সোমবার ৭ই বৈশাখ ১৪২৭, ২০ই এপ্রিল ২০২০
মীর রবি
পুরুষ
উত্তর খুঁজে ফেরা কজন নাবিক,
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে করতে ভুলে যায় রক্তপাতের ইতিহাস। যুদ্ধ ও খুনে ধ্যানমগ্ন ঋষি,
তাওয়াফে ফেরা মুসাফির পুরুষের গল্প বলে। ইয়া আল মুমিনুন,
সৃষ্টি ও ধ্বংসের ভেতর স্বয়ম্ভুর,
মহান পুরুষ নফসে হেজাজ,
আত্মস্বীকৃতির মাঝে প্রশান্তি খোঁজে এবং বিশ্বাস করতে থাকে মালিকানা তার,
তাবত সৃষ্টি তাদেরই অধীন
রোদ্দুর রিফাত
বিভীষিকাময়
যাদুকাটা নদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাত,
পাখি নামক প্রায় দুই হাজার শ্রমিক
ঠোকরে ঠোকরে খেতো সে ভাত
অথচ করোনা ভাইরাসের বিভীষিকাময় অবস্থার
শিকার হয়ে ক্ষুধার্ত পেটে শক্তিহীন পাখার
পালক ফেলে ফিরছে নীড়ে অসহায় চোখ নিয়ে
অথচ পুত্রের মা অপেক্ষায় ছিলো কমলা রঙের
কোমল বিকেলের তিনশো-পঞ্চাশ টাকার আশা করে
কিন্তু নিয়তির লেখা দুইশত টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে
আধ-ক্লান্ত দেহ নিয়ে নিরিবিলি নরম নদীর মতো।
সেবক বিশ্বাস
গোলাপের বাগান এখন বর্জ্যরে ভাঁড়ার
ওরা যেভাবে রেখে গিয়েছিল পৃথিবী,
আমরা পারিনি রেখে যেতে সেই পৃথিবী উত্তরসূরিদের হাতে।
গোলাপের বাগান এখন বর্জ্যরে ভাঁড়ার!
নন্দন পৃথিবী আমরা ভরিয়ে দিয়েছি অসহ্য বিষে!
বিশুদ্ধ ফুসফুস এখন পোড়া সভ্যতার ছাইদানি!
সব সবুজ কাটা গেছে লোলুপদের পৈশাচিক করাতে!
পেছনের পৃথিবী আর নেই!
নদীগুলো শুকিয়ে গেছে অনন্ত অভিমানে!
অরণ্য এখন পিশাচের ফুয়েল-
পাখিরা উড়ে গেছে অভিশাপমুখে।
বহুদিন হলো বাবার দেখানো সেই আকাশ দেখি না আর-
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে অসীমের নীল,
রাতের তারামুখ মুছে গেছে দারুণ দূষণে!
উত্তাপে উত্তাপে আমরা গলিয়ে ফেলেছি বরফের পাহাড়!
কয়েক বসন্ত পরেই জানি ভেসে যাবো মরা মাছের মতো-
জলের পৃথিবীতে তখন ডুবসাঁতার খেলবে
জলের জীবেরা!
পরিচ্ছন্ন তরলের তলে আমরা প্রতœতত্ত¡ হবো বিলুপ্ত ডাইনোসরের মতো!
নতুন কোনো হোমোস্যাপিয়েন্স হয়তো খুঁজে নেবে আমাদের অর্বাচীন খুলি
কোনো এক কালে তার ক্রমগবেষণায়!
হাসনাইন হীরা
সময় বলতে কিছু নেই
আমার ব্যক্তিগত ঘড়ি
সাতটার ঘরে গিয়ে আটটার ঘন্টা দিয়ে বসে।
আমি ১ ঘন্টা আগালাম না পিছালাম!
ভাবতে ভাবতে
আরো ১ ঘন্টা পেরিয়ে যায়
আমার ১ ঘন্টা আর মাপা হয় না।
ভাবি,
আরো ১ ঘন্টা সুযোগ পেলে
বসে যাবো দশটার কোটায়;
অথচ আমার দশটা দশদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
অম্বরীশ ঘোষ
ব্যবধান
থিতিয়ে মাঠ পার হচ্ছে
গানওয়ালা
চোখের জলের গতিপথে ছাইস্তুপ
জন্মের সংজ্ঞা হাতড়ে ফিরছে অন্ধকার
চেনা দূরত্বে সাবলীল হচ্ছে
কাক ও কাকতাড়–য়া
অঞ্জনা দেব রায়
তোমাকে দিলাম একমুঠো শিউলি
তোমার সাথে এক আকাশ তারা দেখব বলে তোমার হাতে তুলে দিলাম আমার সমস্ত রাত ।
তোমার কণ্ঠে পরিয়ে দিলাম
আমার সুরের মালা,
রামধনুর সাত রঙ মুছে দিয়ে নিজের মনের রঙে
রাঙিয়ে দিলাম তোমাকে।
কোনো অজানা ভয়ে আমাকে যতেœ
তুলে রাখি
তোমার জন্যে।
আজ না হলেও কাল তুমি আসবে,
ভালোবেসে কাছে এলে একমুঠো শিউলি দিয়ে বলবো
ভালোবাসি,
শুধু তোমাকেই ভালোবাসি ।
গল্প
ব্ল্যাকমেইল
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
অঞ্জলি,
ভাতটা খেয়াল রাখিস। গলে না যায়। গলে গেলে তোর দাদাবাবু মুখে তুলবে না।
তুমি দাদাবাবুকে এতো ভয় করো কেন?
কেন?
তুই জানিস না!
রেগে গেলে তার একেবারেই মাথার ঠিক থাকে না। যা তা বলতে থাকে,
জিনিসপত্তর ভাঙতে থাকে। তুই দেখিস নি?
তা বটে। ঠিকই বলেছ। পুরুষ মানুষের একটু রাগ ভালো-
সংসারের সবাই একটু ভয় না পেলে চলে?
কিন্তু তা বলে এতো রাগ। এটা কিন্তু ঠিক নয় বৌদি। আমার বর আমাকে একবার এমন চড় মেরেছিল,
আমি আর কোনদিন তার মুখদর্শন করিনি।
সেকি রে?
কী বলছিস?
এই তো সেদিন বরের সঙ্গে সিনেমায় যাবি বলে বেরিয়ে গেলি। সে কি বর না অন্য কেউ?
ঠিক বলেছ বৌদি আমি মিথ্যে বলেছিলাম। আমি সূদনের সঙ্গে সিনেমায় গেছিলাম।
কোন সূদন?
যে অটো চালায়?
অটো তো এখন চালায়। ওদের একটা ওষুধের দোকান ছিল বাজারে। এখনও আছে। কিন্তু ভাইয়েরা সবাই মিলে ওকে দোকান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ও নাকি হিসেব নিকেশ গÐগোল করে ফেলে,
তাই। আসলে সেসব কিছু নয়। সরল সাদাসিধে মানুষ হলে যা হয় আর কী!
সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার মতলব।
যাই বল বাপু!
অন্য পুরুষ মানুষের প্রতি এত দরদ ভালো না।
ঠিক বলেছ বৌদি। এটা ভাল না। আমি আর যাব না।
না না আমি তা বলিনি। সেটা তুই যা ভাল বুঝবি করবি। তা বরের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই?
সেটাও তো ঠিক নয়। যোগাযোগ কর।
হ্যাঁ বৌদি,
তুমি যখন বলছ করব।
তবে যদি আবার চড়টড় মারে,
সাবধানে থাকিস। হিতে বিপরীত না হয়ে যায়।
ঠিক বলেছ বৌদি। আমি তাহলে আর ওর কাছে ফিরব না।
না না আমি তা বলিনি। সেটা তুই যা ভাল বুঝবি করবি। তা বরের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই এটাও তো ঠিক নয়। তাই বলেছিলাম যোগাযোগ কর। আমারও তো তোর দাদাবাবুর ঘর করতে ভাল লাগে না । এত মেজাজ। কিন্তু আমি তে কোনদিন তোর দাদাবাবুকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারব না।
সেতো বটেই। তুমি আর দাদাবাবু থাকলে তাকে ছেড়ে যাও কোথায়। কেবল দাদাবাবু না থাকলে,
তোমার সেই যে ছোটবেলার বন্ধু আছে তাকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাও কয়েক ঘণ্টার জন্য।
কার কথা বলছিস?
বিজন?
তাঁর সঙ্গে আবার কোথায় ঘুরতে গেলাম?
তাই তো,
তুমি তো কোথাও যাওনি। আমি বোধহয় তোমার টেলিফোনের কথাটা ভুল শুনেছিলাম। সেই যে কাকে বললে নিচে দাঁড়াতে। তারপর গিয়ে একটা গাড়িতে উঠলে। তবে তার নাম বিজন কিনা আমি জানি না।
যাই হোক দাদাবাবুকে এসব নিয়ে কোনদিন কিচ্ছু বলবি না।
খেপেছ। দাদাবাবুকে কিছুই বলব না। বললেও বলব তুমি বিজন দাদাবাবুর সঙ্গে কোনদিন কোত্থাও যাওনি।
না না তোকে কিচ্ছু বলতে হবে না কাউকে। তুই কেবল চুপচাপ থাকবি।
নিশ্চিন্ত থাকো বউদি। কাউকে কিচ্ছু বলব না। তবে আমার মাইনেটা যদি একটু বাড়িয়ে দাও সামনের মাস থেকে।
অবশ্যই বাড়িয়ে দেব। ও নিয়ে ভাবিস না। তবে ধর তোর বর যদি কোনদিন খবর পায় যে তুই সূদনের সঙ্গে সিনেমায় গেছিস,
তবে কী হবে?
তুমি বলে দেবে নাকি?
না আমি বলব না ঠিকই,
কিন্তু ধর যদি জানতে পারে।
ঠিকাছে ঠিকাছে,
আমার বেশি মাইনের দরকার নেই।
মূল:
পাবলো পিকাসো
ভাষান্তর:
কায়েস সৈয়দ
দুপুর
পাম গাছ পাহারা দেয় ক্লান্ত গ্রামাঞ্চল। লাল দুপুরে কমলাগাছ বহন করে সোনালী-সুবর্ণ থোকা থোকা সূর্য। নীলিমা থেকে সাইপ্রেস বৃক্ষ পরিষ্কার করে মেঘ যেখানে ঝলমল করে পোকামাকড়ের দল,
ভাস্বর সূর্যের জ্বলজ্বলে জন্ম। কল্পিত ফুলের গন্ধ দিয়ে শুনি ছন্দোময় নৈঃশব্দ্য এবং আমার আত্মা আকৃষ্ট হয় গভীর ইচ্ছেগুলির প্রতি,
হরহামেশা মনে আসে যা ছায়ার শীতলতায়।
পুনর্পাঠ
আল মাহমুদ
কবিতা এমন
কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান
আমার মায়ের মুখ;
নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন
আব্বার ফিরে আসা,
সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি-রাবেয়া রাবেয়া-
আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!
কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী
কুয়াশায়-ঢাকা-পথ,
ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার দহন
পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ
মাছের আঁশটে গন্ধ,
উঠানে ছড়ানো জাল আর
বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর।
কবিতা তো ছেচল্লিশে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর
ইস্কুল পালানো সভা,
স্বাধীনতা,
মিছিল,
নিশান
চতুর্দিকে হতবাক দাঙ্গার আগুনে
নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসা অগ্রজের কাতর বর্ণনা।
কবিতা চরের পাখি,
কুড়ানো হাঁসের ডিম,
গন্ধভরা ঘাস
ম্লান মুখ বউটির দড়ি ছেঁড়া হারানো বাছুর
গোপন চিঠির প্যাডে নীল খামে সাজানো অক্ষর
কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।
No comments:
Post a Comment