Saturday, May 30, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪৭


শনিবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩০ই মে২০২০





ক বি তা
মীর সাহাবুদ্দীন
কালের কলঙ্ক

শহরে অনেক কবি আসে কেউ আবার ফিরে গ্রামে
কর্ম সংসারে
রাজনৈতিক মাঠে
প্রেম পাঠে
হেঁটে যায় স্পর্শ থেকে জ্ঞানের ভিন্ন শাখায় অলস সময়ে

মানুষের ব্যথায় আন্ধার উপর-নিচ
তিরস্কার ভেঙ্গে যে এগিয়ে যায়...
মূলত কবিতায় যাকে খেয়ে ফেলে
অনেক অমিলে
ঘৃণার প্রান্ত হতে
ধার্মিক থেকে
মৃত্যুর পর
মন্দ বীভৎস মানুষের যুগ হতে আলোর দিকে...
যেন সুন্দর দালান বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা

আমরা কেবল মৃত্যুর পথিক
আমাদেও চোখ চাকচিক্য, নরম মাংসে এবং বিকারে
লবন চিনি মিশ্রণ করে পানি ঢালার মত।
নেটওয়ার্ক কমিয়ে নিচ্ছে আয়ু
দীর্ঘ বাঁচার ইচ্ছেই বা জনার
সুইসাইডের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে
সব পেয়ে গেলে চাহিদা নতুন রূপ নেয়
অধিক হতাশা নিয়ে মৃত্যু থেকে যে বেঁছে যায়
আলোচিত হয়ে একদিন টকশো জমায়
জন্মায় গল্প হতে গল্প
সংগ্রাম একটি সুখ
তিরস্কার কুসংস্কার পৃষ্ঠে যাবার-
রুলারের মত নিজ থেকে নিজকে
ভিন্ন মানুষের ভিন্ন গল্পে
ইতিহাসে, যুদ্ধে
আর আমাদের থেকে যায় কালের কলঙ্ক।

অনির্বাণ ঘোষ
রূপসী

তুমি প্রশান্ত চিরদিন
আমি অস্থির প্রতিদিন,
দৈনিক বেড়ে চলে মুগ্ধতার প্রহর...
মেঘখানি উড়ে যায়,
রঙিন সন্ধ্যা ডাক পাঠায়
...অদৃষ্ট হাসে।

তার কথা রাখবে না কেউ আর
বাদল দিনে জল ঝরে বারবার, নিরুদ্দেশ...
তবু জোছনা মিলেমিশে একাকার,
পাহাড়চড়োর সাথে।।

সায়ন্তনী হোড়
প্রকৃতিগত চিহ্ন

ছায়ার ভেতর থেকে আঙুল সরে আসছে
ক্ষোভ ভেঙে পড়ছে আকাশের গায়ে
চুমুক দেওয়া মুহূর্তেও কোণায় আছড়ে পড়ছে
ঘনীভ গোধূলি

জলীয় শাঁখের উপর এখনও উলুধ্বনির চিহ্ন লেগে আছে, একটা মৌমাছিও সৌরভহীন আকুলতায় ভুগছেনা আজ। ঘাটের ওপাশে ফেলে আসা চিন্তাভাবনা পচে গেলে আমার আলমারি থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়
তেলচিটে বিকেলের ম্যাপে আবার রামধনু আঁকি, যদিও এখন আত্মশুদ্ধির পথে আর কোনো বাধা নেই
শুধু রক্ত চুষতে ব্যস্ত অবহেলার কথোপকথন।

সরোজ মোস্তফা
শরতের কবিতা-

খাল পাড়ের ছুটন্ত জোনাকির মতো কৃষক
বাড়ির চাঁদ দেখ খুঁজে নেয় মান্দার ফুলের দীঘি, বৌচি খেলা মাঠ।
জেনেছি এই সংসার বিয়ার ক্যানের বুদবুদ!
সন্ধ্যা তেলেঙ্গার ডাকে কতো বিকাল যে ছিদ্র হয় জিজ্ঞাসায়!
সবাই কি খুঁজে পরশির লগবই!
সর্বত্র একাকিত্বের রঙ! জীবন চোখ দশদিক থেকে ডাকে
দেখ, বন্দনার ঘন্টি ছাড়া আশ্রমের কাক সূর্যকে একাই ডেকেছে জল-কলমির ভোরে।

ভাতের ফুটন্ত হাড়ি দেখে ঈর্ষা কেন!
খবর না পাঠালেও পলাশের ডাল ঘেঁষা হাওয়াতেই
পৌঁছে দিই আমার আয়না!

রাস্তা পেরুনো সাথীকে কে ডিলিট করে।
ট্রেনের জানালা থেকে দূরে খাল পাড়ে
আপন গাছের তলে দরদি নিঃশ্বাস!

শরতের কবিতা-

জীবন শেখাচ্ছে শরতের চাঁদ! সার্জারির টাকা জোগাড় না হলে
যে ভাবে বাড়ে ক্যান্সারের ফোঁড়া ঠিক সে ভাবেই, কবরের ঘুম ছাড়া
আমরা কিচ্ছু শিখিনি! ...

শান্তম
জল

মন দিয়ে জলের মনের কথা শুনে
এই পাড় জলকেই কানে কানে বলে
ভালোবাসা আসলে জল। জলের সহজ
যেমন সহজ নয় হয়ে ওঠা তেমন সহজ


মূল: : জঁ ককতো
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
সার্কাসের শিশু

বংশীবাদকের একজন, পোলকা
চাবায় নরম মিঠাই, কড়া মিষ্টির চকলেট, পুদিনার লজেন্স
অবকাশ; খুরের গন্ধ
চমৎকার রেশমী কাপড়ের উপহাস পাখি নিহত হয় ড্রামের বাজনায়
হামবার্গ আঙুর, বিয়ারের গ্লাস, রাস্পবেরি ফলের রস
নিজের হাত পাখি ধরার ফাঁদ
অন্তর্বর্তী সংগীত, নীল ইউনিফর্ম
মৃত্যুর প্রশংসা গেয়েযায় ফাঁদ

মু ক্ত দ্য
চুপকথা
আতিকুর রহমান হিমু

অনেকগুলো দৃশ্য একটা শব্দের ভিতর আটকে পরে। শুরু হয় ঘোর, কেমন যেন একটা জ্বর-জ্বর ভাব; শরীরে, রক্তে। নিজের সাথে কথাবলা, নিজের মুখোমুখি দাঁড়ানো। হৃদকম্পন বেড়ে যায়; বুকের ধুকপুক। অদ্ভূত হীম আলো ডানা মেলে বোধে। এক চমকে সবগুলো পালক ঝরিয়ে মিলিয়ে যায় ধূসরে; অন্ধকারে। জলের শব্দ, পাখির পালক, মাটির ঘ্রাণ, ফুলের সুভাস, নর্দমার পাশের অশ্লীল বাতাস, ডাস্টবিনের আশটে গন্ধ। অনেকগুলো মানুষ, উপমানুষ, তাদের জোড়ায় জোড়ায় চোখ, চোয়াল, তাদের শরীরের রঙ, চুলের ভাঁজ, কথা বলার ধরণ, তাদের বিচিত্র রক্ত। কয়েক জন নারী তাদের চিবুক-চুল-স্তন, তাদেরকে ঘিরে থাকা লোককথা, তাদের চোখের অতলে লুকিয়ে রাখা রূপকথা। সব যেন কেমন একটা ছবি হয়ে যায়। বায়োবীয় ক্যানভাসে বিচিত্র সব রঙ, বিচিত্র শৈলী, শিল্পকথার দীর্ঘ ইতিহাসের মতো গল্প। গল্পের ভেতরের গল্প, গল্পের বাইরের গল্প। সব যেন কয়েকটি শব্দের একটা পংক্তির মধ্যে আটকে পরে। শুরু হয় ভাঙচুর ভেতরে ভেতরে; বাতাসের শব্দে, জলের শব্দে, মেঘ মানুষের শব্দে, নদীর বয়ে যাবার শব্দে, কান্না চোখ সমুদ্রের শীল্পিত শব্দে- আলো অথবা অন্ধকারের একটা ট্রেন প্রকাণ্ড শব্দে বোধের ভেতর দিয়ে ডুকে পরে হৃদপিণ্ডে। রক্তে রক্তে ছড়িয়ে পরে একটা গভীর অসুখ। এমন সব অসুখ কি লিখিয়ে নেয় কবিতা?
দৃশ্যালয়ে ভেসে ওঠে অতীকায় কোন কোন দুপুর। স্কুল ফেরা শৈশব, দুলে ওঠা সাঁকো, শৈশব বা তারও আগেকার সময়। মাতৃগর্ভের কাল আঁধারের যাপন চিত্র; বা তারও আগের পিতার প্রজাপতি পর্ব। আবার ফিরে আসা প্রেমিকার গ্রীবার ভেতর, পার্কের নির্জন বেঞ্চিতে, চৌরাস্তার জ্যামে, নগরীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুখিসুখি চেহারার বারে। ব্যাপনে-সাঁতারে ঘুমিয়ে পরা। কোন এক গ্রাম, ঝিঁঝিঁ ডাকা দুপুর, একজোড়া ধূসর ঘুঘু, কয়েকটা চড়ু, সবুজ ঘাসে ঢাকা পথে পথে হেঁটে যাওয়া। হঠাৎ দূর্বার ভেতর থেকে লাফদিয়ে উঠে আসা খরগোসের মতো বেড়িয়ে পরে হারানো প্রেমিকের অবয়ব। হেঁটে যাওয়া এক সাথে জলের গভীরে। এক টুকরোআকাশ, কয়েকটা ছেড়া ছেড়া মেঘ; অপেক্ষমান চৈত্রের চৌচিরভমি। জলেরতৃষ্ণা। মস্তিষ্কে আলো আর আঁধারের দ্বন্দ্ব; কিছু রেখা, রূপ-অরূপ। প্রার্থনায় মগ্ন হয় চোখ। জলের অপেক্ষায় অদৃশ্য ল্যান্ডস্কেপ; কখন নামবে ঝুমবৃষ্টি?
কবিতা জীবন একই জিনিসের দুই রকম উৎসারণ
কবিতার কথা প্রবন্ধে জীবনানন্দ দাশ বলেন: ‘কোন প্রাক নির্দিষ্ট চিন্তা বা মতবাদেও জমাটদানা থাকেনা কবির মনে-কিংবা থাকলেও সেগুলোকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করে থাকে কল্পনার আলো আবেগ; কাজেই চিন্তা সিদ্ধান্ত, প্রশ্ন মতবাদ প্রকৃত কবিতার ভিতর সুন্দরীর কটাক্ষের পিছনে শিরা, উপশিরা রক্তের কণিকার মতো লুকিয়ে থাকে যেন। লুকিয়ে থাকে; কিন্তু নিবিষ্ট পাঠক তাদের সে সংস্থান অনুভব করে; বুঝতে পারে যে তারা সংগতির ভিতর রয়েছে, অসংস্থিত পীড়া দিচ্ছেনা; কবিতার ভিতর আনন্দ পাওয়া যায়; জীবনের সমস্যা ঘোলা জলের মূষিকাঞ্জলির ভিতর শালিকের মতো স্নান না করে বরং যেন করে আসন্ন নদীর ভিতর বিকেলের শাদা রৌদ্রের মতো, সৌন্দর্যও নিরাকরণের স্বাদ পায়!’
সৌন্দর্যের স্বাদ কেমন? প্রশ্নের ভেতর দিয়ে আবার তলিয়ে যাওয়া গভীরের গভীরে। নন্দনতত্ত¡কে কি কোন সংজ্ঞায় আটকানো যায়?
শ্যাওলা লাগা সব মুখ জলের অতল থেকে উঠে আসে; আবার হারিয়ে যায়
জলের তলে। শান্ত দীঘিতে ঢিল ছুড়লে যেমন ঢেউ ওঠে আবার মিলিয়ে যায় জলজ ধ্যানে। মস্তিষ্কের গভীর থেকে উঠে আসা হাজার হাজার বছর আগেকার সব স্মৃতি। প্রস্তর যুগের পাহাড়ের গায়ে আঁকা আঁকিবুকি, অরণ্যচারী জীবন শিকারের দৃশ্যবলী; জ্যোৎস্না রাতের জল কথা পুরুষ রমণীর পরস্পরের ভিতর ডুকে পরা। নদীর কাছাকাছি আসা জলের সাথে নেমে যাওয়া; মানচিত্র বদল। পলিমাটির ঘ্রাণে ঘুমিয়ে পরা রূপকথার সবুজে। বিগত শীত আর ঋতুবর্ষা, কয়েকটা বসন্ত; অতীত থেকে উঠে আসে এক টুকরো রাত। গাঙচিলের ডানা ঝিলধরা আকাশ, দূরের সব তারা, তারাদের মৃত দৃশ্য; মৃত তারাদের যাপিত জীবন। জীবন বদল। রাতের সব রঙ, মেঘ শিশির। শিশির ভেজাঘাস, ঘাসের গন্ধ, হলুদ-নীল-বেগুনি ফুল। ঘাসফুলের ভিন্ন ভিন্ন রঙ ভিন্ন ভিন্ন কারুকাজ। যেন মগধ থেকে কৈলাশ-চাম্পা-কৌশাম্বী-মহামতী পেরিয়ে বুদ্ধের খুঁজে পাওয়া শ্রাবস্তির জেতবন। তারপর আবার ডুবে যাওয়া নিজের অতলে। ধূসর অতীত থেকে ব্যথিত বর্তমানে নয়, সংকীর্ণ ভবিষৎ নয়; এর বাইরে কোথাও চলে যাওয়া। হয়তো কোনো এক শূন্যতা সময়ের হিসেবে যা ধরে রাখা যায়না। এই যে লিখতে লিখতে যাওয়া; মূলত নিজেকেই লিখা। সামন্ত যুগে মানুষ দেবতাদের যে গল্প লিখতো পদ্যে-শ্লোকে তা মূলত মানুষের গল্প। আর প্রাককাল থেকে চলে আসা শয়তানের উপকথা, তাও মানুষের। গীতায়শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কর্মফল ত্যাগ করতে বলেছেন। গৌতমবুদ্ধ জানিয়েছেন নিবার্ণের পরম আনন্দ। শূন্য হয়ে মানুষ যখন ঈশ্বরকে কল্পনা করেন তখন মূলত সে নিজেকেই খুঁজে পায়- রূপে-অরূপে। এই রূপ-অরূপ চিত্রায়ণের আকাঙ্খায় কবি ডুব দেন নিজের অতলে।
আলো-আঁধারের অতল থেকে একটা শ্যাওলা লাগা ছায়া এসে দাগ কেঁটে যায় পাণ্ডুলিপিতে। কখনো হয়তো বা কবিতা হয়ে ওঠে তবুও একটা আকাঙ্খা থেকে যায়; পূর্ণতায়। নিজের অতলের নিবিড় শূন্যতাকে ধরার জন্যই মানুষ নতজানু হয় নিজের কাছে; মগ্ন হয় শিল্পের আলো অথবা আঁধারে.....
একটা উজ্জ্বল পঙক্তি জন্ম নেয়। একটা কবিতার ভ্রমণ বাড়তে থাকে বোধে।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক