Friday, May 29, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪৬


শুক্রবার ১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৯ই মে২০২০





কবিতা
জাহিদুল মাসুদ
চোখের ভূগোল -১

অচেনা এক মহাবিশ্ব আচম্বিতে
তোমার কাব্যিক চোখের পাতায় খুলে গেছে
বেদনার মতো রাত্রির পটভূমিতে
জ্যোৎস্না জ্বলা একটি সমুদ্র চেয়ে আছে।

ক’ ফোটা সমুদ্র পড়লে ঝরে
অভিমান কিম্বা প্রতীক্ষার
ভালোবাসা রচিত হয় বিশুদ্ধ ভোরে
এ পৃথিবী স্বাদ পায় প্রথম কবিতার।


জাহাঙ্গীর জয়েস
বিপ্রতীপ

আমাদের নৃত্যরত দিনগুলো আমাদেরই উপহাস করে কুকুরের চেয়েও মন্দ জীবন দেখে তবুও আমরা রূপ চর্চায় ব্যস্ত: ডানের চুল বাঁয়ে নেই বাঁয়ের চুল ডানে ; ভ্রূপ্লাকের যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখি গ্লাসের ভেতর ; মিথ্যে হাসির ঝংকারে কাঁপিয়ে দেই সমস্ত শহর!
আহ- আনন্দ, বিবিধ জীবন...

মাহফুজুর রহমান লিংকন
জানুয়ারির মহুয়া

বিছানার পাশেই দেয়াল, তবুও
মহুয়া বাতাসে কাঁপুনি
জমে থাকা আলোর খেলা
ধোঁয়াশার শব্দে আঘাত
টিকটিকির সঙ্গম
বিছানাতেই ক্রুশবিদ্ধ যীশুর যন্ত্রণা!

কোমরের নিচে মাংসকণার চিৎকার
কেমন যেন
উপরে সরল মেঘ
ক্রোধের সাথে জটলা
যাজকীয় যত্নের অসভ্য প্রতিধ্বণি
অনুশোচনা মত অনুপ্রবেশ
মুসার আত্মকষ্ট নিয়ে শুয়ে আছি!

মা, নদীর মতো
কাঁদছেন, বেঁচে থাকার ক্লান্তি
চোখে প্রবাহিত
ধীর তত্ত্ব
সমস্বরে কেঁদে ফেলি!

RukaiyaPakhy
 “Inside out”

That day I dreamt my Lord
Staring at Him, I smiled.
But He didn’t care!
When I stopped smiling, He started laughing!
He laughed, laughed, laughed a lot and told-
‘Poor creature!
Sunnah, that you played!
Not enough, not enough, not at all!
Laugh like Me, it’s life saving!
Smiling is awesome but laughter’s Medicine!’

কবি ও কবিতা
ধানরঙের ঘ্রাণ: ব্যক্তিচেতনার সারৎসার
জারিফ এ আলম

কবিতা আটপৌরে জীবন থেকে বিশ্বমানবের কথা বলে। কবিতা কখনো মানুষকে ভাবায়, কখনো জাগ্রত করে সুপ্ত চেতনা, কখনো প্রতিবাদী করে তোলে। কখনো মগজে গেঁথে থাকে কারুকার্যময় পঙক্তিমালা। ‘ধানরঙের ঘ্রাণ অনু ইসলামের নানা বোধের সমন্বয়ে রচিত তেমনি একটি কবিতাগ্রন্থ। এখানে সমন্বয় ঘটেছে, ব্যক্তিগত চিন্তা, বিশ্বাস, স্মৃতিকাতরতা আর আছে নানা রকম টানাপোড়েনের কথা। কবিরা সাধারণত সৌন্দর্য পিপাসু। তার সেই প্রমাণ কবি অনু ইসলামের ‘ধানরঙের ঘ্রাণ কবিতাগ্রন্থেও পাই। বইটির প্রথম কবিতা সেই সৌন্দর্যবিষয়ক। তিনি কবিতাটিতে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য সংরক্ষণের কথা বলেছেন এভাবে,
সমুদ্রগর্ভের উচ্ছ্বাস ছুটে আসছে-
বীজমন্ত্র ভেঙে; ঝিনুক হওয়ার লোভে
দেহ-স্নানঘরে রক্তচিহ্নের সৌন্দর্য, জেগে-
উঠলে; ফুটফুটে ঝিনুক খেলবে স্বপ্নদৌড়।

ভাঙনপ্রিয় সময়ের; হাতে হাত রেখে চর্চিত হোক
সৌন্দর্যবোধ
চলো, সংরক্ষণ করি; পৃথিবীর তাবৎ
সৌন্দর্যজ্ঞান।

ভালোবাসা বিষয়টিকে কবি পুণ্যের সহযোগ করে নিজস্ব চিন্তা তুলে ধরেছেন। এতে করে কবির ভালোবাসা সার্বজনীনতা লাভ করেছে। আর তিনি এই ভালোবাসাকে অনাগত আগামীর জন্য রেখে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তার ‘পরিব্রাজক কবিতায়। তিনি বলেছেন,
জানি, ভালোবাসা-শুধু পুণ্যযোগে বিশ্বাসী
হয়ে ওঠে। তাই পরিভ্রমণ শেষে- পূতগন্ধ
রেখে যেতে চাই আগামী ভালোবাসার জন্য।

এসব পরিব্রাজক দিন গ্রন্থিত হোক জীবন-
সংগ্রহশালায়। ইতিহাস, পৃষ্ঠা খুলে দেখবে
আমরাও পরিব্রাজক ছিলাম; পৃথিবীমঞ্চে।

মানুষের স্বল্পায়ুর জীবনে নানা রকম চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। আর সবাইকে নিজের চরিত্র নিয়ে যাপন করতে হয় গোটা জীবন। এখানে শেক্সপিয়ার মানুষকে পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা-অভিনেত্রী হিশেবে আখ্যায়িত করেছেন এভাবে, All the world's a stage, and all the men and women merely players. কবি অনু ইসলাম তার ভাবানাকে চিত্রায়িত করেছেন তার মতো করে। তিনি ‘প্রেক্ষাগৃহ নামক কবিতায় বলেছেন,
রূপালি পর্দার বিচিত্র দৃশ্যেও কোণে
আমিও নগন্য এক কীট-চরিত্রের ভমিকায়-
জেগে আছি; স্বল্পায়ু দৃশ্য নিয়ে।

কবি যাপিত জীবন, ক্রমাগত ছুটে চলা, সর্বোপরি এই বেঁচে থাকাকে প্রহসহ হিশেবে দেখেছেন। কেননা বেঁচে থাকাটাই যেখানে চ্যালেঞ্জ হিশেবে দেখা হয়, সেখানে জীবনের অন্যান্য কার্যপ্রণালী লক্ষ্যহীন, ক্রমাগত অদৃশ্যের পানে ছুটে চলা। তাই কবি প্রহসন কবিতায় বলেছেন এভাবে,
জোছনার আড়ালে রক্তছোপ দেখে কেটে যাচ্ছে ক্ষণ
নৈঃশব্দ্যের হাতে হাত রেখে-
একটি বাক্য উচ্চারিত হতে থাকে ‘বেঁচে আছি এইতো
আহা- এই প্রাসঙ্গিক প্রহসন।

ধানরঙের ঘ্রাণ' নামক কবিতাগ্রন্থের একই নামের নামের কবিতায় কবির ব্যক্তিগত হতাশা  ফুটে উঠলেও শেষপর্যন্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ যেনো জীবনের বেঁচে থাকার আরেক আহ্বান সেখানে তিনি বলেছেন,
জঠরযন্ত্রণা বোঝে প্রসূতিমন; প্রেম বোঝে না
ঠুনকো জীবন- মন্দ কী ছুঁড়ে ফেলে দিলে
হেমন্তকন্যার দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে ধানরঙের ঘ্রাণ।
জয়ধ্বজা উড়িয়ে মনোকাশে কী অদ্ভুত এক আনন্দযাপন...

জীবনকে কবি বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় উপস্থাপন করেছেন। আর কবিতায় তুলে এনেছেন তার দেখা ও  চেনা জগৎ। আর তার দার্শনিক মনোভাবসুলভ  চিন্তাও লক্ষ্য করি ‘এসো পাঠ নেই একটি জীবন নামক কবিতায়। তিনি বলেছেন,
সন্ধ্যা; দেখো- গোলাপের ডাল অসংখ্য কাঁটাযুক্ত
কাঁটার আঘাত সযতনে আগলে রাখতে হয়!
একটা জীবন; আরপকটা জীবনের দিকে তাকিয়ে থাকে-
পর্যটনপ্রিয় দৃষ্টি নিয়ে সামগ্রিক এই খেলায়
জীবন গল্পগুলো ইঙ্গিতে রেখে যায়-
মানুষ নিজেই নিজের কাছে ফিরে আসে আপন ব্যঞ্জনায়।

মৃত্যুবিষয়ক ব্যক্তিগত  ভাবনা নিয়ে কয়েকটি কবিতা বিশেষভাবে লক্ষণীয় যেমন, আগুনরঙ, মৃত্যুরপূর্ব-রাত, তাসের ঘর, প্রস্থান প্রভৃতি। ‘আগুনরঙ, কবিতায় কবি বলেছেন-
মৃত্যু; ঢেউনৃত্যের খেলায় মত্ত এক অভিশাপ!
উঠা-নামা নিয়ে ব্যস্ত-
কাঙ্ক্ষিত অন্ধকার খোঁজে; নিজস্ব উপত্যকা।

কোন পাসপোর্ট হাতে নেই কবিতায় কবি  সমগ্র পৃথিবীকে একটি মানচিত্র হিশেবে কল্পনা করেছেন। অর্থাৎ, কবিমানসের বিশ্বজনীন রূপ আমার এখানে দেখতে পাই। কবিতাটি বিশ্বনাগরিক হবার লক্ষণ প্রকট। তাই তিনি বলেছেন,
চলো- খুলে দেই অসহ্য কাঁটা-তার
পাসপোর্ট, পাসপোর্ট খেলা মুছে যাক ম্যাজিক দৃশ্যের          
মতো
অ আ ক খ প্রমুখ বর্ণমালার কসম লাগে
সমগ্র পৃথিবী একটাই মানচিত্র হয়ে উঠুক
পাখিসব নিজ নিজ স্বাচ্ছন্দ্যে উড়াবে মনের ডানা
যদিও পৃথিবী প্রবেশের কোন পাসপোর্ট, কারো হাতে নেই; সত্য।

ধানরঙের ঘ্রাণ কবিতাগ্রন্থ কবি অনু ইসলাম নানা ভাব ও ভাবনার কবিতা সন্নিবেশিত করেছেন। যা আমাদের  বিভিন্ন বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট করে তোলে। ব্যক্তিগত চিন্তার কথা বলতে গিয়ে কবি ‘গভীর আত্মপোলব্ধির নাম কবিতা শিরোনামে ভমিকায় বলেছেন, ‘কবিতা; জীবনের এক একটি ধারণকৃত ছবি। যেখানে পরিবার, রাষ্ট্র, বহির্বিশ্ব, প্রেম, প্রকৃতি এবং সমকালীন ভাবনা এমনকি ব্যক্তিগত নৈঃশব্দ্য প্রতিটি বিষয় আলাদাভাবে কবিতা পৃথিবী নামক ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কবির এই কথামালা কবির কবিতা বুঝতে সহায়ক হিশেবে কাজ করবে।

কবি অনু ইসলামের ‘ধানরঙের ঘ্রাণ কবিতাগন্থে নানা স্বাদের ৬৮টি কবিতা ঠাঁই পেয়েছে। পাঠক কবিতাগুলো পড়ে নানা ভাবনাচিন্তার মধ্যে পরিভ্রমণ করতে পারবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক