Saturday, May 23, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৬

বুধবার ১৬ই বৈশাখ ১৪২৭, ২৯ই এপ্রিল ২০২০



কবিতা
বিনয় কর্মকার
মহরত

সুদীর্ঘ আশ্বাসে নিজাম কাকার আক্ষেপ;
কতো সিনেমা কতো সমস্যায় আটকে আছে!
অথচ; 
নায়ক-নায়িকা আরকিছু মিষ্টি হলেই হয়ে যায় শুভ মহরত! 

আমাদের ট্রাফিক সিগনাল দেখে-
হারিকেন-কুপির কথা মনে পড়ে।

ওদিকে ইলেক্ট্রিক আলো, 
অর্ডারী স্যাটেলাইট আকাশে উড়ছে;
টিভিতে এইচডি প্রযুক্তি!

আশিক আকবর
হাঁসদের যৌন জীবন

হংস ক‚লও সমকামী। যৌথকামী তো বটেই। আজকে পুকুরে
জলের কিনারে
এক মাদিকে আরেক মাদি ইচ্ছে মতো...
আরো কতিপয় মাদি হংস পাশে তার।
যেনবা না, চলছে গ্রুপ সেক্স।

আর দ্যাখো হংস দলের সামনে, হংস এক। প্রিয় হংসিনী নিআ নির্বিকারে ঠুকরাচ্ছে ঘাস। কে কাকে কি করলো তাতে কি আসে যায়? সময় মতো সেক্স টেক্স পেলেই হলো।

এটাই পৃথিবীর চিরকালের নিয়ম। পুকুর ঘাটের পানি ভালো করে জানে।

আবু জাফর সৈকত
সাঁতারের ব্যাকরণ

যে গ্রামের কথা বলছ সে গ্রামে আমার মা থাকেন
সবুজ পাতার ছাওনিতে বসে থাকেন অপেক্ষায়Ñ
ব্যাকরণ পাঠ শেষে আমি যখন চলে এলাম সাঁতার শিখতে
হরিণেরা তখন পাতার সন্ধানে
আয়ুষ্কাল মেপে মেপে আমিও আলোচনায় মগ্ন

বাধন অধিকারী
কবি ও কবিতার আড়ালে

কবি ও কবিতারা  শুনে যাও... তোমাদের অপব্যবহারে ব্যস্ত হাজারো অ-কবি। বিরুদ্ধে রুখে দাড়াও আবার পিছু হটাও তোমরা। কবিতার আড়ালে গুণগাও তুমি ও তোমার সাঙ্গপাঙ্গ। ব্যস্ত কবিরা শুধু চোখ বুলিয়ে চলে... মাঝে মাঝেই আগুন জ্বালানো রাজপথে নুয়ে পড়ে অস্থিরতায়। রাজপথের প্রতিটি পিচ এখনো রক্তাক্ত। প্রতিশোধের আগুনের এখনো পোঁড়ে-জ্বলে। জ্বালাও-পোঁড়াও আর কত? আর কত? সন্ত্রাসী-দাঙ্গাবাজ যখন পাঁজরে আঘাত করে... ক্ষণিকের জন্য ফিরে চাও আবার  ভুলে থাকার অভিনয়ে ব্যস্ত থাকো তুমি ও তোমার আদালত। কবি ও কবিতার আড়ালে এখনো চলে... হৃদয় ভাঙার কারসাজি।

ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: হোর্হে লুইস বোর্হেস
কারণসমূহ

সূর্যাস্ত, দিনগুলো ও প্রজন্ম
কোনটাই ছিলো না প্রথম
জলের সতেজতা আদমের গলায়
সাজানো-গোছানো জান্নাত
পাঠোদ্ধার করে চোখ আঁধার
নিচে নেকড়েদের ভালোবাসা
কথা। ষড়মাত্রিক। আয়না
হট্টগোল আর গর্বের টাওয়ার
ক্যালডিয়ার অধিবাসীর চোখে পড়া চাঁদ
গঙ্গানদীর অগণিত কালপরিমাপক মুহূর্ত
প্রজাপতি ও চুয়াঙ জু তাকে স্বপ্নে দেখায় যা
দ্বীপগুলোতে সোনার আপেল
বিচরণের গোলকধাঁধাঁয় পদক্ষেপ
পেনেলোপের অনন্ত আবরণ পর্দা
স্টোয়িকদের বৃত্তাকার সময়
মৃত-মানুষের মুখে কয়েন
দাড়িপাল্লায় তরবারির ওজন
জলঘড়ির জলের প্রতিটি ফোটা
ঈগল। স্মরনীয় দিন। সৈন্যবাহিনী
ফার্সালসের সকালে স্বেচ্ছাচারী সিজার
পৃথিবী জুড়ে ক্লেশের ছায়া
পার্সিয়ানদের বীজগণিত ও দাবা
দীর্ঘ অভিপ্রয়াণের পদচ্ছাপ
রাজ্যের তরবারির বিজয়
নিরলস কম্পাস। উন্মুক্ত সমুদ্র
স্মৃতিতে ঘড়ির প্রতিধ্বনি
কুঠার দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলেন রাজা
অকল্পনীয় ধূলো যা কিনা ছিলো সৈন্যবাহিনী
ডেনমার্কে নাইটিঙ্গেলের কণ্ঠস্বর
ক্যালিগ্রাফারের সূ² রেখা
আয়নায় আত্মঘাতীর মুখ
জুয়ার তাস। লোভাতুর সোনা
মরুভূমিতে মেঘের রূপ
ক্যালিডোস্কোপের প্রতিটি শৈল্পিক সজ্জা
প্রতিটি আক্ষেপ, প্রতিটি কান্না
পরিষ্কার করা হয়েছিলো এ সমস্ত জিনিস
নিবিরভাবে, যাতে মিলিত হতে পারে আমাদের হাত


অণুগল্প
তপুর রোজা
নুসরাত রীপা

মাত্র চারটা বাজে-ঘড়ির  দিকে তাকিয়ে বলল আট বছরের তপু।
জানলার পাশে রাখা টেবিলের ওপর বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলো ও। দেখছিলো বাবাকে দেখা যায় কী না।
আজ ও রোজা রেখেছে। ভোর রাতে জোর করে ঘুম থেকে তুলে মা ওকে ডাল-ভাত খাইয়ে দিয়েছে। 
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়েছিলো এগারো বছরের তনু। এই বয়সেই ও অনেক কিছু বোঝে।
লক ডাউনের কারণে বাবা যে হোটেলে কাজ করে সেটা বন্ধ। বাবার জমানো টাকা ফুরিয়ে গেছে।
বাসায় আজ চাল-আটা কিচ্ছু নেই। মা তাই সারাদিন রান্নাঘরে যায় নি। মাথা ব্যথা বলে বিছানায় শুয়ে আছে।
তপু কয়েকবার রোজা ভাঙতে চেয়েছে। কিন্তু মা সাড়া দেয়নি। বলেছে, রোজা রাখো বাবা। আল্লাহ খুশি হবেন।
তপুর কথায় ফিরলো না তনু। কেবল মৃদু স্বরে বলল, তোর বড্ড খিদে পেয়েছে, না?
হুমম। 
টেবিল থেকে নেমে তনুর পাশে বসলো তপু।
আপু, রোজা রাখলে আল্লাহ অনেক খুশি হয়- প্রশ্ন করে।
হুমম।
আল্লাহ খুশি হলে কী হয়?
আল্লাহ খুশি হলে মানুষ বেহেশতে যায়।
বেহেশতে গেলে কী হয়?
যারা বেহেশতে যায় তারা যা ইচ্ছে করে আল্লাহ তাদের  সব দেন।
খেলনা দেন?
হুম।
খাবার?
হুমম দেন।
পোলাও দেন?
হু
ফ্রাইড চিকেন?
হু
পান্তা?
হুমম। যা চায় মানুষ-
আপু, আমি বেহেশতে যাবো-
বোকা ছেলে!  মানুষ মরে গেলে বেহেশতে যায়- হেসে বলে তনু।
তনুর কথা শুনে চুপ হয়ে যায় তপু। এখন যে ভীষণ খিদেয় পেট জ্বালা করছে। কি জানি ও কবে বেহেশতে যাবে, কে জানে? মনে মনে ভাবে তপু।

পুনর্পাঠ

কেন লিখি : চেসোয়াফ মিওশ

...আমি শপথ ক'রে বলছি, আমার মধ্যে কথা নিয়ে কোনো হাতসাফাই কোনো চালাকি নেই আমি তোমাকে বলছি স্তব্ধতার ভাষায়, যে-ভাষায় কথা বলে কোনো মেঘ কিংবা গাছ... ...কাকে বলে কবিতা, যদি তা না-বাঁচায় দেশ কিংবা মানুষকে?... আমি সব সময় চেয়েছি আরো মুক্ত কিছু - কবিতা বা গদ্যহবার দাবিতে বন্দী নয় এমন কোনো কাঠামো যা লেখক ও পাঠক একে অপরকে বুঝতে সাহায্য করবে, কষ্টের সামনে তাদেরকে উদোম না করে দিয়েই কবিতার মূল ব্যাপারটার মধ্যেই একটা অসভ্যতা আছে, এমন জিনিস টেনে বের করা যা আমাদের আছে বলেই আমরা জানি না সুতরাং আমরা চোখ পিটপিট করি, যেন বাঘ একটা লাফ দিয়ে আলোয় এসে বসেছে এবং ন্যাজ নাড়াচ্ছে এজন্যই বলে কবিতা চলে এক শয়তানের কথায়- কিন্তু শয়তানটা আসলে একটা ফেরেশতা - এমন ভাবনা বাড়াবাড়ি বোঝা মুশকিল কবিরা এত দেমাগ পায় কই, যখন প্রায়ই তারা নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে করে লজ্জায় পড়ে কোন যুক্তিবাদী ভদ্রলোক এমন সব শয়তানের বাসা হতে চাইবে, যারা ভাব দেখাবে তারা নিজের ঘুরদুয়ারে আছে, আরামে আছে, যারা নানান ভাষায় কথা বলবে, যারা তার ঠোঁট বা হাত চুরি করেই সন্তুষ্ট না - চাইবে তার ভাগ্যটাকে নিজেদের সুবিধা মত বদলে নিতে ঠিক কথা মরবিড সব কিছুর বাজারদর এখন হালকা একটু উপরদিয়ে যাচ্ছে, হুম হ্যাঁ ভাবতে পারো আমি হালকা একটাজোক করলাম অথবা আরেকটা কৌশল বের করলাম আর্টকে আয়রনি দিয়ে তেলানোর এমন এক দিনকাল ছিল যখন লোকে জ্ঞানী জ্ঞানী বই পত্তরপড়ে দুঃখ কষ্টের দিন গুজরান করতো, এখন অবস্থাটা ঠিক সেরকম নয়, যখন সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিকগুলো থেকে টাটকা টাটকা হাজার হাজার কাজ পাতার মত ঝরে ঝরেপড়ছে এবং দুনিয়াটাও ঠিক যেমন মনে হয় তার থেকে আলাদা, আমরাও আমাদের কাইজ্জাকাটির মধ্যের আমরা থেকে আলাদা লোকেরা তাই নীরব সরলশুদ্ধতা বজায় রাখে - এবং তাদেরকে তাই আত্মীয়-প্রতিবেশিরা ভালো বলে কবিতা মনে করিয়ে দেয় এভাবে স্রেফ একটা লোক হয়ে থাকা কত কষ্টের, যখন কিনা আমাদের বাড়ি পুরোই খোলা, কোনো দরজায় কোনো চাবি নেই, অদৃশ্য অতিথিরা আসে যায় একেবারে যেমন ইচ্ছা তেমনÑ প্রথম যে আন্দোলন, সে হ'লো গান ক'রে ওঠা। অবাধ এক কণ্ঠস্বর, গিরিপ্রান্তর ভরাট-করা। প্রথম যে আন্দোলন, সে উল্লাস। কিন্তু তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এখন বছরগুলো রূপবদল ঘটিয়েছে আমার রক্তের আর হাজার-হাজার নীহারিকার জন্ম-মৃত্যু হয়েছে আমার শরীরে, আমি ব'সে থাকি, ধূর্ত আর রাগি এক কবি অভিশাপে কুঁচকে-যাওয়া চোখে তাকিয়ে, আর, কোনো কলমের ওজন কত সেটা হাতে ক'রে যাচাই করতে-করতে আমি ষড়যন্ত্র করি প্রতিশোধের। উদ্যত করি কলম আর সে ছড়িয়ে দেয় পাতা ডালপালা, মঞ্জরিতে ঢাকা, আর সেই গাছের গন্ধ মোটেই বিচক্ষণ নয়, কারণ সেখানে, আসল পৃথিবীটায়, এ-রকম গাছ তো গজায় না, আর আর্ত মানবতার কাছে সেই গাছের গন্ধ এক অপমানের মতো। কেউ-কেউ আশ্রয় খোঁজে নিরাশায়, যা কি না কড়া তামাকের মতো মিষ্টি, যেন বিনাশের সময়ে পান-করা এক গেলাস ভোদ্কা, অন্যদের আছে জরদ্গবের আশা, যৌনসাফল্যভরা স্বপ্নের মতো গোলাপি। আরো কেউ-কেউ শান্তি পায় দেশকে উপাসনা ক'রে, যা কি না দীর্ঘস্থায়ী হ'তে পারে, যদিও উনিশ শতক যতদিন বেঁচেছিলো তার চেয়ে মাত্র একটুখানি বেশি তার স্থায়িত্ব। কিন্তু আমার হাতে বর্তেছে এক বিশ্বনিন্দুকের আশা, কারণ আমি চোখ মেলেই দেখেছি; শুধু আগুনের ঝলক, নিধন আর ধ্বংস, শুধু অবিচার, লাঞ্ছনা আর হাম্বড়াদের হাস্যকর লজ্জা। আমারই ওপর বর্তেছে অন্যদের ওপর প্রতিশোধ নেবার দায়, আর নিজের ওপরও, কারণ আমিই ছিলুম সেই লোক যে সব জানতো কিন্তু সেই জ্ঞান থেকে যে নিজের জন্য কোনো মুনাফা নিংড়ে নেয়নি। ...সবসময়ই কথার অভাব থাকে আমার, আর কবি যদি হন তিনি যিনি কথায় আনন্দ পান তবে আমি কখনোই কবি নই... ...চেঁচিয়ে বলেন : "সংস্কৃতি !" আর "শিল্পসাহিত্য !", যদিও আসলে বোঝান সার্কাসের তুড়–ংবাজি... ...ক্ষমা কোরো আমাকে। আমিও ছিলুম তাদের মতো একজন, চক্রান্তকারী, রাত্তিরে যারা জনবসতির আশেপাশে লুকিয়ে-লুকিয়ে ঘুরতো। বেশি বেশি জেনেও, আমি ভান করেছিলুম অল্পেতেই বুঝি চ'লে যাবে... ...সাধুসন্তরাই, আমি ভেবেছিলুম, সারা জগতের কাছে উপহার নিয়ে আসেন, শুধুমাত্র ভাষার কাছেই নয়... ...যারা আদর্শ নিয়ে ব্যস্ত সেইসব অহংকারীদের জন্য সে রেখে যাবে সব প্রতীক। শুধু তাকিয়েই সে এঁকে দিতে চাইতো তার নাম- বস্তুর একেবারে মর্ম থেকে। যখন সে বুড়ো হ'য়ে পড়লো, সে তার তামাক-মাখা দাড়ি চুমরাতো : 'ওরা যেমন ক'রে জেতে, তার চেয়ে এভাবে হেরে যেতেই আমি পহন্দ করি।'... ...পাথরে খোদাই-করা হরফগুলোর চাইতেও যারা টেঁকসই তার ওপর আমাদের আঙুল বুলিয়ে যাওয়াই ঠিক কাজ ...বিরতির সময়, কাগজে-মোড়া একটা স্যান্ডউইচে কামড় বসিয়ে দেয়ালের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি আমি গোলগাল এক ধ্যানে জীবনটা ছিলো অসম্ভব, তবু তাকে স'য়ে-নেয়া গেলো। কার জীবন? আমার। কিন্তু এ-কথাটার মানে কী?...

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক