Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ২৯

মঙ্গলবার ২৯শে বৈশাখ ১৪২৭, ১২ই মে২০২০




কবিতা
রুমকি আনোয়ার
নগর সংকীর্তন

চোখে চোখ পড়লেই দেখি নগরী ধর্ষিত হচ্ছে নিয়মিত,
শিথানে- পৈথানে মিনমিনে হাওয়ায় ওড়ে
শালিমার ধূপের মুমূর্ষু ঘ্রাণ
লাল সবুজের সংকেতে ঠারেঠোরে কথা বলে।
এইখানে জেবের ভেতর চোরা মুদ্রার হাসি,
হ্যাভারস্যাকের ন্যূজ্ব তরুণের সাধে প্রেমের তামাদি পদাবলি-
মরচে পড়া লৌহদণ্ডে ফৌত হয়ে যাওয়া সংস্কৃতির পাতা
কুলাঙ্গার কালের বারবানিতা টাল খেয়ে পড়ে।
নগর তবু ওস্তাদিতে ভরপুর,
খিস্তি- খেউড়ে বিরামহীন
কুকুরের জিহ্বার লাহান হাঁপায় কেবলি
আর বমি করে যায় গ্রামাঞ্চল।


সরকার অরুণ কুমার
প্রচলনের বিপরীতে

শত কথার নৈবেদ্য দিয়ে
সাজাতে চাই কবিতার ডালি
কখনও খুশি ঝলমলে, কখনও চোখের জলে।
হোকনা যতই বিবর্ণ, রঙচটা!
নাইবা জায়গা পেলো পেটমোটা কাগজে
নামীদামীদের মতো-- ছোঁবে না
জনপ্রিয়তার কলংক।

মন যোগাতে চাই না, মন জাগাতে চাই
সন্ধিক্ষণে তারুণ্যের ক্লান্ত শিরায়
জ্বালাতে চাই বোধের বাতি
স্বপক্ষে নাই বা পেলাম
শাসক রাজা প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানের সংকট আর ভবিষ্যতের ভাবনা
তাড়িত করে কবিকে
নাম, যশ, খ্যাতি, উপঢৌকন
এর জন্যই কী কলম চালানো?
অভিযাত্রা তারুণ্যর বিস্ফোরণ
সমাজে শতফুল ফোটানোর প্রচেষ্টা
চকচকে প্রচলের বিপরীতে।

হাসানুজ্জামিল মেহেদী
নিঃসঙ্গ রেলগাড়ি

জংশনে জড়ো হয়েছে কতগুলো রেলগাড়ি,
কেউ ফিরছে ঘর, কেউ ছাড়ছে বাড়ি।
এক রেলগাড়ি বয়ে নিয়ে যায় কত দুঃখ,
কত বিচ্ছিন্নতার স্বাক্ষী হয়ে ছুটে চলে ঝক ঝক,
বহুদূরের ঠিকানায় তার জমে থাকে কত জানা অজানা চিঠি।

রেলের চাকায় কত সুখ বেজে উঠে, রেল জানেনা তার হিসাব
কত ভালোবাসা ঘুরে ফিরে তার বুক জুড়ে এপার ওপার,
স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে যায় কত রঙ্গিণ খোয়াব,
রেল লাইনের মতো পিছে ফেলে আসে কত রেখা, বিচ্ছিন্নতার।

রেল গাড়ি বয়ে নিয়ে যায় সময়, আমাদের সুখ দুঃখ,
অজান্তে এতো মিলন বিচ্ছেদের এই রেলগাড়ি-
কত চঞ্চল
অথচ কত একা!


রহমতুল্লাহ লিখন
কাঙালের হোক বিচার

অনাহারী থাকবে অনাহারে
প্রাপ্য আহার খাবলে নিয়ে বিত্তবানরা
থাকুক সুখে,
চাষাভুষা কুলি মজুর ঝরাক
ঘাম কাঠ ফাটা রোদ্দুরে
মৃত তাদের হাড়ে, সভ্যতা হাসি মুখে।

ছলনা না জানার অপরাধে
ঝলমলে নিয়ন ল্যাম্পপোস্টর রাতে
ওভারব্রিজে কাতরাতে থাক শিশু,
রিকশা ভ্যান ঠেলা গাড়ির চাকা
পিচ ঢালা স্বাধীনতায় পিষ্ট যে পা
না পেয়ে তুষ্ট না হবার সাজায়
ভাতের মূল্য বাড়াও কিছু।

উৎসব চলুক বস্তি পুড়িয়ে
ডুপ্লেক্সে জাতি দেখবে দাড়িয়ে
ইটে ইটে আকাশ দেখ কাছে,
মরা কুকুরের দেহ ঠেলে
রেলের পাড়ে শাড়ি খুলে
বেশ্যার নড়াচড়ায় থুতু দাও পাছে।

ইটের ভাটায় খড়ি বদলে
মধ্যরাতে ঝুপড়ি খুঁজে মরা ধরো,
পুড়িয়ে মারো টেনে ধরা সব নর্দমা।
মুচি মেথরের তেল চিটচিটে জীবনধারা
উন্নতির মহাজোয়ারে যদি না দেয় ওরা সাড়া
জারি হোক ফরমান, পিষে ফেল এসব পিছুটান
জাতীয় দেয়ালে ছবির বন্যায় ঢাকা পড়ুক বঞ্চনা।


আরণ্যক টিটো
ধরাধরি

চুলের মুঠিতে হাত দিয়েছি বলে
ভেবো না,
আমি মারামারি প্রিয়!
শরীর সংগঠনে...
এসো... করি ধরাধরি...ছোঁয়াছুঁয়ি....
জাতপাত/ক্লাস মেইনটেইন
এসব
অরূচিকর...
মনের মাজারে নড়নচড়ন মনা বৈষ্ণব/বৈষ্ণবী
জেগে ওঠা- সার!
ললিতকলার বনে... ভাষায়... লাবণ্যে...
যাকে বলে,
ধরা পূর্ণ হোক তবে...
বেলা
না-জমে যদি ধরাধরি...
বলো,
ধরণী
নিকষিত হেমে
বিকশিত হবে কীভাবে? শরীর সংগঠনে...
ধরা
রেখেছে ধরে
আমাদের (উপ)স্থিতি...
ধরাধরি
ধরাধরিতে... একঘেয়েমিএলে
আমরা
একটু মারামারিও করতে পারি...
স্থিতির ব্যাকরণে...


'দেয়ার আর টু কাইন্ডস অফ পিপল অন আর্থ'

ইউসুফ বান্না

আমি আমার অনেক প্রিয় লেখকদার্শনিক কবিদের লেখায় পৃথিবীর মানুষকে মোদ্দা কথায় দুইভাগে ভাগ করতে দেখেছি। পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছেকথাটা একটা চুটকি থেকে নিয়ে সাশাল বা ফিলোসফিকাল প্রেমিসে অনেক গুরুতর  আলোচনার সূত্রপাত হিসেবে  ঘুরে ফিরে বহুবার চোখে পড়েছে।

যেমনঃ পৃথিবীতে দুই জাতের লোক আছে - জীবত আর বিবাহিত।  হলগে চুটকি।

অন সিরিয়াস নোটএইরূপ বিভাজন নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল মানুষদের ক্রিটিকাল থিংকিং এর গোড়ায় পানি দিয়েছে। যেমন,  শঙ্খ ঘোষ যখন কবিতায় লিখছেনÑ

হাওড়া ব্রীজের ড়ায় উঠুন
নিম্নে তাকান উর্ধ্বে চান

দুটোই মাত্র সম্প্রদায়
নির্বোধ আর বুদ্ধিমান।

তখন কিন্তু এই বিভাজন আমাকে ভাবাচ্ছে। এই বিভাজনকে অস্বীকার করার জো আছে কিনেই।

আবার শীর্ষেন্দু লিখেছেন পৃথিবীতে দুই প্রকারের মানুষ আছেভীত আর ভীতিপ্রদ।

বিভাজনের  দ্বৈততা কখনো সমবিভাজ্য নয়ছিলনা কোনো কালে। এই বিভাজনের একাংশে আছে সিংহভাগ মানুষ আর অন্যাংশে আছে হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষের  গোত্র।  এলিট এক কাল্ট যেন। অধরাইশ্বরের মতো ক্ষমতাবান। ইলুমিনাটির ধারণা এখনো যে বহাল আছেকে বলতে পারে নিশ্চিত করেএই কন্সপিরেসি মিথ্যে?

 বিভাজন যেন  ক্যামেরার এপাশ আর অপাশযার এপাশে আমি জানি আমি আছিআছে আমার মত মানুষই সিংহভাগআমরাই পুঁজি,  সর্বক্ষণ সার্ভেইলেন্সে রেখে এই আমাকেআমাদেরকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটছে গুটি কয়েক জন - ক্যামেরার অপাশে যাদের দেখা যায়না। বর্তমান সময়ের বন্দীদশায় আমার ভিতর লকডাউন সিন্ড্রোম প্রকাশ পাচ্ছে কিনা কে জানেঅন সেট প্যারানইয়াবাটইন দি গ্রান্ড স্কিম অফ থিংসআমাদের এই শাষন শোষণের বাস্তবতা অনেকটাই আমাকে ফুকো' প্রস্তাবিত পেনোপ্টিসিজমের কথা মনে করিয়ে দেয়।

যেখানে তিনি বলেছিলেন,  এসাইলামের রোগীদের অজান্তে একজন গার্ড সর্বসময় তাদেরকে নজরদারিতে রাখবেন। এই যেউইদাউট কন্সেন্টঅষ্টপ্রহর সার্ভেলেন্সের কথা উনি বলেছিলেনতার এপ্লিকেশনে পাগাগারদের প্রয়োজন তো হয়নিগোটা পৃথিবীটাই  এখন উন্নত সব  প্রযুক্তির কল্যাণে কখনো ডিফেন্স বা কখনো হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নাম করে   একটা গারদে পরিণত হয়েছে। এই নিয়ে যারা কথা বলছেন তাদের বিগ ব্রাদারের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। ইন্টার্নাল এফেয়ার নিয়ে একটা গনতান্ত্রিক শাসন কাঠামোতে  কেউ কথা বললেই তাকে ত্রিজন বা দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। বলা হিচ্ছে উইসেল ব্লোয়ার।

এই ধারার প্রথম বিখ্যাত  কুখ্যাত প্রথম জিহাদী হলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এসেঞ্জ। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী তকমার সাথে সাথে আরও কিছু কন্সপিরেসি তৈরির মদদ দিতে তার নামে যৌন হয়রানির মামলা ঠুকে অচ্ছুত করে রাখা হয়েছে।

ডিস্টোপিয়ান সাহিত্যের আদিরূপকার জর্জ অরওয়েল ইশ্বরের মত ক্ষমতাবান এই চোখকে বিগ ব্রাদার বলেছিলেন। বিগ ব্রাদার ইজ অয়াচিং!!

এখানে  অরওয়েলিয়ান বাস্তবতা আর ফুকো প্রস্তাবিত পেনোপ্টিকন এর মূল আইডিয়া কিন্তু মিলে যাচ্ছে।

আর এই পাওয়ার প্লেতে,  শাসকের হাতে যে অগাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তাতে ক্যামেরার এপাশের আমাদের ভেতর থেকে যে কেউ যেকোন সময়ে যে কোন এলিগেশনে ধরা খেয়ে চিরতরে গুম হয়ে যেতে পারি।

we find our every words  judged by people we can't see according to rules we don't know. এই হল কাফকায়েস্ক এর সংজ্ঞা।

ফুকো,  অরোয়েল  আর কাফকা এই তিনজনের বলা কথার মূল  দর্শন থেকেও  একটি দ্বিবিভাজন স্পষ্ট প্রকটিত হয়। দুরকমের মানুষের অস্তিত্ব আছে  পৃথিবীতেশাসক আর শোষিত
ক্ষমতাবান আর যজমান।

এই tyranny without a tyrant  এর শাসনে সত্যিটা এই যেএক অরওয়েলিয়ান বাস্তবতা মানুষের সাথে কাফকায়স্ক আচরণ করছে। আর আমরা তা জেনেও মেনে নিচ্ছি বা বাধ্য হচ্ছি বা বেঁচে আছি বিধায় যাপন করে যাচ্ছি জীবনকে। এখানে আমাদের জানা বা ইনফরমেশন গেদারের সোর্সও নিয়ন্ত্রিত।

ইতিহাস যেমন বিজয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে সবসময়,  হালের সাব-অল্টার্ণ ধারার চল শুরুর আগ পর্যন্ততেমনই এই আর্থসামজিক পরিপ্রেক্ষিতগুলাও  নানান ইস্যু আর এজেন্ডা বা প্রপাগান্ডার ফল।

Until  the lion learns how to write, every story will glorify the hunter.
hunter  hunted. এখানেও সেই দ্বি বিভাজন।

আমরা কে কোন দলে সেটা নির্ণয় খুব প্রাইমাল ফাইটফাইটিং ফর সার্ভাইভেলের হাইটাইম এখন।


ভাষান্তরকায়েস সৈয়দ
মূলজঁ ককতো
জাগরণ

সিংহের কবরমুখ
তরতাজা কুমিরের সর্পিল হাসি
নদীর জলের পাশাপাশি
মশলার লক্ষ লক্ষ দ্বীপপুঞ্জ
কত্তো সুন্দরবিধাব রাণীর পুত্র
এবং নাবিকটি

সুদর্শন নাবিকটি পরিত্যাগ করে
একটি ডানাওয়ালা মোহিনীনারী
দ্বীপের দক্ষিণে তার বিধবার বিলাপ
ব্যারাকের উঠানের শিকারীনারী

খুবই ছোট্ট একটি স্বপ্ন
ভোর হলো এবং ফানুস নিভেছে সবেমাত্র
জেগে উঠেছি আমরা
একটি বিচ্ছুরিত ধোঁয়াশা

পুনর্পাঠ

আনিসুল হক
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচণ্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুড়ে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক