায়কের লাশ ঈশ্বর অগ্রাহ্য করেছে সহস্রবছর আগে।
জনশ্রুতি আছে পচে গলে যাওয়া কবি মৃতদেহ হয় দূর্দান্ত জৈব সার।
ধারাবাহিক গল্প
অন্ধকারাচ্ছন্নপ্রণব কুমার চক্রবর্তী
দুই
আসলে, আমি এর আগে বহু জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু এই আগ্রা এবং ফতেপুর সিকরিতে আমার আসাটা হয়ে ওঠেনি। এবারে তাই যখন আমাদের অফিসের কলিগরা এই আগ্রা এবং ফতেপুর সিক্রি সহ অন্যান্য জায়গায় ঘুরতে আসার ব্যাপারে প্রস্তাবটা দিয়েছিল, আমি ফেরাতে পারিনি। রাজি হয়ে।
আগ্রা এবং ফতেপুর সিক্রি নাম দুটো শুনলেই আমার মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভ‚ত হয়। মুঘল বাদশাহদের আমলের এই দুটো জায়গার সাথে ইতিহাসের অনেক উঠানামার গল্প জড়িয়ে আছে। কেন যেন মনে হয এই জায়গা দুটো আমার বহুদিনের পরিচিত। এই জায়গা দুটোর মাটি, মানুষ এবং জলবায়ুর সাথে আমার একটা আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে। আমি আগের কোন একটা জীবনে এইসব জায়গায় কাটিয়ে গিয়েছি। আগ্রা শহর থেকে যখন ঘোড়ার গাড়িতে চেপে এই বাদশাহী কেল্লার দিকে আসছিলাম, তখন আমার চোখের সামনে কল্পনায় ভেসে উঠেছিল যেমন রাস্তার দু’পাশের বিস্তীর্ণ ধূসর মাঠের ছবি, তেমনি ঘরের ভেতরের ছোট বড় সব হাভেলি, রাজপ্রাসাদ, বিভিন্ন জেনানা মহল, মসজিদ, দোকান-বাজার এবং নানারকম দেশি এবং বিদেশি ফুলের বাগিচা। সব যেন একটা বিষাদ মাখা রোমান্টিক স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার এইসব ভাবনার মাঝেই রাম রতন টাংগা ওয়ালা হাভেলি থেকে একটু দূরে গাড়িটাকে দাঁড় করিয়ে বলে উঠলো - বাবুজি? ওটাই আছে কেয়ারটেকার সাহেব কা কোয়াটার। উসকি বাগাল মে সফেদয়ালা বিল্ডিংটা মালুম হচ্ছে আপকি গেস্ট হাউস। আপ থোরা রুকিয়ে হিয়া।
হাম যাকে উনকো বুলাকে লে আতে।
(চলবে...)
অভিনন্দন সকলকে, ভালোবাসাসহ
ReplyDelete